এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  রাজনীতি

  • কিষেণজি মৃত্যু রহস্য - পর্ব ৭ 

    বিতনু চট্টোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | রাজনীতি | ০৩ মে ২০২৪ | ৬২৯ বার পঠিত
  • কলকাতার কিড স্ট্রিটে এমএলএ হস্টেলে এক বিধায়কের ঘরে বসে কথা কথা হচ্ছিল সিপিআইএম নেতা ডহর সেনের সঙ্গে। জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনার দলের বাড়াবাড়ির কথা বলছিলেন। কেন তা শুরু করতে হল? আপনারা রাজনৈতিকভাবে কেন মোকাবিলা করতে পারলেন না ঝাড়খন্ড পার্টির?’ ফের প্রশ্ন করলাম ডহর সেনকে।
    ‘দেখুন সশস্ত্র মোকাবিলাটা শুরু হল আটের দশকের মাঝামাঝি কিংবা শেষ দিক থেকেই। নরেন হাঁসদা এমএলএ হওয়ার পর থেকে বিনপুর, বেলপাহাড়িতে ঝাড়খন্ডিদের প্রভাব বাড়াতে শুরু করে। গরিব আদিবাসীদের মধ্যে ওদের সমর্থন ছিলই, তা আরও বেড়ে যায়। এই এলাকাগুলোতে সাংগঠনিকভাবে আমরা দুর্বল হয়ে পড়ি। সেই সময় বহুবার হয়েছে, আমরা বেলপাহাড়ি, বিনপুরে কোনও কর্মসূচিতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছি। ঝাড়খন্ড পার্টির তখন একমাত্র স্লোগান ছিল, সিপিআইএমকে এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হবে না। একবার সুকুমার সেনগুপ্তর সঙ্গে আমরা বিনপুর যাচ্ছি। দহিজুড়ি থেকে কিছু কর্মী-সমর্থককে নিয়ে লরিতে চেপে। কিছুটা যেতেই ঝাড়খন্ডিরা আমাদের লরিতে তীর, ধনুক নিয়ে আক্রমণ করল। আমাদের এক কর্মী তীর বিদ্ধ হয়ে মারাই গেল। তার কয়েক মাস বাদে ভেলাইডিহা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় আমাদের ছ’জন যুব নেতাকে খুন করল ঝাড়খন্ডিরা। সেই সময় থেকেই আমাদের বহু কর্মী, সমর্থক ঝাড়খন্ডিদের মোকাবিলায় অস্ত্র হাতে নিল। আর সেই যে অস্ত্রের লড়াই শুরু হল তা থামল গিয়ে একদম রাজ্যে সরকার থাকা পর্যন্ত।’
    ‘কিন্তু এই লড়াই-পাল্টা লড়ায়ের শেষ কোথায়? এই যে গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে একটা সিভিল ওয়ার টাইপ সিচুয়েশন, এর পরিণতি কী হতে পারে তা নিয়ে কখনও আলোচনা হয়নি জেলা পার্টিতে?’
    ‘দেখুন সেই সময় জেলা পার্টিতে আলোচনা কিংবা বিতর্কের পরিবেশ খুব একটা ছিল না। তবে, নেতাদের একটা বড় অংশের বক্তব্য ছিল, ঝাড়খন্ডিদের সশস্ত্রভাবেই মোকাবিলা করতে হবে। কারণ, ওদের অস্ত্রের সামনে বেলপাহাড়ি, বিনপুর, জামবনির বিভিন্ন এলাকায় পার্টি কর্মীরা ঘরছাড়া হচ্ছে। পার্টি অ্যাক্টিভিটি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বহু গ্রামে পার্টি নেতারা ঢুকতেই পারছেন না। তাই সশস্ত্র মোকাবিলা ছাড়া উপায় নেই। এবং এই অংশের বক্তব্যই পার্টিতে গৃহিত হল।’
     
    আপাত দৃষ্টিতে দেখলে, অস্ত্রের বিরুদ্ধে অস্ত্রের লড়াই, এ তো দুনিয়ার ইতিহাসে নতুন কোনও তত্ত্ব নয়। তাছাড়া মানুষের আত্মরক্ষার অধিকার সংবিধান স্বীকৃতও বটে। কিন্তু ঝাড়গ্রাম মহকুমায় ঝাড়খন্ড পার্টির সঙ্গে সিপিআইএমের লড়াই, সংঘর্ষের মৌলিক প্রশ্নটা ছিল ভিন্ন। বিচ্ছিন্নভাবে কোনও ব্যক্তি থেকে শুরু করে যে কোনও সমাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আধার তার অর্থনৈতিক অবস্থান, তার শ্রেণি চরিত্র। এবং নিঃসংশয়ভাবে বলা যায়, ঝাড়গ্রামের যে দু’দল মানুষ আটের দশকের মাঝামাঝি থেকে রাজনৈতিক এলাকা দখলে অস্ত্র প্রতিযোগিতায় নামল, তাদের অর্থনৈতিক অবস্থান ছিল একই বিন্দুতে দাঁড়িয়ে। এও এক আশ্চর্য পরিস্থিতি যে, দু’দলের জাতিগত ভিত্তিও মূলত এক। ঝাড়গ্রাম মহকুমাজুড়ে এক দল গরিব আদিবাসী মানুষ আর এক দল গরিব আদিবাসীর বিরুদ্ধে নির্মম, রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে নামল। এক দলের বাড়িতে দু’বেলা খাবার নেই, আর এক দলের বাড়ির হাঁড়িরও এক হাল। পক্ষ এবং প্রতিপক্ষ দু’দলের বাড়িতেই তখন চরম দারিদ্র। দু’দল মানুষই এক ভাষায় কথা বলে। অভিন্ন তাদের সংস্কৃতি। তাও শুরু হল তীব্র সংঘর্ষ। খুন-পালটা খুন। রক্তাক্ত হল অবিভক্ত মেদিনীপুরের একটা বিস্তীর্ণ এলাকা। আদিবাসীদের স্বল্প জীবন আরও ছোট হল। এই রাজনৈতিক লড়াইয়ে এক দলের পক্ষে আর এক দলের বিরুদ্ধে কি কোনও শ্রেণিগত স্লোগান দেওয়া সম্ভব ছিল? এক কথায় এর উত্তর, না। আটের দশকের মাঝামাঝি থেকে পশ্চিমবঙ্গের ঝাড়গ্রাম মহকুমায় কোনও শ্রেণি আন্দোলন সংগঠিত হচ্ছিল না।
    ২০০৬ সালের পর থেকে ২০১১ পর্যন্ত বহুবার বেলপাহাড়ি, জামবনি, বিনপুর, লালগড়ে গিয়ে একটা প্রশ্নই শুধু মনে এসেছে। তা হল, যারা খুন করছে, আর যারা খুন হচ্ছে দু’দলই হত-দরিদ্র মানুষ। গরিব মানুষকে খুন করে গরিব মানুষ কোন শ্রেণি সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছে এই আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায়? গরিব মানুষ জোতদারের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে বুঝি, কিন্তু আরও গরিব একজনকে খুন করে কোন উন্নততর সমাজ গড়ার স্বপ্ন দেখে, এই প্রশ্নের মীমাংসা না হলে, জঙ্গলমহলে সিপিআইএমের বামপন্থার অনুশীলনের মতোই কিষেণজির সংগ্রামও ব্যর্থ হতে বাধ্য, বারবার ভেবেছি এ কথা৷
     
    আমি সব সময়ই বিশ্বাস করেছি, দায়িত্ববোধ এবং সহনশীলতা দুর্বলের থেকে শক্তিশালীর, সংখ্যালঘুর থেকে সংখ্যাগুরুর এবং বিরোধীর থেকে শাসকের বেশি হওয়া উচিত। তবেই সমাজে ভারসাম্য বজায় থাকে। নয়তো সমাজের স্বাভাবিক ন্যায্যতা বিঘ্নিত হয়। দুর্বল, সংখ্যালঘু এবং বিরোধী নিজেকে বঞ্চিত মনে করে। মনে করে, তারা দুর্বল, সংখ্যালঘু এবং বিরোধী বলেই তাদের সঙ্গে জাস্টিস হচ্ছে না। এবং সেখান থেকে শুরু হয় সংঘাতের। এই সংঘাত সব সময় যে অর্থনৈতিক কারণে হয়, তা নয়। আর এই ঘটনাই ঘটল আদিবাসী অধ্যুষিত ঝাড়গ্রাম মহকুমার বিভিন্ন এলাকায়। আটের দশকে যে মুহূর্তে অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার সিপিআইএম নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নিল ঝাড়খন্ডিদের মোকাবিলায় সশস্ত্র রাস্তায় হাঁটার, সেদিনই সেই রাস্তার অন্য প্রান্তে ল্যান্ড মাইন পাতার ক্ষেত্র প্রস্তুত করে ফেলল মাওবাদীরা। সেই দিনই ঠিক হয়ে গিয়েছিল, সেই রাস্তার কোনও এক প্রান্তে একটা ছোট্ট গ্রাম খবরের শিরোনামে চলে আসবে অনেক বছর পর, ২০১১ সালের গোঁড়ায়। ঘটনাচক্রে সেই গ্রামের নাম হবে নেতাই। এই গ্রামের নাম হয়তো অন্য কিছু হতে পারত, কিন্তু ঘটনাটা ঘটতই। যেখানে সিপিআইএম নেতার বাড়ি থেকে শাসক দলের সশস্ত্র ক্যাডারদের ছোঁড়া গুলিতে মৃত্যু হবে একাধিক গ্রামবাসীর। গ্রামবাসীদের কিছু করারও থাকবে না, কারণ, মাওবাদীদের কথায় তারা সিপিএম ক্যাডারদের বাড়িতে বিক্ষোভ দেখাতে বাধ্য হবে! 
    সেদিনই ঠিক হয়ে গিয়েছিল, এই জঙ্গলমহলের গ্রামের পর গ্রামে আপামর গরিব মানুষ ঝাড়খন্ড পার্টি, কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, বিজেপি কিংবা অতিবাম মাওবাদীদের মধ্যে কোনও বাছবিচার না করে একদিন একই ছাতার তলায় এসে আশ্রয় নেবে শুধু সিপিআইএমের বিরোধিতা করার জন্য। আর সেই সম্মিলিত বিরোধিতা সামাল দেওয়ার কোনও রাস্তা ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি মার্ক্সবাদীর নেতাদের জানা থাকবে না একুশ শতকের প্রথম দশকে পৌঁছে। 
     
    ঝাড়খন্ড পার্টির নেতা নরেন হাঁসদা বিধায়ক হওয়ার পরই এই সব এলাকায় রাজনৈতিক সংঘর্ষ তীব্র আকার ধারণ করে। সেই সময়ও ঝাড়খন্ড পার্টির প্রবল আক্রমণের মুখে দাঁড়িয়ে ডহর সেন পার্টিতে বলেছিলেন, ‘পালটা মারের লাইনে গিয়ে আদিবাসী ঝাড়খন্ডিদের সমর্থন পাওয়া যাবে না। ওদের উইন ওভার করতে হবে। ঝাড়খন্ড পার্টির অনুগামীরা বেশিরভাগই গরিব। আদিবাসী গ্রামগুলো বেশিরভাগই মোড়লদের কথায় চলে। মোড়লদের সঙ্গে কথা বলে তাদের কনফিডেন্সে নিতে হবে। গ্রামে থাকতে হবে আদিবাসীদের মতো করে। তবেই ওদের সমর্থন পাওয়া যাবে।’ বিনপুরে ঝাড়খন্ড পার্টির এক নেতা ছিলেন নয়ের দশকে, লিয়াকত আলি। এলাকায় পরিচিত ছিলেন হাত কাটা লিয়াকত নামে। সিপিআইএমের সঙ্গে বহু লড়াইয়ে ঝাড়খন্ডিদের নেতৃত্ব দিয়েছেন। এই লিয়াকত আলির সঙ্গে একাধিকবার কথাও বলেন ডহর সেন। কিন্তু তাঁর এই উদ্যোগ পার্টির মধ্যেই একাধিক নেতা ভাল চোখে দেখলেন না। আদিবাসী ঝাড়খন্ডিদের সঙ্গে দৌত্য করতে গিয়ে নিজের দলে একঘরে হয়ে গেলেন ডহরেশ্বর সেন। বেলপাহাড়ি, বিনপুর, জামবনির জঙ্গলমহলে সিপিআইএমের মুখ হিসেবে তখন দ্রুত উঠে আসছেন বাসুদেব ভকত। বাড়ি জামবনিতে। এই বাসুদেব ভকতের সঙ্গে কেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় কথা বলেন না, তা নিয়ে তাঁকে ফোনে হুমকি দিয়েছিলেন মেদিনীপুর জেলার সিপিআইএম সম্পাদক দীপক সরকার। কেন, কীভাবে বাসুদেব ভকত জঙ্গলমহলে সিপিআইএমের মুখ হয়ে উঠলেন, সে প্রসঙ্গে আসব একটু বাদেই। ডহর সেনের কাছে আর বিশেষ কিছু জানার ছিল না। শুধু জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘আত্মগোপনের সময় ১৯৬৬ সালে যে পুলিশ অফিসার আপনাকে ছেড়ে দিয়েছিলেন, তার কারণ কিছু বুঝতে পেরেছিলেন?’
    ‘না পারিনি। আমাকে তো চিনতেন না। সেদিনই প্রথম দেখা। হয়তো আমাদের দলের বক্তব্য সমর্থন করতেন, হয়তো আমাদের মনোভাবাপন্ন ছিলেন। জানি না ঠিক। তবে ওই অফিসারের নাম তুষার তালুকদার। ঝাড়গ্রামের প্রথম এসডিপিও।’ 

    তুষার তালুকদার, এসডিপিও ঝাড়গ্রাম, ১৯৬৬

    তুষার তালুকদার যে শুধুমাত্র বামপন্থীদের প্রতিই সহমর্মী ছিলেন তা নয়, তিনি অত্যন্ত সংবেদনশীল ছিলেন গরিব প্রান্তিক মানুষের ছোট-বড় সমস্যা নিয়েও। আর তা হাড়ে হাড়ে বুঝেছিলেন ছোট্ট রামজীবনের বাবা মহাদেব মুর্মু। 
    সিপিআইএম করা যুবক ডহরেশ্বর সেনকে নাগালে পেয়েও ছেড়ে দেওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই মহাদেব মুর্মুকে স্ত্রী খুনের অভিযোগ থেকে রেহাই দিয়েছিলেন তুষার তালুকদার। কম বয়সী নতুন এসডিপিও’র তখন ঝাড়গ্রাম মহকুমা মোটামুটি চেনা হয়ে গিয়েছে।
     
    তুষার তালুকদার চাকরি থেকে অবসর নেওয়ারও অনেক বছর বাদে, ২০১৫ সালে কথা বললাম তাঁর সঙ্গে। তাঁর দক্ষিণ কলকাতার ফ্ল্যাটে বসে। ঝাড়গ্রামের প্রথম এসডিপিও, কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার তুষার তালুকদার আমার পরবর্তী সাক্ষী। তাঁকে সাক্ষী বলা ঠিক হবে কিনা জানি না।  
    ‘ঝাড়গ্রাম জায়গাটাকে আমার প্রথম দিনই খুব ভাল লেগে গিয়েছিল। প্রত্যেক অফিসারেরই চাকরি জীবনের শুরুতে যে সব জায়গায় পোস্টিং হয়, সেখানকার প্রতি একটা বাড়তি দুর্বলতা থাকে। অনেক স্মৃতি থাকে। আমারও ঝাড়গ্রাম নিয়ে আছে। সেটা নতুন কিছু নয়। কিন্তু ঝাড়গ্রামের যে জিনিসটা আমাকে নাড়া দিয়েছিল, তা হল সেখানকার মানুষের দারিদ্র্য। এত কষ্টের মধ্যেও মানুষ থাকে! যখন আমি গিয়েছিলাম, সেটা ছ’য়ের দশকের একেবারে মাঝামাঝি। চাষ-আবাদ কার্যত নেই। জলের প্রচণ্ড সমস্যা। স্কুল নেই, কলেজ নেই। গাড়ি করে পুরো মহকুমায় ঘুরে বেড়াতাম আর ভাবতাম, মানুষগুলো বেঁচে আছে কী করে?
    তখন ঝাড়গ্রামের সাংসদ কংগ্রেসের সুবোধ হাঁসদা। একদিন তাঁকে বললাম, ‘‘এই গরিব মানুষগুলোর জন্য কিছু করুন।’’
    ‘‘চেষ্টা তো করছি, কিন্তু কী করা যায় বলুন তো?’’
    ‘‘পুরো এলাকায় এত অনাহার আর অপুষ্টি। বেশিরভাগ লোক তো একবেলাও ঠিক করে খেতে পায় না। আগে ওদের খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। রেশন দোকান তো চালায় সব বড়লোকরা। রেশনের চাল, ডাল পর্যন্ত গরিব মানুষের কাছে পৌঁছোচ্ছে না।’’
    ‘‘আপনি তো সবই জানেন রেশন দোকানের মালিকদের দুর্নীতির কথা। আমি আর নতুন করে কী বলব?’’
    ‘‘আমাদের দায়িত্ব দিন। পুলিশের মাধ্যমে রেশন বিলির ব্যবস্থা করুন। এটা আমাদের কাজ নয়। কিন্তু আমরা করব। রেশন সরবরাহে সরাসরি প্রশাসনকে যুক্ত না করলে প্রান্তিক, গরিব মানুষগুলো কোনওদিন ঠিক মতো চাল, ডাল পাবে না। রেশন মালিকরা বেআইনিভাবে চাল, ডাল মজুত করছে, আর গরিব আদিবাসী না খেতে পেয়ে মরছে। কোন দফতর দায়িত্ব নেবে জানি না, কিন্তু আমরা পুলিশ থেকে এই কাজ করতে রাজি আছি।’’
    ‘‘এ হয় নাকি? কেন্দ্রীয় সরকার ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া মারফত রেশনে চাল, ডাল পাঠাচ্ছে। রাজ্যের পুলিশ কীভাবে তা বিলি করবে? আপনি আবেগ থেকে এ’কথা বলছেন।’’
    ‘‘আবেগ থেকে বলছি না। যুক্তি থেকেই বলছি, যদিও যুক্তির পিছনে দেশের আইনের সমর্থন নেই। কিন্তু আইনের ওপরে সংবিধান। মানুষের খাবারের অধিকার নিশ্চিত করা সাংবিধানিক কর্তব্য।’’
    ‘‘কিন্তু সারা দেশ এক আইনে চলছে। একটা মহকুমায় স্থানীয় স্তরে আপনি তা পাল্টাবেন কী করে? যদি গোটা দেশে এমন কিছু হয়, তবে সম্ভব। তার জন্য আইন পরিবর্তন করতে হবে। না হলে অন্তত কেন্দ্রীয় সরকার যদি বিশেষ কোনও অনুমতি দেয় তবে সম্ভব।’’
    ‘‘আইন আগে না মানুষ আগে? আইনি বাধা যদি মানুষের জীবন রক্ষা করতে না পারে, তবে কোন আইন আপনারা রক্ষা করছেন? এই আইন রক্ষা করে লাভটাই বা কী? এই সব আইনি জটিলতায় তো মানুষগুলো মারা যাবে।’’ 
     
    সাংসদ সুবোধ হাঁসদাকে সেদিন বোঝাতে পারিনি। কিন্তু নিজে বুঝতে পারছিলাম, এভাবে বেশিদিন চলবে না। সরকারি সাহায্য মানুষের কাছে প্রায় কিছুই পৌঁছচ্ছে না। তবে মানুষ সরকারকে মানবে কেন বেশিদিন? তাছাড়া এই দারিদ্র মানুষ কত দিন সহ্য করবে?’
    টানা বলে থামলেন তুষার তালুকদার। ঝাড়গ্রামের প্রথম এসডিপিওকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘কিছুই করতে পারলেন না?’
    ‘না, পারলাম না। এই শাসন ব্যবস্থাকে ভাঙতে হবে। নিয়ম-কানুন, আইন সব ভেঙে ফেলতে হবে। নয়তো সাধারণ মানুষের সামগ্রিক উপকার করা কঠিন।’

    রামজীবন মুর্মুর ডায়েরি

    এই লেখায় আমার চতুর্থ সাক্ষী রামজীবন মুর্মু। বলা যেতে পারে, কিষেণজি মৃত্যু রহস্যে এক গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। যাঁর সঙ্গে আমার কথা শুরু হয়েছিল আগেই। আদিবাসী অধ্যুষিত ঝাড়গ্রাম মহকুমার সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক জীবন, তার নানান ওঠাপড়ার যে বহুমাত্রিক কাহিনী তাতে রামজীবন মুর্মু একটা প্রতীকি চরিত্র মাত্র। এমন হাজার-লক্ষ রামজীবন এবং তাঁর মতো পরিবার নিয়েই গড়ে উঠেছে জঙ্গলমহল। যে জঙ্গলমহলে প্রবল-পরাক্রান্ত শাসক দল সিপিআইমের সঙ্গে লাগাতার যুদ্ধে জড়িয়েছে প্রথমে ঝাড়খন্ড পার্টি, পরে মাওবাদীরা। যে যুদ্ধ প্রায় সিভিল ওয়ারের আকার নিয়েছিল একটা সময়ের পর। অথচ রামজীবনের কাছে গোটা জীবনটাই একটা যুদ্ধ। বেঁচে থাকার যুদ্ধ। সেই যে ছোট্ট বয়সে বাবার ধাক্কায় বাড়ির উঠোনে পড়ে গিয়ে মায়ের মৃত্যু, তারপর থেকেই শুরু হয়েছিল যুদ্ধটা। ২০০৯ সালে যখন তাঁর সঙ্গে দেখা করেছিলাম, তখনও যুদ্ধ জারি আছে।         
     
    ‘মামা বাড়িতে চলে আসার কয়েক মাস বাদে মামা আমাকে ইস্কুলে ভর্তি করে দিল। আগে কোনওদিন ইস্কুল যাইনি। মামাদের কিছুটা জমি ছিল। ১৪ বিঘা মতো হবে। বাবা সকাল সকাল মামার সঙ্গে মাঠে চলে যেত কাজে। আমিও উঠে পড়তাম তাড়াতাড়ি। ছটা-সাড়ে ছটার মধ্যে। তারপর ছোটখাট কিছু কাজ করতাম বাড়ির। কোনওদিন গরুকে খড় দেওয়া, কোনওদিন ছাগল চরানো। এক আধদিন বই খুলে বসতাম। তারপর ভাত, খেয়ে স্কুলে যেতাম। বাড়ি থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে ছিল স্কুল। সাড়ে নটায় বেরোতাম বাড়ি থেকে। আস্তে আস্তে কয়েকজন বন্ধু হয়ে গেল। এক সঙ্গে চার-পাঁচজন মিলে স্কুলে যেতাম। বাড়ি ফিরতাম বিকেল চারটে নাগাদ। আর ফিরেই দৌড়াতাম মাঠে। ফুটবল খেলতে।
    মামারা আমাদের থেকে অনেক বড়লোক ছিল। দু’বেলা ভাত হোত বাড়িতে। আমরা তো একবেলা খেতাম। তাও পুরো বছর নয়। মামাদের বাড়িতে রাতে কেরোসিনের আলো জ্বলত। আমাদের বাড়িতে আলো ছিল না। ফুটবল খেলে ফিরে সন্ধেবেলা কোনওদিন পড়তেও বসেছি। কুপি জ্বেলে। কিছু পরেই মামি তাগাদা দিয়েছে, ‘‘তেল নাই। বাতি নিবা।’’
    মাঝখানে একবার থামালাম রামজীবনকে। জিজ্ঞেস করেছি, ‘গ্রামে কি সবার অবস্থা একই রকম ছিল সেই সময়? নাকি বড়লোকও ছিল কিছু?’
    ‘প্রায় সবার অবস্থাই ছিল এক রকম। মামার ১৪ বিঘা জমি ছিল। চাষ হোত। ধান হোত একবার। তার জন্য মামা বাড়িতে সারা বছর ভাত হোত দুবেলা। এই যা। অন্য জিনিসের টানাটানি ছিল। টাকা-পয়সা ছিল না তেমন। আর গ্রামে বেশিরভাগ পরিবার তো মামাদের থেকেও গরিব ছিল। বেশিরভাগ বাড়িতেই দু’বেলা ভাত হোতও না তখন। আমাদের বাড়িতেই তো হোত না। মামাবাড়িতে গিয়েই প্রথম দু’বেলা ভাত খেয়েছি আমি আর বাবা। বড়লোক ছিল না কেউই। তখন যার বাড়িতে খাবারের তেমন অভাব ছিল না, গ্রামে সেই বড়লোক। আমাদের গ্রামে একটাই ঘর বড়লোক ছিল। দাসরা। ওদের বাড়িতে লাইসেন্স বন্দুক ছিল। রিনিউ করতে নিয়ে যেত বছরে একবার। দাসদের বাড়িতে অনেক রাত অবধি লন্ঠনের আলো জ্বলত। ও বাড়ির ছেলে-মেয়েদের বছরে তিন-চারবার নতুন জামা কেনা হোত শহর থেকে। বাকি সবার ঘরে অভাব ছিল। মাঠে তো চাষের কাজ ছিল না সারা বছর। যখন মাঠের কাজ থাকত না বাবা জঙ্গলে যেত কাঠ কাটতে। তারপর কাঠ মাথায় চাপিয়ে বিক্রি করতে যেত বাড়ি বাড়ি। স্কুল ছুটি থাকলে আমিও অনেকবার বাবার সাথে কাঠ নিয়ে গেছি। দু’জনে জ্বালানি কাঠ বিক্রি করেছি বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে। ২৫-৩০ কিলো কাঠ মাথায় চাপিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বিক্রি করত বাবা। ৩০ কিলো জ্বালানি কাঠ বিক্রি হত এক টাকায়।’
    ‘৩০ কিলো কাঠ এক টাকা? কারা কিনত কাঠ?’ চমকে উঠে জিজ্ঞেস করেছি।
     
    আবার একটা বিড়ি ধরালেন রামজীবন। সম্মতিসূচক ঘাড় নাড়লেন। তারপর আবার শুরু করলেন।  
    ‘তখন লোকের হাতে টাকা কোথায়? জিনিসের দামই বা কী? বাবা সকালে চলে যেত জঙ্গলে কাঠ কাটতে। সারাদিনের কাটা কাঠ নিয়ে বিকেলে বাড়ি ফিরত। পরদিন সকালে তা বিক্রি করতে বেরতো। একদিনের কাঠ বিক্রির এক টাকা দিয়ে আমাদের দু’দিন চলে যেত প্রায়। আমাদের বাড়ি ছিল জঙ্গলের একদম ধারে। যে গ্রামে জঙ্গল ছিল না, সেখানকার লোক কাঠ কিনত। জ্বালানি পাবে কোথায়? আমাদের গ্রামেই তো কয়েকটা ঘরে শুধু কুপি, লণ্ঠন ছিল। কিন্তু কেরোসিন কোথায়?’
    ২০০৯ সালের মাঝামাঝি, লোকসভা ভোটের একদিন আগে রামজীবনের কথা শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল, টাইম মেশিনে চেপে গেছি এক অজানা দুনিয়ায়। অথচ মাত্র ২৮-৩০ বছর আগের কথা। ১৯৭৮-৭৯ সাল। সবে সিপিআইএমের নেতৃত্বে বাম সরকার হয়েছে। ১৯৭৭ এর জুনে শপথ নিয়ে জ্যোতি বসু বললেন, ‘এই সরকার চলবে গ্রাম থেকে।’ রামজীবনের সঙ্গে কথা বলতে বলতে মনে হচ্ছিল, তখন তো এই গ্রামগুলোর মানুষেরই জীবন চলত না। তো গ্রাম থেকে সরকার চলবে কীভাবে? ১৯৪৭ থেকে ’৭৭, রাজ্যে প্রাক সিপিআইএম যুগের ৩০ বছরে কী গতিতে এগিয়েছে গ্রাম বাংলায় গরিব মানুষের জীবন যাত্রা, বিশেষ করে ঝাড়গ্রামের মতো পিছিয়ে পড়া একটা মহকুমায়, তার এক নির্মম ছবি তুষার তালুকদার দেখেছিলেন রামজীবনের মায়ের মৃত্যুর দিন তাদের বাড়ি গিয়ে। তুষার তালুকদারের ১৯৬৬-৬৭র অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল রামজীবনের সঙ্গে কথা বলার সময়। কিন্তু রামজীবন তো বলছিলেন ১৯৭৮ এর কথা। তখন তিনি ক্লাস নাইনে পড়েন। তার মানে এই ছ’য়ের দশকের মাঝামাঝি থেকে সাতের দশকের প্রায় শেষ পর্যন্ত ১০-১২ বছরে তো মানুষগুলোর স্রেফ বয়সই বেড়েছে। জীবনযাত্রার বদল হয়নি বিশেষ কিছুই। তাই বয়স যত বেড়েছে, দেখায় তার থেকে ঢের বেশি। ভাবছি আর মাথায় ঘুরছে শুধু একটা কথা, ৩০ কিলো কাঠের দাম এক টাকা।’   
    ‘সে বছর খুব বন্যা হল। আমাদের গ্রাম ছিল জঙ্গলের ধারে, নদী থেকে অনেকটা দূরে। নদীর ধারের গ্রামগুলো পুরো ডুবে গেছিল। আমাদের গ্রামেও জল ঢুকেছিল খুব। ভয়ঙ্কর দিন গেছে। 

    রামজীবনের সঙ্গে কথা বলতে বলতে যে প্রসঙ্গটাতে আসতে চাইছিলাম সেখানে পৌঁছানোর আগেই এক ব্যাক্তি এসে হাজির হলেন তাঁর বাড়িতে। সাইকেলে চেপে। দেখে মনে হল, বয়স রামজীবনের থেকে অনেকটাই কম। পরনে সাধারণ জামা, প্যান্ট। পায়ে সস্তা চামড়ার চটি। মাথায় একটা গামছা শক্ত করে বাঁধা। রোদ থেকে বাঁচতে।  সাইকেলটাকে গাছে হেলান দিয়ে দাঁড় করিয়ে রেখে খাটিয়ায় এসে বসলেন। গামছাটা খুলে মুখের ঘাম মুছলেন। আর সাইকেল থামানো থেকে বসা পর্যন্ত টানা তাকিয়ে থাকলেন অচেনা অতিথির দিকে।  
    ‘আমার ভাই। মামার ছেলে।’ আগন্তুকের পরিচয় দিলেন রামজীবন মুর্মু। ‘আমার থেকে আট বছরের ছোট। আমরা মামা বাড়িতে থাকতে শুরু করার পরের বছর ও হয়েছিল।’ 
    এবার পরিচয়টা পরিষ্কার হল। ভাল করে দেখলাম। রামজীবনের মতো চেহারায় ততটা বয়সের ছাপ পড়েনি। আর একটা তফাৎ আছে। রামজীবনের চোখে শহরের লোকের প্রতি যে বিস্ময়বোধ আছে, তা নেই তাঁর মধ্যে। রামজীবনের ভাইয়ের মুখ-চোখ থেকে স্পষ্ট, জটিল চরিত্রের শহুরে মানুষ ঢের বেশি দেখেছে সে। নাম জিজ্ঞেস করলাম।
    ‘নকুল’
    আবার ফিরলাম রামজীবন মুর্মুর দিকে। এই এলাকায় রাজনৈতিক অবস্থা কেমন ছিল? পলিটিকাল গোলমাল, ঝামেলা…?
    ‘আমি কোনও দিন রাজনীতি করিনি। নকুল করত। ঝাড়খন্ড পার্টি।’
    ঝাড়খন্ড পার্টি করতেন শুনে চমকে ঘাড় ঘোরালাম নকুল মাহাতোর দিকে। তারপর রামজীবনকে ফের জিজ্ঞেস করলাম, কিন্তু আপনি নিজে রাজনীতি করেননি কখনও? সমর্থন তো করতেন কাউকে। 
    ‘বাবা-মামারা কংগ্রেসকে সমর্থন করত। আমরা দুই ভাইও ছোটবেলায় তাই করতাম। কংগ্রেসকে সমর্থন। তখনও গ্রামে সিপিআইএম আসেনি…’
    ‘ছোটির কারবারটা বলো,’ খাটিয়ায় বসে ঘাম মুছতে মুছতে দাদার সঙ্গে এই আগন্তুকের কথাবার্তা শুনছিলেন চোখ ছোট করে, কপালে তিন-চারটে রেখা স্পষ্ট, রাজনীতির আলোচনা আসতেই রামজীবনকে থামালেন তাঁর ভাই। তারপর নকুল মাহাতো শুরু করলেন। 
    ‘তখন আমি ছোট। এখানে একটা লোক ছিল ছোটি মাহাতো। কংগ্রেস করত। আমাদের থেকে অনেক বড়লোক। আমি, দাদা, গ্রামের আরও কিছু ছেলে ওর পেছনে পেছনে ঘুরতাম। আমাদের আশপাশের কয়েকটা গ্রাম মিলে ওই ছিল কংগ্রেসের নেতা। ’৭৮-৭৯ সাল থেকে সিপিআইএম আস্তে আস্তে আমাদের গ্রামে ঢুকতে শুরু করে। তার দু’এক বছরের মধ্যেই ছোটি কংগ্রেস ছেড়ে সিপিআইএমে চলে গেল। ওই হয়ে গেল পুরো এরিয়ার সিপিআইএম নেতা। এতে আমরা বেশিরভাগ ছেলে ওর ওপর খেপে গেলাম। ওর দলেই ছিল সহদেব মাহাতো, ছোটির ডানহাত।  আমার থেকে কয়েক বছরের বড়। দাদার বয়সী। সহদেব, আমি, আরও কয়েকজন ঠিক করলাম, ছোটি মাহাতোর এই বেইমানি মানা যাবে না। তখনই আমরা ঠিক করলাম ঝাড়খন্ড পার্টি করব। ছোটি সিপিআইএমে চলে যাওয়ার পর সহদেবদা বলল, আর কংগ্রেস করে লাভ নাই। ছোটিকে শায়েস্তা করতে হলে ঝাড়খন্ড পার্টিই করতে হবে।’
    ‘কেন কংগ্রেস করে লাভ নেই?’ থামিয়ে জিজ্ঞেস করলাম নকুল মাহাতোকে।
    ‘কারণ, কংগ্রসের তখন দিন দিন অবস্থা খারাপ হচ্ছে। যদ্দিন সরকার ছিল ঠিক ছিল। ভোটে হারার পর কংগ্রসের অনেক ছোটখাট নেতাই সিপিআইএমে চলে গেল। কিন্তু ঝাড়খন্ড পার্টি তখন শক্তিশালী হতে শুরু করেছে আমাদের এলাকায়। নরেন হাঁসদার পেছনে তখন অনেক লোক। আমরা বুঝে গেলাম, সিপিআইএমের সঙ্গে লড়তে পারলে একমাত্র ঝাড়খন্ড পার্টিই পারবে। গ্রামের সব লোক নিয়ে মিটিং হল, ছোটিকে শায়েস্তা করা হবে কিনা জানতে। সবাই হ্যাঁ বলল, গ্রামে ঝাড়খন্ড পার্টির পতাকা তোলা হল।’

    ক্রমশ...। 

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ০৩ মে ২০২৪ | ৬২৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | ০৩ মে ২০২৪ ১৪:১৫531349
  • সম্পূর্ন অজানা এক জটিল নকশা।
  • শিবাংশু | ০৩ মে ২০২৪ ২১:০২531363
  • চেনা জগতের কাহিনি। 
    তবে একটা ধন্দ লাগলো। মুর্মুর মামাতো ভাই 'মাহাতো' হলো কেন?  
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন