‘‘একদিন রাজপ্রাসাদে একটি মূষিক তাঁহার গোচরে আসায় তিনি আদেশ করিলেন মূষিটিকর জন্যেও যেন নির্ধারিত পরিমাণ শস্য ও অর্থ বরাদ্দ করা হয়…’’৷ কে তিনি? পঞ্চদশ শতকে ভারতের মালোয়া রাজ্যের সুলতান ঘিয়াসউদ্দিন শাহ (রাজত্বকাল—১৪৬৯-১৫০০)৷ এই সুলতানের বিষয়ে লিখছেন মহম্মদ কাসিম ফরিশ্তা। ইরানের অস্ত্রাবাদ থেকে শৈশবে ভারতে এসে ফরিশ্তা নানা ঘাটের জল খেয়ে শেষে বিজাপুরের সুলতান দ্বিতীয় আদিল শাহের দরবারে ইতিহাসকার হয়েছিলেন। সপ্তদশ শতকের গোড়ায় ‘তারিখ-ই-ফরিশ্তা’ নামক তেরো খণ্ডের এক বিপুল বই লেখেন, যার পৃষ্ঠায় ইতিহাস আর কিস্সা প্রায়শই মিলে মিশে গিয়ে বেশ একটা সরেশ ভারতীয় রাজকাহিনি তৈরি হয়েছে১৷ ঘিয়াসউদ্দিন শাহের এই ইঁদুরের জন্য শস্য ও অর্থ বরাদ্দকে ফরিশ্তাসাহাবও ‘অ্যাবসার্ড’ এক কাণ্ড মনে করেছেন২৷ আসলে ঘিয়াসউদ্দিনের গোটা শাসনপ্রক্রিয়াটার মধ্যেই বাস্তবের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এক মহা আজগুবিপনা ছিল৷ যেমন, মসনদে আসীন হওয়ামাত্র তিনি এক মহা তামাশা (grand entertainment) আয়োজন করে মন্ত্রী-সান্ত্রীদের জানিয়ে দেন, চৌত্রিশ বছর ধরে বাপের সেনাবাহিনীতে যুদ্ধ করেছেন তিনি৷ কাফি হোগয়া, জিয়াদা হো গয়া৷ আর নয়৷ এই না বলে নিজের তলোয়ার, রাজছত্রি এবং পালকি ছেলের হাতে সঁপে দিয়ে তিনি তাঁর সভা বসানোর ব্যবস্থা করলেন এক্কেবারে হারেমের অন্দরে, যেখানে কিনা ছিল ১৫ হাজার নারী, লিখছেন ফরিশ্তা৷ আর ছিল ‘পুরুষ পোশাক পরিহিতা’ ৫০০ ‘তুর্কি মহিলা’, হাতে তীর-ধনুক, ৫০০ সমরূপে সজ্জিত আবিসিনীয় মহিলা, হাতে বন্দুক৩৷
সেই যে তিনি হারেমে সেঁদিয়েছিলেন, আর বার হননি! ১৪৮২-তে যখন বেহলোল লোদি হামলা বলে বসলেন মালোয়ার ওপর সে হামলার কথা রাজধানী মাণ্ডু শহরে জনে জনে জানলেও ঘিয়াসউদ্দিনের কানে সে বার্তা পৌঁছতে মন্ত্রীমশাইদের কালঘাম ছুটে গিয়েছিল৷ অথচ ফরিশ্তার কাছেও ‘এ এক অত্যাশ্চর্য সত্য’ মনে হয়েছে যে, তাঁর রাজ্যে কখনও কোনো বিদ্রোহ হয়নি৪৷ আমার মাঝে মাঝেই মনে হয় উপেন্দ্রকিশোর তাঁর শুন্ডিরাজের মডেলটি এই চরিত্রেই পেয়েছিলেন৷
ঘিয়াসউদ্দিনের এই সব কাণ্ডের প্রসঙ্গ তোলার কারণ এই যে, এই আজগুবি রাজার খানদানি খানাদানার রেসিপি সংকলিত করেই তৈরি হয়েছে ‘নি’মতনামা’৷ আমার মতে যা ভারতের প্রথম প্রামাণ্য কুকবুক। ঘিয়াসউদ্দিনের দরবারে একটি শিল্পীগোষ্ঠী থাকতেন, যাঁদের কাজই ছিল মিনিয়েচার-অলংকৃত বই তৈরি করা৷ এঁরাই সুলতানের প্রিয় খানাগুলির রেসিপি একত্রিত করে নি’মতনামা তৈরি শুরু করেন ঘিয়াসউদ্দিনের জীবৎকালেই, কিন্তু তা যে তাঁর ছেলে নাসির শাহের আমলে শেষ হয় তা নামেই প্রমাণ—‘নি’মতনামা-ই-নাসির-অল-দিনশাহি’৷ বর্তমানে ব্রিটিশ লাইব্রেরি-র Oriental and India Office Collections-এ সযত্নে রক্ষিত এই পাণ্ডুলিপিটি৷ সেটি মূল সহ ইংরেজিতে সম্পূর্ণ অনুবাদ করে আমার মতো একাধারে খাদ্যরসিক ও খানা-কলমচিদের এক আশ্চর্য উপহার দিয়েছেন ব্রিটিশ লাইব্রেরির অলংকৃত ফারসি পাণ্ডুলিপি বিভাগের প্রাক্তন কিউরেটর নোরা এম টিটলি৫৷
সালাম টিটলি মেমসাহেব৷ আর তিনিই জানাচ্ছেন এর রচনাকাল ১৪৯৫ থেকে ১৫০৫। তাঁর কথায় এ পাণ্ডুলিপি এক ‘ট্রেজার’, সম্পদ৷ সম্পদ বিভিন্ন কারণে৷ তার ভাষার জন্য—এতে মেলে ফারসির সঙ্গে মিশ্রিত এক্কেবারে প্রথম যুগের উর্দুর অনবদ্য নিদর্শন৷ ইরানের শিরাজ় ‘তুর্কমানি’ ঘরানায় আঁকা তার ৫০ টি অমূল্য মিনিয়েচার অলংকরণের জন্য৷ আর রেসিপিগুলির জন্য তো বটেই৷
এও এক রহস্য বটে! পঞ্চদশ শতকের শেষ তো সত্যি বলতে কী এ মহাভারতের ইতিহাসে প্রায় সেদিনের কথা। তার হাজার হাজার বছর আগে থেকেই তো চলছে এ ভূখণ্ডে খানা-পিনা নিয়ে হরেক কিসিমের দুরন্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা। অথচ একটা যথাযথ পাকপ্রণালী-কেতাব পেতে অপেক্ষা করতে হল তথাকথিত ‘ইসলামি’ জমানা অবধি? বিলকুল। এক যদি না ‘নলের পাকদর্পণ’ নামের কেতাবটি এর আগে লেখা হয়ে থাকে। সে কেতাব শুরুই হচ্ছে এ ভাবে— বহুকাল পূর্বে ঋতুপর্ণের নগরীতে আগমন করিয়া রাজা-কে নৈষধ কহিলেন, ‘হে রাজন্, আমার নাম বাহুক। আমি নিজদেশ পরিত্যাগ করিয়া আসিয়াছি। অশ্বারোহণের পারদর্শিতায় আমার সমকক্ষ পৃথিবীতে আর কেহ নাই।… বিবিধ অন্ন ও মাংস রন্ধনের শৈলীও আমার আয়তত্ত্বে৬।’ এই না বলে ছদ্মবেশী রাজা নল ওরফে নৈষধ ওরফে বাহুক রাজা ঋতুপর্ণকে শোনাতে থাকলেন একের পর এক জিভে-জল-আনা রেসিপি, সেগুলির স্বাস্থ্যগত গুণাগুণ সহ।
মহাভারতে এবং তার অনেক পরের মহাকাব্য নৈষধচরিতে বর্ণিত নল-দময়ন্তী প্রেমকথা কে না জানে? নলবাবু যে রন্ধনপটু তাও সুবিদিত। কিন্তু তারই মধ্যে এই কুকবুকটিকে যে কবে গুঁজে দিলেন তার কোনো হদিশ নেই। এ কেতাবের ইংরেজি তরজমার আলোচনা করতে গিয়ে অধ্যাপক নবীন কোদলাদী একজায়গায় লিখেছেন, বিশিষ্ট ইন্ডোলজিস্ট জেরিট ইয়ান মিউলেনবেল্ড জানিয়েছেন, নলের পাকদর্পণের কথার উল্লেখ প্রথম মেলে চক্রপাণি দত্তের লেখায়৭। বীরভূমের ময়ূরেশ্বরের চক্রপাণি ছিলেন একাদশ শতকের ভারতবিখ্যাত আয়ুর্বেদ, এবং ‘চিকিৎসাংগ্রহ’ নামক বিপুলখ্যাত পুস্তকের রচনাকার। তিনি যদি পাকদর্পণের উল্লেখ করে থাকেন তবে পাকদর্পণ একাদশ শতকের আগেই রচিত। কিন্তু মিউলেনবেল্ড যে এ কথা কোথায় লিখেছেন? সে কথা তাঁর প্রবন্ধে নেই। ই-মেল করলাম তাতে জানালেন History of Indian Medical Literature নামের পাঁচ খণ্ডের কেতাবে। কোন্ খণ্ডে জানাননি কোদলাদী। আর খোঁচাইনি, কারণ সেই ই-মেলে কোদলাদী এও জানিয়ে দিয়েছেন যে মিউলেন বেল্ডও মনে করেন পাকদপর্ণের রচনার সময়কাল অনির্দিষ্ট। আবার, তাঁর প্রবন্ধে কোদলাদী আন্দাজ করেছেন, লাল লঙ্কার কোনো উল্লেখ এতে নেই, কাজেই নির্ঘাৎ সপ্তদশ শতকের আগে এ কেতাব লেখা। এ তথ্যটাও গোলমেলে—১৪৯৮ সালে পোর্তুগিজ নাবিক ভাস্কু দা গামা ভারতে হাজির হওয়ার পর পরই৮, অর্থাৎ ষোড়শ শতকের গোড়া থেকেই ভারতে লঙ্কা চাষের শুরু, সপ্তদশ শতক নয়। কোদলাদী আবার এও জানাচ্ছেন, পাকদর্পণে রয়েছে এমন নানা উদ্ভিদের উল্লেখ যা থেকে অনুমেয় যে তা দ্বাদশ শতকের আগে লেখা হতেই পারে না। কোন্ কোন্ উদ্ভিদ তার অবশ্য কোনো হদিশ দেননি তিনি। কাজেই এ ক্ষেত্রে কোদলাদীর অনুমান বিশেষ নির্ভরযোগ্য বলে মনে হয়নি আমার। এ ছাড়া, আর কোনো সূত্রে কোথাও মেলেনি পাকদর্পণ রচনার সময়কালের কোনো ইঙ্গিত।
তবে রচনাকাল যাই হোক না কেন, সেও এক পরমাশ্চর্য কেতাব বটে, যা হাতে নিয়ে রসুইঘরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গিয়ে যেমন পাকিয়ে ফেলতে পেরেছিলাম বিচিত্র নানা খানা, তেমনি চিরকালের মতো আমার মন থেকে ঘুচে গিয়েছে ‘কেওড়ার জল’ দেওয়া বিরিয়ানির প্রতি আমার নাক সিঁটকানো ভাবটা। ঘুচে গিয়েছে এই কারণেই যে, সে কেতাবের ৭০ থেকে ৭৯ নম্বর শ্লোক জুড়ে রয়েছে ‘সামান্যমাংসৌদননির্মাণবিধি’! আহা, শব্দের কী অপূর্ব ব্যবহার—‘রেসিপি’ হল ‘নির্মাণবিধি’! সত্যিই প্রতিটি আহার তো এক নির্মাণই, জটিল নির্মাণ! যাঁরা টুকটাক গ্রিক রান্না করেন, তাঁরা জানবেন যাকে প্রায় গ্রিসের জাতীয় খানা বলা যেতেই পারে সেই মুসাকা তৈয়ারের সময় একেবারে শেষে বেক করার আগে মাংসের কিমা, বেগুন, বেশামেল সস্ ইত্যাদি যে পরতে পরতে সাজিয়ে দিতে হয় তাকে ওরা বলে ‘Building the moussaka’! আর সেই মাংসৌদন নির্মাণের বর্ণনায় ৭৫ নম্বর শ্লোকটি জানিয়ে দিচ্ছে তাতে দিতে হবে ‘কেতকী কুসুমানি চ’! নবঘন বরিষণে হৃদয়ের মধু কী জানি কী ভয়ে কাঁটাতে ঢাকা দেওয়া কেয়া কুসুমের এমন ব্যবহারের খোঁজ বোধ করি রবীন্দ্রনাথকেও পুলকিত করত। কেতকি—কেয়া—কেওড়া—Fragrant screwpine-Pandanus Odorifer! বিরিয়ানিতে কেওড়ার জল কোনো অর্বাচীনের আনাড়িপনা মোটেই নয় তবে! কিন্তু, যেমনটা আগেও বলেছি, সে কিস্সা অন্য কোনো দিন। এখন খিচুড়ি। আর পাকদপর্ণের এগারোটি অধ্যায় ঘেঁটে দেখেছি খিচুড়ি স্রেফ অনুপস্থিত! কাজেই কোনো যথার্থ কুকবুকে উল্লিখিত খিচুড়ির খোঁজে আমাদের ফিরতে হবে ঘিয়াসউদ্দিনের সেই আজগুবি পাকশালাতেই।
কেন বারবার এ হেঁশেলকে আজগুবি বলছি? ধরা যাক এই ‘বাঘড়া’ নামের খানাটির রেসিপির কথাই (বাঘড়া মানে টিটলি জানাচ্ছেন একরকমের আটা-মাখা, dough। আর অভিধান বলছে ‘A kind of food made of boiled meat flour etc.৯’) কথাই—
‘‘গিয়াথশাহির বাঘড়ার আর-একটি পাকপ্রণালী৷ বাঘড়ার টুকরোগুলোর থেকে বড়ো মাপের সোনার পাতের পাতা কেটে নিন৷ সেগুলিকে জলে সিদ্ধ করুন৷ এর ফলে বাঘড়ার ওপর (সোনার) গিল্টি ছড়িয়ে পড়বে৷ সরিয়ে ফেলুন৷ এবার ওই বাঘড়া সিদ্ধ জল দিয়ে পাইননাট, কাঠবাদাম, পেস্তা এবং কিশমিশ বেটে ফেলুন৷ সেই বাটা বাঘড়ার মধ্যে দিন, যাতে বাঘড়াটি খেতে দারুণ সুস্বাদু হয়৷ আদা ভেজানো ভিনিগার আদা ছেঁকে তাতে যোগ করুন৷ যদি অন্যরকমের বাঘড়া লাগে তাহলে তাতে মাঠা বা তেঁতুলের রস বা লেবুর রস বা টক কমলালেবুর রস বা যে-কোনো অম্ল-ফলের রস যোগ করুন যতটা প্রয়োজন৷ কিংবা জাফরান, কস্তুরী আর কর্পূর জলে গুলে তা বাঘড়াতে দিন৷ মাংসের টুকরো কেটে ভালো করে সিদ্ধ করে তা বাঘড়াতে দিন৷ কিংবা যদি তেমন ইচ্ছা করা হয় তাহলে দিন কাকের ঘিলু বা পাতলা রুটি বা ঘিয়ে রান্না করা মুগডাল বাটা৷ কিংবা দিন টক দই সিদ্ধ করে তাকে দুঘ (নোনতা ঘোল) থেকে ছেঁকে নিয়ে৷ এরকম যা-যা দরকার একটি একটি করে দিন৷ এই পাকপ্রণালীর ১০০ টি রকমফের আছে৷’’
অনেক কিছুই চেখে দেখেছি জিন্দেগিতে কিন্তু সোনাতে সিদ্ধ আটায় মোড়া কাকের ঘিলু আর চেখে দেখা হল বলে মনে হয় না৷
তেহরান থেকে প্রকাশিত ডক্টর আব্বাস আরিয়ন পুরকাশানি এবং মনুচহার আরিয়ন পুরকাশানি সংকলিত ফারসি-ইংরেজি অভিধান জানাচ্ছে, ‘নি’মত’ মানে ইংরেজিতে—Affluence, easy life, comfort of life, riches, delicacy, dainty, grace, favour, talent, blessing৷ ‘নামহ্’ মানে Letter, epistle, book৷ বাংলায় আমরা যাকে বলতেই পারি কাহন৷ নি’মতনামাহ্-ই-নাসির শাহি—নাসির শাহের বিলাস কাহন৷ নোরাহ্ এম টিটলি সে বইয়ের ইংরেজি নাম দিয়েছেন—The Sultan’s Book of Delights৷ রুটলেজ প্রকাশিত এ বইয়ের মধ্যেই রয়েছে নি’মতনামা-র গোটা পাণ্ডুলিপিটাই—ঠিক যেমনটি তা রক্ষিত রয়েছে ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে তার প্রত্যেক পাতার স্ক্যান করা ছবি৷
সে পাণ্ডুলিপি খুললে দেখা যাবে এক্কেবারে প্রথম পাতায় আবছা অক্ষরে লেখা আছে—এই নি’মতনামা-ই-নাসিরশাহিতে রয়েছে আহার নির্মাণ বিধি, হশওয়ার (যাকে বলে অ্যাফ্রোডিজিয়াক), গুলাব (গোলাপজল), অরক (সুরা) এবং আত্তরাত (বিবিধ আতর) তৈরির পদ্ধতি৷ আর তারপরেই পাতা উলটাতে উলটাতে পেয়ে যাচ্ছি বেশ কয়েক কিসিমের ‘খিচড়ি’-র রেসিপি ও উল্লেখ—আমার হিসেবে কোনো পাকপ্রণালীর কেতাবে খিচুড়ির উল্লেখ এটিই প্রথম। আর তার প্রথম উল্লেখটি আসছে এই পাণ্ডুলিপির যে পৃষ্ঠায়, ব্রিটিশ লাইব্রেরির ক্যাটালগে তা চিহ্নিত আছে ২৮-এ বলে—
নউ’য়ি দিগর তরতিব-এ-খিচড়ি (খিচড়ির আর-এক প্রণালী)
তিন ভাগ মুগডাল, এবং একভাগ চাল মেথি দেওয়া খুশবুদার ঘি-তে ভালো করে ভাজুন। জল ও নুন দিন। ভালো করে সিদ্ধ করুন। পরিবেশন করুন।
বাঃ! ধ্রুপদি নিরামিষ খিচুড়ি। প্রায়। প্রায় কারণ খিচুড়ির ঘি-কে মেথি দিয়ে সুবাসিত করে তোলার প্রণালীটা বেশ নতুনই মনে হল আমার। এখনকার নিরিখেও। ভালো কথা, এর মূলপাঠেও কিন্তু পষ্ট বলা হচ্ছে ‘মুঁগদালশুস্তেহ্’, ছাড়ানো সোনামুগ! আর ‘রোঘন’ রহস্যটা রয়েই গিয়েছে। সাধারণত ঘি বোঝাতে ‘রোঘনজ়র্দ’ লেখা হয়। এখানে আছে শুধু ‘রোঘন-এ-খুশবু’। সুপণ্ডিত টিটলি তরজমা করেছেন ‘sweet-smelling ghee’, তাই আমি খোদার ওপর খোদকারি করলাম না। কিন্তু রহস্য একটা থেকেই গেল—‘দিগর তরতিব’, আর-এক প্রণালী, বলা হল কেন একে? এ কেতাবে তো এর আগে খিচড়ি পাকের অন্য কোনো রেসিপি নেই! পরে আছে। তাহলে ‘আর-এক’ কেন? রহস্য!
(ক্রমশ… পরের কিস্তি পড়ুন ১৮ ফেব্রুয়ারি)
"ঘিয়াসউদ্দিনের এই সব কাণ্ডের প্রসঙ্গ তোলার কারণ এই যে, এই আজগুবি রাজার খানদানি খানাদানার রেসিপি সংকলিত করেই তৈরি হয়েছে ‘নি’মতনামা’৷ আমার মতে যা ভারতের প্রথম প্রামাণ্য কুকবুক।"
উইকি থেকে,
"The Mānasollāsa, also known as Abhilashitartha Chintamani, is an early 12th-century Sanskrit text composed by the Kalyani Chalukya king Someshvara III, who ruled in present-day South India.
Part III: Food and entertainment: Bhartur Upabhogakāraṇa
The Manasollasa contains recipes of vegetarian and non-vegetarian cuisines, which according to Mary Ellen Snodgrass, the editor of Encyclopedia of Kitchen History, preceded the cookbook writing history in Europe by a century.[Snodgrass, Mary Ellen (2004). Encyclopedia of Kitchen History. Routledge. ISBN 1-135-45571-6]. While the text is not the first among Indian books to describe fermented foods, it contains a range of cuisines based on fermentation of cereals and flours.[29][32] Among meat dishes, the text does not include the meat of cow, horse, elephant, parrot, peacock or eggs. It describes cuisines based on pork, venison, goat meat, and fish among others.[33]
আর তামিল সঙ্গম সাহিত্য ধরলে তো আরো অনেক বছর পিছিয়ে যেতে হবে।
Ar, আপনি মাঝখান থেকে পড়তে শুরু করেছেন। তামিল সঙ্গম সাহিত্য বিশদে চর্চিত হয়েছে। ঐ সাহিত্যে কোনো cookbook নেই। মানসল্লাসের তারিখের কোনো প্রামাণ্যতা নেই, বিশিষ্ট প্রাচীন ইতিহাসকারদের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি।
ar: 16 পর্ব পড়ুন।
ar: Manasollasa Vol I translated by Gajanan Shrigondekar states right in the first paragraph that the authorship attributted to Chalukya king Somesvara is "incorrect". Further, Manasollasa is not a cookbook. It has 100 chapters on 100 different topics, food being one of them. And more, much of Manasollasa's present colophone appears to be inserted much later, বাংলায় যাকে প্রক্ষিপ্ত বলে। মহাভারতে গীতার মতো (রমিলা থাপার). It's best to avoid wikipedia for any serious discussion.
@নীলাঞ্জন হাজরা
বিষয়ে সেরকম দখল নেই, তাই কিছু হলে উইকিপিডিয়া দেখি। ভুলটা অবশ্যই ঠিক করে দিন, (যেমন ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১১:০৬) তবে একেবারে বারণ করবেন না।
@নীলাঞ্জন হাজরা
প্রথমেই আপনার প্রতি মন্তব্যর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাই। একুশের শুভেচ্ছা!!
দেখুন, উইকি নিয়ে আমার কোনোরকম উন্নাসিকতা নেই। শুধু লেখার আগে দেখে নিতে হবে যে ক্রশ-রেফটা সঠিক কিনা। সেখান থেকেই আলোচনা এগোবে। তবে শুধু প্রাচীন ঐতিহাসিকদের কথার ভিত্তিতে কোনরকম ঐতিহাসিক প্রমাণ দেওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখতে চাই। "ঐতিহাসিকদের সাথে কথা বলে দেখেছি "মসজিদের নীচে মন্দির ছিল" বা শুভ্র সৌধটি পূর্বে রাজপুতদের প্রাসাদ ছিল"; এই রকম প্রচুর শুনে এসেছি। এরপর যে মহাপ্রলয় হল বা এখনও ঘটে চলেছে, তার ফল আমরা সবাই কমবেশী ভোগ করছি। গীতা যে মহাভারতের প্রক্ষিপ্ত অংশ, এই ব্যাপারটা বোঝার জন্য আমার কোনদিন শ্রদ্ধেয়া রোমিলা থাপারের লেখা পড়ার প্রয়োজন হয়নি। এর জন্য নিবিষ্ট ব্যতিরেকে পঠনই পর্যাপ্ত ছিল। অথচ সেই প্রক্ষিপ্ত অংশের অগণিত ভাষ্য/টীকা/অনুবাদ যুগ যুগ ধরে (হিন্দু) ভারতীয় জীবনের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে রয়েছে। এই প্রক্ষিপ্ত অংশ নিয়ে প্রস্থানত্রয়ী হল, এমনকি সেটার ইংরাজী অনুবাদ করে উইলকিনস সাহেব গীতাকে একরকম বিশ্বের দরবারে পেশ করে ফেললেন।
"12th-century way of life"ঃ মানসোল্লাসা এক অর্থে তারই লিপিবদ্ধকরণ। তো, দ্বাদশ শতকের রান্নার বিবরণ যে একবিংশ শতকের মধু জাফরীর রান্নার বইএর মতন হবে, এই আশাও করিনা। কিন্তু এর "অন্নভোগ" এবং "পানীয়ভোগ" এর অনুবাদ পৃথকভাবে প্রকাশ করতে পারলে বেশ হত। আর চার্লস উইলকিনসের মতন কেউ ইংরাজী অনুবাদ করে দিলেই তার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও মিলত!!
সঙ্গম সাহিত্য আর cookbook একই লাইনে লেখা যাবে কিনা জানিনা। আমি লিখে থাকলে ভাষাঠাকুর নিশ্চয় আমায় পাপ দেবেন। কিন্তু সঙ্গম সাহিত্যের খানাবন্দনা (আপনার থেকে শব্দ ধার নিলাম!!) নিয়ে প্রচুর প্রচুর অ্যাকাডেমিক কাজ হয়ে চলেছে। কে টি আচয়ার বইতে (১৯৯৪) তামিল সাহিত্যে খানাখাজানা নিয়ে লেখা আছে।
মানাসোল্লাসার রচয়িতা প্রসঙ্গেঃ প্রথম খন্ডের (১৯২৫; GOS #XXVIII) ভূমিকাতে, আপনি যেমন লিখলেন, শ্রীশিরোদকর বলেছেন যে , "The authorship of the Manassollasa is attributed, ("...."), to the Chalukya king Somesvara, surnamed ......". A reference to sloka 371 on page 62, will however, make it evident that this attribution is incorrect." তারপরে উনি আরো লিখেছেন যে, " It is probable that the book was composed in his Court by some prodigiously learned and well-informed man, thoroughly acquinte with the royal household, royla necessitie and royal whims." ধরে নেওয়া গেল যে রাজার হয়ে তাঁর প্রজা লিখে দিয়েছিলেন। আপত্তির কিছু নেই। পুরাকালে এইরকম হয়েই থাকতো। তার কিছু লাইন পরেই আছে যে, "The date of composition of this work seems to be 1052 Saka (1131 A.D.) as the sloka 61 on page 34 while giving the Dhruvan'ka mentions Friday as the first day of the month of Chaitra when the Saka year had elapsed."
মানাসোল্লাসার দ্বিতীয় খন্ডের (১৯৩৯; শিরোনামঃ Manasollasa of King Somes'vara: vol II;GOS #LXXXIV ) ভূমিকাতে শিরোদকর লেখেন যে, "The second volume of the Manasollasa, the encylopaedic work of the Western Calukya King Somesvara, is now offered to the Sanskrit knowning public.....(...)... It is worthy of note that in the 4th Vimsati the chapter on Music is the longest and equals in length the whole of the first volume. This, no doubt, bespeaks the great interest the royal author King Somesvara took in the science and perhaps also in the art of Music".
এই দশকের গবেষকদের মতেঃ "Manasollasa is an important aid to know the food culture of the 12th century CE. Moreover, it provides the description of pure Hindu cookery as it is composed prior to the intermingling of Hindu and Muslim food cultures. It is interesting to know that many of the food items of that period with similar type of cooking methods have continued today especially in South India. (Annals of the Bhandarkar Oriental Research Institute , Vol. 94 (2013), pp. 169-170)
আপনার সব লেখাই মন দিয়ে পড়ার চেষ্টা করি, আপনার দেওয়া রেফ্গুলো নেড়েচেড়ে দেখি। ঋদ্ধ হই। না হলে আর এই পোড়া জীবনে শ্রীবাবুলাল শুক্ল শাস্ত্রীর দেখা পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা ছিল না!!!
শুভেচ্ছা,
মানাসোল্লাসার অংশ খাদ্য সংস্কৃতির জন্য আকরগ্রন্থ হিসেবে বহুক্ষেত্রেই বিবেচ্য হয়েছে।
'মানসল্লাসের তারিখের কোনো প্রামাণ্যতা নেই, বিশিষ্ট প্রাচীন ইতিহাসকারদের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি। ' এই নিয়ে একটু বিশদে বলা যাবে ? কেন প্রামাণ্য নয়,কী কী কারণ দেখিয়েছেন ? আগ্রহ রইল।
গৌণ প্রশ্ন, প্রামাণ্যতা বলে কোন শব্দ হয় কি ? প্রামাণ্য জানতাম,প্রামাণিকতা জানতাম। প্রামাণ্যতা পড়িনি বা শুনিনি।
এপ্রসঙ্গে মনে পড়ল,আপনার আগের কোন একটি লেখার শিরোনামে পুরুষতান্ত্রিকতা দেখেছিলাম মনে হয়। এই শব্দটিও কি হয় ? কথাটি তো পিতৃতন্ত্র।