অসিতদা, ভারতের সামগ্রিক যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো সম্বন্ধে আপনার ধারণা কী? এবং ভারতীয় কি একটি জাতি পরিচয় নাকি বাঙালি একটি জাতি পরিচয়? নাকি দুটোই?
এই প্রশ্নটার মধ্যে, একটা জিনিস খেয়াল রাখতে হবে যে, এই ভারত একটি বহুজাতিক সাম্রাজ্য রাষ্ট্র, অর্থাৎ এই ভারতের মধ্যের যে জাতিসত্তাগুলি আছে, তারা তাদের বিকাশের বিভিন্ন স্তরে আছে; এই জাতিসত্তাগুলির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রীয় ভারতের সম্ভাবনা ছিল, সেই সম্ভাবনা কিন্তু ভারতীয়রা নিজেরা কখনই ভাবেনি। বরং যখন ক্ষমতা হস্তান্তর হয় ১৯৪৭ সালে তখন ব্রিটিশ পক্ষ কিন্তু যে সম্ভাবনাগুলো বা ভারত বিভাজন করার যে সূত্রগুলো যে ফর্মুলেট করেছিল সেটা অনেক বেশি গণতান্ত্রিক। গণতান্ত্রিক, এই অর্থে, যে ভারত কে তো ভাগ করা হল, সরাসরি ধর্মের ভিত্তিতে না হলেও; ফলে যে পাকিস্তানের দাবিটা এল, সেই পাকিস্তান দাবিটা কিন্তু ভাষার ফলে যে জায়গায় হাজির হল বিষয়টি, ক্ষমতা হস্তান্তরের সময়ে, তখন ক্যাবিনেট মিশন, যে মিশনটা পাঠানো হয়েছিল এখানে ক্ষমতা হস্তান্তর করার জন্য, তারা ভারতকে তিনটি ভাগে ভাগ করে এবং A group of province এ যেটা বর্তমান পশ্চিম পাকিস্তান আর তার বাইরে যেই ভারতটা যেটা কংগ্রেস পার্টি যেখানে develop করে বেশি, এবং বাংলা ও আসাম, এই যে grouping of provinces, এটা করা হয়েছিল মূলত জিন্নাহর পাকিস্তান দাবিটাকে মাথায় রেখে। কিন্তু জিন্নাহর দাবিটা, যেটা পরবর্তী যে গবেষণার মাধ্যমে বোঝাই যাচ্ছে খুব পরিষ্কার ভাবে, যে, জিন্নাহ যেটা বুঝতে পেরেছিলেন যে ভারতে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ যে দুটো বড়ো প্রদেশে, অর্থাৎ পাঞ্জাব এবং বাংলা, সেই বাংলা এবং পাঞ্জাবে মুসলিমরা majority এর বাইরে কিন্তু তারা কোথাও majority নয়, শুধুমাত্র বালুচিস্তান এবং আপনার সিন্ধ বা north-west “frontier” province ছাড়া, সুতরাং এই যে খণ্ডিত করা হল একটা জাতিসত্তাকে, দুটো জাতিসত্তাকে, যে দুটো জাতিসত্তার ওপর দাঁড়িয়েছিল পাকিস্তান দাবিটা, কিন্তু তারা নিজেরাও তখন ভাবেনি, জিন্নাহ এবং তার সমর্থকরা, এই ভাগ করার দাবিটা তাদেরই বিরোধী পক্ষের থেকে প্রথম আসবে।
অর্থাৎ বাংলাকে ভাগ করার প্রস্তাবটা, তখন কলকাতার অবস্থানটা আরও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যার জন্য কলকাতা কার দখলে থাকবে সেটা নিয়েও যথেষ্ট প্রশ্ন ছিল। অর্থাৎ এই যে দুর্বল কেন্দ্র এবং শক্তিশালী প্রদেশ, এটা ছিল ক্যাবিনেট মিশনের মূল প্রতিপাদ্য এবং জিন্নাহর পাকিস্তান দাবি মেনে নেওয়ার বিষয়ে এবং কংগ্রেসের যেটা প্রত্যাখ্যান, কংগ্রেস বলতে প্যাটেল-নেহেরুর প্রত্যাখ্যানটা, সেই যুক্তরাষ্ট্রীয় ভারতের সম্ভাবনাকে অনেক দূরে ঠেলে দিল, এবং আপনি জানেন বোধহয় সেই ক্যাবিনেট মিশনে প্রস্তাব হয়েছিল যে কেন্দ্র মাত্র তিন চারটি বিষয় নিয়ে থাকবে, External Affairs তারপরে প্রতিরক্ষা, রেল এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থা। অর্থাৎ কেন্দ্রর হাতে অর্থনৈতিক ক্ষমতাও থাকবে না, সমস্ত প্রদেশগুলো কেন্দ্রকে আর্থিক যোগান দেবে। প্রথম যে প্রস্তাবটা ক্যাবিনেট মিশনের ছিল যার ভিত্তিতে তারা ভারতকে একটা সাম্রাজ্য রাষ্ট্র হিসেবেই রেখে দিতে পারলেন, জিন্নাহর সেই দাবিটাকে ওরা ভেঙে দিয়ে দুটো প্রদেশকে ভাগ করে দিয়ে তারা কিন্তু একটা বিকলাঙ্গ এবং পোকায় খাওয়া পাকিস্তান নিয়ে জিন্নাহকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য করলেন। এটা কিন্তু আমাদের আলোচনার প্রাথমিক সূত্রপাত যে, যুক্তরাষ্ট্রীয় ভারত হল না এই ক্যাবিনেট মিশন প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমে।
আরও পড়ুন, বাংলা পক্ষর গর্গ চট্টোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎকার
এবার এই জাতি পরিচয়ের দিক থেকে আপনি ভারতীয় এবং বাঙালি এই জাতি পরিচয়টিকে কী ভাবে ভাববেন?
প্রথমত, আপনি যদি আজ বিশ্বের দিকে তাকিয়ে দেখেন তাহলে দেখবেন, আজেরবাইজান বা বেলারুশিয়া বা চেচেনিয়া বা ইউক্রেন, এইরকম বহুজাতিক সাম্রাজ্য রাষ্ট্র বিশ্বে তিনটি ছিল, এখন একমাত্র ভারত টিকে আছে। আর দুটি সাম্রাজ্য রাষ্ট্র ইতিমধ্যে, একটা নবতর ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে, একটা হচ্ছে প্রাক্তন যুগোস্লাভিয়া আরেকটা প্রাক্তন সোভিয়েত রাশিয়া। এই যে তিনটি বহুজাতিক সাম্রাজ্য রাষ্ট্র, ইতিহাসের যে ধারা বেয়ে তারা দ্রুতগতিতে বলকানাইজেশন যাকে বলা হয়, বলকানকে যেভাবে ভাগ করা হয়েছিল, ভাষাভিত্তিক, জাতীয়তাভিত্তিক, সেই বলকানাইজেশন অনেকটাই হয়েছে, সম্পূর্ণ নয়, মানে কোনটাই সম্পূর্ণ নয়, সার্বিয়ানরা অত্যন্ত অত্যাচারী ছিল আপনি জানেন, ক্রোয়েশিয়ানদের উপর, আলবানিয়ানদের উপর এবং অন্যান্য মুসলিমদের উপরে। এবং কমিউনিস্টরা ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও কিন্তু রাশিয়ান শভিনিজম, ধরুন জর্জিয়া, স্তালিনের জন্মস্থান, সেখানেও কিন্তু জর্জিয়ানদের সঙ্গে সংঘাতের পরিস্থিতি ছিল। ভারতের ক্ষেত্রে যেটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সেটা আমি বলতে চাই এই যুক্তরাষ্ট্রে, আপনার যে প্রথম প্রশ্নটা ছিল, সেই যুক্তরাষ্ট্রীয় হিসেবে যেহেতু division হল এবং সংখ্যাগুরু বাঙালি মুসলমান তারা পাকিস্তানের অন্তর্গত হল, এবং এখানকার যে হিন্দু জনগোষ্ঠীর নেতৃত্বে যে অংশটি পড়ে রইল পশ্চিমবাংলায় এবং সেখানে এখনও মুসলমান সংখ্যাধিক্যটা প্রায় ৩০ শতাংশের মতো রয়েছে। খুব ডিটারমিনিং ফ্যাক্টর কয়েকটা বিষয়ে। যেহেতু ভাষার প্রশ্নের সঙ্গে যে জাতীয়তাবাদের কথাটা বলছেন এটা অঙ্গাঙ্গিক ভাবে জড়িত, সুতরাং এই প্রশ্নটা কিন্তু ভারতে অমীমাংসিতই রয়ে গেছে এবং এক কেন্দ্রিক যে ভারতের জায়গায় তাদের প্রয়োজনই হয়েছে একটি ভাষাকে পেট্রনাইজ করতে। কিন্তু পরবর্তী কালে দক্ষিণ ভারতের আন্দোলনের ফলে সেটা বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিল এবং এরাও বাস্তবটাকে অনেকটাই মান্য করেছে, যদিও কার্যকারিতার দিক থেকে প্রথমত একটি ভাষাই তারা একটি ভাষা একটি ধর্ম একটি নেশন। সমস্ত কিছুই এক করার চেষ্টা করে, যতদিন এরা ক্ষমতায় আছে। এই হচ্ছে আপনার দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর এবং সেখানে যুক্তরাষ্ট্রীয় ভারতের প্রশ্নটা যেভাবে যারা যেই জাতিগোষ্ঠী, যেমন আপনারা কৃষক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে, দেখবেন যে, কংগ্রেসের মধ্য দিয়ে ভাবনাটা, বিশেষ করে মনীশ তিওয়ারি সম্প্রতি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসেই সম্ভবত লিখেছেন “পাঞ্জাব কি বাত“, চমৎকার লেখাটা; সেগুলো কিন্তু ফুটে উঠছে দেখতে পাচ্ছি, অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রীয়তার প্রয়োজন এবং জায়গাটা সেটা ভারতে একটা … এবং তার বিরুদ্ধেই কিন্তু এই বর্ণবাদী মানে ব্রাহ্মণ্যবাদী এবং এখন বানিয়াতন্ত্র একসঙ্গে মিলে যে রাষ্ট্রটার ক্ষমতা এবং শাসক রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে তারা যুক্তরাষ্ট্রীয় ভারতের সম্পূর্ণ বিপক্ষে।
আরও পড়ুন, জাতীয় বাংলা সম্মেলনের অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎকার
আপনার এই কথাটার সুত্র ধরে একটা প্রশ্ন করি, এর মধ্যে প্রশ্নটা ছিল, কিন্তু আমি একটু re frame করছি। প্রশ্নটা হচ্ছে এই যে আপনি বললেন না, Indian Express এর একটা reference দিলেন, এর সাথে দুটো প্রশ্ন যুক্ত, এক হচ্ছে যে যারা মতামত তৈরি করে, মানে সমাজে মতামত তৈরি করে যে এলিট শ্রেণি, সেই অর্থে অভিজাত একটা শ্রেণি আরকি, তারা মূলত ইংরেজিতে জ্ঞানার্জন করে থাকে, এমনকি তথ্যও অর্জন করে থাকে, এইটার মধ্যে দুটো জিনিস আছে বলে আমার আশঙ্কা। একটা হচ্ছে যে, বাংলায় সেরকম জিনিস পাওয়া যায় না, যে rich analysis এবং যে rich data, information, সেটা বাংলায় পাওয়াই যায় না, available নয়। এটা available না হওয়ার কী কারণ থাকতে পারে, এইটা আমার একটা প্রশ্ন, আর এর সঙ্গে জুড়ে দ্বিতীয় ও গুরুতর বলে আমার মনে হয় যে প্রশ্ন, যে বাঙালি কি colonial mindset এর বাইরে বেরোতে পারেনি?
এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমি সাধ্যমত চেষ্টা করবো। একটা হচ্ছে, আপনি যে তথ্যের জায়গাটা বলছেন, গোড়াতেই বলে নিই বাঙালি তিনটে সেগমেন্টে বিভক্ত, ভদ্রলোক ছোটলোক এবং মুসলমান। সেটা কিন্তু যেহেতু ছোটলোক শ্রেণির অন্তর্গত যে বাঙালি, তাদের কাছে বাঙালির ধারণা খুব অপরিষ্কার, বিশেষ করে এই ছোটলোক এবং মুসলমান দুই ধরনের বাঙালির কাছেই। এখন এই ঔপনিবেশিক শিক্ষায় লালিত যে মধ্য শ্রেণি, ভদ্রলোক category তে, তার কিন্তু দুটো দিক আছে, একদিক দিয়ে সে ক্ষেত্রেও দলিত বা দরিদ্র মানে সাবঅল্টার্ন বাঙালির ঘরদোর জ্বালাতে যায়নি কিন্তু তার বাড়ির মহিলাদের ধরে টানাটানি করেনি সে, আমরা দেখতে পাই, মেইনল্যান্ডটায় সেখানে যে ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রের যে প্রকাশ আমরা দেখি এখানে সেই প্রকাশটা সেরকম ভাবে নয়, তার অনেক গুলো ঐতিহাসিক কারণ আছে, দুটি কারণের উল্লেখ আমি করতে চাই, একটা হচ্ছে যে, বাংলায় যেহেতু বাঙালি বৌদ্ধ ছিল তার major অতীতটা ৪০০ বছরের গোড়ার দিকে পাল সাম্রাজ্যের সময়ে তার ৪০০ বছর মানে শশাঙ্ক পরবর্তী যে মাৎস্যন্যায় এবং তার পরে যে ৪০০ বছর পাল বৌদ্ধ রাজাদের সময়ে, বাঙালি এবং বাংলাই প্রথম দেশ বোধহয় যেখানে রাজাকে বিদগ্ধ বুদ্ধিজীবীরাই নির্বাচিত করেছেন। মানে গোপাল, মানে আপনারা জানেন যে ইতিহাস সিদ্ধ বিষয় এবং তার পরবর্তীকালে যখন সেন রাজারা ক্ষমতায় এল, ১০০-১৫০ বছরের জন্য তখন দারুণ করে দিয়েছিল আরকী! তবাইরে যে surplus বা উদ্বৃত্ত ব্যবসা বাণিজ্যের মধ্য দিয়ে হত বা জনগোষ্ঠী সেটা তো ব্রাহ্মণ্য তন্ত্রের বা কালাপানি পার হওয়া সেটা তো নিষিদ্ধ হয়ে গেল, শিল্প বা বিভিন্ন ব্যবসা বাণিজ্য সেগুলো স্তব্ধ হয়ে গেলো, এবং যারা সুবর্ণবণিক কংসবণিক গন্ধবণিক সমস্ত সম্প্রদায়গুলো তাদের স্থান হল একদম নিচের দিকে ক্রমশ পর্যায়ে বিধৃত যে hierarchical সমাজ সে সমাজে তাদের স্থান নিচে হয়ে গেলো। ফলে একটা জাতি মুমূর্ষু এবং উত্তরভারতে ব্রাহ্মণ্য তন্ত্রের যে এখানে সেনেরা চালাবার চেষ্টা করল... তার ফলটা হল এই যখন বখতিয়ার উদ্দিন খিলজি এলেন তিনি আঠারজন অক্ষৌহিণী নিয়ে এসেছিলেন বলে শোনা যায় বা বলা হয়ে থাকে যে, সেটা হয়তো ঠিকই কথা কিন্তু তার পিছনে বিরাট support ছিল কিন্তু যে ওই নির্যাতিত অবর্ণ বাঙালি এবং বৌদ্ধ বাঙালির। ফলে maximum এই অংশটাই কিন্তু ইসলামকে কবুল করে। মানে আমি প্রধান প্রবণতাটাকে তুলে ধরছি। এই জায়গাটার থেকে দ্বিতীয়বার যখন, আপনি লক্ষ্য করুন আমাদের বাংলাতে মুর্শিদাবাদের কাছাকাছি বহরমপুরের কাছে মহরন্দি বলে একটি গ্রাম আছে সেখানে ৪০ পীরের দেশ বলা হয়। অর্থাৎ পীরের মাজার একেবারে চারিদিকে ছড়িয়ে আছে অর্থাৎ যারা বাঙালিকে অন্য ইসলাম দিল, , আরবি ইসলাম নয় সুফি দরবেশ আউলিয়া তারপর ফকির যারা এসছিলেন, মুলত পারস্য দেশ থেকে, এবং ফলে বাঙালির এই যে একটা সমন্বয়ধর্মী যে ধারা সে ধারাটা কিন্তু বাংলায় প্রবল ভাবে বিস্তৃত হয়েছে, এটা বলার উদ্দেশ্য হল এই যেই আমি cast annihilation এর কথা বলছি মানে বলতে চাইছি, যেটা হলে হয়তো জাতিসত্তার আরও সুদৃঢ় হত। এই ভদ্রলোক শ্রেণি আমাদের শিক্ষা দীক্ষায় তার মধ্যে থেকে অবশ্যই আমরা পেয়েছি বড়ো বড়ো মানুষকে, রবীন্দ্রনাথ তার মধ্যে অন্যতম, মাইকেল মধুসুদন দত্ত তার মধ্যে রয়েছে তার মধ্যে আমি আরও অনেককেই জগদীশ চন্দ্র বসু বা পরবর্তীকালে সত্যেন বসু বা এদেরকে বলব এবং বিশ শতকের গোড়ার দিকে মুসলিম সমাজের মধ্যেও কিন্তু প্রবল একটা আন্দোলনের জায়গায় এল, যেটা আপনি নজরুল ইসলাম-এর মধ্যেও দেখবেন, তিনি যে একের পর এক পত্রিকার সম্পাদন করেছেন। তখন কোনও বাঙালি মুসলমান ও কিন্তু একটা তার একটা অংশ নিজেদের স্বাধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার জায়গায় ছিল। এটা আমি এতদূর চারণা করছি এই কারণে, যে আপনার প্রশ্নটা এতো জটিল এবং আমার মত সামান্য ব্যক্তি সেই প্রশ্নের সামগ্রিক উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়, কিন্তু একটা কথা আমি বলব যে এই ভদ্রলোক শ্রেণির যে আধিপত্য সেই আধিপত্যটা কিন্তু unchallenged রয়েছে। অর্থাৎ তার বেশি অংশটাই মার্ক্সবাদের দিকে যাওয়ার ফলে তাদের মধ্যে একটা মানবিকতার ভাবনা রয়েছে নিশ্চয়ই, সেটাকে অস্বীকার করা যায় না, কিন্তু সেটা ইতিহাস তৈরির জন্য যে শক্তিগুলো প্রয়োজন আছে যে প্রয়োজন পেরিয়ার করেছেন জ্যোতিবা ফুলে করেছেন বা আম্বেদকার তো পরবর্তী কালে বিরাট একটা মহীরুহের মতো দাঁড়িয়ে আছেন, সেটা বাংলাতে সেভাবে হয়নি যেভাবে আমরা হলে আরও এই যে অবশিষ্ট অংশ ভদ্রলোক ক্লাস্টারের মধ্যেও হয়তো তা হতে পারতো, কিন্তু যে কোনো কারণেই ২০০ বছর ইংরেজদের শাসনে ঘর করার জন্যই সেই ঔপনিবেশিক মনোভঙ্গি এই শ্রেণির মধ্যে রয়ে গেছে, তো এখন সেটার জায়গায় নতুন আদিকল্প বাযদি নির্মাণ হয় এবং হবে মনে হয়, সেই দিকেই এগোচ্ছে তখন মনে হয় এই শ্রেণিটার আধিপত্যটাকে কমাতেই হবে। কারণ আপনি খেয়াল করে দেখুন ঝাড়খণ্ড যখন হল, আপনি লক্ষ্য করুন যে বিজেপি এমন একটি দল যেটা গোড়ার থেকে তাদের আইডিয়াই ছিল ছোটো ছোটো রাজ্য করা, সেক্ষেত্রে ঝাড়খণ্ডে কিন্তু এই ভদ্রলোক শ্রেণি বাধা দেওয়ার ফলেই কিন্তু মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার যে লাগোয়া জায়গাটা, যেটায় সাঁওতাল পরগনা রয়েছে, সেটা কিন্তু যেতে দেওয়া হয়নি, তো ওটা খুব লজিকাল ছিল। এটা একটা দিক আমি বললাম, আরও অন্য দিক আছে, আমি গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক এর কাছ থেকেও শুনেছি, আমি অতটা বেশি পড়িনি ওনাকে, কিন্তু এই যে উত্তর ঔপনিবেশিক অন্বেষণের জায়গাটা, যেটা এই ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রকে আঘাত করতে পারে, তাহলেই ব্রাহ্মণ্য শ্রেণির আধিপত্যকে অর্থাৎ ভদ্রলোক শ্রেণির হেজিমনি যাকে বলছি, এই হেজিমনিটা কিন্তু ক্লিষ্ট হয়ে আছে প্রথমত ভারতের শাসকদের প্রবল আধিপত্যের দ্বারা এবং তাদের মধ্যে সেই যে মুসলমান এবং ছোটলোককে তার দলের মধ্যে নিয়ে আসার ভাবনাটা, সেটা এখনও গড়ে ওঠেনি, সেটা কিন্তু এই ছোটো ছোটো, আপনি যে বললেন না, গর্গ, সামিরুল, এদের কথা বললেন, এবং এর বাইরেও আছে, এখন আপনি রতন বসু মজুমদার বা ওরা, এই ভাবনার মধ্যেও ওরা বাঙালিকে একটা ব্রড জেনারেল ক্যাটিগরির category র মধ্যে ফেলেছে। তাও কিন্তু ওই আমি যে ছোটলোক বাঙালি বললাম দলিত বাঙালিদের কথা বললাম, মুসলমানদের বাঙালির জায়গায় বলুন সেখানে এই শ্রেণিটার কিন্তু সচেতন ভাবে নিজেদের বিরুদ্ধে নিজেকে লড়াই করে স্থাপিত করে এই গণতান্ত্রিকতা যখন থেকে আসা শুরু হবে, আমার ধারণা। তখন তার পরে কিন্তু এটা এই স্রোতটা খুলে যাবে, এই আঙিনায় তার ব্রাহ্মণ্য তন্ত্র তার আধিপত্য বা তার শ্রেয়ত্ব বা অতীতের ভালো ইংরেজি জানার যে অহংকার, সেটা ধাক্কা খেয়েছে এবং খাচ্ছেও, সুতরাং আমরা আশাবাদী হতেই পারি আরকি এব্যাপারে।
আপনি যখন কথা বলছিলেন মানে এই প্রশ্নটার কথা বলার সময় আপনি মণীষীদের কথা বললেন, আমার মনে হল আবার মণীষীদের কথা বললেন রবীন্দ্রনাথ এর কপ্তহা বলেছেন সত্যেন বসুর কথা বলেছেন কাজী নজরুল ইসলামের কোথাও বলেছেন। এটা আপনি নিশ্চয়ই ভুলে গিয়ে বিদ্যাসাগর বা রামমোহন এর কথা বলেননি, মানে আপনি অ্যাভয়েড করেছেন...
আমি avoid করিনি, কিন্তু বিদ্যাসাগর বা রামমোহন এর ক্ষেত্রে তারা যে প্রাথমিক স্তরে যে, তাদের মানে হিন্দুদের মধ্যে গনতান্ত্রিকরণের যে জায়গাটা, বিশেষ করে বিদ্যাসাগরের শিক্ষার প্রসারের কথা এবং বেশ কয়েকটা বিধবা বিবাহের ক্ষেত্রে বা সতীদাহের ক্ষেত্রে যা দিয়েছিল সেটা মানে, আমি অন্নদাশঙ্কর রায়ের একটা উল্লেখ করে দিই, যে অন্নদাশঙ্কর রায় বলতে আমাদের বাড়িতে যখন মাকে শিরিয়ার মা) মা আলতা পরাতে আসতো, তার কিছুদিন বাদে দেখলাম শিরিয়ার মা আর আসেনা, প্রায় বছর খানেক বাদে শিরিয়ার মা যখন আসলেন তখন তার নাম হয়ে গেছে গিরিয়ার মা। অর্থাৎ এই যে ছোটলোক ক্যাটেগরি। রীতিমত তার বিয়ে হয়ে গেছে, বিধবা বিবাহই হয়েছে এবং অন্নদাশঙ্কর রায় বলেছেন যে এর জন্য ওই ছোটলোক কাস্ট এর মধ্যে কিন্তু তার বিদ্যাসাগর এর প্রভাবের জায়গাটা তেমন তীব্র ছিলোনা, এটা মধ্য শ্রেণির জায়গাতেই বিদ্যাসাগর করেছিলেন। আমি কোনোটা ইয়ে না করে বলছি।
বাংলার রেনেসাঁ এবং বাঙালির রেনেসাঁ এইটা কতটা কি সত্যি আপনার কাছে মনে হয়?
না, পৌঁছয়নি তো। এটার ডালপালা যদি, রেনেসাঁ সত্যি করে হত, তাহলে হয়তো এই যে তিনটে segment এর কথা হল সব segment এই পৌঁছত তাহলে। কিন্তু হয়নি তো সেটা, খুব একেবারে ইউরোপীয় প্রভাবে, এখানে দেখবেন মার্ক্সীয় ধারণাটাও euro-centric। মানে আমাদের বলেনা যে মেন উইথ লুকস, অর্থাৎ দাড়িওলা লোকটা যা লিখলেন, জার্মান ভদ্রলোক তার বাইরে কিছু ভাবতেও পারেন না।
ভাবতে চায়ও না
এটা খানিকটা ব্রাহ্মণ্য তন্ত্রও বটে, আমরা এই যে দেখছি একটা অখ্যাত জেলার নেতা ছিলেন চারু মজুমদার, আজও পর্যন্ত একটা পর্বে তো খুব প্রাসঙ্গিক, বিশেষ করে যারা জেলে আছেন, যাদের কে সম্প্রতি নিয়ে ঢোকানো হয়েছে, সুতরাং আমার মনে হয় যে, বাঙালির চে গ্যেভারা নেই, কিন্তু মাস্টারদা সূর্য সেন আছে বা নেতাজী সুভাষ আছে। অর্থাৎ আমার কিরকম মনে হয় যে একটা আপনি যে এই প্রশ্নটা তুললেন, এই প্রশ্নটার সঙ্গে বাঙালির ভবিষ্যতের জায়গাটা এবং গোটা পৃথিবীর যাবতীয় বাঙালি যারা সবাই একটা এমন সন্ধিক্ষণে আছে এবং বাংলাদেশ হচ্ছে আমাদের পশ্চাৎভূমি, যাকে আমাদের বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির পশ্চাৎ ৃভূমিই বলতে পারি, আমার মনে হয় বাঙালির ভবিষ্যতের জায়গাটা আমরা যদি সংশোধন করতে পারি, তাহলে উনিশ শতকের বাঙালি যারা ছিল, তারা যতদূর পর্যন্ত এগিয়েছে, তার চেয়েও অনেক বেশি গণতান্ত্রিক ভাবে এগোনো যাবে বলে আমার মনে হয়।
এই যে inner line permit যেটা, ভারতের কিছু অংশে চালু আছে। সেটা কি ভাষা সংস্কৃতি রক্ষার জন্য প্রয়োজন, নাকি বিষয়টা তুলে দেওয়া উচিৎ?
এটা নিয়ে একটু দ্বিধার প্রশ্ন আছে, পশ্চিমবাংলার ক্ষেত্রে inner line permit না হলেও আমার ধারণা আমাদের ভাষাটা যেহেতু একেবারে, বৃহত্তম জাতির একটা ক্ষুদ্রতম অংশ ও ক্ষুদ্রতম অবস্থানে, বাংলা ভাষাটার পশ্চিমবাংলায় যে অবস্থা ক্রমশ, আপনি খেয়াল করে দেখুন যে সত্যেন বসুদের আন্দোলন যখন ছিল বাংলা ভাষার জন্য পঞ্চাশের দশক পর্যন্ত, এবং তখন কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকার বাধ্য হয়েছিলেন ৬১ সালে যে সমস্ত স্তরে কী করে বাংলা ভাষা একটা কমিটিও হয়েছিল, সেটা কী, তার কাজ কী, সে এখন কী করে সেসব নিয়ে কারও কোনও হিসেব নেই। হিসেব চাওয়ার যে দাবি, সেটাও কিন্তু তীব্র ভাবে গড়ে ওঠেনি। ফলে এখন বলা খুব মুশকিল যে এইটা কীভাবে হবে, তবে আমার ধারণা, ভারতে যারা ক্ষমতায় এসেছে, তারা তো ওই পথ দিয়েই এসছে, মানে ভারতের সাম্রাজ্য রাষ্ট্রের চরিত্রটা দিয়েই তো এসেছে, মানে এককেন্দ্রিকতাটা... মানে এখন প্রাইম মিনিস্টার অফিস দিয়েই গোটা দেশটা চালানো যায়। এখন সেখানে একটা বাংলার সেকশন করলেই, ওই নরেন্দ্র মোদী যেভাবে বলছেন, ওরা তাগিদ টা বুঝতে পারছে পশ্চিমবাংলাতে। এখানে খানিকটা vandalism করলেও করাই যায়, করেওছে এর আগে, অমিত শাহ এখানে বিদ্যাসাগরের মূর্তির সময় মনে আছে আপনার। কিন্তু ওরা পরবর্তীতে নিজেদের correct করছে, বাঙালির মধ্যে থেকেই যাতে, আমার ধারণা এগুলো আমি ভুলও হতে পারি, এবার সৌরভ গাঙ্গুলিকে যে মুখ্যমন্ত্রীর কথা নিয়ে ভাবছে মানে এতো অতিরিক্ত তার দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে তখন মনে হয় বা এই যে শুভেন্দু অধিকারীকে দ্রুত তিন চারদিনের মধ্যে আপনার জুট কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান করে দেওয়া হল, তাকে বলা হল তুমি ফেলনা নও, তোমাকে দেওয়া হবে একটা কিছু। তাতেই মনে হয় যে বাঙালির আরও প্রচুর মার খাওয়ার সময় বাকি আছে। বিশেষ করে ভদ্রলোক ক্যাটিগরির।
আচ্ছা এই যে বাংলা ভাষা তো মানে ভারত আর বাংলাদেশের দুটো ভাষা, মানে ভারতের প্রধান...
আসাম কে বাদ দেবেন না।
আমি ভারত এবং বাংলাদেশ বললাম, পশ্চিমবঙ্গ বলিনি, ভারত এবং বাংলাদেশ
আচ্ছা আচ্ছা
এবং ত্রিপুরাও
হ্যাঁ, ত্রিপুরাও,
অবাধ যাতায়াত এবং বাজার চালু হলে বাংলা ভাষার বাজার কি বৃদ্ধি পাবে এবং উপকার হবে?
দেখুন, ঘটনাটা তা হয়নি। ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অংশগ্রহণ এবং পরবর্তীকালে ভারতের বর্তমান যে রেমিট্যান্স নিয়ে যে খবর পাই আমি, অনেক তথ্য ছিল সেগুলো হাতের কাছে নেই আপনাকে বলতে পারব না। কিন্তু এখন প্রচুর ভারতীয় কিন্তু বাংলাদেশে থাকেন, তাদের সেখানে ব্যবসা বা চাকরির বিভিন্ন জায়গায় তারা রয়েছেন। তাতে অন্যান্য ক্ষোভের মধ্যে জল বণ্টন থেকে আরম্ভ করে, অন্যান্য ক্ষোভের মধ্যে এটাও কিন্তু একটা বড়ো ইয়ের জায়গা, বাংলাদেশের ভারতের প্রতি ইয়ের জায়গা। একটা মানে তথাকথিত সিভিল সোসাইটির জায়গা থেকে বলছি। সেটা রয়েছে, সেটা মানে বাংলা ভাষার বাজারটা বিস্তৃত ঠিক এইভাবে হবেনা, কেন না ভারতে কেন্দ্রীভূত যারা, তারা তো কখনোই বাংলাকে প্রসার করতে দেবেও না। হিন্দিটাকেই তারা promote করবে, এমনকি আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে যে নরেন্দ্র মোদী যখন গিয়েছিলেন বাংলাদেশে প্রথমে, উনি ওইখানে একটা হিন্দি বিশ্ববিদ্যালয়ের funding করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছিলেন, সুতরাং যেটা উচিৎ ছিল যে বাংলা ভাষাকে যদি ওখান থেকে সরকারি স্তরে যদি সেই ভাবনা থাকতো, তাহলে হয়তো বাজার বিস্তারকরণের জায়গাটা থাকতো। আপনাকে একটা জিনিস বললেই আপনি বুঝতে পারবেন, বাংলাদেশ সীমান্তে যে border security force ভারতের ২০০ কিলোমিটার বর্ডার কে গার্ড দেয়, অন্তত তাদের খানিকটা মানবিকীকরণ করতে গিয়ে বাংলা ভাষাটা শেখা বাধ্যতামূলক হওয়া দরকার ছিল। অর্থাৎ সেই approach দেখেই তো বোঝা যায় যে এই কেন্দ্রীভূত ব্যবস্থাটা যে জায়গাটায়, সেটা যদি ওরা করতো তাহলে হয়তো এই যে আপনি যা বলছেন তেমন হত। বাজারের, বাংলা ভাষার বাজার তো মানে নির্ঘাত বিশাল বাজার। এখন আমি আপনাকে যে জনসংখ্যা হবে বলছে ১০ কোটি বারো কোটি যদি এই পশ্চিমবাংলায় হয় আর ওখানে যদি ১৮ কোটি হয় বাইরে আসাম সহ আরও যে অন্য বাঙালি আছে সব মিলিয়ে বাঙালি প্রায় বত্রিশ কোটি মানুষ সারা পৃথিবীতে।
সারা পৃথিবীতে আরেকটু বেশিই হবে বোধহয়।
হ্যাঁ, বেশি হতে পারে। প্রবাসী যারা বাংলাদেশি আছে প্রচুর বাংলা বই তারা কেনে বা বাংলা চলচ্চিত্রও ওখানে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। তারেক মাসুদ সম্প্রতি মারা গেলেন। তো এই সম্ভাবনাটা, চলচ্চিত্র, থিয়েটার তো বটেই, অসাধারণ। নাটকের পিছনে যে গবেষণাগুলো সেগুলো আমরা এখানে খুব কমই জানতে পারি। জানতে পারলে যে উৎসাহের সঞ্চার হবে এই জায়গাগুলো সীমিত রয়েছে। সুতরাং, যেমন ধরুন বাংলা টেলিভিশন, এটা একটা উল্লেখ করা উচিৎ বলে মনে করি, যেহেতু এতগুলি ভারতীয় চ্যানেল আসে ওখানে একটাও বাংলাদেশের চ্যানেল কিন্তু আমরা দেখতে পাইনা, একই ভাষায় অথচ কথা বলি, একই ভাষায় মা কে মা বলে ডাকি। তো সেইখানে কোথাও একটা সদিচ্ছার অভাব আছে। রাজনৈতিক সদিচ্ছার কথা বলছি। আমি বলছি, বাংলাদেশের যে ধরুন হুমায়ুন আহমেদ-এর মতন সাহিত্যিক ছিলেন, এঁরা এক একটা দ্বীপ কিনে ফেলতে পারেন, তাহলে তাদের বই কী পরিমাণ পড়ে মানুষ। কিন্তু আমাদের এখানে বাংলা বই পড়ার অভ্যাস তো একদম তলানিতে এসে ঠেকেছে। সিরিয়ালগুলো দেখে মনে হয়... বাংলা চলচিত্রের ক্ষেত্রেও, বাংলার বাজারটা যে বিস্তৃত হবে, তা হতে গেলে আমাকে নিজেকে সমৃদ্ধ হতে হবে তো, মানে এপশ্চিমবাংলার সংস্কৃতি এবং ভাষার জায়গাটা সুদৃঢ় করার জন্য। আপনি দেখুন কেরালাতে, এইসব জাতিসত্তাগুলো অনেক বেশি সুগঠিত বাঙালিদের তুলনায়, তামিল যেরকম, তাদের কিন্তু একটা নিজেদের অস্মিতাটা আছে, এই অস্মিতাটা বাদ দেবেনা তারা কখনও। আমাদের সেই গড়ে তোলার জায়গাতেই ভদ্রলোকের, পুরোনো প্রশ্নটা ছিল আপনার, ভদ্রলোক ঔপনিবেশিক ভাবধারা আক্রান্ত মধ্য শ্রেণির দৃষ্টিভঙ্গির একটা বদল, সেই বদলটার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত বাজারের প্রশ্নটাও। আপনি এখান থেকে যখন আপনি সাত দিনের মধ্যে ঢাকা থেকে কি বই বেরচ্ছে সঙ্গে সঙ্গে আমরা সে খবরটা পাই। এটা আপনি এখানকার খবর নিয়ে দেখুন, এখানে একটা ছোটো সার্ভে করুন, আপনি দেখবেন অনেকেই যে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের এর নামই শোনেননি। মানে চিলোকোঠার সেপাই, খোয়াবনামা তো মানে আন্তর্জাতিক সাহিত্যের অন্তর্গত বিষয়, মার্কেজের থেকে কোনওভাবে কম নয়, যদিও স্বল্পপ্রসবী ছিলেন তিনি। ভাষার প্রতি টানটা বরঞ্চ সাঁওতালিদের বা যে ভাষাটা আমি অনেকটাই স্বচ্ছন্দ শিখেছি, যে ভাষাটার ফলেই আমি প্রাচীন ঝাড়খণ্ড আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়ে পড়েছিলাম। সন্তোষ রাণার সঙ্গে ছিলাম যখন, নিজেদের ভাষার প্রতি যে একটা প্রবল নিবিড় আবেগ সেটা আমি লক্ষ করেছিলাম আদিবাসীদের মধ্যে, সে অন্য প্রশ্ন, এখানে বলার জায়গা নেই এবং আমার মনে হয় যে বাঙালির মধ্যে এই যে আপনার যেটা শেষ প্রশ্ন ছিল, ঔপনিবেশিক ভাবনাটা আমাদের একটা প্রতিবন্ধকতা হিসেবে চিহ্নিত হবে বা হচ্ছে, তখন কিন্তু আমাদের পাশের মানুষদের প্রতি আরও অনেক বেশি সমমর্মিতার বোধ হবে। বাংলা ভাষায় লেখা হচ্ছে না কিন্তু তা নয়, এই প্রতিকূলতার মধ্যে আনসারুদ্দিনের মতো ছোটো গল্পকারদের পাচ্ছি, আরও অনেক মানুষদের পাচ্ছি যারা হয়তো বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি প্রকাশের জায়গায় সবল। দেখুন না দেশ পত্রিকা টিমটিম করে চলে, আর ছোটখাটো পত্রিকা, আমরা অনেক দিন ধরে টিউশানির টাকা বাঁচিয়ে ছোটো পত্রিকা করতাম। অর্থাৎ দ্বৈততা আছে বাঙালির ভদ্রলোক শ্রেণির মধ্যে, তার একটা আধিপত্যবাদই শুধু নয় দ্বৈততাও আছে। সেইটা ইতিহাসে কাব্যিক বলে মনে হয়, আশা করি, আপনার পরের প্রশ্ন...
আমি প্রায় শেষ করেই ফেলেছি, আর একটাই প্রশ্ন করবো, জিনিসটা হচ্ছে যে, এই আপনার কথাতেই এল এই যে বাংলা চলচিত্র প্রসঙ্গ, হিন্দি বিস্তারের অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে হিন্দি সিনেমা, এই যে বলিউড হিন্দি টিভি চ্যানেল
গানও…
হ্যাঁ, এইটা নিয়ে আপনার কী মনে হয়? এটাকে কিভাবে দেখা উচিত বা প্রতিরোধ করা উচিত কি না বা করলে কী ভাবে করা উচিত?
প্রতিরোধটার কিছু কিছু (inaudible) গুলো আপনার নিজস্ব ভাষা সংস্কৃতির বৃদ্ধি, যেমন মালয়ালি ভাষা বা তামিল ভাষার জায়গা থেকে বলছি। যারা সচেতন নিজেদের ভাষাটা কিন্তু ছাড়বে না। তার জন্য হয়তো আপনি যে প্রশ্নটা আগে রেখেছিলেন তফশিলিদের ব্যাপারটা, ওই ব্যাপারটি এখানটায় এতো লুজ বা এতো অবজ্ঞা করেছি যে একটু অন্তত প্রগতিশীল অবস্থানে থেকে দেখার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি আমি।
সেটা কী ভাবে সম্ভব?
সেটা আপনার কাছে আছে তো। এখানে প্রাথমিক স্তরে সবাইকে বাংলা জানতে হবে।
সেটা কি বাধ্যতামূলক করা উচিৎ?
ধরা যাক একটা ঐচ্ছিক থাকবে, কিন্তু ওটাকে না পড়ে আপনি বাইপাস করে যেতে পারবেন না।
আমি এটাই খুব নির্দিষ্ট করে জানতে চাইব, যে রাজ্য সরকারের ওপর কি এইটা চাপ সৃষ্টি করা উচিৎ যে, না বাংলা জানলে একজন সরকারি চাকরি পাবে না!
অবশ্যই অবশ্যই। তার নিজের ভাষা যদি অন্যও হয়, সেটা থাক; হ্যাঁ, বাধ্যতামূলক তো করা উচিতই। অন্তত বাংলা ভাষা জানা, বাংলা ভাষায় কাজ চালানো, পশ্চিমবাংলায় যদি রাজ্য সরকারের কাজ করতে হয়। অনেক কিছুই করা উচিত, সেগুলো কিছু করা হয়না, বুঝলেন। কারণ আমাদের, আমরা দেখেছিলাম যে কোনও পশ্চিমবাংলায় যে একটা SIPRD বলে একটা প্রতিষ্ঠান আছে State Institute of Panchayat and Rural Development ওরা এতো টাকা খরচ করে, কিন্তু কিছু চিঠির বয়ান যদি করে দিত ১০০ টা, যে সরকারি চিঠি বাংলায় লেখার একটা মডেল যদি করে দিত অন্তত তাতে, বাংলাতে লেখার প্রবণতাটা বাড়ত।