এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • ঋ-কারান্ত

    erlebnisse লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৯ আগস্ট ২০২৫ | ১৯ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • পর্ব ১ (অনেকখানি)
    “আহা শ্রীমন্তদা, দিনের শেষে লেনিনও তো একজন মানুষ। সব মানুষের মতো লেনিনের কি পিছন থাকতে পারবে না? বৈগ্রহিক মানুষজনের কি বাহ্যি-পেচ্ছাপ পায় না?”
    “বিষয়টা মোটেই বাহ্যি-পেচ্ছাপের নয়৷ শকুরভ লেনিনের পিছন দেখাতেই পারেন। কিন্তু সমস্যা সিনেমার বক্তব্য নিয়ে। লেনিনের পিছন নিয়ে নয়। সিনেমাটার নাম টরাস কেন? কারণ লেনিনকে ষাঁড় হিসেবে দেখানো হয়েছে। গোঁয়ারগোবিন্দ, অকালষেঁড়ে। লেনিন কি তাই ছিলেন? আর শকুরভের এর আগের সিনেমাটাই কী? না, মোলক। হিটলারকে নিয়ে৷ যে হিটলার সাজছে, সে-ই আবার লেনিন সাজছে৷ বক্তব্যেই গণ্ডগোল। প্রতিবাদ সেটা নিয়েই ভায়া।”
    “এ আপনার আজব যুক্তি শ্রীমন্তদা। যে হিটলার সাজবে, সে লেনিন সাজতে পারবে না? সে যুক্তিতে তো উৎপল দত্তের অমানুষে অভিনয় করাই চলে না।”
    “আহা, আমি সেটা বলেছি নাকি? আমি বলতে চাইছি সিনেমাটা মোটেই এমন কিছু হয়নি যে সেটার এত গুণ গাইতে হবে। শকুরভ সেটা জানত বলেই ওরকম একখানা সিন রেখেছে যাতে ওটা নিয়ে কথা হয়।”
    মুখার্জী এতক্ষণ চুপ করে ছিল। হাতে নোনতা বাদামের লম্বা প্যাকেট, সেটা থেকে একটা একটা করে বাদাম মুখে ফেলছিল আর নিমীলিত চোখে তর্ক শুনছিল। এবার আর ধ্যানী বুদ্ধ সেজে থাকা গেল না।
    “শ্রীমন্তদা, লেনিন কি প্যারিস হিলটন, না শেফালি জরিওয়ালা?”
    “মানে?”
    “মানে আর কী। লোকে আজকাল দিব্যি কড়ি খসালেই প্যারিস হিলটন, শেফালি জরিওয়ালার খোলা-ঢাকা পাছা দেখতে পাচ্ছে। সেখানে কষ্ট করে ঠেঙিয়ে ঠেঙিয়ে লেনিনের পাছা দেখতে যাবে কেন? হলভর্তি লোকের সবাই নিশ্চয়ই পায়ুকামী নয়!”
    পিছনের সিটের জটলাটা হো হো করে হেসে উঠল। শ্রীমন্তের মুখে চটজলদি কোনো উত্তর জোগাল না৷ শ্রীমন্ত খানিকক্ষণ তুম্বোমুখে বসে রইলে। মুখার্জী বাদাম শেষ করে শ্রীমন্তের কাঁধে একটা চাপড় মেরে বললে, “কমরেড, সরকারি মার্কসবাদের চটি ছেড়ে একটু অন্য বইপত্র পড়ুন। লোকাল কমিটি গেলালেই গিলবেন কেন? আর আপনার ওই কো-অর্ডিনেশন কমিটির মাইতিদা। অ্যাক্কেরে মস্কো ফেরত বুদ্ধিজীবী। ওদিকে প-বর্গের পঞ্চম বর্ণের কোনোটাই বাদ নেই৷ এদের নিয়ে আপনি বিপ্লব করবেন কমরেড?”
    শ্রীমন্ত বললে, “বিপ্লব কি এতই সোজা মুখার্জী? আর মাইতিদার কেচ্ছা আমাকে শুনিও না৷ আমার ডিপার্টমেন্টেই তো আগে ছিল। তোমার থেকে নয় নয় করে দশ বচ্ছর হল বেশি দেখছি। তবে রিপোর্টও হয়েছে। পরের এল সি মিটিংয়েই দ্যাখো না কী হয়।”
    “হবে চুলের হিন্দি,” মুখার্জী বললে, “অনিদির সঙ্গে ওর যা আশনাই! মাইতির বাপ কে জানো তো। এদিকে সরকারি চাকরি, ওদিকে দাদা-ভাই মিলে প্রোমোটিং করছে, খোদ জেলার নেতারা ওকে সমঝে চলে৷ আর মাইতিকে নাকি টাইট দেবে এল সি মিটিংয়ে!”
    “কেন, গতবার ওই মেয়েটা, কী যেন নাম, রাণু, তাকে সাসপেন্ড করেনি?”
    মুখার্জী বললে, “রাণুকে কেন সাসপেন্ড করেছে সেটা তুমিও ভালো জানো শ্রীমন্তদা। রাণুর বয়ফ্রেন্ড নকশাল। আইসা করে৷ সেদিনের মিছিলে যে ছেলেটি হেঁটেছিল, তার ছবি বড় বড় করে সব কাগজে বেরিয়েছে৷ এরকম মেয়েকে তোমাদের এল সি-তে রাখবে বলে তুমি বিশ্বাস কর? শোনো শ্রীমন্তদা, বামুনদের চেয়েও আমাদের ছুঁৎমার্গ বেশি। চল্লিশ তো হয়ে গেল, আর কবে বুঝবে তুমি?”
    শ্রীমন্ত বললে, “তুমি আসলে বড্ড সিনিক হয়ে গেছ। সবেতেই আজকাল ছিদ্রান্বেষণ কর। সবকিছুর একটা ডেকোরাম আছে। তোমার বক্তব্য থাকতেই পারে, কিন্তু তাই বলে তুমি অসভ্যের মতো চিৎকার করে মিটিংয়ে ঝগড়া করতে পার না৷ আর রাণু যে অভিযোগগুলো করেছিল, তার একটাও কি প্রমাণ হয়েছে?”
    মুখার্জী বললে, “তার মানে তুমি বলতে চাইছ যে মাইতি কো-অপারেটিভের ফান্ডের টাকা মারেনি?”
    “হয়তো মেরেছে। হয়তো মারেনি। কিন্তু অভিযোগ করলে তার সপক্ষে একটা এভিডেন্স তো চাই।”
    “তোমার কি মনে হয় যে মাইতি অত কাঁচা লোক?”
    “আমার মনে হওয়ায় কিছু যায় আসে না মুখার্জী,” শ্রীমন্ত বললে, “সংগঠনে থাকতে গেলে তোমাকে কিছু নিয়ম মানতেই হবে, তুমি না চাইলেও। এই শৃঙ্খলা আছে বলেই কমিউনিস্ট পার্টি টিঁকে আছে৷ এটাই পার্টির বিউটি।”
    “আই বেগ টু ডিফার শ্রীমন্তদা। কমিউনিস্ট পার্টির বিউটি তার ডায়লেকটিক্সে, ব্যুরোক্র‍্যাসি আর রেড টেপিজমে নয়। রাণুকে বের করা হয়েছে পার্সোনাল গ্রাজ থেকে। কেন একটি নকশালির সঙ্গে প্রেম করবে। অথচ আমরা দিব্যি কংগ্রেসি বাড়ির মেয়েদের বিয়ে করেছি। আসলে প্যাট্রিয়ার্কি শ্রীমন্তদা, আর কিছুই নয়।”
    “যদি সেটা থেকে থাকে, সেটা কি খুব খারাপ? মাওবাদীরা যখন জঙ্গলমহলে সিপিএম নিকেশ করে, তখন ওদের বামপন্থী ফ্র‍্যাটারনিটির কথা মনে থাকে? তাহলে আমাদের দোর খুলে রাখার কোনো দরকার আছে?”
    “তাহলে আমরাও ফান্ডামেন্টালিস্ট শ্রীমন্তদা, তাই না?”
    শ্রীমন্ত মুখার্জীর দিকে চোখ কুঁচকে তাকাল।
    “মার্কসিজম কোনো ধর্ম নয় মুখার্জী।”
    মুখার্জী শ্রীমন্তের দিকে তাকিয়ে হাসলে। বললে, “ডগমা ছাড়া আর কী-ই বা শ্রীমন্তদা? হিন্দুরা যেমন বেদ পড়ে না, মুসলিমরা যেমন কোরান পড়ে না, আমরাও তেমন ক্যাপিটাল পড়ি না। আশমানি কিতাব কী না, পড়তে নেই৷ পড়লেই পাপ লাগবে। বাদ দাও। শাশুড়ির গলব্লাডার কবে হবে?”
    “সামনের সপ্তাহে তো ডেট দিয়েছে৷ কাল একবার চেক-আপে নিয়ে যাব। এদিকে মেয়ের পরীক্ষা। গিন্নি ওই নিয়ে ব্যস্ত। ফলে…”
    “মেয়ের তো লোরেটো, না?”
    “উঁহু, ক্যালকাটা গার্লস।”
    “কোন ক্লাস যেন?”
    “সিক্স।”
    “ভালোই আছ,” মুখার্জী একটা লম্বা শ্বাস ছেড়ে বললে, “গিন্নি, মেয়ে, স্কুল, শাশুড়ি— ভরভরন্ত সংসার৷ অ্যাক্কেরে পাক্কা ফ্যামিলিম্যান৷ মাঝখান থেকে আমিই শালা ফাটা বাঁশে।”
    শ্রীমন্ত টিকিট কাটছিল। একটা বৌবাজার, একটা সুবোধ মল্লিক স্কোয়্যার। দুটো দশ। খুচরোগুলো সযত্নে মানিব্যাগে রেখে শ্রীমন্ত জিজ্ঞেস করলে, “কেন, তোমার কেটি মিত্র না বেলা বোস— তার কী হল?”
    মুখার্জী একখানা উচ্চাঙ্গের হাসি দিলে। বললে, “সবাই বাল শ্রীমন্তদা। শুধু কেউ ব্লন্ড, কেউ ব্রুনেট।”
    শ্রীমন্ত মুখার্জীর দিকে চোখ সরু করে তাকালে। “মানে?”
    “মানে আর কী?” শ্রীমন্ত বললে, “নিম্নাভিমুখী সর্পিল পথ। ভাবছিলুম প্লেটোনিক, শেষে দেখি সব রাস্তাই বাৎসায়নে এসে মেশে৷”

    এবং এই আলোচনাগুলো এইভাবেই ঘুরপাক খায়। অনিঃশেষ একটি ডাউনওয়ার্ড স্পাইরাল। খানিকটা রাজনীতি, বেশিরভাগটাই পরনিন্দা-পরচর্চা, যদিও বিভিন্ন মোড়কে, সংসারের গুঁতো, মেয়ের স্কুল, বউয়ের বান্ধবী অথবা মেয়ের বন্ধুর মা-বাবার সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার অপ্রয়োজনীয় চেষ্টা, পুজোয় একটি লম্বা ট্যুর, তার সঙ্গে অবশ্যই থাকবে প্রেশার-সুগারের ওষুধ, রবিবারের বাজার, শাশুড়ির গলব্লাডারে স্টোন, এল আই সি-র প্রিমিয়াম, ব্যাঙ্কের কিছু টার্ম ডিপোজিট৷ এবং ধনতেরাসে সোনা কেনা। কারণ মেয়ে বড় হলে বিয়ে দিতে হবে। তখন অবিশ্যি আমরা কমিউনিজম ভুলে যাব৷ কারণ লৌকিকতা এবং লোকে কী বলবে। এবং পাত্রপক্ষ কী বলবে৷ কারণ বিয়েতে সোনা, খাট, আলমারি, শয্যাদ্রব্য দেওয়া বাধ্যতামূলক। শ্রীমন্তের শ্বশুর-শাশুড়ি দিয়েছিলেন, শ্রীমন্ত যখন শ্বশুর হবে, শ্রীমন্তও দেবে৷ তার জন্য সেভিংস চাই৷ কৃচ্ছ্রসাধন করে হলেও চাই। কারণ শ্রীমন্ত মাইতি নয়। শ্রীমন্তের কোনো বাপ নেই৷ শ্রীমন্তর দৌড় লোকাল কমিটি পর্যন্ত৷ আর পাড়ার পার্টি অফিস৷ সান্ধ্যকালীন আড্ডা, রবিবার সকালে পার্টির মুখপত্র বিক্রি, কালেকশন, অবর-সবরে গুটিকয়েক প্রচারপুস্তিকা পড়া, দু-চারটি কবিতার বই এবং অল্পস্বল্প কাব্যচর্চা৷ কবিতার ডায়েরি অবিশ্যি থাকে অফিসের দেরাজে। কারণ গিন্নি বড়ই শুকনো। রসাস্বাদনে বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই— সে কবিতাই হোক বা…। সব প্রেমই যে নিকষিত হেম থেকে আমসিতে বদলে যায়— পনেরো বছরের দাম্পত্যে শ্রীমন্ত বেশ বুঝতে পারে৷ সবই শীতল হয়ে যায়৷ বরফের মতন। দু'জন মানুষও। একই খাটে বাবা-মা, মাঝখানে মেয়ে। এবং মেয়ে বড় হয়ে গেছে, অতএব একান্ত মুহূর্ত অনির্দিষ্ট কালের জন্য শিকেয় তোলা থাক। শ্রীমন্তের খিদে পায়, কিন্তু মধ্যবিত্ত মূল্যবোধ এবং আগমার্কা সিপিএমি শভিনিজম শ্রীমন্তকে সোনা গাজির আস্তানা থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে৷ সাকি এবং সুরা থেকেও। এভাবেই শ্রীমন্তের আগের মানুষরা গেছে, এভাবেই শ্রীমন্ত যাবে, এভাবেই শ্রীমন্তের পরের মানুষরাও যাবে৷ স্বপ্নবিলাসী, কিন্তু নিজেরা বুঝেও বুঝতে চায় না যে মুখার্জীই ঠিক। সবাই বাল। কেউ ব্লন্ড, কেউ ব্রুনেট।

    নূর বই বন্ধ করে ঈশানকে ঠেলা মারে৷ ঈশান তদ্গত হয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিল, দেওয়ালের অদ্ভুত সব গ্রাফিতি দেখছিল৷ সবই একঢালা। তিনটে রং ঘুরেফিরে— লাল, কালো আর নীল। সবুজ না। কমলাও না। রঙেও রাজনীতি। যদিচ নরওয়ের গ্রিন পার্টির রং সবুজ, কিন্তু মধ্য বাম বলে বর্জনীয়। আমাদের সহি বাম চাই। সংসদীয় গণতন্ত্রের পুঁজ-নিষ্ঠীবনে ভরা স্তালিনীয় সহি বাম৷ তখনই অক্ষরদের গায়ে নতুন রং লাগে৷ এবং চিত্রবিচিত্র নকশা। তারা লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে দেওয়াল বেয়ে, ল্যাম্পপোস্ট বেয়ে, হাইড্র‍্যান্ট বেয়ে নতুন সব বাক্যবন্ধ তৈরি করে। সে ভাষা ঈশান জানে না, বোঝে না, কিন্তু অনুভব করতে পারে৷ এবং একটি প্রায় মুছে আসা মুখ। পাথরের উপরে বসে থাকা সমুদ্র সুন্দরীর দূরায়ত গান, চ্যারিবডিসের আহ্বান, বিয়াত্রিচের নরম ঠোঁট৷ কবোষ্ণ বুক। প্রত্যয়াৎ আশ্বসত্যঃ পবনপদবীম্ আরুঢ়ম্ /ত্বাম্ পথিকবনিতাঃ উগৃহীত-অলক-অন্তাঃ প্রেক্ষিষ্যন্তে,/ ত্বয়ি সংনদ্ধে বিরহবিধুরাম্ জায়াম্ কঃ অন্যঃ অপি উপেক্ষেত,/ যঃ জনঃ অহমিব পরাধীনবৃত্তিঃ ন স্যাৎ। ঈশান কনুইয়ে নূরের শীতল স্পর্শ পায়৷ ঈশান নূরের দিকে তাকায়।
    “নামব।”
    ওরা উঠে পড়ে৷

    *
    উয়ো ন’য়ে গিলে উয়ো শিকায়তে
    উয়ো মজে মজে কি হিকায়তে
    উয়ো হর এক বাত পে রুঠনা
    তুমহে ইয়াদ হো কি না ইয়াদ হো

    নূরের শোওয়ার ঘর৷ প্রায় আভরণহীন, আসবাব বলতে একটি বিশাল খাট, দেওয়ালজোড়া আলমারি, ইংরেজিতে যাকে বলে ক্লজিট, একটি কৌচ, আর একটি দীর্ঘাকার ড্রেসিং টেবিল। সবগুলোর বয়সই একশো পুরেছে৷ মেঝেতে পাতা একটি মরক্কান গালিচা, খানিক বিবর্ণ, কিন্তু দিব্যি বোঝা যায় জ্যামিতিক এবং লৌকিক নকশা। ইংরেজিতে বলতে গেলে র‍্যাগ। তাজনাখ্ত। এবং স্তূপাকার বই৷ ডাঁই করে রাখা রেকর্ড, রেকর্ড প্লেয়ার এবং একটি পেটমোটা টিভি৷ ছন্দোবদ্ধ ঘটাং ঘটাং শব্দ তুলে সিলিং ফ্যান ঘুরেই চলেছে। ফোর্ট ওয়েনের চার ব্লেডের ফ্যান, মাঝখানে চারখানা বাল্ব লাগানো। ঘরময় অদ্ভুত গন্ধ। মশলার৷ জাঞ্জিবার থেকে যেসব মশলাবোঝাই জাহাজ পর্তুগালে গিয়ে ঠেকত, এবং ইন্দোনেশিয়া ফেরত ওলন্দাজপোত, পাটনার সাব-এজেন্ট ম্যাকেঞ্জির নেটিব দয়িতার আতরমাখা বক্ষভাঁজের সুবাস, পুরনো ন্যাচারাল শেড কাগজের বিষণ্ণ বাস—মিহিন ফসফরাসদ্যুতি দেওয়াল থেকে দেওয়ালান্তরে ছড়িয়ে যায়, ছোপ ফেলে যায় ঔপনিবেশিক বর্মা চুরুট এবং দুগ্ধফেননিভ অহিফেন শরবতের, তখনই কৌচে বসে ঈশান নূরের থেকে রানিমুদির গলির ইতিহাস শুনতে চায়। এবং অবন ঠাকুর রোড, আগের ক্যামাক স্ট্রিট৷ রেকর্ড প্লেয়ারে বেগম আখতারের গজল।
    “নামটা রাধামাটি নাকি রাধামতী?” ঈশান জিজ্ঞেস করে৷
    “রাধামূর্তিও ভাবা যেতে পারে।” নূর তার স্বভাবজ মৃদুস্বরে বলে।
    নূরের গলা খানিক ভরাট, খানিক ঘষা। তবে নিচু৷ পুরনো গ্রামোফোন রেকর্ডের মতন। আখতারি বাঈয়ের মতন চড়া ছাঁদের নয়। যেন বহুদূর থেকে ভেসে আসা নিস্বন, সবুজাভ, পরীদের স্বচ্ছ ডানার ঘষটানির শব্দ৷ ঈশান শোনে। তন্ময় হয়ে। মা'বুদ ঈশানকে একটি দরাজ হায়াৎ দিন। নূরের সঙ্গে একান্ত যাপনের একটি গোটা জীবন। ঈশান ডুব দেয়, গভীর থেকে তর হয়ে তমে। নূরের আঙুলে খেলে যায় বাইরের হলদেটে আলোর টুকরো, বিলবোর্ড থেকে ঠিকরে আসা নিয়নের উদ্ভাস৷ ঈশানের মনে হয় নূরের উচ্চারণের শেষ ধ্বনিগুলো প্লুতস্বরে বদলে যায়৷ ঈশান শোনে।
    “রানা মদ্দার গলিও হতে পারে।” নূর বলে। “আলিনগরের যুদ্ধে মানিকচাঁদ এখানেই গোরা পল্টনের সঙ্গে লড়েছিলেন৷ তবে রাধামতীই ভালো।”
    “তুমি চিনতে?”
    নূর হাসে৷ কিছু বলে না। কারণ সবই ঝাপসা হয়ে যায় রাত পোয়ালে। বিবর্ণ। মরা রোদের মতন। কতদিন নূর রোদ দেখেনি৷
    “যদ্দূর মনে পড়ছে, গিরিশ ঘোষই হবে, লিখেছিলেন ‘'রানি মুদিনীর গলি/ শরাবের দোকান খালি/ যত চাও তত পাবে, পয়সা নেবে না।”
    “প্রফুল্ল।”
    “শেষ পর্যন্ত আব্দুল হামিদ রোড। আচ্ছা নূর, সত্যিই কি তিনটে ট্যাঙ্ক উড়িয়ে দিয়েছিল?”
    “আটখানা।”
    “তারপর?”
    “তারপর আব্দুল হামিদ মারা যায়।”
    “অ্যান্ড ইউ বিলিভ ইন সাচ শিট?”
    “হোয়াট শিট?”
    “যে আব্দুল হামিদ আটখানা ট্যাঙ্ক উড়িয়ে দিয়েছিল?”
    নূর কিছু বলে না। চুপ করে থাকে। সিলিং ফ্যান ঘুরছে। ঈশান সেই ঘূর্ণায়মান সিলিং ফ্যান দেখতে দেখতে বলে, “আমার কেন জানি না মনে হয় গ্যালান্ট লাইজ। সিগফ্রয়েড স্যাসূন। আবার ঠিকও হতে পারে। আমি জানি না। অ্যাম আই বিইং দ্যাট মাচ স্কেপটিকাল?”
    নূর চুপ করে বাইরের রাস্তা দেখতে থাকে৷ ঘরে ফিরতে থাকা মানুষ। ঘেমেনেয়ে ক্লান্ত। এবং প্রচ্ছন্ন পাপী। রতিক্লান্ত, কিন্তু ভালোমানুষির মুখোশ পরা৷ প্রত্যেকেই মাপছে। একে অন্যকে। ফরসা কিশোরীর বুক-পেট-কোমর-পাছা, হিপ পকেটে উঁচু হয়ে থাকা মানিব্যাগ, কড়কড়ে নোট, আটলাখি গাড়ি, বাহুলগ্না সুন্দরী, ম্যানিকুইনের গায়ে এবং হোসিয়ারির দোকানে ব্রা-পরিহিতা ভরাট স্তনাঢ্য তরুণী। রাস্তার একপাশে কর্ডন করে লাল পার্টির স্ট্রিট কর্নার। “এবার আপনাদের সামনে বক্তব্য রাখবেন জোনাল কমিটির লিট-ইনচার্জ, যুব সংগঠনের রাজ্য কমিটির সদস্য কমরেড অমুক বরণ চক্রবর্তী। কমরেড চক্রবর্তী।”
    এবার কমরেড চক্রবর্তী বলতে শুরু করেন, “মঞ্চে উপবিষ্ট কমরেড সভাপতি, আমাদের জোনাল কমিটির সেক্রেটারি কমরেড অমুকদা, জেলা কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কমরেড তমুক হোসেন, সামনে উপস্থিত শ্রোতৃবৃন্দ, এবং এই মাইকের আওয়াজ যতদূর পৌঁছচ্ছে…”
    ঘোষক মঞ্চের পাশে নেমে এসে সিগারেট ধরায়। মার্লবোরো। খচখচ করে দেশলাই ঘষে, কিন্তু আগুন জ্বলে না৷ পাশ থেকে উঠতি ছাত্রনেতা লাইটার বাড়িয়ে দেয়।
    “তমুকদা, আগুন।”
    ঘোষক সিগারেট ধরান৷ সুখটান দেন৷ মার্লবোরোর পুদিনাস্বাদ গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে আশেপাশে৷ ফ্লেক্সে টাঙানো কার্ল হাইনরিখ মার্কসের মুখ ঝাপসা হয়ে যায়৷ ‘ইঙ্গ-মার্কিন পারমাণবিক চুক্তির বিরুদ্ধে…’ ইত্যাদি শব্দবন্ধ এবং দিনেশ দাসের কবিতা, ‘বেয়নেট হোক যত ধারালো, কাস্তেটা শান দিও বন্ধু’— ইত্যাদিও।
    “মেম্বারশিপের অবস্থা কী?”
    “চলছে৷ বাইশের হাফ হয়ে গেছে, গুপ্তিপাড়ার দিকটা এখনও খানিকটা বাকি।”
    “প্রিয় টাকাটা দিয়েছে?”
    “কীসের টাকা?”
    “গতমাসের কাগজ বিক্রির। প্লাস ফ্ল্যাটের সিসি বের করার জন্য…”
    “সে তো এল সি-তে গিয়ে দেওয়ার কথা। জোনালে তো নয়।”
    “দিয়েছে কি?”
    “জানি না।”
    “জানো না তো একটা ফোন কর না,” ঘোষক দাঁতমুখ খিঁচিয়ে বলে, “সম্মেলনের ক্যাটারিংয়ের টাকা কি তোমার বাবা দেবে? পকেটে ফোন ভরেছিস কি প্রেম মারানোর জন্য? ফোন লাগা বাঞ্চোৎটাকে।”
    ছাত্রনেতা পকেট থেকে ফোন বের করে। কমরেড চক্রবর্তী বলছেন, “মনকাডা ব্যারাক আক্রমণের অপরাধে ফিদেলকে যখন জেলে পাঠানো হয়, ফিদেল তখন বলেছিলেন, ‘হিস্ট্রি উইল অ্যাবজলভ মি।’ আমরাও সেই কথাই বলছি৷ যে আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের উলঙ্গ হাত আমাদের দেশকে বাধ্য করছে পারমাণবিক বর্জ্য কিনতে, সেই দেশের অক্সফ্যাম, ফোর্ড ফাউন্ডেশন, মায় সরকার অবধি এনজিও ইত্যাদির নামে জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের যথেচ্ছ অস্ত্র সাপ্লাই দিচ্ছে। কিন্তু আমরা পিছু হটার নই৷ কমরেড বলরাম মাহাতোর হাতে ধরা পেনের কসম, হাক্কা হম জরুর জিতেঙ্গে। বালাখর হম জরুর জিতেঙ্গে।”
    হাততালির শব্দে চাপা পড়ে যায় রাতচরা পাখির ডানার ঝাপটানি।

    “আর ক্যামাক স্ট্রিট?”
    “উইলিয়াম ক্যামাক। টিপেরা আর ঢাকার জজ। কর্নওয়ালিস-ওয়েলেসলির সময়ের ব্যবসায়ী। পার্ক স্ট্রিট থেকে লোয়ার সার্কুলার রোড অবধি গুচ্ছের বাড়ি ছিল ভদ্রলোকের। আর একজন ক্যামাকও ছিল। জেকব ক্যামাক। সিন্ধিয়াকে হারিয়েছিল। সতেরোশো চুরাশি।”
    ঈশান খানিকক্ষণ চুপ করে রইল। বেগম আখতার ছাপিয়ে লালগড়ের লাশ-পাল্টা লাশের টুকরো টুকরো খতিয়ান কানে আসছিল। নন্দীগ্রামের কেমিক্যাল হাব এবং সিঙ্গুরে অনুসারী শিল্পের তালিকা৷ দেঙের বিখ্যাত বিগ লিপ৷ বিশ্বায়নের সাড়ে দশ বছর উত্তর কলকাতা, মেট্রোপলিটান বনা কসমোপলিটান, দুশো চল্লিশ নম্বর বাসের ভোঁ, মাই-নিতম্ব পরখের ঝিনচ্যাক অভিজন(Elite) বিপ্লব। পুরুলিয়ার বোঙাবাড়ির পাশে একটি গ্রাম। জাহাজপুর। বেদেদের গ্রাম। এগারো বছরে বিয়ে, চৌদ্দ বছরে বাচ্চা বিয়োনো, আর্সেনিকভরা কুয়োর জল, বিপ্লবের তিন দশক পরেও বিদ্যুৎ নেই৷ কিন্তু টেলিগ্রাফের ছিন্ন পাতায় মল্লিকা শেরাওয়াতের নিটোল জঘন খিদের খায়েশ মেটায়। কারণ ক্ষুন্নিবৃত্তি সাময়িক, লিবিডোই একমাত্র সত্য। জিতে রহো ফ্রয়েড। জিন্দাবাদ বিপ্লবীয়ানা শ্লাঘার। মার্কসঠাকুরের জয় হোক৷

    “জানো, আজ সাগ্নিককে দেখলাম।”
    নূর গেলাসে পানীয় ঢালছিল৷ ঘন লাল তরল৷ ঈষৎ কষাটে৷ পিরিচে রাখা একটি পপসিকল। সেটিও লাল। তবে খানিক গেরিমাটি রং৷ ইন্ডিয়ান রেড। বেগম আখতার বদলে গেছেন। এখন নিধুবাবু৷ নূর আয়ত চোখে ঈশানের দিকে তাকিয়ে গেলাসে চুমুক দিলে।
    “কোথায়?”
    “বিবেকানন্দ রোড। একটা হাইড্র‍্যান্টের গায়ে দেখি অদ্ভুত এক বেগুনি গ্রাফিতি, হঠাৎই বদলে কেমন যেন সাগ্নিক হয়ে গেল। আর নির্বিকল্প হাসি৷”
    “কী বলল সাগ্নিক?”
    ঈশান উদাস চোখে জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বললে, “মনে নেই৷ তবে বেশ লাগছিল ওকে। একবার বললে জিন্দাবাহার, তারপরই দেখি বিস্তীর্ণ জমি জুড়ে রাধাচূড়া ফুল। তখনই তুমি এলে।”
    “তারপর?”
    “তারপর আর কী?” লম্বা শ্বাস ফেললে ঈশান, “সেই দৌড় আর দৌড়৷ মনখারাপ, ডিপ্রেশন, আর কিচ্ছু হওয়ার নয়— এই বাসি ফিলিংসগুলো তুমি তো জানো নূর। জানো না?”
    “জানি।” নূর বললে, “তারপরেও জানতে চাই।”
    ঈশান হাসল। বিষণ্ণ হাসি। বললে, “আসলে যখন বিশ্বাসের জায়গাটা ভেঙে যায় না নূর, তখনই আর কিছু থাকে না৷ আমি না খুব ক্লান্ত৷ বিশ্বাস করে ক্লান্ত৷ এখন মনে হয় আর কিছুই হওয়ার নেই।”
    “তাই মুখোশ খুলে ফেলছ?”
    ঈশান আবারও হাসে। “মুখ থাকলে না মুখোশ! আসলে মাঝেমধ্যে নিজের অস্তিত্ব নিয়েই সন্দেহ হয়৷ অ্যান্ড আয়াম এক্সপেরিয়েন্সিং হেল৷ ডিসফাংশনাল ফ্যামিলি, কেচ্ছা, লোভ, পিঙ্ক ফ্লয়েডের সেই গানটা আছে না, ডিড দে গেট য়ু টু ট্রেড য়োর হিরোজ ফর গোস্টস, আমার ঠিক সেরকম মনে হয়।”
    “তোমার বাবা…উনি কি এখনও…”
    ঈশান ঘাড় নাড়ে।
    “আর তোমার দিদি?”
    “শি ইজ স্টিল গেটিং ব্যাংড বাই দ্যাট ফাকহেড।”
    “তাহলে তোমার জামাইবাবু?”
    “ম্যানিলায় মাগী জুটিয়ে ফুর্তি করছে৷”
    “অ্যান্ড য়ু আর সিকিং অ্যান এসকেপ।”
    “হয়তো৷ হয়তো না। আমি ঠিক জানি না। তবে সত্যি বলতে নূর, আমার আর ভালো লাগছে না৷”
    নূর ঈশানের কাছে সরে আসে। কৌচের হাতলে বসে। আরও ঘন হয়ে বসে৷ হাতের উপরে ঈশান নূরের শীতল স্পর্শ পায়৷ মসৃণ, কিন্তু খানিক শণের মতন নূরের দীর্ঘ চুল ঈশানের নাকে ঠেকে৷ নরম আলোয় ঝিকিয়ে ওঠে নূরের দুধসাদা দাঁত।
    “তুমি ভাবতে পার, একটা জলজ্যান্ত ছেলে, কথা নেই, বার্তা নেই, দুম করে উধাও হয়ে গেল? নো ট্রেস। ঘরের মধ্যে ছড়ানো বই, খোলা খাতা, পেনের ঢাকনা লাগানো নেই, চটিজোড়া অবধি স্টাডি টেবিলের নিচে পরিপাটি পড়ে রয়েছে, শুধু ছেলেটাই নেই। ভাবতে পার?”
    নূর গভীর চোখে ঈশানের দিকে তাকিয়ে রইল৷ ঈশান বলে যেতে লাগল, “সবাই ভেবেছিল সাগ্নিক হয়তো বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে৷ তারপর কথা রটল, সাগ্নিককে নাকি লাল পার্টির লোকেরা গুম করেছে। তারপরে রটল সাগ্নিককে নাকি বেলপাহাড়ি অথবা বাঘমুণ্ডি— কোথাও একটা দেখা গেছে৷ কিন্তু আমি জানি, এগুলোর সব মিথ্যে।”
    “তাহলে সত্যিটা কী?”
    ঈশান অসহায়ের মতন ঘাড় নাড়ে। দু'হাতে মুখ ঢাকে, তারপর মুখ গোঁজে নূরের কোলে৷ নূরের শীর্ণ আঙুল বিলি কাটে ঈশানের চুলে, পথ হারায়, পথ খুঁজে নেয়, এসে থামে শ্যামল গ্রীবায়৷ কলাগাছের কাণ্ডের মতন ঋজু এবং নরম৷ নূরের ঠোঁটের কোণে এখনও লেগে আছে লাল পানীয়ের একটি ফোঁটা৷ নূর ঠোঁট ভেজায়। আলতো করে নেমে আসে ঈশানের ঘাড়ের কাছে। নূরের ঠোঁটজোড়া ফাঁক হয়। ধীর পায়ে বেরিয়ে আসে একজোড়া শ্বদন্ত৷ করাতপ্রতিম। নূরের সবুজ চোখে পান্নাঝিলিক৷ ঈশান ঘাড়ে বরফের ছোঁয়া পায়৷ তারপরেই নরম একজোড়া ঠোঁট৷

    এই কথোপকথন প্রায়ই চলে ওদের মধ্যে। এবং এইভাবেই শেষ হয় প্রতিদিন৷ খাদ্য খাদকের প্রেমে পড়ে রোজ, খাদক অতিকষ্টে সরিয়ে রাখে নিজের তৃষ্ণা, নির্লিপ্তির চাদরে নিজেকে মুড়ে রাখে। তারপরেও তার শীতল বুক চলকে ওঠে। নূর রক্তের মধ্যে সমুদ্রের টান অনুভব করে৷ কূলছাপানো জোয়ার৷ গাজিপুর মনে পড়ে৷ আর এইচএসবিসি-র বাড়িখানা। সাদা সাদা ফুল। আরমানি গির্জাফেরত প্রথম দয়িত৷ কাঠের বাক্স ভর্তি তোলা তোলা কালো মণ্ড৷ জাহাজঘাটা৷ চীনা সুলুপ৷ নূর-উন-নাহার সরকার।
    নূর মৃদুস্বরে ডাকে, “ঈশান?”
    “হুঁ।”
    “রুকসানার ওখানে যাবে?”
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    পর্ব ১ (অনেকখানি)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই প্রতিক্রিয়া দিন