‘আমি তখন রাজ্য পুলিশের ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চে (আই বি) পোস্টেড। সেটা আটের দশকের গোড়া। রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকার তৈরি হয়েছে। কলকাতায় বসে শুনতে পেতাম ঝাড়খন্ড পার্টি যথেষ্ট শক্তিবৃদ্ধি করেছে। অথচ আমি যখন ছ’য়ের দশকের মাঝামাঝি কাজ করেছি, ঝাড়খন্ড পার্টি ছিল না। কোনও গোলমালই ছিল না ঝাড়গ্রামে। অথচ ১২-১৪ বছরের মধ্যে পরিস্থিতি পুরোপুরি পালটে গেল। কলকাতায় বসে খবর পেতাম, সিপিআইএমের সঙ্গে ঝাড়খন্ডিদের গণ্ডগোল লেগেই রয়েছে রোজ। ঠিক করলাম ঝাড়গ্রাম যাব। দেখতে যাব সেখানকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি কী? কেন এত সংঘর্ষ হচ্ছে? আর তার চেয়েও বেশি দেখার আগ্রহ ছিল একটা অন্য জিনিস দেখার। সেটা হল, সিপিআইএমের নেতৃত্বে বাম সরকারের আমলে এই আদিবাসী এলাকার কতটা পরিবর্তন হল কয়েক বছরে। গরিব মানুষের জীবনযাত্রায় আদৌ কোনও বদল হল কিনা!
সেই সময় রাজ্য পুলিশে এসপি পদমর্যাদার এক অফিয়ার ছিলেন, তাঁর নামটা বলতে চাই না। তিনি ছিলেন সাঁওতাল সম্প্রদায়ের। ঝাড়গ্রামেই বাড়ি। ওয়েস্ট বেঙ্গল পুলিশ সার্ভিসের পরীক্ষায় পাশ করে চাকরিতে ঢুকেছিলেন। পরে প্রমোশন পেয়ে আইপিএস হন। যাওয়ার কয়েকদিন আগে তাঁকে বললাম আমার সঙ্গে ঝাড়গ্রাম যেতে। বললাম, ‘‘তুমি ওখানকার মানুষ। সঙ্গে থাকলে আমার কাজের সুবিধে হবে।’’ আদিবাসীরা বাইরের লোকের সঙ্গে খুব একটা খোলামেলা কথা বলে না। ভেবেছিলাম ও সঙ্গে থাকলে আদিবাসীদের সঙ্গে কথা বলতে, ওঁদের সমস্যা বুঝতে সুবিধে হবে। ও রাজিও হল।
যেদিন আমাদের ঝাড়গ্রাম যাওয়ার কথা, তার আগের দিন আমার অফিসে এল ওই অফিসার।
‘‘স্যার, আমি আপনার সঙ্গে যেতে পারব না।’’
আমি তো অবাক। কারণ জানতে চাইলাম। বললাম, ‘‘তুমি যাবে ভেবে সব প্ল্যান করেছি।’’
প্রথমে কিছুই বলে না, বারবার জিজ্ঞেস করায় বলল, ‘‘স্যার, আমি সাঁওতাল বলে আপনি আমাকে ঝাড়গ্রামে নিয়ে যেতে চাইছেন। আমি সাঁওতাল না হলে আপনি আমাকে একথা বলার সাহস পেতেন না।’’
‘‘ঠিক উলটো। আমি ভেবেছিলাম, তুমি সঙ্গে থাকলে ওখানকার অবস্থা বুঝতে আমার সুবিধে হবে। কারণ, ওখানকার মানুষের মধ্যে তোমার একটা গ্রহণযোগ্যতা আছে। তুমি ওখানে বড় হয়েছ।’’
‘‘আপনারা কলকাতার লোক, আমাদের সেন্টিমেন্ট বোঝেন না। আমাকে অপমানজনক অবস্থার মধ্যে ফেলতে চাইছেন। স্যার, আমার পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয়।’’
এরপর তো আর কোনও কথা হয় না। ওকে বলে দিলাম, যেতে হবে না।’’
চল্লিশ, পঞ্চাশ বছরের পুরনো কথা স্মৃতি থেকে অনর্গল বলার ক্ষমতা বেশি লোকের থাকে না। তুষার তালুকদারের আছে। তিনি কথা বলেন একটু থেমে থেমে। জিজ্ঞেস করলাম, ‘কিন্তু ওই সাঁওতাল অফিসার কেন আপনার সঙ্গে ঝাড়গ্রামে যেতে চাননি বুঝতে পেরেছিলেন?’
‘পেরেছিলাম। ঝাড়গ্রামে পৌঁছে। ওখানে গিয়ে আদিবাসী এলাকায় অনেকের সঙ্গে কথা বললাম। ১৯৬৫-৬৬ সালে শেষ যখন দেখেছিলাম, তার থেকে পরিস্থিতি বিশেষ কিছুই বদলায়নি। শুধু সরকার পাল্টেছে। মানুষগুলোর অবস্থা প্রায় একই রকম আছে। একইরকম দারিদ্র। কিন্তু সবচেয়ে বেশি অবাক করল, সাধারণ গরিব আদিবাসী মানুষের পুলিশকে ভয়। এটা কিন্তু আগে ছিল না। আমি যখন এসডিপিও ছিলাম, গাড়িতে চেপে অনেক গ্রামে ঘুরেছি। পুলিশ নিয়ে মানুষের কোনও হেলদোল ছিল না। বরং পুলিশ দেখলে মানুষ খুশি হোত। ভাবত, তাঁদের গরিব, পিছিয়ে পড়া গ্রামে সরকারি লোক এসেছে। এটাই তখন তাঁদের কাছে অনেক বড় ব্যাপার ছিল। কিন্ত এবার গিয়ে দেখলাম একটা অদ্ভুত জিনিস। পুলিশের গাড়ি ঢুকলেই সেই আটের দশকে জনশূন্য হয়ে যাচ্ছে গ্রাম। লোকজন সব বাড়িতে ঢুকে যাচ্ছে। বিশেষ করে পুরুষরা। আর মহিলারা দরজার আড়াল থেকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখছেন আমাদের। পুলিশ দেখলেই সবার চোখেমুখে ভয়ের ছাপ। যেন পরাধীন ভারতবর্ষে সংগ্রামীদের ডেরায় ব্রিটিশ পুলিশ এসেছে। কেন রাষ্ট্রকে এত ভয় পাচ্ছে এই নিরীহ আদিবাসী মানুষগুলো? কী এমন করেছে পুলিশ, এই প্রশ্নটাই সেবার ঝাড়গ্রামে গিয়ে আমাকে সবচেয়ে নাড়া দিয়েছিল।
দু’একদিন ঝাড়গ্রাম মহকুমার বিভিন্ন এলাকা ঘোরার পর দেখা করলাম ঝাড়খন্ড পার্টির নেতা নরেন হাঁসদার সঙ্গে। নানা কথার পর নরেন হাঁসদাকে বললাম, ‘‘দারিদ্র তো যেমন ছিল, প্রায় তেমনই আছে। ১৬-১৭ বছর আগের আর এখনকার মধ্যে আরও একটা মিল দেখলাম। সাঁওতালদের মধ্যে যাঁরা ভাল লেখাপড়া করে একটু বড় হয়ে যায়, শহরে গিয়ে ভাল চাকরি করে, তাঁরা আর নিজেদের এলাকার সঙ্গে, শিকড়ের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ রাখে না। এটা আপনাদের সমাজের একটা ট্র্যাজেডি।’’
‘‘কেন বলছেন একথা।’’
গভীর বেদনা নিয়ে ওই সাঁওতাল পুলিশ অফিসারের কথা বললাম নরেন হাঁসদাকে।
‘‘তবে শুনুন। ওই ছেলেটি গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে আদিবাসী কোটায় আপার ডিভিশন ক্লার্কের চাকরি পেয়েছিল এজি বেঙ্গলে। চাকরি নিয়ে কলকাতায় যাওয়ার পর ও এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ আস্তে আস্তে কমিয়ে দেয়। তাও মাঝে মাঝে গ্রামে যাতায়াত করত। পরে পুলিশে চাকরির সরকারি পরীক্ষা দেয়। এরপর ও এজি বেঙ্গলেই ওর এক সহকর্মীকে বিয়ে করে। সাঁওতালরা নিজেদের বাইরে বিয়ে করলে তাঁদের সামাজিক একটা আপত্তি হয় ঠিকই, কিন্তু তা তাঁরা মেনেও নেয়। সমস্ত জাতির মানুষেরই নিজস্ব কিছু সামাজিক রীতি আছে। সাঁওতাল সমাজে বাইরের কাউকে বিয়ে করলে তা মেনে নেওয়ার শর্ত হচ্ছে, তাঁকে গ্রামে এসে সাঁওতালি মতে আবার বিয়ে করতে হবে। তবেই তা এখানে সামাজিক স্বীকৃতি পাবে। ওই অফিসার গ্রামে ফিরে সাঁওতালি মতে আর বিয়ে করেনি। তাই ও আপনার সঙ্গে এখানে আসতে ভয় পেয়েছে। ও জানে এখানকার সমাজ ওকে কখনও মেনে নেবে না।’’
নরেন হাঁসদার কথায় বুঝতে পারলাম, কেন ওই অফিসার আমার সঙ্গে আসতে চাননি। কিন্তু একটা প্রশ্ন মনের মধ্যে খোঁচা দিতে থাকল, কোনও পিছিয়ে পড়া এলাকার কেউ একজন প্রতিষ্ঠিত হলে তাঁকে দেখে পরের প্রজন্ম অনুপ্রাণিত হয়। কিন্তু সাঁওতালদের মধ্যে যে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বাইরে চলে যায়, তাঁকে যদি তাঁর সমাজের লোক ব্রাত্য করে দেয়, বা সে নিজেকে যদি বিচ্ছিন্ন করে নেয়, তবে এঁরা এগোবে কীভাবে?
‘‘এছাড়া একটা অমিলও দেখলাম এবার। যা আমি যখন চাকরি করেছি তখন ছিল না। মানুষ পুলিশকে দেখে ভয়ে পালাচ্ছে। এটা কেন হল?’’ জিজ্ঞেস করলাম নরেন হাঁসদাকে।
‘‘মানুষের আর দোষ কী? আদিবাসীদের অপরাধ, তারা ঝাড়খন্ড পার্টিকে সমর্থন করে। আমাদের সঙ্গে থাকে। আর আপনাদের, মানে পুলিশকে সঙ্গে নিয়েই তো সিপিআইএম এখানে এলাকা দখলে নেমেছে। বাড়ি বাড়ি অত্যাচার করছে। আর পুলিশ আমাদের লোককেই গ্রেফতার করছে। মিথ্যে কেস দিচ্ছে। গরিব আদিবাসীদের বাড়ি ভেঙে দিচ্ছে, পুড়িয়ে দিচ্ছে। মানুষ কীভাবে পুলিশকে বিশ্বাস করবে? তবে আপনাকে বলছি, এভাবে আদিবাসীদের অত্যাচার করে সিপিআইএম এলাকা দখল করতে পারবে না। এখন হয়তো গরিব আদিবাসী ভয়ে পালাচ্ছে আপনাদের দেখে, তবে এমনটা বেশি দিন চলবে না। তারা রুখে দাঁড়াবেই।’’
নরেন হাঁসদার পর দেখা করলাম বিনপুরের সিপিআইএম নেতা শম্ভু মান্ডির সঙ্গে। শম্ভু মান্ডি বিধায়কও হয়েছেন একাধিকবার। একই প্রশ্ন করেছিলাম তাঁকেও। জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘‘এই যে আপনারা ক্ষমতায় এলেন। এত কিছু করার কথা বলছেন। কিন্তু সত্যি কি আপনার স্বজাতির অবস্থার কিছু পরিবর্তন হয়েছে?’’
শম্ভু মান্ডি আমাকে পালটা জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘আপনি কী মনে করেন?’’
‘‘বিশেষ কিছুই পরিবর্তন হয়নি। যা অবস্থা ছিল প্রায় তাই আছে।’’
‘‘কেন বলছেন একথা?’’
‘‘কেউ হয়তো পঞ্চায়েত সদস্য হচ্ছে, ভোটে দাঁড়াচ্ছে, বাচ্চারা কিছু কিছু স্কুলে যাচ্ছে, কিছু রাস্তা-ঘাট হচ্ছে, সবই ঠিক। এসব তো প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মেই হওয়ার কথা। কিন্তু কেউ প্রতিষ্ঠিত হয়ে বাইরে চলে গিয়ে যদি নিজের সামাজিক পরিচয়কে অস্বীকার করে, নিজেকে নিজের সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে নেয়, তবে গোটা সাঁওতাল সমাজের উন্নতি হওয়া কঠিন।’’
‘কী উত্তর দিয়েছিলেন শম্ভু মান্ডি? এই যে পিছিয়ে পড়া মানুষদের মধ্যে থেকে কেউ সামাজিক, অর্থনৈতিকভাবে উন্নতি করে ফেললে, আর তারপরই নিজের শ্রেণিআনুগত্য পালটে নেওয়ার প্রবণতা, তা নিয়ে সিপিআইএম নেতার জবাব কী ছিল? তাছাড়া এই একই যুক্তি কি সিপিআইএম নেতাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য?’ জিজ্ঞেস করলাম তুষার তালুকদারকে।
‘হ্যাঁ, অবশ্যই প্রযোজ্য। শম্ভু মান্ডি সেদিন নির্দিষ্ট কোনও উত্তর দেননি। বলেছিলেন, ‘‘আপনারা শহরে থাকেন। সিপিআইএম আমলে এখানকার মানুষের কী উন্নতি হচ্ছে খবর রাখেন না। গরিব লোক পঞ্চায়েত চালাচ্ছে এটা যথেষ্ট উন্নতি নয়?’’ তবে ওঁনার ব্যাখ্যার সঙ্গে আমি একমত নই। সিপিআইএম নেতাদের মধ্যেও আমি একই প্রবণতা দেখেছি। ওঁরা একবার এমএলএ, এমপি হয়ে গেলে, একবার শহরে চলে গেলে নিজেদের শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। শম্ভু মান্ডি, পুলিনবিহারী বাস্কে থেকে শুরু করে কোনও সাঁওতাল, আদিবাসী নেতাই নিজেদের শিকড়ের সঙ্গে বিশেষ যোগাযোগ রাখেনি। দরকার ছিল, নিজেকে ডিক্লাস করে গরিব, আদিবাসীদের সঙ্গে তাঁদের মতো করে মেশার। কিন্তু হল ঠিক উল্টোটা। আদিবাসী সমাজ থেকে উঠে এসে নেতা, মন্ত্রী হয়ে তাঁরা নিজেদের সমাজ থেকেই নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলল। এর ফলে, আদিবাসী মানুষগুলোও পরে ওঁদের আর নিজেদের লোক বলে মানতে অস্বীকৃত হয়েছে। যে মানুষটা আদিবাসী না হয়েও ওঁদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার সঙ্গে মিশে গিয়েছিল, সেই ডহর সেনকে তো ওঁর পার্টিই ডিসকার্ড করে দিল। আসলে ’৭৭ সালে সিপিআইএম সরকার গঠন করল ঠিকই, কিন্তু রুল অফ দ্য গেম খুব একটা পাল্টাতে পারল না। প্রচলিত আইন-কানুন দিয়ে গরিব মানুষের জন্য রাতারাতি কিছু করা কঠিন। কিন্তু সিপিআইএম প্রচলিত আইন-কানুনের বাইরে বেরোতে পারল না। তবে পঞ্চায়েত চালানোর যে কথা শম্ভু মান্ডি বলেছিলেন তা কিছুটা ঠিকই। কিন্তু এক সময়ে সেই পঞ্চায়েতেও তৈরি হল একদলীয় শাসন। যেখানে অধিকার ছিল একমাত্র সিপিআইএম নেতা-কর্মীদেরই। এতে মানুষের ক্ষোভ আরও বেড়ে যায়।’
‘আপনি এসডিপিও থাকাকালীন স্ত্রী খুনে অভিযুক্ত যে সাঁওতাল লোকটির মামলা অন্যভাবে করেছিলেন, তাঁর কথা মনে আছে? কখনও খোঁজ নিয়েছিলেন তাঁর কী হল শেষমেশ?’
‘না, আর খোঁজ নিইনি। আপনি জানেন?’
তুষার তালুকদারের কথা বলতে বলতে যাচ্ছি, রাস্তার দু’দিকে তাকাইনি খুব একটা। তাকালেও মন ছিল না। হঠাৎ চোখে পড়ল একটা পেল্লাই বাড়ি, তিনতলার বারান্দায় লাইন দিয়ে শাড়ি, ব্লাউজ মেলা। মুহূর্তের মধ্যে পেরিয়ে গেলাম বাড়িটা। এখন আর গাড়ি থামাব না, ফেরার সময় খোঁজ নিতে হবে।
প্রথমবার ২০০৯ লোকসভা ভোটের আগের দিন একে-তাকে জিজ্ঞেস করে পৌঁছেছিলাম রামজীবনের বাড়ি, জানতাম না দেখা পাব কিনা। আর দু’বছর পর গিয়ে দেখা পাইনি, শুনে এসেছিলাম তাঁর ছেলে পুলিশের তাড়ায় বাড়িছাড়া। তৃণমূল কংগ্রেস জমানায় কেমন আছেন রামজীবন মুর্মু?
রামজীবনের বাড়ি পৌঁছে প্রথম চোখে পড়ল একটা সাদা টাটা সুমো গাড়ি। বাড়ির সামনের উঠোনটায় দাঁড়িয়ে আছে। পুলিশ এসেছে নাকি? কিন্তু তা কী করে হবে? ২০১১ বিধানসভা ভোটের আগে শেষবার এসে শুনেছিলাম, ওর শিবরাম তৃণমূল কংগ্রেস করে। তবে সরকার বদলের পর পুলিশ আসবে কেন? উঠোনের সামনে দাঁড়িয়ে এদিক-ওদিক দেখছি, বাড়ির ভেতর থেকে বেরিয়ে এলেন এক মহিলা। কোলে দেড়-দু’বছরের একটা বাচ্চা। মহিলার বয়েস ২২-২৪ হবে। ‘রামজীবনবাবু আছেন? কিংবা শিবরাম?’
‘বাবা স্নান করতে গেছে। আসবে এখনই। আর ও আছে।’
প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ির ভেতর থেকে বেরিয়ে এলেন এক যুবক। আগে দেখিনি। কিন্তু বুঝলাম, ইনিই শিবরাম মুর্মু। হলুদ রঙের একটা চেক শার্ট আর ফুল প্যান্ট। শক্তপোক্ত চেহারা। পায়ে চামড়ার চটি। ওঁর স্ত্রীর পায়েও চটি আছে, তবে হাওয়াই।
‘আপনার এবং আপনার বাবার সঙ্গে একটু কথা বলতে এসেছি। আমি থাকি কলকাতায়। সাংবাদিক।’
‘আপনি তো আগেও একবার এসেছিলেন। কয়েক বছর আগে।’
‘দু’বার এসেছি আগে। ২০০৯ সালে আর ২০১১।’
‘আপনি একটু বসুন, আসছি। বাবাও এসে যাবে।’ বলে ঘরের ভেতরে গেলেন রামজীবন মুর্মুর ছেলে। আগের দু’বার দেখেছিলাম, উঠোনে একটা খাটিয়া পাতা ছিল। সেটা আছে, যোগ হয়েছে হাতলওয়ালা তিনটে চেয়ার। একটা চেয়ারেই বসলাম। চারদিকে চোখ ঘুরিয়েই বোঝা যাচ্ছে, গত কয়েক বছরে এই পরিবারের জীবন-যাত্রায় একটা স্বচ্ছলতা এসেছে। অন্তত স্বচ্ছলতাটা দৃশ্যমান। গতবার ছিল না, এবার দেখলাম, উঠোনের একপাশে টিউবওয়েল বসেছে। আর বাড়ির পাশে একটা অ্যাসবেস্টসের চালাওয়ালা পাকা বাথরুম। এটাও ছিল না। আর কী কী ছিল না ভাবছি, ঘাড় ঘুরিয়ে দেখছি চারদিক, আবার চোখে পড়ল সাদা গাড়িটা। রামজীবন মুর্মুর উঠোনে বেমানানভাবে দাঁড়িয়ে আছে ধবধবে সাদা সুমো গাড়ি!
এক হাতে সাবানের বাক্স, অন্য হাতে ভেজা লুঙ্গি নিয়ে হঠাৎই হেঁটে এলেন রামজীবন মুর্মু। খালি গা, গামছা পরা। আমাকে দেখে একটু থমকে দাঁড়ালেন। তখনই বাড়ির ভেতর থেকে বেরিয়ে এলেন শিবরাম। আর আমি তখনও ভাবছি, এই উঠোনেই তো সেই কত বছর আগে যক্ষা রোগে আক্রান্ত এক মহিলা বাড়িতে খাবার ছিল না বলে বলে স্বামীর ধাক্কায় পড়ে গিয়ে মারা গিয়েছিলেন। চোখের সামনে মায়ের মৃত্যু দেখা রামজীবন আজ প্রায় বৃদ্ধ। আজ রামজীবনের ছেলে, ছেলের বউয়ের পরনে ভদ্রস্থ জামা-কাপড়। নাতির হাতে রুপোর সরু বালা। আর সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার এই সাদা গাড়িটা। এটা কার?
‘কেমন আছেন? আমি আগেও এসেছি এখানে।’
মনে হল চিনতে পারলেন। একটু ঘাড় নেড়ে বাড়ির ভেতরে চলে গেলেন রামজীবন। ফের বসলাম চেয়ারে। উল্টোদিকে একটা চেয়ার টেনে বসলেন শিবরাম।
‘আপনি কী করেন?’
‘গাড়ির ব্যবসা করি।’
শিবরাম মুর্মুর তিন শব্দের জবাবে সাময়িক অন্যমনস্ক আমি, কিন্তু রাজীবনের ছেলে বলে চলেছেন, ‘আগে শাল পাতার থালা বানিয়ে বিক্রি করতাম। তাতে পয়সা নেই বেশি। চলে না। দু’বছর আগে গাড়িটা কিনেছি। ভাড়া খাটাই।’
জীবন যে আর কত অবাক করতে পারে, তা আন্দাজও করতে পারতাম না কিষেণজির মৃত্যু রহস্য নিয়ে নাড়াচাড়া না করলে। এ তো ম্যাজিক! ছ’বছর আগেই তো এসেছি এই বাড়িতে। পুলিশের ভয়ে বাড়িছাড়া যুবকের গতিবিধি জানাতে তখন থানা-পুলিশ করে বেড়াচ্ছেন অসহায় বাবা। তারও দু’বছর আগে দেখেছিলাম সেই মানুষটারই আরও অসহায়, ভাঙাচোড়া চেহারা। কয়েক বছরের মধ্যে সেই বাড়িতেই যেন ভূতের রাজা হাজির হয়েছে চতুর্থ, পঞ্চম বর নিয়ে।
‘গাড়ি কি আপনিই চালান?’
‘হ্যাঁ। আজ ভাড়া নেই।’
আর রাজনীতি? আপনি তো তৃণমূল কংগ্রেস করেন?’
‘হ্যাঁ। ২০০৭ সাল থেকে। ১৯৮৪ সালে আমার জন্ম। ক্লাস টেনে যখন পড়ি মায়ের ক্যান্সার ধরা পড়ল। মাকে নিয়ে হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি শুরু হল। মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজে মায়ের ট্রিটমেন্ট হল। মাধ্যমিক দিলাম। রেজাল্ট বেরনোর কয়েক দিন আগে মা মারা গেল। মাধ্যমিকে পাশ করেছিলাম, কিন্তু তারপর আর পড়া হয়নি। তারপর ব্যবসায় নেমে গেলাম। আমি আর এক বন্ধু মিলে শাল পাতার থালা তৈরির ব্যবসা। সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম আন্দোলন শুরু হওয়ার পর আমি তৃণমূল কংগ্রেস করতে শুরু করি। আগে তো এখানে কংগ্রেস, তৃণমূল, বিজেপি, ঝাড়খন্ড পার্টি সব একসঙ্গেই ছিল। কিন্তু ২০০৭ সালের পর থেকেই তৃণমূল শক্তি বৃদ্ধি করতে শুরু করে এখানে। কাকা ঝাড়খন্ড পার্টি করত। ২০০৮ সালে মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়ে অ্যাটাক হল। কোনও কারণও নেই, আমাদের গ্রামের মাস্টার মশাইকে তুলে নিয়ে গেল পুলিশ। কাকাকেও ধরল। থানায় গিয়ে মারধর করল খুব। অথচ, ওরা কিছুই জানত না। মাস্টার মশাই তৃণমূল করতেন। কাকা ঝাড়খন্ড পার্টি করত। সিপিআইএমের কথায় পুলিশ বেছে বেছে বিরোধীদের অ্যারেস্ট করল। আমাদের ওপর অত্যাচার করতে শুরু করল। এরপরেই আমরা সব এক হলাম। সবাই বুঝল, সিপিআইএমকে মারতে হলে, পুলিশ ঠেকাতে হলে তৃণমূল করা ছাড়া উপায় নেই।’
‘আপনি কি পুলিশ সন্ত্রাস বিরোধী জনসাধারণের কমিটিতেও ছিলেন? না হলে পুলিশ আপনাকে ধরল কেন?’
‘২০০৮ সালের নভেম্বরে সিএমের কনভয়ে ব্লাস্টের পর পুলিশ তো সত্যিই সন্ত্রাস করেছে আমাদের গ্রামে। সবাই জানে। তখন গ্রামের প্রায় সবাই কোনও না কোনওভাবে এই কমিটিকে সাহায্য করেছে। কেউ গোপনে ছিল, কেউ প্রকাশ্যে ছিল। যেহেতু আমার কাকা ঝাড়খন্ড পার্টি করত, আমি তৃণমূল করতাম, আমাদের টার্গেট করল সিপাআইএম। ২০০৮ পঞ্চায়েত ভোটের আগেও সিপিআইএম আমাকে মারধর করেছিল। আমাদের গ্রামে দেড়শো মতো ফ্যামিলি ছিল। ২০০৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে গ্রামের বুথে ৬০০র কিছু বেশি ভোট পড়ে। সিপিআইএম পেয়েছিল ৪০০র মতো আর তৃণমূল ২০০র মতো ভোট। সিপিআইএম অনেক বেশি ভোট পেত বলে আমাদের গ্রামে কোনও গণ্ডগোল করত না। কিন্তু ২০০৭ সাল থেকেই আমাদের গ্রামে তৃণমূলে লোক বাড়তে শুরু করে। ২০০৮ পঞ্চায়েত ভোটের আগে আমরা গ্রামে বসে ভোট নিয়ে মিটিং করছিলাম। সিপিআইএমের লোকজন বন্দুক নিয়ে এসে আমাদের মারধর করে। ভোটে কিন্তু আমরাই জিতেছিলাম।
২০১০ সালের মাঝামাঝি পুলিশ আমাকে অ্যারেস্ট করল। রাস্তা কাটা, খুনের চেষ্টা, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট, অনেক কেস দিল। তিন মাস পর জামিন পেলাম। জামিন পাওয়ার পর তিন মাসও কাটল না। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আবার অ্যারেস্ট করল পুলিশ। বুঝলাম, বিধানসভা ভোটে বাইরে থাকতে দেবে না আমাকে। বাইরে থাকলেই রাজনীতি করব, সিপিআইএম তা চায় না। ২৮ দিন পরে জামিন পেলাম। জামিন পেয়ে তিনদিন বাড়ি ছিলাম। জানতাম, পুলিশ আবার ধরবে কোনও না কোনও কেস দিয়ে। পালালাম বাড়ি থেকে। প্রায় দু’মাস বাড়ির বাইরে ছিলাম। ফিরলাম একদম ভোটের আগের রাতে। ভাবলাম, যা হয় হবে। ভোটটা দিতেই হবে। এই ভোটে হেস্তনেস্ত না হলে আর কোনও দিন হবে না। তাই ২০১১ বিধানসভা ভোটের আগের দিন রাতে অনেক ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফিরেছিলাম।’
শিবরাম মুর্মু টানা বলে যাচ্ছেন তাঁর কথা। খেয়ালই করিনি, এরই মধ্যে উঠোনে এসে বসেছেন রামজীবন। কোলে নাতি। নাতিকে নিয়ে ব্যস্ত রামজীবনের মুখে লক্ষ ওয়াটের বাল্ব জ্বলছে যেন। রামজীবনের জীবনের চাকা ঘুরতে বহু, বহু বছর লেগে গেল এই যা। কিন্তু ঘুরল তো? হঠাৎ ফোন বাজল। নিজের পকেটে হাত দিলাম। কিন্তু আমার নয়। পকেট থেকে মোবাইল ফোন বের করলেন শিবরাম। ঝাড়গ্রামের পিছিয়ে পড়া গ্রাম, বর্ধমানের তিন ফসলি জমির মালিকের উঠোন আর কলকাতায় মোবাইল ফোনের সেট, রিং টোন এবং নেটওয়ার্ক দেখে একুশ শতকের দ্বিতীয় দশকের শেষে অন্তত বোঝার উপায় নেই আপনি কোথায় দাঁড়িয়ে আছেন!
চেয়ার থেকে উঠে অল্প হাঁটতে হাঁটতে ফোনে কথা বলছেন শিবরাম। ছেলে ঘাড় ঘুরিয়ে বাবাকে দেখছে। শুনে বুঝলাম, গাড়ি ভাড়া নিয়ে কথা হচ্ছে। দরদাম হচ্ছে টাকা নিয়ে। আবার চোখ গেল গাড়িটার দিকে। একমাত্র এই ব্যাপারটা ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। গাড়ি কেনার টাকা এল কোথা থেকে। দেখে তো মনে হছে নতুন গাড়ি। ভাড়ার দরদাম করে আবার এসে বসলেন শিবরাম।
‘গাড়িটা কবে কিনলেন?’
‘দু’বছর হল।’
‘ব্যবসা ভাল চলছে?’
‘হ্যাঁ, মোটামুটি ভালই। মাসে ২০-২২ দিন ভাড়া থাকে। চলে যায়।’
‘লোন নিয়ে কিনলেন?’
‘কিছু টাকা জমিয়েছিলাম। বাকিটা কোঅপারেটিভ ব্যাঙ্ক থেকে লোন নিয়েছি।’
‘আচ্ছা, ২০১১ বিধানসভা ভোটের আগের রাতে তো বাড়ি ফিরলেন। সরকার বদল হল। তারপর থেকে আর কোনও সমস্যা হয়নি?’
‘না। আর কোনও সমস্যা হয়নি। এখন তো গ্রামের প্রায় সবাই তৃণমূল করে। এলাকায় ঘুরে দেখুন। অনেক কাজ হয়েছে। রাস্তা, জল। ঝামেলা, মারপিট, খুনোখুনি, সব বন্ধ হয়ে গেছে। মানুষ অনেক নিশ্চিন্তে আছে।’
‘আর মাওবাদীরা?’
‘নাঃ, ওরা আর নেই। আর ঢুকতে পারবে না গ্রামে। সিপিআইএমের অত্যাচারের জন্য ঢুকেছিল। তাই সবাই ওদের সাপোর্ট করেছিল। এখন সিপিআইএম নেই, মাওবাদী আসবে কেন?’
মাইলের পর মাইল ঘুরে এত লোকের সাক্ষ্য নেওয়া, এত দিস্তে দিস্তে নোট, সবই এখন মনে হচ্ছে বেকার। কেন ফালতু খাটলাম এত? কেন এত ধৈর্যের পরীক্ষা নিলাম পাঠকের? রাজ্যের পশ্চিম প্রান্তের এক-দেড়টা মহকুমায় মাওবাদী আন্দোলনের যে উৎস সন্ধানে ঘুরছিলাম এত দিন ধরে, শেষ পর্যন্ত এক বাক্যে তারই জবাব মিলল কিনা শিবরামের কাছে! প্রথমেই ওঁর কাছে এলে তো কবেই কিষেণজি মৃত্যু রহস্যের অর্ধেক কিনারা হয়ে যেত। রামজীবন মুর্মুর বাড়ির উঠোনে বসে সাত-পাঁচ ভাবছি, আর কানে বাজছে শিবরামের অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে উঠে আসা এক বাক্যের ব্যাখ্যা, ‘এখন সিপিআইএম নেই, মাওবাদী আসবে কেন?’
চোখের সামনে ভাসছে ১৯৬৬ সালে এই ঝাড়গ্রামে কাজ করে যাওয়া আইপিএস অফিসার তুষার তালুকদার থেকে শুরু করে ডহরেশ্বর সেন, প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়, সন্তোষ রাণা, সুনীল কুমার এবং আরও কত অখ্যাত কিংবা পরিচয় গোপন রাখতে চাওয়া সাক্ষীর কথা। সবাই নিজের মতো করে কত কী বলেছেন। সেই সব কথা ভাবছি, চোখের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সাদা গাড়িটা মাঝে-মাঝে ঝাপশা হয়ে যাচ্ছে, দেখছি ২৩ বছরের আদিবাসী যুবক শিবরাম মুর্মুকে। আবার ফোন এসেছে তাঁর। কথা বলতে বলতে হাঁটছেন। নাতনির মাথায় হাত বুলোচ্ছেন রামজীবন, আবার ঘাড় ঘুরিয়ে বাবার হাতে ফোন নিয়ে পায়চারি করার দিয়ে তাকিয়ে ছোট্ট শিশু। বাড়ির বারান্দায় ঘেরা জায়গাটাই এখনও রান্নাঘর। কড়াইয়ের তেলে কিছু একটা ছাড়লেন শিবরামের স্ত্রী। প্রথমবার এসে তো শুধু ভাতের গন্ধই পেয়েছি, এখন নিশ্চই আরও কিছু হয়। ফের তাকালাম শিবরামের দিকে, তাঁকে দেখছি, আর মাথায় ধাক্কা মারছে একটাই কথা, ‘এখন সিপিআইএম নেই, মাওবাদী আসবে কেন? এখন সিপিআইএম নেই, মাওবাদী আসবে কেন?’
আর কিছু জানার ছিল না আমার। উঠে পড়লাম। রামজীবন মুর্মুর কাছে জানতে চাইলাম, কেমন আছেন।
‘এমনিতে ভালোই আছি। শরীরটা একটু মাঝে মঝে গোলমাল করে। সে তো বয়স হলে করবেই।’ নাতিকে কোলে নিয়ে জবাব দিলেন। আগে যখন এসেছিলাম, এখানে বসেই তাঁর সঙ্গে কথা বলেছি, তখন ‘কেমন আছেন’ জিজ্ঞেস করার সাহস হয়নি। দেখেই বোঝা যাচ্ছিল কেমন ছিলেন তিনি। এখন ভালো আছেন বুঝেই ঠিক জিজ্ঞেস করে ফেলেছি, কেমন আছেন।
‘আসি তবে। আবার এদিকে এলে আসব। বাবা-ছেলের কাছ থেকে বিদায় নিলাম। একটা ঘোরের মধ্যে দিয়ে যেন ফিরছি ঝাড়গ্রাম শহরে। রাস্তার ধারে মেয়েদের হস্টেল, নার্সিং ট্রেনিং কলেজ, কিষাণ মান্ডি, এই সব আগে দেখিনি। রাস্তার এক জায়গায় পিচের কাজ হচ্ছে। ধুলো উড়ছে খুব। সবই নতুন এই এলাকায়। সাত-আটটা মেয়ে সাইকেল চালিয়ে স্কুল থেকে ফিরছে। অনেকদিন বাদে জঙ্গলমহলে এলাম। ফিরতে ফিরতে ভাবছিলাম, ম্যাজিক তো শুধু রামজীবন কিংবা শিবরামের জীবনে হয়নি। ভূতের রাজার বর তো শুধু রামজীবন কিংবা শিবরাম পাননি। জঙ্গলমহলজুড়েই যেন ম্যাজিক শো চলছে! আর ভূতের রাজার বর পাওয়া এই জঙ্গলমহলে শিবরামের উপলবধী, ‘এখন সিপিআইএম নেই, মাওবাদী আসবে কেন?’
দু’পাশে শাল, অর্জুন গাছের সারি পেরিয়ে একটা গ্রাম। মাটির বাড়ির দেওয়ালে আগের বছর ভোটের আগে আঁকা রাজ্যের শাসক দলের প্রতীক। রামজীবন-শিবরামের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আমার গাড়ি ছুটছে ঝাড়গ্রাম শহরের দিকে।
ক্রমশ...।