শোলে। আফগানরা কনুই ডুবিয়ে সাবড়ান বটে, কিন্তু সে খানা আসলে পারস্যের মহাসাম্রাজ্য, সাফাভিদ সাম্রাজ্যের বাদশাহি হেঁশেলের খানদানি ইরানি খানা। আমার কাছে একটা মোক্ষম কেতাব আছে—‘মদ্দতওল-হয়াত’। ইংরেজি তরজমায়। ইতিহাসে যে কয়টি মধ্যযুগীয় সাম্রাজ্য দুনিয়া দাপিয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম পারস্যের সাফওয়ি (ইংরেজিতে সাফাবিদ) সাম্রাজ্য। ১৫০১ থেকে ১৭৩৬। এর মধ্যে ছিল ইরান, আজ়েরবইজান, আর্মেনিয়া, বাহরিন, পূর্ব জর্জিয়া, উত্তর ককেশাসের কিছু অঞ্চল, ইরাক, কুয়েত, আফগানিস্তান, এবং তুর্কি, সিরিয়া, পাকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও উজবেকিস্তানের কিছু কিছু করে অংশ। এই সাম্রাজ্যের সবথেকে ডাকসাইটে সম্রাট প্রথম শাহ আব্বাস (১৫৮৭-১৬২৯)। তাঁর বাবুর্চি ছিলেন নুরোল্লাহ্। ইসফাহানের যে সাত-তলা প্রাসাদ আলি গাপু মাতোয়ারা থাকত তাঁর নির্দেশিত পাকোয়ানের সুবাসে তাতে ঘুরেফিরে শিহরিত হওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। এ কেতাব সেই নুরোল্লার লেখা। সে কেতাব আর তার খানার কিসসা এখানে নয়। এখানে শুধু এইটুকু যে, এই কেতাবে আছে চার কিসিমের শোলে—শোলে প্যালও সাদেহ্ (সরল শোলে), শোলে প্যালও ওয়্যা মুর্ঘ (মুরগির শোলে), শোলে প্যালও ঘুরেহ্, আলুচেহ্ ওয়্যা রোব্ব-এ-অ্যানর ওয়্যা অ্যানরদানেহ্ (টক আঙুর, প্লাম, ডালিমের রসের গুড় বা ডালিম-দানার শোলে), শোলে প্যালও ওয়্যা নিমু ইয়া নারঞ্জ (লেবু বা টক কমলার শোলে)। এর মধ্যে আমার মনে হয়েছে যাকে আমরা খিচুড়ির খানদানি ইরানি চলন বলতে পারি সেটি হল—
শোলে প্যালও সাদেহ্ বা সরল শোলে পোলাও
নুরোল্লাহ বর্ণিত তার রেসিপির হুবহু বাংলা তরজমা এ রকম—“এ খানায় ভেড়া লাগে মুরগির সঙ্গে। ঝোলের ওপরে ভেসে ওঠা ফেনাটা ফেলে দিয়ে মাংসটা সরিয়ে ফেলে ভেড়াটা ঝোলে দেওয়া হয়, সঙ্গে ছোলার ডাল, দারুচিনি, পেঁয়াজ, ক্যারাওয়ে দানা, গোলমরিচ, আদা, লবঙ্গ, এলাচ এবং অনেকটা তেল, মানে যদি এক মন১ চাল ব্যবহার করা হয়, তাহলে এক মনকে চার ভাগ করলে তার তিন ভাগ তেল দিতে হবে।
মাংস সিদ্ধ হয়ে গেলে চাল এবং ভেড়ার মাংসের কোফতা (মিট বল্স) দিতে হবে। এ খানার জন্য সবজির মধ্যে লাগবে গাজর আর শাক। গুঁড়ো ঝালমশলা আর গুঁড়ো মস্তাকি ঠান্ডা জলে গুলে কাপড়ের মধ্যে দিয়ে ছেঁকে দিতে হবে নুনের সঙ্গে, এবং পরিবেশন করতে হবে।”
এখানে একটু কল্পনাপ্রবণ হতেই হবে। হতে হবে এ কারণেই যে, মুসলমান সম্রাট-নবাবদের খাস বাবুর্চি-রিকাবদারদের দেমাকটা আজকের যুগে ঠিক কল্পনাই করা মুশকিল। সেজন্য আমাদের উলটাতে হবে এই ইরানের ইনিশাবুরি বংশধরদের নবাবি তহজিবের আশ্চর্য রঙিন বর্ণনায় ভরা একটি কেতাব—‘হিন্দুস্তান মে মশরিকি তমদ্দুন কা আখরি নমুনা ইয়ানি গুজ়িশতা লখনউ’২ (হিন্দুস্তানে প্রাচ্য সভ্যতার অন্তিম নুমনা কিংবা প্রাচীন লখনউ)। লেখক আবদুল হালিম শরর এবং চলে যেতে হবে সোজা ২৬৭ পৃষ্ঠায়—বাওর্চি খানে অওর দস্তরখওয়ান। মানে ভেঙে বলার দরকার নেই। এই তমদ্দুনের শেষ নবাব ওয়াজিদ আলি শাহের মেটিয়াবুরুজের নির্বাসনি দরবারে শৈশব কাটান আবদুল হালিম। কারণ তস্য পিতা নির্বাসিত নবাবের সভায় কর্মরত ছিলেন। ১৮৬৯ থেকে ১৮৭৯, ন-বছর বয়স থেকে ১৯ বছর বয়স পর্যন্ত মেটিয়াবুরুজে কাটিয়ে লখনউ ফিরে যান হালিম সাহাব। তাঁর এ কেতাব লখনউয়ের নবাবি শান-ও-শওকতের কিসসায় ভরপুর। তারই একটা কিসসা সংক্ষেপে শুনে, ইসলামি ঘরানার খাস-পাচকদের এলেম খানিকটা আন্দাজ করে আমরা ফের খিচুড়ির পথে রওয়ানা দেব।
নবাব শুজা-উদদৌলার দিনকাল। মানে ১৭৫৪-র পরের বছর কুড়ি। দিল্লির পিদিম তখন নিভু নিভু। লখনউতেই যত রোশনাই। আর সে রোশনাইয়ের ঝলকানিতে উজ্জ্বল নবাবের বাবুর্চিখানাও। নবাবি পাকোয়ান বরাবরই এক মহাসমারোহ, কি আগ্রা, কি দিল্লি, কি লখনউ। কিন্তু হেঁশেল নিয়ে এমন বাড়াবাড়ি এর আগে আর কেউ দেখেনি কখনও। এ হেঁশেলের বাসন-বর্তন ধোয়ার জন্যই নিযুক্ত চাকরদের বিপুল পল্টন বাদ দিলে এখানে নিযুক্ত দুই কিসিমের পাচক—বাবুর্চির দল। তাঁরা হেঁশেলের অধিকাংশ খানা পাকানোর দায়িত্বে। আর রকাবদার বা উচ্চারণ ভেদে রিকাবদার—তিনি ওসব আড়চোখে তাকিয়েও দেখবেন না। ডাঁটের মাথায় আসবেন। খাস নবাবের দস্তরখওয়ানের জন্য হাতেগোনা কটি খানা পাকাবেন। ডাঁটের মাথায় চলে যাবেন।
কেমন ডাঁট এই রকাবদারদের? কিসসাটা আবদুল হালিম শুনেছিলন ‘বিশ্বস্ত সূত্রে’। এই শুজা-উদদৌলার জমানায় নবাব সালারজঙ্গ্-এর রকাবদার ছিলেন সে জমানার সবথেকে ডাকসাইটে রকাবদার—মাসে ১২০০ টাকা মাইনে, “যেমনটা ইতিহাসে আর কোনো রকাবদার পাননি কোনোদিন।” আমি হিসাব করে দেখেছি এর অর্থ, এই রিকাবদারটির, আজকের হিসাবে মাইনে ছিল ২০ লক্ষ ১২ হাজার ৮৩৭ টাকা প্রতি মাসে৩। এই রকাবদার স্রেফ সালারজঙ্গ্ বাহাদুরের জন্য রাঁধতেন এমন একটি পোলাও, যা হজম করার হিম্মত আর কারও ছিল না। একদিন নবাব শুজা-র বড়ো খোয়াহিশ হল এই পোলাও চাখার। এত্তেলা পাঠালেন সালারজঙ্গ্কে—“জনাব, আপনার সেই মশহুর পুলাও আমাকেও খাওয়ান না একদিন।”
—অবশ্যই আলম-পনা। আজই পাঠিয়ে দিচ্ছি আপনার দস্তরখওয়ান লাগার আগেই।
তারপরেই সালারজঙ্গি হাঁক—“ওরে কে আছিস, রকাবদারকে বলে দে আমার জন্য যে পুলাও হয়, আজ হবে তার দ্বিগুণ।”
খবর হয়ে গেল বাওর্চিখানায়। রকাবদার সোজা হাজির সালারজঙ্গ্-এর আরামখানায়—“কী ব্যাপার হুজুর? আমি তো আপনার জন্য ছাড়া আর কারও জন্য খানা পাকাইনা।”
—নবাব খোদ খেতে চেয়েছেন। আর তুমি বলছ রাঁধতে পারবে না?
—ঠিক! পারব না। আপনার জন্য ছাড়া আর কারও জন্য না, তিনি যেই হন না কেন।
হুকুম অচিরেই গলে গেল অনুরোধে, শেষে খোশামদ—“রেঁধে দাও ভাই একবার।”
অনেক কাকুতিমিনতির পর রকাবদারের জবাব, “ঠিক হ্যায়। দেব। কিন্তু শর্ত আছে।”
—কী শর্ত আবার?
—পুলাও আপনি নিজে হাতে নবাবের কাছে নিয়ে যাবেন। নবাবের সামনে বসে তাঁকে খাওয়াবেন। কয়েক গরসের বেশি কিছুতেই খেতে দেবেন না। সঙ্গে রাখবেন প্রচুর ঠান্ডা পানি। রাজি?
—রাজি ভায়া। যাও এবার হেঁশেলে যাও দেখি।
সেই পুলাও নিয়ে সালার হাজির হলেন শুজার খাস দিওয়ানখানায়। কয়েক গরস মুখে দিয়ে শুজার আহ্লাদ আর ধরে না। কিন্তু এরই মধ্যে সালারজঙ্গ্-এর বাধা—আর না আলম-পনা, এই থাক। শুজা-উদদৌলা যে চাহনিটা দিলেন, তাকে বাংলায় বলে ভস্ম-করে-দেওয়া। এবং যেভাবে খেতে থাকলেন তাকে বাংলাতে বলে—গোস্তাখিমাফ—গোগ্রাসে গেলা। আরও কয়েক গরস খাওয়ার পরেই নবাব বুঝলেন কী যেন একটা ঘটছে। গলা একেবারে শুকিয়ে আসছে—কয়েক মুহূর্তে মনে হল তাঁর ছাতিটা ফেটে যাবে তৃষ্ণায়। শেষে সালারজঙ্গ্-এর নির্দেশ তৈরি রাখা ঠান্ডা পানি প্রাণ ভরে খেয়ে ধড়ে প্রাণ এল তাঁর। এমনই ছিল সেই রকাবদারের রোয়াব!
এ কিসসা শোনানোর একটা কারণ আছে। মধ্যযুগীয় বাদশাহি হেঁশেলের যেসব কুকবুক মেলে তার অধিকাংশই কোনো না কোনো কলমচির সংকলিত। সরাসরি কোনো বাবুর্চির লেখা নয়। এর মধ্যে মুদ্দতওল-হয়াতের লেখক নুরোল্লা ব্যতিক্রম হলেও তাঁর দেওয়া এই শোলে-র রেসিপি থেকে আমি প্রায় নিশ্চিত এ লেখা তিনি নিজে হাতে লেখেননি। কাউকে একটা বাতলে ছিলেন তিনি ব্যপারটা নথিবদ্ধ করেছেন। এখন কথা হল এই বাবুর্চিদের এমনই মেজাজ হত বলে ইঙ্গিত মেলে যে তাঁরা যা বলতেন তার উপর তাঁদের খুঁচিয়ে আরও কিছু বার করে নেওয়ার হিম্মত ওইসব কলমচির ছিল বলে মনে হয় না। দৃশ্যটা আমি প্রায় কল্পনা করতে পারি—হেঁশেলের বিপুল আয়োজন তদারকিতে বাবুর্চি সাংঘাতিক ব্যস্ত, তারই ফাঁকে ফাঁকে প্রায় দয়া করার মতো বিভিন্ন খানার পাকপ্রণালী বলে দিচ্ছেন পিছনে পিছনে ছোটা কলমচিকে। তিনি টুকে নিচ্ছেন যা পারছেন মোটামুটি। তারপর তাকেই ঠিকঠাক করে একটা রূপ দিয়ে দিচ্ছেন। এর ফলে এ ধরনের প্রায় প্রত্যেকটা কুকবুক বিচিত্র সব ভুলে ভরা, কিংবা ওই ওপরের শোলেসাদেহ্-র রেসিপির মতোই ভাসা ভাসা। এই শাহি বাবুর্চিরা স্পষ্টতই ধরেই নিতেন যে, তিনি রান্নাটার মৌলিক পদ্ধতিটা বাতলে দেবেন, ফাঁকফোকরগুলো ভরে নেবেন সংশ্লিষ্ট পাচকেরা। আরে ভাই আমার রান্না তুমি রাঁধার হিম্মত দেখাচ্ছ—কিছু তো তালিম আছে, বুঝে নাও।
এই বুঝে নিয়ে যে শোলেকে টেনেটুনে খিচুড়ির একটা আদল বলা গেলেও যেতে পারে—কারণ তাতে মূল উপকরণ চাল ও ডাল—তার যে পাকপ্রণালী আমার সম্ভাব্য মনে হয়েছে তা এ রকম—
শোলে সাদেহ্ (আধুনিক পদ্ধতি)
চাল—২ কাপ
মটর ডাল—১ কাপ
ভেড়ার মাংস—১ কেজি (দু-ভাগ করা। ৭০০ গ্রাম ছোটো টুকরো করা। ৩০০ গ্রাম মিহি কিমা করে ছোটো ছোটো লেচি, কোফতা, তৈরি করা)
মুরগির মাংস (হাড়হীন)—১ কেজি (টুকরো করা)
পেঁয়াজ—১টা বড়ো (কুচি করা)
গোলমরিচ—১ চা-চামচ
দারুচিনি—২ টুকরো
ক্যারাওয়ে বীজ—১ টেবিল-চামচ
ছোটো এলাচ (গুঁড়ো করা)—১ চা-চামচ
লবঙ্গ—১ চা-চামচ
আদা—১ চা-চামচ
গাজর—২টো (কুচি করা)
পালং শাক—১ কাপ (কুচি করা)
মাখন / সাদাতেল—দেড় কাপ
ভেড়ার মাংসের টুকরো, কোফতা, মুরগির মাংস তেলে একে একে ভেজে নিন ও আলাদা আলাদা করে তুলে রাখুন। ভাজা মুরগির মাংস পাত্রে জল দিয়ে সিদ্ধ করুন। সিদ্ধ হয়ে গেলে মাংসের টুকরোগুলো তুলে নিন। ভাজা ভেড়ার মাংসের টুকরোগুলো ওই ফুটন্ত স্টকে ফেলে দিন। সঙ্গে ছোলার ডাল, দারুচিনি, পেঁয়াজ, ক্যারাওয়ে দানা, গোলমরিচ, আদা, লবঙ্গ, এলাচ আর নুন। ভালো করে সিদ্ধ করুন। সিদ্ধ হয়ে এলে ভাজা মুরগির মাংস, চাল, ভাজা কোফতা, গাজরের টুকরো, শাকের কুচি দিন। চাল সিদ্ধ হতে দিন। নামিয়ে পরিবেশন করুন।
এই হল ইরানের মধ্যযুগীয় খিচুড়ির চলন। স্বাদ? মোগল খিচুড়ির তুলনায় রীতিমতো নিরীহ। কিন্তু সুস্বাদু। আমি কিন্তু ইরানে এই শোলে চাখিনি বা দেখিনি। মূলত দুই প্রকার শোলে দেখেছি সে দেশে—শোলে জ়র্দ আর মশহদি শোলে। এর মধ্যে সুগন্ধি চাল, চিনি, জ়াফরান, দারুচিনি দেওয়া শোলে জ়র্দ আমাদের কাজের নয়। কাজের হল সেই শোলে যার নামের সঙ্গে জড়ানো শহরটিতে আমার হয়েছিল এক আশ্চর্য প্রশান্তির অনুভূতি—এক প্রার্থনা গৃহ—হরম-এ-ইমাম রেজ়া, যার কিছুটা ভাগাভাগি করেছি আমার ‘ইরানে’ নামের সফর কাহিনির বইতে (গুরুচণ্ডা৯), কিন্তু এখন খিচুড়ির খোঁজ— শোলে মশহদি। আর এই শোলে খাওয়া হয় ধর্মীয় অনুষ্ঠানের দিনে। এর আর একটা নামও আছে—
শোলে কলমকার (খাস ইরানি উচ্চারণ গলমকার)
আধ কাপ কড়াইশুঁটি
১/৪ কাপ সাদা মটর
১/৩ কাপ বরবটির বীজ
১/৫ কাপ মুসুরির ডাল
১/৫ কাপ সবুজ মুগ
১ কাপ চাল
১/৫ কাপ গম
৫০০ গ্রাম ভেড়ার মাংস
১/৫ কাপ পার্সলে, সিলান্থ্রো, সাভারি, ডিল, ট্যারাগন
২টা পেঁয়াজ (কুচি করে কাটা)
স্বাদ মতন নুন, গোলমরিচ, দারুচিনি, জিরে
গার্নিশ—পেঁয়াজ কুচি ভাজা, পুদিনা পাতা কুচি
সমস্ত রকমের মটর, ডাল ও গম একরাত ভিজিয়ে রাখুন। গম বাদ দিয়ে মটর ও ডাল সিদ্ধ করে গলিয়ে ফেলুন। একটা পেঁয়াজ কুচি, গোলমরিচ, দারুচিনি আর মাংসের টুকরো একসঙ্গে জলে দিয়ে ভালো করে সিদ্ধ করে নিন। স্টক বার করে মাংস মিহি করে বেটে নিন। সিদ্ধ ডাল ও মটর একটা পাত্রে স্টক ঢেলে বসিয়ে হালকা আঁচে ফুটতে দিন। গম আর চাল সিদ্ধ করে ভালো করে চটকে নিন। আর একটা পেঁয়াজের কুচি ভেজে নিন। ফুটতে থাকা ডাল-মটরে সব ফেলে দিন। ক্রমাগত নাড়তে থাকুন আর একটু করে পার্সলে, সিলান্থ্রো ইত্যাদি দিতে থাকুন। গলে যাওয়া পর্যন্ত ক্রমাগত নাড়তে থাকুন। একদম গলে গেলে ভাজা পেঁয়াজ আর পুদিনা কুচি ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।
এই শোলে গলমকার নিয়ে ইরানে বেশ একটা নস্টালজিক-উৎসবী ব্যাপার আছে। আমার শিরাজ়ি বান্ধবী সোমাইয়েহ্ আমাকে উজ্জ্বল মুখে শুনিয়েছিল তার শৈশবে রমজ়ানের প্রথম দিনের আগের রাতে বাগানে উনুন গড়ে কেমন বিপুল ঘটা করে বিশাল বিশাল হাঁড়ি-কড়াইয়ে তিন-হাতি লম্বা লম্বা হাতা-খুন্তি নিয়ে বাড়ির বড়োরা সকলে মিলে তৈরি করে মৃদু আঁচে ফুটন্ত রেখে দিত শোলে গলমকার! কিন্তু যে খাদ্যটি অন্তত আমার হাতে দাঁড়াল তা থেকে সোমাইয়ের উজ্জ্বল মুখখানি বাদ দিলে যা পড়ে থাকে তাতে ঘটা করে ফিরে যাওয়ার কোনো বাসনা আমার নেই!
কিন্তু আমি ভাবছিলাম, আমাদের খিচুড়ি মহারহস্যে একটা জিনিস ক্রমাগত ফুটে উঠছে, খিচুড়ি কোনো একমাত্রিক খানা নয়, গালিবের গজ়লের প্রিয়ার মতোই তার রসরঙ্গের শেষ নেই। আর ভাবছিলাম, পারস্য থেকে আফগানিস্তান হয়ে দিল্লি-আগ্রা পৌঁছাতে পৌঁছাতে কেমন বদলে যাচ্ছিল তার শৃঙ্গার! দেখব পরের বৃহস্পতিবার।