কাজ তো চালিয়ে যাবে, কিন্তু কিসের ভিত্তিতে? নিজের ব্যাগটা থেকে পেরুর একটা ম্যাপ বের করে সেটা খোলে ফল্গু, উল্কির বিছানাটার উপর সেটাকে মেলে ধরে, ফিনিগান আর উল্কিও ঝুঁকে পড়ে ম্যাপটার উপর।
আমরা যদি ধরে নিই যে পেরু থেকে খুব বেশি দূরে নিয়ে যাওয়া হয়নি মুড়কিকে, কারণ মুড়কির সঙ্গে দেখা করে তার চিঠি নিয়ে ফিরে আমাদের কাছে আসছিল পুন্টু – বলতে থাকে ফল্গু – তা হলে এই ম্যাপটার পেরু-বলিভিয়া-চিলে-ব্রাজিল-প্যারাগুয়ে অঞ্চলের মধ্যে একটাই বড়, বেশ বড়, নীল-রঙা অঞ্চল দেখা যাচ্ছে, সেটা লেগো তিতিকাকা অথবা তিতিকাকা লেক। এবার উল্কির দিকে তাকিয়ে ফল্গু বলে, তুই কি তোর দক্ষিণ আমেরিকা নিয়ে পড়াশোনার সময় তিতিকাকা লেকের কথাও পড়েছিলি?
পড়েছিলাম, খানিকটা পড়েছিলাম, বলে উল্কি। লেকের মোটামুটি পূবে বলিভিয়া আর পশ্চিমে পেরু; পৃথিবীর উচ্চতম নাব্য সরোবর, দক্ষিণ আমেরিকার বৃহত্তম, বিরাট বড় জাহাজও অক্লেশে চলতে পারে। মুড়কি বলেছে যেদিকেই তাকানো যাক জল ছাড়া আর কিছু দেখতে পাওয়া যায় না। এই লেকের ওপর ছোটবড় অন্তত একচল্লিশটা দ্বীপ আছে, কাজেই তার মধ্যে যে কোন একটা দ্বীপে মুড়কিকে নিয়ে যাওয়া হয়ে থাকতে পারে।
মুড়কির চিঠি থেকে বোঝা গেল, ফল্গু বলে, ও যেখানে আছে প্রায় সবাই সেখানে জনজাতি, ওর মালা দেখে ওর সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছে তারা। বাড়ি আছে, খাবার-টাবারের অভাব নেই। এ ব্যাপারে তোর কী মন্তব্য?
উল্কি বলে, যে একচল্লিশটা দ্বীপের কথা বললুম তার মধ্যে বেশির ভাগেই মানুষ থাকে, নানা জনজাতির মানুষ, অনেক দ্বীপে পাহাড় আছে, থাকে থাকে চাষবাস হয় সে পাহাড়ে, ওদের মধ্যে অনেকে পেরু এবং বলিভিয়ার নানা শহরে কাজ করতে আসে, এক ধরণের সুতিবস্ত্রের হস্তশিল্প আছে – সম্প্রতি হেরিটেজ শিল্পের স্বীকৃতি পেয়েছে – আর আছে ট্যুরিজম। ফলে মোটামুটি অর্থাগমের ব্যবস্থা আছে ওখানকার অধিবাসীদের। কাজেই, বসবাসের ব্যবস্থা এবং খাদ্যের ব্যাপারে মুড়কি যা লক্ষ্য করেছে আমার খবরের সঙ্গে সেটা মিলে যাচ্ছে। আরও একটা খবর আমি তোমাদের দিই। তিতিকাকা লেকে নলখাগড়ার মতো একরকমের জলজ উদ্ভিদ বা তৃণ জন্মায়। সেগুলো দিয়ে বেশ কিছু ছোট ছোট কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করে স্থানীয় মানুষরা। চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশটা এরকম দ্বীপে অনেক জনজাতির মানুষ বাস করে। এই তৃণ দিয়ে ছোটবড় নানারকমের নৌকোও তৈরি হয়। সব মিলিয়ে মিশিয়ে এগুলোও ট্যুরিস্ট আকর্ষণ।
আমরা যদি ধরে নিই মুড়কিকে তিতিকাকা লেকেরই কোন একটা দ্বীপে রাখা হয়েছে, বলে ফল্গু, তাহলে প্রথমেই আমাদের আন্দাজ করতে হবে কোন্ দ্বীপে। মুড়কি লিখেছে ওই দ্বীপ থেকে যে দিকেই তাকানো যাক শুধুই জলরাশি, তার মানে দ্বীপটা স্থলভূমি থেকে অনেকটা দূরে। কিন্তু এটুকু ছাড়া আর কোন খবর আমাদের কাছে নেই। সে ক্ষেত্রে আমাদের প্রথমেই প্রয়োজন তিতিকাকার একটা ডিটেইলড ম্যাপ। কোথায় পাই? একটা ডেফিনিট সোর্স হতে পারে ট্যুরিস্ট ইনফর্মেশন সেন্টার, যেটা হলো কামিলার অফিস। কিন্তু কামিলাকে ঠিক এখনই কিছু জানাতে চাইনা আমি।
উল্কি বলে, এখানে তো রাস্তা ঘাটে প্রাইভেট ট্যুরিস্ট সেন্টারের অভাব নেই। চলো না, আমরা বেরোই, দুয়েকটা প্রাইভেট সেন্টারের সঙ্গে কথা বলি।
ফিনিগানকে জিজ্ঞেস করে ফল্গু, আপনি কী করবেন, ফিনিগান?
কী করব মানে? আপনাদের সঙ্গে যাব। এখন থেকে আপনারা যেখানে আমিও যাব সেখানে। পুন্টুকে যারা মেরেছে, আর মুড়কিকে যারা চুরি করেছে, তারা একই লোক, তাই এখন যে কাজ আপনাদের সে কাজ আমারও।
প্লাজা অঞ্চলে, ওবেলিস্কোর আশপাশে, একাধিক প্রাইভেট ট্যুরিস্ট সেন্টার। একটায় ঢুকে গেল ওরা। তিতিকাকার ম্যাপ ছিল এই সেন্টারের কাছে, কিন্তু ম্যাপ দেখে কোন্ দ্বীপে ওরা যাবে সে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ নয়। যে দ্বীপগুলোয় জনবসতি আছে তার অনেকগুলোই বলিভিয়ায়। এ ছাড়া নলখাগড়ার দ্বীপগুলো। এগুলোর বেশির ভাগই পেরুতে। কিন্তু স্থল থেকে বেশি দূরত্বে নয় সেগুলো। মুড়কি বলেছে ওর দ্বীপ থেকে জল ছাড়া আর কিছু দেখা যায় না। তা ছাড়া, আরও একটা কথা। নলখাগড়ায় তৈরি দ্বীপ হলে এই বৈশিষ্টের কথা কি মুড়কি বলতো না? খুঁজে খুঁজে শেষ পর্যন্ত আমান্তানি আর তাকিলে নামে দুটো জনবসতিপূর্ণ দ্বীপ পাওয়া গেল পেরুর মধ্যে। তাকিলেতে দেখার কী আছে?
তাকিলেতে? ওদের সুতিবস্ত্রের বয়নশিল্প ইউনেস্কো হেরিটেজ পুরস্কার পেয়েছে। তাছাড়া ওখানকার জনজাতির সহজ-সরল জীবনযাত্রা (ট্যুরিস্ট সেন্টারের যে মেয়েটা ওদের সঙ্গে কথা বলছিল সে বললো, চুরি করি না, মিথ্যে বলি না, আলসেমি করি না) বেড়াতে-আসা মানুষদের আকর্ষণ করে। তাই ওদের হোম স্টে ট্যুরিজম খুব জনপ্রিয়।
আর আমান্তানি? প্রায় আটশো কেচুয়াভাষি জনজাতি পরিবারের চার হাজার মানুষের বসবাস আমান্তানি দ্বীপে। এখানে একরকমের ফুল ফোটে, নাম কান্তুতা, যা পেরুর জাতীয় ফুল। হোম স্টে-র ব্যবস্থা আছে, আছে হোটেলও। আর আছে দুটি পাহাড়, পাঞ্চাতাতা আর পাঞ্চামামা।
এই সব দ্বীপে যেতে হলে কী ব্যবস্থা?
দ্বীপের বাসিন্দারা যখন যাতায়াত করে তারা নিজেদের তৈরি নলখাগড়ার নৌকো ব্যবহার করে, ভ্রমণকারীদের নিয়ে যায় যে জলযান, সেগুলোও ফেরবার পথে নিয়ে আসে দ্বীপবাসী মানুষজনকে, বলে মেয়েটা, আর আপনারা যদি যেতে চান, আপনাদের যাতায়াত এবং ওখানে থাকা এবং বেড়ানো মিলিয়ে পেরু থেকেই বুক করে যেতে হবে।
বুকিং কি আপনারা করেন? – জিজ্ঞেস করে ফল্গু।
আমরা করি না, মূলত বুকিং হয় ইন্টারনেটে, নানা দেশের মানুষ বেড়াতে আসে তো, ইন্টারনেটেই সুবিধে। আপনি আইল্যাণ্ড ট্যুরিজমের ওয়েব-সাইট দেখতে পারেন, তা ছাড়া এখান থেকে দুটো ব্লক ছেড়ে – মেয়েটা হাতের ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দেয় – ওই দিকে সোজা চলে গেলে আইল্যাণ্ড ট্যুরিজমের একটা অফিস দেখতে পাবেন। সেখানেও বুকিং হয়।
ধন্যবাদ জানিয়ে বেরিয়ে আসে ফল্গুরা। উল্কি বলে, মেয়েটা বললো আমান্তানিতে পাঞ্চাতাতা আর পাঞ্চামামা নামে দুটো পাহাড় আছে। মুড়কি কিন্তু বলেছে ও যেখানে আছে সেখান থেকে যেদিকেই তাকাও শুধুই জল। পাহাড় থাকলে ওর চোখে পড়তো না? আমার মনে হচ্ছে আমান্তানি নয়, আমাদের যেতে হবে তাকিলেতে।
তুই ঠিকই বলেছিস, বলে ফল্গু, তাকিলেতেই যাব আমরা।
আইল্যাণ্ড ট্যুরিজমের অফিসটা ছোটখাটো। একটি মাত্র ছেলে বসে আছে, হাবভাবে মনে হয় বিশেষ কাজ নেই তার। ওদের দেখে মৃদু হাসলো। ফল্গু বললো, আমরা তিতিকাকায় দুটো দ্বীপে বেড়াতে যেতে চাই।
কোন্ কোন্ দ্বীপ? – জিজ্ঞেস করে ছেলেটা।
কোন্ কোন্ দ্বীপের জন্যে বুকিং দেওয়া হয় এখানে?
সব দ্বীপেরই, ছেলেটা বলে, এটা তো সেন্ট্রাল বুকিং অফিস, সাতচল্লিশটা দ্বীপেরই বুকিং দিই আমরা।
সাতচল্লিশটা দ্বীপ আছে নাকি? – অবাক হয়ে প্রশ্ন করে ফল্গু।
হ্যাঁ, পঁয়তাল্লিশটা ম্যান-মেড নলখাগড়ার দ্বীপ, আর দুটো ন্যাচারাল।
কিছু মনে করবেন না, ফল্গু বলে, আমরা তো বিদেশী, ঠিক ঠিক জানিনা, এই তিতিকাকার দ্বীপের কথা এখানে এসেই শুনলাম, কিন্তু আমরা যে শুনেছি প্রতিটা দ্বীপেই থাকতে হবে ইণ্ডিভিজুয়াল হোম-স্টে অ্যারেঞ্জমেন্টে, সে ক্ষেত্রে সেন্ট্রাল বুকিং...
ঠিকই শুনেছেন। হোম-স্টে অ্যারেঞ্জমেন্টের মানে হচ্ছে স্টে অ্যাণ্ড ফুল বোর্ড, দ্বীপে বসবাসকারী জনজাতিদের সঙ্গে তাদেরই বাড়িতে থাকা-খাওয়া ইত্যাদি, তাছাড়া লোকাল সাইট-সীইং... সব মিলে ট্যারিফ ঠিক করা আছে। প্লাস আপনাদের যাওয়া-আসা। এ ছাড়া শপিঙের খরচ আলাদা, পেয়েব্ল্ লোকালি।
একটু যেন বুঝতে অসুবিধে হচ্ছে, এভাবে একটু কেটে-কেটে বলে ফল্গু, ইণ্ডিভিজুয়াল হোম-স্টে মানে হোস্টদের পছন্দ মতো চার্জ নয়? সবারই একই ট্যারিফ!
একটু হেসে বলে ছেলেটা, দ্যাট ইজ দ্য বিজনেস মডেল। আইল্যাণ্ড ট্যুরিজম সব স্টেকহোল্ডারকে সঙ্গে নিয়ে ট্যারিফ তৈরি করেছে, প্রত্যেকটা আইল্যাণ্ডের জন্যে আলাদা-আলাদা ট্যারিফ, প্লাস টু অ্যাণ্ড ফ্রো ফেয়ার। সবটাই আমরা বুক করে দিই, ইণ্ডিভিজুয়াল হোস্টের সঙ্গে সেট্ল্মেন্টও আমাদের দায়িত্ব। আপনারা কোন দিন থেকে চাইছেন বুকিং? কত দিনের জন্যে?
আমরা সামনের সপ্তাহেই যেতে চাই, বলে ফল্গু, এখনও তো ট্যুরিস্ট সীজ্ন্ শুরু হয়নি, পেয়ে যাব নিশ্চয়ই।
আমাদের সীজ্ন্ ঠিক ওভাবে হয়না, একটু যেন ওপর থেকে কথা বলে ছেলেটা, মোস্টলি নেট-এ বুকিং হয় তো, সারা পৃথিবীর মানুষ বুক করে। এই ধরুন না তাকিলে। তাকিলের জন্যে এখন আর বুকিং নেওয়াই হচ্ছে না।
বুকিং-ই নেওয়া হচ্ছে না? কতো দিনের জন্যে?
নেক্সট সিক্স মান্থস, বলে ছেলেটা, ছ মাসের বুকিং হয়ে গেছে অলরেডি।
ও বাবা, বলে ফল্গু, তার মানে তাকিলে আমাদের প্ল্যান থেকে বাদ দিতে হবে, তাই তো? ঠিক আছে, আমরা যদি কাল আসি, প্ল্যান-ট্যান করে, তাহলে কোন-না কোন দ্বীপে পাব তো?
এখনও পর্যন্ত মনে হচ্ছে পাবেন, তবে দেখুন, নেট বুকিঙে কোন ইণ্ডিভিজুয়ালের কন্ট্রোল থাকে না তো, দেরি করবেন না।
কী বুঝলি? – বাইরে বেরিয়েই ফল্গু জিজ্ঞেস করে উল্কিকে।
সরাসরি ফল্গুর প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে উল্কি বলে, কিন্তু আমাদের তো তাকিলেতেই যেতে হবে, তাহলে যাব কী করে?
তুই কি মনে করেছিলি বিগ বিজনেসের মডেল অনুযায়ী লাক্সারী বোটের ক্রূজ-এ আমরা জনজাতিদের হোম-স্টেতে 'আ ব্রেক ফ্রম দ্য রুটিন' নিতে যাচ্ছি? আইল্যাণ্ড ট্যুরিজম-এর এই ছেলেটা যা আমরা আন্দাজ করছিলাম সেটাকেই কনফার্ম করল, এটাই আমাদের মোদ্দা লাভ এখানে এসে। তাকিলেই আমাদের গন্তব্য, সেখানেই যেতে হবে।
কীভাবে কনফার্ম করল?
মুড়কির চিঠিটা মনে করে দেখ্, বলে ফল্গু, 'এই দ্বীপে শুধুই জনজাতি। জনজাতি ছাড়া কোন মানুষ নেই শুধু আমি ছাড়া। আমাকে মারবে না। টাকমাথাও জনজাতি। মালা পরে।' যারা চুরি করে নিয়ে গেছে মুড়কিকে এবং একটা গোটা বাড়িতে একা, আরামে, ভালো খাওয়ার ব্যবস্থা করে শুধুই জনজাতিদের মধ্যে রেখে দিয়েছে তারা জনজাতির বাইরে আর কোন মানুষকে যেতে দেবে না। পুন্টু যেতে পেরেছিল কারণ সে 'মালা পরে।' যখন বোঝা গেল মালা পরা লোকটা ওদের ঠকিয়ে মুড়কির খবর নিয়ে গেছে আমাদের জন্যে, তখন তাকে প্রাণ দিতে হল। প্রাণ দিতে হল – মানে আমি বলছি না জনজাতির লোকরাই ওকে মেরেছে। প্রাণ দিতে হলো এই জন্যে যে মুড়কির অপহরণকারীরা জনজাতিদের যে সুরক্ষায় ওকে তাকিলে দ্বীপে বন্দী করে রেখেছে, সেই সুরক্ষা ভেঙে পুন্টু নিয়ে এসেছে মুড়কির খবর, তাই অপহরণকারীরাই খুন করল পুন্টুকে। মনে রাখিস, ছ মাসের জন্যে সমস্ত রকমের ট্যুরিস্ট চলাচল বন্ধ রেখে ছ মাস সময় দিচ্ছে ওরা আমাদের। অতএব ছ মাসের জন্যে এমনকী ট্যুরিস্টও নয়! জনজাতির বাইরের কোন মানুষকেই ওরা ঢুকতে দেবে না তাকিলেতে।
আমরা তাহলে কী করব? কীভাবে যাব?
এতক্ষণ একটাও কথা বলেনি ফিনিগান। এবার সে ফল্গুকে ডিঙিয়ে বলে উঠলো, জনজাতিদের নিজস্ব নৌকোয়। বিজনেস মডেল যা-ই হোক না কেন, যে নৌকো চলে তিতিকাকার বুকে তা চালায় কোন-না-কোন জনজাতির মানুষ। আপনারা আমাকে তিন ঘন্টা সময় দিন। বায়োডাইভার্সিটি হোস্টেলে ফিরে যান আপনারা। আমি তিন ঘন্টার মধ্যে ফিরব। নৌকোর ব্যবস্থা করেই ফিরব। যত তাড়াতাড়ি পারি আমাদের রওনা দিতে হবে।
ঠিক আছে, আপনি যান, আশা করি তিন ঘন্টার মধ্যেই ফিরতে পারবেন। আমরা এখন হাঁটব। হাঁটতে হাঁটতেই ফিরব হোটেলে। হাঁটলে মাথাটা একটু খুলবে।
মাথাটা খোলাবার জন্যেই হাঁটা।
ফল্গু বলে, ছ মাসের জন্যে পুরো তাকিলে দ্বীপটাকেই রিজার্ভ করে রেখেছে আমাদের ক্রিমিনাল বন্ধুরা। বিগ-বিজনেসের বিজনেস মডেলটা বুঝতে পারলি? দ্বীপের বাসিন্দারা শুধুই হোস্ট, ট্যুরিস্টরা পৌঁছোলে আতিথেয়তা দানই তাদের একমাত্র কাজ। কোন্ ট্যুরিস্ট আসছে, তাদের উদ্দেশ্য কী, সব বিগ-বিজনেস জানে। নৌকো আসে, নৌকো যায়, যাতায়াতে কতো পয়সা বিগ-বিজনেস আয় করে, জানার দরকার নেই হোস্টদের। অতিথিরা ফিরে যাবার সময় হয়তো কিছু টিপ্স্ দেয়, লোকাল শপিং করে খানিকটা, হিসেবের বাইরে কিছু উপরি-পয়সা পেয়ে যায় দ্বীপবাসী।
আইল্যাণ্ড ট্যুরিজমের ছেলেটার কথায় বোঝা গেল, মুড়কিকে ওরা অত্যন্ত সুরক্ষিত রেখেছে, বলতে থাকে ফল্গু। কোন বুকিং দিচ্ছে না মানে, সম্ভবত ছ মাসের পুরো টাকাটাই ওরা আগেভাগেই দিয়ে দিয়েছে তাকিলের মানুষদের। যার বাড়িতে
হোম-স্টে করানো হচ্ছে মুড়কিকে, সে-ই হয়তো ওই দ্বীপের প্রধান, অথবা বিগ-বিজনেসের সবচেয়ে কাছের লোক। সঙ্গে সঙ্গে আরও একটা জিনিস বোঝা গেল, তা হচ্ছে মুড়কির ব্যাপারে ওরা অতি সাবধান। তাকিলে দ্বীপের কমিউনিটির বাইরে আর কাউকে ওরা ছ মাসের মধ্যে দ্বীপে ঢুকতে দেবে না। সে ক্ষেত্রে সোজা পথে, মানে বুকিং করে যে নৌকো পাওয়া যায় সেই পথে না গিয়ে, আমরা যদি নিজেদের ব্যবস্থায় ঢুকতে চাই ওই দ্বীপে, ওরা আমাদের ঢুকতে দেবে তো?
আগে থেকে জানতে পারলে ঢুকতে যে দেবে না সে ব্যাপারে আমি নিঃসন্দেহ, বলে উল্কি, কিন্তু আমরা তো যাব জনজাতিদের সঙ্গে, তাদের নৌকোয়।
সে ক্ষেত্রে দুটো সম্ভাবনা, বলে ফল্গু। এক, ওরা যদি জানতে পারে আমরা জনজাতিদের নৌকোয় চলেছি তাকিলে অভিমুখে, তাহলে পথেই হয়তো আটকাবে আমাদের, আমরা পৌঁছোতেই পারব না। যদি পৌঁছিয়ে যাইও, তখন দ্বিতীয় সম্ভাবনাটা। দ্বীপে ঢুকতেই দিল না আমাদের, সব শক্তি প্রয়োগ করে আটকাল। এবং সেটা যদি হয় তাহলে এর পরিণামটা মুড়কির পক্ষে কতোটা খারাপ হতে পারে ভাবতে পারছিস?
পারছি, বলে উল্কি, তাহলে কী করবে?
ফিনিগান আসবে বলেছে তিন ঘন্টার মধ্যে। আসুক, ওর সঙ্গে এই পয়েন্টগুলো আলোচনা করতে হবে, আলোচনা করতে হবে এসপিণ্ডোলোর সঙ্গেও। চল্, হোটেলে যাই, দেখি কী দাঁড়ায় ব্যাপারটা।
হোটেলে ফিরে আসে ওরা। তিন ঘন্টা নয়, ঘন্টা দুয়েক পরেই ওদের ঘরের কলিং বেল বেজে ওঠে, ঢোকে ফিনিগান। ঢুকেই বলে, এসপিণ্ডোলো আমাকে ফোন করেছিলেন, একটু বেশি রাতে আবার করবেন, আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে চান।
আপনার কী প্রোগ্রেস? – জিজ্ঞেস করে ফল্গু, কোন ব্যবস্থা হলো?
নিশ্চয়ই হল, বলে ফিনিগান, কাল সকালে একটা গাড়ি আসবে এই হোটেলে, আমিও থাকব সেই গাড়িতে, আমাদের গন্তব্য পুনো শহর। অনেকটা দূর, সারাদিনের পথ। পুনোতে পৌঁছিয়ে রাত কাটাতে হবে একটা হোটেলে, তারপর পরের দিন সকালে রওনা দিতে হবে তাকিলে দ্বীপের উদ্দেশে। পুনো থেকে তাকিলের দূরত্ব পঁয়তাল্লিশ কিলোমিটার, জলপথে সেটা অনেকটাই, অন্তত ঘন্টা পাঁচেক সময় লাগবে।
আজ আমি একাই এসেছি, বলতে থাকে ফিনিগান, কিন্তু কাল আমার সঙ্গে থাকবে আমার এক বন্ধু, নাম রায়া। এই রায়াই চেনে নৌকোর লোকজনকে, সমস্ত ব্যবস্থা আজ রাতের মধ্যে করে ফেলবে ও। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় খবর পাঠাবার একটা নিজস্ব পদ্ধতি আছে জনজাতিদের, সেই পদ্ধতিতে আজ রাতের মধ্যেই খবর পেয়ে যাবে সবাই, আর সেই অনুযায়ী ব্যবস্থাও হয়ে যাবে। রায়া নিজে মাৎসিগোঙ্কা জনজাতির লোক, যদিও নিজের ভাষা ছাড়াও ও বলতে পারে আক্রিয়ানোদের ভাষা আর কেচুয়া। তাকিলে দ্বীপের জনজাতিরা কিন্তু সবাই কেচুয়াভাষী। আজকাল ওরা সবাই জিন্স্ পরতে শিখেছে, কিন্তু, প্রতিটি জনজাতির নিজস্ব পরিচয় থাকে, কাল থেকে রায়া ওদের জনজাতির বিশেষ পরিচয়ের যে বাঁদর-দাঁতের মালা, সেটা পরবে নিশ্চয়ই। ও বলে দিয়েছে আপনারাও যেন আপনাদের মালাগুলো পরে থাকেন।
সবটা শোনে ফল্গু, তারপর বলে, কিন্তু একটা কাজ যে বাকি রয়ে গেল।
কী কাজ?
শ্যাভেজ আর কামিলাকে খবর দেবার দরকার ছিল যে আমরা কয়েকদিন থাকব না। এটা খুব জরুরি।
খবর দিয়ে দিন, বলে ফিনিগান। আমার কাজ তো হয়ে গেল, আমি এবার যাব, আপনারা যান না, গিয়ে খবর দিয়ে আসুন।
কিন্তু আরও একটা কথা আছে, ফল্গু বলে, বসুন না ফিনিগান, আপনার সঙ্গে আলোচনা করব।
ফিনিগান বসে। ফল্গু বলে, এই যে আমরা মুড়কিকে উদ্ধার করতে যাচ্ছি, আপনি আমাদের সাফল্যের ব্যাপারে কতোটা নিশ্চিত?
যতটা নিশ্চিত হওয়া সম্ভব। কিন্তু আপনার সন্দেহ হচ্ছে কেন?
পুন্টুর মৃত্যুর দৃশ্যটা আমার মনে পড়ছে। আমি ভাবছিলাম, পুন্টুকে কেন প্রাণ দিতে হলো। পুন্টুও তো জনজাতি। জনজাতি বলেই ও ঢুকতে পেরেছিল তাকিলে দ্বীপে। আমরা এখন জানি ও-ও পরতো বাঁদর-দাঁতের মালা। জনজাতি হওয়া আর মালা পরার সুবাদেই ও দেখা করতে পেরেছিল মুড়কির সঙ্গে। মুড়কির সঙ্গে কথা বলে, নিজেকে আমাদের বন্ধু বলে প্রতিষ্ঠা করেই ও মুড়কির কাছ থেকে আমাদের জন্যে একটা চিঠিও নিতে পেরেছিল, সে চিঠি নিয়ে ফিরেও আসতে পেরেছিল ম্যালডোনাডো অবধি। কিন্তু আমাদের হাতে চিঠিটা ও দিতে পারল না, শেষ মুহূর্তে ওকে খুন হতে হলো। ওর মৃত্যুটা যদি আপনি মনে রাখেন – ওকে মারা হয়েছিল একটা তীর দিয়ে, সম্ভবত বিষ-মাখানো তীর দিয়ে – তাহলে বুঝবেন, ওর মৃত্যুটা কোন জনজাতির মানুষের হাতে অথবা সাহায্যেই হয়েছিল। সেক্ষেত্রে আপনি কি মনে করেন না আমাদের শত্রুরা – তারা জনজাতি হোক বা অন্য কিছু – এখন অনেক বেশি সতর্ক? হয় তাকিলে দ্বীপ পর্যন্ত আমাদের তারা পৌঁছোতেও দেবে না, কিংবা দ্বীপে পৌঁছোনোর পরেও ভেতরে ঢুকতে দেবে না, অথবা ঢুকিও যদি, পুন্টু যতটা সহযোগিতা পেয়েছিল, সেটা আমরা পাব না।
আপনার ভাবনাটা অমূলক নয়, বলে ফিনিগান, ওদের এখন মরিয়া হবারই কথা, এবং মরিয়া হয়ে আপনি যা যা বললেন ঠিক সেগুলোই করার কথা ওদের। কিন্তু আর ওদের উপায় নেই, ব্যাপারটা ওদের হাতের বাইরে বেরিয়ে গেছে।
কীরকম? – খানিকটা অবাক হয়েই জিজ্ঞেস করে ফল্গু।
আপনাদের তিনজনের গলায় তিনটে মালা আছে। এই মালার কী মূল্য আপনারা জানেন না। আপনারা এখন শুধুমাত্র মাৎসিগোঙ্কা জনজাতির সভ্যই ন'ন, সম্মানিত সভ্য। জন্মসূত্রে এ মালা যারা পায় তারা মাৎসিগোঙ্কা জনজাতিরই মানুষ। যদি না বিশেষ অপরাধে সমাজচ্যুত হয় তাহলে সারা জীবন মাৎসিগোঙ্কা আর তাদের বন্ধু জনজাতিরা তাদের নিরাপত্তা দেবে। এ তাদের জন্মগত অধিকার। কিন্তু আপনাদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একটু অন্যরকম। আপনাদের চেহারা দেখেই বোঝা যায় আপনারা জন্মসূত্রে মাৎসিগোঙ্কা ন'ন, আপনারা বিশিষ্ট-অতিথি-মাৎসিগোঙ্কা, সম্মানিত মাৎসিগোঙ্কা। বন্ধু জনজাতিরা আপনাদের নিরাপত্তা দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ, কোন কারণে যদি এ অঙ্গীকার তারা ভঙ্গ করে, তাহলে তার শাস্তি হলো সমাজচ্যুতি, নিজেদের সমাজ থেকে বহিষ্কৃত হবে তারা। আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন কেচুয়া জনজাতি-সমাজের কোন মানুষ এত বড় শাস্তি নেবে না, কোন মূল্যেই নয়।
আসলে, বলতে থাকে ফিনিগান, আপনাদের এই সম্মানিত মাৎসিগোঙ্কার পরিচয়টা আমাদের শত্রুরা ভাবতেই পারেনি। ভাববে কী ভাবে? সেই কোন্ ইণ্ডিয়া থেকে তিনটে মেয়ে এসেছে পেরুতে, নিজেদের ভাষা ছাড়া তারা শুধু বলতে পারে ইংরিজি, কী ভাবে তারা মাৎসিগোঙ্কা হবে? ঘুণাক্ষরেও যদি জানতে পারত ওরা, তাহলেই ওদের পক্ষে খুবই সহজ হয়ে যেত কাজটা। মুড়কির গলা থেকে মালাটা যদি খুলে নিয়ে ওরা তাকিলে দ্বীপে নিয়ে আসতো ওকে, সে ক্ষেত্রে ওকে উদ্ধার করাটা প্রায় অসম্ভবই হতো। কিন্তু জানতো কি ওরা মুড়কির গলার মালাটার কথা? যাই হোক, এখন আর উপায় নেই।
উত্তেজনা আর আবেগ মিলিয়ে চোখে জল এসে যায় ফল্গু আর উল্কির। একটু ঢোক গিলে উল্কি বলে, আপনার কথা শুনে বুঝতে পারলাম, যতক্ষণ তিতিকাকার জলে বা কোন দ্বীপে আছি আমরা, জনজাতিরাই আমাদের নিরাপত্তা। কিন্তু ফেরার পর? পুনোতে পা দেবার পর?
হাসতে হাসতে বলে ফিনিগান, এটা তো বুঝতে পারিনি যে আপনারা যতদিন পেরুতে থাকবেন ততদিন কোন-না-কোন জনজাতির কাছ থেকে নিরাপত্তা পাবার ভরসাতেই এসেছেন!
ওর হাসিতে যোগ দেয় ফল্গু, আর এমনকি উল্কিও।
হাসি থামলে ফল্গু বলে ফিনিগানকে, আপনি বলছিলেন মিস্টার এসপিণ্ডোলো ফোন করবেন রাত্তিরে, কথাটা কি এখনই বলা যায়? বোঝা গেল, আসলে ফল্গু এসপিণ্ডোলোর নম্বর সেভ করে রাখেনি। ওর মতে, ওর টেলিফোনে গুরুত্বপূর্ণ লোকদের ফোন নম্বর যতো কম থাকে ততই ভালো।
ফিনিগান ওর ফোন থেকে কথা বলে। ইংরিজি নয়, যে ভাষায় ও কথা বলে মনে হয় সেটা আক্রিয়ানো। এতক্ষণ ধরে একটানা ইংরিজি বলার পর ও বোধ হয় মাতৃভাষায় কথা বলার আরামটা পেতে চায় একটু। মিনিট পাঁচ-সাত কথা বলার পর নিজের ফোনটা ফল্গুকে দেয় ফিনিগান।
এসপিণ্ডোলো বলেন, যে প্রশ্নগুলো তুমি তুলেছ সেগুলো খুবই স্বাভাবিক প্রশ্ন। আমার মনে হয় ফিনিগান তোমার যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরেছে। ভালোই হয়েছে উত্তরটা ও দিয়েছে তোমায়, তুমি নিশ্চয়ই ওর যুক্তি দিয়ে কোন জিনিস বোঝা বা বোঝাতে পারার ক্ষমতাটাও লক্ষ্য করেছ, এতে ভালোই হবে। পারস্পরিক শ্রদ্ধার বোধ টীম-ওয়র্কের ফলে ভালো।
আমি শুধু তোমাকে একটা কথা বলে দিই, বলতে থাকেন এসপিণ্ডোলো। কাল তোমাদের সঙ্গে ফিনিগানের যে বন্ধু যাবে, রায়া, তোমরা কিন্তু তাকে চেন। তোমার মনে আছে শিম্পাটিয়া গ্রামে আমরা যখন আশানিঙ্কা-মাৎসিগোঙ্কা জনজাতির সঙ্গে পরিচয় করে ওদের সঙ্গে কথাবার্তা বলছিলাম তখন মুড়কির একটা মন্তব্যে খুব খুশি হয়েছিল ওরা সবাই? একজন বৃদ্ধা সেই মীটিঙের মাঝখানেই উঠে বাইরে গিয়েছিলেন তোমাদের জন্যে বাঁদরের দাঁতের মালা আনতে, মনে আছে তোমার? সেই মহিলার পিছন পিছন এক যুবকও গিয়েছিল মহিলাকে সাহায্য করতে? সে-ই রায়া, দেখলেই মনে পড়ে যাবে তোমার। রায়া তোমাদের সঙ্গে যাচ্ছে এই মহিলার বিশেষ সঙ্কেতপূর্ণ একটা কথা কেচুয়া জনজাতির নেতাকে বলার জন্যে। এই সঙ্কেতপূর্ণ কথা শুধু যে তোমাদের রক্ষাকবচ তা-ই নয়, ওদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সমস্ত সাহায্য পাবার অঙ্গীকার তোমরা পাবে এই কথার ভিত্তিতেই। অবিশ্যি এ সমস্ত খবরই ওদের খবর পাঠাবার বিশেষ মাধ্যমে পৌঁছিয়ে গেছে এরই মধ্যে। তুমি চিন্তা কোরো না। মুড়কিকে নিয়ে নির্বিঘ্নে তোমরা ফিরবেই।
আর একটা কথা, বলেন এসপিণ্ডোলো, তোমরা পেরুতে যখন প্রথম এলে, তখন মনে হয়েছিল এক দল পাখি-চোর, যারা কক-অব-দ্য-রক চুরি করছে, তাদের ধরাই তোমাদের কাজ। ইদানিং আমার কেমন যেন মনে হচ্ছে, তোমাদের কাজের পরিধিটা বড় হয়ে গেছে, একটার থেকে একটা লিঙ্ক করতে করতে একটা বেশ বড়সড় ক্রিমিনাল গ্রুপকে পাল্লা দিতে যাচ্ছ তোমরা। আন্তর্জাতিক গ্রুপ। চন্দ্রশেখর এবং লী, দুজনের সঙ্গেই আমি আলোচনা করেছি এ ব্যাপারে, দুজনেই আমার সঙ্গে একমত। কিন্তু, তা-ই যদি হয় তাহলে তো তোমার টাকা-পয়সায় টান পড়বে। লী বলেছেন, উনি তোমাকে অনেক ছোটবেলা থেকে চেনেন, সেই যখন তুমি স্কুলে পড়তে, তখন থেকে। সাপোর্ট পেলে তুমি যে কোন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে পার বলে উনি মনে করেন, কাজেই টাকা-পয়সার অভাবে যেন তোমার কাজে বাধা না পড়ে। ফিনিগানের সঙ্গে কথা বলে, আর তাছাড়া আমার নিজের যে সব কনট্যাক্ট আছে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমি পেরু এবং তার কাছাকাছি দেশগুলোতে নানা ভাবে তোমার টাকার ব্যবস্থা করছি। যখনই কোন প্রয়োজন হবে, আমার সঙ্গে কথা বোলো, আমার এই নম্বরটা সেভ করে রাখ। ফিনিগানকেও আমরা আপডেটেড রাখব। ও তো ঠিকই করেছে এখন থেকে তোমার সঙ্গে সঙ্গেই থাকবে। আমি চন্দ্রশেখরের সঙ্গেও কথা বলেছি, উনিও কথা বলবেন তোমার সঙ্গে।
ফল্গু বললো, থ্যাঙ্ক য়্যু ভেরি মাচ স্যর, আমার ওপর এত ভরসা আপনাদের, আমি চেষ্টা করব আপনাদের মান রাখতে।
কথা শেষ হলে ফিনিগান বলে, আমি তাহলে এগোই এখন, কাল ভোরবেলা দেখা হবে।
ফল্গু বলে, একটু দাঁড়ান, আমরাও বেরোবো।