এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  রাজনীতি

  • কিষেণজি মৃত্যু রহস্য - পর্ব ১  

    বিতনু চট্টোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | রাজনীতি | ২১ মার্চ ২০২৪ | ১২৭২ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • কিষেণজি মৃত্যু রহস্য আসলে ঝাড়গ্রামে মাওবাদী আন্দোলনের উৎস সন্ধানে পিছন দিকে এগোনোর চেষ্টা করা। হাজার-লক্ষ ঘটনার ভিড়ে ধাক্কাধাক্কি করে যতটা এগনো আমার পক্ষে সম্ভব হয়েছে ততটা। সাংবাদিকতার সূত্রে বারবার বেলপাহাড়ি, বিনপুর, লালগড়, জামবনি সহ ঝাড়গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় যাওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে এই লেখা। কলাভৃত পাবলিশার্স ২০২১ সালে কিষেণজি মৃত্যু রহস্য বই হিসেবে প্রকাশ করে। প্রকাশকের সম্মতিক্রমে বইটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে গুরুচন্ডালীতে। কিষেণজি মৃত্যু রহস্যকে ময়ূরঝর্ণার আগের কথা হিসেবে বিবেচনা করা যায়।     
     
    এনকাউন্টার 

    ‘স্যার, কিষেণজি ১০-১২ জনের দল নিয়ে কুশবনির জঙ্গলে ঢুকেছে।’
    খবরটা এল ঝাড়গ্রামে সিআরপিএফের ১৮৪ নম্বর ব্যাটেলিয়নের অফিসে। এক লাইনের ইনফর্মেশন। সিআরপিএফের এক অফিসারের কাছে ফোনটা এল বিনপুরের একটা গ্রাম থেকে। যিনি টেলিফোনটা করলেন, তিনি তাঁর নাম বললেন না। সিআরপিএফের অফিসারকে শুধু বললেন, ‘স্যার, আমি নিজে দেখেছি। কিষেণজি ১০-১২ জনের একটা দল নিয়ে কুশবনির জঙ্গলে ঢুকেছে।’ 
    একদম স্পেসিফিক সোর্স ইনফর্মেশন। অলমোস্ট পিন পয়েন্ট লোকেশন। বিনপুরের কুশবনির জঙ্গল সিআরপিএফের ১৮৪ নম্বর ব্যাটলিয়নের আন্ডারে পড়ে। এই ব্যাটেলিয়নের কমান্ডান্ট তখন রবীন্দ্র ভগত। সঙ্গে সঙ্গেই খবরটার গুরুত্ব বুঝে নিলেন রাঁচির বাসিন্দা রবীন্দ্র। 
     
    সেদিন ১৯ নভেম্বর ২০১১।  
    ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার গৌরব শর্মা তখন ছুটিতে। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার প্রভীন কুমার ত্রিপাঠী সেই সময় ঝাড়গ্রাম পুলিশের চার্জে। সিআরপিএফ এবং পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ সেই সময় যৌথভাবে জঙ্গলমহলে কাজ করছে ঠিকই, কিন্তু দু’পক্ষই মরিয়াভাবে খুঁজছে স্রেফ একজনকে। কিষেণজি। মাল্লোজুলা কোটেশ্বর রাও। অবিভক্ত অন্ধ্রপ্রদেশের করিমনগরে জন্ম। কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া মাওয়িস্টের পলিটব্যুরো সদস্য। তিন বছর আগে শুরু হওয়া লালগড় আন্দোলনের মেইন আর্কিটেক্ট কিষেণজি। যিনি নিজেই লালগড়ের নাম দিয়েছেন দ্বিতীয় নকশালবাড়ি। সেই কিষেণজি! যাঁকে ধরতে দেশের ছ’সাতটা রাজ্যের পুলিশ এবং আধা সামরিক বাহিনী মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে কয়েক বছর ধরে। মোস্ট ওয়ান্টেড কিষেণজিকে নিয়ে স্পেসিফিক ইনফর্মেশনটা যখন সিআরপিএফের এক অফিসারের কাছে এল, তখন দুপুর গড়িয়ে প্রায় বিকেল। কিন্তু শীতকাল আসার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত দিনও ছোট হয়ে আসছে রাজ্যের পশ্চিম প্রান্তের মাওবাদী অধ্যুষিত মহকুমা ঝাড়গ্রামে। সিআরপিএফের ১৮৪ ব্যাটেলিয়নে তখন সন্ধে নামছে।  
    লালগড়, বিনপুর, জামবনি, শালবনি এবং জঙ্গলমহলের নানা জায়গায় মাওবাদীদের খোঁজে অভিযান চালানোর পাশাপাশি কয়েক মাস ধরেই কমিউনিটি পুলিশিং চালু করেছিল সিআরপিএফ। গ্রামের সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জনে এও এক ট্যাক্টিকাল লাইন আধা সামরিক বাহিনীর। ফুটবল টুর্নামেন্ট চালু করা থেকে শুরু করে এক্কেবারে গ্রাম স্তরে তৃণমূল কংগ্রেস এবং পুলিশ সন্ত্রাস বিরোধী জনসাধারণের কমিটির (পিসিপিএ) নেতা-কর্মীদের সঙ্গেও সম্পর্ক তৈরি করে ফেলেছিলেন সিআরপিএফের বেশ কয়েকজন অফিসার। 
    মাস ছয়েকও হয়নি, রাজ্যে সরকার গড়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। আর ২০১১ সালের ২০ মে মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিয়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের জন্য ধার্য করেছেন দুটো আর্জেন্ট লক্ষ্যমাত্রা। এক, সিঙ্গুরে অনিচ্ছুক কৃষকের জমি ফেরত এবং দুই, জঙ্গলমহল ও দার্জিলিং পাহাড়ে শান্তি ফেরানো।
     
    জঙ্গলমহলে শান্তি ফেরাতে প্রকাশ্যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। আলোচনায় বসার বার্তা দিলেন মাওবাদীদের। বললেন, ‘অস্ত্র ছাড়ুক মাওবাদীরা।’ মাওবাদীদের দাবি-দাওয়া নিয়ে মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শুরু করলেন মানবাধিকার কর্মী ছোটন দাস, সুজাত ভদ্ররা। মহাকরণ থেকে পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার পুলিশ কর্তাদের কাছে প্রশাসনিক স্তরে গোপন বার্তা গেল, ‘গো-স্লো। অপারেশন বন্ধ রাখুন। কিন্তু গ্রামে পুলিশ ঢোকা পুরোপুরি বন্ধ করবেন না। বরং দিনের আলোয় মাঝে মাঝে গ্রামে, জঙ্গলে প্রচুর সংখ্যায় ফোর্স পাঠাতে হবে, যাতে মাওবাদীদের অবাধ ঘোরাফেরা বন্ধ হয়। কিন্তু অতর্কিতে অপারশনের দরকার নেই।’ যে বার্তার সহজ মানে, জঙ্গলে ফোর্স মুভমেন্ট চলবে ঠিকই, কিন্তু মাওবাদী স্কোয়াডকে ধরার জন্য বাড়তি উদ্যোগ নেওয়া হবে না। কারণ, একই সঙ্গে মহাকরণে আলোচনা এবং জঙ্গলমহলে অপারেশন, দুইই চালানো সম্ভব নয়। অথচ জঙ্গলমহলে সেন্ট্রাল ফোর্স সিআরপিএফ মোতায়েন রয়েছে, ফলে অপারেশন পুরোপুরি বন্ধ করাও যাচ্ছে না।  
    ২০১১ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত রাজ্য পুলিশ পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রামের বহু গ্রামে সাধারণ মানুষের মধ্যে খুব ভাল সোর্স নেটওয়ার্ক তৈরি করে ফেলেছিল। কিন্তু মে মাসে সরকার বদলের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনের গো-স্লো স্ট্র্যাটেজির জন্য গ্রামে পুলিশের অ্যাক্টিভিটি অনেক কমে যায়। এই সুযোগটাকে কাজে লাগাল সিআরপিএফ। তখন পিসিপিএ’ও পুরো ভেঙে গিয়েছে। পিসিপিএ’র অনেক সদস্য যোগ দিয়েছেন শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসে। সব মিলে, ২০১১ সালের জুন, জুলাই, অগাস্ট মাসজুড়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার যখন আলোচনার মাধ্যমে জঙ্গলমহলে শান্তি ফেরানোর রোডম্যাপ খুঁজতে ব্যস্ত, তখন সিআরপিএফের সক্রিয়তা ওই সমস্ত এলাকায় মাওবাদী বিরোধী সাধারণ গ্রামবাসী এবং সদ্য প্রাক্তন পিসিপিএ সদস্যদের মধ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে নিয়ে একটা ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করে। গ্রামে মাওবাদীদের বিরোধী মানুষের একটা অংশ মনে করতে শুরু করল, রাজ্য পুলিশকে খবর দিয়ে কোনও লাভ হবে না। পুলিশ ধরবে না মাওবাদীদের। তাছাড়া যে কোনও কারণেই হোক, কেন্দ্রীয় বাহিনীর ওপর সাধারণ মানুষের আস্থাও একটু বেশি থাকে পুলিশের তুলনায়। ২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের সময় থেকেই এ’রাজ্যে বিভিন্ন ভোটে তা নিজের অভিজ্ঞতায় বহুবার দেখেছি।   
    মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসনের সঙ্গে মাওবাদীদের আলোচনার প্রক্রিয়াটা শেষমেশ ভেস্তেই গেল। সেটা ২০১১ সালের নভেম্বর মাসের ৩-৪ তারিখ। সেপ্টেম্বর, অক্টোবরে ঝাড়গ্রামে পর পর তিনটে খুন করল মাওবাদীরা। দুজন তৃণমূল কংগ্রেস নেতা এবং একজন ঝাড়খন্ডি নেতা বাবু বোস খুন হলেন মাওবাদীদের হাতে। বাবু বোস স্থানীয় স্তরে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছিলেন। আলোচনা প্রক্রিয়ার মাঝেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্যে মাওবাদীদের আহ্বান জানিয়েছিলেন অস্ত্র ছাড়তে। সশস্ত্র রাস্তা ছেড়ে সমাজের ‘মূলস্রোতে’ ফিরতে বলেছিলেন মাওবাদীদের। মাওবাদীরা রাজ্য সরকারকে পালটা এক মাস সময় দিল, জঙ্গলমহল থেকে যৌথ বাহিনী প্রত্যাহার এবং তাঁদের কয়েকজন নেতাকে জেল থেকে ছাড়ার দাবি জানিয়ে। প্রশাসন জঙ্গল থেকে বাহিনী প্রত্যাহার করল না, কিন্তু মাওবাদী অভিযোগে গ্রেফতার দু’চারজন ছোটখাট নেতা-কর্মীকে ছেড়ে দিল। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কোনও মাওবাদী নেতাকে ছাড়ল না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসন। 
     
    পাশাপাশি, আরও একটা ঘটনা সমাজ বিজ্ঞানের নিজস্ব নিয়মে ঘটছিল লালগড়, বেলপাহাড়ি, বিনপুরসহ আশপাশের এলাকায়। প্রকৃতি বেশি দিন শূন্যতা বরদাস্ত করে না। এটাই বুনিয়াদি তত্ত্ব। তাই রাজ্যের অন্যান্য জায়গার মতো জঙ্গলমহলেও তৃণমূল কংগ্রেসের অ্যাক্টিভিটি দ্রুত বৃদ্ধি পেতে শুরু করল। এই সব এলাকায় সিপিআইএমের সংগঠন কয়েক বছর ধরেই মাওবাদী আক্রমণের মুখে পড়ে যথেষ্টই দুর্বল হয়ে পড়েছিল, তাও সরকার ছিল বলে কিছুটা লড়াই চালাচ্ছিল শাসক দলের ক্যাডার বাহিনী। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস সরকার তৈরির পর রাতারাতি অদৃশ্য হয়ে গেল সিপিআইএমের প্রকাশ্য গতিবিধি। পাশাপাশি এক সময় সক্রিয়ভাবে পিসিপিএ করা বহু লোক সরাসরি যোগ দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসে। এরই মধ্যে ঝাড়গ্রামে পরপর তিনটে খুন, যার জেরে মাওবাদীদের সঙ্গে রাজ্য সরকারের শান্তি প্রক্রিয়া শেষ। 
    আলোচনা প্রক্রিয়ার মধ্যেই পরপর তিনজনকে খুন যে আসলে হত্যার রাজনীতি ফের ফিরিয়ে এনে জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের শক্তি প্রদর্শনের স্পষ্ট বার্তা, তা বুঝলেন সাড়ে পাঁচ মাসের মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে মাওবাদীদের চোখ রাঙানো আর বরদাস্ত করবেন না, সেই বার্তা প্রশাসনিক কর্তাদের কাছে পৌঁছোতে সময় লাগল না একদিনও। অক্টোবরের মাঝামাঝি রাজ্য পুলিশের ডিজি এবং পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার পুলিশ সুপারদের নয়া নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী, ‘এনাফ ইজ এনাফ। এবার অপারেশন শুরু করুন। জঙ্গলমহলে যেন আর একটাও খুন না হয়।’ আগেরবারের মতো এবারের নির্দেশও গেল গোপনে। কারণ, শান্তি প্রক্রিয়া তখনও সরকারিভাবে পুরোপুরি শেষ হয়ে যায়নি। নির্দেশ পেয়েই তেড়েফুড়ে নামলেন অফিসাররা। আবার জঙ্গলমহলে শুরু হল রাজ্য পুলিশের টহলদারি, ইনফর্মেশন কালেকশন। মাওবাদীদের সঙ্গে সরকারের আলোচনার উদ্যোগটা পাকাপাকি ভেস্তে গেল নভেম্বরের শুরুতে।
    কিন্তু সেই নভেম্বরের গোড়াতে কেউই ভাবতে পারেননি, মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই জঙ্গলমহলে সবচেয়ে হাই প্রোফাইল অপারেশন হতে চলেছে। এবং যে অপারেশনে শেষমেশ মৃত্যু হবে কিষেণজির!
    ১৯ নভেম্বর দুপুরের পর সোর্স মারফত ঝাড়গ্রামে ১৮৪ সিআরপিএফ ব্যাটেলিয়নে কিষেণজির মুভমেন্টের খবর আসা মাত্রই সেখানে শুরু হয়ে গেল চূড়ান্ত তৎপরতা। সেই ২০০৯ সালের মাঝামাঝি থেকে জঙ্গলমহলে আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। ছোট-বড় নানা ইনফর্মেশন আগেও এসেছে সিআরপিএফের কাছে। কখনও তারা রাজ্য পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে, কখনও বা একাও অপারেশন করেছে। রাজ্য পুলিশও কখনও অপারেশনে সিআরপিএফকে সঙ্গে নিয়েছে, কখনও আবার একাই অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু ১৯ শে নভেম্বর ২০১১, সিআরপিএফ ১৮৪ ব্যাটেলিয়নের কাছে পৌঁছানো খবরটা কোনও মামুলি ব্যাপার ছিল না। ইন ফ্যাক্ট এক-সওয়া এক বছরের মধ্যে কিষেণজিকে নিয়ে এমন স্পেসিফিক কোনও ইনফর্মেশন ছিল না রাজ্য পুলিশ কিংবা কেন্দ্রীয় বাহিনীর কাছে। অপারেশনের প্ল্যানিং শুরু করে দিলেন ব্যাটেলিয়নের কমান্ডান্ট রবীন্দ্র ভগত। সোর্স বলছে, বিনপুর আর জামবনির সীমানায় কুশবনির জঙ্গলের কাছে কোনও গ্রামে রয়েছেন কিষেণজি। চার-পাঁচটা গ্রাম নিয়ে প্রায় চার বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কুম্বিং অপারেশনের প্ল্যানিং শুরু করলেন সিআরপিএফ কমান্ডান্ট। 
     
    সিআরপিএফের কাছে কিষেণজিকে নিয়ে স্পেসিফিক ইনফর্মেশন এসেছে, এই খবর পৌঁছল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশের কাছেও। জেলার পুলিশ সুপার প্রভীন কুমার ত্রিপাঠী খবর পেলেন, কিষেণজিকে ধরতে সিআরপিএফ বিরাট অপারেশনের প্ল্যান করছে। পরদিন, ২০ তারিখ তিনি নিজে চলে গেলেন ঝাড়গ্রামে সিআরপিএফ ব্যাটেলিয়নের ক্যাম্পে। পশ্চিম মেদিনীপুরের আগে ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার ছিলেন প্রভীন কুমার ত্রিপাঠী। প্রায় আড়াই-তিন বছর ধরে টার্গেট করছেন কিষেণজিকে। কিন্তু কিছুতেই টার্গেট বুলস আই হচ্ছে না। শুধু তাই নয়, আগের বছর কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূর থেকে গিয়ে লক্ষ্মণপুরের জঙ্গলে নাগালের মধ্যে পেয়েও গিয়েছিল কিষেণজিসহ একটা পুরো মাওয়িস্ট স্কোয়াডকে। পুলিশের সঙ্গে দীর্ঘ গুলির লড়াইয়ের পর কোনওভাবে পালিয়েছিলেন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি মাওয়িস্টের পলিটব্যুরো সদস্য। 
    ২০ শে নভেম্বর দুপুরে ঝাড়গ্রামের ১৮৪ সিআরপিএফ ব্যাটেলিয়নে পৌঁছে প্রভীন কুমার ত্রিপাঠী দেখা করলেন রবীন্দ্র ভগতের সঙ্গে। ব্যাটেলিয়নে একটা যুদ্ধ যুদ্ধ পরিবেশ। অফিসার এবং জওয়ানদের চূড়ান্ত ব্যস্ততা। অপারেশনের জন্য রেডি হচ্ছে সবাই। বৈঠকে বসলেন রবীন্দ্র ভগত এবং প্রভীন কুমার ত্রিপাঠী। অপারেশনের জন্য ততক্ষণে আট কোম্পানি ফোর্স প্রায় রেডি করে ফেলেছেন সিআরপিএফ কমান্ডান্ট। শুরু হয়েছে অফিসারদের ফাইনাল ব্রিফিং এবং প্ল্যানিংয়ের কাজ। এই অবস্থায় ব্যাটেলিয়নে পৌঁছে বিশেষ কিছুই করার ছিল না মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারের। একেই কয়েক মাস ধরে রাজ্য পুলিশের অপারেশন প্রায় বন্ধ। তার ওপরে সিআরপিএফের এক্সক্লুসিভ সোর্স ইনফর্মেশন। 
    পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারকে রবীন্দ্র ভগত জানালেন, ‘সোর্স বলছে, বিনপুর এবং জামবনি বর্ডারে একটা গ্রামে কিষেণজি এবং এক মহিলাকে সে দেখেছে। তাঁদের সঙ্গে আরও আট-দশজন রয়েছে। কুশবনি এবং বুড়িশোল জঙ্গল সংলগ্ন চার-পাঁচটা গ্রামে এক সঙ্গে অপারেশন শুরু হবে। আট কোম্পানি ফোর্স রেডি।’
     
    কিষেণজির সঙ্গে এক মহিলা, দুই আর দুইয়ে চার মেলালেন প্রভীন কুমার ত্রিপাঠী। কয়েকদিন আগেই, ১০ নভেম্বর শালবনি এলাকায় নিজের বাড়ি থেকে সুমন মাইতি ওরফে সাঁওতা নামে এক মাওবাদীকে গ্রেফতার করে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ। সুমন ছিল শালবনিতে মাওবাদীদের অ্যাকশন স্কোয়াডের অন্যতম মাথা। প্রথম দু’দিনের জেরায় পুলিশের কাছে একটা শব্দও উচ্চারণ করেননি সুমন। অথচ পুলিশ অফিয়াররা জানতেন, মে মাসে সরকার বদলের পর বেস্ট ক্যাচ সুমন মাইতি। কিষেণজির কোর টিমের সদস্য সুমন হচ্ছেন ইনফর্মেশন ব্যাঙ্ক। কিন্তু হার্ড নাট টু ক্র্যাক। 
    পুলিশ অফিসাররা বুঝলেন, সুমনকে মারধোর করে লাভ নেই। বরং তাঁকে কনফিডেন্সে নেওয়া দরকার। সুমনের বাবা-মাক ডেকে পাঠানো হল পশ্চিম মেদিনীপুর পুলিশ লাইনে। তিনজনকে একসঙ্গে বসিয়ে টানা কথা বললেন অফিসাররা। বোঝানো শুরু হল সুমন মাইতিকে। সুমনকে সরকারিভাবে আত্মসমর্পনের প্রস্তাব দেওয়া হল না ঠিকই, তবে তার বিরুদ্ধে মামলা অনেক হাল্কা করে দেওয়ার আশ্বাস দিলেন অফিসাররা। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশের সিনিয়র অফিসাররা সুমন মাইতি এবং তার বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বললেন। এরপরই পুলিশকে প্রচুর ইনফর্মেশন দিলেন সুমন। হদিস মিলল বহু না জানা তথ্যের। তাঁর শর্ত একটাই, সব কেস থেকে তাঁকে মুক্তি এবং চাকরির একটা ব্যবস্থা করে দিতে হবে। সুমনকে সমস্ত কেস থেকে মুক্তির নিশ্চিত আশ্বাস দিলেন অফিসাররা। সুমনের দেওয়া ইনফর্মেশন পুলিশের কী কী কাজে লেগেছিল, তার সবটা এখানে প্রাসঙ্গিক নয়। শুধু এটুকুই জরুরি, ‘স্যার, ইদানিং কিষেণজি এবং সূচিত্রা সবসময় একসঙ্গে থাকে। শশধরের মৃত্যুর পর থেকেই এই নিয়ম। কিছুদিন আগে ঝাড়গ্রামের একটা গ্রামে কিষেণজি এবং সূচিত্রা এক বাড়িতে টানা এক মাস ছিল।’ সূচিত্রা মানে, সূচিত্রা মাহাতো। এবং শশধর মানে শশধর মাহাতো। ঝাড়গ্রামের মাওবাদী স্কোয়াডের দুই গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। মৃত্যু হয়েছে পুলিশের সঙ্গে এনকাউন্টারে। সেই ঘটনা পরে। 
    রবীন্দ্র ভগতের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই প্রভীন কুমার ত্রিপাঠীর মনে পড়ে গেল মাত্র এক সপ্তাহ আগে সুমনের দেওয়া ইনফর্মেশন। সুমন বলেছিলেন, ‘এখন কিষেণজি আর সূচিত্রা সবসময় একসঙ্গে থাকে।’ সিআরপিএফের সোর্সও খবর দিয়েছে, কিষেণজির সঙ্গে  এক মহিলা রয়েছেন। হয়তো সোর্স ইনফর্মেশনটা ঠিকই। কিন্তু সিআরপিএফ কমান্ডান্টের প্ল্যানিং নিয়ে সন্দেহ দেখা দিল পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারের মনে। ২০০৯ সাল থেকে ঝাড়গ্রাম, লালগড়ে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে নিজে বহু অপারেশন করেছেন প্রভীন ত্রিপাঠী। সেই অভিজ্ঞতা থেকে তাঁর মনে হল, এত বেশি সংখ্যক ফোর্স নিয়ে অপারেশনে গেলে সফল হওয়ার চান্স খুব কম। পিন পয়েন্ট ইনফর্মেশন থাকলে কম ফোর্স নিয়ে অপারেশন করলে তা কাজে দেয় বেশি। কারণ, বেশি ফোর্স বিভিন্ন গ্রামে ঢোকা মানেই মুভমেন্টের খবর জানাজানি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাছাড়া ফোর্সের নিজেদের মধ্যেও ক্রস ফায়ারিংয়ের ঘটনা ঘটেছে দু’একবার। আর এরা তো আট কোম্পানি ফোর্স নিয়ে অপারেশনের প্ল্যান করছে। মানে অফিসার-জওয়ান মিলে প্রায় সাড়ে সাতশ জন।
    কিন্তু সিআরপিএফের ফোর্স মুভমেন্ট নিয়ে রবীন্দ্র ভগতকে একটা কথাও বললেন না প্রভীন ত্রিপাঠী। সেটা তাঁর এক্তিয়ারেও পড়ে না। হাজার হোক কিষেণজির ইনফর্মেশন এসেছে সিআরপিএফের কাছে। শুধু একটা অনুরোধ করলেন ১৮৪ ব্যাটেলিয়নের কমান্ডান্টকে। ‘কুশবনি গ্রামে আমার খুব রিলায়েবল একজন সোর্স আছে। অনেকদিনের। প্লিজ তাড়াহুড়ো করে কুশবনি গ্রামে ফোর্স পাঠাবেন না। তার আশপাশের গ্রাম এবং জঙ্গলে অপারেশন শুরু করুন। কুশবনি গ্রামটা ছেড়ে রাখুন ট্যাকটিকাল কারণে। কুশবনি গ্রামের পরই জঙ্গল শুরু হছে। অপারেশনে কিষেনজিরা যদি কোনওভাবে এস্কেপ করে যায়, ম্যাক্সিমাম চান্স কুশবনিতে আশ্রয় নেবে। আর সেখানে ঢুকলেই আমি আমার লোকের থেকে খবর পাব।’ 
     
    ঝাড়গ্রাম শহর থেকে যে রাস্তাটা রেল লাইন পেরিয়ে সোজা পশ্চিমদিকে যাচ্ছে সেই রাস্তায় কয়েক কিলোমিটার দূরে দহিজুড়ি মোড়। এই দহিজুড়ি মোড় থেকে দক্ষিণদিকে জামবনি যাওয়ার রাস্তা। সেই রাস্তা ধরে কয়েক কিলোমিটার এগোলেই একটা খাল। ২২-২৫ ফুট চওড়া। কালভার্ট টপকে খাল পেরোলেই একটা রাস্তা খাল বরাবর পশ্চিম দিকে চলে গিয়েছে। সেই রাস্তা ধরে আবার কিছুটা এগোলেই বাঁদিকে কুশবনি গ্রাম, এবং তারপরে শুরু হচ্ছে জঙ্গল। পুরো এলাকাটা ম্যাপে ভাল করে রবীন্দ্র ভগতকে বুঝিয়ে ওই গ্রামে সিআরপিএফকে অপারেশন না করতে বললেন প্রভীন ত্রিপাঠী। জেলা পুলিশ সুপারের কথা মেনে নিলেন ১৮৪ ব্যাটেলিয়নের কমান্ডান্ট। সিআরপিএফের সোর্স ইনফর্মেশন বলছে, দহিজুড়ি থেকে পশ্চিমদিকে বিনপুর এবং দক্ষিণদিকে জামবনি যাওয়ার রাস্তার মাঝের গ্রামগুলোর কোনও একটাতে আশ্রয় নিয়েছে কিষেণজিরা।  
    সেদিন, মানে ২০ তারিখ রাতেই ব্যাপক অপারেশন শুরু করে দিল সিআরপিএফ এবং রাজ্য পুলিশ। সঙ্গে স্পেশালাইজড ফোর্স কোবরা। অপারেশন কিষেণজি। গ্রামে গ্রামে শুরু হল তল্লাশি। ২১ তারিখ সকাল থেকে জঙ্গলে ঢুকতে শুরু করল ফোর্স। ২১ তারিখ সারাদিন গ্রামে-জঙ্গলে তল্লাশি চালিয়ে তিনজনকে গ্রেফতার করা হল। তার মধ্যে দুজন মোটামুটি ঠিকঠাক অ্যারেস্ট। একটা বাড়ি থেকে উদ্ধার হল মাওবাদীদের ল্যাপটপ এবং কিছু কাগজপত্র। কিন্তু কিষেণজি বেপাত্তা। কিষেণজি যে এলাকাতেই ছিলেন তা ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে নিশ্চিত হলেন গোয়েন্দারা। কিন্তু তাঁর হদিস কেউ দিতে পারল না।
    কিষেণজির খোঁজে যৌথ বাহিনীর এই বিরাট অভিযানের খবর ২১ তারিখ বিকেল থেকেই পৌঁছোতে শুরু করল সংবাদমাধ্যমের কাছে। যার পরিণতি হল খুব স্বাভাবিক। ২২ তারিখ সকাল থেকেই যৌথ বাহিনীর পিছু নিতে শুরু করলেন সাংবাদিকরা। কোনও কোনও সংবাদমাধ্যম সেদিন রাতে এবং ২৩ তারিখ সকালে কলকাতা থেকে সাংবাদিক পাঠিয়ে দিল ঝাড়গ্রামে। ২২ তারিখ সারাদিন বিনপুর, ঝাড়গ্রামে অভিযান চালিয়েও খালি হাতে ফিরল যৌথ বাহিনী। নানা রকম খবর আসতে শুরু করল পুলিশ এবং সিআরপিএফের কাছে। কেউ বলছে, কিষেণজি রাজ্য থেকে বেরিয়ে চলে গিয়েছেন ওড়িশায়, কেউ বা বলছে ঝাড়খন্ডে। এই আশঙ্কাটাই করেছিলেন প্রভীন ত্রিপাঠী। এত ফোর্স নিয়ে অপারেশন করলে গোপনীয়তা রক্ষা করা কঠিন। কিন্তু এখন আর কিছু করার নেই। আরও দু’একদিন অপারেশন চালানোর সিদ্ধান্ত নিলেন রবীন্দ্র ভগত এবং জেলার পুলিশ সুপার। যদি রাজ্যের বাইরে চলে না গিয়ে থাকেন, তবে কিষেণজি আছেন আশপাশেই কোথাও। ইনফর্মেশনে কোনও ভুল নেই। সোর্স ইনফর্মেশনকে কনফার্ম করেছে ধৃতরা। কিন্তু কোথায় মোস্ট ওয়ান্টেড মাওয়িস্ট লিডার? 
    ২৩ তারিখ সকাল থেকে ফের একটা যুদ্ধ যুদ্ধ পরিবেশে অপারেশন শুরু করল যৌথ বাহিনী। যুদ্ধ যুদ্ধ মানে আধা সামরিক বাহিনী এবং পুলিশের একতরফা তল্লাশি অভিযান। আর কোনও কোনও জায়গায় ফোর্সের সঙ্গে দু’চার কিলোমিটার তফাত রেখে সাংবাদিকদের মুভমেন্ট। সেদিন সকাল থেকে বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমে টানা খবর চলছে কিষেণজির বিরুদ্ধে অভিযানের। কিন্তু সত্যি কথা বলতে, দু’দিন, তিন রাত টানা অপারেশন চালিয়ে তখন অনেকটাই হাল ছেড়ে দিয়েছে ১৮৪ সিআরপিএফ ব্যাটেলিয়ন এবং পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ। সারাদিন অপারেশনের পর বিকেলে ঝাড়গ্রামে নিজের ব্যাটেলিয়নে ফিরে গেলেন রবীন্দ্র ভগত। প্রভীন ত্রিপাঠী চলে গেলেন মেদিনীপুর শহরে। আগের বেশ কয়েকবারের মতো এবারও হাত ফস্কে বেরিয়ে গেলেন কিষেণজি!
     
    ২৩ নভেম্বর সন্ধেবেলা নিজের অফিসে বসে রয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার। টেলিভিশনে দেখছেন, টানা খবর চলছে যৌথ বাহিনীর অভিযান নিয়ে। কিন্তু তিনি তো নিজে জানেন, আর আশা নেই বিশেষ। টানা ফোন আসছে সাংবাদিকদের। কোনও ফোন ধরছেন, কোনওটা ধরছেন না। অনবরত ফোনে কথা হচ্ছে মহাকরণের সিনিয়র অফিসারদের সঙ্গে। আবার ফোন বাজল। ফোনের দিকে তাকিয়েই চমকে উঠলেন প্রভীন ত্রিপাঠী।
    ‘স্যার, আপনার সঙ্গে দেখা করতে চাই। দুপুরে সুচিত্রা গ্রামে ঢুকেছে।’
    ‘কী বলছ? সত্যি?’ উত্তেজনা চেপে রাখতে পারলেন না পুলিশ সুপার। ‘এখনই আমার অফিসে চলে এস।’
    যিনি ফোন করলেন তাঁর নাম না লিখতে আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কারণ, সেই ব্যক্তির নিরাপত্তা। এই ব্যক্তির বাড়ি কুশবনি গ্রামে। প্রভীন কুমার ত্রিপাঠীর সেই রিলায়েবেল সোর্স। যাঁর কথা ভেবেই কুশবনি গ্রামে ফোর্স না পাঠাতে বলেছিলেন রবীন্দ্র ভগতকে। আচমকা হাজির হওয়া তাঁর ফোনে আবার আশার আলো দেখলেন দুপুরেই হাল ছেড়ে দেওয়া পুলিশ সুপার।
    ধরা যাক কুশবনির সেই বাসিন্দার নাম এক্স। পিসিপিএ’র সত্রিয় সদস্য এক্স এক সময় সিপিআইএম করতেন। সিপিআইএম করার অপরাধেই কয়েক বছর আগে তাঁকে একবার গ্রামে গাছে বেঁধে পিটিয়েছিলেন সুচিত্রা মাহাতো। একই সঙ্গে সেদিন ওই গ্রামেরই আরও কয়েকজনকে সিপিআইএম করার জন্য শাস্তি দিয়েছিল মাওবাদীরা। এক্স সেদিনের ঘটনা ভোলেননি। মাওবাদীদের ভয়ে ২০০৯ সাল থেকে পিসিপিএ করতে বাধ্য হলেও, প্রকাশ্যে গাছে বেঁধে মারের সেই ঘটনা তাড়া করে ফিরত তাঁকে। বহুদিন ধরেই তাঁর সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ রাখতেন প্রভীন ত্রিপাঠী। একদিন কথায় কথায় জেলার পুলিশ সুপারকে এক্স বলেছিলেন, ‘স্যার, বদলা আমি নেবই। আমাকে গাছে বেঁধে মেরেছে সূচিত্রা। চান্স পেলেই ধরিয়ে দেব সূচিত্রাকে। আপনাকে জানাবো, শুধু দেখবেন আমার যেন কিছু না হয়।’ তখন ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার ছিলেন প্রভীন ত্রিপাঠী। এক্সের সঙ্গে তাঁর এই কথা হয়েছিল দেড়-দু’বছর আগে। এতদিন বাদে হঠাৎই এক্সের ফোন, ‘স্যার, আপনার সঙ্গে দেখা করতে চাই, দুপুরে সুচিত্রা গ্রামে ঢুকেছে।’  
    মাওবাদী এলাকায় অল্পসল্প কাজ করা অফিসারও জানেন, বহু ছেলে-মেয়ে যেমন ছোটবেলায় মাওবাদী দলে যোগ দিতে বাধ্য হয় শুধুমাত্র খাবার-দাবারের চিন্তা করতে হবে না বলে, ঠিক তেমনই অনেকে যোগ দেয় কারও ওপর ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকেও। কখনও হয়তো শাসক দলের স্থানীয় কোনও নেতা কারও ওপর অত্যাচার করেছে, হয়তো কোনওদিন তল্লাশির নামে পুলিশ কারও বাড়িতে হানা দিয়ে মারধোর করেছে। এই সব থেকে এক্কেবারে ব্যক্তিগত আক্রোশে বদলা নিতেও মাওবাদী দলে নাম লেখানোর সংখ্যা কম নয়। আবার উল্টোটাও ঘটেছে একইভাবে। মাওবাদীদের হাতে পরিবারের কারও খুন হওয়া কিংবা অন্য কোনও ‘শাস্তি’র জন্যও বদলা নিতে অনেকে সিপিআইএমে নাম লিখিয়েছিলেন। সুচিত্রার ওপর এমনই বদলার মানসিকতা থেকে এক্স সেদিন সন্ধ্যায় পুলিশ সুপারকে ফোন করেছিলেন। 
    টেবিলের ড্রয়ার টেনে কিষেণজির ছবি বের করলেন প্রভীন ত্রিপাঠী। কী যে হচ্ছে গত ১৫ দিন, একমাস ধরে, নিজের কাছেই তখন ম্যাজিকের মতো লাগছে তাঁর। কেউ হয়তো বিশ্বাসই করবে না, এতদিন ধরে ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুরে কাজ করছেন, অথচ, মাস খানেক আগেও কিষেণজির কোনও সাম্প্রতিক ছবি ছিল না তাঁদের কাছে। নাগালের মধ্যে কখনও পেলেও কীভাবে তাঁকে চিনবেন তা নিয়ে সংশয় ছিল নিজেরই। কয়েকদিন আগে হঠাৎই ঝাড়গ্রামের একটি সাইবার ক্যাফের এক কর্মী দেখা করতে যান ঝাড়গ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়ার সঙ্গে। সঙ্গে করে নিয়ে গেলেন একটি ল্যাপটপ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে বললেন, ‘স্যার, একজন ল্যাপটপটা সারাই করতে দিয়ে গিয়েছে আজই। ল্যাপটপের ডিস্কে কিছু ইনফর্মেশন, কিছু ছবি রয়েছে। দেখে মনে হচ্ছে মাওবাদীদের। তাই আপনার কাছে নিয়ে এলাম। আমার কথা যেন স্যার কেউ জানতে না পারে।’
    সেই ল্যাপটপেই পাওয়া গেল কিষেণজির ছবি। তাঁর কম বয়সের যে ছবি প্রভীন ত্রিপাঠী কিংবা অলোক রাজোরিয়াদের কাছে ছিল তার সঙ্গে কোনও মিল নেই। চেহারায় বয়সের ছাপ স্পষ্ট, মনে হবে ৭০ বছর। চোখে ঔজ্জ্বল্য আছে, কিন্তু চেহারা অনেক ভাঙা। মাথায় ছোট করে কাটা চুল।
    ছবিটাকে টেবিলে রেখে সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে চলে এলেন এক্স।
    ‘স্যার, আজ দুপুরে সুচিত্রা গ্রামে এসেছে। আমার বাড়িতেই এসেছে। আমার হেল্প চাইল। বলল, গ্রামে অন্য কাউকে বিশ্বাস করতে পারছে না।’
    ‘একা এসেছে?’
    ‘না স্যর। ওর সঙ্গে দুজন আছে। একটা বুড়ো মতো লোক, আর ১৬-১৭ বছরের একটা বাচ্চা ছেলে। খাবার আর জল চাইল। দিলাম। বলল, ‘‘ফোর্স তাড়া করছে।’’ চাদর আর কম্বল চাইল। তাও দিয়েছি। বলেছি, এখন কোথাও যাওয়ার দরকার নেই। দু’একদিন গ্রামেই থেকে যেতে।’
    ‘বুড়ো লোকটাকে তুমি চেন? আগে দেখেছ কখনও?’ প্রশ্ন করলেন প্রভীন ত্রিপাঠী। উত্তেজনা চাপতে পারলেন না পুলিশ সুপার। 
    ‘না, স্যার। প্রথম দেখলাম। বাচ্চা ছেলেটাকেও আগে দেখিনি।’
    এবার টেবিলের ওপর রাখা কিষেণজির ছবিটা এক্সকে দেখালেন প্রভীন ত্রিপাঠী। 
    ‘হ্যাঁ স্যার। এই বুড়োটাই সুচিত্রার সঙ্গে এসেছে।’
    উত্তেজনায় উঠে দাঁড়ালেন পুলিশ সুপার। ‘এখন কোথায় আছে ওরা?’
    ‘স্যার, গ্রামের ঠিক বাইরে যেখানে কুশবনির জঙ্গল শুরু হচ্ছে, সেখানে একটা গাছের তলায় বসিয়ে রেখে এসেছি। ওরাই বলেছে গ্রামে থাকলে বিপদ হতে পারে। লোকজন জানাজানি হয়ে যাবে। সব গ্রামে নাকি জোর তল্লাশি চলছে। স্যার, রাতের খাবারও দিয়ে এসেছি ওদের। কাল সকালে আবার আমাকে খাবার নিয়ে যেতে বলেছে। সুচিত্রা যে এসেছে গ্রামের আর কেউ জানে না স্যার।’
    এক্সের মাথায় তখনও ঘুরছে সুচিত্রার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত প্রতিশোধস্পৃহা। তখনও তিনি জানেন না সুচিত্রা মাহাতো নয়, ওই বুড়ো লোকটার জন্যেই বহু বছর ধরে হন্যে হয়ে ঘুরছে অন্তত পাঁচ রাজ্যের পুলিশ। ওই বুড়ো লোকটাকে ধরতেই কয়েক’শ অপারেশন চালিয়েছে অসংখ্য আধা সামরিক বাহিনী জওয়ান। কিন্তু বারবার হাত ফস্কে বেরিয়ে গিয়েছেন কোটেশ্বর রাও ওরফে কিষেণজি। প্রভীন ত্রিপাঠি জানেন, যা করতে হবে ঠান্ডা মাথায়, কিন্তু খুব দ্রুত। এই মুহূর্তের পরিস্থিতি কাল নাও থাকতে পারে। আর বেশি লোককে জানানো যাবে না। কাউকেই জানানো যাবে না ইন ফ্যাক্ট।
    ‘তুমি ওদের সকালের খাবার কখন দিতে যাবে বলেছ?’
    ‘স্যার টাইম কিছু বলিনি। বলেছে তাড়াতাড়ি দিতে। ডিম, পাউরুটি এই সব।’
    ‘ঠিক আছে। একটু সকাল সকাল খাবার দিয়ে তুমি আমাকে ফোন করবে। তারপর আমি বলব কী করতে হবে। আর এ নিয়ে কারও সঙ্গে কথা বলবে না।’
     
    এক্স বেরিয়ে যেতেই একা প্ল্যানিংয়ে বসলেন। সিআরপিএফের কমান্ডান্ট রবীন্দ্র ভগত কিংবা কোবরার কমান্ডান্ট দীপক চট্টোপাধ্যায়কেও কিছু জানালেন না। কোবরাও একই সঙ্গে তিন দিন ধরে জঙ্গলে অপারেশন চালাচ্ছে। কিন্তু এই স্পেসিফিক ইনফর্মেশনটা এসেছে রাজ্য পুলিশের কাছে। যতই যৌথ অপারেশন হোক না কেন, বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে এইটুকু কম্পিটিশন লেগেই থাকে যে কোনও বড় অপারেশনের সময়। ২৩ নভেম্বর, ২০১১ রাতে প্রভীন কুমার ত্রিপাঠী শুধু কথা বললেন ঝাড়গ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়ার সঙ্গে। তারপর নিজে বসলেন প্ল্যানিংয়ে।
    ২৪ নভেম্বর ২০১১। সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ ডিম, পাউরুটি, কলা নিয়ে এক্স গেলেন কুশবনি গ্রামের একদম সীমানায়। বাড়ি থেকে মিনিট পনেরোর হাঁটা। রাস্তা থেকে কম-বেশি পাঁচশ মিটার দূরে জঙ্গলে একটা বড় গাছের নীচে উই ঢিবি। তার আড়ালে মাটিতে বিছানার চাদর পাতা। তাতে বসে রয়েছেন সুচিত্রা আর ওই বুড়ো লোকটা। ফুট চারেক দূরে দাঁড়িয়ে ১৬-১৭ বছরের ছেলেটা। ছেলেটার হাতে ধরা বন্দুক। সুচিত্রা আর বুড়ো লোকটার পাশে রাখা আরও দুটো রাইফেল। বিশেষ কোনও কথা হল না ওদের। সুচিত্রার পাশে ভাঁজ করে রাখা কম্বলের ওপর খাবারের প্যাকেট দুটো নামিয়ে রাখলেন এক্স। ‘গ্রামে পুলিশ ঢুকেছে?’ জিজ্ঞেস করলেন সুচিত্রা। 
    ‘না। দুপুরে খাবার নিয়ে কখন আসব?’
    ‘কেউ জানতে পারেনি তো আমাদের কথা? আজকের দিনটা হয়তো থাকতে হবে এখানে।’ ফের বললেন সুচিত্রা মাহাতো। বয়স্ক মানুষটার মুখে কোনও কথা নেই। বাচ্চা ছেলেটাও পাথরের মতো চোখ করে দাঁড়িয়ে আছে হাতে রাইফেল নিয়ে।
    ‘না না।’ যত তাড়াতাড়ি এখান থেকে চলে যাওয়া যায়, ভাবতে ভাবতেই স্বাভাবিক গলায় এক্স উত্তর দিলেন। 
    ‘একটা-দেড়টা নাগাদ তিনজনের আন্দাজে দুপুরের খাবার দিয়ে যেও কিছু।’
    ‘আর কিছু লাগবে? কিছু আনতে হবে?’ দু’পা পিছিয়ে প্রশ্ন করলেন এক্স।
    ‘না। আর কিছু লাগলে দুপুরেই বলে দেব।’
    দ্রুত পিছন ঘুরে কুশবনির জঙ্গল থেকে বেরোলেন এক্স। পাঁচশ মিটার রাস্তা মাত্র মাঠ থেকে। কিন্তু তাতেই কপালে, নাকে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। মাঠে উঠে গ্রামে নিজের বাড়ির রাস্তা ধরলেন এক্স। 
    গ্রামে ঢোকার ঠিক আগে আশপাশে সতর্ক চোখ রেখে ফোন করলেন প্রভীন ত্রিপাঠীকে। ‘স্যার, ওরা তিন জন একই জায়গায় বসে আছে। আমি এই মাত্র খাবার দিয়ে গ্রামে ফিরলাম। দুপুর দেড়টা নাগাদ যেতে বলেছে খাবার নিয়ে।’
    ‘ঠিক আছে। তুমি ওখানেই থাক, আমি জানাব কী করতে হবে।’ ঘড়ি দেখলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার। সাড়ে আটটা বাজে।
     
    এক্সের ফোন ছেড়েই মেদিনীপুর রেঞ্জের ডিআইজি বিনীত গোয়েলকে ফোন করলেন প্রভীন ত্রিপাঠী। ‘স্যার, একটা খবর ম্যাচিওর করেছে। কিষেণজিকা পাক্কা লোকেশন মিলা হ্যায় স্যার। আভি তক সিআরপিএফ’কো বাতায়া নেহি। স্যার, উই আর প্রিপেয়ারিং ফর অপারেশন।’ 
    ‘ভেরি গুড। হোয়েন ডু ইউ ওয়ান্ট টু স্টার্ট?’
    ‘স্যার, ইন দ্য আফটারনুন। বাট বিফোর দ্যাট আই ওয়ান্ট টু টেক আ রিস্ক। রেকি করনা চাহতে হ্যায় হাম।’
    ‘হোয়াট?’
    ‘ইয়েস স্যর। হাম খুদ যায়েঙ্গে। অপারেশন কে পহলে হাম একবার খুদ দেখনা চাহতে হ্যায় কী ওহ এক্স্যাক্ট কাহা পর হ্যায়। কিসিকো পাতা নেহি চলেগা’
    ‘ওকে। বাট ডোন্ট টেক এক্সট্রা রিস্ক। আয়াম কামিং টু ঝাড়গ্রাম। বেস্ট অফ লাক।’
    প্রথামাফিক সিনিয়র অফিসারকে জানিয়ে ঝাড়গ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়াকে ফোন করলেন প্রভীন ত্রিপাঠী। বললেন, রেডি হয়ে নিতে। তারপর দ্রুত তৈরি হয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার রওনা দিলেন ঝাড়গ্রাম শহরের দিকে। সকাল ১১টা নাগাদ ঝাড়গ্রামে পুলিশ সুপারের অফিসে পৌঁছালেন প্রভীন ত্রিপাঠী। ততক্ষণে সেখানে হাজির অলোক রাজোরিয়াও।
    খড়গপুর থেকে রওনা দিয়ে সকাল সাড়ে ১১ টার মধ্যে ঝাড়গ্রামে পুলিশ সুপারের অফিসে পৌঁছে গেলেন ডিআইজি বিনীত গোয়েলও। তারপরই ম্যাপ নিয়ে বসে পড়লেন অপারেশনের বেসিক প্ল্যানিংয়ে। এই ফাইনাল প্ল্যানিংয়ে ডাকা হল রাজ্য পুলিশের কাউন্টার ইনসারজেন্সি ফোর্স (সিআইএফ) এবং কোবরার অফিসারদের। বিনীত গোয়েল বসে গেলেন অপারেশনের প্ল্যানিংয়ে। একই সময় একটা সাদা স্করপিও গাড়িতে রেকি করতে বেরোলেন প্রভীন ত্রিপাঠি এবং অলোক রাজোরিয়া। গাড়ির সামনে শুধু পুলিশ সুপারের সিকিউরিটি অফিসার। গাড়িতে উঠেই এক্সকে ফোন করলেন প্রভীন ত্রিপাঠী। যে জায়গায় আগের দিন কিষেণজিদের বসিয়ে রেখে এসেছেন এক্স, ঠিক সেই জায়গাটা তাঁকে নিয়ে গিয়ে একবার শুধু দূর থেকে নিজের চোখে দেখে আসতে চান তিনি। কিন্তু তাঁর এই রেকির প্ল্যানিং কিছু এক্সকে বললেন না। দহিজুড়ি মোড় থেকে জামবনির দিকে কিছুটা এগোলেই খাল। সেই খালের কাছে এক্সকে অপেক্ষা করতে বললেন পুলিশ সুপার। 
     
    ক্রমশ... 
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ২১ মার্চ ২০২৪ | ১২৭২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • r2h | 165.***.*** | ২২ মার্চ ২০২৪ ২২:২১529698
  • বিতনুবাবুকে অনেকে ধন্যবাদ, ময়ূরঝর্ণার পর কিষেণজি মৃত্যু রহস্য গুরুতে প্রকাশ করার জন্য।
    ময়ূরঝর্ণা বেশিরভাগটাই এক টানা পড়েছি। একটি বিশেষ সময়ের দলিল, রাজনীতির দান চালাচালি, এবং অত্যন্ত মানবিক কিছু অবজার্ভেশন। দময়ন্তীদি মেয়েদের গায়ে গরম কাপড় না থাকার ব্যাপারটা নিয়ে বলেছিল। ঐরকম আরো কিছু কিছু জিনিস, টানটান ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে হঠাৎ করে চেপে ধরে - যেমন একটি কিশোর ছেলের আপেল না চেনা। আপাত সামান্য কিন্তু কীবিশাল ফারাক।

    সাগ্রহ অপেক্ষায় থাকলাম, পরবর্তী পর্বগুলির জন্য।

    ময়ুরঝর্ণা বিষয়ে একটি সামান্য ফিডব্যাক - লেখাটি খুব দ্রুতচালে এগিয়েছে - উপন্যাস হিসেবে আরেকটু বিস্তার আশা করা যায় বোধহয়।
  • অসিতবরণ বিশ্বাস | 2409:4061:2dc5:83bf::d349:***:*** | ০৫ এপ্রিল ২০২৪ ১৩:১৫530257
  • ভালো লাগছে। ইতিহাসকে ধরার চেষ্টা করেছেন লেখক। সাবলীল লেখা।বইটি কি পাওয়া যায়? 
    না হয় ধারাবাহিক ভাবেই পড়ে নেব।
    কিষেণজির মৃত্যু আদ্যন্ত একটি খুন।
  • বিতনু চট্টোপাধ্যায় | ০৫ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:৪৮530258
  • দে'জ পাবলিশিং, আদি দে বুক স্টোর, দে বুক স্টোর, বুক ফ্রেন্ড অথবা বর্ণপরিচয় মার্কেটের দোতলায় কলাভৃৎ-এর কাউন্টারে কিষেণজি মৃত্যু রহস্য পাওয়া যাবে। এছাড়া 
    এ অনলাইন অর্ডার করলে পাওয়া যাবে। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে মতামত দিন