প্রশ্ন: নাগরিকত্ব সংশোধনী, ২০১৯ বা সি এ এ বর্তমান বিধানসভা নির্বাচনে কতটা গুরুত্ব পাচ্ছে?
উত্তর: দেশে এই মুহূর্তে পাঁচটি বিধানসভার নির্বাচন হচ্ছে, তার মধ্যে তিনটি রাজ্যে সি এ এ জ্বলন্ত ইস্যু। যুযুধান রাজনৈতিক দলগুলি সি এ এ বা এন আর সি-র কথা ইস্তেহারে রেখেছে, সেই নিয়ে প্রচার করেছে।
প্রশ্ন: তিনটি রাজ্য মানে? পশ্চিমবঙ্গ আর আসামে সি এ এ, এন আর সি এইগুলো জ্বলন্ত ইস্যু? এতদ্ব্যতীত কি কেরালা? যারা সি এ এ বিরোধী প্রস্তাব বিধানসভায় পাশ করিয়ে রেখেছে?
উত্তর: না। তামিলনাড়ু। তামিলনাড়ুতে মূল দুটি দল, ডি এম কে এবং এ আই ডি এম কে উভয়ই তাদের নির্বাচনী ইস্তেহারে রেখে সি এ এ নিয়ে প্রস্তাব রেখেছে। আরও মজার বিষয়, দুটি দলই সি এ এর বিরোধিতা করছে। এ আই ডি এম কে কেন্দ্রীয় সরকারের শরিক হওয়ায় বলেছে, সি এ এ বাতিল করার বিরুদ্ধে কেন্দ্রের সম্মতিনির্মাণের কথা
(https://www.indiatoday.in/elections/tamil-nadu-assembly-polls-2021/story/in-manifesto-aiadmk-promises-to-make-bjp-rethink-caa-ally-says-law-will-not-be-scrapped-1779337-2021-03-15)। অন্যদিকে ডি এম কে বলেছে জিতলে আইনসভায় সি এ এ বিরোধী প্রস্তাব পাশ করানো হবে
(https://www.thehindu.com/news/cities/chennai/dmk-promises-resolution-in-assembly-against-caa/article34066804.ece )। আইনি ও আন্দোলনের চাপে এই সংশোধনী প্রত্যাহার করতে হবে। মোটের উপর, সি এ এ পশ্চিমবঙ্গ আসামের বাইরে, তামিলনাড়ুতেও এক জ্বলন্ত সমস্যা। আমরা ২০১৯-এর শেষদিকে আইনটি তৈরি হওয়ার পরে, সেই রাজ্যে এই নিয়ে অশান্তির কথা মনে করতে পারি। তামিলনাড়ুর সমস্যা সি এ এ-র চরিত্রগত ত্রুটির একটা উদাহরণ।
প্রশ্ন: তার মানে শ্রীলঙ্কা থেকে আসা তামিল শরণার্থীদের কোনও সুরাহা সি এ এ তে হয় নি, সেইটা তামিলনাড়ুর ভোটের ইস্যু। এখানে দুটো জিনিস জানবার দরকার, ১) তামিল শরণার্থীর সমস্যা ভারতে ঠিক কতটা এবং ২) সি এ এ থেকে এঁদের বাদ পড়াকে আইনটির চরিত্রগত ত্রুটির কারণ বলা হচ্ছে কেন?
উত্তর: সি এ এ-র চরিত্র সার্বিকভাবে মেলে ধরতে তামিল শরণার্থী খুব গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হতে পারে। এক দেশ থেকে অন্য দেশে মানুষের চলে যাওয়ার যতগুলি কারণ আছে, তার প্রায় সব কটিই শ্রীলঙ্কা থেকে ভারতে আসা তামিলদের কোনও না কোনও গোষ্ঠীর মধ্যে দেখা যায় (https://frontline.thehindu.com/cover-story/article30328790.ece )। কাজের সন্ধানে, ভালো খাওয়া পরার আশায় ঐতিহাসিক কাল জুড়ে মানুষের পরিযান ঘটেছে (মাইগ্রেশন)। ব্রিটিশ আমলে শ্রীলঙ্কার খামারে কাজ করার জন্য তামিলনাড়ু থেকে ভারতীয় শ্রমিক নিয়ে যাওয়া হয়, যাঁদের প্ল্যান্টেশন তামিল বলা হয়। ১৯৬৪ সালে শ্রীলঙ্কায় নাগরিকত্ব আইন পাশ করে, যাতে একটি ভিত্তিবর্ষ ধরে, তার পরে জন্মানো সকলকে কেবলমাত্র পিতার নাগরিকত্বের ভিত্তিতে নাগরিক গণ্য করা হল। পাঠক ভারতের নাগরিকত্ব আইনের বর্তমান চেহারার সঙ্গে এর মিল পাবেন। এর ফলে লক্ষাধিক প্ল্যান্টেশন তামিল একধাক্কায় অনাগরিক হয়ে গেল। শুধু অনাগরিক নয়, তাদের একটি প্রজন্ম শ্রীলংকাতেই জন্মানোয়, তাদের কোনও রাষ্ট্রের পরিচয়ই থাকল না। শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে লালবাহাদুর শাস্ত্রীর চুক্তির ফলে তাঁদের ভারতে স্থানান্তরীকরণ করা হতে থাকে । এবং ষাট দশক থেকে শুরু করে গৃহযুদ্ধ অবধি এক বিরাট পর্যায় জুড়ে বহু শ্রীলঙ্কান তামিলকে ভারতে পাঠানো হয়। শ্রীলঙ্কান তামিলদের তামিলনাড়ুর মূলস্রোতে অন্তর্ভুক্তি অনেকটাই বাংলাদেশ থেকে দক্ষিণবাংলায় আসা মানুষের সঙ্গে মেলে। ভাষা, জাতি, আচার-আচরণ সমান হওয়ায় এঁদের অনেকে বসবাস, জীবিকা এমন কী ভোটাধিকারও পান। আবার কিছু মানুষকে উদ্বাস্তু ক্যাম্পেও থাকতে হয়। আরেকদল আসেন গৃহযুদ্ধগুলির ফলশ্রুতিতে, শরণার্থী হয়ে। তাঁরা তামিলনাড়ু এবং কেরালায় বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় পান, এবং বিদেশি শরণার্থী হিসেবে তাঁদের চলাচলের উপর বিধিনিষেধ আছে। সরকারি বিভিন্ন সুযোগ সুবিধে তাঁরা পান না, উপরন্তু, তাঁদের এই দেশে কাজ করবার বৈধতা নেই। এক লক্ষের উপর এরকম শরণার্থী আছেন।
রাজনৈতিক দল, বিশেষত বিজেপি ও তার জোটসঙ্গীরা এঁদের প্রতি এর আগে বহুবার সহানুভূতি দেখিয়েছেন এবং নাগরিকত্বের ইস্যুটি সমাধান করার কথা বলেছেন। অথচ, দেখা গেল ২০১৯-এর আইনে শ্রীলঙ্কা থেকে আসা শরণার্থীদের কোনও স্থান হল না। এর ফলে দুটো জিনিস হল, প্রথমত গৃহযুদ্ধের ফলে শরণার্থী শিবিরে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের বন্দিত্ব ঘুচল না এবং গত চার পাঁচ দশক ধরে যে লক্ষলক্ষ মানুষ শ্রীলঙ্কা থেকে এসে তামিলনাড়ুর মূল স্রোতে মিশেছেন, তাঁদের নাগরিকত্বের উপর প্রশ্ন উঠল। বিশেষত, সি এ এ-র ক্রোনোলজি যেহেতু এন আর সি, এই ভয়টা জাঁকিয়ে বসার অবকাশ পায়। এখন প্রশ্ন, এঁরা কেন বাদ পড়লেন? আমরা উল্টোদিকে তুলনা করতে পারি আফগানিস্তান থেকে আসা শরণার্থীদের সঙ্গে, যাঁদের অনেকে দিল্লির লাজপৎ নগরে উঠেছেন এবং স্থানীয় বাজারে ব্যবসাপত্র করে জীবিকা নির্বাহ করেন। রাষ্ট্রসংঘের শরণার্থী দপ্তরের হিসেবে এঁদের সংখ্যা ১১০০০-এর মতন। সি এ এ কিন্তু, এঁদের নাগরিকত্বের বৈধতা দেখিয়েছে। আফগানিস্তান ভারতের সরাসরি প্রতিবেশী নয় যে নিয়মিত হারে সেখান থেকে মানুষ এই দেশে ঢুকবেন, তাই সংখ্যাটা কম থেকেছে। স্মর্তব্য, আফগানিস্তান পৃথিবীর মধ্যে সর্ববৃহৎ শরণার্থী নির্গমনের দেশ, কিন্তু সেখানকার অধিকাংশ শরণার্থী প্রতিবেশী দেশ, যেমন ইরানে আশ্রয় নিয়েছেন। তা সত্ত্বেও, আফগানিস্তানকে সি এ এর আওতায় রাখা হল, কিন্তু শ্রীলঙ্কাকে হল না, এই বিসদৃশতার পিছনে একটিই কারণ থেকেছে। তা হল, এই আইন ধর্মীয় নিপীড়নের কথা বলেছে, জাতিগত নিপীড়নের কথা বলে নি। ধর্মীয় নিপীড়নের পিছনেও একটি মাত্র ধর্মকে দায়ী করে এই আইনের প্রণয়ন, তা হল ইসলাম। সহজ বাংলায় ইসলাম-বিদ্বেষই এই আইনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। শ্রীলঙ্কান তামিলদের উপেক্ষা করাও সেই কারণে, যে তাঁদের দুর্গতির পিছনে মুসলিম-প্রধান কোনও রাষ্ট্রকে দায়ী করা যায় না।
প্রশ্ন: বর্তমান শাসকদের মুসলিম বিদ্বেষ সি এ এ-র বর্তমান চেহারার অসংগতির পিছনে একটা সূত্র হতেও পারে, কিন্তু সেটাই সব, এমনটা মেনে নেওয়া মুশকিল। যদি ধরেও নিই, তাঁদের দুর্গতিতে ইসলামের ভূমিকা না থাকার ফলে শ্রীলঙ্কান তামিলরা উপেক্ষিত, তা সত্ত্বেও ইসলামিক দেশগুলি থেকে ভারতের আধুনিক ইতিহাসে যেহেতু প্রচুর শরণার্থী এসেছেন, এই আইন তো তাঁদের একটা সুরাহা করছে। পরবর্তীকালে একে সম্প্রসারিত করে তামিলদের সমস্যা সমাধান করা যেতেই পারে।
উত্তর: এইখানে যে প্রশ্নটা ওঠে, এই আইন কি আদতে আদৌ রূপায়ণ-যোগ্য? শ্রীলঙ্কা আফগানিস্তান ছেড়ে দিই, আমরা যদি বাংলায় দেখি, দক্ষিণবঙ্গের মতুয়া সমাজ এই আইনকে যতটা সাধুবাদ জানিয়েছেন, প্রায় ততটাই এই আইনের প্রতি বিরূপতা দেখিয়েছেন উত্তরবাংলার রাজবংশীরা
(https://www.thehindu.com/news/national/rajbongshis-oppose-caa-but-back-nrc-in-north-bengal/article30341447.ece )। লক্ষ্যণীয়, মতুয়ারা যেমন সি এ এ চাইছেন, এন আর সি নিয়ে আতঙ্কিত, রাজবংশীরা তার উলটো। আসলে, ভিনরাজ্য বা ভিনদেশ থেকে আসা মানুষের গ্রহণযোগ্যতা একভাবে সেই অঞ্চলের বাকি বাসিন্দাদের মনোভাবের উপর নির্ভর করে। এবং সেই মনোভাব কিছুটা নির্ধারিত হয় ভাষাগত, জাতিগত একতার মধ্যে দিয়েও। দক্ষিণবঙ্গে বাংলাদেশ থেকে আসা মানুষের গ্রহণযোগ্যতা যেরকম তৈরি হয়েছে, উত্তরবঙ্গে নয়। রাজবংশীরা মনে করছেন বাংলাদেশ থেকে আসা মানুষ তাঁদের বরাদ্দে ভাগ বসাচ্ছেন, যেরকম আসাম সহ উত্তরপূর্বের এক বিরাট অংশ মনে করে। তেমনিই পাঞ্জাবের মানুষের সাধারণ চিন্তা সি এ এ বিরোধী, সেখানকার রাজ্যসরকার সেই সংক্রান্ত প্রস্তাব পাশ করেছেন। সি এ এ-র পরে যেহেতু এন আর সি-র ক্রোনোলজি বোঝানো হয়েছে, সীমান্তসংলগ্ন এলাকার অনেক মানুষের মধ্যেই তা ভীতির সঞ্চার করছে। দেখা যাচ্ছে, সীমান্তরাজ্যগুলি, যেখানে শরণার্থী সমস্যা তীব্রতম, সেখানেই সি এ এ নিয়ে নিরংকুশ সমর্থন নেই। বরং সি এ এ সেখানে এক বিভাজিকার ভূমিকা নিচ্ছে, সম্প্রদায়গুলিকে পরস্পরের প্রতি বিদ্বিষ্ট করে তুলছে। এবং, সীমান্তরাজ্যের অসহযোগিতা ও অসন্তোষের ফলে, এই আইন সম্ভবত কখনওই বলবৎ করা যাবে না। আমরা কেন্দ্র সরকারের তাবড় মন্ত্রী ও বিজেপি নেতাদের কথাবার্তায় এই আইনের রূপায়ণ নিয়ে অসংগতি বহুবার দেখছি। বিগত দেড়বছরে সরকার আইনটি লাগু করতে পারেন নি। বরং পরিস্থিতি এত জটিল যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজবংশীদের ভোলাচ্ছেন পৃথক রাজ্যের টোপ দিয়ে আর প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে গিয়ে হরিচাঁদ ঠাকুরের কর্মতীর্থে মাথা ঠেকাচ্ছেন মতুয়াদের মান ভাঙাতে। আর, তামিলনাড়ুতে শাসক বিরোধী সকলকেই ভোট চাইতে হচ্ছে এই আইনের বিরোধিতা করে।
আমরা সন্দেহ প্রকাশ করি, সি এ এ এমন এক আইন যা এই চেহারায় কোনও দিনও লাগু হবে না। কারণ, সীমান্তবর্তী রাজ্যে এই আইন অনভিপ্রেত, বিভিন্ন জনজাতি এই আইনকে নিজেদের অধিকারে হস্তক্ষেপ মনে করে। তাহলে, এই আইন আনা হল কেন? আর এখানেই থাকে মুসলিম-বিরোধিতার সূত্র। কেন্দ্রের শাসকদল তাঁদের মুসলিম-বিরোধী চরিত্রের জন্য সুবিদিত। মুসলিম-ঘাতী দাঙ্গার অভিযোগ শিরোধার্য করে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন সরকারের প্রথমসারির মন্ত্রীরা। বেহাল অর্থনীতি, বেপর্দা প্রতিরক্ষা-চুক্তি, বেলাগাম বিলগ্নিকরণ, সবকিছুকেই তাঁরা ভোটের আঙিনায় বৈধ করে নিচ্ছেন এই মুসলিম-বিরোধী রূপটির মাধ্যমেই। দেখতে পেয়েছেন সংখ্যাগুরু ভোটারদের এক বড় অংশের কাছে ইসলাম-বিদ্বেষ অত্যন্ত আকর্ষণীয় ইস্যু। সি এ এ প্রণয়ন তাঁদের মুসলিম-বিরোধী চরিত্রের আরেকটি প্রত্যয়পত্র হয়ে থাকছে ভোটারদের কাছে। প্রধানমন্ত্রী বলেইছিলেন, সি এ এ-র বিরোধীদের টুপি-দাড়ি দেখে চেনা যায়। আর, মুসলিমপ্রধান দেশে সংখ্যালঘুর দুর্দশামোচনে এই আইনের প্রণয়ন, একভাবে ইসলামের একটি অত্যাচারী রূপের বিরুদ্ধে শাসকদলের কঠোর অবস্থানের দ্যোতক হয়ে উঠছে। তাই, সীমান্তরাজ্যে বিরোধিতা থাকলেও, শরণার্থীদের সকলের সমস্যার সুরাহা না হলেও, এই আইনের প্রণয়ন দেশের এক গরিষ্ঠ অংশের মানুষের মুসলিম-বিরোধী চিন্তাভাবনার কাছে আবেদন রাখবে। - এই চিন্তা থেকেই এই আইন পাশ করানো, যদিও বাস্তব পরিস্থিতি হয়ত এই আইনকে কখনোই বলবৎ করতে দেবে না।
প্রশ্ন: এর পরেও যে প্রশ্নটা থেকে যায়, তা হল, শরণার্থীদের সমস্যাগুলি তো বাস্তব। তার সমাধান তাহলে কী হবে? এমন কী দীর্ঘদিন, দু-এক প্রজন্ম ধরে যাঁরা এদেশে আছেন, কিন্তু নাগরিকত্ব বৈধ নয়, তাঁদেরও একইরকম সমস্যা থাকছে। সেগুলির সুরাহা কী?
উত্তর: আমরা দেখছি ২০১৯-এর নাগরিকত্ব সংশোধন এঁদের অধিকাংশেরই কোনও উপকারে আসছে না, বরং এন আর সি-র জুজু এঁদের আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলছে। কিন্তু, একথা অবশ্যই সত্যি যে শরনার্থী এবং দীর্ঘদিন ধরে এইদেশের সমাজে অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাওয়া পরিবারগুলির সার্বিক সুযোগসুবিধা, চাকরি, শিক্ষা, সরকারি প্রকল্পের ভাগ পাওয়া, এবং সর্বোপরি নিরাপত্তার প্রশ্নটি গুরুতর। আমরা জানি রাজীব গান্ধী হত্যার পর দেখেছি, পরিকল্পনা হয়েছিল তামিল শরণার্থীদের শ্রীলঙ্কায় ফেরৎ পাঠানোর। এই অনিশ্চয়তা দূর করা আশু প্রয়োজন। আর বস্তুত, সি এ এ-র মতন আইন, যা ভারতের সাংবিধানিক ধর্মনিরপেক্ষতাকে প্রশ্ন করছে, তাকে তো জনমানসে ন্যায্যতা দেওয়া হয়েছে শরণার্থীদের দুর্গতিমোচনের দোহাই দিয়েই।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে, শরণার্থীদের নাগরিকত্ব নিয়ে এই দেশের কোনও সরকারই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয় নি। শরণার্থীদের প্রতি রাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে রাষ্ট্রসংঘের ১৯৫১ কনভেনশন এবং ১৯৬৭ প্রস্তাবনায় নাগরিকত্ব না দিয়েও নাগরিক সুযোগ সুবিধা এবং কাজের অধিকার দেওয়ার যে প্রোটোকল আছে, পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ তা মেনে নিলেও, ভারত (এবং দক্ষিণ এশিয়ার অন্য কিছু দেশও) তা মেনে নেয় নি। কিন্তু, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিও যেই নিয়ে কখনও সোচ্চার হয় নি। সেই প্রস্তাবনা মেনে নিলে সম্ভবতঃ শরণার্থীদের সমস্যা অনেকটাই লাগু হত। খেয়াল রাখা যেতে পারে, উক্ত প্রস্তাবনায় জাতি-ধর্ম-ভাষা ভেদে শরণার্থীদের পৃথক করার বিরুদ্ধে নিষেধ আছে। আমাদের নাগরিকত্ব সংশোধনী সেই গাইডলাইনও অমান্য করেছে।
আরও দরকারি কথা, যা আমরা আগেও বলেছি, বাইরের থেকে আসা মানুষের গ্রহণযোগ্যতা স্থানীয় মানুষের মনোভাবের উপর নির্ভর করে। দক্ষিণ বাংলায় বাংলাদেশি শরণার্থী বা তামিলনাড়ুতে শ্রীলঙ্কা থেকে আসা মানুষের গ্রহণযোগ্যতা সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে রয়েছে। মানুষের যূথের এই গ্রহণ-বর্জনের উপর নির্ভর করে একজায়গার লোক অন্যজায়গায় থিতু হয়েছে। তাই, আমাদের মনে হয়, নাগরিকত্ব নির্ধারণে উপর থেকে কেন্দ্রীয় সরকারি নির্দেশ সারাদেশের জন্য চাপিয়ে না দিয়ে, স্থানীয় স্তরে গ্রহণযোগ্যতার মাপকাঠিটিও রাখা উচিৎ। জেলাপরিষদ বা অনুরূপ কোনও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের সুপারিশ একটা গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারক হতে পারে, নাগরিকত্ব প্রদানের বিষয়ে। এতে শরণার্থীর গোষ্ঠীগত আত্মীকরণের সঙ্গে তার বিষয়ে রাষ্ট্রের মনোভাবের একসূত্রিতা আসতে পারে। যা হয়ত শরণার্থীদের উপর স্থানীয় মানুষের বিরূপ থেকে তাকে কিছুটা মুক্তি দেবে, তার বেঁচে থাকার পরিবেশ সহানুভূতিপূর্ণ হবে।
ধন্যবাদ লেখককে, অনেকগুলো ইস্যু প্রাঞ্জলভাবে ব্যাখ্যার জন্য।
বাহ অনেকটা পরিষ্কার হল