জঙ্গলমহলে রাজনৈতিক পালাবদল
জঙ্গলমহলের জীবন এতটাই বহুমাত্রিক এবং কাঁসাই, ডুলুং নদীর গতিপথের থেকেও তাতে এত বেশি বাঁক, তা বারবার প্রভাবিত এবং বিস্মিত করেছে আমার ভাবনাচিন্তাকে। এবং এই কিষেণজি মৃত্যু রহস্যের সন্ধান করতে গিয়ে মনে হয়েছে, আটের দশকে সিপিআইএমের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার অনিবার্য পরিণতিই যেন ঝাড়গ্রাম মহকুমা এবং পাশের দুই জেলা বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার বারিকুল, বান্দোয়ান, বলরামপুরে মাওবাদের উত্থান। আবার লালগড় আন্দোলন এবং তার আগে কিছু ক্ষেত্রে মাওবাদীদের যে হিংসার রাজনীতি, সেটাই তাদের সাধারণ মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। বারবার মনে হয়েছে, বান্দোয়ানের সেই যে সাধারণ সিপিআইএম নেতা, যিনি রাতে ঘুমোতে যান বাড়ি থেকে চার কিলোমিটার দূরের পুলিশ ক্যাম্পে, কিংবা উপেন হাঁসদা, বান্দোয়ানের দু’টার্মের বিধায়ক, যিনি বাড়ি ছেড়ে ক্লাবের মাটিতে মাদুর পেতে শোন, তাঁদের মতো লোককে খুন করে সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে মাওবাদীরা। একই কথা মনে হয়েছে, লালগড়ের শালকু সোরেন বা তাঁর মতো সাধারণ গরিব মানুষকে খুনের পর। কিন্তু শুধু যুক্তি বা কথার মারপ্যাঁচই তো যথেষ্ট নয় এটা প্রমাণ করতে যে, ২০১০ সালের মাঝামাঝি থেকে কতটা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল মাওবাদীরা!
আমার স্থির বিশ্বাস, হিংসা, নির্বিচারে ব্যক্তি হত্যা এবং আদর্শহীন কিছু লোককে দলের সঙ্গে যুক্ত করার ফলে কিষেণজির নেতৃত্বে থাকা মাওবাদী বাহিনীর হাতে সাধারণ মানুষের ওপর যে অত্যাচার, তারই ফলশ্রুতি, তাদের সম্পূর্ণভাবে মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া। কিন্তু শুধুমাত্র কয়েকজন মাওবাদী শীর্ষ নেতার খবর পুলিশকে দেওয়ার মধ্যে দিয়েই তো প্রমাণিত হয় না, সাধারণ মানুষ মাওয়িস্টদের থেকে কতটা দূরে সরে গিয়েছিলেন, বরং তার অনেকটাই হদিশ মেলে ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ফলে।
কী ফল হল ২০১১ বিধানসভা নির্বাচনে? ঝাড়গ্রামের চারটি আসন। ঝাড়গ্রাম, নয়াগ্রাম, গোপীবল্লভপুর এবং বিনপুর। প্রথম তিনটি কেন্দ্রে সিপিআইএমের বিরুদ্ধে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী। শুধুমাত্র বিনপুর আসনে তৃণমূলের জোটসঙ্গী কংগ্রেস সমর্থিত ঝাড়খন্ড পার্টি নরেন দলের প্রার্থী চুনিবালা হাঁসদা। এ কথা সবারই মনে থাকবে, ২০১১ সালে রাজ্যে পরিবর্তনের বছরে তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের জোট হয়েছিল এবং ঝাড়গ্রামে কংগ্রেসের সঙ্গে ঝাড়খন্ড পার্টি নরেনের জোট বহুদিনের। এবং এখন অন্তত গোটা দুনিয়ার মানুষ যেমন মানেন, সূর্যের চারদিকে পৃথিবী ঘুরছে, তেমনই ঝাড়গ্রামের মানুষ মাত্রই জানেন, সিপিআইএম বিরোধিতার ট্যাকটিকাল লাইন হিসেবে ঝাড়খন্ড পার্টিকে বিভিন্ন নির্বাচনে কীভাবে সাহায্য করেছে এমসিসি-জনযুদ্ধ বা মাওবাদীরা।
তো কী হল সেই নির্বাচনে? ঝাড়গ্রাম, নয়াগ্রাম এবং গোপীবল্লভপুরে সহজেই জিতলেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীরা। নয়াগ্রাম এবং গোপীবল্লভপুরে তৃণমূল কংগ্রেস পেল ৫০ শতাংশের বেশি ভোট। ঝাড়গ্রামেও ৪৪ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে তৃণমূল কংগ্রেস ১৫ হাজার ভোটে হারাল সিপিআইএমকে। কিন্তু জঙ্গলমহলের প্রকৃত পরিবর্তন হল বিনপুরে। মাওয়িস্টদের সমর্থনে ২০০৬ সালেও নির্বাচনে জেতা ঝাড়খন্ড নরেনের চুনিবালা হাঁসদা হেরে গেলেন ২০১১ সালে! এবং হেরে গেলেন সিপিআইএমের দিবাকর হাঁসদার কাছে। যে বিনপুর এমসিসি-জনযুদ্ধ এবং পরে মাওবাদীদের অন্যতম ঘাঁটি, সেখানে কেন গ্রামের পর গ্রাম মানুষ সিপিআইএমকে জেতালেন, যেখানে তাঁরাই বছরের পর বছর কখনও নরেন হাঁসদা, কখনও চুনিবালা হাঁসদাকে জিতিয়েছেন? এটাই গোটা লালগড় আন্দোলন পর্বে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এবং সবচেয়ে প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক শিক্ষা। কারণ, ঝাড়গ্রাম মহকুমায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড গত প্রায় পঞ্চাশ বছরে যেভাবে অদল-বদল হয়েছে, তা সম্পূর্ণ প্রতিফলিত হয়েছে বিভিন্ন নির্বাচনের ফলে।
১৯৭৭ সালে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে ঝাড়গ্রামের তিনটি আসনে জয়লাভ করে সিপিআইএম, গোপীবল্লভপুর আসনে জেতেন নকশাল নেতা সন্তোষ রাণা। আটের দশকের মাঝামাঝি থেকেই এই মহকুমার কিছু কিছু এলাকায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ শুরু হয় সিপিআইএম এবং ঝাড়খন্ড পার্টির মধ্যে। গোটা মহকুমায় ঝাড়খন্ডিরা সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল বিনপুরে। এবং তা বারবার প্রতিফলিত হয়েছে বিভিন্ন ভোটে। নয়ের দশক থেকেই এমসিসি-জনযুদ্ধ অ্যাক্টিভিটি শুরু করে বেলপাহাড়ির বিভিন্ন এলাকায়, যা বিনপুর বিধানসভার অন্তর্গত। ঝাড়খন্ড পার্টির মতোই তাদেরও রাজনৈতিক লাইন ছিল সিপিআইএম বিরোধিতা। তো এর কী প্রভাব পড়ল এই এলাকায়?
১৯৯১ সাল, দেশে উদার অর্থনীতি চালুর বছর, রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে ঝাড়গ্রাম, নয়াগ্রাম এবং গোপীবল্লভপুর কেন্দ্রে সিপিআইএম জিতল ৫৪ থেকে ৬২ শতাংশ ভোট পেয়ে। উল্টো রাস্তায় হাঁটল বিনপুর, ৫৮ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে সিপিআইএমকে প্রায় ২০ হাজার ভোটে হারালেন ঝাড়খন্ড পার্টি নরেন দলের প্রার্থী নরেন হাঁসদা। এর পুনরাবৃত্তি ১৯৯৬ সালেও। মহকুমার তিনটি আসনেই জিতল সিপিআইএম, বিনপুরে ফের জিতল ঝাড়খন্ড পার্টি নরেন।
২০০১ সালে বিধানসভা ভোটে ছবিটা পালটাল কয়েকটা এক্সটার্নাল ফ্যাক্টরের জন্য। ১৯৯৮ সালে তৃণমূল তৈরির পর গোটা রাজ্যের মতোই পশ্চিম মেদিনীপুরে রাজনৈতিক ভারসাম্য অনেকটাই বদলে যায়। বিনপুরে তৈরি হয় একটা বিচিত্র অবস্থা। যদিও সেটা এই লেখায় খুব একটা প্রাসঙ্গিক নয়, তবুও কিছুটা উল্লেখ থাকা দরকার। ১৯৯৮-৯৯ সালের পর থেকেই এমসিসি-জনযুদ্ধ অনেকটা সক্রিয় হয়ে ওঠে বেলপাহাড়ি সহ বিনপুরের বিভিন্ন জায়গায়। তখনও সেভাবে খুনের রাজনীতি শুরু হয়নি ঠিকই, কিন্তু কিছু কিছু জায়গায় ভোট বয়কটের ডাক দেয় মাওবাদীরা। ২০০১ সালে ঝাড়গ্রাম মহকুমায় সবথেকে কম ভোট পড়ে বিনপুর কেন্দ্রে, মাত্র ৭০ শতাংশ। যা গ্রাম বাংলায় সাধারণ ভোট পড়ার যে হার তার থেকে বেশ খানিকটা কম। ভোট বয়কটের ডাক খানিকটা প্রভাব ফেলে গ্রাম এবং জঙ্গল এলাকায়। যেখানে ঝাড়খন্ডিদের প্রভাব বেশি। এই কেন্দ্রের শহরাঞ্চলে সিপিআইএমের ভোট ছিল তুলনামূলকভাবে বেশি। পাশাপাশি, বাঁশপাহাড়িতেও রাজ্যের শাসক দলের জোর বেশি ছিল।
২০০৬ বিধানসভা নির্বাচনের আগে অনেকটাই শক্তিবৃদ্ধি করে ফেলে মাওয়িস্টরা। এবং তার সুফল সুদে-আসলে যায় ঝাড়খন্ড পার্টির ঘরে। ২০০৬ নির্বাচনে রাজ্যে বামেদের প্রবল সাফল্য, ২৩৫ আসন। কিন্তু বিনপুর আসনে ফের জিতলেন চুনিবালা হাঁসদা। সেই নির্বাচনে ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রে প্রায় ৪৯ হাজার, নয়াগ্রামে প্রায় ৪০ হাজার এবং গোপীবল্লভপুরে প্রায় ৫০ হাজার ভোটে জিতলেও মাওয়িস্ট প্রভাবিত বিনপুরে হেরে গেল সিপিআইএম। এবং এই নির্বাচনের ফলগুলোই বারবার প্রমাণ করেছে, বিনপুরের বিস্তীর্ণ অংশে মাওয়িস্টদের ইলেকটোরাল ট্যাকটিকাল লাইন কী ছিল।
কিন্তু ইতিহাসের কী বিচিত্র গতি, কী নিদারুণ শিক্ষা! যে বিনপুরে বাড়ি বাড়ি প্রচার করে নিজস্ব সংগঠন বিস্তার করেছিল এমসিসি-জনযুদ্ধ, যেখানে ২০০৪ সালের পর থেকে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছিল মাওয়িস্টরা, সেই কেন্দ্রেই লালগড় আন্দোলনের পর ২০১১ সালে কিনা জিতে গেল সিপিআইএম! কেন ২০১১ সালে গোটা রাজ্যে পরিবর্তনের বছরে টানা আড়াই বছর লালগড় আন্দোলন চলার পরও জঙ্গলমহলে মাওয়িস্ট কার্যকলাপের এপিসেণ্টার বিনপুরে সিপিআইএম জিতল, এই প্রশ্নের উত্তরেই লুকিয়ে রয়েছে কিষেণজির মৃত্যু রহস্য! বিনপুরে ভোটের রেজাল্ট ২০১১ সালে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল, কিষেণজির নেতৃত্বে এই আন্দোলনকে কী চোখে দেখছিলেন জঙ্গলমহলের আদিবাসী মানুষের একটা বড়ো অংশ। আমার এখনও বিশ্বাস, বিনপুর কেন্দ্রে এক সময় মাওয়িস্টদের মদতে জেতা চুনিবালা হাঁসদা প্রার্থী না হয়ে তৃণমূলের কেউ প্রার্থী হলে, ওই আসনেও ২০১১ সালে সিপিআইএম হারতো। জঙ্গলমহলের মানুষ ২০১১ সালের নির্বাচনে সিপিআইএমকে হারাতে চেয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু ঝাড়খন্ডিদের জেতাতে চাননি তাদের সঙ্গে মাওয়িস্টদের অতীত সম্পর্কের কারণে।
কিষেণজি মৃত্যু রহস্য
এই বিনপুরেই কয়েক মাস আগে এনকাউণ্টারে মৃত্যু হয়েছে লালগড় আন্দোলনের অন্যতম নেতা শশধর মাহাতোর। বিনপুর কেন্দ্রেই কয়েক মাস আগে ভোটে জিতেছে সিপিআইএম। না, কোনও কিছু থেকেই শিক্ষা নিলেন না কিষেণজি। শিক্ষা তো তিনি নেননি আগের বছর নিজের দলের কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিংয়ে তাঁর যে সমালোচনা হয়েছিল, তা থেকেও। মাওয়িস্ট নেতৃত্ব একটা কথা বারবারই বলেন, ‘জলে যেভাবে মাছ থাকে, সেভাবেই মানুষের মধ্যে মিশে থাকতে হবে আমাদের। সেটাই আমাদের প্রভাব এবং সংগঠন বিস্তারের এক গুরুত্বপূর্ণ সূচক।’
২০১১, রাজ্যে পরিবর্তন উত্তর জঙ্গলমহলে ফের এলেন কিষেণজি। এবং ফের আশ্রয় নিলেন সেই বিনপুরেই। লালগড়ে নয় কিন্তু। হয়তো জানতেন, লালগড়ে তাদের সেই সাংগঠনিক শক্তি নেই। পোড়খাওয়া সংগঠক কিষেণজি হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন, আড়াই বছরে বন্দুকের নল উঁচিয়ে আন্দোলন করেছেন ঠিকই, কিন্তু তা দিয়ে দুর্ভেদ্য সংগঠন গড়ে তুলতে পারেননি লালগড়ে। হয়তো ভরসা ছিল দীর্ঘ বছর ধরে হাতের তালুর মতো চেনা বিনপুরের জঙ্গলকে, ভরসা ছিল সেখানে স্রেফ খুনোখুনি না করেও মানুষের মধ্যে যে বিশ্বাস গড়ে তোলা গিয়েছিল তার ওপর। কিন্তু পাল্টে যাওয়া বিনপুরকে কি চিনতেন কিষেণজি? চিনতেন সুচিত্রা মাহাতো? খোঁজ রাখতেন, কেন পাল্টে গিয়েছিল বিনপুরের জঙ্গল?
২৪ নভেম্বর, ২০১১। খাবার নিয়ে এক্স পৌঁছলেন বুড়িশোল জঙ্গল লাগোয়া উই ঢিবিটার কাছে। ভয়ে শুকিয়ে আসছে গলা, কত তাড়াতাড়ি যাবেন এলাকা ছেড়ে ভাবছেন। খাবারটা রাখলেন মাটিতে পাতা কম্বলের ওপর। চোখ চলে গেল হাতে বন্দুক নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটার দিকে। সাপের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বাচ্চা ছেলেটা, আঙুল ট্রিগারে! বুড়ো লোকটা মাথা উঁচু করে তাকাল একবার। চোখে অন্ধকার দেখলেন এক্স। চোখ নামিয়ে নিলেন, দ্রুত ধরলেন ফেরার রাস্তা। মনে ছিল অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের দেওয়া জিপিএসটার কথা, কিন্তু ভয়ে ফেলতে পারলেন না জঙ্গলের মধ্যে!
উপসংহার
২০০৯ সালের অক্টোবর মাস। কয়েকজন আদিবাসী মহিলাকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। যার বদলা নিতে সাঁকরাইল থানায় ভয়ঙ্কর আক্রমণ চালালো মাওবাদীরা। অপহরণ করে নিয়ে গেল থানার ওসি অতীন্দ্রনাথ দত্তকে। কিষেণজি দাবি করেন, আদিবাসী মহিলাদের ছাড়া হলে তবেই মুক্তি দেওয়া হবে ওসিকে। সেই ঘটনায় রাজ্যজুড়ে তোলপাড় পড়ে যায়। তার দু'দিন বাদে, ঝাড়গ্রামের এক সাংবাদিককে সকালে কিষেণজি জানালেন, সেদিনই ছাড়া হবে ওসিকে। কিন্তু পুলিশ পৌঁছে গেছে তাঁদের প্রায় কাছাকাছি। ফোর্স উইথড্র না করা হলে তাঁরা মেরে দেবেন ওসি অতীন্দ্রনাথ দত্তকে, এই কথা জানিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই একাধিক বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমে ফোনে ইন্টারভিউ দেন কিষেণজি। ঝঁকি নিতে পারেনি প্রশাসন। ফোর্স তুলে নেওয়া হয়।
সারাদিন ঝাড়গ্রামে অপেক্ষার পর বিকেলে ওই সাংবাদিকের কাছে ফের ফোন আসে কিষেণজির। বলেন, লালগড়ের বামাল গ্রামের কাছে সংবাদমাধ্যমের সমস্ত প্রতিনিধিকে পৌঁছতে। তড়িঘড়ি ঝাড়গ্রাম শহর থেকে সাংবাদিকদের কয়েক গাড়ির কনভয় রওনা দেয় বামালের উদ্দেশে। সেখানে পৌঁছে তাঁরা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতেই ফের ফোন করেন কিষেণজি। বলেন, জিরাপাড়া নামক এক জায়গায় গাড়ি ছেড়ে হেঁটে যেতে ভুলাগেঁড়ার দিকে, ওখানে তাঁর লোক থাকবে। সাংবাদিকরা তাই করেন নির্দেশ মতো। পায়ে হেঁটে একটু এগিয়ে তাঁরা দেখেন একাধিক সশস্ত্র স্কোয়াড মেম্বার অপেক্ষা করছেন। সেখানেই রাস্তার ধারে ছিল মাঠ। সেখানে থামানো হয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সমস্ত প্রতিনিধিকে। যাঁর সঙ্গে কিষেণজির কথা হচ্ছিল তাঁকে বাদ দিয়ে বাকি সমস্ত সাংবাদিককে মোবাইল ফোন সেই মাঠেই রেখে যেতে বলেন স্কোয়াড মেম্বাররা। সেই অনুযায়ী একজন বাদে সমস্ত সাংবাদিক সেখানে মোবাইল ফোন জমা রাখেন। তারপর তাঁদের রাস্তা দেখিয়ে পাঁচশো-সাতশো মিটার দূরের ভুলাগেঁড়া প্রাথমিক স্কুলে নিয়ে যান একজন। দিনের আলো তখন পড়ে আসছে। তবে পুরোপুরি অন্ধকার হয়নি। ভুলাগেঁড়া প্রাথমিক স্কুলের মাঠে পৌঁছে অপেক্ষা করতে থাকেন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা।
ভুলাগেঁড়া প্রাথমিক স্কুলের মাঠে তখন অনেক মানুষের ভিড়। আচমকাই গ্রামের দিক থেকে ১০-১২ জনকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে আসেন কিষেণজি। সঙ্গে ওসি অতীন্দ্রনাথ দত্ত। সবার মুখ ঢাকা, হাতে রাইফেল। একমাত্র কিষেণজির মুখ খোলা। হঠাৎ করে সঙ্গীদের নিয়ে কিষেণজিকে বেরিয়ে আসতে দেখে নিজেদের আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি কয়েকজন ক্যামেরাম্যান। ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে ছবি তুলতে শুরু করেন কিষেণজি এবং তাঁর সঙ্গীদের। আর এতেই ঘটে ছন্দপতন। প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন মাওয়িস্ট পলিটব্যুরো সদস্য এবং সেই সময় দেশের মোস্ট ওয়ান্টেড কোটেশ্বর রাও। তার আগে একাধিকবার পছন্দের সাংবাদিকদের সঙ্গে দেখা করেছেন কিষেণজি। কেউই তাঁর মুখের ছবি তোলেননি কখনও। কিন্তু সাঁকরাইলের ওসির মুক্তির জন্য তাঁর অচেনা একাধিক সাংবাদিক এবং ক্যামেরাম্যান সেদিন উপস্থিত ছিলেন সেখানে। কিষেণজির খোলা মুখের ছবি ওঠা মাত্রই ক্যামেরাম্যানদের দিকে তেড়ে আসেন তাঁর সঙ্গীরা। সমস্ত সাংবাদিককে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় মাঠের এক পাশে।
দ্রুত অন্ধকার নামেছে জঙ্গলমহলে। অতীন্দ্রনাথ দত্ত কোথায় কেউ জানেন না, তার মধ্যে কিষেণজির খোলা মুখের ছবি তোলার জন্য ক্যামেরাম্যান সহ সমস্ত সাংবাদিকের ওপরই ক্ষুব্ধ সশস্ত্র মাওবাদীরা। কী হবে কেউ জানে না। মাঠের পাশে ততকক্ষণ কয়েকজন ক্যামেরাম্যানকে চিহ্নিত করে নিল ডাউন করিয়েছেন কিষেণজির সঙ্গীরা। অজানা আশঙ্কায় দাঁড়িয়ে আছেন বাকি সাংবাদিকরা। টেনশনে সময় কাটছে না যেন। অতীন্দ্রনাথ দত্তকে ছাড়ার ব্যাপারে যে সাংবাদিকের সঙ্গে সকাল থেকে কথা হচ্ছিল কিষেণজির, যিনি একমাত্র অনুমতি পেয়েছিলেন মোবাইল ফোন নিয়ে সেখানে যাওয়ার, আচমকা তাঁর নাম ধরে ডাকলেন মাওবাদীদের পলিটব্যুরো সদস্য। তারপর কী ঘটল? তা লিখব সেই সাংবাদিক আমাকে পরে যা জানিয়েছিলেন।
‘কিষেণজি আমার নাম ধরে ডাকার পর একটু চমকে উঠি। তারপর এগিয়ে যাই তাঁর দিকে। দেখি, সমস্ত ক্যামেরাম্যানকে নিল ডাউন করে রাখা হয়েছে। পাশে বন্দুক উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে তিন-চারজন। পাশে দাঁড়িয়ে কিষেণজি। আমাকে বললেন, “তোমাদের কোনও বিশ্বাসযোগ্যতা নেই? আমার মুখ খোলা, তাও ছবি তুলে নিল।”
আমি কী বলব, চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি। ফের বললেন, তাঁর খোলা মুখের ছবি তুলে অন্যায় করেছে ক্যামেরাম্যানরা। এরপর কিষেণজি আমাকে ক্যামেরাম্যানদের বলতে বললেন তাঁর ছবি ডিলিট করে দিতে। সবাই সিনিয়র ক্যামেরাম্যান। আমি বললাম, আমাদের বিশ্বাসযোগ্যতা রাখা উচিত। আর আমাকে কিছু বলতে হয়নি, কিষেণজির এই কথা শুনে একজন ক্যামেরাম্যান সঙ্গে সঙ্গে ক্যামেরা খুলে ছবি ডিলিট করতে শুরু করলেন। দেখাদেখি বাকিরাও। এক সেকেন্ডও হয়নি, কিষেণজি ফের বললেন, ঠিক আছে ছাড়ুন, আমার ছবি দিয়ে কীই বা করবে? আমাকে তো পুলিশ জীবিত ধরতে পারবে না, মরতেই তো হবে একদিন! এরপর সব ক্যামেরাম্যানকে উঠে পড়তে বলেন কিষেণজি।'
২০১১ সালের ২৪ নভেম্বর পুলিশের সঙ্গে এনকাউন্টারে মৃত্যু হয় কিষেণজির। যিনি মৃত্যুর প্রায় দু'বছর আগে বলেছিলেন, 'ঠিক আছে ছাড়ুন, আমার ছবি দিয়ে কীই বা করবে? আমাকে তো পুলিশ জীবিত ধরতে পারবে না, মরতেই তো হবে একদিন!'
কিষেণজি মৃত্যু রহস্য আর দীর্ঘায়িত করার কোনও উদ্দেশ্য আমার ছিল না। ২০০৮ সালের নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া লালগড় আন্দোলন এবং সেই সময় ঘটা আরও বহু ঘটনাই হয়তো এই লেখায় যুক্ত করা যেত। যে ঘটনাগুলির সাক্ষী আমার মতোই আরও অনেক সাংবাদিক। অনেক সাংবাদিক আছেন, যাঁরা এই আন্দোলনের আড়াই বছরে আমার থেকে অনেক বেশি সময় জঙ্গলমহলে যাতায়াত করেছেন। আমার থেকে অনেক বেশি খবর করেছেন এই ধারাবাহিক আন্দোলন নিয়ে। তাঁদের মধ্যে চিত্রদীপ চক্রবর্তী, সপ্তর্ষি সোম, প্রণব মন্ডল, সুরবেক বিশ্বাস, সঞ্জয় ভদ্র, সৌগত মুখোপাধ্যায়, রাজর্ষি দত্তগুপ্ত, সম্বিত পালের নাম না করলেই নয়। এর বাইরেও আছেন আরও অনেকে, বিশেষ করে অমিতাভ রথ, সৌরভ চৌধুরীর মতো ঝাড়গ্রামের অনেক সাংবাদিক, যাঁদের জীবনের সমস্ত রুটিন চেঞ্জ হয়ে গিয়েছিল এই আড়াই বছরে। লালগড় আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যে সাংবাদিকরা দিনরাত পরিশ্রম করে লালগড়ে অ্যাসাইনমেন্ট করেছেন, তাঁদের সবাইকে আমি কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। কারণ, তাঁদের নানা খবর আমাকে ঋদ্ধ করেছে বিভিন্নভাবে।
যাঁদের সাক্ষী হিসেবে এই লেখায় আমি হাজির করেছি, তার বাইরেও বহু ব্যক্তি আছেন, কেউ হয়তো পুলিশ অফিসার, কেউ সাধারণ মানুষ, কেউ রাজনৈতিক নেতা, যাঁদের নাম তাঁদের অনুরোধে উল্লেখ করতে পারছি না, তাঁদেরও ধন্যবাদ জানাতে চাই লেখার শেষ প্রান্তে এসে।
কিষেণজির মৃত্যু: ময়নাতদন্ত
মৃত্যুর প্রায় দু’বছর আগে বহু সাংবাদিক এবং সহযোদ্ধার সামনে সেই যে কিষেণজি বলেছিলেন, ‘আমাকে তো পুলিশ ধরতে পারবে না, মরতেই তো হবে একদিন’, এও তাঁর এক অসম সাহসেরই পরিচয়। দুর্দান্ত যোদ্ধা কিষেণজির নিজের ওপর এতটাই আত্মবিশ্বাস ছিল যে, তিনি জানতেন, তাঁকে গ্রেফতার করা অসম্ভব। যে সাহস ও আত্মবিশ্বাসের ওপর ভরসা করেই জঙ্গলমহলে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরও তিনি আশ্রয় নিয়েছিলেন বিনপুরে।
২৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় এনকাউণ্টার শেষ করে পুলিশ বাহিনী যখন কিষেণজিকে নিয়ে ব্যস্ত, ততকক্ষণে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে অনেকটাই পালিয়ে গেছেন সুচিত্রা মাহাতো। পেটে গুলি নিয়ে সুচিত্রা হাজির হন এক পরিচিতের বাড়িতে। সেই ব্যক্তির সাহায্যে পালিয়ে যান সেই রাতেই। অন্যদিকে, একাই অনেকটা রাস্তা পেরিয়ে একজনের কাছে নিজের বন্দুক জমা রেখে রাতের অন্ধকারে রাজ্য ছাড়েন মঙ্গল মাহাতোও। পরে মঙ্গল মাহাতোর বন্দুক আর সুচিত্রার ফেলে যাওয়া লেডিজ ব্যাগ উদ্ধার করে পুলিশ। গুরুত্বপূর্ণ সেটা নয়। গুরুত্বপূর্ণ হল, এই এনকাউণ্টারের এক সপ্তাহের মধ্যে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের মুখোমুখি হন কিষেণজির সেন্ট্রি মঙ্গল মাহাতো। সুচিত্রাকে নিয়ে কিছুটা সংশয় হয়তো তৈরি হয়েছিল মাওবাদী শীর্ষ নেতৃত্বের কয়েকজনের মধ্যেও, কিন্তু তাদের অভ্যন্তরীণ তদন্তে কঠিন জেরার মুখে পড়েন মঙ্গল। তাঁর মুখে ২৪ নভেম্বর এবং তার চারদিন আগে থেকে ঘটা সমস্ত ঘটনা শুনে মাওয়িস্ট নেতৃত্ব নিশ্চিত হন, পুরো এনকাউণ্টার নিয়ে প্রশ্ন তোলার কিছু নেই। এবং সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা কিষেণজির মতো নেতার মৃত্যুর পর এটাই যে, দেশের কোনও আদালতে মাওয়িস্ট মনোভাবাপন্ন কোনও ব্যক্তি বা কোনও মানবাধিকার সংগঠন ভুয়ো এনকাউণ্টারের মামলা করেননি। যেখানে তার আগের বছরই অন্ধ্রপ্রদেশ-মহারাষ্ট্র সীমান্তে এনকাউণ্টারে আর এক মাওয়িস্ট শীর্ষ নেতা রাজকুমার বা আজাদের মৃত্যুর পর একাধিক মামলা হয়। সেই মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত।
কিন্তু কিষেণজির মতো এক দুর্দান্ত সংগঠক, সাহসী নেতার মৃত্যুর পর প্রথম দু’তিন দিন ভুয়ো এনকাউণ্টারের অভিযোগ তুলেও পরে কেন চুপ করে গেলেন মাওয়িস্ট শীর্ষ নেতৃত্ব? শুধুই কি মঙ্গল মাহাতোর বয়ান?
কেউ কেউ অভিযোগের আঙুল তুলেছিলেন সুচিত্রার মাহাতোর বিরুদ্ধে। কিন্তু কেউ যদি পুলিশকে খবর দিয়ে কিষেণজিকে ধরিয়েই দেন, তিনি কি নিজে সেখানে থাকবেন এনকাউণ্টারের সময়? যেখানে তাঁর নিজেরও মৃত্যুর আশঙ্কা থাকবে? সুচিত্রার পেটে গুলি লাগা এবং কোথায়, কবে অস্ত্রোপচার হয়েছিল তার স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়ার পর মাওয়িস্ট শীর্ষ নেতৃত্বও আর তাঁর সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেননি।
কিন্তু শুধু মঙ্গল মাহাতোর বয়ানে বা সুচিত্রার গুলিবিদ্ধ হওয়ার সত্যসত্য বিচার করেই তো কিষেণজির মতো সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতার মৃত্যুর ইন্টারনাল এনকোয়ারি শেষ হয়ে যায় না। আমরা বহিরাগতরা অনেকেই হয়তো বিস্তারিত জানি না, কীভাবে প্রতিটা ছোট-বড়ো ঘটনার মূল্যায়ন করেন মাওয়িস্ট শীর্ষ নেতৃত্ব। কিষেণজির মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর পরিবারের কোনও সদস্য ভুয়ো এনকাউণ্টারের অভিযোগ করলেও, প্রাথমিক খোঁজখবর নিতে মাওয়িস্ট নেতৃত্বের সময় লেগেছেল, চার-পাঁচ দিন, বিস্তারিত ইন্টারনাল তদন্ত শেষ করতে লাগে প্রায় এক মাস।
থানা: জামবনি
আনন্যাচারাল ডেথ কেস নম্বর: ১৩/১১, তারিখ- ২৫/১১/১১
২৪ নভেম্বর ২০১১, সাত-আট মিনিটের গুলির লড়াই শেষ হল বুড়িশোলের জঙ্গলে। মিনিট পনেরো-কুড়ি মাটিতে শুয়েই অপেক্ষা করলেন জওয়ানরা। তারপর আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালেন। ততক্ষণে জঙ্গলে ঢুকতে শুরু করেছে বাইরের ফোর্স। ক্যানেলের পাশে অপেক্ষা করা সিনিয়র অফিসাররাও পৌঁছলেন সেখানে। মাঠ থেকে জঙ্গলের ভেতরে দেড়শো-দুশো মিটার ঢুকেই উই ঢিবিটা। পাশে একদিকে কাৎ হয়ে পড়ে আছে রক্তাক্ত মৃতদেহ।
পরনে নীল রঙের ফুল শার্ট, তার ওপরে ধুসর জ্যাকেট। জ্যাকেটের চেন খোলা, শার্ট শতচ্ছিন্ন। রক্তে ভেসে যাচ্ছে শরীরের সামনের দিক। ফুল প্যান্টেও রক্ত লেগে, তবে তুলনায় কম। পাশে পড়ে আছে এ কে ৪৭ রাইফেল। যেভাবে পড়ে আছে নিহত মাওয়িস্ট নেতার দেহ তাতে পরিষ্কার, পালানোর কোনও চেষ্টা করেননি তিনি। প্রায় উপুড় হয়ে পড়ে থাকা মৃতদেহের পিছনের দিকে, অর্থাৎ পিঠে রক্তের কোনও দাগ নেই। মৃতদেহ পড়ে থাকার ধরন থেকে খোলা চোখে পরিষ্কার, অসমসাহসী যোদ্ধা কিষেণজি জওয়ানদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে লড়াই চালিয়েছেন মৃত্যুর আগে পর্যন্ত।
পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চি উচ্চতা, ৫৭ কিলোগ্রাম ওজন, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি মাওয়িস্টের পলিটব্যুরো সদস্য কোটেশ্বর রাওয়ের মৃতদেহ মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালে পৌঁছল পরদিন, ২৫ তারিখ দুপুর সওয়া তিনটে নাগাদ। তারপরের দিন, ২৬ তারিখ কিষেণজির দেহের ময়নাতদন্ত হল। শরীরে ৩২ টি ক্ষত, অধিকাংশই বুলেট ইনজ্যুরি, কিছু স্প্লিন্টারের। শরীর থেকে বেরোল ছ’টি বুলেট। চার পাতার ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে থাকা সত্ত্বেও আমি এখানে পেশ করতে চাই না একটাই কারণে, এই সায়েন্টিফিক এভিডেন্সের গুরুত্ব আদালতে থাকলেও, মানুষের দরবারে ততটা নেই। বরং আমি সংক্ষেপে পেশ করব কিষেণজির ব্যালেস্টিক রিপোর্ট, দু’একটি তথ্য তুলে ধরার জন্য। ব্যালেস্টিক রিপোর্টও হয়তো সবার কাছে বিশ্বাসযোগ্য না হতে পারে, কিন্তু তার দু’একটি তথ্য লেখার কারণ, ব্যালেস্টিক রিপোর্ট সাধারণভাবে ময়নাতদন্ত রিপোর্টের মতো পরিচিত নয়।
কোনও এনকাউণ্টারের ঘটনায় যাঁরা প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত থাকেন, সাধারণত তাঁদের দু’হাতের চারটি জায়গা, গালের দু’দিক এবং শরীরের পিছনের অংশ থেকে GSR বা ‘গান শট রেসিডিউ’ (জিএসআর) সংগ্রহ করা হয়। কী এটা? জিএসআর হচ্ছে গুলি ছোড়ার সময় বন্দুকের ট্রিগারের ওপরের অংশ থেকে বেরনো বারুদের কণা। যা অত্যাধুনিক বন্দুকের নলের সামনের দিকে যে ফুটো থাকে তা থেকেও বেরোয়। যে বন্দুক থেকে যত ফায়ারিং হবে জিএসআর তত বেশি পরিমাণে বেরবে।
এই জিএসআর কালেক্ট করে যে পরীক্ষা হয় তাকে বলা হয়, নিউট্রন অ্যাক্টিভেশন টেস্ট। এটা এতই উন্নতমানের পরীক্ষা যে, তা হয় মূলত ভাবা অ্যাটমিক রিসার্চ সেন্টারে।
কিষেণজির শরীরের সাতটি জায়গা থেকে জিএসআর সংগ্রহ করে (ডান হাতের তালুর ভেতরের অংশ, ডান হাতের কনুই থেকে আঙুল, বাঁ হাতের তালুর ভেতরের অংশ, বাঁ হাতের কনুই থেকে আঙুল, ডান গাল, বাঁ গাল এবং শরীরের পিছন) ২৫ নভেম্বর ২০১১ কলকাতায় সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়, যার কেস নম্বর ৪৬/১১, ২৫/১১/১১।
চূড়ান্ত ব্যালেস্টিক রিপোর্টে (রিপোর্ট নম্বর: CFSL (K)/EE/2011(WB))-1295, dated 14.12.2011 সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি জানাল, কিষেণজির ডান গালে এবং বাঁ হাতের তালুর ভেতরের অংশে প্রচুর জিএসআর মিলেছে। বাকি জায়গাগুলোতে অত্যন্ত কম, শরীরের পিছনের অংশে শূন্য।
ডান হাতি ব্যক্তি যখন রাইফেল দিয়ে গুলি চালান, তখন তাঁর ডান গাল বন্দুকের সঙ্গে লেগে থাকে, আর বন্দুকের নলের সামনের অংশ বাঁ হাত দিয়ে শক্ত করে ধরা থাকে। তাই এই দুই জায়গায় সবচেয়ে বেশি জিএসআর মেলে। এই রিপোর্ট জানায়, মৃত ব্যক্তি গুলি চালিয়েছেন কিনা।
কিন্তু পাঠকের দরবারে এই সায়েণ্টেফিক এভিডেন্স পেশ করে আমি কিছুই প্রমাণ করতে চাই না। কিষেণজির মৃতদেহ পড়ে থাকার ছবি দেখে সেই প্রমাণ প্রাথমিক ভাবেই পেয়েছিলেন মাওয়িস্ট শীর্ষ নেতৃত্ব। তাঁরা জানতেন, পালানোর লোক নন অসমসাহসী কোটেশ্বর। তাঁরা জানতেন, সুদক্ষ সংগঠক সারা জীবন নেতৃত্ব দিয়েছেন, কোথাও সহযোদ্ধাদের আড়াল করে পালাননি। একবার জঙ্গলের মধ্যে অসুস্থ এক সহযোদ্ধাকে পিঠে চাপিয়ে সারারাত হেঁটেছিলেন কোটেশ্বর রাও। মাওয়িস্ট শীর্ষ নেতৃত্ব জানতেন, কোটেশ্বরের পিঠে রক্তের দাগ থাকতে পারে না।
মাওয়িস্ট শীর্ষ নেতৃত্ব জানতেন, ভুয়ো এনকাউণ্টার হয়নি ২৪ নভেম্বরের সন্ধ্যায়। তাঁদের মধ্যে প্রশ্ন ছিল একটাই, গ্রামের মানুষ কেন খবর দিলেন পুলিশকে। যদিও সেই প্রশ্নের উত্তরও জানতেন তাঁরা। আগের বছরই তো তাঁরা কোটেশ্বরকে বলেছিলেন, এভাবে ব্যক্তি হত্যা ঠিক হচ্ছে, মানুষের মধ্যে খারাপ বার্তা যাচ্ছে। সংগঠনের ক্ষতি হচ্ছে। ঠিক করেছিলেন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে এর জন্য ক্ষমা চাইবেন তাঁরা। কিন্তু সেই সময় আর মেলেনি, কিষেণজির মৃত্যুই প্রমাণ করেছে, সংগঠনের কতটা ক্ষতি তাদের জঙ্গলমহলে হয়েছে।
শেষ অধ্যায়: ধর্মাল মান্ডি
কিষেণজির এনকাউণ্টার থেকে শুরু করে তাঁর মৃত্যুর কারণ এবং দীর্ঘ বছর ধরে ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার জঙ্গলে আন্দোলন করে নিজেদের সংগঠন সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা ছিল মাওয়িস্ট শীর্ষ নেতাদের। কিন্তু তাঁদের আন্দাজের মধ্যেও ছিল না, একুশ শতকের প্রথম দশকের শেষভাগে এসে তা কতটা দুর্বল হয়ে প্রায় তাসের ঘরে পরিণত হয়েছে। তাঁদের ধারণাতেও হয়তো ছিল না, লালগড় আন্দোলনের শেষ পর্যায়ে, বিশেষ করে ২০১০ সালে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসে বিস্ফোরণের পর থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত হত্যার রাজনীতি সাংগঠনিক কাঠামোকে কীভাবে খাদের কিনারে এসে দাঁড় করিয়েছে। তবে এ রাজ্যের জঙ্গলমহলে মাওয়িস্টদের শক্তিবৃদ্ধির কারণ থেকে কিষেণজির মৃত্যু পর্যন্ত প্রায় সব ঘটনাই জানতো একজন। সে ময়ূরঝরণা গ্রামের ধর্মাল মান্ডি।
কিষেণজির মৃত্যুর পর প্রথম জঙ্গলমহলে গেলাম ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটের আগে। রাজ্যে তখন টগবগে তৃণমূল সরকার। ভোটের আগের দিন সকাল দশটা-সাড়ে দশটা নাগাদ মেদিনীপুর শহর থেকে ঝাড়গ্রামের দিকে যাচ্ছি। কঙ্কাবতী, এনায়েতপুর, ধেড়ুয়া, সমস্ত মোড়ে কম বয়সী ছেলেদের জটলা। ভোটের আগের দিনের ফাইনাল রাজনৈতিক প্রস্তুতি। প্রত্যেকটা মোড়ে গাড়ি আস্তে করছি আর ভাবছি, একেই বলে রাজনীতির পালাবদল! কোথাও লাল পতাকার চিহ্নমাত্র নেই, চারদিকে শুধুই তৃণমূলের ফ্ল্যাগ, ফেস্টুন, ক্যাম্প অফিস। গাড়ি থামালাম ধেড়ুয়ার মোড়ে। এর কারণও তো জানা দরকার।
ধেড়ুয়ার মোড় থেকে কাঁসাই নদীর ওপর ব্রিজ পেরিয়ে রাস্তা সোজা চলে যাচ্ছে ঝাড়গ্রামের দিকে। আমি ঘুরলাম ডানদিকে, যেদিকে যায় লালগড়। দাঁড়ালাম গিয়ে এক দোকানের সামনে। এই রাস্তা দিয়েই ২০০৮ সালের ১১ নভেম্বর প্রথম লালগড় গিয়েছিলাম।
‘কাল তো ভোট...’ শুরু হল দোকানির সঙ্গে কথাবার্তা। আমার তো সারা জীবনের সমস্ত অভিজ্ঞতা আর কাণ্ডজ্ঞান গিয়ে মিশেছে এক বিন্দুতে, আর তা হল, দুনিয়ার সব কিছুই ঘটে অর্থনৈতিক কারণে। তাই বুঝতে চাইছি, কী আর্থিক বদলটা হল এই এলাকার, যার জন্য গোটা রাস্তায় একটা সিপিএমের পতাকা লাগানোর লোকও দেখলাম না! কী বদলটা হল সিপিএম-মাওয়িস্ট যুদ্ধের এই কুরুক্ষেত্রের ময়দানে, যার জন্য এলাকার পর এলাকায় আজ শুধুই এক ডানপন্থী দলের পতাকা!
তো ধেড়ুয়ার মোড়ের এক বড়ো মুদি দোকানির সঙ্গে প্রায় আধ ঘণ্টা কথার মূল বাক্য দুটো। ‘প্রথম, আগে মাসে পাঁচ-দশ দিন বনধ থাকতো, দোকানই খুলতে পারতাম না। খুন-খারাবি লেগেই থাকতো। এখন নিশ্চিন্তে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দোকান খুলতে পারছি। দ্বিতীয়, এখন আর ঢেঁকি ছাঁটা চাল কোথাও পাবেন না। সবাই দু’টাকায় চাল পাচ্ছে। কেউ আর এখন বাড়িতে কষ্ট করে চাল বানায় না।’
দোকানি যে দুটো কথা বললেন, তার প্রথমটার কারণ শান্তি ফেরা, আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি। আর দ্বিতীয়টার কারণ, সাধারণ থেকে সাধারণতর মানুষের দৈনন্দিন প্রাথমিক চিন্তা, মানে ভাতের চিন্তা দূর হওয়া। সরকার দু’টাকার চাল সবার জন্য শুরু করার পর অধিকাংশ গরিব বাড়িতে যে ঢেঁকিতে চাল তৈরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে জানা ছিল না। দোকানির সঙ্গে কথা বলে মাথায় প্রায় ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা নিয়ে হাঁটতে-হাঁটতে গাড়ির দিকে যাওয়ার সময় মনে হচ্ছিল, সিপিএমের ফেরা মুশকিল আছে, মাওয়িস্টদের প্রায় অসম্ভব।
তারপর আবার ঝাড়গ্রাম গেলাম ২০১৭ সালে। ঝাড়গ্রাম থেকে মোটরসাইকেলে চেপে লালগড় যাচ্ছি। মোটরসাইকেল চালাচ্ছে আমার পুরনো সহকর্মী, সাংবাদিক অমিতাভ রথ। যেতে যেতে একটা সময়ের পর আর স্মৃতিতে থাকা লালগড়ের রাস্তার সঙ্গে তাল রাখতে পারলাম না। হঠাৎ সামনে এসে হাজির হল এক মস্ত ব্রিজ। তা পেরিয়েই বোঝার চেষ্টা করছি কোথায় এলাম। ডানদিকে ঘাড় ঘোরাতেই দেখি মাটি ফুঁড়ে দাঁড়িয়ে আছে এক পেল্লায় সাইজের নীল-সাদা রঙের বাড়ি। এত বড়ো সরকারি কাঠামোটা কী ঠাওর হওয়ার আগেই অমিতাভ বলল, লালগড় এসে গিয়েছি। আমার তখন গুপী, বাঘার হাততালি দিয়ে শুণ্ডিতে পৌঁছে যাওয়ার মতো অবাক অবস্থা! যে লালগড়ে ২০০৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত টানা এসেছি, সেখানে আজ এত পরিবর্তন!
আমার আবার ঝাড়গ্রাম যাওয়া ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের দু’মাস আগে। ঝাড়গ্রামের বিভিন্ন গ্রামের এদিক-ওদিক ঘুরছি, কথা বলছি নানা মানুষের সঙ্গে। কী সমস্যা, কী অসুবিধে, কেমন আছেন এখন, দশ বছরের সরকার কেমন করল, নানান প্রশ্নের জবাব খুঁজছি। এক ব্যক্তি বললেন, ‘বাবার বার্ধ্যক্য ভাতার ফর্ম ভর্তি করে জমা দিয়েছি। এখনও হয়নি। এলাকার অনেকেরই হয়ে গেছে।’ পাল্টা জানতে চাইলাম, এটাই একমাত্র সমস্যা? আর কিছু?
‘না, আর সব ঠিক আছে। ক’দিন আগে খোঁজ নিলাম, পঞ্চায়েত থেকে বলল, ভোটের আগেই টাকা ঢুকে যাবে ব্যাঙ্কে। দেখি।’
ফিরছি ঝাড়গ্রাম শহরে। মোড়ের মিষ্টির দোকানটা একইরকম আছে। কাচের শো-কেসের ভেতর পাঁচ-ছ’রকমের কম দামি মিষ্টি, শো-কেসের ওপরে গজা, সিঙ্গারা। সামনে দেখা যাচ্ছে, অনেক দূর থেকে সাইকেল চালিয়ে আসছে শূন্য দৃষ্টির এক রোদে পোড়া চেহারা, যেন একইভাবে সাইকেল চালিয়ে আসছে গত দশ-বিশ বছর ধরে। তিন মহিলা মাথায় কাঠ নিয়ে হেঁটে চলে গেল, যেমন যাচ্ছে সেই প্রাক মাওবাদী যুগ থেকে। গাড়িতে বসে বসে ভাবছি, সব তো একই আছে। দেখে তো তাই মনে হচ্ছে। কিন্তু সত্যিই কি সব এক আছে? না, ভুল ভাঙে, সব তো এক নেই। সামনের লম্বা রাস্তায় রোদের তেজে মরীচিকা দেখার মতো চমকে উঠি। আর মাথায় হাতুড়ি পেটায় একটা প্রশ্ন, পশ্চিমবঙ্গের প্রান্তিকতম জেলার সাধারণ মানুষের একমাত্র সমস্যা কি বাবার বার্ধক্য ভাতা? আর সব ঠিক আছে? এই জেলাতেই তো ১৬-১৭ বছর আগে আমলাশোল নামক এক গ্রামে কত মানুষ অনাহারে মারা গিয়েছিলেন। সেই জেলায় আজ মানুষের একমাত্র চাহিদা বাবার বার্ধক্য ভাতা, ছেলের জব কার্ড!
মনে পড়ে যায় এক ঘটনার কথা। ঘটনাটা ২০০৭-২০০৮ সাল নাগাদ আমাকে বলেছিলেন এক সিপিএম সাংসদ। রাজ্যের এক গ্রামীণ এলাকার সাংসদ ছিলেন তিনি। নানা বিষয়ে কথা বলতে বলতে বলেছিলেন, জানো দশ বছর আগে যখন এলাকায় যেতাম, লোক বলত, পাড়ায় জল নেই, মেয়েদের স্কুল নেই, হাইস্কুল নেই, হেলথ সেন্টারে ডাক্তার নেই, এই সব। চেষ্টা করতাম সাংসদ তহবিলের টাকা দিয়ে যতটুকু করা যায়। এখন গ্রামে গেলে লোকে বলে, ছেলের জব কার্ডে নাম নেই, আমার বাড়িটা কেন পাকা হল না? আগে মানুষের ডিমান্ডগুলো ছিল কালেকটিভ। গ্রামের অধিকাংশ মানুষের চাহিদা সংক্রান্ত। এখন সব মানুষের চাহিদাই ইন্ডিভিজুয়াল, ব্যক্তিগত। আমার কেন এটা হল না, আমারটা কবে হবে? এই ব্যক্তিগত চাহিদা মেটাবো কোন ম্যাজিকে?
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির শেষে ঝাড়গ্রাম থেকে ফেরার সময় ভাবছিলাম, এই প্রান্তিক জেলার সব মানুষের সমস্যা বা চাহিদাই কি আজ স্রেফ ব্যক্তিগত? যৌথ চাহিদা কিছু নেই? আমাদের সমস্যা বলে কি আর কিছুই নেই? যদি সত্যিই তাই হয়, তবে কিষেণজির মৃত্যুতেই কি শেষ এ রাজ্যে মাওয়িস্ট আন্দোলন? জানি না এই প্রশ্নের উত্তর মাওয়িস্ট শীর্ষ নেতৃত্ব জানেন কিনা। তবে নিশ্চিত জানি, এই প্রশ্নের উত্তর জানে একজন। সে ময়ূরঝর্ণা গ্রামের ধর্মাল মান্ডি।
কিন্তু কে এই ধর্মাল মান্ডি? না, এ প্রশ্নের জবাব আজ মিলবে না। ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়িতে ময়ূরঝর্ণা নামে এক গ্রাম আছে। সেই গ্রামের বাসিন্দা ধর্মাল মান্ডি সবে লিখতে শুরু করেছে তাঁর জীবনী। আসলে তাঁর জীবনী তো নামেই, ধর্মালের জীবনী মানে ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি, বিনপুর, চাকাডোবা থেকে লালগড় হাজার মানুষের আত্মকথা। জানি না, ধর্মাল সেই লেখা শেষ করে উঠতে পারবে কিনা, পারলেও কবে পারবে। তবে এটা নিশ্চিত জানি, সেই লেখা শেষ হলে উত্তর মিলবে অনেক, অনেক জানা-অজানা প্রশ্নের। ধর্মালের জীবনীই হয়তো একদিন সমাধান করবে এপার বাংলায় মাওয়িস্ট আন্দোলন এবং কিষেণজির মৃত্যুর প্রকৃত রহস্যের।
শেষ
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।