কেতাবের নাম নুসখা-ই-শাহজাহানি। খুররম বাদশার হেঁশেলের রেসিপিবুক। আমরা ঢুকে পড়েছি জাহাঙ্গিরের প্রিয় সেই ‘বাজরা খিচুড়ি’ ওরফে লাদরা-র অনুসন্ধানে। মিলে গেছে খিচড়ি জাহাঙ্গিরি নামের এক খিচড়িই। কী সেই বস্তু? তাই কি বাদশার গুজরাটে খাওয়া সেই প্রিয় খাদ্য? অসম্ভব এ খিচড়ি জাহাঙ্গিরি খিচড়ি তো পেঁয়াজ-মাংসের গন্ধে ম-ম। তাহলে? এসব রহস্যের সমাধানে নুসখার হেঁশেলেই আমাদের আরও খানিকক্ষণ ঘুরঘুর করতে হবে। কারণ, নুসখার মোট আট কিসিমের খিচড়ির মধ্যে একটি অন্তত সুফিয়ানা দিনেও বাদশাহের দস্তরখোয়ানে পরিবেশিত হলেও হতে পারত—
খিচড়ি গুজরাতি
ঘি— ১ শের (৮৩৭ গ্রাম)
খিচড়ি মুগ ডাল ছাড়ানো — ১ শের (৮৩৭ গ্রাম) (মূলে ‘শুসতহ্’ শব্দটি ব্যবহৃত, যার অর্থ হতে পারে washed, cleansed; dressed, prepared; pure, chaste বা neat। এক্ষেত্রে ধরে নিচ্ছি ‘ড্রেস্ড’)
দারুচিনি — ২ মাশা (১.৯৪ গ্রাম)
লবঙ্গ — ২ মাশা (১.৯৪ গ্রাম)
এলাচ — ২ মাশা (১.৯৪ গ্রাম)
গোলমরিচ — ১ টান্ক (৪.১৮ গ্রাম)
কালোজিরা — ১ দাম (২০.৯ গ্রাম)
রসুন — ১ দাম (২০.৯ গ্রাম)
আদা — ১ দাম (২০.৯ গ্রাম)
নুন — ২ দাম (৪১.৮ গ্রাম)
পেঁয়াজ — ১ পোয়া (২০৯.২৫ গ্রাম)
প্রথমে ঘি ও রসুনে ডালটা দিন। ভাজুন। লাল হয়ে এলে চাকা চাকা করে কাটা পেঁয়াজ (এটা মজার—মূল রেসিপিতে বলছে হল্ক়া-এ-পিয়াজ়) ও মশলাকুচি দিন। এইসব লাল হয়ে এলে অল্প জিরে দিন। এরপর ডাল থেকে পেঁয়াজ আলাদা করে নিন। চালটাকে ধীরে ধীরে দিয়ে নাড়তে থাকুন। পেঁয়াজ ও বাকি জিরেটা দিয়ে দিন। আন্দাজ মতন জল দিয়ে দমে বসিয়ে গলিয়ে ফেলুন। ঘি গরম করে ছড়িয়ে দিন। অল্প দম দিন।
খিচড়ি গুজরাতি (ডান পাশে), সঙ্গে খাগিনা (বা Baked Omelette)। নুসখাই-ই-শাহজাহানি-র পাকবিধি অনুযায়ী
পাকিয়ে দেখেছি দিব্য না হলেও দিব্যি। বাঘার ভাষায়—চলবে। ভালো কথা, মোক্ষম মুদ্রণপ্রমাদে উপকরণের তালিকায় চাল অনুল্লেখিত, কিন্তু মূল রেসিপিতে রয়েছে ঠিকঠাক। মুশকিল হল, এ খিচুড়ি সুফিয়ানা খিচড়ি বটে, কিন্তু এতে তো বাজরার কোনো নাম-ও-নিশান নেই। কাজেই নিশ্চিত ভাবেই এ খিচড়ি জাহাঙ্গিরের সেই দিলশাদ খিচড়ি নয়। এ খিচড়ি পাকানো প্রসঙ্গে আর কয়েকটি কথা। এক, ঘি, এবারেও এক শের দেওয়ার হিম্মত হয়নি। ২৫০ গ্রাম। হল্কা-এ-পিয়াজ়কে আমি ‘চাকা চাকা’ না করে একটু অন্য ভাবে ইন্টারপ্রেট করে কোয়াগুলি আলাদা আলাদা করে নিয়েছিলাম। আর খাগিনাটা দেখতে একটু পোড়া পোড়া লাগলেও সত্যিই উপাদেয়। মুরগির ডিম—বয়জ়া-ই-মুর্ঘ। খানা-তারিখে, খাদ্যের ইতিহাসে ডিম বড়ো আশ্চর্য যোগ, তা নিয়ে কিস্সা সম্ভার হাজির করব কোনোদিন, আপাতত থাক। তাই আর রেসিপি দিলাম না। খাগিনা খাস ইরানি ওমলেট।
জাহাঙ্গিরের নামের খিচুড়ি তস্যপুত্রের হেঁশেলেই যে শুধু তা পাকানো হচ্ছিল তা কিন্তু নয়। জাহাঙ্গিরি খিচড়ি পাকছিল তস্যপৌত্রের হেঁশেলেও। তা আস্বাদন করতে গেলে আমাদের ওলটাতে হবে আর-একটি ভারী কৌতূহলোদ্দীপক বইয়ের পাতা। নুসখার থেকেও কৌতূহলোদ্দীপক। কারণ তা শুধু এক মুঘল বাদশার আমলের গজ়া-তহজ়িব, খাদ্যসংস্কৃতির কথাই বলে না, বলে আরও অনেক কিছু যা পড়ে চমকে উঠতে হয়, বিশেষ করে এই হিন্দুত্ববাদী আস্ফালনের দিনে। সে বই ফারসিতে নয় উর্দুতে লেখা। সে বইয়ের তিনটি খণ্ড। সেবইয়ের প্রচ্ছদেই বড়ো বড়ো হরফে লেখা—আলোয়ান-এ-নি’মত ১৮৮৩। সেবইয়ের লেখক মুনশি বুলাকি দাস দেহলভি। দেহলভি—দিল্লিবাসী। এরপরের পরের পাতায় ফের বইয়ের নাম, লেখকের নাম। আর লেখা—প্রথম খণ্ড, দ্বিতীয় সংস্করণ। দিল্লির ময়ূর প্রেস থেকে ছাপা।
তারপরের পাতাতেই একেবারে ওপরেই ফের গোটা গোটা হরফে পরমাশ্চর্য লেখা—বিসমিল্লাহিররহমানরহিম! লিখছেন মুনশি বুলাকি দাস! কেন এই হিন্দু লেখক আল্লার বন্দনা দিয়ে নিজের বই শুরু করছেন? এও তো এক মহারহস্য! বেশ কিছুদিন এ প্রশ্নের উত্তর পাইনি। উত্তরের একটা আন্দাজ পেলাম বইয়ের তৃতীয় খণ্ডের প্রথম পৃষ্ঠায় আল্লার বন্দনার ঠিক নীচে একটি এক প্যারাগ্রাফের পৃথক বিভাগে লেখা এই বাক্য থেকে, ‘‘এইসব প্রণালী যে নীচে লেখা হল, তা এই বান্দার তৈরি নয়, আসলে তা একটি ফারসি পুস্তিকা এবং অন্যান্য বিশ্বাসযোগ্য বই থেকে উর্দুভাষায় তরজমা করা হয়েছে।’’ তাহলে বুলাকি দাস লেখক নন, তরজমাকার।
তাহলে তিনি যেসব বইয়ের অনুবাদ করলেন সেগুলি কী কী এবং কোন্ সময়ের? সঠিক জানার কোনো উপায় নেই। কিন্তু ফের একটা বিশ্বাসযোগ্য আন্দাজে পৌঁছোনো যেতে পারে। এবার চলে যেতে হবে বইটির প্রথম খণ্ডের পঞ্চম পৃষ্ঠায়। তার ওপরে বড়ো বড়ো হরফে লেখা—ইসলামি খানাদানা পাকানোর প্রণালী। আর তার নীচে একটি ছোট্ট অনুচ্ছেদ জানাচ্ছে, ‘‘প্রথমেই লেখা হয়েছে সেইসব খানাদানার হালহকিকত এবং প্রকরণ যা কিনা ‘সরকার-এ-ফলক একতদার গ়োফরান-পনাহ্ রিজ়ুয়ান দস্তগহ্ জ়িল্লে-সুবহানি জন্নত-আশিয়ান ফিরদৌস-মকান মুহিউদ্দিন অওরঙ্গজ়েব আলমগির বাদশাহ’-র বাবুর্চিখানায় এবং যাবতীয় নবাবদের ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের বাবুর্চিখানায় রান্না করা হত।’’ অতএব এ সিদ্ধান্ত টানা অসঙ্গত নয় যে ‘আলোয়ান-এ-নি’মত’ নামের বুলাকি দাসের উর্দু কেতাবটির প্রথম খণ্ডটি আসলে সেই ‘ফারসি পুস্তিকার’ তরজমা যার নাম আলোয়ান-ই-নি’মত। মুঘল জমানার খানাদানা নিয়ে তন্নিষ্ঠ গবেষণাপত্রে দিব্যা নারায়ণ আমাদের এ রহস্য সমাধানের দুর্দান্ত ক্লু, ‘Another significant cookbook—variously known as Khulaṣat-i Makulat u Mashrubut or Alwan-i Niʿmat or Khwan-i Alwan-i Niʿmat probably derives from the reign of Aurangzeb (r. 1656-1707) or somewhat later, since it refers to ʿAlamgiri weights.’। আমি দিব্যা নারায়ণের সঙ্গে ষোলো আনা একমত। আমার আন্দাজ মূল বই আলমগির বাদশাহের জমানাতেই রচিত, কিংবা তার অল্প কিছু পরে, অন্তত মুঘল দাপট থাকতে থাকতেই। আর আমার এও আন্দাজ মূল বইয়ের লেখক মুঘল দরবারের খুব কাছের কেউ ছিলেন, যার ফলে যেমন তিনি আলমগিরের বাবুর্চিখানার পাকোয়ানের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন, তেমনই তিনি সম্রাটের সম্বোধনে তাঁর ঠিক সেই দীর্ঘ উপাধি ব্যবহার করছেন—শ্রদ্ধায় বা ভয়ে—যা দরবার শুরুর সময় হাঁক পেড়ে ঘোষণা করা হত। ১৮৮৩ সালের ইংরেজ শাসনের জমানার লেখক হলে এটা করতেন বলে মনে হয় না। আবার এই লেখক মুসলমান ছিলেন। গোড়াতেই আল্লা-ত’লা-র বন্দনাও সেই কারণেই। মুনশি বুলাকি দাস সাহিব হুবহু অনুবাদ করছিলেন, এবং নিজে হিন্দু হলেও মূল লেখকের প্রতি অনুগত থেকে তিনি সে বন্দনা রেখে দিয়েছিলেন, তাঁর ধর্মবোধ তাঁকে হুকুম করেনি—ওই অংশ ছেঁটে ফেলে দে।
আলোয়ান-এ-নি’মত, ১৮৮৩, প্রচ্ছদ (বাঁ দিকে)। পরের পৃষ্ঠার ওপরেই লেখা বিসমিল্লাহিররহমানরহিম।
যদি দিতেন, কেউ তাকে আটকাত না, কারণ সালটা ১৮৮৩, ততদিনে এ দেশে তথাকথিত ইসলামি শাসনের শেষ রেশও মিলিয়ে গিয়েছে। কোম্পানি বাহাদুরের হাত থেকে ভারতের শাসন চলে গিয়েছে সরাসরি মালকা ভিক্টোরিয়া-র হাতে। তবু তরজমাকারের সততায় তা করেননি বুলাকি দাস। প্রণাম বুলাকি দাস দেহলভি। আমি নিজে বহু তরজমা করি, তরজমাকারের কাছে এই সততাই তো আশা করেন মূল বইয়ের লেখক ও পাঠক উভয়েই। আর তার থেকেও বড়ো কথা, হ্যাঁ, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শয়তানির ফাঁদে এদেশীয় হিন্দু ও মুসলমান মৌলবাদীরা পা দিয়ে সর্বনাশ ঘটানোর আগে শত-সহস্র বছর এ ভাবেই মিলেমিশে একাকার হয়ে বইছিল এই সর-জ়মিন-এ-হিন্দ-এ আসা বিবিধ সংস্কৃতির স্রোত। ইতিহাসের নানা উত্থানপতনের ঘনঘোর মুহূর্তে তার নানা শাখায় অবশ্যই রক্তের ছিটে পড়ছিল, কখনো-কখনো বিচলিত হওয়ার মতো ভাবেও পড়ছিল, কিন্তু মহা-ভারতের মূল স্রোত তার আগে কোনোদিন রক্তগঙ্গা হয়ে ওঠেনি—‘দিবে আর নিবে মিলাবে মিলিবে যাবে না ফিরে’-ই ছিল দস্তুর।
আর এই দস্তুরেই মুঘল জমানার বাদশাহি হেঁশেলে পাকানো হচ্ছিল খিচুড়ি, আলমগিরি হেঁশেলেও। বুলাকি দাসের তরজমার আলোয়ানের ৭৯ পৃষ্ঠায় শুরু হওয়া নয়া অধ্যায়ের শিরোনাম—তৈয়ারি শোলহ্-হা। শোলা তৈয়ারি। সর্বনাশ শোলা, মানে তো আগুন উর্দুতে—যা থেকে সেই বুকে চাক্কু বিঁধিয়ে হলে পায়রা উড়িয়ে দেওয়া ছবি শোলে! এ কেমন গব্বরি খানা? না, গব্বরি চম্বলী নয়, এ খানা খাস আফগানি। খিচুড়ির আফগানি চলন। এইভাবেই মুঘল হেঁশেলে এসে মিশল আফগানি ধারা। এই শোলা তৈয়ার হবে মুগ ডাল আর চাল দিয়ে। আর এই শোলা হবে চিটচিটে, খানার বিলিতি পরিভাষায় যাকে বলে—sticky। আর এই শোলাতে যখন মিশবে ‘কুরুৎ’, আর ‘কুফ্তা’ তা হয়ে যাবে কিচিরি কুরুৎ। এবং এইখানে আমার একটি নিজস্ব অনুমান আছে — এই কিচিরি কুরুৎ-এর কিচিরি-টি আসলে ভারত থেকেই আফগানিস্তানে গিয়ে, আফগানি রঙ মেখে ফিরে এল ‘এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে’। কিচিরি আর খিচড়ি শব্দদুটির আশ্চর্য নৈকট্য থেকেই আমার এই অনুমান অবিশ্যি ভুল হতে পারে। বহু বহু বছর আগে প্রেসিডেন্সি কলেজে আমাদের ইতিহাস বিভাগীয় সেমিনারে এসে ইতিহাসকার রোমিলা থাপার শব্দগত সাদৃশ্যের ওপর নির্ভর করে ইতিহাস নির্মাণের বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন। ছাত্রজীবনের সে পাঠ ভুলিনি।
কীভাবে তৈয়ার হয় এই কিচিরি কুরুৎ? সে এক লম্বা প্রক্রিয়া—
আফগানি কিচিরি কুরুৎ
কুরুৎ
দই — ১ লিটার
নুন — স্বাদমতো
দই একটা পাতলা সুতির কাপড়ে বেঁধে পুঁটুলি করে নিংড়িয়ে সব জল বার করে তিনদিন টাঙিয়ে রাখুন। শুকনো দইয়ে নুন দিন। মিশিয়ে হাতের চেটোতে ঘুরিয়ে ছোটো ছোটো লেচি বানান। একটা থালায় নুন ছড়ান। লেচিগুলোকে তার ওপর গড়িয়ে নিন। কাগজের থালায় ভালো করে মাখন মাখান। রোদে শুকোতে দিন, যতক্ষণ না একদম শুকিয়ে যায়।
শোলা
ছোটো দানার চাল — দেড় কাপ
সবুজ মুগ — দেড় কাপ (আগে থেকে ভালো করে জলে ভিজান)
তেল — এক কাপ
পেঁয়াজ — একটা বড়ো (মিহি কুচি করা)
হলুদ — একচা-চামচ
রসুন — আধকোয়া
নুন — স্বাদমতো
কড়ায় তেল গরম করুন। পেঁয়াজ, রসুন দিন। হালকা খয়েরি রং ধরুক। হলুদ দিন। অল্প কিছুক্ষণ ভাজুন। (ভেজানো) মুগ আর চাল একসঙ্গে দিন। দু-কাপ জল দিন। নুন দিন। কড়াই ঢাকা দিয়ে ফুটতে দিন। চাল-ডাল সিদ্ধ হয়ে জল শুকিয়ে না আসা পর্যন্ত ফুটতে দিন। নামিয়ে নিন।
কুফ্তা
বিফ — ৪৫০ গ্রাম (মিহি কিমা করা)
পেঁয়াজ — বড়ো একটা (মিহি কুচি করা)
টম্যাটো — ৩ টে (ছাল ছাড়িয়ে মিহি করে বাটা)
রসুন — আধকোয়া (মিহি করে বাটা)
গোলমরিচ — ৩ টেবিলচামচ (গুঁড়ো)
আদা — আধ চা-চামচ (মিহি করে বাটা)
নুন — স্বাদমতো
তেল — আধকাপ
পেঁয়াজ ও রসুনের অর্ধেক করে নিন। যাবতীয় উপকরণ একসঙ্গে ভালো করে মেখে বল তৈরি করুন। বাকি পেঁয়াজ রসুন কড়াইতে তেল গরম করে ভালো করে ভাজুন। দেড় কাপ জল দিন। জল ফুটতে দিন। ফুটন্ত জলে মাংসের লেচিগুলি হালকা করে ছাড়ুন। ২০ মিনিট ফুটতে দিন। টম্যাটো বাটা দিন। ফুটতে দিন তেল ওপরে ভেসে না ওঠা পর্যন্ত। নামিয়ে নিন।
গার্নিশ — সরু করে আদা কেটে হালকা করে ভাজা। পুদিনাপাতা কুচি।
পরিবেশনের সময় থালা ভরে শোলা দিন। ঠিক মাঝখানে কুরুৎ দিন। কুরুৎ ঘিরে কুফতা ঝোলসহ সাজিয়ে দিন। ওপরে আদাকুচি ও পুদিনাপাতার টুকরো ছড়িয়ে দিন।
এই আফগানি খানার শোলা অংশটা যে আসলে খিচুড়ি তা বলার দরকার নেই। আর লক্ষ করুন, এও গোটা সবুজ মুগের। এই শোলেই কিন্তু মুঘল রাজন্যের পাতে যখন পড়ছিল, আমার স্থির বিশ্বাস, তখন ওই গোমাংসটি ভেড়া বা ছাগলের মাংসে বদলে যাচ্ছিল, যেমনটা আমরা দেখেছি আগের অধ্যায়ে, মুঘল শাহি দস্তরখওয়ানে বিফ বা চিকেন পড়ত না! টোম্যাটো ইত্যাদি দেওয়া কুফ্তার অংশটি অবশ্যই যাকে বলা যায় প্রক্ষিপ্ত, অনেক পরবর্তী কালের যোগ। কিন্তু মূল শোলা অংশটি মধ্যযুগীয় তো বটেই।
তবে শোলা তো শুধু আফগানি খানা নয়। ইরানি খানাও। শোলার ইরানি হেঁশেলে ঢুকব পরের বৃহস্পতিবার।
আরে ঠিক এইরকম করে দই শুকিয়ে নুন দিয়ে তো ফেটা চীজ বানায় ? ওটার অরিজিন কি আফগানিস্তানে ? আমি ভাবতাম ওটা গ্রীস বা টার্কি তে শুরু হয়েছিল.
"ওটার অরিজিন কি আফগানিস্তানে ? আমি ভাবতাম ওটা গ্রীস বা টার্কি তে শুরু হয়েছিল."
ফেটা চিজের উৎপত্তি গ্রিসেই ধরে নিতে হবে । একটা সময়ে আজকের আফগানিস্তানের বিভিন্ন জায়গায় গ্রিকরা বসবাস করতেন, এমনকি আলেক্সান্ডারের ভারত অভিযানের বহু যুগ আগে থেকেই । আফগানিস্তানে উৎপত্তি হলে ভারতে ফেটা চিজ তৈরির প্রমান পেতেন (এনার এই মুগ ডালের খিচুড়ির সিরিজের গল্পের মতন) । ভারতে দুধ কে নুন দিয়ে (brining) ট্রিট করার প্রথার চল ছিল বলে জানিনা, খুব সম্ভবত হিন্দু ধর্মে দুধ কে কাটানো নিয়ে কিছু taboo আছে ।
কুরুতের উত্পত্তি কোথায় তা খোঁজ করে দেখিনি। তবে এটা আফগানিস্তানে ভীষণ চলে। খেতে কিছুটা ফেতা চিজ এর মত। কোথায় যে কোন খানার origin বলা খুব কঠিন। আমার লেখা কাবাব কিস্সা বইটা পড়লে দেখবেন, শিক কাবাব তৈরির প্রথম প্রমাণ মেলে গ্রীসে কোনো ইস্লামিক দেশে নয়। আর কূরুত তৈরিতে দুধকে brining করতে হয় না, দইকে শুকিয়ে তার পর। দই তৈরি এই উপমহাদেশে খুব প্রাচীন পরম্পরা।
তার মানে কুরুত আর ফেটা চীজ ঠিক একরকম নয়, এদের মধ্যে তফাৎ আছে । নীলাঞ্জন আপনি অতি অবশ্যই ঠিক বলেছেন, কোন খাবার কোথায় যে প্রথম শুরু হয়েছিল কে বলবে , প্রায় অসম্ভব । এই সিরিজ টি লেখার জন্যে আপনার অজস্র ধন্যবাদ প্রাপ্য, বিশেষ করে খাবার গুলোর রেসিপি যেভাবে লিখছেন ।
অরিন ওই গ্রিক রুটটা ভাল ধরেছেন।. নীলাঞ্জনের কমেন্ট টাও একদম ঠিক। কোন খাবার -র ঠিক কোথায় অরিজিন, ওরকম ভাবে পিন পয়েন্ট করা খুব ই মুশকিল. আর কালচারাল আর কালনারী এক্সচেঞ্জ তো বহু হাজাৰ বছর ধরে চলে আসছে বিসনেস বা ইনভেশন ৰূট গুলো ধরে ধরে । কিন্তু লেখাগুলো পড়তে দারুন লাগে- সুস্বাদু ইতিহাস যাকে বলে. আমি আবার একটু পেটুক গোছের কিনা। :) :)
Amit , সুস্বাদু ইতিহাস পড়তে চাইলে লিজি কলিংহাম এর লেখা কারির ইতিহাস পড়ুন,
থ্যাংকু অরিন. ইপাব ফাইল আটকাচ্ছে দেখছি অফিসের ফায়ার ওয়াল এ। সন্ধেবেলা বাড়ি থেকে দেখছি।
যেহেতু এখানে প্রকৃত রসনারসিকদের আনাগোনা দেখছি,কাবাব নিয়ে আমার বইটির অনলাইন প্রাপ্তিস্থানের লিঙ্ক দেওয়ার লোভ সামলাতে পারলাম না। কাবাব কিস্সা — https://www.flipkart.com/kabab-kissa/p/itma8289985052f2