মণিকা চোখ খুলল। কোন এক কারণে তার ঘুম ভেঙে গেছে, ঘড়িতে সময় দেখলো সকাল সাড়ে সাতটা। মণিকা জানে তার একবার ঘুম ভেঙে গেলে সে ঘুম আর আসবে না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে মণিকা খাট থেকে এক লাফে নেমে দাঁত মাজতে গেল। কীরকম একটা … ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল মণিকার। যেন তার সঙ্গে কি একটা বা কারুর একটা থাকার কথা, কিন্তু নেই। সেই ভাবটা থাকল। দাঁত মাজতে মাজতে, একটা নতুন জামা খুঁজে বের করতে করতে, চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে, আয়নার সামনে আসার পর ব্যাপারটা বোঝা গেল। এ মা, তার ছায়া কই? চোখ কচলে মণিকা আয়নার দিকে আবার চাইলো। আয়নায় সব দেখা যাচ্ছে, তার ছায়া বাদে। মণিকা পিছন ফিরে মাটির দিকে চেয়ে থাকল, এটা হতে পারে না, ছায়া তো থেকে যায়। আলো আঁধারে, তার ছায়া তাকে ছেড়ে যায়নি, কিন্তু এখন সে কোথায়? ছায়া তো, এই এল, এই মন চাইলো চলে গেল, তা তো হয় না!
মণিকা পাঁচবার চোখ রগড়ালো, দশ বার মাথা নাড়ল, চোখ বুজে এক থেকে দশ গুনলো, কিন্তু তার ছায়া আর ফিরে এলো না।
দৌড়ে মায়ের কাছে গিয়ে সব ঘটনা কাঁদো কাঁদো গলায় বলল মণিকা। মা কী যেন একটা ভেবে তার হাত ধরে তাকে বি আই টি এম নিয়ে গেলেন (বিড়লা ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড টেকনোলজিক্যাল মিউজিয়াম)। আসলে তাদের বাড়ির ঠিক পাশে বি আই টি এম। দরজা দিয়ে বেরিয়ে, দু পা হাঁটলেই বি আই টি এম। মা সোজা ভেতরে ঢুকে দুটো টিকিট কাটলেন। তারপর হনহনিয়ে মণিকাকে টানতে টানতে গেলেন প্রথম তলায়। “মা, মা কী হচ্ছে?” মণিকা চেঁচিয়ে উঠল। তার ছায়া কোথাও কেউ জানে না, আর মা এখন বিজ্ঞান পড়াবেন!
যখন মা হঠাৎ থামলেন তখন মণিকা দেখল তারা ঠিক ফ্রোজেন শ্যাডোর ঘরের সামনে।
হঠাৎ কী একটা কালো ধা করে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো, ওই ত্তো তার ছায়া! কালো, তার মতনই লম্বা, লিকলিকে, কিন্তু এ আরেক জ্বালা শুরু হলো! মণিকা ছায়াটাকে যেই ধরতে চায় অমনি ছায়া দৌড়ে পালায়। এদিক, সেদিক, ছায়াও ছোটে, মণিকাও ছোটে। হঠাৎ মণিকা পা পিছলে উল্টে পড়ল। হাতে খুব লাগল, মাথা ঝনঝন করে উঠল, সবকিছু আস্তে আস্তে ধোঁয়াটে, কালো হয়ে যাচ্ছে! কী হচ্ছেটা কী, মণিকা চোখ খুলল। ও খাট থেকে গড়িয়ে পড়েছে। সব স্বপ্ন ছিল, না?
‘ফ্রোজেন শ্যাডো’ হল একটা এমন জিনিস যে একটা ঘরে, একটা ফাঁকা দেওয়াল আর একটা আলো থাকবে। আলোটা জ্বললে তোমার ছায়াটা দেওয়ালটার গায়ে গিয়ে পড়বে, কিন্তু আলোটার সঙ্গে ছায়াটা মিলিয়ে যাবে না, কিছুক্ষণ লেগে থাকবে। অসাধারণ, না?
কিন্তু তোমার ছায়া তোমার কাছেই ফিরে আসবে, যেমন মনিকারটা এসেছিল।