এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • ফিরে দেখা 

    Luna Mitra লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৮ জুলাই ২০২৫ | ২৬ বার পঠিত
  • না ইয়ে চাঁদ হোগা। না তারে রহেঙ্গে
    মগর হাম হামেশা তুমহারে রহেঙ্গে

    মায়ের কাছে শুনেছিলাম আমার দিদিমার নাকি ভারী পছন্দের গান ছিল এটি। অনেক পরে জেনেছি গানটি 1954 সালের "শর্ত" সিনেমার। সুর হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের। গায়িকা গীতা দত্ত।
    আমার দাদু দিদিমার বাড়িটি ছিল,

    ঝিলমিল সীতারো কা আঙন হোগা
    রিমঝিম বরসতা শাওন হোগা
    অ্যায়সা সুন্দর স্বপ্না আপনা জীবন হোগা

    দাদু দিদিমার সম্পর্কের রসায়নটি ভারী মধুর বড়ই নিবিড় আর পরম শ্রদ্ধার ছিল। গাছপালা পাখপক্ষী বিড়াল ছাগল সহ তিন সন্তান নিয়ে তাদের বাড়িটি ঘিরেও সেই শান্তির বাতাস বইত। মামিমার মুখে শুনেছি, এতই পরিপাটি পরিচ্ছন্ন থাকত ঘর দুয়ার যে চকচকে মোম মসৃণ মেঝেতে সিঁদুরটুক পড়লে কুড়িয়ে নেওয়া যেত। বাড়ির পাশেই ছিল তখনকার মিডল ইস্কুল। ক্লাস এইট পর্যন্ত। ইস্কুলের পিছনের দরজাটি খুললেই মামারবাড়ির সীমানা। দাদু তখন ইস্কুলের পিছনের এই বাড়িটি কিনে চলে এসেছেন। মা ম্যাট্রিক পাস করে ওই ইস্কুলের দিদিমনি। তখন ওপার বাংলার মেয়েরা বেশি সংখ্যায় শিক্ষিত ও আলোকপ্রাপ্ত হত। মায়ের সুবাদে দিদিমনিরা আসত। রান্না খাওয়া সেলাই গান সব চলত দেদারে। দিদিমাকে মিস্ মা বলে ডাকত দিদিমনিরা। হয়ত ওদের দেখেই মায়ের আরো পড়ার ইচ্ছা জেগেছিল। ওই দিদিমনিদের মত হতে চেয়েছিল মা। নাহলে সেই যুগে যখন মায়ের সব বন্ধুরা একের পর এক বিয়ে হয়ে সংসার করছে, মা তখন বাড়িতে মাষ্টারমশাই (অনুপমা মাসীর স্বামী) এর সাহায্যে পড়া তৈরি করে একে একে আই এ, বি এ, বি টি, কোথায় রাঁচি কোথায় ভাগলপুর কোথায় পাটনা ভাইকে ছড়িদার করে, গিয়ে গিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে। দাদু দিদিমাও কতখানি উন্নত মনষ্ক ছিল যে একমাত্র কন্যা সন্তানের বিয়ে না দিয়ে তাকে তার পছন্দ মত পড়তে দিয়েছিল সেই যুগে! তারপর তো ধাপে ধাপে তার ওই ছেলেবেলার ইস্কুলের হেড দিদিমনি হওয়া। বাবা মা ভাইকে বুকে করে আগলে রাখা। সারা শহরের সম্মান ভালবাসায় ভরে ওঠা। সব সব পেয়েছিল আমার মা। সমাজ সংসার আত্মীয় পরিজন বন্ধু বান্ধব পরিচিত জনদের কাছে অগাধ ভালোবাসা সম্মান সমীহ সব পেয়েছিল। তার কিছুটা আভাস আমরা মামাবাড়ি গেলেই টের পেতাম। রাস্তা ঘাটে যার সঙ্গেই দেখা হোক না কেন, "ওমা সোনালীর মে য়ে" বলে বাড়তি মনোযোগের বিষয় হতাম।

    অনেক পরে বিয়ে করে আমাদের একান্নবর্তী পরিবারে এসে মা নিজের স্বকীয়তা ধরে রাখতে পারেনি। এক্কেবারে সংসারে নিজেকে বিলীন করে দিয়েছিল। হয়ত সেটাই মা চেয়েছিল। তার ফল আমাদের দুই ভাই বোনের পক্ষে খুব একটা মঙ্গলজনক হয়নি।

    দিদিমাকে সে ভাবে পাইনি। দাদুকে তাও পেয়েছিলাম। কিন্তু কৈশোরের চঞ্চলতায় দাদুর কাছে বসে যে তাদের কথা জানতে চাইব, সে বোধ তখন ছিল না। এখন বড়ই আফসোস হয়। যদি দাদুর সঙ্গে বসে বসে তাদের সময়ের কথা গুলো জেনে নিতাম।

    আমার মা, যে কিনা বিয়ে হয়ে সঙ্গে করে তার প্রিয় পত্রিকা গুলি নিয়ে এসেছিল। মনে আছে তার মধ্যে "মহিলা" বলে একটি পত্রিকায় হরিণের ছবি দেওয়া ছিল। একটু বড় হয়েই আমি সেসব গোগ্রাসে গিলে ছিলাম, মনে হয় কেন মায়ের মনোজগতের খবর আরও বেশি করে কেন রাখিনি। বুকের মধ্যে হাহুতাসের শুকনো বাতাস পাক দিয়ে ওঠে।

    সামনের জন্মে তুমি আমার মেয়ে হবে আমি তোমার মা। কোনোদিন কোন অনাদর করব না মা গো। বুকে করে মানুষ করব তোমাকে। এ জন্মে তোমার অক্ষম মেয়ে পারেনি তোমাদের বুকে করে রাখতে সেই অনুতাপের আগুনে আমি প্রতিদিন দগ্ধ হই।

    কিন্তু এই সমস্ত কষ্টগুলো কাটিয়ে আমি এখনো কিছু করার চেষ্টা করে চলেছি। অবসরের পরবর্তীতে হাতে সময় পাব তখন নিজের "থোড় বড়ি খাড়া" জীবন থেকে বেরিয়ে আলোর সন্ধানে বেরোব ইচ্ছেটুকু রইল।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই প্রতিক্রিয়া দিন