এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • নাকছাবি

    Fazlul Huque লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৩ আগস্ট ২০২৫ | ২৪ বার পঠিত
  • নাকছাবি
    মুহাম্মদ ফজলুল হক

    অনিন্দ সুন্দর গ্রাম। সবুজের নান্দনিক আধিক্যে সতেজ চারপাশ। সরু খাল সাপের মত একেবেঁকে এগিয়ে গেছে গ্রামের একপাশ ঘিরে। অপর দিকে সারি সারি পুকুর। পুকুর পেড়িয়ে এগুলে বিস্তৃর্ণ ফসলি জমি। জমির মাঝ বরাবর মাটির রাস্তা দিয়ে হেটে কিছুদূর এগিয়ে গেলে আঁকাবাকা নদী। নদী, খাল, পুকুর ও ফসলি জমির আর্শীবাদ গ্রামকে জীবন্ত রেখেছে। মানুষকে সুখে-শান্তিতে বসবাসের রশদ দিচ্ছে। অনন্য পরিবেশে ঘনবসতি কম হওয়ায় শান্তিতে বসবাস করছে মানুষ।

    শান্তিময় গ্রামেজুড়ে অশান্তি শুরু হয় হরিদাসের নতুন বউয়ের মরাকান্নাতে। হারিয়ে গেছে তার সোনার নাকছাবি। নিশ্চয়ই চুরি হয়েছে। মানুষ জড়ো হয়। কোন সান্ত্বনায় কান্না থামে না। তার কথা একটাই। আমার নাকছবি চাই। হরিদাস অবাক হয়ে ভাবে গ্রামে কখনো চুরি হয় না। তাহলে নাকছাবি গেল কোথায়! কেউতো নেই অবিশ্বাস করার মত। এতো চুরি নয় বিশ্বাসঘাতকতা।

    খবর পেয়ে মাতব্বর এসে বলে আমাদের গ্রামে কখনো চুরি হয়নি। আমি বিশ্বাস করি কোন চোর নেই গ্রামে। নতুন বউয়ের নাকছাবি খোঁজে বের করা আমাদের দায়িত্ব। নাকছাবির খোঁজে রাতেই বাটি চালান দেওয়া হবে।

    অশ্বত্থ গাছের নিচে প্রদীপ জ্বলছে। ধূপের ধোঁয়া আকাশ ছুঁতে চাইছে। চাঁদের আলোয় পিতলের বাটির গঙ্গাজল চিকচিক করছে। ঢোলের মৃদু শব্দ, পুরুতের মন্ত্রধ্বনি আর উপস্থিত নারী-পুরুষের নিঃশ্বাসে ভুতুড়ে পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

    তুলা রাশির জাতক কোথায়? পুরুতের ডাকে ভিড়ের মাঝখান থেকে উঠে আসে অজয়। তার মুখ ফ্যাকাশে, চোখ লাল, মনে অজানা শঙ্কা। কপালের ঘাম মুছে নেয় সে। তুলা রাশির জাতক সাধারণত ন্যায়পরায়ণ, সৌন্দর্যপ্রেমী ও রুচিশীল। শিল্পীসুলভ মনোভাব, নান্দনিক ও  বিচারবোধ সম্পন্ন। সুঠাম দেহের অধিকারী অজয়ও তার ব্যতিক্রম নয়। এ ঘটনায় সে বিভ্রত। গ্রাম কলংক মুক্ত করা তারও দায়িত্ব। তাইতো নিজ থেকে তৈরি হয়ে এসেছে।

    বাটি চালান নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনে চলে। মন্ত্র পড়ে পিতলের বাটিতে ফুঁ দেওয়ার পর তর্জনী দিয়ে তিনটি টোকা দেওয়া হয়। অথবা ইঁদুরের গর্তের মাটি মন্ত্র পড়ে বাটিতে রাখা হয়। বাটিতে তুলারাশি জাতকের ডানহাত স্থাপন করে ছেড়ে দেওয়া হয়। অমনি জাতক তুমুল বেগে দিকবিদিক ছুঁটতে থাকে।

    অজয়ের হাত বাটি উপর রাখতেই চারপাশে নিস্তব্ধতা বেড়ে যায়। সবার চোখ অজয়ের দিকে। মনে হয় সময় থেমে গেছে। হঠাৎ কেঁপে উঠে বাটি। ধুকধুক শব্দ ভেসে আসছে। অজয় কাঁপতে থাকে। কথা বলতে না পেরে গোঙাতে শুরু করে। শরীর মোচড় দিয়ে উঠে। অদৃশ্য শক্তি যেন তার দেহে ভর করেছে। মনে হয় কেউ তাকে নিয়ন্ত্রণ করছে।
    অজয়কে টেনে নিয়ে বাটি ধীরে ধীরে এগোতে লাগল। চাঁদের আলো, ধূপের গন্ধ, মন্ত্রপাঠের ছন্দ, বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজ ও বাটির চলার দৃশ্য যেন অলৌকিক হয়ে উঠল। বাটি গড়িয়ে চলল আঁকাবাঁকা পথে। কখনো দ্রুত কখনো ধীরে ধীরে। উঠানে কয়েক চক্কর দিয়ে বাড়ির পিছনের দিকে ছুটে চলল বাটি। ঘেমে উঠে অজয়। বাটির সাথে তাল মিলাতে সে গলদঘর্ম।

    বাড়ির পিছনে গাছগাছালির ঝোপ। আবছায়া আলোয় বিভিন্ন উদ্ভিদ মাড়িয়ে ঝোপের কাছাকাছি গিয়ে থেমে যায় বাটি। বাটি থেকে অজয়ের হাত আলাদা হয়ে আসে। ধকল সইতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে যায় সে। মানুষের ভিড় ঠেলে পুরুত এসে মন্ত্রপড়া পানি ছিটিয়ে স্বাভাবিক করে তাকে। অজয় কিছু বলতে না পেরে অপলক তাকিয়ে থাকে।

    বাটি থামতেই মানুষ হৈচৈ শুরু করল। আনন্দে হাততালি দিতে লাগল। পুরুত সবাইকে থামিয়ে বলল, নাকছাবি এখানেই আছে। কেউ চুরি করেনি। তার নির্শেদমত আলোর ব্যবস্থা করা হয়। কয়েকজন মিলে নাকছাবি খুঁজতে থাকে। অজয় নড়েচড়ে বসল। সে খেয়াল করে বাটি থেকে অল্প দূরে কিছু একটা চকচক করছে। তার বুঝতে বাকি রইল না এই সেই কাঙ্ক্ষিত বস্তু। হাত বাড়িয়ে সে নাকছাবি তুলে নিয়ে পুরুতের হাতে দিল।

    পুরুত মাতব্বরের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে কথা বলে। মাতব্বর খুশি হয়ে উঠে। সে দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা করে, আমদের গ্রাম সত্যি চোর মুক্ত। গ্রামে কোন খারাপ মানুষ নেই। নাকছাবি পাওয়া গেছে। একথা বলে সে হরিদাসের বউকে নাকছাবি বুঝিয়ে দিল। বউয়ের মুখে হাসি ফোটে। গ্রামবাসী অবাক বিস্ময়ে সেই দৃশ্য অবলোকন করে।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। চটপট মতামত দিন