“বিবাদ ঘটিলে
পঞ্চায়েতের বলে
গরিব কাঙালে বিচার পাইতাম”
– আব্দুল করিম শাহ, ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’
হরিয়ানার বুটানা গ্রামে চারটি পরিবারের মধ্যে কয়েক পুরুষ ধরে জমি সংক্রান্ত বিবাদ চলছিল। শোনা যায় তার ফলে খুনোখুনিও হয়েছে। ২০০৬ সালে এর মধ্যের দুটি পরিবার এই বিবাদের নিষ্পত্তি চায়। ২০০৬ সালের ২৮ মে এই মামলার শুনানি হয়। বিবদমান পক্ষগুলির মতামত শুনে রায় দেওয়া হয়, ঐ জমি সমানভাবে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেওয়ার। সকল পক্ষ এতে রাজি হয়ে যায়। মামলার পুরো প্রক্রিয়ায় সময় লাগে চার ঘন্টা (সূত্র: Kaur, S, Relevancy of Khap Panchayat, International Journal of law, 2017)। ঘটনার বিবরণ থেকে পাঠক সহজেই অনুধাবন করতে পারছেন, এই বিচার প্রক্রিয়া সরকারের কোর্টকাছারিতে চলে নি। হরিয়ানার সমস্ত গ্রামের খাপগুলির শীর্ষে থাকা সর্ব-খাপ পঞ্চায়েতের বিচার ছিল এটি। এবং একে বিচার না বলে মীমাংসা বলা ভালো। এই শুনানির জন্য বাদী-বিবাদী নিজেদের রাহাখরচ ছাড়া তেমন ব্যয় নির্বাহও করতে হয় নি। এইটাই সম্ভবত সবচেয়ে বড় কারণ খাপ পঞ্চায়েতের জনপ্রিয়তার এবং টিকে থাকারও।
আমরা স্মরণ করতে পারি, ২০১৮র জানুয়ারিতে সুপ্রিম কোর্ট খাপ পঞ্চায়েতকে বেআইনি ঘোষণা করে। এর আগেও বহুবার, বিশেষত বিবাহ সংক্রান্ত ফতোয়ার জন্য খাপ পঞ্চায়েত নিয়ে বিভিন্ন কোর্ট বিরূপ মন্তব্য করেছে। ২০১৪র শুরুতে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী তথা কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বিতীয় প্রধান শ্রী পি চিদাম্বরম বলেন, এইধরণের সমান্তরাল বিচারব্যবস্থা আধুনিক ভারতে কোনও ভাবেই চলতে দেওয়া উচিৎ নয়। সরকারের স্পষ্ট অবস্থান সত্ত্বেও খাপ পঞ্চায়েত তার কার্যপ্রণালী চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা সাধারণভাবে এই ব্যবস্থাটার বিরোধিতাই করে আসি, বিশেষ করে যখন বেশ কয়েকটি অনার-কিলিং এর সঙ্গে খাপ পঞ্চায়েতের নাম জড়িয়ে গেছে জানি। তাই, খাপ পঞ্চায়েতের মতন একটা ব্যবস্থা জনমানসে একভাবে বৈধতা পাচ্ছে কী না এবং কেন পাচ্ছে সেটাও হয়ত বুঝে দেখার দরকার - এই নিবন্ধে আমরা খাপ বা সমতুল অন্যান্য সামাজিক বিচার পদ্ধতি নিয়ে ঝাঁকি দর্শন করব, মানুষ কেন এগুলির প্রতি আস্থাবান হন সেটাও একটু বোঝার চেষ্টা করব। আর, অবশ্যই সেইজন্য রাষ্ট্রীয় বিচার ব্যবস্থাকে এর পাশাপাশি ফেলে দেখতে হবে।
খাপ পঞ্চায়েতের গঠনতন্ত্র নিয়ে বেশ কিছু অ্যাকাডেমিক জার্নালের লেখা পাওয়া যাবে। খাপের মতনই বিভিন্ন ধরণের সালিশি, অস্বীকৃত মীমাংসাপদ্ধতি দেশের অন্যান্য অঞ্চলে দেখা যায়। আমাদের বাংলার গ্রামে গ্রামে কদিন আগেও সালিশি ব্যবস্থা চলত, এখনও অনেক গ্রামে তা টিকে আছে। আমরা সামাজিক বিচারপদ্ধতিগুলির আলোচনায় বিশেষ কয়েকটি কারণে খাপকেই প্রাধান্য দেব। খাপের উপরেই লোকে পড়াশুনো সবচেয়ে বেশি করেছে মনে হয়। মোটের উপর যেটুকু বোঝা যায়, এই ব্যবস্থা বেশ কয়েক শতাব্দীর পুরোনো এবং দিল্লির থেকে খুব বেশি দূরত্বে না থাকায় দেশের শাসকদের সঙ্গে একভাবে আপস করে তাদের ব্যবস্থা টিকেছিল (সূত্র: Kumar A., Khap Panchayats: A Socio-Historical Overview, Economic and Political Weekly, 2012)। কোনও কোনও সূত্রে উল্লেখ করছে যে আকবরের শাসনামলে সর্বখাপের সদস্যরা তাঁর সঙ্গে একটি বোঝাপড়ায় এসেছিল যে এই অঞ্চলের জাঠ সম্প্রদায়ের শাসনের ভার খাপের হাতেই থাকবে, আর খাপের প্রতিনিধিরাই রাজস্ব সংগ্রহ করে মুঘল সম্রাটকে পাঠাবে, মুঘল রাজস্বকর্মচারী এতে হাত দেবেন না।
দেখা যাচ্ছে খাপ অধ্যুষিত অঞ্চলে, মূলত জাঠদের মধ্যে, স্থানীয় শাসনবিষয়ে খাপের ক্ষমতা ঐতিহাসিকভাবে দেশের রাজার থেকে কম ছিল না। অবশ্য সমাজে যেখানে নিজস্ব ক্ষমতাকেন্দ্র গড়ে উঠেছে তাকে বিঘ্নিত না করে রাজস্বটুকু বুঝে নেওয়া মুঘল শাসকদের সাধারণ নীতি ছিল। রাজ্যশাসন বিষয়ে ব্রিটিশ শাসকদের সাধারণ নীতি সেরকম ছিল না, বাংলায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে তারা এখানকার ভূমি ও গ্রামসম্পর্ককে বিধ্বস্ত করে দিয়েছিল। কিন্তু, উত্তরপ্রদেশ-হরিয়ানার এই অঞ্চলে মহল্লাওয়াড়ি রাজস্ব আদায়ের ব্যবস্থা হয় এবং রাজস্ববিভাগগুলিও প্রায় খাপের সীমানা ধরে নির্ধারিত হয়, খাপের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের উপরেই রাজস্ব আদায়ের ভার দেওয়া হয়। তার ফলে খাপ কিছুমাত্রায় হলেও তার পুরোনো মধ্যযুগীয় চরিত্র ও প্রতিপত্তি নিয়েই স্বাধীন ভারতে ঢুকতে পারে। আগে বলছিলাম যে খাপের মতন আরও বিভিন্ন সামাজিক বিচারপদ্ধতি আমাদের দেশে এখনও টিকে আছে, কিন্তু ঐতিহাসিক বাস্তবতায় খাপ এদের মধ্যে স্বতন্ত্র। যদিও আমরা অন্যান্য পদ্ধতিগুলি, বিশেষত বাংলার সালিশি নিয়েও কিছু কথা পরে বলব।
স্বাধীন ভারতে গণতন্ত্রের জটিল আবর্তে খাপ ও রাষ্ট্রের সম্পর্ক বিবর্তিত হয়েছে। আমরা মহেন্দ্র সিং টিকায়েতের বোট ক্লাব র্যালির (১৯৮৮) কথা মনে করতে পারি। রাজধানী দিল্লির বুখে সবচেয়ে বড় কৃষক অসন্তোষের ঢেউ উঠেছিল এই বালিয়া খাপের এই চৌধুরি (প্রধান)-র হাত ধরেই। ৮ ও ৯-এর দশকে তিনি একাধিকবার কৃষকদের দাবি নিয়ে লক্ষাধিক মানুষের র্যালি করে দিল্লি ও লখনউ অবরুদ্ধ করেছিলেন। খাপের পিছনে বিশাল জনসমর্থন থাকার ফলে কোর্ট বা মন্ত্রী বিরূপ হলেও স্থানীয় রাজনীতিকদের দলনির্বিশেষে খাপ নেতাদের সমর্থন চাইতে হয়েছে। এবং, খাপের প্রধানরা রাজনীতিতে এসেছেন, এই উদাহরণও বিরল নয়। খাপের নিম্নতম ধাপে থাকে গ্রামের পঞ্চায়েত, যার কোনো নির্দিষ্ট কাঠামো নেই।
সাধারণত সর্বজনগ্রাহ্য উচ্চবর্ণের পুরুষরা এর সদস্য হন। কিন্তু, প্রয়োজনে অন্যবর্ণের, অন্যবয়সের লোককে পঞ্চায়েতের কাজে নেওয়া হয় (Kaur, S, প্রাগুক্ত)। যদি একাধিক বর্ণের মানুষ বিচারপ্রার্থী হন, বিচারে উচ্চতর বর্ণটির রীতিনীতিই অনুসৃত হয়। এর উপরে ধাপে ধাপে টপ্পা-পঞ্চায়েত, খাপ পঞ্চায়েত ও সর্বখাপ পঞ্চায়েত গড়ে ওঠে। প্রত্যেকটাতেই আগের স্তরের থেকে প্রতিনিধি আসে। গোত্র এবং বর্ণ হিসাবেও খাপ বসানো হয়। সর্বখাপের বিচারপদ্ধতিটিও আকর্ষণীয়। সর্বখাপের প্রধান দুপক্ষের বক্তব্য শোনেন, তারপর সর্বখাপের ১০-১৫ (যা কিনা নিম্নতর খাপের প্রধানদের নিয়ে তৈরি) জন প্রতিনিধিকে নিয়ে একটি ছোট কমিটি করেন চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসার জন্যে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণার আগে দেখা হয় বাকি সকল খাপ প্রতিনিধিদের তাতে সম্পূর্ণ সম্মতি আছে কী না, নইলে সেই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা হয়। এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এমন সিদ্ধান্তে আসার চেষ্টা করা হয় যাতে বাদী-বিবাদীরও সম্মতি থাকে। সর্বখাপের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর সংশ্লিষ্ট নিম্নতর খাপটির দায়িত্ব হয় তা রূপায়ণের। আমরা যদিও অসবর্ণ কিম্বা সগোত্র প্রেম-বিয়ে নিয়েই খাপের বিচারের খবর পাই, এর বাইরেও বহু ঝগড়া-বিবাদ-সম্পত্তি বাঁটোয়ারা খাপের বিচারের আওতায় আসে।
সাম্প্রতিক কালে হরিয়ানা-উত্তরপ্রদেশে জমির দাম আকাশ ছুঁয়ে ফেলায় খাপের আওতায় যেসব জমির মামলা আসছে, তাতে অশান্তি বাড়ছে। খাপের সদস্যদের দুর্নীতিতে ঢুকে পড়াও আশ্চর্যের না। এখানে একটা কথা খুব গুরুত্বপূর্ণ, যে আমরা সমাজমাধ্যমে যেকোনও নেমিং-শেমিংকে ব্যাঙ্গোক্তি করে খাপ বলে থাকি, কিন্তু খাপও আসলে একটা পদ্ধতি ও কাঠামো মেনে চলে। আর সবচেয়ে বড়ো কথা, খাপের মধ্যে একটা গোষ্ঠীপরিচিতির জায়গা থাকে।
খাপ সংক্রান্ত প্রায় সমস্ত লেখাপত্রেই একে পশ্চাদপদ এক বিচারপদ্ধতি হিসেবে ঠাউরে রাষ্ট্রীয় বিচার পদ্ধতির মাধ্যমে তার প্রতিস্থাপনের করার লক্ষ্যে আলোচনা চালিয়েছে। সেই প্রক্রিয়ায় খাপ কেন জনমানসে গ্রহণযোগ্য এবং কতটা গ্রহণযোগ্য সেই আলোচনা উঠে এসেছে। প্রায় সমস্ত সমীক্ষাতেই খাপের আওতায় থাকা মানুষ জানিয়েছেন যে কোর্ট কাছারির তুলনায় তাঁরা খাপের উপরই বেশি ভরসা করেন। ২০১৮ সালে পরবিন্দরের পিএইচডি থিসিসে (“Honour Killing: An Analytical Study With Special Reference to District Rohtak & Jhajjar, (Haryana )”) হরিয়ানার কয়েকটি গ্রামে খাপ পঞ্চায়েতের বিষয়ে সমীক্ষা প্রকাশ করা হয়। দেখা যায় উত্তরদাতাদের দুই-তৃতীয়াংশের পরিবারের কেউ না কেউ খাপের সদস্য! এই আত্মীয়তা সম্ভবত খাপের প্রতি একটা বড় ভরসার জায়গা। এরপরের ধাপে থাকে সার্বিক গোষ্ঠীচেতনা, যাকে ভাইচারা বলে খাপকে কৌম পরিচয়ের অংশ করে তোলা হয়েছে এই অঞ্চলে। খাপের গঠন নিয়ে মূল অভিযোগ যে এতে কেবলমাত্র উচ্চবর্ণের পুরুষরা অংশগ্রহণ করেন, যদিও সম্প্রতি খাপে মহিলারা অংশ নিচ্ছেন। ২০০৯ সালে অধ্যাপিকা ও ক্রীড়াবিদ সন্তোষ দাহিয়া সর্বখাপ মহাপঞ্চায়েতের মহিলা সমিতি তৈরি করেন। ২০১৪ সালে মহিলা খাপ প্রতিনিধি সুদেশ চৌধুরির কথা আমি পাচ্ছি, যিনি অসবর্ণ বিবাহ নিয়ে খাপের অবস্থানে কিছু পরিবর্তন আনেন।
আবার আমরা দেখতে পাই, ২০১৯ সালে জিন্দের খেরা খাপ (যার আওতায় প্রায় দুলক্ষ মানুষ আছে) জাতিগত বৈষম্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে, এমন কি বাসিন্দাদের জাতিপরিচয় ঢাকতে পদবী ব্যবহার করতে বারণ করছে। তবে সাধারণভাবে খাপের কাছে যা একদমই গ্রহণযোগ্য নয়, তা হল সগোত্রে বিয়ে, বিশেষত এক বা সন্নিহিত গ্রামের মধ্যে বিয়ে। অসবর্ণ বা ভিন্নধর্মের বিয়ের তুলনায় সগোত্রে বিয়ের গ্রহণযোগ্যতা অনেকগুণ কম বলে পরবিন্দরের সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে। তবে বিভিন্ন সূত্র থেকে যা দেখা যাচ্ছে খাপের বিচার খুব সমসত্ত্ব, একসূত্রী নয়। গ্রাম, গোষ্ঠী, মানুষ ভেদে সিদ্ধান্ত পৃথক হয়।
এবার আমরা পরের প্রশ্নে ঢুকি। খাপের গ্রহণযোগ্যতার কারণ কী? বিভিন্ন সমীক্ষা ও আলোচনায় মূলত তিনটি বিষয় উঠে আসে-১) আদালতের বিচারপদ্ধতি দীর্ঘসূত্রী, জটিল ও খরচসাপেক্ষ, ২) ভাইচারা বা গোষ্ঠীচেতনার অঙ্গ হিসাবে খাপকে অনেকে দেখেন, একটা পরিচিতি হিসাবেও, ৩) খাপের বিচারক ও বিচারপদ্ধতির উপর আস্থা বেশি পান (সূত্র: বেনিওয়াল, ২০১৫, কাউর, ২০১৭, দেবী ও প্রতিহার, ২০১৯)। যেহেতু খাপ বা অন্যান্য সামাজিক/গোষ্ঠী বিচারপদ্ধতি রাষ্ট্র ও সংবিধান নির্দেশিত বিচারপদ্ধতির প্রতিপূরক হিসেবেই চলে, আদালতের বিচারের সঙ্গে একটা তুল্যমূল্য বিচার করার প্রয়োজন এসে পড়ে। এ নিয়ে আমরা কেউই দ্বিমত হতে পারি না যে আদালতের বিচারপদ্ধতি অতি জটিল, এত জটিল যে বাদী-বিবাদী নিজেরা কেউ তার সুরাহা করতে পারে না। দুর্বোধ্য সংস্কৃত মন্ত্র ও পূজাপদ্ধতির জন্য যেমন পুরোহিত লাগে, তেমনি আদালতের দ্বারস্থ হতে তৃতীয় ব্যক্তি বা উকিল ধরার দরকার হয়। এবং যার যত ভালো উকিল, তার জেতার সম্ভাবনা তত বাড়ে। গরিব মানুষ এবং নিম্নবর্ণ ও সংখ্যালঘুরা অনেক বেশি করে কোর্টে হেনস্থার সম্মুখীন হন। ভারতে বিনাবিচারে বন্দি থাকা এবং বিচার না পাওয়া মানুষের সংখ্যা আকাশচুম্বী, আর অবশ্যই তাঁদের মধ্যে অধিকাংশ দরিদ্র এবং গ্রামীণ। এই পরিস্থতিতে সামাজিক মীমাংসার প্রতি গ্রামীণ সাধারণ মানুষের আস্থাশীল থাকা অস্বাভাবিক তো নয়ই। এর পাশাপাশি, বিচারপদ্ধতি ও আইনগুলি দুরূহ এবং দূরবর্তী। অনেক ক্ষেত্রেই প্রচলিত রীতি রেওয়াজ, যার সঙ্গে বিচারপ্রার্থীরা পরিচিত, তার সঙ্গে এইসকল আইনের কোনও যোগ নেই। তার পাশাপাশি বিচারকরা আরও দূরতর জগতের লোক। আমরা আগে একটি সমীক্ষার কথা বলেছি, যেখানে দেখা গেছে সমীক্ষায় অংশ নেওয়া অধিকাংশ লোকের আত্মীয়দের কেউ একজন খাপের সদস্য, সেখানে আমরা কজন জীবনে একজন আদালতের বিচারককে দেখেছি সন্দেহ।
ফলে আমরা এরকম একটি সূত্র বিবেচনায় আনতে পারি যে খাপ বা সালিশিতে একজন মানুষ এই ভরসা নিয়ে যাচ্ছেন, যে অন্তত অমুক আছেন, তিনি আমার দিকটা দেখবেন। যে ভরসা কোনওভাবেই বিচারকদের সম্বন্ধে তাঁদের মনে আসবে না। তেমনি, কোর্টের বিচারে যাঁরা রায় দিচ্ছেন, বিচারের যাথার্থ্য নিয়ে তাঁদের চেনা পরিচিত কোনও মহলে প্রশ্নবিদ্ধ হতে হবে এই সম্ভাবনা থাকে না। তাছাড়া, আমরা খুবই দেখি, এক কোর্টের রায় আরেক কোর্ট পালটে দিচ্ছে, বিচারকদের মধ্যে তিনজন এক রায় দিলেন, দুজন অন্য। ফলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত যেখানে সংখ্যার নিরিখে হল। উল্টোদিকে সামাজিক বিচারের ক্ষেত্রে বহুলোকের সম্মতিনির্মাণের অভ্যেস দেখা যায়। সালিশি বা খাপের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড়ো অভিযোগ সেখানে মহিলাদের অংশগ্রহণ কম, এবং নিম্নবর্ণেরও। কিন্তু, কোর্টের বিচার নিয়েও সেই অভিযোগের বহর খুব কম নয়। মাদ্রাজ হাইকোর্টের জাস্টিস কার্নানের ২০১১য় এই সংক্রান্ত নথি নিয়ে তপশিলি জাতি-উপজাতি কমিশনের দ্বারস্থ হন (সূত্র: ওয়্যার অনলাইন পত্রিকার এই প্রতিবেদন)।
আমরা এই আলোচনায় খাপকে অনেক বেশি প্রাধান্য দিয়েছি সেই সংক্রান্ত তথ্যের বহুলতায় এবং খাপের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট জানা থাকায়। খাপ ছাড়া অন্যান্য বহু সালিশি ব্যবস্থা বিভিন্ন গোষ্ঠীতে আছে। খাপের বিরুদ্ধে যেমন নারী-বিরূপতার অভিযোগ ওঠে, তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের গ্রামসালিশি মহিলাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রচলিত আইন ব্যবস্থার থেকে বেশি কার্যকরী, এরকম দেখা যায়। বিশেষ করে মুসলিম মহিলাদের পৈতৃক সম্পত্তির উপর হক আদায়ে গ্রামসালিশি সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছে দেখা যায়, এর দ্রুততা অবশ্যই কোর্ট-ব্যবস্থার থেকে অনেকটা বেশি (সূত্র: Gupta, J., Women, Land and Law: Dispute Resolutions in Village Level, 2005)। বিট্টু রানি, তাঁর Gram Shalishis as Informal Dispute Resolution Mechanism (2005) প্রবন্ধে, মুর্শিদাবাদের কিছু গ্রাম সালিশির উদাহরণ দিয়েছেন। দেখা যাচ্ছে লিঙ্গবৈষম্য থাকলেও, ঘরোয়া হিংসা নিয়ে সালিশি খুব দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছে এবং অনেকক্ষেত্রেই আক্রান্ত মহিলাকে স্বস্তি দিতে পারছে। তিনি অবশ্য, এও বলেছেন যে সালিশিদারদের উপর রাজনৈতিক প্রভাব বাড়ছে। সে অবশ্য উচ্চতম ন্যায়ালয়েও অন্যরকম হয় না, এই কদিন আগে দেশের সাবেক প্রধান বিচারপিতি অবসরকালীন বিনোদন হিসেবে আইনপ্রণয়নের অধিকার পেলেন। বিট্টুরানি দেখেছেন বাঁধা আইনের বাধা না থাকায় সালিশিদাররা পরিস্থিতি এবং বিচারপ্রার্থীদের অবস্থা ও সামাজিক অবস্থান বুঝে বিভিন্ন রায় দিচ্ছেন, যার মূল উদ্দেশ্য থাকছে বৃহত্তর শান্তি বজায় রাখা। ঘরোয়া হিংসার কিছু ক্ষেত্রে সালিশি সুয়ো-মোটো পঞ্চায়েত ডাকছে এও দেখা যায়। শ্রমজীবী মহিলা সমিতি (সূত্র: "Shalishi" in West Bengal A Community-Based Response to Domestic Violence Author(s):, Economic and Political Weekly, 2003) একটি প্রতিবেদনে দেখিয়েছে কীভাবে তারা সংগঠন হিসাবে সালিশিতে যোগদান করেছে এবং ঘরোয়া হিংসার প্রতিকার করেছে। বেশিরভাগ আক্রান্ত মহিলা যেহেতু নিজের পরিবার টিকিয়ে রাখতে চেয়েছেন, ঘরোয়া হিংসার প্রতিকার করে সেইটা করার জন্য সালিশি রাষ্ট্রীয় বিচারের থেকে বেশি কার্যকরী বলে তাঁরা দেখেছেন।
মানুষে মানুষে বিবাদ সমাজের অস্তিত্বের শুরু থেকেই ছিল। সালিশি-খাপ-পঞ্চায়েত প্রভৃতি বিচারপদ্ধতি আমাদের দেশে সমাজের নিজের প্রয়োজনেই গড়ে উঠেছিল। মুঘল শাসকরা নিজস্ব বিচারব্যবস্থা পত্তন করলেও সচরাচর সামাজিক মীমাংসায় হস্তক্ষেপ করত না। ব্রিটিশ শাসন অবশ্যই ভিন্নতর ছিল, সেখানে ‘আইনের শাসন’ প্রণয়নের ধারণা তীব্রতর ছিল এবং ক্রমশ পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেট-বিচারক মিলিয়ে বিচারব্যবস্থা সমাজের নিজস্ব বিচারপদ্ধতিগুলিকে প্রতিস্থাপন করতে শুরু করে। সেই প্রক্রিয়া স্বাধীনতার পর ভারতীয় প্রজাতন্ত্র নামক রাষ্ট্রেও অব্যাহত থাকে। এদেশে ব্রিটিশদের পত্তন করা বিচারব্যবস্থা শুরু থেকেই ছিল দুর্নীতি-আবিষ্ট এবং এর একটা মূল উদ্দেশ্য ছিল ভারত থেকে ইংল্যান্ডে সম্পদ-পাচার অক্ষুণ্ণ রাখা। গান্ধিজি তাঁর ‘হিন্দ-স্বরাজ’ বইয়ে, এই বিচার ব্যবস্থার কয়েকটি সমালোচনা লিপিবদ্ধ করেছেন- তা হল, ক) সালিশি বা পঞ্চায়েত যেখানে বিবাদ মেটানোর কাজ করে, পেশাজীবী সমন্বিত এই ব্যবস্থা বিবাদ বাড়িয়ে তোলে, এবং তাঁর মতে হিন্দু-মুসলমান বিবাদ বাড়ার একটা বড় কারণ উকিল-রাই; খ) এই ব্যবস্থায় অংশ নিতে বিশাল খরচ হয়, অনেক ধনী উকিল আদালতের চক্করেই ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে আর গরিবরা কলকে পায় না; এবং সর্বোপরি (গ) এই ব্যবস্থা সমাজের নিজস্ব সমঝোতা-মিলেমিশে থাকার অভ্যাসের বদলে মানুষকে নিজেদের সমস্যায় রাষ্ট্রের দ্বারস্থ করে, রাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল করে তোলে। আমরা লেখার শুরুতে বাউল আবদুল করিমের একটি পদ পেশ করেছিলাম। মূল গানটির শুরুতে তিনি বলছেন, অতীতে হিন্দু-মুসলমানের দ্বন্দ্ব এত তীব্র ছিল না, আদান-প্রদান বেশিই ছিল এবং তখন ‘কেবা মেম্বার, কেবা মিনিস্টার’- এই রাষ্ট্রিক পদগুলি নিয়ে তাঁর সমাজের লোক ভাবত না, দরিদ্র মানুষ বিচার পেত, পঞ্চায়েতের থেকেই।
খাপ কিম্বা সালিশির অনেকগুলি সমস্যা আছে। জাতি-দ্বেষ, লিঙ্গ-অসাম্য, গোষ্ঠী-হিংসা এর মধ্যে বহুবার এসেছে। কিন্তু, অসাম্য, হিংসা, জাতি-লিঙ্গ দ্বেষ রাষ্ট্রীয় বিচারব্যবস্থায় কম নেই। বস্তুত রাষ্ট্রীয় ন্যায় প্রতিষ্ঠাই করা হয় ‘পুলিশ’ নামক হিংসা সংগঠনটির মাধ্যমে। রাষ্ট্রের বিচার ব্যায়বহুল, নিম্নতর পুলিশ থেকে উচ্চতম প্রধান বিচারপতি সকল পেশাজীবীর জন্য রাষ্ট্র যা ব্যয় করে তা সাধারণ মানুষের কাছে অকল্পনীয়। প্রশান্ত ভূষণের এক টাকা জরিমানার পিছনে দেশের মানুষের কয়েক লক্ষটাকা নিশ্চিতভাবে খরচ হয়েছে আদালত-পদ্ধতিতে। এবং সাধারণ মানুষের পক্ষে আদালতের দ্বারস্থ হয়ে সন্তোষবোধ পাওয়া প্রায় অসম্ভব- প্রথমত এর আর্থিক বোঝার জায়গা থেকে এবং দ্বিতীয়ত পদ্ধতিগত জটিলতা এবং আধিকারিকদের সঙ্গে তার দূরত্বের জন্য। যতগুলি সমীক্ষা, পর্যালোচনা পাচ্ছি, সকলেই লিখেছেন প্রান্তিক মানুষ সামাজিক বিচারে সাধারণভাবে বেশি ভরসা পান, পেশাজীবী-অধ্যুষিত আদালতের তুলনায়। কিন্তু প্রায় সমস্ত লেখকই আদালত ব্যবস্থার সংস্কার করে মানুষের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর কথা বলেছেন। অথচ উল্টোদিক থেকে ভাবলে মনে হয় সালিশি-খাপের সংস্কারের মাধ্যমে এর গণমুখী কাঠামো বজায় রেখে অন্তর্নিহিত ত্রুটিগুলি দূর করা তুলনায় সহজতর প্রকল্প।
খাপ বনাম আদালতের ক্ষেত্রে আদালত একটা জায়গায় উচ্চতর ছিল, যে স্থানিক ও বদ্ধ মরালিটির ধারনার বাইরে একটি বৃহত্তর প্রগতিশীল প্রসেস অনুসৃত হবে বিচারএর জন্যে। কিন্তু ইদানীং যা সব রায় বেরুচ্ছে বা বিচারক বা বিচারপতিদের যা ছিরি, তাতে আর ওরকম বলার উপায় দেখি না। খাপ ইত্যাদির বিরুদ্ধে পশ্চাৎপরতার অভিযোগ আছে, আদালতও সম্প্রতি তেমন কিছু প্রগতিশীলতার পরিচয় দেয়নি।
কিন্তু মোগল আমল থেকে নতুন করে শুরু করাও সম্ভব না। জটিল ব্যাপার।
লেখকের মূল বক্তব্যের সঙ্গে সহমত হতে পারছি না।
খাপ বা গ্রামীণ সালিশি সভা বা আদিবাসী গাঁওতা কখনই রিপাবলিকের আইন ও বিচারব্যবস্থার সামাজিক বিকল্প হতে পারেনা। বর্তমান আইন আদালতের কিছু রায় বা ক্রমাগত একতরফা রায় তাকে খারিজ করে খাপ বা ক্যাঙ্গারু কোর্টকে মান্যতা দিতে পারেনা।
সমাজে বিরুদ্ধ মত ও স্বার্থের সংঘাতের মধ্যে সালিশি ও ফয়সালা করার আবশ্যকতা থেকেই এই জাতীয় সামাজিক গোষ্ঠী/সমিতি গড়ে উঠেছিল। তারা ট্র্যাডিশন ও কাস্টমস বা প্রচলিত গোষ্ঠীর মূল্যবোধের ভিত্তিতে রায় দেয়। রিপাবলিকের আইন ও বিচারব্যবস্থা (সব দেশেই) তারই বিকশিত রূপ। খেয়াল করুন, হিন্দু ল এবং মুসলিম ল গোড়ায় কাস্টমস এর ভিত্তিতেই আইন কোডিফায়েড করেছে।
এটাই খাপের সঙ্গে তফাৎ গড়ে দিয়েছে । রিপাবলিকের ব্যবস্থা ব্যয় বহুল এবং সময়সাপেক্ষ। তাই সাধারণ সিভিল কেসের জন্যে লোক আদালতের মাধ্যমে সুলভ শস্তা এবং সমঝোতাপরক বিকল্প রেজোলুশনের প্রয়াস করা হয়েছে।
যদিও খাপ সুলভ এবং শস্তা কিন্তু এর আইন লিপিবদ্ধ নয়, বরং অত্যন্ত পশ্চাদপদ মূল্যবোধের ভিত্তিতে রায় দেয় । অনার কিলিং তো একটি উদাহরণ মাত্র । অধিকাংশ ক্ষেত্রে জমি ও সামাজিক বিবাদে রায় এবং শাস্তি পাশবিক এবং বর্বর। বেশিরভাগ সময় এদের রায় এবং শাস্তি মেয়েদের বিরুদ্ধে ও দলিত/ গরীবদের বিরুদ্ধে। মাথা মুড়িয়ে দেয়া ঘোল ঢেলে দেওয়া গাঁ ছেড়ে চলে যেতে বলা মোটা অংকের টাকা ফাইন করা ধোপা-নাপিত বন্ধ করা -- এগুলো কমন।
এই প্রবন্ধটি নিতান্তই অ্যাকাডেমিক এবং তাতে গ্রাউণ্ড রিয়েলিটি বা এইসব জাতি পঞ্চায়েতের বিচারের হিংস্রতা একবিন্দুও ধরা পড়েনি।
আর সালিশিতে দু'পক্ষকে খুশি করা? বাজে কথা। খাপ পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে আপিল করার কোন ব্যবস্থা নেই। গাঁয়ে থাকতে হলে মাথা নীচু করে মেনে নিতে হবে ব্যস। রিপাব্লিকের আইনে তবু প্রক্রিয়ার রোডম্যাপ ( সিভিল ও ক্রিমিন্যাল প্রসিডিওর কোড) রয়েছে।
সবচেয়ে কমন এবং নির্মম শাস্তি হল একঘরে করে দেয়া। এ নিয়ে কোন কথা না বলে প্রবন্ধটিতে যেভাবে খাপের অপ্রত্যক্ষভাবে গুণগান করা হয়েছে তাতে আমি বিস্মিত।
রঞ্জনদা,লেখাটা পড়ার জন্য ধন্যবাদ। একটা জিনিস খেয়াল করবেন আমি মূলতঃ বিবাদ মীমাংসার দৃষ্টান্ত তুলেছি অপরাধের বিচার নিয়ে খুব লিখিনি। যদি লিখি রাষ্ট্রের আদালত অবশ্যই বিচারের প্রহসনে এবং শাস্তির অমানবিকতায় খাপ বা গাঁওতাকে একশ গোলে হারাত। আমরা যদি সিলেক্টিভ বিস্ময়বোধে না ভুগি তাহলে কীভাবে জেলে যাওয়ার শাস্তিগত পরিমাপকে একঘরে করাবা গাঁ ছেড়ে চলে যেতে বলার থেকে কম বলতে পারি? ইন ফ্যাক্ট পুলিশের হাত থেকে পালাবে বলে গ্রাম ছেড়ে বাড়ি ছেড়ে কত লোক কতদিন পালিয়ে থাকে তার ইয়ত্তা নেই।
কোনটা বেশি কোনটা কম বলতে গেলে কোর্টের কয়েকটা রায়কে ব্যতিক্রম বলব আর সালিশির কয়েকটা রায়কে এরকমই হয় বলব এমনটা হতে পারে না।
যেহেতু কোর্ট পুলিশব্যবস্থার উপর দাঁড়িয়ে, ইন ফ্যাক্ট পুলিশের লাঠি আর বন্দুক কেড়ে নিলে কোর্টকে মানুষ লোম দিয়েও পুঁছবে না- তার পিছনের পুরো ভিত্তিটাই আসলে হিংসা। সেইটা সবসময় সালিশিগুলোর ক্ষেত্রে সত্যি নয়।
আর নন্দকুমার থেকে ধনঞ্জয় এই কয়েকটি বিখ্যাত কেস বাদ দিয়েও যদি দেখেন ইতিহাসের সবপর্যায়েই এই ব্যবস্থা একতরফা বিচার করে এসেছে- তার ফ্রিকোয়েন্সি এত বেশি যে সলমন খানরা জাস্ট ভালো উকিল পেলেই রাস্তায় বেরোতে পারেন আর পাড়ার ছিঁচকে চোর জেল হাজতে জীবন কাটিয়ে দেয়- এরকমটাই কোর্টের দস্তুর। সম্ভবতঃ ভারতে শুধু নয় অন্যান্য দেশেও।
'...রাষ্ট্রের আদালত অবশ্যই বিচারের প্রহসনে এবং শাস্তির অমানবিকতায় খাপ বা গাঁওতাকে একশ গোলে হারাত।...'
"In its verdict on 15 November 1995, the district and sessions court in Jaipur dismissed the case and acquitted all the five accused.[1] Five judges were changed, and it was the sixth judge who ruled that the accused were not guilty, stating inter alia that Bhanwari's husband couldn't have passively watched his wife being gang-raped.[15]
Under pressure from women's groups, the State Government decided to appeal against the judgment. The judgement led to a nationwide campaign for justice for Bhanwari Devi.[15] However, by 2007, 15 years after the incident, the Rajasthan High Court held only one hearing on the case and two of the accused were dead.[15]"
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Bhanwari_Devi
(অভিজিতের ফেবু পোস্ট দেখে মনে হল)
রঞ্জনদার রিপাবলিকের আইন আর তার রোডম্যাপ :D :D :D
কিন্তু খাপ সালিশি তো অলরেডি সর্ব স্তরেই চালু হয়ে গেছে! এ নিয়ে আর তর্ক করার কি আছে!
ধুর, এই আজকের কেসটা যদি পাড়ার সালিশি বা গ্রামের পঞ্চায়েতের হাতেও অন্ততপক্ষে যেত, এরকম নিদানের পরে পঞ্চায়েতের মাথারা নাপিতের কাছে চুল কাটতে যেতে পারত না, বাজারে আলুপটল কিনতে যেতে পারত না - নিদেন পক্ষে পাড়ার ছেলেরা দূর থেকে টোন টিটকিরি কাটত।
তাতিন
রিপাবলিকের বিচারের পেছনে যেমন পুলিশ তেমনি পঞ্চায়েতের পেছনে পটেল এবং কোতোযার। দুটোই রাষ্ট্র । বড এবং ছোট, ম্যাক্রো ও মাইক্রো। তফাত খালি স্কেল এর। কাজেই তুলনা হয়না। আলেকজান্ডার ও ডাকাত।
আদৌ কেস নিয়ে চেরিপিকিঙ এর পক্ষে নই, কোনদিকেই। আর গ্রামের মানুষ দেওযানি মামলা যতদূর সম্ভব আদালত না গিয়ে পঞ্চায়েত বা সালিশী সভার কাছে যায়। তাতে দুই পক্ষ খুশি হব এমন নয়।
যা বলতে চাই:
1 রাষ্ট্র এবং বিচার সালের দিকেই ঝুঁকে থাকে, আদালত বা গ্রামের সালিশী সভা।
2 আদালতের বিচারের সময় দুই পক্ষের উকিল থাকে, বিচার পদ্ধতি ও ঠিক ভুল কোডিফাযেড থাকে। আপিল এর জায়গা থাকে। এসব কিছুই সালিশীতে থাকেনা।
3 প্রাইভেট স্পেস এর ধারণা সালিশীতে নেই। আছে প্রচলিত মূল্যবোধ ভিত্তিক শাস্তি যা দলিত এবং নারীর ক্ষেত্রে অমানবিক হয়ে যায়।
4 কোন আদালত জুতোপেটা, সামাজিক ধর্ষণ, মাথা মুভিতে ঘোল ঢেলে দেযার মত বর্বর শাস্তি দেযনা। এর আপিল হয়না।
কাজেই দুটোর খামতি দেখে সালিশী বা খপ বা কাঙারু কোর্ট অপেক্ষাকৃত গণতান্ত্রিক এমন সিদ্ধান্ত সমীচীন না ।
* সংস্কার করতে হবে আধুনিক বিচার ব্যবস্থার, পেছন ফিরে কাজীর কাছে কেন যাব? এইটুকুই, নমস্কার।
সোমনাথ
এটা আপনার শহুরে বুদ্ধিমানের দিবাসপন। আমার এনজিও ছতরিশগরের গ্রামে কাজ করে ১৫ বছর ধরে। ওদেের আশা এবং বিশ্বাস ছিল এই রাযই হবে। মিঠাই বিতরণ চলছে। আর পঞ্চায়েতের রায় পছন্দ না হলে ? বঙ্গে অমন হয? মোডলদের নাপিিত চুল কাটবে না।
হিন্দি বলযের গ্রামে বসবাস করেননি বা সালিশী দেখেননি _--- গারানটিকে সাথ।
হুতো
তোমার ভঁওরী দেবীর কেসটিই দেখ। আগে পঞ্চায়েতের কাছেই গেছল।
হাইকোর্ট বলে আপীল হয়েছিল, পঞ্চায়েতের সেরকম প্রথা নেই।
খাপে কিন্তু উচ্চতর ধাপে আপিল করার সুযোগ থাকে। S Kaurএর পেপারটায় কেস স্টাডি সহ ধাপগুলো বলা আছে।
কিন্তু তাতে লাভ কী হলো? আজ তো বাবরিধ্বংসের রায়ও বেরুলো।
আমি খাপ সালিশি ওসবের সমর্থক নই, তবে রিপাবলিকও বৃহত্তর খাপের থেকে পবিত্রতর কিছু না। আর চেরিপিকিং - সে তো দুপক্ষই বলতে পারে, ওহো এইটা ভুল হয়েছে, আসলে আমরা চমৎকার লোক, চেরিপিক করবেন না :)
আন্ডাসেল, ডান্ডাবেড়ি, সলিটারি - ওসবও তেমন কিছু মানবিক না - আইনসম্মতই সব।
সংস্কার দরকার - কে বলতে পারে, সংস্কার করলে হয়তো খাপও সুন্দর কাজ করবে - মানুষকে বোঝাতে হবে-র মত আরকি :)
সোমনাথ
খাপ, সালিশি সভা ও ক্যাঙ্গারু কোর্টে আপিল?
১ এদের কোনটারই কোন লীগ্যাল স্ট্যাটাস নেই। কাজেই এদের যে কোন রায়ের বিরুদ্ধে সেই রিপাবলিক এর আদালতে যাওয়া যায়।
২ আমি বলছি সালিশি সভা, ক্যাঙ্গারু কোর্ট খাপের নিজস্ব আপীলের কথা। রিসার্চ পেপারে মনে হয় খাপের মহাপঞ্চায়েতের কথা বলা হয়েছে। ওটা কোথাও কোডিফায়েড নেই। ফলে কালেভদ্রে বিশেষ স্থিতিতে।
রিসার্চ পেপার টি পড়িনি। ভুল বললে শুধরে দেবেন।
হুতো
1 আজকের রায় মাত্র সিবিআই কোর্টের। এখন ও হাইকোর্ট সুপ্রীম কোর্ট বাকি। মনে করুন পার্লামেন্ট আক্রমণে মৃত্যু দন্ড প্রাপ্ত অধ্যাপক গিলানি আপীল কোর্টে মুক্তি পেয়েছেন এবং জেসিকা লাল কেসে ছাড়া পাওয়া অভিযুক্ত আপীলের জেলে গেলে।
----ওই তিন ধরণের "গত আদালতে" কারও মৃত্যুদন্ড আপীলের বদলে গেছে এমন কোন উদাহরণ?
2 চেরিপিক নিয়ে আমি কোন অভিযোগ করিনি তো! তাতিন আমাাাকে 'সিিি
"সিলেক্টিভ" হতে বারণ করায় আমি আমার পজিশন স্পষ্ট করে বলি যে আমি দুটো ব্যবস্থার সিস্টেমিক তফাত নিয়ে কথা বলতে চাই, কিছু কেস (কোন পক্ষেই) চেরিপিক করে তুলনায় নয়।
৩ না, ডিমে তা দিলে পাখির বাচ্চা জন্মাতে পারে, পাথরে তা দিলে নয়। তেমনি যে আইন পার্লামেন্টে বিতর্ক হয়ে পাশ হয়, তার বেসিস দেশের সংবিধান, তার রিফর্ম সম্ভব
পরিবর্তন হচ্ছে ও। আর টিআই, খাদ্য সুরক্ষা, 377, হিন্দু সম্পত্তি, তিন তালাক ইত্যাদি।
কিন্তু মান্ধাতার আমলের কিছু ট্রাডিশন ভিত্তিক সংস্কার নির্ভর খাপ ইত্যাদির রিফর্ম সম্ভব নয়।
আমি হাইওয়ে আর মাইওয়ে বিমর্শে বিশ্বাসী নই।
আদালতের খামতি দেখালে খপ বা সালিশি ভালো বা এর উল্টো টা--- এই ডিসকোর্সের বাইরে দাঁড়িয়ে দুটোর মধ্যের সিস্টেমিক ডিফারেন্স দেখাতে চেয়েছি।
আর কিছু বলার নেই।:)))
আমিও তো তাই, খাপের খামতি দেখলে আদালত ভালো বা এর উল্টোটা...ইত্যাদি :)
জেসিকা লালের কেস পুনর্বিবেচনার জন্যে যে স্তরে গণআন্দোলন দরকার হয়েছিল, সেটা তো ঐ রিপাবলিকের বিচার ব্যবস্থার ফ্যালাসি দেখিয়ে দেওয়ার জন্যে যথেষ্ট। আন্দোলন না করলে যে আদালতে (সু)বিচার পাওয়া যায়না, তার দস্তাবেজে বড়সড় গোলমাল নিশ্চয় আছে।
তার ওপর জেসিকা লালের বিরাদরি খুবই প্রিভিলেজড।
প্রথম লাইনের শয়তানের ওকালতি করলাম, কিন্তু ব্যাপারটা খুব আলাদা কি? আইন কিছু মরালিটির ভিত্তিতে কাজ করে - দেশের বিরোধীতা করলে বাটাম, রাজ্যপাল, সেনাবাহিনীর বড়কর্তা ইত্যাদিদের টিঁকি ছুঁতে প্রচুর কাঠখড় পোড়াতে হবে, যত পয়সা তত ভালো উকিল, তত ছাড়া পাওয়া সোজা। (মনু শর্ম প্যারোলে বেরিয়ে ফুর্তি করছিল ক'দিন আগে, মায়া কোদনানিও বোধয়)। খাপ টাপেও তাই। যত প্রভাব, যত পয়সা, গাঁয়ের বিরোধিতা করলে বাটাম, সরপঞ্চের টিঁকি ছুঁতে কাঠখড়।
ওদিকে দুই ব্যবস্থাই উকিল বিচারক ইত্যাদিদের মরালিটি দিয়ে প্রভাবিত (কদিন আগে গুয়াহাটিতে সিঁদুর সংক্রান্ত বক্তব্য, বা সমলৈঙ্গিক বিয়ে নিয়ে)।
অধিকন্তু হলো স্থানীয় ব্যবস্থাটা স্থানীয়, রিপাবলিকটা কলোনীয়।
আবারও, আমি বলছি না আমি চাই খাপ, সালিশী ইত্যাদিতে যেতে হবে, ঐটা ইভল্ভ করলে ভালো হত, কিন্তু সে সম্ভাবনা গেছে। কিন্তু এখানে খাপ নামটা চালু হয়ে গেছে হরিয়ানা ইত্যাদি থেকে, আসলে ব্যবস্থাটা তো গ্রামীন ভারতের হাজার বছরের প্রাচীন চালু ব্যবস্থা যা অনেক ক্ষেত্রে কাজ করে (আদিবাসী সমাজগুলিতে জমিজায়গার হিসেব নিকেশ, ছোট খাটো ঝগড়া বিবাদ - রিপাবলিকের আদালতে?); সেইটাকে নস্যাৎ করে দিয়ে আমাদের মহামান্য আদালত যে আজ বাবরি কাল উন্নাও পরশু কামদুনির প্রমান পাচ্ছে না, বা তার পরদিন ধনঞ্জয়ের প্রমান পেয়ে যাচ্ছে, এবং যার সংস্কার দরকার, তাকে খুব বেশি উচ্চাসনে বসাতে দ্বিধা হচ্ছে।
আদালত নিখুঁত নয়, তাকে সংস্কার করতে হবে, ওদিকে সালিশি নিখুঁত নয় তাই সেটা এক্কেবারে ফেলে দাও - এইটা গোলমেলে। আইন আদালত আধুনিক ব্যবস্থা, অনেক বড়সড় ব্যাপার, অনেক টাকাকড়ি আছে, ঐটাই টিঁকবে। কিন্তু স্থানীয় সালিশির থেকে তার দু'চার কথা শেখার তো আছেই। জজ মোটরসাইকেল চেপেছে তাই নিয়ে উকিল তাকে দুয়ো দিয়েছে, তাই উকিলকে শাস্তি দাও, এ কীরকম রিপাবলিক মামদোবাজি।
"ডিমে তা দিলে পাখির বাচ্চা জন্মাতে পারে, পাথরে তা দিলে নয়"
আমার বক্তব্যও কিছুটা এইরকম ছিল। উকিল এবং আইনব্যবসায়ের যে বিশাল সার্কেলটা আছে। যেখানে দুজন লড়ছে এবং যার দামি উকিল সে এগোচ্ছে, সেই সিস্টেম কীভাবে শুধরে যাবে? যার পয়সা কম সে কেন বেটার বিচার পাবে? যদি সেটে পেতে শুরু করে, তাহলে উকিলদের রোজগার বাড়বে না বরং কমবে।
কোর্ট নিজেই কোর্টকে শুধরোতে দেবে না, কারণ সেটা তার নিজের স্বার্থ-বিরোধী। এইটা আমার লজিকাল ডিডাকশন হিসেবে মনে হয়। পৃথিবীর কোনও দেশে আইন ব্যবসাকে ওঠানো গেছে কি? অথবা, গরিব লোক বড়লোকের থেকে বেটার বা সমান বিচার পাচ্ছে এরকম হয়েছে কি?
দ্বিতীয়তঃ কোর্ট একা নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে না। রাষ্ট্রীয় হিংসার বন্দোবস্ত না থাকলে কোর্ট অর্থহীন হয়ে পড়ত। এবং হিংসাসংগঠনটি শত রিফর্ম স্বত্তেও হিংসা সংগঠন, তার সেই চরিত্র থাকবেই। ধনতন্ত্র থেকে পার্টিতন্ত্র কোথাও এর ব্যতিক্রম হয় না। কোর্টকে সুবিচার করতে হলে পুলিশ রিফর্ম হতে হবে। পুলিশ রিফর্মড হয়ে গেলে সে লোককে অনুনয় বিনয় বড়জোর প্যাসিভ রেসিস্ট করে বাধ্য করবে (এইটার চেষ্টা অনেকসময় হয়)। কিন্তু, পুলিশ অহিংস হয়ে গেলে রাষ্ট্র চলবে কী করে?
এইদুটো (যদি বোঝাতে পারি) অনপনেয় দ্বন্দ্ব মনে হয়। এর পাশাপাশি রাজনীতি, দুর্নীতি, বিচারক/শান্তিরক্ষকদের ব্যক্তিগত বায়াস, রেসিজম, শভিনিজম ইত্যাদি আসে। তা হয়ত অপনেয়, কিন্তু বিস্তর কঠিন।
সোমনাথ ,
আপনার মূল বক্তব্যের সঙ্গে পুরোপুরি একমত। কিন্তু সেই একই পাওয়ার স্ট্রাগল গাজোয়ারি সব কিছু লোক্যাল স্তরেও আছে। গ্রামীণ সমাজের বিচার দেশের বাইরে রেয়ারিফায়েড কিছু নয় ।যতদিন শ্রেণীবিভাগ এবং সম্পদের বিশাল তারতম্য থাকবে ততদিন সব দেশে সব সমাজে এটা হবেই। রিপাবলিকের কলোনিয়াল ছাঁচে তৈরি আইন/বিচার ব্যবস্থা বৈষম্যমূলক আর সামন্ততান্ত্রিক ধার্মিক সংস্কার ভিত্তিক দেশি গ্রাম্য বিচারসভা খানিকটা ইগলেটেরিয়ান? এটা নিজেকে চোখ মারা।
তবু আদালতে উকিল দুপক্ষেই লাগাতে পারে।
সালিশীতে সেসবের কোন সুযোগ নেই। আর 'দেশের কুকুর ধরি বিদেশের ঠাকুর ফেলিয়া'র ব্যাপারটাআমরা পেছনে ফেলে এসেছি। এই অজুহাতে যেমন ইংরেজিকে বাদ দেওয়া যায়না ইত্যাদি।
এত বড়লোকের পক্ষে হেলে থাকা ব্যবস্থায়ও কিচু ফাঁক পাওয়া যায় দশবছর পরেও কেউ কেউ নির্দোষ প্রমাণিত হয়। প্রাণদন্ড ঘোষণার পরও অনেকগুলো চ্যানেলের মধ্যে দিয়ে সেটা একজিকিউট না হয়ে লম্বিত থাকে।
খপে প্রাণদন্ডের ঘোষণা হলে?
গ্রামীন ব্যবস্থাইয় ইন্টারভেন করে তাকে সংস্কার করার একটা নিদর্শন দিয়েছি শ্রমজীবী মহিলা সমিতির পেপারে। কোর্ট সংস্কারের থেকে সহজ অবশ্যই।
দুটোর মধ্যেই ফ্ল আছে। আর গ্রাম্য ব্যাবস্থাও আজকের রাজনীতি সমাজের বেড়ে চলা বৈষম্য রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত নয়। ব্রিটিশ আমলে সামন্ততন্ত্রের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে তার প্রভাবও এগুলিতে নিশ্চয়ই পড়েছে। যেমন ধরুন, খাপের মতন অন্য পঞ্চায়েতেও হয়ত স্তর বিভাগ ছিল, কিন্তু সামাজিক বিপর্যয়ে সেগুলি ভেঙে গেছে।
তাস্বত্তেও, রাষ্ট্রিক ব্যবস্থা কাঠামোগত দিক থেকে অনড়। দেশে রাষ্ট্র পরিবর্তন কয়েক শতাব্দীতে একবার হয়, তাও সচরাচর ব্যবস্থা পালটায় না। আমার মনে হয় সমাজের ব্যবস্থা তুলনায় বেশি ফ্লুইড এবং তার মধ্যে কাজ করে তাকে পালটানো সহজতর। এর উদাহরণও বহু আছে।
শ্রমজীবি মহিলা সমিতির পেপারে আপনার লেখাটি পড়তে চাই , লিংক বা পিডিএফ পাঠাবেন? আমার নম্বর ৮৫৮৩০৪১৩৯৫।
@তাতিন, সোমনাথ এবং হুতো,
এই বিমর্শের পর উপরের প্রবন্ধটি আবার পড়লাম। আপনাদের বক্তব্যটি এখন অনেকটা বুঝতে পারছি । সম্ভবতঃ কাছ থেকে দেখা কিছু তেতো অভিজ্ঞতার ফলে আমার গ্রামীণ স্থানীয় বিচার পদ্ধতি নিয়ে খানিকটা পূর্বাগ্রহ রয়েছে।
এখন তার থেকে 'খানিকটা' সরে এলাম।
"বেশিরভাগ আক্রান্ত মহিলা যেহেতু নিজের পরিবার টিকিয়ে রাখতে চেয়েছেন, ঘরোয়া হিংসার প্রতিকার করে সেইটা করার জন্য সালিশি রাষ্ট্রীয় বিচারের থেকে বেশি কার্যকরী বলে তাঁরা দেখেছেন"। এটা সত্যি কথা, ১০০%।
আমার সঙ্গে ধৈর্য ধরে মত বিনিময় করার জন্যে এবং একপেশেপনাকে দেখিয়ে দেয়ার জন্যে আপনাদের ধন্যবাদ।
রঞ্জনদা,
পুরোনো একটা মেল আইডি ছিল, সেটা অ্যাক্টিভ কি না জানি না, পেলে জানাবেন।
ইয়ে, পূর্বাগ্রহ মানে কি আগে থেকে আগ্রহ? কিন্তু পড়ে তো আগ্রহের অভাব মনে হচ্ছে। আর বিমর্শ মানে কী? ব্যাপারটা বুঝতে পারছি। কিন্তু বাংলায় কী?
ওটা বাংলা . মানে পক্ষপাতিত্ব :))
তাহলে তো উল্টো দাঁড়াচ্ছে ব্যাপারটা। রঞ্জনদার - গ্রামীণ স্থানীয় বিচার পদ্ধতি নিয়ে খানিকটা পক্ষপাতিত্ব রয়েছে? তা কী করে হয়।
আরে যেখানে পক্ষপাত বায়াস অর্থে ব্যবহৃত . বায়াস পজিটিভ নেগেটিভ দুরকম ই হয় |
আচ্ছা, সেরকম হতে পারে বটে।
আইন আদালত
https://www.bengalinfo.com/newsdetail.php?newsid=148801
"...পকসাে আইনের আট নং ধারা মােতাবেক ওই অভিযুক্তের তিন বছর জেল হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আইনের নতুন ব্যাখ্যা দিয়ে বিচারপতি ভারতীয় দন্ডবিধির ৩৫৪ এবং ৩৪২ ধারা মােতাবেক এক বছরের সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছেন। আর ব্যাখ্যায় আদালত জানিয়েছ শিশুদের ক্ষেত্রে জামাকাপড় খুলিয়ে বা জামাকাপড়ের ভিতরে হাত গলিয়ে তাদের বুক বা গােপনাঙ্গ স্পর্শনা করা হলে সেটা যৌন নির্যাতন নয়।... (দৈনিক স্টেটসম্যান, 25 January 2021)"
https://www.bengalinfo.com/newsdetail.php?newsid=148803
"...এই ঘটনায় মেয়েটিকে বাড়িতে ডেকে তার সঙ্গে অসভ্য আচরণ করেন এক ব্যক্তি। তার স্তনে হাত দিয়ে পোশাক খোলার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেই মুহূর্তে তাঁর মা এসে যাওয়ায় মেয়েটিকে ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে অভিযুক্ত। তার নামে স্থানীয় পুলিস স্টেশনে এফআইআর করা হয়। অভিযোগ ভিত্তিতে আটক করা হয় ওই ব্যক্তিকে তারপর বম্বে হাইকোর্ট পর্যন্ত জল গড়ায়। শুনানির রায়ে হাইকোর্ট জানায় পকসো আইনের আওতায় ওই ব্যক্তি দোষী নয়। তবে, ৩৫৪ (শ্লীলতাহানি) ও ৩৪২ (জোর করে আটকে রাখা) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। কারণ এই ঘটনায় নাবালিকার ত্বকে স্পর্শ ও পেনিট্রেশন (Penetration) বা অঙ্গপ্রবেশের মতো ঘটনা ঘটেনি।... (২৪ ঘন্টা, 25 January 2021)"
আদালত নির্ধারিত বিচার ব্যবস্থার বাইরে অনেকগুলি ইনফরমাল ব্যবস্থা শুধু এদেশে নয় , অন্যান্য দেশেও চালু আছে। এগুলি র আইনি স্ববীকৃতি নেই, কিন্তু এর আওতাভুুক্ত মানুষের মধ্যে জনপ্রিয়তা আছে। বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর এবং চার্চের নিজস্ব বিচার পদ্ধতি থাকে। কিন্তু ওই সব বিচ প্রক্রিয়া খুুব ই হটকারী। ওদের বিচার প্রণালী র সংস্কার হয়না বা খুব দেরীতে হয়।