কিস্সার আগের কিস্তিতেই বলে রেখেছিলাম, বিজয়নগর সাম্রাজ্যের রমরমে জমানার খিচুড়ি চেখে আমরা শত খানেক বছর এগিয়ে শাহ জাহান বাদশার হেঁশেলে হাজির হব। আর খিচুড়ির সেই মুঘল গার্ডেন্স-এ ঢুকতে হলে একটি কেতাব ছাড়া গত্যন্তর নেই, যার বিষয়ে আগেই বেশ বিশদে বলেছি—নুসখা-ই-শাহ জাহানি। এ কেতাব যে শাহ জাহান বাদশাহের জমানার তা এখন স্বীকৃত। তাই পাতা ওলটাই। আর যে কথাও আগেই বলেছি, সে এক রোমহর্ষক অ্যাডভেঞ্চার—এক পাতা থেকে আর এক পাতা, শাহি মতবখ—বাদশাহি হেঁশেলের এক মহল থেকে অন্য মহল, এক খুশবু থেকে আর এক সুবাস! তবে এখন তাতে মাতোয়ারা হওয়ার সময় আমাদের নেই, কারণ আমরা সুনির্দিষ্ট ভাবে খিচুড়ির খোঁজে। কাজেই আর সব কিছু টপকে আমরা হাজির হতে হবে শাহ জাহানি আমলের খিচুড়ির হেঁশেলে। তবু যাওয়ার পথে এক ঝলক দেখে নিই কী কাণ্ড চলছে আশেপাশে।
উজবেক অতিথিদের জন্য মুঘল মহাভোজ। ১৮ শতক। ছবি সৌজন্য: জাতীয় জাদুঘর, ভারত
এ কেতাব আশ্চর্য বহু কারণে, তার মধ্যে একটি এর পৃষ্ঠাসংখ্যা। ব্লোচমান অনুদিত ইংরেজি আইন-ই-আকবরি খুললে দেখা যাবে ফলমূল, ধান-গম, ডাল-সবজির দামটাম সহ মহামতি আকবরের খানাদানার সম্পূর্ণ বিবরণ আবু’ল ফজ়ল অল্লামি সাঙ্গ করে দিয়েছিলেন সাড়ে আঠারো পৃষ্ঠায়। যার মধ্যে পাকপ্রণালীর বর্ণনা স্রেফ পাঁচ পৃষ্ঠা। আমার কাছে নুসখা-ই-শাহ জাহানির যে কপি আছে ভূমিকা-টুমিকা বাদ দিয়ে তার নিখাদ পাক-প্রণালীর বর্ণনার পৃষ্ঠাসংখ্যা ১৫৭। কী পাক হতেছে সেখানে? ভূমিকার পরেই দেওয়া খাদ্যতালিকাটা মোটামুটি এরকম—আমি কেবল মূল বিভাগগুলিই তরজমা করে দিলাম, যার মধ্যে বিবিধ চুলায় চড়ছে একই খাদ্যের নানা রকমফেরের হাঁড়ি-কড়াই-তাওয়া-শিক:
১। নানহা—‘হা’ বহুবচন, রুটিসমূহ (সমূহ কথাটা আর বারংবার লিখছি না, ‘হা’ থাকলেই সেটা বুঝে নিন)। ২। আশহা—ঝোল বা স্যুপ। ৩। কালিয়েহা ওয়্যা দোপিয়াজ়হা—কালিয়া আর দোপেঁয়াজি। ৪। ভরতাহা—ভরতা। ৫। বিরিয়ান— বিরিয়ান মানে ভাজা, এই বিভাগে আছে পাঁচ কিসিমের খানা যার নাম—জ়েরবিরিয়ান। লক্ষ্যণীয় এ কেতাবে বিরিয়ানি নামের কোনো খানা নেই। তবে এই জ়েরবিরিয়ানকে বলাই যায় বিরিয়ানির আগের প্রজন্ম। এ খানা এখন লুপ্ত। আমি রেঁধে দেখেছি উপাদেয়। একবিংশ শতকের উচ্চমধ্যবিত্ত অধিকাংশ বাঙালি তরুণ-তরুণীর মতোই আমার কন্যা ইশারা-র পিৎজ়া-বার্গার-স্যান্ডুইচ-পাস্তার কসম-খাওয়া জিভেরও জ়েরবিরিয়ান নুরমহলি আস্বাদন করে সচকিত উচ্চারণ—আরে, এ তো সাবলাইম! কিন্তু সে গপ্পো অন্য কোথাও, অন্য কোনো দিন। ৬। পুলাওহা—পোলাও। ৭। খপহা, ইয়াখনিহা ওয়্যা কাবাবহা—খপ, ইয়াখনি ও কাবাব। ৮। হরিসাহা, শশররঙ্গাহা, খাগিনাহা, শামোসাহা, পুরিহা, শিরিনিহা বগ্যায়রা—হরিসা: ইনি আজকের হালিমের আগের প্রজন্ম, শশরঙ্গা: শশ মানে ছয়। রঙ্গা যে রঙিন সে বোঝা কঠিন নয়। কিন্তু খানাটি কী? ঝোলওয়ালা একটি খানা, ১৮৩২ সালে লেখা একটি দুরন্ত কেতাবের ইংরেজি তরজমা যাকে বলছে ‘six coloured stew’১! ৯। খাগিনাহা—অমলেট। ১০। শামোসাহা—সিঙ্গাড়া। পুরিহা—পুরি। শিরিনিহা বগ্যায়রা—মিষ্টি ইত্যাদি। আর এর পরে এল— ১১। খিচড়ি। তারপরে, ১২। খমির: মাখা ময়দায় ইস্ট। ১৩। হালুয়াহা—হালুয়া। ১৪। খজুরহা—ময়দা, চিনি, দুধের পায়েস গোছের। ১৫। গলগলাহা—মিষ্টি পিঠের মতো, যাকে গুলগুলেও বলে। ১৬। বরাহ্হা—বড়া। ১৭। কন্দুহিহা —ছোলার ছাতু আর দই দিয়ে তৈরি খানা। ১৮। রতিয়াহা—দই, আপেল, ছোলার ছাতু, চিনির রস ইত্যাদি দিয়ে তৈরি খানা। ১৯। আচারহা—আচার। ২০। খুশকাহা—খুশকা। ২১। পিঠি দাল-মুঁগহা বগ্যায়রা—মুগ ডালের পিঠি ইত্যাদি। ডাল-পিঠি বিহারিদের খাস খানা। ২২। কশতলিহা-এ-রঙ্গ বরঙ্গ—এর অর্থ আমি উদ্ধার করতে পারিনি, তবে রেসিপি দেখে মনে হয়েছে খাবারে দেওয়ার রং। ২৩। রোগনহা-ই-রঙ্গ-বরঙ্গ—রং-বেরঙের তেল।
এই তেইশ অধ্যায়ে বিভক্ত নুসখা এক বিপুল আয়োজন, যার মধ্যে আমরা খুঁটিয়ে লক্ষ করতে পারি কীভাবে এসে মিশেছে ইরানি, তুর্কি, আফগানি খাদ্য সংস্কৃতির সেরা তওর-তরিকার সঙ্গে হিন্দের হরেক প্রান্তের উপকরণ ও রন্ধনপ্রণালী। মধ্যযুগের অন্য দুই বিপুল সাম্রাজ্য ছিল ইরানের সাফাভিয়ন (ইংরেজিতে সাফাভিদ) সাম্রাজ্য ও তুর্কির ওসমানিয়ে (ইংরেজিতে অটোমান) সাম্রাজ্য। এই দুই সাম্রাজ্যেরই বাদশাহি হেঁশেলের প্রামাণ্য কুকবুকের কপি আমার কাছে আছে। খুঁটিয়ে দেখেছি—অতিসমৃদ্ধ নিঃসন্দেহে, মুঘল হেঁশেল তা থেকে এন্তার আহরণ করেছে, কিন্তু মুঘলাই হেঁশেলের যে পরমাশ্চর্য বৈচিত্র, তার হফ্ত-রঙ্গি খুশবু সে সব হেঁশেলে পাইনি। এই তো আমাদের মহা-ভারত—দিবে আর নিবে, মিলাবে মিলিবে, যাবে না ফিরে!!
আর এই তালিকা অনুযায়ী, ১০৫ পৃষ্ঠা থেকে শুরু হয়ে পরবর্তী চার পৃষ্ঠায় রয়েছে সাত কিসিমের খিচড়ি পাকানোর তরিকা—শোলাহ্ খিচড়ি ম’রুফেহ্ (ম’রুফ মানে বিখ্যাত, জনপ্রিয়), খিচড়ি দাউদ খানি, খিচড়ি মকশরা (মকশর মানে মিহি করে ভাঙা বার্লি, যাকে ইংরেজিতে pearl barley বলে), খিচড়ি গুজরাতি, খিচড়ি জাহাঙ্গিরি, খিচড়ি বে-আব (জল ছাড়া) আর খিচড়ি তাহিরি। শুধু এই নয়। নুসখা কেতাব ভালো করে নজর করলেই দেখা যাবে, খুররম বাদশার হেঁশেলে যে খানাটি নিয়ে সব থেকে মাতামাতি হত তা হল পুলাও। গুণে দেখেছি, ৩৮ থেকে ৭৬ পৃষ্ঠা পর্যন্ত বর্ণিত আছে চুয়ান্ন কিসিমের পুলাওয়ের পাকপ্রণালী। এবং দেখে হাঁ হয়ে গেলাম, এর চুয়ান্নতমটির শিরোনামে লেখা আছে—অ্যায়জ়া পুখতন খিচড়ি পুলাও!
এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, আকবর বাদশার জমানা, মানে ১৫৫৬ থেকে ১৬০৫, অর্থাৎ ষোড়শ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে শুরু করে শাহ জাহান বাদশার জমানা, ১৬২৮ থেকে ১৬৫৮, মানে সপ্তদশ শতকের গোড়া—এই সাত-আট দশকে খিচড়ি নামক খাদ্যবস্তুটি মুঘলাই খানদানি দস্তরখওয়ানে কী সাংঘাতিক জাঁকিয়ে বসেছিল।
ক্রমে ক্রমে রেসিপিগুলি দেখলে আমরা বুঝব কী বিপুল বৈচিত্র্যে এই চাল-ডাল-ঘি-নুনের মৌলিক খানাটিকে রাঙিয়ে তুলেছিলেন মুঘলরা। মুঘল জমানা জীবনের প্রত্যেক ক্ষেত্রে ভারতকে যে আশ্চর্য ভাবে সমৃদ্ধ করেছিল, খিচুড়ি তার এক পরম সুস্বাদু উদাহরণ। আর এই অভ্রান্ত সত্যেরও উদাহরণ যে, তথাকথিত ‘খাস ভারতীয়’ সংস্কৃতির প্রতিটি শাখার রন্ধ্রে রন্ধ্রে মুঘল পরম্পরার অজস্র অবদান যে ভাবে সম্পৃক্ত হয়ে গিয়েছে, তা হিন্দুত্ববাদীদের ‘আগমার্কা ভারতীয়ত্বের’ শত হুংকারেও আর কোনো দিন বেছে বেছে আলাদা করে ফেলে দেওয়া যাবে না। তেমন প্রচেষ্টা উৎকৃষ্ট খিচুড়ির চাল-ডাল-ঘি-মশলা আলাদা করার চেষ্টার মতোই মূর্খামো! খিচুড়িই এর আদর্শ উদাহরণ এই কারণেই যে, এক শতকেরও কম সময়ে আর কোনো খানার এমন বিচিত্র বিচ্ছুরণ এই সর-জ়মিন-এ-হিন্দ-এ ঘটেছে বলে আমার জানা নেই।
নুসখায় বর্ণিত সাত কিসিমের খিচড়ির প্রত্যেকটির রেসিপি লিখে আমাদের এ অ্যাডভেঞ্চারকে অকারণ ক্লাসরুমে বন্দি করতে চাই না। আবার এর আগেই তার মধ্যে কয়েকটি নিয়ে চর্চা করেছি। যেমন শোলে, গুজরাতি আর জাহাঙ্গিরি। এবং তা করতে গিয়েই আমরা দেখেছি, গুজরাটে জাহাঙ্গিরের পাতে পরিবেশিত খিচুড়ি নয়, গুশ্ত্, মানে মাংস দেওয়া সম্পূর্ণ এক ভিন্ন কিসিমের খিচুড়ির হাঁড়িতে লেবেল সাঁটা হয়েছে ‘জাহাঙ্গিরি’। কেন? এ রহস্যের কোনো কিনারা আমার সন্ধানে নেই।
কিন্তু আমার বিশেষ আগ্রহ অন্য আর-এক নামের লেবেল সাঁটা হাঁড়ির খিচুড়িতে—খিচড়ি দাউদখানি! নাম শুনেই মনে পড়ে যোগীন্দ্রনাথ সরকারের সেই মজাদার ‘কাজের ছেলে’ কবিতায় সুর দিয়ে সলিল চৌধুরীর নিজের কন্যা অন্তরাকে দিয়ে গাওয়ান গান—
‘দাদখানি চাল, মুসুরির ডাল, চিনি-পাতা দৈ,
দু'টা পাকা বেল, সরিষার তেল, ডিম-ভরা কৈ।'
পথে হেঁটে চলি, মনে মনে বলি, পাছে হয় ভুল;
ভুল যদি হয়, মা তবে নিশ্চয়, ছিঁড়ে দেবে চুল।
'দাদখানি চাল, মুসুরির ডাল, চিনি-পাতা দৈ,
দু'টা পাকা বেল, সরিষার তেল, ডিম-ভরা কৈ।’
এই দাদখানি চাল যে-কোনো এক দাউদ খানের নামের অপভ্রংশে সুরভিত তা নিয়ে আমার মনে কোনো সন্দেহ নেই। প্রশ্ন হল কে তিনি, কোন্ দাউদ খান? আমরা বাঙালিরা দাউদ খান বললে প্রথমেই একজনের কথা ভেবে নেব—দাউদ খান করানি। বাংলার শেষ স্বাধীন সুলতান। ১৫৭২ থেকে ১৫৭৬ যাঁর রাজত্বকাল। কিন্তু তিষ্ঠ ক্ষণকাল! দাঁড়িয়ে মনে করুন সে দাউদ খানের উত্থানপতনের ইতিহাস সংক্ষেপে। বিশিষ্ট ইতিহাসকার রিচার্ড এম ইটন তাঁর বিখ্যাত কেতাব ‘The Rise of Islam and the Bengal Frontier’২-এ এ নিয়ে বেশ ভালোই আলোচনা করেছেন। মোদ্দা কথা যাঁহাতক ১৫৭৪ সালে জাহাঁপনা আকবর ঠিক করেন তাঁর সাম্রাজ্যের আশেপাশে যে সব বিরোধী ‘ঝোপঝাড়’ গজিয়ে উঠেছে সব উপড়ে ফেলে দিতে হবে, তাঁহাতক বাংলার তদানীন্তন স্বাধীন আফগান সুলতান দাউদ খানের সঙ্গে মুঘল সাম্রাজ্যের সম্পর্ক হয়ে ওঠে আক্ষরিক অর্থেই সাপে-নেউলে। সেই দুই প্রাণীর লড়াই যাঁরা দেখেছেন, জানবেন তা কদাচ এক লপ্তে শেষ হয় না। দীর্ঘ কামড়া-কামড়ি চলতেই থাকে। ঠিক সে রকমই দফায় দফায় বিভিন্ন স্থানে ঘামাসান লড়াই অমীমাংসিত থাকার পরে আকবর বাদশা অবশেষে ঠিক করেন খান জাহান হবেন বাংলার নয়া সুবেদার। তাঁর সঙ্গে থাকবেন বাদশার খুব কাছের মানুষ রাজা টোডর মল। বাংলার ঘোর বর্ষায় জুলাই মাসে পদ্মাপাড়ের এক হাঁটু কাদায় বাধল ভীষণ লড়াই। শেষে সেই কাদাতেই দাউদ খানের কাল হল। যখন দুরন্ত গতিতে ময়দান ছেড়ে পালানো দরকার, ঠিক সেই সময়েই সেই কাদায় গেল তাঁর ঘোড়ার চার পা ডুবে। ধরা পড়ে গেলেন বঙ্গের শেষ সুলতান। সুবেদার খান জাহান তৎক্ষণাৎ ঠিক করলেন দাউদকে ‘তাঁর মাথার ভার থেকে মুক্ত করা দরকার’। সেই মাথা চলে গেল সে সময়ে আকবর বাদশার রাজধানী ফতেপুর সিকরির দরবারে উপঢৌকন হয়ে। ধড় ঝুলতে থাকল তাণ্ডা জনপদে সর্বসমক্ষে। বঙ্গদেশ মুঘল সাম্রাজ্যে লীন হল।
এবার প্রশ্ন হল, দরবারি স্মৃতি কি এতই দুর্বল যে, এ হেন দাউদ খাঁ, যিনি স্বয়ং আকবর বাদশাকে নাস্তানাবুদ করে ছেড়ে ছিলেন তাঁর স্মৃতি বিজড়িত খিচুড়ি আকবর বাদশার নাতির দস্তরখওয়ানে পরিবেশিত হবে মহাঘটা করে? হজম করা মুশকিল। এ ছাড়া মুঘল যুগের যে দাউদ খানের কথা সহজেই জানা যায়, তিনি ছিলেন বিখ্যাত মুঘল সেনাপতি দাউদ খান পন্নি। আলমগির বাদশার পেয়ারের মানুষ। মৃত্যু ১৭১৫। কাজেই শাহ জাহানের আমলের কোনো খানার নাম তাঁর নামে নামাঙ্কিত হতে পারে না। ভালো কথা, শুধু চালই নয়। গুজরাটে খমভট উপসাগরীয় অঞ্চলের এক প্রজাতির বিখ্যাত গমের নাম দাউদখানি গম, যা ভালিয়া গম নামেও পরিচিত। মোদ্দা, শাহ জাহানের সমসাময়িক বা তার আগের অন্য কোনো দাউদ খাঁকে আমি খুঁজে পাইনি। কাজেই আমাদের খিচুড়ি অ্যাডভেঞ্চারে সে রহস্যের সমাধান হল না। কিন্তু নামে যেমনই হোক, স্বাদে কেমন সে খিচড়ি। তা বুঝতে গেলে প্রথমে রেসিপি দেখে নেওয়া জরুরি। হুবহু তুলে দিলাম৩—
খিচড়ি দাউদখানি
মাংস—১ শের (৮৩৭ গ্রাম—শাহ জাহানি শের)
ঘি—১ শের (৮৩৭ গ্রাম)
ধনে—১ দাম (২০.৯ গ্রাম)
নুন—৩ দাম (৬২.৭ গ্রাম)
আদা—১ দাম (২০.৯ গ্রাম)
মুরগির ডিম—১টি
খিচড়ি মুগ—১ শের (৮৩৭ গ্রাম)
পালং শাক—আধ পোয়া (১০৪. ৬২ গ্রাম)
সামগ্রীর তালিকায় অনুল্লেখিত কিন্তু ব্যবহৃত সামগ্রী
লবঙ্গ—পরিমাণ মতো
জাফরান—পরিমাণ মতো
পেঁয়াজ—কুচি করা ২০০ গ্রাম
প্রথমে অর্ধেক ঘিতে মাংসটা সাঁতলে নিনি। রেখে দিন। অর্ধেক মাংস কিমা করে নিন। অর্ধেক রান্না (সিদ্ধ) করে রাখুন। মশলা মেশান। ডিমটা সিদ্ধ করে নিন। ডিমটা ছাড়িয়ে নিন। কিমা করা মাংসে ডিমটা ভেজে নিন। বাকি কিমাটা ছোটো ছোটো দানা পাকিয়ে লবঙ্গ দিয়ে সাঁতলে নিন। জল দিন। কিছুক্ষণ পরে মশলা মিশিয়ে দিন। খিচড়ি (মুগ) দো-পেঁয়াজি করে নিন। ঝোলের মধ্যে মাংসের স্টক ও মশলা দিয়ে দিন। যে শাকের কথা আগে বলা হয়েছে সেটা গলিয়ে নিন। জল যখন একটু বাকি, তাতে জাফরান এবং ছোটো দানা পাকানো মাংস দিয়ে দিন। বাকি যে মাংস আছে তাকে বাকি ঘি ও লবঙ্গ দিয়ে সাঁতলে নিন। দমে চড়িয়ে দিন। থালায় পরিবেশনের সময় ডিমটা কেটে দু-টুকরো করে ওপরে রেখে দিন।
এ আমি আগাগোড়াই বলে আসছি যে, এ সব খানদানি হেঁশেলে যাঁরা রান্না করতেন, সেই সব ডাকসাইটে বাবুর্চিরা কুকবুক লিখতেন না। কোনো না কোনো ব্যক্তির ওপর হুকুম হত সে কাজটা সাঙ্গ করার। তিনি তখন ছুটতেন সেই সব ধরা-কে-সরা-জ্ঞান-করা রকাবদারদের পিছন পিছন নোট্স নিতে নিতে। কাজেই তা থেকে যে ওপরে দেওয়া একটি অদ্ভুত রেসিপি তৈয়ার হবে এতে আর অবাক হওয়ার কী আছে। কিন্তু এ থেকে আজকের মতো করে একটা পাকপ্রণালী গড়ে নেওয়া অসম্ভব হবে না, যদি খানা পাকানোয় অভ্যাস থাকে। সেটা, আমার হিসেবে দাঁড়াবে এ রকম—
প্রথমে অর্ধেক মাংস কিছুটা ঘিতে সাঁতলে আধসিদ্ধ করে স্টক আর মাংস আলাদা করে রেখে দিন। বাকি অর্ধেক মাংস কিমা করে তার অর্ধেক গোল গোল ছোটো ছোটো দানা করে পাকিয়ে নিন। ডিম সিদ্ধ করে ছাড়িয়ে রাখুন।
কিমা থেকে দানা পাকানো মাংসটা লবঙ্গ দিয়ে ভেজে নিন। তাতে ডিমটাও ভেজে আলাদা করে তুলে রাখুন। অল্প জল দিন। ফুটতে থাক। অন্য দিকে মুগডাল পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ঘিয়ে ভালো করে সাঁতলে নিন। কিমা করা মাংস অল্প ঘিতে ভেজে নিন। এবার আলাদা করা স্টক, ভেজে নেওয়া মুগ, কিমা করা মাংস, শাক সব এক সঙ্গে ফুটতে থাকা দানা পাকানো মাংসে দিয়ে দিয়ে দিন। লক্ষ রাখুন শাক যেন গলে যায়। অতঃপর সেই আলাদা করে রাখা মাংস আরও একবার ঘিতে লবঙ্গ দিয়ে ভেজে নিন। এবং ফুটতে থাকা বাকি সামগ্রীর মধ্যে দিয়ে দিন। সব এক সঙ্গে দমে চড়ান (মানে পাত্রের ঢাকনা দিয়ে দিন)। থালায় পরিবেশনের সময় আলাদা করে রাখা ডিম দু-টুকরো করে, সবার ওপরে রেখে পরিবেশন করুন।
এই তাহলে দাউদখানি খিচড়ি—সম্পূর্ণ চালহীন। আসলে উপাদেয় ‘ডাল-মাস’! বোঝো!
(ক্রমশ…)