শুধু ছেলেবেলায়ই বা কেন, আমাদের যৌবনেও রুপোলি টিনের বাস চলত কলকাতায়। বসার জায়গা যথাসাধ্য কমিয়ে দাঁড়ানোর জায়গাই বেশি - লম্বালম্বি টানা সিট - পিছনে আড়াআড়ি সিট, টানা - ড্রাইভারের চেম্বার আলাদা, সেই খাঁচার পিছন দিকে আরেকখানা লম্বা সিট। অর্থাৎ আয়তক্ষেত্রের চারখানি বাহু বরাবর বসার ব্যবস্থা - মাঝখানে খোলা জায়গা, দাঁড়ানোর। সিটের উপর লেখা থাকত বিবিধপ্রকার গুরুত্বপূর্ণ বার্তা - পকেটমার হইতে সাবধান, অথবা মালের দায়িত্ব আরোহীর। হ্যাঁ, ভোটের বাজারে প্রথম সাবধানবার্তাটি স্মর্তব্য হলেও, আপাতত এই দ্বিতীয় কথাটা নিয়েই চিন্তায় পড়েছি।
মালের দায়িত্ব আরোহীর। তাহলে প্লেনে চড়ার আগে এত সিকিউরিটি চেকের হ্যাপা কেন? মালের ব্যাপারে আরোহীরই যদি একমেবাদ্বিতীয়ম দায়, তাহলে এয়ারলাইনস কোম্পানি কর্তৃক লাগেজ চেকিং-এর যুক্তি থাকে কি? এমন বালখিল্য প্রশ্ন শুনে আপনি নিশ্চয়ই আমার মস্তিষ্কের সুস্থতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন। পাগল নাকি!! কেউ যদি লাগেজে মারাত্মক বিস্ফোরক নিয়ে ঘোরে, তার বিপদ কি শুধুই সংশ্লিষ্ট প্যাসেঞ্জারের? বিপদে পড়বেন তো সকলেই। এক্স্যাক্টলি। আপনি ঠিক কথাই বলেছেন। আরোহীর দায়িত্বজ্ঞানের 'পরে ভরসা রাখার পাশাপাশি তিনি সেই ভরসার উপযুক্ত কিনা, সেটুকু যাচাই করার দায় কর্তৃপক্ষের 'পরে অবশ্যই বর্তায়।
সম্পাদিত কাগজ-ম্যাগাজিন-ওয়েবজিনের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা তা-ই। অর্থাৎ লেখার দায়িত্ব লেখকের হলেও, তিনি বিভ্রান্তিকর উসকানি কিম্বা প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানের নামে গুজব ছড়াচ্ছেন কিনা - সেটুকু যাচাই করে দেখার দায়িত্ব সম্পাদক-প্রকাশকের। এক্ষেত্রে "সম্পাদিত" শব্দটা গুরুত্বপূর্ণ - কেননা, অসম্পাদিত মুক্ত ব্লগের ক্ষেত্রে একথা প্রযোজ্য নয়। তবে, "অসম্পাদিত" "মুক্ত" বলে আদৌ কি কিছু একজিস্ট করে? অন্তত এই বাজারে? কিন্তু, সে প্রশ্ন এখুনি অবান্তর, কেননা, জনৈক সৌমিত্র বসু লিখিত, গুরুচণ্ডা৯ সাইটে প্রকাশিত, নন্দীগ্রামের ঘটনা সংক্রান্ত যে পুরাতন (২০০৭ সালে প্রকাশিত) লেখাটি ("প্রতিবেদন" শব্দটি এক্ষেত্রে ঈষৎ গুরুপাক হয়ে যাচ্ছে) ইদানীং পুনরুজ্জীবিত হয়ে পুনরায় হইচই ফেলেছে, সেটি সংশ্লিষ্ট সাইটের "বুলবুলভাজা" বিভাগে প্রকাশিত - যে বিভাগটিতে, সচরাচর, সম্পাদিত লেখাপত্রই প্রকাশিত হয়।
দুশ্চিন্তা করবেন না। আমি পূর্বোক্ত লেখার মুখ্য উপপাদ্যের বিপরীতে, তৎকালীন সরকারি বয়ানের পক্ষে বা নন্দীগ্রামে রাষ্ট্রের ভূমিকার সপক্ষে লিখতে আসিনি। আমার বক্তব্য সংশ্লিষ্ট লেখাটির অতিরঞ্জন, অতিকথন নিয়েই। না, ঠিক অতিরঞ্জন কিম্বা অতিকথন নয় - স্রেফ গুজব ছড়িয়ে অভীষ্ট সিদ্ধির শর্টকাট বাছার প্রবণতা নিয়ে - যে প্রবণতা এখন সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে অনেক বেশি প্রবল। তদুপরি, যাঁরা ইতিপূর্বে, বিপ্লবের মুহূর্তে, গুজব ব্যাপারটাকে দোষের চোখে তো দেখেনই নি, উপরন্তু সে কাজকে রীতিমতো পবিত্র বিপ্লবী কর্তব্যপালন বিবেচনায় জামা টাইট করে ঘুরেছেন, এই প্রবলতর গুজবের বন্যার মুখে তাঁরাও যারপরনাই হতাশ-বিরক্ত-ক্রুদ্ধ-উদ্ভ্রান্ত - কিন্তু, এও সেই ভ্যাসেকটমির প্রাচীন বিজ্ঞাপনের মতোই, "বড় দেরিতে ভাবতে বসেছেন, মশাই"। যে খেলায় জিতে এমন সুরভি ছড়িয়েছেন এতদিন, আজ সেই খেলাতেই হেরে গিয়ে হাতপা ছড়িয়ে কাঁদতে বসাটা হাস্যকর। যা-ই হোক, আলোচ্য লেখাটি থেকে কিছু উজ্জ্বল অংশ পুনরুদ্ধার করা যাক -
"...সেখানকার লোকেরা মূলত: মাছ ধরে। তাদের মাছ ধরা এখন বন্ধ করতে হয়েছে দুটো কারণে। এক, খাঁড়ি আর সমুদ্র মৃতদেহে ভরে আছে। দুই, আরও খারাপ যেটা, হাঙর, কুমীর আর ঘড়িয়ালরা তাজা রক্তের লোভে সুন্দরবন থেকে এইদিকে চলে আসছে। এরা মানুষের শরীর তো খাচ্ছেই, সঙ্গে সমস্ত মাছও খেয়ে নেবে এরকম একটা আশঙ্কা। মাছ ধরতে গেলে জালে কুমীর আর হাঙর উঠে আসছে। এরকম চলতে থাকলে হরিপুরের মানুষ আগামী সপ্তাহখানেক কাজ করতে পারবেনা। স্থানীয় লোকেদের বিশ্বাস, হরিপুরকে শিক্ষা দেবার জন্য এটা প্রশাসন আর সিপিএমের পূর্বপরিকল্পিত।…"
চোদ্দ বছর আগেকার পোস্ট কারা কেন কোন উদ্দেশ্যে আচমকা নতুন করে ভাসিয়ে তুললেন, সেটার যুক্তি বা কারণ আন্দাজ করা মুশকিল। কিন্তু এই চোদ্দই মার্চের আশেপাশে, বিশেষত এবছর যখন নন্দীগ্রাম বিধানসভা আসনটি রাজ্যবাসীর মুখ্য আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেই মুহূর্তে বসে এই প্রতিবেদন পাঠ এক ভিন্নতর সত্যের সামনে দাঁড় করায়। সত্য নয় - সত্যবিকৃতি, অতিকথন, অর্ধসত্য, গুজব, প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানের নামে নিজস্ব রেটরিকমিশিয়ে এক অতিসত্যের নির্মাণ - পোস্ট-ট্রুথ। এই লেখা ফিরে পড়ি, এবং আশেপাশে সোশ্যাল মিডিয়ায় ফেক নিউজ, বিকৃত ইতিহাস, মিথ্যে দাবি - ইউনেস্কো-নাসা-পেন্টাগন-ইউনাইটেড নেশনস কর্তৃক মোদীজি তথা ভারতের শিরোপালাভের খবরই বলুন কিম্বা মুসলমানদের নতুন চক্রান্ত ফাঁসের গল্প - বিকৃত সত্য এবং মিথ্যার জোয়ারে তিতিবিরক্ত হয়েও ভাবতে বসি, পোস্ট-ট্রুথ-এর দায় বা কৃতিত্বটা কেবলমাত্র আইটি সেল-এর 'পরে চাপিয়ে দেওয়াটা কি ঠিক কাজ হচ্ছে!! বিশেষত,গুরুচণ্ডা৯র সম্পাদকমশাই যখন জানান, লেখক সৌমিত্র বসু সেসময় লিবারেশনের সক্রিয় কর্মী (যদিও এই লেখা লিবারেশনের তৎকালীন অফিশিয়াল বক্তব্য কিনা, জানা নেই) - যে লিবারেশন বিহার নির্বাচনের পর দেশের বাম আন্দোলনের আশাভরসা হয়ে উঠতে চলেছে বলে জোরদার প্রচার চলছে - তখন দুশ্চিন্তাটা আরো গভীর হয়।
যেহেতু লেখাটি পুনরায় ভেসে ওঠার পরে, নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টির পরেও,গুরুচণ্ডা৯-র বর্তমান সম্পাদকমণ্ডলী, এখনও, এই লেখায় উল্লেখিত "প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণসমূহে" তেমন অনুচিত কিছু দেখতে পেয়েছেন বলে খবর নেই - বা এই লেখা সেসময় কিছুটা বিভ্রান্ত হয়েই তাঁরা ছেপে ফেলেছেন, এমন কিছু কথা, এমনকি দায়সারা ডিসক্লেইমার হিসেবেও, তাঁরা জানাননি - অতএব, সুন্দরবন থেকে রক্তের গন্ধ পেয়ে হাঙর-কুমীর-ঘড়িয়ালের নন্দীগ্রামের নদীতে উজিয়ে আসার দৃশ্যনির্মাণের পক্ষে জরুরি যে কল্পনাশক্তি, তার কৃতিত্ব লেখকের পাশাপাশি গুরুচণ্ডা৯র সম্পাদকেরও অল্পবিস্তর প্রাপ্য। সাথেসাথে নরখাদক ঘড়িয়াল আবিষ্কারের স্বীকৃতি ও বিরল সম্মানও সম্পাদক, লেখকের সাথে যৌথভাবে, দাবী করতে পারেন। আর মানুষকে জাস্ট ভাতে মারার জন্য ডেডবডি দিয়ে নদী ভরিয়ে তুলে সুন্দরবনের কুমীর ডেকে আনার আইডিয়া - সত্যিই অভাবনীয়!! শুনেছিলাম, চন্দ্রগুপ্ত নাকি একদিন দেখেন, একজন বসে বসে কাঁটাগাছের গোড়ায় চিনির রস ঢালছেন। মানুষটির সুদূরপ্রসারী আশা, গাছের গোড়ায় চিনির রস ঢাললে, সেই রসের লোভে পিঁপড়ের দল এসে কাঁটাগাছের শিকড় খেয়ে গাছটিকে ধ্বংস করে ফেলবে। ইতিহাসের গল্পের সেই রসিক ভদ্রলোকই চাণক্য। কে জানে, নন্দীগ্রাম বিষয়ক লেখাটির লেখকের কল্পনার দৌড়ে তিনি হয়ত সিপিএমের লোক হিসেবে প্রতিভাত হবেন!!
কিন্তু, শুধুই গুরুচণ্ডা৯ কিম্বা তার সম্পাদককে গালি না পেড়ে, এই ধরনের লেখাপত্র কিম্বা এমন অতিসত্যের নির্মাণের প্রবণতা নিয়ে আরেকটু গুছিয়ে ভাবা জরুরি। এই গোত্রের লেখাপত্রকে সঠিক প্রেক্ষিতে বিবেচনা করার স্বার্থে, ভিন্ন এক ওয়েবজিনে প্রকাশিত একটি ভিন্ন ঘটনার প্রায় কাছাকাছি মানের "প্রতিবেদন" থেকে অংশবিশেষ উদ্ধৃত করি -
"...কে জানত যে বাদুরিয়া ছিল একটা ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি, একটি আপত্তিকর হিন্দুত্ববাদী ফেসবুক পোস্টে জেগে উঠে গলগল করে বের করতে শুরু করবে ধর্মের বিষাক্ত লাভাস্রোত? ফেসবুকে ফটোশপ করা কাবা’র একটা ছবি পোস্ট করতেই তা দ্রুত ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। ৩ জুলাই ভোরবেলা কেওশা বাজারে অবরোধ শুরু হয়, তারপর বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাঁশতলা, রামচন্দ্রপুর, তেঁতুলিয়া, গোকুলপুর প্রভৃতি অঞ্চলসহ বাদুরিয়া থানার প্রায় ৩০ কিমি জুড়ে প্রধান রাস্তাগুলি উন্মত্ত জিহাদি মুসলিম জনতা কব্জা করে নেয়। বোমা-বন্দুক ও অন্যান্য ধারাল অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পুলিশের নাকের ডগায় দাপিয়ে বেড়াতে থাকে। টায়ার জ্বালিয়ে সমস্ত রাস্তা অবরোধ করে ফেলে, ফলে ট্রেন-বাস এবং অন্যান্য সমস্ত পরিবহণ চলাচল স্তব্ধ হয়ে যায়। রাস্তা অবরোধেই ক্ষান্ত থাকেনি ওরা, হিন্দুদের দোকান ও বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দেয় ও ভাংচুর করে। বাঁশতলায় একটি শবদেহ সৎকার করতে নিয়ে যাচ্ছিল একটি হিন্দু পরিবার। মুসলিম-রোষের কবল থেকে রক্ষা পায়নি শববহনকারী গাড়িটিও, ভাংচুর করে ফিরিয়ে দেয় পৈশাচিক মত্ততায়। শায়েস্তানগরের শফিরাবাদে একটি স্কুল থেকে বলা হয়েছিল যে দুপুরের খাবার খাওয়া শেষ হলেই স্কুল বন্ধ করে দেবে। কিন্তু সেটুকুও তর সয়নি, স্কুলটি ওরা ভাংচুর করে লণ্ডভণ্ড করে দেয়। হিংস্র মুসলিম জনতার হাত থেকে হিন্দুদের রক্ষা করতে পুলিশের কার্যকরী কোনও ভূমিকাই চোখে পড়েনি।…"
একেবারেই ভিন্নমেরুর পোস্ট - কিন্তু, "প্রতিবেদনের" সুরের মিলটি লক্ষ্যণীয় - কন্টেন্ট অগ্রাহ্য করে যদি শুধুই ভাষার দিকটা খেয়াল করেন, মনে হতেই পারে, নন্দীগ্রাম এবং বাদুড়িয়া লেখাদুটি একই লেখকের - কিন্তু, গায়ে চিমটি কেটে আমাদের খেয়াল রাখতেই হবে, প্রথমজন মহৎ বিপ্লবী কর্তব্যপালন করছিলেন এবং দ্বিতীয়জন ঘৃণ্য ফ্যাসিবাদের হয়ে কলম ধরেছেন। পাশাপাশি লক্ষ করুন, দ্বিতীয়জন অন্তত দাঙ্গার ইন্ধনের ক্ষেত্রে "আপত্তিকর হিন্দুত্ববাদী ফেসবুক পোস্ট"-এর কথা উল্লেখ করেছেন, কেননা সে না হলে লেখকের নিরপেক্ষতার মুখোশ খসে পড়ে লেখাটি গ্রহণযোগ্যতা হারায় - আর বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠতে না পারলে, এমন লেখাটি মাঠে মারা যায়!! খুবই সচেতনভাবে, নির্মোহ দর্শকের দৃষ্টিতে আপাত-নিরপেক্ষ বিচারশক্তির ভান রেখেই এই দ্বিতীয় লেখায় বিদ্বেষের আগুন ছড়ানো হয়েছে - পরিকল্পিতভাবেই, লেখকের মতামত নির্মোহ সত্যের ঢঙে গুঁজে দেওয়া হয়েছে - প্রথমটিও কি তা-ই নয়? দ্বিতীয় লেখার বিশ্লেষণের অংশটি পড়ে দেখুন -
"...বাদুরিয়া দাঙ্গায় অন্তত চারটি নতুন বিশেষ বৈশিষ্ট আমার চোখে ধরা পড়েছে। সেগুলি হল– (১) ইসলামের পক্ষে আপত্তিকর পোস্টের প্রতিবাদে বাংলাদেশের মতোই মুসলিম মৌলবাদীরা নির্দোষ হিন্দুদের ওপর বীভৎস সন্ত্রাস ও অত্যাচার সংগঠিত করল। এবং সন্ত্রাসের সময় বাংলাদেশের সরকার যেমন আক্রান্ত হিন্দুদের নিরাপত্তা দেয় না, পশ্চিমবঙ্গের সরকারও তাই করল। (২) এ’রাজ্যে মুসলিম মৌলবাদীদের হাতে আক্রান্ত হলে হিন্দুরা সাধারণতঃ ভয়ে পিছু হটে এবং পুলিশের কাছে নিরাপত্তা চায়। এবার কিন্তু বিপরীত ছবি দেখা গেল। হিন্দুরাও নির্দোষ মুসলমানদের উপর পাল্টা আক্রমণ ও সন্ত্রাস করল। (৩) মুসলিম মৌলবাদীদের হাতে হিন্দুরা আক্রান্ত হলে এ’রাজ্যের সংবাদ মাধ্যমগুলি তা প্রচার করে না। মুসলিম মৌলবাদীদের আড়াল ও তুষ্ট করাই ছিল তাদের এতদিনের নীতি। সেই নীতি তারা এবার বর্জন করল। অবশ্য খবর নির্বাচন ও প্রচার করার ক্ষেত্রে মুসলিম মৌলবাদীদের তুষ্ট করার নীতি তারা ত্যাগ করেনি। (৪) মুসলিম মৌলবাদীদের যেকোনও সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডকে তুচ্ছ ঘটনা বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এতদিন চেপে গেছেন। তিনি এবার এই প্রথম রাজ্যপালের গুঁতায় সাংবাদিক সম্মেলনে প্রকাশ্যেই স্বীকার করলেন যে মুসলমানরাই দাঙ্গা শুরু করেছে। বলেছেন, ‘এই কমিউনিটিকে, যারা কাল থেকে শুরু করেছে তাদের বলব আপনাদের জন্য আমাকে অনেক কথা শুনতে হয়েছে….।’ এরপর অবশ্য স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে তিনি সমস্ত দোষ বিজেপির ওপর চাপিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, বিজেপিই পরিকল্পিতভাবে দাঙ্গা লাগিয়েছে।…"
(উপরের লেখার অংশ durmor.com ওয়েবজিন থেকে নেওয়া। এধরনের লেখালিখির ওয়েবজিন/ওয়েবপোর্টাল অনেকই রয়েছে - একাধিক উদাহরণ নিষ্প্রয়োজন।)
অতএব, বাম এবং ডান, দুই পক্ষেরই প্রত্যন্ত প্রান্তে, নিজেদের অ্যাজেন্ডা মানুষের কাছে বেশি আকর্ষণীয় করে তোলার খাতিরে, বয়ানের সত্যতা নিয়ে কম্প্রোমাইজের নজির অজস্র। এমত পরিস্থিতিতে, রাষ্ট্র কর্তৃক মিথ্যা তথ্য/সংবাদ প্রচারে তাঁরা যদি বিচলিত বোধ করেন, তাহলে প্রশ্ন করা যায় - আপত্তিটা ঠিক কোথায়? রাষ্ট্র কেন সত্যি না বলে মিথ্যে বলছে, সে নিয়ে? নাকি, মিথ্যাকথন ব্যাপারটা রাষ্ট্রের মত মহান প্রতিষ্ঠানের মুখে শোভা পায় না, আপত্তিটা এই জায়গায়?
মোদ্দা কথাটা হল, উদ্দেশ্যসিদ্ধির স্বার্থে তথ্যবিকৃতি বা অতিকথন - কিম্বা প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানের নামে স্পষ্টতই গুজব ছড়ানো - কতখানি নৈতিক? আর শুধুই লক্ষ্য দিয়ে অভীষ্ট অর্জনের পথটিকে জাস্টিফাই করা হলে, বিপরীত মতাবলম্বীরা যখন সেই একই রাস্তা ধরতে যান - তাঁদের সমালোচনা করার ন্যূনতম নৈতিক অধিকার থাকে কি?
আন্দোলনে জনসমর্থন জরুরি। কিন্তু, সে উদ্দেশ্যে মিথ্যা প্রচার কতখানি সঙ্গত? কৃষিজমি অধিগ্রহণ অন্যায্য বলে মনে করতেই পারেন - আপনার মতের সপক্ষে যুক্তি নিয়ে মানুষের কাছে গিয়ে মানুষকে বোঝান - কৃষির গুরুত্ব নিয়ে কথা বলুন, কৃষিজাত পণ্যের বাজার-প্রক্রিয়াকরণ ইত্যাদি বিষয়ে নিজেদের ভাবনার কথা বলুন, সরকারি দায়বদ্ধতার অভাব নিয়ে বলুন - পরিবেশের 'পরে পরিকল্পনাহীন শিল্পের কুপ্রভাব ও তজ্জনিত বিপদ নিয়ে জনমত তৈরী করুন। মানুষকে সাথে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলুন - রাষ্ট্র যখন হিংস্র, আন্দোলনও বৈষ্ণবী বিনয় দিয়ে হবে না, এটুকু বোঝাই যায়। তবে মানুষকে পাশে নেওয়াটা একেবারে প্রাথমিক কর্তব্য। মুশকিল, কাজটা করতে ধৈর্য লাগে - শ্রম লাগে - মাটি কামড়ে পড়ে থাকার মানসিকতা লাগে। তার চাইতে ঢের সহজ কাজ, এমন গুজব মুখে মুখে চাউর করে দেওয়া, যে, সরকার বেছে বেছে মুসলমানদের জমি কেড়ে নিচ্ছে - কিম্বা জমির উপর দিয়ে হাই টেনশন লাইন গেলে, বাড়ির কাছে গ্রিড স্টেশন বসলে গুষ্টিসুদ্ধ সকলে যৌনক্ষমতা হারিয়ে বন্ধ্যা হয়ে যাবে - এধরনের প্রচার গুছিয়ে চালানো গেলে, জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলনে চটজলদি জনসমর্থন মেলে। কোনটা করবেন? লক্ষ্যে পৌঁছাতে শর্টকাট ধরবেন? কেননা, এন্ড জাস্টিফাইজ দ্য মিনস??
গুজব, অর্ধসত্য, এমনকি নির্ভেজাল মিথ্যে বলে পাব্লিক মবিলাইজ করার মুশকিলটা কোথায় জানেন? এই শর্টকাট পথে চটজলদি জনমত গড়ার স্ট্র্যাটেজি নিয়ে যে খেলা, সে খেলার ভেন্যু প্রতিপক্ষের হোমগ্রাউন্ড - সে খেলায় তাদের জনবল এবং অর্থবল, দুইই প্রবল - দক্ষতাও প্রশ্নাতীত। ইন ফ্যাক্ট, নন্দীগ্রামের আন্দোলনের সময়ে, রাষ্ট্রশক্তির সৎ বিরোধিতা করার মুহূর্তেও, এক মিলিজুলি প্রবল শক্তি - ভিন্নতর উদ্দেশ্য নিয়ে হলেও - আন্দোলনে হাত না মেলালে, হাজার গুজব ছড়িয়েও সে খেলা জেতা যেত না। ঠিক যেমন এই দফা জেতা গেল না ভাঙরে - স্রেফ একের পর এক মিথ্যে মামলা সাজিয়েই একটি গণ-আন্দোলনকে শেষ করে দেওয়া গেল, বৃহত্তর জনমত গড়ে ওঠার সুযোগই পেল না। নন্দীগ্রামের জয়ের পাশাপাশি ভাঙরের শিক্ষাও কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
নন্দীগ্রাম বিষয়ক গুজব-ধর্মী, থুড়ি প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান-নির্ভর লেখাটির শেষে, লেখক নিজেকে এক অন্য উচ্চতায় স্থাপনার মহৎ প্রয়াস পেয়েছেন - কেননা, তাঁর চোখে তিনি ইতিহাসের দলিল রক্ষার বিশ্বস্ত সেনানী -
"...আমাদেরই তাই লিখতে হবে বিকল্প ইতিহাস। অন্য কোনো বিকল্প নেই। আমি জানিনা, কে কতটা বিশ্বাস করলেন, তবে নাম-ধাম-সূত্র সবই দেওয়া রইল আগ্রহী মানুষ, ইতিহাসকার এবং ভবিষ্যতের জন্য। যদি কেউ চান, তিনি যাচাই করতে পারেন। খুঁড়ে বার করতে পারেন। এ ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প আছে কিনা আমার জানা নেই।"
চেয়ে দেখুন। চারপাশে "বিকল্প ইতিহাস" লেখার গুরুদায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন অসংখ্য সেনানী। কুলোকে তাঁদের অবশ্য আইটি সেল বলে। কীভাবে দেখবেন তাঁদের? সহযোদ্ধা? সহযাত্রী? প্রতিদ্বন্দ্বী? দেশের শত্রু? বিপজ্জনক? ফ্যাসিবাদের বাহক? নাকি, কুমীর? না, হলদি নদীর নয় - আপনার কাটা খাল ধরে আপনার পরিসরটিকেই গিলে খেতে উদ্যত কুমীর??
একটা গল্প মনে পড়ে গেল। এক স্টেশনে প্রায় কাছাকাছি সময়ে আপ ও ডাউন দুদিকেরই রাজধানী এক্সপ্রেস এসে দাঁড়ায়। এক ভদ্রলোক, ভুল করে, দিল্লী যাওয়ার ট্রেন ধরতে গিয়ে উল্টোদিকের ট্রেনে চড়ে বসলেন। খানিকক্ষণ বাদে পার্শ্ববর্তী সহযাত্রীর কথাবার্তা শুনে বুঝলেন, সহযাত্রী কলকাতা চলেছেন। এবার তিনি আর নিজের বিস্ময় চেপে রাখতে পারলেন না। "দাদা, টেকনোলজির কি অপার মহিমা!! একই ট্রেনে, একেবারে পাশাপাশি সিটে বসে, আপনি যাচ্ছেন দিল্লি, আর আমি যাচ্ছি কলকাতা!!!!"
হতেই পারে, আপনি কোনো মহত্তর লক্ষ্যে লড়াই করছেন। হতেই পারে, আপনি সমাজবদল ঘটিয়ে শ্রেণিহীন সমাজের স্বপ্ন দেখছেন - আর বিপরীত শিবির চাইছে ঘৃণা-বিভাজনের ভিত্তিতে নির্মিত এক রিগ্রেসিভ সমাজব্যবস্থা। কিন্তু, ঠিক একই পথ ধরে দুটি ভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছানোর আশা কতদূর সমীচীন??
২০১৬ সালে, অক্সফোর্ড ডিকশনারি, পোস্ট-ট্রুথ শব্দটিকে ওয়ার্ড অফ দ্য ইয়ার স্বীকৃতি দেয়। নন্দীগ্রাম ঘটে গিয়েছে তার প্রায় এক দশক আগেই - অতএব, আমাদের ওই পোস্ট-ট্রুথ কনসেপ্ট-এর সাথে আগেই পরিচয় হয়ে গিয়েছে - নন্দীগ্রামে, জঙ্গলমহলে, জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় - কম তো দেখার সুযোগ হয়নি আমাদের। পোস্ট-ট্রুথ, অর্থাৎ কোনো বিষয়/ঘটনার সত্যতা বলতে যে নৈর্ব্যক্তিক বৈশিষ্ট্যগুলোকে আমরা সাধারণত চিনি, সেই ধারণাটাই গায়েব হয়ে যাওয়া। আগেই যেমন বললাম, এক অতিসত্য - যেখানে সত্যের জায়গা নেয় অর্ধসত্য, বিকল্প বয়ান, মতামত, বিশ্বাস, ধারণা ইত্যাদির এক জগাখিচুড়ি।
আর, এর বিপদ বিষয়ে টিমোথি স্নাইডারের কথাটুকু মনে রাখলে ভালো হয় -
"Post-truth is pre-fascism... When we give up on truth, we concede power to those with the wealth and charisma to create spectacle in its place. Without agreement about some basic facts, citizens cannot form the civil society that would allow them to defend themselves. If we lose the institutions that produce facts that are pertinent to us, then we tend to wallow in attractive abstractions and fictions... Post-truth wears away the rule of law and invites a regime of myth."
সারকথা দাঁড়ায়, পোস্ট-ট্রুথ ফ্যাসিবাদের প্রাক-শর্ত। যখন সত্য থেকে দূরে সরে যাই, তখন অর্থবান ও চটকদার নেতাদের হাতে পুরো ক্ষমতা দিয়ে দিই আমরা - চমকপ্রদ গল্প বা চিত্রনাট্য তৈরী করে আমাদের বিভ্রান্ত করার, ভুলিয়ে রাখার ক্ষমতা। পোস্ট-ট্রুথ-এর পথ ধরেই আমরা বাস্তবতা ও যুক্তির দুনিয়া ছেড়ে এক অলীক মিথ-এর শাসন ডেকে আনি।
আজ যখন ফ্যাসিবাদ সত্যিই দুয়ারে কড়া নাড়ছে, যখন তার প্রতিরোধ আশু কর্তব্য বলে আমরা বিশ্বাস করি, তখন, নিজেদের পুরোনো ভুলগুলো, ভুল পদক্ষেপগুলো ফিরে দেখা জরুরি বলে মনে হয়। দুদিক থেকে জরুরি - প্রথমত, সেই ভুলের পুনরাবৃত্তি যেন আর না ঘটে। এবং দ্বিতীয়ত, যে বিপদে হাবুডুবু খাচ্ছি, তার কতখানি স্বখাত সলিল, সেটুকু বুঝতে পারাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। আগেই যেকথা বললাম, কুমীর সবসময় হলদি নদীর লাশের অপেক্ষায় থাকে না - অনেকসময়, নিজের কাটা খাল ধরেও আসতে পারে।
কে বন্ধু আর কে শত্রু, কার অন্তর্নিহিত গুপ্ত অভিপ্রায় কী - এসবের চুলচেরা বিশ্লেষণের পূর্বে, প্রাথমিক কর্তব্য হোক, নিজের সাথেও অল্পবিস্তর পরিচিতি। দৈবাৎ যদি ভুলেও গিয়ে থাকেন, মনে করিয়ে দেওয়া যাক - আয়না জিনিসটা সত্যিই কাজের - আমার জন্যেও, আপনার জন্যেও।
এই বঙ্গে নন্দীগ্রাম পোস্ট ট্রুথের প্রথম ফ্যাক্টরি। তারপর থেকে সেই মেশিনের চাকা ঘুরেই চলেছে।
ভালো লেখা। নন্দীগ্রাম পরবর্তী মহামিছিলের প্রতিটি প্রক্রিয়া জানি। আমি তৎকালীন শাসক দলের সমর্থক বা ক্যাডার কোনটিই ছিলাম না। কিন্তু আমার জীবনের এক দীর্ঘ সময়ের সর্বক্ষণের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতায় বুঝেছিলাম - এর পরবর্তী পরিবর্তন রাজনৈতিক-সামাজিকভাবে কাঙ্ক্ষিত নয়। সে মহামিছিলের জন্য যে তৃতীয়/বাম পরিসর তৈরি হয়েছিল তা দীর্ঘদিন ধরে মানুষের সংগ্রামের ফসল। এই পরিসরটিকে মেরে ফেলার কোন চেষ্টা পূর্ববর্তী সরকার করেনি।
এজন্য নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সৎ বন্ধুদের জিজ্ঞাসা করেছিলাম - এরপরে কি? আরও বড়ো সংকট ডেকে আনছিস না তো? আমি সাফদার হাসমির স্মৃতি উল্লেখ করেছিলাম। তৃতীয় পরিসর/নাগরিক পরিসর থাকা কত জরুরি এটা বলার জন্য।
ওদের উত্তর ছিল - আবার প্রয়োজনে লক্ষ লোকের মিছিল করবো। পালটে দেবো। আমি শুধু মৃদু হেসে বলেছিলাম - এভাবে ইতিহাস এগোয়না, তৈরিও হয়না।
গণশক্তির পাতাতে অনেকের স্বাক্ষর সমেত একটি আবেদন প্রকাশিত হয়েছিল নন্দীগ্রামের মানুষের কথা শোনার আবেদন জানিয়ে। আমিও একজন স্বাক্ষরকারী ছিলাম।
পোস্ট ট্রুথের অংশটি নিয়ে কিছু বলবোনা। শুধু একথাটুকু বলা যায়, ফেসবুক রাষ্ট্রের বাসিন্দা ২২০ কোটি মানুষ। পৃথিবীর বৃহত্তম ভারচ্যুয়াল রাষ্ট্র। এর জনমত উৎপাদন ক্ষমতা নিয়ে অসংখ্য লেখা বেরিয়েছে।
৩০ ভাগ গুল্প, ২০ ভাগ গল্প, ৪০ ভাগ গুজব আর ১০ ভাগ ঘটনা নিয়ে যা গড়ে ওঠে তা শক্তিশালী পোস্ট ট্রুথ। এর সাথে ক্ষমতা সম্পর্ক অতি নিবিড়ভাবে জড়িত, সংপৃক্ত। একে বল্গাহীনভাবে ছড়াতে দেওয়া যায়না মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে।
লেখাটার প্রচুর প্রচার হওয়া দরকার।
খুব ব্যালান্সড লেখা। ভালো লাগল।
এথিক্স তো এখন সংগ্রহশালার অ্যান্টিক সামগ্রী।গল্প নয়,সত্য ঘটনার গরু গাছে ওঠে আজ।
এই লেখাটি পড়ুন প্লিজ। নড়েচড়ে, চোখকান খোলা রেখে বসুন অন্তত...
ফেক নিউজ সবসময়ই ফেক নিউজ। "তুমি বললে ফেক নিউজ, আমি বললে না', নয় কিন্তু। ২০০৭ এ গুরুচন্ডা৯র সঙ্গে আমার পরিচিতি ছিল না। তখন সোমিত্র বসুর লেখাটা পড়ার সুযোগ ঘটে নি, আর ঘটলেও কলকাতায় বসে হয়ত ধরতে পারতাম না মিথ্যার বেসাতি। কেননা সব বাজারি মিডিয়াই তখন একসুরে গাইছে। পার্টজান নয় বলে সেসময়ের শাসকদের কাগজপত্র ও পড়তাম না। তবে চোদ্দ বছর পর ফিরে দেখার সময় মনে হচ্ছে যে সেসময়ের গুরুর সম্পাদকমন্ডলীর ও দায় ছিল প্রতিবেদনটি প্রকাশের আগে তার তথ্যের সত্যতা যাচাই করা। নিঃসন্দেহে সেটা একটা ভুল। আশাকরব গুরুচন্ডা৯র সম্পাদকমন্ডলীর তরফ থেকে অন্তত পোস্ট-ফ্যাক্টো ভুল স্বীকার করা হবে।
পার্টিজান হবে।
এই কুমীর আর নানা জন্তুর মানুষ খাওয়ার গল্প , সাথে শিশুদের পা চিঁড়ে ফেলা বা মহিলাদের স্তন কেটে দেয়ার গল্পের গরু এতটাই গাছে উঠেছিলো যে আমার অফিসের বসও আমায় ডেকে চা খাইয়ে সে গল্প শুনেছিলেন । আমার অবিশ্বাস্য মনে হলেও , মনের কোনে এক অবিশ্বাস তৈরী হয়েছিল তো বটেই । সব ফিরে দেখছি , কত কত 'সুশীল বিপ্লবী'দের হাত ছিল সে খেলায় তা বলাই বাহুল্য । আর একটা মিথ্যা কি প্রবলভাবে আরো অসংখ্য মিথ্যার বেষ্টনীতে সন্নিবদ্ধ হয়ে থাকে , সে তো আমরা সকলেই জানি । একদিন হয়তো এও প্রমানিত হবে , ১৪ই মার্চ ব্যাপারটাই এক 'সাজানো খেলা' - সিপিএমের কিছু প্রারম্ভিক খেলার সুযোগ নিয়ে ! দেখা যাক৹৹৹৹৹৹৹
ধরুন আমি শিয়ালদা স্টেশনে দাঁড়িয়ে যখন রাতের ট্রেনে বনগাঁয় বাড়ি ফিরব ভাবি, তখন বনগাঁকে আমার পৃথিবীর সবচেয়ে দূরের একটি জায়গা বলে মনে হয়। আবার সেই আমিই যখন আমেরিকা থেকে কলকাতা ফিরব ভাবি, তখন শিয়ালদা আর বনগাঁর মধ্যের দূরত্ব সম্বন্ধে আমার সেরকম কোনো অনুভূতি হয়না। দুটৈ তখন আমার থেকে সমদূরের। এই লেখাটার সমস্যা হল এই ঘটনা থেকে তার দূরত্ব। যেখান থেকে দেখলে ক্ষমতাসীনের তৈরী করা গুজব আর ক্ষমতাহীনের তৈরী করা গুজবকে একই ওজনের বলে মনে হয়। দূরত্বের একটা সুবিধেও আছে, তা একধরণের অবজেক্টিভিটি দিতে সাহায্য করে। কিন্তু কার পক্ষে দাঁড়িয়ে আমি অবজেক্টিভিটির অনুসন্ধন করছি, এটা স্পষ্ট করে নিতে হয় শুরুতেই। বিশেষত যেখানে দুই পক্ষে যথাক্রমে রাষ্ট্র এবং ক্ষমতাহীন সাধারণ মানুষ। এই পক্ষপাত ঘেঁটে গেলে কার্য্য কারণ গুলিয়ে যায়, যা এই লেখাটার মূল সমস্যা। নন্দীগ্রামে গুজব তৈরী হল কেন? কীভাবে হতে পারল? তার মূল কারণ হল রাষ্ট্র নন্দীগ্রামে 'নিরপেক্ষ' পর্যবেক্ষকের ঢোকা নিষিদ্ধ করে রেখেছিল। তাকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল। এই বিষয়টাকে বাদ রেখে এই আলোচনার কোনো মানেই নেই। আজ যখন সেনা দিয়ে কাশ্মীরকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়, ইন্টারনেট বন্ধ করে তাকে বহির্জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়, তখন কাশ্মীরে সেনা অত্যাচার নিয়ে গুজব রটলে তার দায় কার? কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের? এই সহজ প্রশ্নটার উত্তর আসুক আগে। তারপর বাকি আলোচনা।
@ দায় কার " তার মূল কারণ হল রাষ্ট্র নন্দীগ্রামে 'নিরপেক্ষ' পর্যবেক্ষকের ঢোকা নিষিদ্ধ করে রেখেছিল। " মানে বলতে চাইছেন রাষ্ট্র নিজের পুলিশ কে নন্দীগ্রাম থেকে বের করে নিয়ে এসে ওখানে মুক্তাঞ্চল করার জন্য সক্রিয় সহযোগিতা করল, তারপর নিজেই রাস্তা কেটে দিলো যাতে রাষ্ট্রের পুলিশ আর না ঢুকতে পারে? নিউজ চ্যানেলে মাওবাদী নেতারা যে গামছা মুখে বেঁধে বক্তৃতা দিতেন সেই সংবাদ মাধ্যম কি নিরপেক্ষ ছিলো না? সত্যি কথা হলো ছিল না। সিপিআইএম ক্যাডার দের যেভাবে নন্দীগ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হলো সেটা কোনো চ্যানেলে সমান গুরুত্ব দিয়ে প্রচার হয় নি। আজও কেউ সেই কথাটা পাত্তাই দেন না।
আসলে খুব দরকার ছিল বামপন্থী সরকারকে উৎখাত করা ও দুর্বল করা। মানুষও সায় দিয়েছেন। ভালো হলো যে বামপন্থীদের দুর্বল করতে গিয়ে দেখা গেলো বিজেপি ক্ষমতায় চলে এলো ও সব বেচে দিলো। পাল্টা narrative এর অভাবে বিজেপি কে কেউ আটকাতে পারবে না যারা পারতো তারা প্রায় লুপ্ত।
বেকারদের কর্মসংস্থান এর সম্ভাবনা ও এই দিন চিরতরে শেষ হয়ে যায় (দায় যে পক্ষেরই হোক) কারণ কোন পাগল শিল্পপতি এখানে শিল্প করতে আসবে! তবে বেকারদের চাকরির স্বপ্ন ধ্বংস হয়ে যাওয়া নিয়ে কাউকে কথা বলতে দেখা যায় না, যদিও এদের সংখ্যা কোটিতে।
পশ্চিমবঙ্গ থেকে ইন্ডাস্ট্রি মায়ের ভোগে গেছে যবে থেকে স্ট্রাইক করে করে কোম্পানিগুলোকে ভোগে পাঠিয়েছে, লাখ লাখ শ্রমিকের চাকরি খেয়েছে।
@ বেকার এগুলো myth, tmc ও কংগ্রেস বলত। মাসুল সমীকরণ নীতি ও লাইসেন্স রাজ্যের জন্য একদিকে শিল্প গুটিয়ে নেয় অন্যদিকে নতুন শিল্প স্থাপন করা খুব কঠিন ছিল। পড়ে দেখুন গুজরাটের উন্নতির কারণ ই হলো মাসুল সমীকরণ নীতি যা এখানের ক্ষতির কারণ। Life is zero sum game (যে যাই বলুক এটাই সত্যি)। শিল্প bjp ত্রিপুরায় এসে কি করলো ? যা ছিল সেগুলো ও contractual করে দিলো। একদিন বুঝবেন একটু দেরি হবে আর কি।
"There is an influential popular narrative around the question of lack of industry in West Bengal. It goes something like this — militant trade unionism of the Left parties ruined West Bengal’s industries although West Bengal was an industrial power house during the Congress regime."
বাকিটা পড়ে নিন।
https://www.downtoearth.org.in/blog/economy/why-the-lack-of-industry-in-west-bengal--64679
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লেখা। মিথ্যে বলে সাময়িক জয় হয়তো হয় (হয় কি?), কিন্তু মিথ্যের জয় সত্যের পরাজয়। যাঁরা সত্যকে ভয় পান তাঁরাই মিথ্যে, অর্ধ সত্য, আর পোস্ট-ট্রুথের মাধ্যমে আখেরে সমাজের ক্ষতিই করেন।
রাজাবাবুর সংশয় যথাযথ। সিপিএমকে ধরুন। অর্ধসত্য আর মিথ্যার মাধ্যমে তারা কিছু ফায়দা লুটেছে বটে, কিন্তু আখেরে সমাজের ক্ষতিই করেছে।