বিভিন্ন পথে কৃসর-র সন্ধানে নানা রোমহর্ষক রসনা-অ্যাডভেঞ্চারে বেরিয়ে আমরা এতাবৎ পৌঁছেছি একই গন্তব্যে—তিল ও তণ্ডুল একত্রে পাকের এক খাদ্যে? গোলমাল রে তোপসে, বিস্তর গোলমাল। তবে কি আজকে আমরা যে খানাকে খিচুড়ি বলি, তার কোনো প্রাচীনতর পূর্বজ নেই? আছে। কিন্তু সে রহস্যভেদে ক্লু খোঁজার পদ্ধতিটা আমাদের একটু বদলাতে হবে। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় যখন কৃসর বা কৃসরাকে ইঙ্গিত করছেন খিচুড়ির ইভ বলে, তখন তিনি ভাষাতত্ত্ব বিচার করছেন, রসনাতত্ত্ব নয়। আর তাই আমাদের সরে যেতে হবে রসনাতত্ত্বে, অন্তত কিছুটা পথ। আমাদের খুঁজতে হবে চাল-ডালের রেসিপি। জ্ঞানমার্গ ধরে নয়, রসনার রসমার্গ ধরে!
এখন প্রশ্ন হল প্রাচীন থেকে মধ্যযুগের দোরগোড়া পর্যন্ত বিস্তৃত অজস্র হিন্দু টেক্সটগুলোতে যা উল্লিখিত তার বাইরে কি সমসাময়িক ভারতবাসী আর কিছুই খাচ্ছিলেন না? না, খাচ্ছিলেন না, এ কথা বলা খুব মুশকিল। বিশেষ করে চাল আর ডালের মতো প্রাচীনতম দুই খাদ্যবস্তু পর্যাপ্ত পরিমাণে উপলব্ধ হওয়া সত্ত্বেও, কারও কল্পনাতেই এল না যে সামান্য মশলা—যেমন পেঁয়াজ, আদা, রসুন, যার সবই সম্পূর্ণ ভারতীয়—আর নুন দিয়ে এ দুটোকে একত্রে ফুটিয়ে নিলেই এক উপাদেয় খানা তৈয়ার হতে পারে? এ প্রশ্নের উত্তরে হ্যাঁ বা না কোনোটাই বলা খুব কঠিন। যতক্ষণ না তেমন কোনো প্রামাণ্য নথি আমাদের হাতে আসছে। ইতিহাসের প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান প্রমাণ করতে পারে চাল-ডাল খাদ্যবস্তু দুটি ছিল, কিন্তু তাদের মিশিয়ে তার সঙ্গে কিছু মশলা দিয়ে রান্নার রেসিপিটা যে ছিল, তা প্রমাণের জন্য চাই নথি।
আছে একটা নথি, মানে আমার জানা একটাই নথি। তাতে স্পষ্ট চাল আর মুগডাল ফুটিয়ে খাওয়ার কথা বলা আছে, কিন্তু মশলা নেই। এমনকই বৃহদারণ্যকে যেমন মাংসৌদনতে ঘি দেওয়ার কথা আছে, সেটুকুও নেই। স্রেফ চাল-ডাল—
‘যে পুরুষ সমৃদ্ধি কামনা করেন, তিনি তিন রাত্রি পুষ্পসহযোগে উপবাস করিবেন, একটি জীবিত হস্তির দন্তের অংশ লইয়া তাহা স্তূপীকৃত করিয়া অগ্নি সংযোগ করিবেন, সম্মার্জনী দ্বারা (যজ্ঞস্থল) পরিষ্কার করিবেন, ঘাস ছড়াইয়া দিবেন, জলছড়া দিবেন, দক্ষিণ হাঁটুতে ভর করিয়া বসিয়া অগ্নিকুণ্ডের উত্তরে একটি পাত্র রাখিয়া তাহাতে কবচকুণ্ডলটি স্থাপন করিবেন, যজ্ঞ সাঙ্গ করিবেন, অষ্টমন্ত্র উচ্চারণ করিতে করিতে নৈবেদ্যর অবশিষ্ট অংশ কবচকুণ্ডলের উপর ঢালিয়া দিবেন…’
এবং চলতে থাকে সে ব্যক্তিকে আরও কী কী কাণ্ডকারখানা করতে হবে তার দীর্ঘ নির্দেশ। তারই একজায়গায় এসে তাঁকে বলা হয়—‘পরবর্তী পঞ্চমন্ত্র উচ্চারণ করিতে করিতে তিনি পর্কটি১ বৃক্ষের একটি ক্ষুদ্রাংশ বাঁধিবেন যাহা তিন রাত্র অথবা একরাত্র মুদ্গৌদন-তে রহিয়াছে। যদি সম্ভব হয় তিনি প্রথম যজ্ঞটি সারিবেন কোনো হস্তির ছায়ায়, অথবা ব্যাঘ্রচর্মের উপর উপবিষ্ট হইয়া।…’ করতে হবে আরও বহু কিছুই, কিন্তু সেসব এখুনি আমাদের শোনার দরকার নেই, কারণ আমরা আপাতত খিচুড়ির প্রাচীনতা আন্দাজ করে সমৃদ্ধ হতে চাইছি, আর তাতে ওই ‘মুদ্গৌদন’ শব্দটিই যথেষ্ট। শাঙ্খায়ন আরণ্যক। দ্বাদশ অধ্যায়। যে অধ্যায়ের বিষয় বিল্বকবচের মন্ত্রাবলি। আমার এই বাংলা তরজমা রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটি প্রকাশিত শাঙ্খায়ন আরণ্যকের ইংরেজি তরজমার অনুসারী। তরজমাকার আর্থার বেরিডেল কিথ২। এই তরজমায় কিথ সাহেব ‘মুদ্গৌদন’ কথাটা ব্যবহার করেননি অবশ্য। লিখেছেন—‘a (mess of) beans and boiled rice’। আমি মূল সংস্কৃতে তো এ আরণ্যক পড়িনি, তাহলে মুদ্গৌদন পেলাম কোথায়? তিন জায়গায়। এক, একটা দারুণ কেতাব আছে—Vedic Index of Names and Subjects. সংকলক আর্থার অ্যান্টি ম্যাকডোনেল এবং আর্থার বেরিডেল কিথ (ভারত সরকারের পক্ষে প্রকাশক জন মারে, লন্ডন, ১৯১২)। এর প্রথম খণ্ডের ‘ওদন’ এন্ট্রির মধ্যে সাফ লেখা আছে, ‘Mudgaudana (bean-mess)’। এবং তার ফুটনোটে উদ্ধৃত করা আছে শাঙ্খায়ন আরণ্যকের উপরোক্ত অংশটিই। কাজেই সন্দেহের আর কোনো অবকাশই রইল না। ভালো কথা, এ কেতাবের এই ওদন এন্ট্রিতেই বৃহদারণ্যকের উপরে উদ্ধৃত শ্লোকটি রেফার করেই বলা আছে মাংসৌদনর কথাও—Meat-mess!!
মুদ্গৌদন পেয়েছি আরও দু-জায়গায়—Rice in Indian Perspective নামের একটি দু-খণ্ডের কেতাবে৩ । সম্পাদক এস ডি শর্মা ও বি সি নায়ক। তার প্রথমখণ্ডের প্রথম অধ্যায় লিখেছেন কে এল মেহরা, শিরোনাম—Rice in Indian History and Culture. এর পরিশিষ্টে মেহরা জানাচ্ছেন, ‘Mudgaudana: Rice mixed with pulse mudga’, এবং উদ্ধৃত করছেন শাঙ্খায়নের ওই শ্লোকটিই।
আর মুদ্গৌদন পাচ্ছি, এতাবৎ প্রাচীন ভারতীয় খানা-পিনা নিয়ে রচিত শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ—Food and Drinks in Ancient India৪। আজ থেকে ষাট বছর আগে এ কেতাব লিখেছিলেন ওমপ্রকাশ। আশ্চর্য পরিশ্রমী, মেধাবী এক গবেষণা। এই কেতাবে তিনি মুদ্গৌদন শব্দের অর্থ জানাচ্ছেন, ‘Rice boiled with Mudga pulse’। এবং উদ্ধৃত সেই শাঙ্খায়ন আরণ্যক। ‘মুদ্গ’ যে মুগডাল, তা আয়ুর্বেদের যে-কোনো অভিধান খুললেই দেখা যাবে। মুদ্গ, বিশেষ করে মুগপাতা, মুদ্গপর্ণী-র উল্লেখ আয়ুর্বেদে ছড়াছড়ি। কিন্তু হলে কী হবে তাকে চালের সঙ্গে ফুটিয়ে খিচুড়ির পথে পা বাড়ানো-রেসিপি আমি তো কোন্ ছার স্বয়ং ওমপ্রকাশও আর খুঁজে পাননি। ফেলুদার ভাষায়, ‘All roads lead to…’ শাঙ্খায়ন আরণ্যক!
এবার, প্রশ্ন হল এই শাঙ্খায়ন আরণ্যকের সময়কাল কী? এ নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন কিথ। এবং শেষপর্যন্ত এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে এ আরণ্যকের রচনাকাল ৭০০ পূর্বসাধারণাব্দ থেকে ৩৫০ পূর্বসাধারণাব্দের মধ্যে। এবং তিনি জানাচ্ছেন এর দ্বাদশ অধ্যায়, সম্ভবত ৭০০ পূর্বসাধারণাব্দ নাগাদ রচিত৫। এই দ্বাদশ অধ্যায়েই রয়েছে মুদ্গৌদন। আর, একটু প্রসঙ্গান্তরে গিয়ে আমরা মনে করে নিতে পারি বৃহদারণ্যকের মাংসৌদনও সমসাময়িক। বোঝে! বিরিয়ানি আর খিচুড়ি, দুই আদ্যোপান্ত ভারতীয় খানার মা-দিদিমার গুষ্টি তবে একই বয়সী?!
কিন্তু হিন্দু টেক্স্টগুলোই কি প্রাচীন ভারতের একমাত্র নথি? আলবৎ নয়। কাজেই অন্যত্রও খোঁজ করা দরকার। আর সে খোঁজ করতে গিয়েই গল্পটা পেয়ে গেলাম, এক যুগান্তকারী নথির ইংরেজি তরজমায়—
‘এককালে চম্পায় থুল্লনন্দা ভিক্ষুণীর এক ভিক্ষুণী শিষ্যা ছিলেন। যে পরিবার থুল্লনন্দার দায়িত্বভার নিয়েছিল তার কাছে গিয়ে এই ভিক্ষুণী শিষ্যা একদিন বললেন, ‘‘মাননীয়া তেকাটুলায়াগু পান করতে চাইছেন।’’ তা তৈরি হওয়ার পরে সেই শিষ্যা তা নিয়ে নিজেই গ্রহণ করলেন মহানন্দে। থুল্লনন্দা একথা জানার পর শিষ্যাকে তিরস্কার করে বললেন, ‘‘তুমি আর সন্ন্যাসিনী রইলে না।’’ উদ্বিগ্ন শিষ্যা বিষয়টি অন্যান্য ভিক্ষুণীদের জানালেন, তাঁরা তা ভিক্ষুদের জানালেন, ভিক্ষুরা জানালেন প্রভুকে। ‘‘হে ভিক্ষুগণ এ অপরাধ পারাজিক-র নয়। কিন্তু স্বেচ্ছাপ্রণোদিত মিথ্যার ক্ষেত্রে পাচিত্তিয় প্রয়োজন।’’’৬
খিচুড়ি-রহস্য অ্যাডভেঞ্চারে এ এক মোক্ষম ক্লু, যার কেন্দ্রে রয়েছে ‘তেকাটুলায়াগু’ কথাটা। কিন্তু সেটা বুঝতে হলে গল্পটার প্রেক্ষিত একটু বুঝতে হবে। এ গল্প যুগান্তকারী বৌদ্ধ টেক্স্ট বিনয় পিটক থেকে নেওয়া। বৌদ্ধধর্ম লেখর তিনটি পিটক, মানে ডালির কথা আমরা সবাই জানি—পালিভাষায় তিপিটক৭: বিনয় পিটক, সংঘের অনুশাসনের যাবতীয় নির্দেশ, সুত্ত পিটক, গৌতমবুদ্ধের শিক্ষা এবং অভিধম্ম পিটক, মহাপণ্ডিতদের লেখা বুদ্ধের শিক্ষার ভাষ্য। বিনয় পিটকের যে তরজমা করেছেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউহ্যাম কলেজের ফেলো এবং অ্যাসোসিয়েট, আই বি হর্নার, তাতে দেখছি সে কেতাবের মূল তিনটি ভাগ—সুত্তবিভঙ্গ: এ ভাগে আছে ভিক্ষু ও ভিক্ষুণীদের অনুশাসনের বিধান দুটি পর্বে: মহাবিভঙ্গ ও ভিক্ষুণীবিভঙ্গ। খন্ধক: বিবিধ বিষয়ে চর্চা। এবং পরিবার: বিধানগুলির চর্চা নানা দৃষ্টিকোণ থেকে। এবারে, সুত্তবিভঙ্গের, সিংহভাগ হল পাতিমোক্খ ও ভাষ্য। পাতিমোক্খ হল ২২৭ টি কঠোর অনুশাসন বিধান যার মাধ্যমে ভিক্ষু-ভিক্ষুণীদের ব্যবহার নিয়ন্ত্রিত হয়। আর এরই অন্তর্গত হল চারটি বিভাগ—পারাজিক, যে কাণ্ড ঘটালে ভিক্ষু বা ভিক্ষুণী তাঁর সন্ন্যাস ব্রতে ‘পরাজিত’ হন এবং সংঘ থেকে বিতাড়িত হবেন। সংঘাদিসেস, ভিক্ষুদের সভা যার সিদ্ধান্তে অনুতপ্ত ভিক্ষুকে সংঘে ফিরিয়ে আনা যায়। অনিয়ত—কোনো ঘেরা জায়গায় কোনো ভিক্ষু কোনো মহিলার সঙ্গে অন্যায় কাজ করলে তার বিধান। নিস্সগ্গিয়—কোনো বেআইনি বস্তু রাখা বা বেআইনি ভাবে কোনো বস্তু পেলে তা নিয়ে নেওয়ার বিধান। পাচিত্তিয়—অপরাধ কুবুল করে তার প্রায়শ্চিত্তের বিধান। পাটিদেসনীয়—যে অপরাধ কুবুল করা দরকার। সেখিয়—শিক্ষানবিশি। অধিকরণসমথ—ভিক্ষুদের আইনি বিতর্কের নিরসনের বিধান।
কাজেই এবার আর বুঝতে অসুবিধা রইল না যে, অন্যের জন্য তৈয়ার তেকাটুলায়াগু নিজেই খেয়ে ফেলে যে অপরাধটি করলেন থুল্লনন্দার শিষ্যা, প্রভুর বিধানে তা সংঘ থেকে বিতাড়িত হওয়ার মতো নয় বটে, তবে দোষ কুবুল করে প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। প্রভু বা পালি ভাষায় যাঁকে বলা হচ্ছে ‘আইয়া’ তিনি কে? বিনয় পিটক কী করে সৃষ্টি হল সে কাহিনি শোনাতে গিয়ে ‘পারাজিক’ বিভাগটি শুরুই হচ্ছে এই বাক্য দিয়ে—‘At one time the Buddha, the Master, was staying at Verañjā near Naḷeruʼs Nimba tree with a great Sangha of five hundred monks.’ এটা মনে রাখা জরুরি, পরে কাজে দেবে।
কিন্তু সবার আগে আমাদের জানতে হবে এই তেকাটুলায়াগু-র স্বাদ। এই গল্পের ইংরেজি তরজমায় হর্নার সরাসরি এ খানার নামটা ব্যবহার না করে তার বর্ণনা ব্যবহার করে একটা লম্বা ফুটনোট দিয়ে বোঝাচ্ছেন যে, মূল পালিতে এই তেকাটুলায়াগু শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছিল (যে কারণে আমি বাংলা তরজমায় তাই রেখেছি।) এখন, এর ইংরেজি বর্ণনাটা কী রয়েছে? ‘The lady wants to drin krice-gruel containing the three pungent ingredients.’ তাহলে তেকাটুলায়াগু হল চালের লপ্সি, যা পান করা যায়, তা তিনটি কটু স্বাদের উপকরণ দিয়ে তৈরি। এইবারে হর্নার ফুটনোটে জানাচ্ছেন খাদ্যের নামটি হল তেকাটুলায়াগু। এবং মহাপণ্ডিত ভাষ্যকার বুদ্ধঘোষের ‘সমন্তপাসাদিকা’ ভাষ্য উদ্ধৃত করে এও জানাচ্ছেন এ খাদ্য তৈরি হয় ‘তিল, তণ্ডুল এবং মুগ কিংবা তিল, তণ্ডুল এবং মাষকলাই, কিংবা তিল, তণ্ডুল এবং কুলত্থা (একধরনের কলাই-ডাল। খুবই সহজলভ্য আজও। হিন্দিতে কুলথি। ইংরেজিতে ‘হর্সগ্র্যাম’।) কিংবা যে-কোনো একটি অপরান্ন ও তিল এবং তণ্ডুল দিয়ে,’ আর তা তৈরি হয় ‘এই তিন উপকরণের সঙ্গে দুধ ও চার ভাগ জল মিশিয়ে, ঘি, মধু ও গুড় যোগ করে’।
উপকরণের দিক থেকে তেকাটুলায়াগু খাবারটাকে আর-একটু সহজ করে নেওয়া যাক— বুদ্ধঘোষের ভাষ্য অনুযায়ী এতে তিল আর চাল তো থাকবেই আর থাকতে পারে মুগডাল কিংবা মাষকলাই, কিংবা কুলত্থা, কিংবা ‘অপরান্ন’ শস্যের যে-কোনো একটি। এবার বুঝতে হবে বৌদ্ধ ভাষ্যে ‘অপরান্ন’ ব্যাপারটা কী? শস্য দু-প্রকার—পুব্বান্ন আর অপরান্ন। পুব্বান্ন মানে যা ‘প্রাকৃতিক’ অবস্থাতেই আছে—সালি ও বিহি (ধান), যব, গোধুম (গম), কঙ্গ (বাজরা), বরক (কলাই) এবং কুদ্রুসক (রাই শস্য)। মতান্তরে এই সাত শস্য হল—সালি, বিহি, মুগ, মাষকলাই, যব, গোধূম এবং তিল। আবার তৃতীয় মতে শস্যগুলি হল, সালি, বিহি, যব, তণ্ডুল (চাল), তিল, মুগ এবং মাষকলাই৮। আর অপরান্ন? শুধু এটুকু জানতে পেরেছি অপরান্ন হল ‘রান্না করা শস্য বা সবজি’। একটা রেসিপি চোখের সামনে ভেসে ভেসে উঠছে, নাকে খুশবু ছড়াচ্ছে —
বুদ্ধঘোষের তেকাটুলায়াগু
উপকরণ —
গোবিন্দভোগ চাল: ২০০ গ্রাম,
সোনামুগ ডাল: ২০০ গ্রাম
সাদা তিল: ১০০ গ্রাম
ঘি: ১০০ গ্রাম
দুধ: ১ লিটার
জল: ২৫০ মিলি
মধু: ১০ টেবিলচামচ
ভেলিগুড়: ১০০ গ্রাম
পদ্ধতি — ডেগচিতে সমস্ত ঘি দিয়ে গরম করুন। ডাল দিয়ে ভালো করে ভাজুন। চাল ও তিল দিয়ে আরও একটুক্ষণ ভাজুন। সমস্ত দুধ ঢেলে সিদ্ধ বসান। অর্ধেক সিদ্ধ হলে জল দিয়ে সুসিদ্ধ করুন। গলা গলা হবে। মধু ও গুড় দিন (ভেলিগুড় এই কারণেই যে ওই প্রাচীনকালে পরিশ্রুত খেজুর বা তালগুড় ব্যবহৃত হত বলে আমার মনে হয়নি। আর ভেলিগুড় আগে অল্প জলে গুলে নিতে হবে)। পাঁচমিনিট ফোটান। ঠান্ডা করে মধু দিয়ে পরিবেশন করুন।
নিজে হাতে রেঁধে দেখেছি। আর তখনই নির্ধারণ করেছি উপকরণের পরিমাপ ও রান্নার পদ্ধতি, বুদ্ধঘোষের টীকার ওপর নীলু হাজরার টিপ্পনি!! দেড় হাজার বছর পার করেও দিব্যি। অন্তত দেড় হাজার বছর তো বটেই, কারণ বৌদ্ধ ধর্মলেখর অন্যতম পণ্ডিত ও ভাষ্যকার বুদ্ধঘোষের বিষয়ে এটুকু জানাই যায় যে তিনি ৫০০ সাধারণাব্দের কোনো একসময়ে৯ ভারতের মূল ভূখণ্ডে জন্মে পাড়ি দিয়েছিলেন যা আজকের শ্রীলঙ্কা সেখানে।
কিন্তু একে আমি কিছুতেই খিচুড়ি বলে কল্পনা করতে পারছি না, বরং এ পায়েস। আর এর স্বাদ মিলিয়ে যাওয়ার আগেই একটা অন্য সন্দেহের কড়া গন্ধ ভেসে এল—জানতে পারছি, এর স্বাদ ‘কটু’। কটু কী করে হল? এইখানেই যাকে বলে খেলা ঘুরে যাচ্ছে। ঘুরে কোন্দিকে যাচ্ছে, সে অ্যাডভেঞ্চার পরের কিস্তি থেকে…
(ক্রমশ… পরের কিস্তি পড়ুন পরের বৃহস্পতিবার)
গড়গড় করে পড়ে গেলুম। চমৎকার অতি চমৎকার। কাল রেসিপিটা চেষ্টা করব। তবে অনুপাত একটু অদলবদল করব। মহাশ্রমণের কাছে ক্ষমা চেয়ে নোব নয়।
গড়গড় করে পড়ে গেলুম। চমৎকার অতি চমৎকার। কাল রেসিপিটা চেষ্টা করব। তবে অনুপাত একটু অদলবদল করব। মহাশ্রমণের কাছে ক্ষমা চেয়ে নোব নয়।