সিংঘু থেকে, রাত ১২.২০, ২৮ জানুয়ারি
আমাদের এখানে সারাদিন ইন্টারনেট পাইনি, সকালে সিংঘু ঢুকতে হয়েছে ফসলের ক্ষেতের মধ্যে দিয়ে ৪-৫ কিমি হেটে, বিশাল পুলিশ বাহিনী সিংঘু ঘিরে রেখেছে। দু'দিন ধরে অবস্থা বেশ খারাপ ছিলো, তবে আবার নতুন করে হরিয়ানার লোকেরা ট্রলি নিয়ে ঢুকছে, আমরা সংযুক্ত কিষান মোর্চা'র অন্যতম নেতা রাজেন্দ্র সিংঘ দীপ সিং অলা'র তাঁবুতে আছি, বাইরে বক্স বাজছে, মজদূর কিষাণ একতা জিন্দাবাদ শ্লোগান চলছে।
ভয়ের কিছু নেই, অন্তত ৫০০ ভলেন্টিয়ার ঘি মাখানো লাঠি হাতে গোটা জায়গা পাহারা দিচ্ছে। এখানে আজ রাত সকলেই জাগবে ঠিক করেছে।
বাংলার অনেক সাথীই চিন্তিত ছিলেন, মেসেজ করেছেন, আমরা সারারাত ঘুমাইনি, পাহারাদার কমরেডরা জাগতে রাহো বলে বলে সারা সিংঘু ঘুরে বেড়িয়েছেন, কাল গাজীপুর সীমান্তে এই ঘটনার প্রেক্ষিতে হরিয়ানা এবং উত্তরপ্রদেশে 'খাপ' বসেছিলো, হ্যাঁ ঠিকই পড়ছেন, খাপ, তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রতিবাড়ি থেকে অন্তত একজন ব্যারিকেড মজবুত করবেন, আমাদের দেশকে কত চেনাই বাকি, খাপ নিয়ে কেবল এক পাক্ষিক খবর আমরা দেখেছি, সেই খাপ-ই এই আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে।
সারারাত বিশ্বাস করবেন না ট্রলি ট্রাক্টর ঢুকেছে সিংঘুতে, আমরা সেলাম জানিয়েছি, কখনো ৫-৬ ডিগ্রি ঠান্ডায় তাঁবুতে ফিরেছি, আবার বেরিয়েছি,সিংঘু আরো আরো আরো মজবুত হচ্ছে।
কানুন বাপসি নেহি তো ঘর বাপসি নেহি।
ঘুমাতে চললাম কমরেডস।
আতঙ্কের রাত কেটে গেলো, সকাল বেলা জানিয়েছিলাম হাজারে হাজারে হরিয়ানার ট্রাক্টক ঢুকছিলো সিংঘু, এখন সিংঘু আবারও কুম্ভমেলার রূপ নিচ্ছে, রাতে সাথীদের সাথে কথা হচ্ছিলো, ২৬ এর পর অনেকে ফিরে গিয়েছিলেন, সারারাত শ্লোগান গান বন্ধ ছিলো কিন্তু আজ আবার সিংঘু আছে সিংঘুতেই।
সকালে একবার বর্ডার গিয়েছিলাম, অন্তত ২০০০ পুলিশ, আধাসেনা মোতায়েন করা হয়েছে, আর এদিকেও আছে নিহান সিং এর দলবল, এক বুড়ো সর্দার বলছিলেন, ওদিক থেকে যদি আক্রমণ আসে, এরা আমাদের সব থেকে সাহসী লড়াকু নিহান আর্মী, ভুন দেগা শালে কো।
কিন্তু আপাত, শান্তি, সকলে স্নান করে তৈরি হচ্ছেন ডান্ডা মিছিলের জন্য। আজ পতাকা থাকবে না, কেবল হাতে থাকবে ডান্ডা।
সিংঘু ছাড়লাম কাল দুপুরের পর, সিংঘু প্রায় একটা উপত্যকার মতো, মহেঞ্জোদারো হরোপ্পা কেমন ছিলো না জানিনা, ইতিহাসে যেমন পড়েছি তেমনই ছিলো সিংঘু, সকাল থেকে প্রার্থনা হচ্ছে মঞ্চে, জায়গায় জায়গায় হালুয়া বিতরন, মানুষের স্নান, সূর্য প্রনাম।
জামা কাপড় ধোয়া চলছে একদিকে, সকাল থেকেই ট্রাক ভর্তি পাঞ্জাব হরিয়ানা থেকে জ্বালানি কাঠ খালাস করা হচ্ছে, সারা রাস্তা ঝাড়ু দেওয়া, সকলের মধ্যে 'কাড়া' বিতড়ন,কাশি থেকে বাচতে আদা মধু তুলসী গুন সমৃদ্ধ গরম পানীয়, এরপরও কারু শরীর খারাপ হলে ওষুষের দোকান এবং ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে ৫-৬ বেডের হসপিটাল, পাঠাগার গড়ে উঠেছে জায়গায় জায়গায়,আস্তাবল গড়ে তুলেছেন নিহান সিং-র দল।
মোদ্দা কথায় মানুষের যা কিছু প্রয়োজন সব আছে এই সিংঘু সভ্যতার, এই আমাদের সিন্ধুসভ্যতা।
একদিকে ভগৎ সিং-র দেশ লড়ছে, আর স্বাধীনতার আগে যেখান থেকে সব থেকে বেশি বেশি বিপ্লবী নাম লিখিয়েছিলো কালাপানি, সেই বাংলা,তাদের কিছু জন বাদে, বেশিরভাগই আছেন, নিজেদের মতন, বিয়ে-শীতকালীন ভ্রমণ-চড়ুইভাতি-কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব, কত মজা, বিভৎস মজা। তার জন্য নানা লজিকও আছে, ও বড় কৃষকদের আন্দোলন, এমএসপি বাড়ানোর দাবীর আন্দোলনে আসলে গরীব মানুষের উপর চাপ বাড়ে ইত্যাদি ইত্যাদি, ৪২ এ যেমন ভারত লড়ছিলো ব্রিটিশের বিরুদ্ধে আর 'সচেতন' মানুষ পক্ষ নিয়েছিলেন না লড়ার, কারন ফ্যাসিবাদী বিরোধী শক্তিতে রাশিয়া ইংল্যান্ডে একই পক্ষে।
পরের আপডেটের অপেক্ষায়
রণ ক্ষেত্রে যা হয় তাই দেখাগেলো !! এ এক অভূতপূর্ব সমাবেশ ।..আগুন ঝরা কাহিনী যা আমাদের চারকোনা বোকা বাক্সে ধরা পড়ছে না ।...গুরু চন্ডালী কে অশেষ ধন্যবাদ তারা এই কাজ টা করছে বলে ।...দেশের মানুষ দেখুক ।..নিরাপদ দূরত্ত্বে বসে থাকা রাজনীতিক গণ ।..শিল্পী ও কলা কুশলী তথা কথিত বুদ্ধি জীবি রা ।।..এটা পিকনিক নয় ।..উৎসব নয় ।..একটা আন্দোলন ।..একটা প্রতিবাদ ।।.যে প্রতিবাদ আমরা শহুরে মানুষ রা সাহস করে করতেপারিনি বা পারছি না !!!
অসাধারণ প্রতিবেদন।
ক্ষুদিরাম বাঘাযতীন মাস্টারদার নাম করে আজও আত্মশ্লাঘায় তৃপ্ত বাঙালীর সামনে সঠিক ছবি তুলে ধরার জন্য লেখককে অজস্র ধন্যবাদ।
উত্তর ভারত লড়ছে। পঞ্চনদীর তীরে বেণী পাকাইয়া শিরে ...নির্মম নির্ভীক।
এ এক ইতিহাস তৈরি হল। এই সময় যারা এই লড়াইয়ের পাশে থাকল না তারা কীট।ঘৃণ্য বিজেপির মতো কীটের দল।
পরের কিস্তির জন্য অপেক্ষায় রইলাম।