এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • বিলি-বচ্চন

    সৌরাংশু লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৯ জুলাই ২০২৫ | ৩২ বার পঠিত
  • এ গল্পের নায়িকার নাম বিলি। বিলি নামটা আমার মেয়ের দেওয়া।
    আমরা যখন রামকৃষ্ণ পুরম সেক্টর নয়-এ থাকতাম তখন এই গল্পের সূত্রপাত।

    বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিরছিলেন পার্শ্ববর্তিনী। হঠাৎ চমকে ওঠেন পায়ের কাছে কেউ একটা বেড় দিয়ে ঘুরছে। রোঁয়া রোঁয়া গাঁ! শাপ ভেবে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখেন কুট্টি একটা বেড়াল। মুখের দিকে তাকিয়ে ম্যাও করছে আবার ঘুরছে। হাত দিয়ে তুলতে যেতেই পালিয়ে গিয়ে শুকনো ড্রেনে ঢুকে গেল সে। মনে হয় কুট্টি বয়সেই মাকে হারিয়েছে।

    এভাবেই পার্শ্ববর্তিনীর সঙ্গে আলাপ হয়ে গেল, তিনি আমাদের সঙ্গেও আলাপ করালেন। কিন্তু আদর করতে গেলেই পালিয়ে যায়। তারপর কী হল বেশ কিছুদিনের মতো গায়েব হয়ে গেল!

    আমাদের ফটিক, আমাদের আদা! এই নিয়েই সময় কেটে যায়। পার্শ্ববর্তিনী মাঝেমধ্যে হা-পিত্যেশ করেন যে বেড়ালটা যে কোথায় গেল! তার মাস নয়েকের মধ্যে আমরাও, এক কিলোমিটার দূরে সেক্টর বারোর কোয়ার্টারে চলে এলাম। বেড়াল তখন বিস্মৃতির অতলে!

    শীত কেটেছে প্রায় প্রায়, হঠাৎ একদিন পার্শ্ববর্তিনী অফিসে ফোন করলেন। সচরাচর করেন না! 'জানো! কে এসেছে আজ! সেই বেড়ালটা। বড় হয়ে গেছে! বোধহয় বাচ্চা হবে!'
    - চিনলে কী করে?
    - একদম একইরকম হাবভাব। দেখতেও সেই একইরকম ডোরাকাটা!

    লোহার জালির দরজাটার কাছে বসে থাকে চুপচাপ। এগিয়ে গেলেই পালিয়ে যায়। মাছ পাঁউরুটি খেতে খুব পছন্দ করে। দুধও চলনসই!

    এইভাবেই কাটছিল, ফটিক আদাকে লুকিয়ে ওকে খাবার দেওয়া! খায় দায়, পা চাটে আয়েশ করে, তারপর জাস্ট না তাকিয়েই টুপ করে কেটে পড়ে! নেমকহারাম কোথাকার!

    মাঝে কিছুদিনের জন্য বাইরে যাওয়ার কারণে ফটিক-আদাকে বোর্ডিং-এ পাঠাতে হয়েছিল। তখন সেটা অবাধে বিচরণ করছে। মেয়ে নাম দিয়েছে 'বিলি'! একদিন ঘরে ঢুকে রান্নাঘরে চলে গিয়ে বলে, 'ম্যাও'! ইল্লি থুড়ি বিলি আর কি!

    সেদিন ফটিক আদা ফিরে এসেছে। আর হায়দ্রাবাদ থেকে এসেছে পিয়ালী। ফটিক আদার হামলা করার লোক পাওয়া গেছে। সবাই মিলে পা ছড়িয়ে গল্প করছি! আর পিছনের দরজাটা খোলা ছিল! পিছনের উঠোন দিয়ে বিলি ঢুকে পায়চারি করতে গেছে! আর পড়বি তো পড় ফটিক আদার সামনেই! ফটিক এমনিতে পালোয়ান বাঘ সিং! কুকুর সামনে দাঁত দেখালে সে দাঁত হাত পা নখ সব দেখায়! কিন্তু ছুঁচো মারতে হলে আদার এক্সপার্টাইজের দরকার পড়ে! ফটিক হাত গন্ধ করে না!

    তা ফটিক তাড়া করতেই সেই পালাতে গিয়ে দরজার কাছে দেখে বন্ধ! টপ করে বুক সেলফের উপর বেয়ে বড়বড় জানলার পরদার পেলমেটে ঠাঁই নিয়েছে। নিচে ক্ষুধার্ত পাহাড়ি নদীর মতো দুই মক্কেল! ফটিক-আদা! আমি ছুটে গিয়ে দুজনের কলার দুহাতে ধরতে না ধরতেই পড়ি কি মরি করে বিলি লাফ দিল ওদের সামনেই! ফটিক আদা আমাকে নিয়েই লাফ দিল। হাত মুচড়ে গেলেও কলার ছাড়িনি। কোনোভাবে দরজার ফাঁক দিয়ে কেটে পড়ল বিলি!

    পার্শ্ববর্তিনী তারপর থেকে প্রতি সকাল সন্ধ্যায় বসে থাকেন দুধ ভাত, মাছ ভাত নিয়ে! বিলি আর আসে না! সময় গড়ায়! মাস গড়ায়! একদিন আবার হাজির! এবারে সঙ্গে খান চারেক ছানাপোনা! আয়েস করে খেল দুধ পাঁউরুটি। বাচ্চাগুলো খেল মায়ের দুধ। চোখ বুজে আসে আয়েসে! বিলিও খুশ বিলির মাও খুশ!

    দুদিন পরেই আবার দরজা খোলা পেয়ে ফটিক তাড়া করতে পালিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বিশ্বাস ছিল আজ আসবে! আজ সন্ধ্যায় বহু যুগ পরে সন্ধ্যা নামার আগে বাড়ি ফিরে দেখি বিলি এসেছে। ফটিক আদা তখন পাড়া বেড়াতে বেরিয়েছে! দরজাটা বন্ধ করে দেখি বিলির সঙ্গে একটা সাদা কালো শাহেনশাহী বেড়াল! পুরো অমিতাবচ্চন! শ্বশুরবাড়ি দেখাতে এনেছে তাকে! সারা বাগান ঘুরে বেরালো! আমায় ঢোকার মুখে পাত্তাও দিল না! তাতে কী! সিংহের বাড়িতে বাঘের মাসি!

    মেয়ে বাড়ি এলে যেমন খুশি হয়, তেমনই আনন্দ হচ্ছে যে!

    তবে আমি কোনও বেড়ালকে বিশেষত মা হবার পর জোড়ায় ঘুরতে দেখিনি! চড়ুইদের গল্প মনে পড়ে যায়! খুশ রহে বিলি আর বচ্চন! আজ এই পর্যন্তই!
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল প্রতিক্রিয়া দিন