এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  রাজনীতি  সিরিয়াস৯

  • জনযুদ্ধ কারে কয়!

    বিশ্বজিৎ হাজরা
    আলোচনা | রাজনীতি | ১৪ মার্চ ২০২১ | ৩৫৬৭ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • চোদ্দ বছর কেন, কোনও কোনও সময়ে ১৪ ঘন্টাও যথেষ্ট হতে পারে, বিস্মরণের জন্য। আবার কোনও কোনও ঘটনার অভিঘাত এত প্রবল হতে পারে, যে ১৪০ বছর পরেও তা স্মরণে রাখতে হতে পারে। বা স্মরণে থেকে যেতে পারে, যৌথস্মৃতিতে। এমন তো নয়, নন্দীগ্রামেই প্রথম গুলি চালিয়ে আন্দোলনরত মানুষ মেরেছিল বাম সরকারের পুলিশ। তা সত্ত্বেও নন্দীগ্রাম আলাদা হয়ে থাকবে, প্রতিরোধের জন্য যেমন, তেমনই তদানীন্তন বাম সরকারের প্রতি অন্তিম অবিশ্বাসের জন্য। বাম সরকার, যারা চাষির কাছ থেকে জোর করে জমি নিয়ে কর্পোরেটদের দিতে চেয়েছিল। ফলে সিরিয়াস৯-র নন্দীগ্রাম সংখ্যা। সেদিনের স্মৃতি উঠে এসেছে ১৪ মার্চের গুলিচালনার প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক সুকুমার মিত্রর কলমে, বিশ্বজিৎ হাজরা ১৪ বছর পেরিয়ে সে সময়কালের ঘটনাপ্রবাহের খণ্ডচিত্র তুলে এনেছেন, নন্দীগ্রাম আন্দোলনে মাওবাদীদের ভূমিকা সম্পর্কে লিখেছেন সুলেখা (অনিবার্য কারণে নাম পরিবর্তিত) এবং বিষাণ বসু গুরুচণ্ডা৯-কে কাঠগড়ায় তুলেছেন ১৪ বছর আগে একটি লেখা প্রকাশের জন্য।

    -অ্যাই … পড়াশোনা নেই তোদের?
    -এখন তো ছুটি।
    -ছুটি মানে?
    -ইশকুল বন্ধ।
    -তাতে তোর কী? সন্ধে হয়ে গেছে না? যা … পড়তে বোস্‌ … (চোখ পাকিয়ে)
    -কাকু … স্‌ন্ত্রাস্‌স্‌স্‌স্‌ … (চোখ গোল গোল করে, ভয় দেখানোর ভঙ্গিতে)
    -কী!?
    -স্‌ন্ত্রাস্‌স্‌স্‌স্‌ কাকু … হেব্বি স্‌ন্ত্রাস্‌স্‌স্‌স্‌ … (চাপা গলায় এবার যতটা সম্ভব ড্রামাটিক এক্সপ্রেশন এনে)
    -সন্ত্রাস মানে?
    -স্‌ন্ত্রাস্‌স্‌স্‌স্‌ মানে … স্‌ন্ত্রাস্‌স্‌স্‌স্‌ মানে … অ্যাঁ … অ্যাঁ … (এবার একটু কনফিউজড)
    -এই যে বললি হেব্বি সন্ত্রাস?
    -সব্বাই বলচে তো!
    -কে বলছে?
    -বড়রা। স্‌ন্ত্রাস্‌স্‌স্‌স্‌ চলচে তো … তাই এখন আর কেউ লেকাপড়া করছে না … হি হি!!



    কত বছরে যেন এক যুগ হয়? ১২ বছরে বোধহয়। সেই হিসেবে কেটে গেছে গোটা একটা যুগেরও বেশি। গঙ্গা দিয়ে বহুৎ জল গড়িয়েছে। ওলটপালট হয়ে গেছে বাংলার রাজনৈতিক মানচিত্রে। সেদিনের সেই বোমা-বুলেটের গন্ধ মাখা নন্দীগ্রামের স্মৃতিও আজ অনেকটাই ফিকে। তবু ২০০৭-এর ১৬ মার্চের ছেঁড়া ছেঁড়া কিছু ঘটনা কীভাবে যেন মগজে রয়ে গেছে। তার মধ্যে একটা হল ওপরের ওই কথোপকথনটা। সোনাচূড়া গ্রামে দুপুরের পর থেকে টানা চরকিপাক মেরে সন্ধের মুখে ঢোকা হয়েছিলো আঞ্চলিক পঞ্চায়েত সদস্য সবুজ প্রধানের ঘরে। ‘অন্ধকার নামার পর বাইরে আর সেফ নয়, ঘরে ঢুকে যাও দাদা’ … চিন্তিত মুখে বলেছিলেন সবুজ প্রধান। পত্রপাঠ ঢুকেও গেছিলাম আমরা টিনের চাল আর মাটির দেওয়াল দেওয়া একটা ঘরে। কার ঘর মনে নেই। থমথমে সেই ঘরটায় তখন ততোধিক থমথমে গুটিকয় ‘বড়’দের মুখ। নিঃশ্বাস বন্ধ করে অজানা এক বিপদের যেন অন্তিম কাউন্ট-ডাউন চলছে। নিস্তব্ধতা অস্বস্তিকর হলেও তার একটা নিজস্ব ছন্দ থাকে। তাল থাকে। সেই ছন্দ-তাল ভেঙে মাঝেমধ্যেই গোল পাকাচ্ছিলো একজোড়া বিটলে বাচ্চা। ক্লাস ফোর-ফাইভ হবে। খুনসুটি করতে করতে একবার এ ওর গায়ে গড়িয়ে পড়ছে, একবার ও এর গায়ে। সঙ্গে স্থান-কাল-পাত্রের সাথে ভয়ানক বেমানান খ্যাঁ-খ্যাঁ করে হাসি। তাদের মধ্যেই একটু যেটা বড়, সেটাকে থামানোর জন্যে পড়তে বসতে বলেছিলাম। আর, তাকে কেন্দ্র করেই উপরোক্ত কথোপকথনের সূত্রপাত। একটু পরেই, সন্ধে তখন সাতটা-আটটা, পিলে চমকে উঠেছিলো প্রথম বোমাটার বিকট আওয়াজে। খাইসে! একেবারে কানের কাছে তো! ঘরে বড়দের একজন শুকনো হেসে অভয় দিয়ে বলেছিলেন, ‘এটা আমাদের। দূরেরগুলো ওদের।’

    দূরের আওয়াজগুলোও ততক্ষণে গলা মেলাতে শুরু করেছে কাছেরগুলোর সাথে। নন্দীগ্রাম আর খেজুরির মাঝে তালপাটি খাল। এ’পারটা ‘আমাদের’। ও’পারটা ‘ওদের’। মাঝে নো-ম্যান্স-ল্যান্ড তেখালি ব্রিজ। বোমাগুলো ফাটছে ব্রিজের দু’পারে। কখনো একটার জবাবে দুটো। তিনটে। কখনো আবার একটু বিরতি। অসামান্য সেই ডুয়েট চলেছিলো সারা রাত ধরে। এক-টানা। বড়দের একজন সেই রাতে কান পেতে পেতে শব্দমাহাত্ম্য চিনতে শিখিয়েছিলেন বেশ দরদ দিয়ে। কাছে-দূরে ওই চাপা-গম্ভীর শব্দগুলো, যেগুলো ইকো হতে হতে হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছে, সেগুলো বোমার। আর মাঝে-মধ্যে, নেহাতই খাপছাড়া ভাবে, ওই অস্ফুট ফট্‌-ফট্‌ শব্দগুলো হলো বুলেটের। বন্দুক ছোড়া হচ্ছে। সর্বনাশ! আবার শুরু হলো নাকি? হার্মাদদের আক্রমণ? জিজ্ঞেস করায় দু-দিকে কনফিডেন্টলি ঘাড় নেড়ে তিনি বলেছিলেন, নাঃ। সে আওয়াজ আলাদা। এগুলো ‘অ্যাকশন’-এর আওয়াজ নয়। ‘অ্যালার্ট’ করার আওয়াজ। দু’পক্ষই দু’পক্ষকে বলতে চাইছে … সাবধান … এগিও না … আমরাও তৈরি আছি! ঢোঁক গিলে বুঝেছিলাম, কখনো কখনো ডোভার লেনের চেয়েও উচ্চাঙ্গের মিউজিক চর্চা হয় লড়াইয়ের ময়দানে। একই বোমা আর গুলির শব্দ শুনতে শুনতে পোড়-খাওয়া কানের মালিকরা কখনো নির্লিপ্ত মুখে মুড়িমাখা চিবোন। আবার ওয়েভলেন্থ-ফ্রিকোয়েন্সির সামান্য এদিক-ওদিক হলে কখনো সেই শব্দ শুনেই তড়িঘড়ি শুরু করে দেন পালটা-প্রস্তুতি। কান-টাই আসল। শহুরে কানে অত সূক্ষ্ম তফাৎ ধরা পড়ে না। পড়েওনি সে’দিন।

    ২০০৭ সালের ১৪ মার্চ। ৩,০০০ সশস্ত্র পুলিশের এক বিশাল বাহিনী ঘিরে ফেলেছিলো ‘রেবেল’ নন্দীগ্রামকে। তার আগের বছর, ২০০৬ সালের সিঙ্গুর আন্দোলনও এতটুকু চিড় ধরাতে পারেনি মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের আত্মবিশ্বাসে। বরং ওই বছরেই বিধানসভা ভোটে ২৩৫টি আসন দখল করার পর বিরোধীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা ২৩৫, ওরা ৩০; ওদের কথা কেন শুনবো?’ টাটা-গোষ্ঠীর জন্য তাঁর হাজার একর কৃষিজমি চাই সিঙ্গুরে। ইন্দোনেশিয়ার সালিম-গোষ্ঠীর জন্য দশ হাজার একর চাই নন্দীগ্রামে। ‘ডু ইট নাউ’ যাঁর প্রিয় স্লোগান, তিনি তিন-ফসলা জমি নিয়ে চাষিদের ওজর-আপত্তি শুনবেন কেন? গোটা রাজ্যটাই যাঁর দখলে, কেনই বা তিনি পাত্তা দেবেন নন্দীগ্রামের মতো অখ্যাত এক জায়গার প্রতিরোধ-আন্দোলনকে? কেনই বা বাড়তে দেবেন ধীরে ধীরে ছড়াতে থাকা এক মুক্তাঞ্চলকে, যেখানে সিপিএম শেষ কথা বলে না? স্যাকরার ঠুকঠাক, কামারের এক ঘা! তাই ‘ভুমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি’র সাথে লোকাল-সিপিএমের লাগাতার মারপিট ঝামেলা-ঝঞ্ঝাটের নিরসন ঘটাতেই সেদিন নন্দীগ্রামে গিয়েছিলো বিশাল পুলিশ বাহিনী। অসম এক লড়াইয়ে রুখে দাঁড়ায় হাজার দুয়েক গ্রামবাসীও। দুপক্ষই অনড়। অতঃপর গুলি চলে। পা নয়, মাথা-বুক লক্ষ্য করে। মুহূর্তে লাশ হয়ে যায় ১৪ জন কৃষক-পরিবারের মানুষ। মৃতদেহরা নাকি কথা বলে না! কিন্তু পরদিন থেকে ১৪টা সেই মৃত-মানুষের গলাই কেমন করে যেন ১৪-হাজার থেকে ১৪-লাখ হয়ে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলো গোটা বাংলায়! আওয়াজ উঠলো, ঢের হয়েছে, আর নয়! ৩৪ বছরের স্বৈরাচারী শাসনের অবসান চাই।

    সরাসরি রাজনৈতিক কর্মসূচির বাইরেও সিঙ্গুর-আন্দোলনের সমর্থনে ২০০৬ সাল থেকেই কলকাতায় ‘নাগরিক উদ্যোগ’ তদ্দিনে গতি পেতে শুরু করেছে। ২০০৭ সালের ১৪ মার্চ সেই উদ্যোগকে এক ঝটকায় বেঁধে দিলো অনেকটা চড়া সুরে। প্রস্তাব এলো, শুধু কলকাতায় প্রতিবাদ-মিছিল নয়, সরাসরি পৌঁছে যেতে হবে অবরুদ্ধ নন্দীগ্রামে। খবর ছিলো, বেশ কিছু বুলেট-ইনজুরি কেসের ভিক্টিম নাকি হাসপাতালে পর্যন্ত যেতে পারছে না, অ্যারেস্ট হওয়ার ভয়ে। ডাক্তারদের টিম আর ওষুধপত্র জোগাড় করতে গেলো একটা দিন। ১৪-র পর ১৫ বাদ দিয়ে ১৬ মার্চ। একটা অ্যাম্বুলেন্স আর একটা টাটা-সুমো নিয়ে ভোরবেলা ১০-১২ জনের একটা দলের সাথে অতঃপর নন্দীগ্রাম-যাত্রা।

    স্মৃতিশক্তি এমনিতেই ক্ষীণ। তার ওপর কেটে গেছে গোটা এক-যুগ। ১৬ মার্চের সেই দিনটার মেমরির বেশিরভাগই ডিলিট হয়ে গেছে হার্ড-ডিস্ক থেকে। ভিডিও রেকর্ডিং-এর মতো ডিটেল মুভি নয়, রয়ে গেছে স্টিল ক্যামেরায় তোলা স্ন্যাপের মতো কিছু খণ্ড-খণ্ড, অগোছালো ছবি। সেগুলো পর পর জুড়লেও একটা গপ্পো তৈরি হয় অবিশ্যি! সেটাই বলা যাক। শুরুতে দিনের বেলাটায় গ্রাম-বাংলার সেই টিপিক্যাল ‘ছায়া সুনিবিড় / শান্তির নীড়’ টাইপ দৃশ্য-পট চলছিলো। দুপুর-দুপুর নাগাদ হঠাৎই সেই সিনের ড্রামাটিক চেঞ্জ। জায়গায় জায়গায় রাস্তা কাটা। গাছের গুঁড়ির ব্যারিকেড। গ্রামবাসীদের পাহারা। চোখে-মুখে আতঙ্ক। তারাও বুঝতে পারছে না, যারা এসেছে, তারা বন্ধু না শত্রু! আমরাও বুঝতে পারছি না গ্রামে ঢুকছি, নাকি যুদ্ধক্ষেত্রে ঢুকছি! কিন্তু এ’টুকু ক্লিয়ার, নন্দীগ্রামের এলাকা দখল শুরু হয়ে গেছে। এবার ভেতরে ঢুকতে হবে। অতঃপর বিপুল কাঠখড় পুড়িয়ে, লোকাল কিছু কন্ট্যাক্টের নাম-টাম বলে নাছোড়বান্দা গ্রামবাসীদের আস্থা অর্জন করে কোনওমতে পৌঁছানো হয়েছে সোনাচূড়া গ্রামে।

    এই তাহলে সেই নন্দীগ্রাম! পুঁচকে যে এলাকাটা মাসের পর মাস ধরে মহাপরাক্রমশালী শাসকের চোখে চোখ রেখে সমানে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছে! আকাশে-বাতাসে যে মুক্তাঞ্চলে টাটকা বারুদের গন্ধ! কিন্তু কই, বেখাপ্পা তেমন কিছু খুব একটা চোখে পড়ছে না তো! এলাকা খানিক থমথমে ঠিকই। কিন্তু সে আর এমন অস্বাভাবিক কিসের? দুদিন আগেই যেখানে পুলিশের গুলিতে ১৪টা মানুষ মারা গেছে, সেই এলাকা খানিক থমথমে তো হবেই। কিন্তু মনে মনে যেমনটা ভাবা গেছিলো … গেরিলা-গ্রামবাসীরা বন্দুক-টন্দুক নিয়ে টহল দেবে ইতি-উতি … সেসব কই? কিছু জনতা তো বরং অটোমেটিক রাইফেলের বদলে জ্বলন্ত বিড়ি হাতে চায়ের দোকানে বসে দিব্যি পা দুলিয়ে দুলিয়ে চা খাচ্ছে! কী আর করার! অ্যাকশন-প্যাক‌ড যে চিত্রকল্পটা মাথায় নিয়ে গেছিলুম, সেটা ঠিকঠাক না মেলায় চায়ের ভাঁড়ে চুমুক দিতে দিতে এদিক-সেদিক ঘুরছি … কয়েকটা বাচ্চাকে দেখা গেলো হাহা-হিহি করতে করতে মাটি থেকে কী-সব বেছে বেছে কোড়াচ্ছে, আর পলিপ্যাকে ভরছে। কী ভরছিস রে ওগুলো? জিজ্ঞেস করায় কোমর থেকে হড়কে নামা হাফপ্যান্ট তুলতে তুলতে একজন বললো, পাথর। দেখি দেখি … কেমন পাথর? প্রথমে তিনি দেখাতে নারাজ। কিন্তু একটা প্রজাপতি বিস্কুট ঘুষ দিতেই বাবু ফিট। বিস্কুট খেতে খেতে গোটা পলিপ্যাকটাই ধরিয়ে দিলো হাতে। দেখো। কিন্তু কী দেখবো? প্লাস্টিক বোঝাই খালি ছোট-ছোট স্টোনচিপস্‌, যার মধ্যে ইন্টারেস্টিং কিস্যুই নেই! মুখ বেঁকিয়ে বললুম, কী হবে এগুলো? জবাব যা এলো, তার জন্য শহুরে কানজোড়া একেবারেই তৈরি ছিলো না! রাতে ‘বড়’রা বোমা বাঁধবে। ছোটদের তাই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তার ‘স্প্লিন্টার’ যোগাড় করার। জেনেছিলাম … জালকাঠি, লোহার টুকরোর সাথে ছোট-ছোট স্টোনচিপস্‌ও নাকি খুব এফেক্টিভ স্প্লিন্টার। এটাও বুঝেছিলাম, জনযুদ্ধে বাচ্চা-বুড়ো সবাই সৈনিক। ডিপার্টমেন্টগুলো খালি আলাদা।

    প্রাথমিক শক্‌টা কাটিয়ে উঠে খানিক ধাতস্থ হওয়া গেছে। গ্রামবাসীদের সাথে বৈঠকও হয়েছে দফায় দফায়। বিকেল তখন বোধহয় তিনটে-চারটে হবে। প্রাইমারি ইশকুলের মাঠে দেখা গেলো এক দল আধ-ন্যাংটা বাচ্চা তুমুল বাওয়াল করছে। নিজেদের মধ্যেই। কী করিস? জিজ্ঞেস করায় ফোকলা দাঁতে কান এঁটো করা হাসি হেসে এক সর্দার-বাচ্চা জানালো, তারা ‘অ্যাকশন-অ্যাকশন’ খেলছে! একদল গ্রামবাসী সেজেছে। অন্যদল ‘হার্মাদ-বাহিনী’। আজ কোন্‌ দল জিতবে, তাই নিয়েই বাওয়াল চলছে! কেউই নাকি হারতে রাজি নয়! আবারও বুঝেছিলুম, বইতে পড়া জনযুদ্ধের রোম্যান্টিটিজম, আর বাস্তবের জনযুদ্ধের চেহারাটা আলাদা। বেশ আলাদা।

    তাপ্পর … দেখতে দেখতে একটা যুগ কেটে গেলো। ২০০৭-এর ১৪ মার্চের পর আসতে চলেছে ২০২১-এর ১৪ মার্চ। ‘নন্দীগ্রাম দিবস’ও নিশ্চয়ই পালন করা হবে নানান জায়গায়। প্রতি বছর যেমন হয়। স্মৃতি ক্রমশ ঘোলাটে হচ্ছে। হবেও। তবু … আজও যদি কেউ জিজ্ঞেস করে, বাপু হে, বয়স তো হলো, বলো দেখি পিপলস‌-ওয়ার কারে কয়? জনযুদ্ধ কেমন দেখতে? বলবো … যে যুদ্ধে বাচ্চারা দুপুরে স্টোনচিপস কোড়ায়, বিকেলে অ্যাকশন-অ্যাকশন খেলা খেলে, আর সন্ধেবেলায় পড়তে বসতে বললেই ‘স্‌ন্ত্রাস্‌স্‌স্‌স্‌’-এর অজুহাতে ফাঁকি মারার ফন্দি আঁটে, সেটা নির্ঘাৎ জনযুদ্ধ!



    গুরুচণ্ডা৯-র গ্রাহক হোন


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ১৪ মার্চ ২০২১ | ৩৫৬৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Sanjoy Bose | ১৪ মার্চ ২০২১ ১০:২২103625
  • যাওয়া তো হলো। তাপ্পর দেখাশোনার গপ্পোটাও পড়ার আগ্রহ রইলো। 

  • বিপ্লব রহমান | ২৩ মে ২০২৩ ০৭:১৮519991
  • ছোট্ট লেখায় পুরনো স্মৃতির ভূমিকা হলো। তারপর? 
     
    সেল্যুট নন্দীগ্রাম! 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:

Nandigram, Nandigram Police Firing, Nandigram Dibas, Nandigram Divas, Nandigram Naxal, Nandigram Trinamool, Nandigram Maoist, Nandigram Maoist Squad, Nandigram 14 years, 14th March Nandigram Day, Nandigram CPM-Police, Nandigram Bhumi Ucched Protirodh Committee, Nandigram BUPC, Nandigram Salim, Nandigram Land Movement, Nandigram Buddhadeb Bhattacharya, Nandigram Checmical Hub, Nandigram Fake News, Nandigram Peoples War, Nandigram police firing Journalist Version, Nandigram Guruchandali
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন