এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • দুঃখশ্লোক 

    যদুবাবু লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৮ জুলাই ২০২৫ | ৮১ বার পঠিত
  • চতুরঙ্গ
     (এগুলো ঠিক লেখা নয়, এগুলো টেখা। মাঝে মাঝে একটা-দুটো কি চারটে-পাঁচটা কবিতা মনে পড়ে। ভুলে যাওয়ার আগে একটা খাতাতে টুকে রাখছি।)
     

     
    শক্তির এই কবিতাটি বহুপঠিত, অন্তত আমার বা আমার আগের প্রজন্মের। একাধিক বন্ধুকে বিভিন্ন সময় ঐ যে অমোঘ শেষ লাইনটি, ঐটি আওড়াতে শুনেছি। অথবা, প্রথমটি, অনেক সময় প্রথমের পরেই এক লাফে শেষ, দুটি "চাই না" মিলিয়ে দিয়ে। আমিও কি বলিনি? কোনো একদিন কোনো এক আড্ডার পরে সিগারেট ধরিয়ে বাঁচতে চাই না বলেছি তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে, স্পষ্ট মনে পড়ে।

    অবশ্য তখন বয়স ব্যাপারটা ছিল সেই বাঘের মত যার পিঠে দিব্যি উঠে পড়া যেতো, নেমেও পড়া যেত ইচ্ছে করলে। আর এখন যখন মাঝে-মাঝেই বয়স-বয়স করে একটা তীব্র হা-হুতাশ ওঠে বন্ধুদের আড্ডার ঠেকে, তখন মাঝে মাঝে বিরক্ত হয়ে জানলা দিয়ে আকাশের দিকে তাকালে মনে হয় মেঘের মধ্যে দিয়ে যেন কেউ এই লাইনটি লিখে দিয়ে যাচ্ছেন, দৈববাণীর মত নয়, দৈবাদেশের মত। মনে হয়, এই যে মানুষের কী তীব্র আকুতি দীর্ঘ জীবনের, দীর্ঘ-নীরোগ জীবনের, জীবন প্রকৃত অর্থেই যন্ত্রণাময় এবং পরাহত জেনেও, এই এক অদ্ভুত রহস্য। একেই হয়ত বিভূতিবাবু বলতেন রোমান্স। পথের পাঁচালির সেই লাইনগুলি মনে পড়ে বারংবার।

    "আজ একথা বুঝি ভাই যে, সুখ ও দুঃখ দুই-ই অপূর্ব। জীবন খুব বড় একটা রোমান্স — বেঁচে থেকে একে ভোগ করাই রোমান্স — অতি তুচ্ছতম হীনতম, একঘেয়ে জীবনও রোমান্স। এ বিশ্বাসটা এতদিন আমার ছিল না। ভাবতুম লাফালাফি ক’রে বেড়ালেই বুঝি, জীবন সার্থক হয়ে গেল—তা নয়, দেখলুম ভাই।

    এর সুখ, দুঃখ, আশা, নিরাশা আত্মার যে কি বিচিত্র, অমূল্য য়্যাডভেঞ্চার, তা বুঝে দেখতে ধ্যানদৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা আছে, তা আসে এই রহস্যমাখা যাত্রাপথের অমানবীয় সৌন্দর্যের ধারণা থেকে।"

    শেষমেশ কী ভাবি আমি? জানি না। এক একদিন এই সকালে উঠে জানলার কাচে বৃষ্টির ফোঁটার উপর দেখি আলো পড়ে যেন গয়না বানিয়ে দিয়েছে কেউ। মনে হয় রোম্যান্স। তারপর দিন শুরু হয়, ফোন খুলি, ল্যাপটপ খুলি, ইমেল করি, হোয়াটস-অ্যাপে তরজায় মাতি, ফেসবুক খুলি, খুলেই বন্ধ করে দিই, তারপর আবার খুলি। দুর্ঘটনার সাঙ্ঘাতিক সব খবর ভেসে ওঠে, বা ঘৃণারাক্ষসের নতুন কোনো শিকার - তার ভিডিও আসে, দেখি। বা দুঃসংবাদ আসে বন্ধুদের কাছ থেকে, মৃত্যু অথবা দীর্ঘ দাম্পত্যের বিচ্ছেদ, আমাদের আপাততঃ এইই প্রথম পাতার খবর। "সর্বম দুঃখম দুঃখম"। জন্ম দুঃখ, জরা দুঃখ, মৃত্যু দুঃখ, অপ্রিয় সংযোগ দুঃখ, প্রিয় বিচ্ছেদ দুঃখ, ঈপ্সিতের অপ্রাপ্তি দুঃখ। আড়াই হাজার বছর আগে সারনাথে বুদ্ধদেব বলেছিলেন।

    মনে পড়লো, নিল গাইম্যানের বইয়ের শুরুতে লেখা ছিল, 'এভরি আওয়ার উণ্ডস, দ্য লাস্ট ওয়ান কিলস।' নিল গাইম্যান যে ভেতরে এক রাক্ষস সেটা জেনেও ঐ লাইনটা মুছে ফেলতে পারলাম আর কৈ? কেন উনি রাক্ষস হলেন? আমাদের কথা একটিবার ভাবলেন না?

    যাইহোক, আর দুঃখ-দুঃখ করে লাভ নেই। একশো আটটা ইমেল করতে হবে। তারপর কাজ করতে হবে। তারপর বইপড়া।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    চতুরঙ্গ
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ০৯ জুলাই ২০২৫ ০০:২০732353
  • ঠিক কাজ হচ্ছে।
    দুঃখকে খেরোর খাতায় ধরে রেখে দিলে সময়ের আশ্চর্য জারণে আস্তে আস্তে তার শরীরে কষাপনা হ্রাস পেয়ে মোরব্বার সুস্বাদে সুঘ্রাণে পরিণতির সম্ভাবনা ফুটে ওঠে। শুধু মাঝে মাঝে তাকে রোদে-দিতে হয়, ঢাকনা খুলে এক চামচ, দু চামচ তুলে নিতে হয়, আঙ্গুল না ছুঁইয়ে। সেটা আমরা পাঠকরা করে যাব। 
    heart
  • r2h | 208.127.***.*** | ০৯ জুলাই ২০২৫ ০০:৫৫732354
  • আহা।
    আমি এই জায়গাটা মাঝেমাঝেই ফিরে পড়িঃ
     
    "অনিলের মৃত্যুর পর অপু বড়ো মুষড়াইয়া পড়িল। কেমন এক ধরনের অবসাদ শরীরে ও মনে আশ্রয় করিয়াছে, কোন কাজে উৎসাহ আসে না, হাত-পা উঠে না।

    বৈকালে ঘুরিতে ঘুরিতে সে কলেজ স্কোয়ারের একখানা বেঞ্চির উপর বসিল। এতদিন তো এখানে রহিল, কিছুই স্থির হইল না, এভাবে আর কতদিন চলে? ভাবিল, না হয় অ্যাম্বুলেন্সে যেতাম, কলেজের অনেকে তো যাচ্ছে, কিন্তু মা কি তা যেতে দেবে?

    পরে ভাবিল—বাড়ি চলে যাই, মাসখানেক অর্ডারলি রিট্রিট করা যাক।

    পাশে একজন দাড়িওয়ালা ভদ্রলোক অনেকক্ষণ হইতে বসিয়া ছিলেন। মধ্যবয়সি লোক, চোখে চশমা, হাতের শিরগুলি দড়ির মতো মোটা। তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, সাঁতারের ম্যাচ কবে হবে জানেন?

    অপু জানে না, বলিতে পারিল না। ক্রমে দু-চার কথায় আলাপ জমিল। সাঁতারেরই গল্প। কথায় কথায় প্রকাশ পাইল—তিনি ইউরোপ ও আমেরিকার বহুস্থান ঘুরিয়াছেন। অপু কৌতূহল দমন করিতে না পারিয়া তাহার নাম জিজ্ঞাসা করিল।

    ভদ্রলোক বলিলেন,-আমার নাম সুরেন্দ্রনাথ বসু মল্লিক–

    অনেকদিনের একটা কথা অপুর মনে পড়িয়া গেল, সে সোজা হইয়া তাঁহার মুখের দিকে চাহিল। কিছুক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া বলিল—আমি আপনাকে চিনি, আপনি অনেকদিন আগে বঙ্গবাসীতে বিলাত-যাত্রীর চিঠি লিখতেন।

    —হ্যাঁ হ্যাঁ—ঠিক, সে দশ এগাবো বছর আগেকার কথা—তুমি কি করে জানলে? পড়তে নাকি?

    -ওঃ, শুধু পড়তাম না, হাঁ করে বসে থাকতাম কাগজখানার জন্যে—তখন আমার বয়েস বছর দশ। পাড়াগাঁয়ে থাকতাম—কি inspiration যে পেতাম আপনার লেখা থেকে!…

    ভদ্রলোকটি ভারি খুশি হইলেন। সে কি করে, কোথায় থাকে জিজ্ঞাসাবাদ করিলেন। বলিলেন,–দ্যাখো কোথায় বসে কে লেখে আর কোথায় গিয়ে তার বীজ উড়ে পড়ে—বিলেতে হ্যাম্পস্টেডের একটা বোর্ডিং-এ বসে লিখতাম, আর বাংলায় এক obscure পাড়াগাঁয়ের এক ছোট ছেলে আমার লেখা পড়ে—বাঃ বাঃ–

    ভদ্রলোকটির ব্যবসাবাণিজ্যে খুব উৎসাহ দেখা গেল। মাদ্রাজে সমুদ্রের ধারে জমি লইয়াছেন, নারিকেল ও ভ্যানিলার চাষ করিবেন। নিঃসম্বল তেরো বৎসরের নিগ্রো বালককে ইউরোপে আসিয়া নিজের উপার্জন নিজে করিতে দেখিয়াছেন, দেশের যুবকদের চাষবাস করিতে উপদেশ দেন।

    ভদ্রলোকটিকে আর অপুর অপরিচিত মনে হইল না। তাহার বাল্যজীবনের কতকগুলি অবর্ণনীয়, আনন্দ-মুহূর্তের জন্য এই প্রৌঢ় ব্যক্তিটি দায়ী, ইহারই লেখার ভিতর দিয়া বাহিরের জগতের সঙ্গে সেই আনন্দভরা প্রথম পরিচয়

    সম্পূর্ণ নতুন ধরনের উৎসাহ লইয়া সে ফিরিল। কে জানিত বঙ্গবাসীর সে লেখকের সঙ্গে এভাবে দেখা হইয়া যাইবে।…শুধু বাঁচিয়া থাকাই এক সম্পদ, তোমার বিনা চেষ্টাতেই এই অমৃতময়ী জীবনধারা প্রতি পলের রসপাত্র, পূর্ণ করিয়া তোমার অন্যমনস্ক, অসতর্ক মনে অমৃত পরিবেশন করিবে…সে যে করিয়া হউক বাঁচিবে।
    "
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত মতামত দিন