এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  রাজনীতি  বুলবুলভাজা

  • কৃষক-আন্দোলন: খাপ ও পঞ্চায়েতের ভূমিকা

    তাতিন বিশ্বাস
    আলোচনা | রাজনীতি | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | ২৫৭০ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • উত্তর ভারত জুড়ে যে ব্যাপক কৃষক আন্দোলন দেখা যাচ্ছে, তার মূল সুরটিকে বিভিন্ন ভাবে দেখার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কৃষি আইন প্রত্যহারের মত দাবিতে যে পরিমাণ মানুষ সরব হয়েছেন, তাঁদের এতটা দীর্ঘ সময় জুড়ে একত্রিত থাকতে পারার পিছনে পঞ্চায়েতের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এই পঞ্চায়েতের মধ্যে রয়েছে খাপও। এই লেখা সে বিষয়টি নিয়ে চর্চা হাজির করেছে।

    আমরা এই মুহূর্তে উত্তর ভারতে যে কৃষক-আন্দোলন দেখেছি, সাম্প্রতিক ইতিহাসে এত বিশাল সংখ্যক মানুষের এই ধরনের মাটি কামড়ে থাকা লড়াই অত্যন্ত বিরল। একথা বোঝা যাচ্ছে, যে এই আন্দোলন মূলত কর্পোরেটাইজেশন এবং উদার অর্থনীতির প্রয়োগে সরকারি নীতিরূপায়ণের বিরুদ্ধে। কিন্তু, ১৯৯১ সাল থেকেই (বস্তুত, তার কয়েকবছর আগে থেকেই) ভারতের রাষ্ট্র পরিচালকরা একের পর এক উদারীকরণ ও বাণিজ্যিকীকরণের নীতি নিয়ে আসছেন। মূলধারার সমাজমাধ্যমে বেসরকারিকরণ, বাণিজ্যিকীকরণের পক্ষেই আলোচনাকেই সংস্কার হিসেবে গণ্য করা হয় আজ। অথচ, আমরা দেখেছি, মূলধারা বলতে যে পরশ্রমজীবী সম্প্রদায়কে বুঝি, সেই সচ্ছল উচ্চ/মধ্যবিত্তের বাইরে দেশের উৎপাদক জনতার কাছে এই নীতিগুলি তেমনভাবে আশীর্বাদপ্রদ হয় নি। তা সত্ত্বেও, এর বিরুদ্ধে শ্রমিক কৃষকের অসন্তোষ এর আগে এত ব্যাপক আকার নিয়েছে কী না সন্দেহ। পাঠকের হয়তো বস্তার, কলিঙ্গনগর কিম্বা নন্দীগ্রামের কথা মনে আসতে পারে, কিন্তু, তার সঙ্গে এই আন্দোলনের প্রভূত পার্থক্য আছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের কাছে আলোচ্য হয়, এই আন্দোলন কীভাবে গড়ে উঠল? কোন ধরনের সাংগঠনিক শক্তি এত ব্যাপক সংখ্যার বিভিন্ন জাতি ও বিত্তের মানুষকে এতদিন ধরে দিল্লির উপকণ্ঠে বিক্ষোভে প্রাণিত রাখল?

    যাকে মধ্যযুগ বলা হয়, সেই সময়ে ভারতের উৎপাদনব্যবস্থায় বহুল পরিমাণে স্বরাট চাষি ও কারিগরদের অংশগ্রহণ দেখা যেত। এদেশের আধুনিক যুগের পত্তন হয় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের নিগড়ে, সেখানে গোটা দেশই একভাবে স্পেশাল ইকনমিক জোন হয়ে উঠেছিল, এবং আজ যেসব বিষয় নিয়ে চাষিরা সরব, সেরকম বিভিন্ন আক্রমণ, যেমন চুক্তিচাষ, কৃষি পরিকাঠামোয় (যেমন সেচ, ক্ষুদ্রঋণ) রাষ্ট্রীয় সাহায্য বিলোপ, অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের অনিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি সমাজের উপর নামিয়ে আনা হচ্ছিল। এর পাশাপাশিই ভূমিরাজস্ব সংক্রান্ত বিপর্যয় এবং ব্রিটিশ-ঘনিষ্ঠ ক্রনি (crony) জমিদার-গোমস্তার অত্যাচার বাড়ছিল। তার ফলশ্রুতিতে এই দেশে অসংখ্য কৃষকবিদ্রোহ হয়। এই সকল কৃষকবিদ্রোহে কিছু সাধারণ সাংগঠনিক চরিত্র দেখা যায়। এই বিদ্রোহগুলি অনেকক্ষেত্রেই ধর্মমত বা ধর্মগুরুর ছত্রছায়ায় হয়। অনেকক্ষেত্রে একজন নেতা (ধর্মগুরুও, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে)-কে রাজা বা নবাব ঘোষণা করে বিদ্রোহীরা রাষ্ট্রকে খাজনা দিতে অস্বীকার করেন। অতীব গুরুত্বপূর্ণ ভাবে, এই বিদ্রোহগুলির স্থানিক চরিত্র ছিল খুব স্পষ্ট। একটি অঞ্চলের প্রায় সকল মানুষ বিদ্রোহে সামিল হচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে তা বিত্ত-বর্ণ-ধর্ম নির্বিশেষেও বটে। স্বাধীনতার পরও তেভাগা বা তেলেঙ্গানার লড়াইয়েই এই বিদ্রোহের চরিত্র বজায় থাকে, কিন্তু বিদ্রোহীদের শ্রেণি-অবস্থান ততদিনে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এবং বিদ্রোহের নেতৃত্বে ধর্মগুরুর বদলে কমিউনিস্ট পার্টিকে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু, আদিলগ্নে এই বিদ্রোহের কোনও রাজনৈতিক দিশা থাকত না। অর্থাৎ, রাষ্ট্রের মূল শাসককে সরিয়ে নূতন শাসক বসানো, সামগ্রিকভাবে রাষ্ট্রক্ষমতার সঙ্গে কথা বলার জায়গা আসত না বরং স্থানিক শাসন ও অর্থকাঠামো গুরুত্ব পেত।

    উপরের গৌরচন্দ্রিকাটি আমাদের এই আলোচনায় ঢুকতে একটু সাহায্য করবে। যা বলা হচ্ছিল, আদিপর্বে যে অসংখ্য কৃষক বিদ্রোহ দেখেছি, তার স্পষ্ট রাজনৈতিক দিশা ছিল না। রাজনৈতিক দিশা কিছুটা ছিল সিপাহি-বিদ্রোহের এবং সৈয়দ আহমদের বিদ্রোহে। কিন্তু সেগুলি ব্যাপক ভাবে সাধারণ মানুষের লড়াই ছিল না। অগ্নিযুগে বাংলা বা পাঞ্জাব মহারাষ্ট্রের বিপ্লবীরা গুপ্তসমিতির মাধ্যমে রাজনৈতিক লড়াই শুরু করছেন, কিন্তু তা-ও ব্যাপক মানুষের লড়াই হয়ে উঠছে না। অসহযোগের ঘোষণায় চিত্তরঞ্জন বলছেন, এই লড়াই ব্যাপকতর হবে, কারণ এটি রাজনৈতিক নয়, সামাজিক লড়াই। সামাজিক বিদ্রোহের বিভিন্ন চরিত্রের মধ্যে একটি অবশ্যই, তা একটি বিশেষ রাজনৈতিক দিশা (রাজনীতি অর্থটি রাষ্ট্রক্ষমতার পরিসরে প্রযোজ্য) বহন করে না। সামাজিক প্রতিরোধ, ফলত, শুধু একটি বিশেষ শ্রেণির বা শ্রেণিসমূহের লড়াই নয়। বিভিন্ন বিত্তের মানুষ এই আন্দোলনে থাকবেন, যাঁরা থাকবেন না, তাঁদের উপর বাকি মানুষ চাপ তৈরি করবেন। সামাজিক প্রতিরোধ তখনই হবে, যখন এতে একটি বা দুটি সম্প্রদায়, জাতি বা ভাষার বদলে অনেকগুলি গোষ্ঠী যোগদান করবে। কিন্তু, সেই যোগদান, ব্যক্তি বা শ্রেণি-অবস্থান সাপেক্ষ নয়, বরং গোটা গোষ্ঠীটিরই যোগদান। এবং বিশেষ বিশেষ গোষ্ঠী তাদের নিজস্ব ধর্মীয় বা ঐতিহ্যগত পরিচয় বহন করবে।

    আমরা মোদি-সরকারের দ্বিতীয় দফায়, এইরকম দুটি আন্দোলন দেখলাম। প্রথমটি সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে, যেখানে মুসলিম সমাজের বিভিন্ন অংশ ভারতের বেশ কয়েকটি শহরে কয়েকমাস ধরে আন্দোলন চালালেন। উত্তরপূর্বেও এই আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন হল, তামিলনাড়ুতেও। কিন্তু তিনটি সমাজের ক্ষেত্রে দাবিগুলি ত্রিবিধ ছিল এবং তাদের কোনও সাধারণ মঞ্চ গড়ে ওঠে নি। দিল্লি বা কলকাতার আন্দোলনমঞ্চে মুসলিম মহিলাদের উপস্থিতি আমরা লক্ষ্য করলাম। এর পরের উল্লেখযোগ্য আন্দোলনটি অবশ্য এই কৃষিবিলের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক লড়াইটি। এখানে মূলত তিনটি রাজ্য থেকে কৃষকরা আন্দোলনে এলেন- পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ। আমরা দেখতে চাইব বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের মধ্যে এই আন্দোলনকে কীভাবে সংগঠিত করা হয়েছে।

    সেপ্টেম্বরের শেষ দিক থেকে পাঞ্জাবের পঞ্চায়েত আইন মেনে সেখানকার গ্রামসভাগুলি বিশেষ মিটিং ডাকতে শুরু করে এবং প্রায় সমস্ত পঞ্চায়েত অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে কৃষি-বিল অমান্য করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে (https://thewire.in/agriculture/punjab-village-panchayats-farm-acts )। পঞ্চায়েত প্রধানরা সিদ্ধান্ত জেলা প্রশাসনকে জানিয়ে দিতে শুরু করে। এই পর্যায়ে, যে সব গ্রামে বিজেপি কর্মীরা সরপঞ্চ হয়েছিলেন, তাঁরাও স্থানীয় বাসিন্দা এবং আশেপাশের গ্রামের মানুষের চাপ অস্বীকার করতে পারেন না। ফলে দলগত অবস্থান নির্বিশেষে কৃষি-বিলের বিরুদ্ধে সবকটি পঞ্চায়েত আন্দোলনে নামে। গ্রামীণ পাঞ্জাবের ৩০%-এর বেশি মানুষ দলিত, তাঁরাও এই মতৈক্যে সামিল। ছোট-বড়ো জমির মালিকরা ছাড়াও ক্ষেতমজুর, ফড়ে, বাজারওলা প্রভৃতি বিভিন্ন বর্গের মানুষ গ্রামসূত্রে এই আন্দোলনের অংশ হয়ে ওঠেন। আমরা কিছুদিন আগে খবরে পড়ি ভাতিণ্ডা, মানসা প্রভৃতি অঞ্চলের একাধিক গ্রামপঞ্চায়েত ফতোয়া দিয়েছে বাড়ির একজনকে অন্তত দিল্লি সীমান্তে আন্দোলনে সশরীরে যেতে হবে, অন্যথায় তাদের জরিমানা হবে। এই পদক্ষেপ, আন্দোলনের মাঠে না নামলে জরিমানা, আমরা ইংরেজ আমলের বিদ্রোহগুলিতে দেখতে পাই (রংপুরের কৃষক আন্দোলনে ডিং-কর-এর প্রচলন দ্রষ্টব্য)। স্থানীয় সমাজ যে সিদ্ধান্ত নেয়, দল-মত-জাতি নির্বিশেষে সকল ব্যক্তিকে তাতে শামিল হতে হবে, নতুবা জরিমানা হে। এই পদ্ধতি দলীয় রাজনীতির থেকে এক পৃথক পরিসর তৈরি করে। পঞ্চায়েতকে রাষ্ট্রের সাধারণ চলনের থেকে পৃথক নিজস্ব অস্তিত্ব দেয়। লক্ষ্যণীয়, নাগরিকত্ব বিল বিরোধী আন্দোলনের সময়েও মহারাষ্ট্র ও ওড়িশার কিছু অংশে এইরকম পঞ্চায়েতওয়াড়ি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। গণতন্ত্রের সর্বনিম্নস্তরটির ব্যবহারই সম্ভবত গণআন্দোলনকে রাজনৈতিক (এবং শ্রেণিগতও) বিভাজনের বাতাস থেকে বাঁচিয়ে রাখে। এ-কথা অনস্বীকার্য যে কৃষক সংগঠন ও ইউনিয়নগুলি পাঞ্জাবের আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। কিন্তু, আন্দোলনকে প্রায় বিরোধীশূন্য করে রাখা গিয়েছে পঞ্চায়েতগুলির মাধ্যমে। ছোট কৃষক-বড় কৃষক-ফড়ে-ব্যবসায়ী প্রভৃতি বিভিন্ন অংশকে পরস্পরবিরোধিতার বদলে আন্দোলনের অভিমুখে এক করাও সম্ভব হয়েছে।

    হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশের ক্ষেত্রে সেখানকার খাপ পঞ্চায়েতগুলি সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছে। খাপ পঞ্চায়েতের কোনও আইনি স্বীকৃতি নেই, বরং সরকার ও কোর্ট বহুবার খাপ পঞ্চায়েতের বিলুপ্তির পক্ষে মত রেখেছে, তা সত্ত্বেও উত্তর ভারতের এক বিশাল অংশের মানুষের সমর্থন এই প্রতিষ্ঠানগুলির পেছনে মধ্যযুগ থেকে এখনও অবধি রয়েছে। খাপ পঞ্চায়েতের নিজস্ব একটি কাঠামো রয়েছে, যেখানে একটি গ্রাম থেকে শুরু করে ধাপে ধাপে সর্বখাপ বা মহাপঞ্চায়েত অবধি একটি বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষের প্রতিনিধিত্ব থাকে। যদিও আমরা সচরাচর খাপের কথা শুনি ভিন্নজাত এবং সগোত্র বিয়ের বিরোধিতায়, তার বাইরেও বিভিন্ন সামাজিক বিষয়ে সালিশির কাজ খাপ পঞ্চায়েত করে থাকে। আইন আদালতের থেকে সাধারণ মানুষের কাছে এর গ্রহণযোগ্যতা অনেকাংশে বেশি। ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী চৌধুরি চরণ সিংহ খাপ পঞ্চায়েতের মধ্যে থেকে গণ আন্দোলন করেছেন। আটের দশক থেকে ভারতীয় কিষান ইউনিয়নের সঙ্গে উত্তরপ্রদেশ ও হরিয়ানার খাপগুলির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক দেখা যায়। কৃষিতে ভর্তুকি বজায় রাখতে এবং বাণিজ্যিকীকরণের বিরুদ্ধে খাপ পঞ্চায়েতগুলিকে নিয়ে মহেন্দ্র সিংহ টিকায়েত দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলন করেন। তিনি অন্যান্য অনেক সামাজিক আন্দোলনের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন, আবার সগোত্রে বিবাহের বিরুদ্ধে অনমনীয় মনোভাব রাখতেন। খাপ পঞ্চায়েত মূলত জাঠদের মধ্যে শক্তিশালী। তবে অন্যান্য বর্ণ, এমনকী মুসলমান গ্রামীণদের মধ্যেও এই ধরণের সামাজিক সংগঠন দেখা যায়। আমরা পরশ্রমজীবীরা নিজেদের দেশ নিয়ে যে খুবই কম জানি, তার প্রমাণ পাই মিরাটের একটি মুসলিম পরিবারের তিন তালাক মামলা সুপ্রিম কোর্টে গেলে। তিন তালাক-কে অবৈধ দেখিয়ে স্ত্রী দাবি করেন যে তাঁদের বিবাহ বিচ্ছেদ আগেই খাপ পঞ্চায়েতের সালিশিতে হয়ে গেছে, সুপ্রিম কোর্ট বিস্ময় প্রকাশ করে এইটা জেনে যে মুসলমানদের মধ্যেও খাপ পঞ্চায়েত রয়েছে (https://www.amarujala.com/uttar-pradesh/meerut/crime/meerut-triple-talaq-case-the-supreme-court-asked-what-is-khap-panchayat-in-muslim-society )! যাই হোক, মুজফফরনগর দাঙ্গা এবং উত্তরপ্রদেশে যোগী সরকারের উত্থানের পর জাঠ-মুসলিম বিভাজন তীব্র হয় এবং খাপ পঞ্চায়েত ও সংশ্লিষ্ট কৃষক ইউনিয়নের সাংগঠনিক শক্তি হ্রাস পায়। কিন্তু, এই কৃষি আইনের বিরোধিতা দুটি জাতিকে এক মঞ্চে এনে দেয় এবং এই আন্দোলন প্রাণ পায়। ২৬ জানুয়ারির ট্রাক্টর র‍্যালির পর প্রায় ভেঙে পড়তে বসা আন্দোলনে পুনরায় প্রাণ প্রতিষ্ঠা করতে দেখা গেল রাকেশ সিং টিকায়েতকে। তারপর থেকে একের পর এক মহাপঞ্চায়েত বসিয়ে বিভিন্ন এলাকার মানুষ আন্দোলনে নামছেন। খাপগুলি অনেক ক্ষেত্রে এইখানে এক পুরোনো প্রথা অনুসরণ করছে, যাতে এক ঘটি জলে নুন মিশিয়ে সর্বজনমান্য সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়। এই সিদ্ধান্ত সেই সমাজের সকলকে মেনে চলতে হবে, না মানলে তাকে সামাজিক বয়কট করা হবে (http://twocircles.net/2021feb05/440862.html )। ফেব্রুয়ারির শুরুর দিক থেকে দেখা যাচ্ছে রাজস্থানেও মহাপঞ্চায়েতের অধিবেশন শুরু হয়েছে, জাঠ ছাড়াও মিনা গুজ্জর প্রভৃতি জাতির মানুষ সেখানে এসে কৃষিবিল বিরোধী লড়াইয়ে শামিল হচ্ছেন।

    অর্থাৎ, আমরা পাঞ্জাবে যেমন আইন-স্বীকৃত পঞ্চায়েতকে আন্দোলন সংগঠিত করতে দেখলাম, তেমন আবার বাকি রাজ্য তিনটিতে পরম্পরাবাহিত খাপ পঞ্চায়েতকে দেখতে পেলাম। সরকারি পঞ্চায়েতের পিছনে কিছু রাজনৈতিক দল (আপ, বামদলগুলি, কিছু ক্ষেত্রে কংগ্রেস, আকালি দল প্রভৃতি) রয়েছে। আর, খাপ পঞ্চায়েতের পিছনে রয়েছে জাতিগত ভ্রাতৃত্ববোধ। দুটি ক্ষেত্রেই এদের নিজস্ব শক্তির জায়গা যেমন রয়েছে, তেমনি দুর্বলতাও রয়েছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি উত্তর প্রদেশে নিম্নতর জাতির লোক (যেমন লোহার) কৃষিবিলের বিরুদ্ধে হলেও জাঠদের লড়াই বলে আন্দোলন থেকে দূরে থাকছেন। আবার পাঞ্জাবের আন্দোলনকারীদের মধ্যে অনেকে নিজের দলের বা গোষ্ঠীর পতাকা সামনে নিয়ে আসছেন, যা আন্দোলনকারীদের সবার কাছে গ্রাহ্য হচ্ছে না। কিন্তু, এতদসত্ত্বেও এই বিরাট জনসংযোগ এবং গণ-অংশগ্রহণের পিছনে এই কাঠামোদুটির অবিকল্প হয়ে উঠেছে; এবং এই প্রতিষ্ঠানগুলি রাজনৈতিক পরিসরের বাইরে এই আন্দোলনকে বিস্তৃত করেছে।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | ২৫৭০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • aranya | 162.115.***.*** | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০২:১৭102540
  • জরিমানা, সামাজিক বয়কট - এসব ব্যবহার করতে হচ্ছে, আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য, এটা দুঃখের 

  • Somnath Roy | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৩:০৯102572
  • কিন্তু,এগুলো তো এদেশের সামাজিক প্রতিরোধের চরিত্র। কৃষকরা তো সমাজ সংস্কার করতে আসেন নি।

  • বিশ্বেন্দু নন্দ | 103.66.***.*** | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৩:১৪102573
  • জরুরি লেখা - কৃতজ্ঞতা। অন্যসব বিভেদ দখলদারির প্রশ্ন তুলে রেখে এখন আন্দোলনকে সমর্থন।
    তবে পশ্চিমি জাতরাষ্ট্রীয় প্রগতির যে সব চরিত্রর দৃষ্টিতে খাপকে না দেখাই ভাল। প্রগতির স্তরগুলি নির্ণয় আমরা ভদ্রবিত্তরা করি আমাদের মাথায় থিতু করিয়ে দেওয়া ভাবনা থেকে। জাতিরাষ্ট্রের ভাবনা থেকে বেরোনো দরকার। 

  • জিগ্যাসু | 2a0b:f4c2:2::***:*** | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৩:১৬102574
  • ভদ্রবিত্ত কী জিনিষ?বিত্ত ধন্সম্পত্তি এসবেরও ভদ্র অভদ্র হয়?

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:

Farmers Movement, Agriculture, India Farmers Movement, Khap, Delhi Farmers Movement
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন