এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  কূটকচালি

  • বিবাহের একাল-সেকাল এবং প্রি হিংটিং ফটোশ্যুট-১

    রানা সরকার
    কূটকচালি | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ৭৪৯ বার পঠিত | রেটিং ৪.৩ (৩ জন)


  • এখন কি পোস্টমর্ডান সময় চলছে? নাকি পোস্ট কলি? কেউ কেউ বলেন বটে যে সময়টা পেঁয়াজও নয় আবার কলিও নয়; একদম ‘পেঁয়াজ-কলি’।

    দেশের অর্থনীতি প্রায় নিজেদের কৃতিত্বে অনেকটা ডুবিয়ে আমাদের একজন ‘মন কী আলিয়া ভাট’ বক্তব্য রাখা লেকচারার এই কিছুদিন আগে পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের আগে আরেকবার তাকে সুযোগ দেওয়ার কথা বলেছিলেন।।

    উনি দেশের বিত্তশালী পরিবারদের উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন যে বিদেশে গিয়ে বিবাহের অনুষ্ঠান না করে দেশে করতে, যাতে দেশের অর্থ দেশেই থাকে। কিন্তু দেশের গরীব মানুষ যদি অর্থ রোজগার না করতে পারেন, তাহলে তারা কী করবেন? অন্যের বিয়ে দেখবেন? আর আঙুল চুষবেন?

    আর যদি বিবাহ দ্বারাই দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করা যেত তাহলে অন্তত G7 অন্তর্ভুক্ত দেশের ছেলেমেয়েরা বিয়ের পর বিয়ে করেই চলত। কিন্তু তেমন কিছু তো শুনিনি বা পড়িনি বাপু! জাপান, ব্রিটেন, ফ্রান্স, ক্যানাডা, ইতালি আর অ্যামেরিকা ইত্যাদি দেশ কি বিয়ে করে করে তাদের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করেছে? কী কারবার!

    সত্য সেলুকাস! কী বিচিত্র এই দেশ এবং দেশনেতা!

    আবার অপরদিকে রাজ্যের অর্থনীতিতে আমরা ‘পাচার’ যুগে এসে পড়েছি। এই যুগে সব কিছু প্রায় পাচার হয়ে যাচ্ছে। রয়েছে দান ও খয়রাতের অর্থনীতি। তা ভালো। দান ধ্যান করা ও পাওয়া নিশ্চয়ই ভালো এবং দরকার; তা বলে ধারদেনা করে? আর কারখানা? চণ্ডীদাস এখন বেঁচে থাকলে রাজ্যের অর্থনীতি সম্পর্কে হয়তো লিখতেন – “পাচার প্রেম নিকশিত শেম / কারখানার নাম গন্ধ নাহি তায়!”।

    ইতিহাসে পড়েছিলাম অনেক রাজা বা সম্রাট বিবাহাদির দ্বারা তাঁদের রাজ্যবিস্তার করতেন।

    তবে উক্ত মহান নেতার কাছে বিনয়ের সঙ্গে জানতে চাইব যে এক একজন বিত্তশালী পরিবার অন্তত ক’টা করে বিয়ে করলে অর্থনীতি সচল এবং চাঙ্গা হবে যদি তিনি দয়া করে এটাও জানাতেন, তবে আরও ভাল হত! সঙ্গে পশু ও পাখীদের বিবাহের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেলে তো দেশ একেবারে অর্থনীতিতে এক নম্বর হয়ে যাবে! এক্কেরে ‘টরেটক্কায় টইটুম্বুর’! লালমোহনবাবুর উপন্যাসে মতো।

    যাইহোক, আগেকার দিনে বিয়ের আগে কনে না দেখতেন তার হবু পাত্রকে, আবার পাত্রও তার ইহকাল-পরকালকে দেখতে পেতেন না। বাড়ির গুরুজনেরা গিয়ে সমস্ত স্থির করে আসতেন। বিবাহের দিন শুভদৃষ্টির সময় প্রথম তাঁদের চারিচক্ষুর মিলন হতো।

    নর-নারী গাইতে থাকত, “তারে আমি চোখে দেখিনি / তার অনেক গল্প শুনেছি / গল্প শুনে তারে আমি অল্প অল্প ভালবেসেছি।”

    কী হবে? কেমন হবেন আমার প্রিয়া বা হবু স্বামীরত্ন, এই নিয়ে চলত ঠাট্টা তামাশা।

    এতে একাধারে বিপত্তিও হত, আবার অন্যদিকে কেউ কেউ লটারি যেতেন পেয়ে।

    পৃথিবীতে নানারকমের বিবাহের প্রচলন আছে। সভ্যতা বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে আমরা সমাজে নানারকমের বিবাহ দেখেছি। আসুন, একটু দেখে নি -

    একগামিতা, বহুগামিতা, বহুপতিত্ব (এটি আবার দুইরকমের হয় – ১)ভ্রাতৃত্বমূলক বহুপতিত্ব – যখন একজন নারী একজন পুরুষ এবং সেই পুরুষের অন্যান্য ভ্রাতাদের বিবাহ করেন। ভারতের টোডা উপজাতিদের মধ্যে এই ধরণের বিবাহ লক্ষ করা যায়। ২) অ-ভ্রাতৃত্বমূলক বিবাহ – যখন একজন নারী একাধিক পতি গ্রহণ করেন কিন্তু তার পতিদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বমূলক কোনও সম্পর্ক থাকে না। (ভারতের নায়ার সম্প্রদায়ের মধ্যে এইরকম বিবাহ দেখতে পাওয়া যায়)।

    বহুপত্নীত্ব - আবার একজন পুরুষ যখন একাধিক নারীকে বিবাহ করেন। এক্ষেত্রে সেই পুরুষ যদি একজন নারী এবং তার বোনেদের বিবাহ করেন তবে তাকে বলে Sororal Polygamy. আর সম্পর্ক না থাকলে তাকে বলে Non-Sororal Polygamy. এছাড়া একজন পুরুষ তার মৃত দাদা বা ভাইয়ের স্ত্রীকে বিবাহ করলে তাকে বলে Levirate এবং মৃত স্ত্রীর দিদি বা বোনকে বিবাহ করলে তাকে বলে Sororate.

    কিন্তু একজন পুরুষ কোনও মেয়েকে বিবাহ করে তারপর তার বউয়ের মা বা আগের পক্ষের মেয়েকে বিয়ে করলে বা একজন মহিলা নিজের বরের বাবাকে বা আগের পক্ষের ছেলেকে বিয়ে করলে কী বলে, আমি বাবা জানি না! তবে ল্যাটিনে হয়তো এর নাম হতে পারে ‘Matrimonium Poly-ঝঞ্ঝাটিকা’! আর সংস্কৃতে ‘বিবাহ-প্রশংবিদা যুদ্ধগদা’!

    এরপর আছে গোষ্ঠী বিবাহ। মানে এক গোষ্ঠীর সকল পুরুষদের সঙ্গে অপর গোষ্ঠীর সকল নারীদের বিবাহ।এই ধরণের বিবাহ এখনও নাকি ব্রাজিলের কাইগং এবং সাইবেরিয়ার চুপসি উপজাতিদের মধ্যে আজও প্রচলিত আছে।

    আবার বিবাহ পদ্ধতি, রীতিনীতি – ইত্যাদির ভিত্তিতে বিবাহকে আবার বেশ কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়।

    স্বামী এবং স্ত্রীর বয়স, বংশ মর্যাদা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, সামাজিক অবস্থান ইত্যাদি একই ধরণের হলে তাকে বলে সমসংস্থ বিবাহ। আর উক্ত ক্ষেত্রে ব্যাপক পার্থক্য থাকলে তাকে বলে অসমসংস্থ বিবাহ।

    অনুলোম বিবাহ বা প্রতিলোম বিবাহের নাম শুনে অনেকেরই আবার মনে হতে পারেন যে এই ধরণের বিবাহের আগে ও পরে সারা গায়ে-মুখে বুঝি ‘লোম’ জন্মায়! না, তা জন্মায় না।

    অনুলোম হল প্রাচীন ভারতে উচ্চবর্ণের পুরুষের সঙ্গে নিম্নবর্ণের নারীর বিবাহ আর প্রতিলোম বিবাহ ঠিক তার উল্টো।

    এছাড়াও আছে আয়োজিত বিবাহ, রোম্যান্টিক বিবাহ, বিনিময় বিবাহ (অস্ট্রেলিয়া ও মেলানেশিয়ার কিছু উপজাতিদের মধ্যে স্বামীরা তাদের স্ত্রীদের পরস্পরের সঙ্গে বিনিময় করে থাকেন। এখনকার যুগে যাকে swapping বলে)।

    আর আছে স্বগোষ্ঠী ও গোষ্ঠী বহির্ভূত বিবাহ, ক্রয় বিবাহ ইত্যাদি।

    এছাড়াও প্রাচীন ভারতে আরও নানাকিসিমের বিবাহের অস্তিত্ব ছিল – কন্যা হরণ করে বিবাহ, বীণা ও মোট্টা বিবাহ, স্বয়ম্বর, বীর্যশূল্কা, দাস বিবাহ। তবে এখন হয়তো আমরা পুত্র হরণ করে এক ধরণের বিবাহের নিয়ম দেখতে পাচ্ছি! বা একে অপরের প্রেমিককে হরণ করে বিবাহ করছেন। অর্থাৎ পুত্র হরণ এবং প্রেমিক হরণ বিবাহ।

    আবার কামসূত্রে আটপ্রকার বিবাহের কথা উল্লেখ করা হয়েছে – ব্রাহ্ম, দৈব, প্রজাপত্য, আর্য, রাক্ষস, পিশাচ, গান্ধর্ব এবং অসুর।

    পরিবারের মধ্যেও নানা প্রকার ভেদ ছিল। যেমন – এক রক্ত সম্পর্কের পরিবার, পুনালুয়া পরিবার, জোড়াবাঁধা পরিবার, একপতিপত্নী পরিবার ইত্যাদি।

    উৎসাহীরা বিবাহ নিয়ে অন্যান্য বইয়ের সঙ্গে সঙ্গে ফ্রেড্ররিক এঙ্গেলস লিখিত ‘পরিবার, ব্যাক্তিগত মালিকানা ও রাষ্ট্রের উৎপত্তি’ বইটি পরে দেখতে পারেন।

    যাই হোক, ছবি বা ফটো আসবার পর তবু যেন একটা আভাষ পাওয়া যেত; শোনা যেত কিছু গল্প।

    এখন বিয়ের পূর্বে প্রেম হবে না বিয়ের পরে প্রেম, এই নিয়ে একসময়ে সমাজ উত্তাল ছিল। যারা আধুনিক ছিলেন তারা আবার বিয়ের আগে তাদের প্রাণবল্লভ বা প্রাণেশ্বরীকে দেখে নিয়ে পূর্বরাগে আচ্ছন্ন হতে চাইতেন। জেনে নিতে চাইতেন তাঁদের মতিগতি এবং রূপ-সৌন্দর্য; বুঝে নিতে চাইতেন তাদের শিক্ষা-দীক্ষা।

    পরশুরামের ‘কচি সংসদে’ কেষ্ট একটি নতুন নিয়ম আনতে চাইলেন। নাম দিলেন ‘হাই-কোর্ট শিপ’। মানে একজন মুরুব্বীকে সামনে বসিয়ে হবু পাত্র-পাত্রী নিজেদের ভালমন্দ বুঝে নেবেন। এতে নাকি তার যুক্তি ছিল যে এইভাবে বিয়ের আগে দুজন দুজনকে জেনেও নেবে কিন্তু প্রেম হবে না।কারণ কেষ্টর মতে প্রেম হলেই অনেক কিছু তালগোল পাকিয়ে যাবে। তার মতে বিয়ের আগে প্রেমই হল সম্পর্কের যত গোলমালের কারণ।

    কিন্তু আমার জানি যে শেষে কী ঘটেছিল। উকিল ব্রজেনবাবু বোদাকে জিজ্ঞাসা করার পর জানা গেল যে সোব ভাগা!!

    বিবাহের প্রসঙ্গ ছেড়ে এবার আসা যাক বিবাহের সাজগোজ আর প্রি ওয়েডিং ফোটো শ্যুট-এ। আমার মতে এটি ‘প্রি হিংটিং ফোটো শ্যুট’!

    আমাদের মধ্যবিত্ত সমাজ সাধারণত চলে উচ্চবিত্ত বা বিদেশী বা সিনেমা বা সিরিয়ালে যেমন দেখানো শেখানো হচ্ছে তাকে নকল করে।

    কবেই মেকলে সাহেব আমাদের দেশের বেশিরভাগ লোকেদের মানসিকতাকে বুঝে নিয়ে বলেছিলেন এমন এক শিক্ষাপদ্ধতির কথা যেখানে থাকবে Upper leaves give the beneath drop after drop-এর কায়দা। আর সেই কায়দার জাদুতে মজে রয়েছেন অনেকেই। যদিও দেশের অনেক মানুষ জানেন না যে ‘ব্রাই-ডাল’ ব্যাপারটা ঠিক কী? এটা কি মুগ, মুসুর বা কলাইয়ের মতো কোনও নতুন প্রজাতির ‘ডাল’? নাকি অন্যকিছু? বা ‘তুমি চলো ব্রাই ডালে ডালে আর আমি চলি ভাই পাতায় পাতায়!’।

    ইদানীং আমাদের নিম্ন বা মধ্যবিত্ত পরিবারে প্রথমে কয়েকদিন ধরে চলছে প্রি ওয়েডিং ফোটোশ্যুট। যদিও এর ফলে ফোটোগ্রাফি বা ভিডিও গ্রাফিক্স করা ছেলেমেয়েরা একটা রোজগার করতে পারছেন। কিন্তু তবুও সেই ফোটোশ্যুট যা ‘ডিং’ মেরে আমাদের প্রাক-বিবাহে ঢুকে গেল আর তাতে হিন্দি বা ইংরেজি সিনেমার কায়দায় নানান তাকানো, জড়িয়ে ধরা, সাল্মানের মতো স্লো মো তে দৌড়ে আসা, ক ক ক ক কিরণ ইত্যাদি বলা শুরু হয়ে গেল। জানিনা রাজশেখর বসু বা ত্রৈলোক্যনাথ থাকলে কী লিখতেন?

    এমনও শোনা গেছে যে জলের তলায় বা আকাশে উড়তে উড়তে সেই ফোটোশ্যুট করতে গিয়ে নানান বিপত্তি ঘটেছে। এই ক’দিন আগে একটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল যেখানে কনে একটি খারাপ পিস্তলের মতো জিনিস থেকে বাজি ফাটাতে গিয়ে নিজের মুখ পুড়িয়ে দিলেন। ভাবা যায়!

    এরপর আছে ব্যান্ড পার্টি নিয়ে শোভাযাত্রা। তাতে ঘোড়া, দামি গাড়ি আর মাড়োয়াড়ি কায়দার পোশাক পরে ভ্যামচ্যাক হিন্দি সিনেমার নাচ! সঙ্গে বাজছে হনলুলু দ্বীপের হুলুকুলু মিউজিক!

    বাঙালি মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তের বিয়েতে এইরকম সব অদ্ভুত দো-আঁশলা জাঁক ও পাঁচমিশালি জমক দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে বর আধা শিক্ষিত বা প্রায় নিরক্ষর; কিন্তু অর্থ আছে। আবার শিক্ষিত হলেও চেতনা নেই।

    মেনুতে খাওয়ানো হচ্ছে থাই বা মেক্সিকান খাবার। কিন্তু সেই খাবার খাওয়ার জন্য যারা এসেছেন তারা অনেকেই সেই খাবারের নাম উচ্চারণ পর্যন্ত করতে পারছেন না। কারণ সেই খাবারের নামগুলো আবার লেখা রয়েছে ফরাসিতে! ভাবছেন এইসব আবার খাওয়া ঠিক হবে কীনা? অনেক করে চেপে ধরবার পর জানা গেল যে ওয়েডিং প্ল্যানার নাকি এইসব করতে বলেছেন।মানে ফুল ওয়েডিং বাওয়াল!

    এখন এমন দিন আসছে যেখানে বিয়ে বাড়িতে ঢুকে গিয়ে কোনদিন দেখবেন যে কনের জায়গায় অ্যাঞ্জেলিনা জোলি আর বরের জায়গায় ব্র্যাড পিট বসে আছেন। আপনি চমকে ভাবলেন যে ভুল জায়গায় এসে পড়েছেন নাকি? অনেকে তো এদের আবার চেনেনও না।

    আবার কোথাও দেখলেন রনবীর কাপুর আর আলিয়া ভাট বসে আছেন। দেখে নিজের হাতে চিমটি কাটলেন। স্বপন দেখছেন নাকি? কিন্তু আশেপাশের লোকজন তো চেনা চেনা। তবে নীতু সিং নেই; সোনি রাজদান নেই; নেই মহেশ ভাট। ব্যাপারটা কী?

    সরেজমিনে তদন্ত করে জানা গেল যে বর আর কনে প্রস্থেটিক মেক আপ করিয়েছেন।

    মাষ্টারমশাই ও লেখক দেবতোষ দাশ লিখছেন – “একসময় ফাউন্ডেশন করে চোখ-টোখ আঁকা ইত্যাদি ছিল। কিন্তু এখন চড়া আর পুরু ফাউন্ডেশন, কনসিলার দিয়ে কিম্ভূত এক কসমেটিক এফেক্টই ট্রেন্ড। কনেকে মোটামুটি সাজের জন্য পার্লারে চলে যেতে হয় বেলা বারোটায়। তারপর পরতের পর পরত। প্রথম চোটে চেনাই দায়। তবে কেবল কনে কেন, বর ও কনের পিসি ও মাসি…। যেন একটি নকল মুখ লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন মায়াপৃথিবীর কিমাকার ডাইনোসর ‘পরে’।

    এই ক’দিন আগের এক বিয়ে বাড়িতে নেমন্তন্নে গিয়ে হঠাৎ কাজ পড়ল যে একবার পার্লারে যেতে হবে। কনেকে দিতে হবে তাড়া। সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। গিয়ে দেখি কনে মুখভার করে বসে আছে আয়নার সামনে। সেখানে আবার পার্লারের লোকটা নেই। তার হেল্পার বসে আছেন। জিজ্ঞাসা করাতে জানা গেল যে মালিক রঙের মিস্ত্রি খুঁজতে বেরিয়েছেন। কারণ জিজ্ঞাসা করাতে হেল্পার বলল, “ইজি টঙ, কনের মুখে এক পোঁচ প্রাইমার মারা হয়েছে। এবার ওয়েদার কোটিং মারা হবে। একদম দশ-বারো বছরের জন্য নিশ্চিন্তি! বুঝলেন? ইজি টঙ?”।

    আবার একজন ছেলে একেবারে হাতে, পিঠে, ইয়েতে বৃহৎ ছাগলাদ্য ট্যাটু করিয়ে, জিম করে ঘটোৎকচ মাসল ফুলিয়ে, আর মুড়ির ঘন্ট মার্কা চুলের ছাঁট ছেঁটে হোয়াতে ছবি পাঠিয়ে দিল। দেখে মেয়ে তো একেবারে পুনম পাণ্ডে! খালি বলছে, “মেফিস্স্টোফিলিস ইয়াক! ইয়াক!” বাড়ির মহিলারা বুঝতেই পারছেন না যে মেয়ে আবার কী ভাষায় কথা বলছে রে বাবা!।

    সন্ধ্যেবেলা। লগ্ন প্রায় হব হব। ওদিকে বরকর্তা এবং বরের ফোন বন্ধ।

    হঠাৎ একটা অ্যাম্বুলেন্স গাড়ি এসে দাঁড়ালো বিয়ে বাড়ির সামনে। সানাই বাজছিল। সেটা বন্ধ হয়ে গেল। লোকজন ছুটে গেলেন। সেখানে বরকে শোয়ানো রয়েছে। সারা গায়ে ব্যান্ডেজ। বরের বন্ধুরা কাঁদছে। সব শুনে হবু শাশুড়ি, হবু মাসি শাশুড়ি, হবু পিসি শাশুড়ি, হবু মামী শাশুড়ি আর হবু বউ তো অজ্ঞান। এ কী সর্বনাশ হল রে বাবা। হবু শ্বশুর আবার তার ফ্যামিলি ফিজিসিয়ানকে কল দিলেন। হবু কাকা শ্বশুর কল দিলেন নার্সিংহোমে।

    তারপর সবাইকে অবাক করে দিয়ে বর হাসি হাসি মুখ করে অ্যাম্বুলেন্স থেকে বেরিয়ে এসে বলল, “প্র্যাঙ্ক; আ সিম্পল প্র্যাঙ্ক হানি”।

    (চলবে)


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • কূটকচালি | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ৭৪৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Swati Ray | 117.197.***.*** | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০২:১৮541097
  • বিবাহের এ কাল সে কাল নিয়ে লিখছেন, তাই প্রশ্নটা করি। মধ্যবিত্ত বাঙালির বিয়েতে মদ্যপানের প্রথার শুরু কবে থেকে?
  • রানা সরকার | 2402:3a80:196c:c04a:778:5634:1232:***:*** | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৮:০৬541099
  • একাল সেকাল নিয়ে লিখেছি ঠিকই ; তবে সব লিখে ফেলবো এই ধৃষ্টতা আমার নেই। একসময় বিবাহে যারা কাজের লোক, তারা কিঞ্চিৎ সেবন করতেন। অনেক সময় বরকর্তা,  বরের বাবা তারাও সেবা করতেন। আর এখন তো ব্যাপারটা মদভাত হয়ে গেছে।  
  • Mousumi Banerjee | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৬:২১541172
  • ভালো লাগল। প্রি ওয়েডিং বা ওয়েডিং ফটো শ্যুট– সত্যিই বড়ই উদ্ভট লাগে। বর এসেছে। রজনীগন্ধা র মালা নয়, লাল গোলাপের মালা গলায় চড়িয়ে – ওদিকে বিয়ে শুরুর আগেই কনের মালা বদলের পোজ দিয়ে ফটো। বরকে ছাদনাতলায় নিয়ে বসানো হল। পাশে বসে আছেন হবু শ্বশুর মশাই। এই অবস্থায় ফটোগ্রাফার বরের সামনে একবার উপুড় হয়ে, একবার চিৎ হয়ে শুয়ে ফটো তুলছে.... ফটোগ্রাফার দেরকে নিয়েও ফটো শট হওয়া দরকার। 
     
    বুঝি না, কি লাভ হচ্ছে। 
  • Ranjan Roy | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২০:৩৫541178
  • আবার অমুক कि তমুক জায়গায়, ধরুন গোয়ায়, গিয়ে ওয়েডিং হবে -- সেটার আবার কি একটা ইংরেজি নাম আছে।
    সিচুয়েশন ম্যারেজ? ধেত্তেরি !
    মনে পড়েছে --ডেস্টিনেশন ওয়েডিং!
     
    কী জ্বালা! যখন জানা আছে বিয়ের একটাই ডেস্টিনেশন, তবে ন্যাকামি কেন!
     
  • r2h | 192.139.***.*** | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০১:২৭541221
  • বিয়েতে মদ খাওয়া কবে শুরু হল - এইটা পড়ে অন্য একটা জিনিস মনে হল - বিয়েতে মদ খাওয়া বন্ধ হল কবে?

    মানে আগেকার জিনিসপত্র পড়ে টড়ে তো মনে হয় আদি বাঙালীরা বেশ ফুর্তিবাজ লড়াকু ধরনের লোকজন ছিল, এই গণ্ডারের মাংস খাচ্ছে, এই বাণিজ্যযাত্রায় যাচ্ছে, যৌনতা বিষয়েও মোটামুটি মন্দ না, একটুখানি ফ্রিভোলাস একটুখানি আবেগী।
    সেসব বদলালো কবে?

    মঙ্গলকাব্যগুলিতে কী বলে, বিয়ে টিয়ে, ফুর্তিমূলক জিনিসপত্র নিয়ে?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। চটপট মতামত দিন