করোনা ভাইরাস মহামারী অর্থনীতিকে এক নতুন মোড়ে এনে ফেলেছে। বিগত কয়েক দশকে বিকশিত হওয়া কয়েকটি প্রযুক্তি, যেমন ইন্টারনেট, কম্পিউটিং, ডেটা সায়েন্স তথা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের হাত ধরে বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে কর্মীসংকোচনের হাতিয়ার ব্যবসাগুলির কাছে এসে গিয়েই ছিল। আমরা খেয়াল করতে পারি ইলেক্ট্রনিক প্রযুক্তির বিকাশের আগে কিছু রাজনৈতিক কর্মী এই জায়গা থেকেই তার বিরোধিতা করছিলেন। ভারী শিল্পের ক্ষেত্রেও অটোমেশনের উদ্যোগে অনেকধরনের রাজনৈতিক ও সামাজিক বাধাও এসেছে। তাই অ্যালগোরিদম ও যোগাযোগকে ভিত্তি করে বিবিধ উৎপাদন ও পরিষেবাক্ষেত্র থেকে দুম করে একলপ্তে কর্মিসংখ্যা কমানো সম্ভব হচ্ছিল না। করোনা ভাইরাস বিশ্বমারী এবং জনস্বাস্থ্য রক্ষায় তার জন্য করা লকডাউন সেই সুযোগটা এনে দিল। লকডাউনের মধ্যে বেশ কিছু পরিষেবা চালু থাকল স্বল্পকর্মীর প্রযুক্তিগুলি দিয়ে। শিক্ষাক্ষেত্র প্রায় পুরোটাই অনলাইন হয়ে গেল, বহু অফিস ওয়ার্ক ফ্রম হোম চালু করল। এর ফলে মূল কাজগুলি যেমন কম লোকে হতে পারল, তেমনিই আনুষঙ্গিক বিভিন্ন কাজের লোককে ছেঁটে ফেলা গেল। অর্থাৎ বাজারের কার্যকারিতা বাড়ল, সামাজিক প্রতিরোধকে লকডাউনের মধ্য দিয়ে যেমন দমিয়ে রাখা গেল, তেমনি রেশন, কিছু ক্ষেত্রে আরও বেশি সরকারি অনুদান দিয়ে ছেঁটে ফেলা কর্মীদের উপভোক্তা সত্তা বজায় রাখা গেল। ইদানীং ক্রেতাদের টিকিয়ে রাখতে সরাসরি তাদের হাতে টাকা তুলে দেওয়ার কথাও অনেকে বলছেন। অর্থাৎ, ইলেকট্রনিক প্রযুক্তির বিকাশে গত পৌনে শতাব্দী জুড়ে যে বিশাল বিনিয়োগ হয়েছে তার ফল একভাবে আসতে শুরু করল বাজারের কাছে।
এইবার, ভারতের সবচেয়ে বেশি লোক নিযুক্ত কৃষি ও তৎসংক্রান্ত কাজে। সাম্প্রতিক এন এস এস ও সার্ভেতে উঠে এসেছে দেশের কর্মশক্তির ৪৪% এই ক্ষেত্রটিতে কাজ করেন এবং জাতীয় আয়ের মাত্র ১৬% এতে জড়িয়ে। অর্থাৎ, একদিক থেকে দেখতে গেলে এই ক্ষেত্রটি যেমন বহুমানুষকে রুজি রোজগারের ক্ষমতা দেয়, অন্যদিক থেকে দেখতে গেলে এখানে অত্যন্ত বেশি কর্মী জড়িয়ে।
আরও পড়ুন, কৃষক আন্দোলনের দাবির নেপথ্যে
অর্থাৎ, কর্মী সংকোচনের প্রযুক্তির ক্ষেত্রে স্বর্ণখনি এটিই। এই পরিপ্রেক্ষিতে, যখন লকডাউনের রেশ দেশ থেকে যায় নি, ভাইরাসের ভয়ে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ভীষণভাবে নিয়ন্ত্রিত, সেই সময়ে ভারতের সংসদে বর্তমান কৃষিবিলটি পাশ করা হল, এক বিতর্কিত পদ্ধতিতে। বলা হল এই বিল কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লব আনবে। দরিদ্র এবং প্রান্তিক চাষিরা পুরোনো আইনে শোষিত হতেন, তাঁরা মুক্তবাজারে লাভবান হবেন। আইনের সকল প্রস্তাবনায় গুরুত্ব দেওয়া হল ছোট ও প্রান্তিক চাষিকে। তাঁরা এতদিন শোষিত হতেন, এবার শোষণ থেকে মুক্ত হবেন। সরকারপক্ষ এই নিয়ে কোনও লুকোছাপা করেন নি যে এই শোষণ ছিল মধ্যস্বত্বভোগী, ফড়ে ও দালালদের। এই আইন, সরকারি ভাষ্যে, প্রান্তিক ও ছোট চাষির পক্ষে, ফড়ে ও দালালদের বিপক্ষে। তাঁদের বক্তব্য, এতে বড় চাষিদেরও লাভ বৈ ক্ষতি হবে না। এরপর আমরা দেখলাম, উত্তরভারতের এক বিরাট অঞ্চল থেকে এর প্রতিবাদ, প্রতিরোধ হচ্ছে। তাহলে, ‘সরকারি ভাষ্য’ অনুযায়ী, কারা এর প্রতিবাদ করবেন? ফড়ে ও দালালরাই। তাই-ই বলা হল- অভিসন্ধিপরায়ণ বিরোধী রাজনৈতিক দল অবশ্যই প্রতিবাদের ঘোলাজলে মাছ ধরবে, সেইটা ছাড়া মধ্যস্বত্বভোগীদের স্বার্থ হানি হওয়ায় তারা কৃষকদের ভুল বোঝাচ্ছে এবং মূলত ধনী, বড় চাষিরা, নিজেদের এতদিন ধরে পেয়ে আসা ভর্তুকি উঠে যাওয়ার ভয়ে এই আন্দোলন চালাচ্ছে। আমরা এই পরিপ্রেক্ষিতে দাঁড়িয়ে মধ্যস্বত্বভোগীদের চরিত্র একটু বিশদে বোঝার প্রয়োজন অনুভব করছি। এবং বড় ও ছোট চাষিদের আন্তর্সম্পর্ক, এই আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের দ্বিবিধ ভূমিকার সম্ভাবনাও পর্যালোচনা করতে চাইছি।
পুরনো কৃষি আইনে, দেশের বিভিন্ন জায়গায়, বিশেষ করে খাদ্যশস্য খোলা বাজারে যাওয়ার আগে APMC বা রাজ্যসরকার অনুমোদিত মান্ডিতে যায়, সেইখান থেকে নির্দিষ্ট পথ ধরে বাজারের বিভিন্ন ধাপে তা পৌঁছতে পারে। গুডুলকর ও অন্যান্যরা এই ব্যবস্থা বোঝাতে নিচের ছবিটি ব্যবহার করেছেন-
আমরা দেখতে পাচ্ছি, কৃষক সরাসরি মান্ডিতে সবজি বা শস্য পৌঁছতে পারেন না, বরং ধাপে ধাপে বিভিন্ন ফড়ে ও মধ্যস্বত্বভোগী হয়ে তা মান্ডিতে পৌঁছয়। সেখান থেকে বাজারে আসার পথেও অনেক লোকের হাত ঘোরে। সরকার বলছেন এটি অদক্ষ ব্যবস্থা। এর ফলে কৃষকের পাওয়া দাম আর ক্রেতার দেওয়া মূল্যে ফারাক থাকে- কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হন। মধ্যে যাঁরা থাকেন, তাঁরা কিছু কিছু করে ভাগ পান।
আমাদের প্রশ্ন মধ্যে কারা থাকেন? সাম্প্রতিক কৃষি-আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে, কিছু ছোট চাষিকে এই প্রশ্ন করা হয়েছিল, যা নিয়ে একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। আমরা দেখি, যে ফড়েরা কৃষকের কাছে যান, তাঁরা কৃষকের প্রায় ঘরেরই লোক, দরকারে তাঁরাই কৃষককে ধার দেন, ধার বাকি থাকলে সুদ বাড়ান না এবং সবচেয়ে বড় কথা কৃষকের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক শুধু অর্থনৈতিক নয়, সামাজিক এবং পারস্পরিক বিশ্বাসের। আমরা সংবাদপত্রের বিভিন্ন প্রতিবেদনে ফড়ে নিয়ে উলটো কথাই পাই, ফড়েদের হাতে কৃষকরা ঠকছেন, তাঁরা দাম পাচ্ছেন না ইত্যাদি। কিন্তু দু একটা খবরে, ভিন্নতর প্রসঙ্গে, যে ফড়েদের কথা শুনি, তাঁরাও সমাজের দরিদ্র অংশেরই লোক। এমনকী একবছর চাষের কাজ করে পরের বছর বিবিধ কারণে সেই কাজ না করে ফড়ের কাজ করছেন এরকমও আমরা দেখি, যেখানে সরকারি কর্তাব্যক্তিরা কৃষক আর ফড়েতে গুলিয়ে ফেলেন। ফড়েদের হাতে চাষির ঠকা অস্বীকার না করেও বলা যায় উপরের ছবিতে যে জটিল বাজারব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে, তা বস্তুত আরও অনেক বেশি জটিল এবং জটিলতার কারণেই তাতে বিভিন্ন ধরনের মানুষ ছোট বড় অনেক কাজ করে খেতে পায়। তাঁদের অনেকেই চাষির ঘরেরই লোক। এই ব্যবস্থাকে আমূল পাল্টাতে গেলে সেই বিশাল সংখ্যক মানুষের রুজি রুটিতে টান পড়বে। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে সরকার থেকে বলা হচ্ছে কৃষিক্ষেত্রে বড় কর্পোরেটের বিনিয়োগের কথা। কর্পোরেটের চলন দক্ষতর প্রযুক্তিনির্ভির ব্যবস্থা নির্মাণের দিকে। যে ব্যবস্থা আখেরে কর্মী সংকোচনেরই কথা বলে।
আরও পড়ুন, বেণীর সঙ্গে মাথা
সরকার যে শুধুমাত্র চাষির স্বার্থ ভেবে নতুন ব্যবস্থা আনছেন না তা শুধু এই উদ্যোগেই বোঝা যায় যে, এই বিল প্রস্তাব করার ক্ষেত্রে প্রাথমিক ভাবে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের জায়গাটি রাখা হয় নি এবং চাষির আইনি পরিসর বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। প্রান্তিক চাষির সুবিধা যদি প্রাথমিক লক্ষ্য হয়, তবে প্রাথমিক শর্তও হবে তার আইনি ও অর্থনৈতিক সুরক্ষার দিকটি মজবুত করা। স্বাভাবিকভাবে একজন প্রান্তিক চাষি শিক্ষা, প্রযুক্তির ব্যবহার ও আইনি সুবিধায় অনেকটা পিছিয়ে। বড় কর্পোরেটের সাহেবদের সঙ্গে এঁটে ওঠা তার পক্ষে কঠিন। সে হয়ত তার থেকে অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্য পায় এমন ব্যবস্থায় যাতে সে এতবছর ধরে শিক্ষিত হয়েছে। আমরা কোয়ার্তজের প্রতিবেদনটিতে দেখব, সেখানে যে ছোট চাষিদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তাঁদের অনেকেই ফড়েদের নিয়েই চলতে চান। মহাজন-ফড়ে-চাষি নিয়ে যে ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে, তাতে হয়ত চাষিদের উপার্জন সীমিত থাকছে, কিন্তু বহু বছরের সামাজিক সংশ্লেষে সেই ব্যবস্থা চাষিকে নিরাপত্তার ধারণাও দেয়, সেটি কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। এঁরা চাষির নিজের পরিমণ্ডলের লোক, চাষির ভালো চাইতে গেলে বাইরে থেকে আনা পেশাদার কর্পোরেট কর্মী দিয়ে এঁদের প্রতিস্থাপিত না করে বরং বর্তমান ব্যবস্থাতে চাষির সুরক্ষা কীভাবে বাড়ানো যায়, সরকারের চিন্তা ভাবনা ছিল সেই অভিমুখে। সরকারের ভাবনায় অবশ্য সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন, বিভিন্ন প্যারামিটারের বৃদ্ধির জায়গা থাকে, আর ধনতন্ত্রের একদম প্রথমপর্বে আর্নলড টয়েনবি (বড়) তাঁর ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিভলিউশন বইটিতে মন্তব্য করেছিলেন পলিটিকাল ইকনমির অ্যান্টিথিসিস হল সমাজতন্ত্র। ফলে রাষ্ট্রের জন্য, ধনতান্ত্রিক বিকাশের জন্য যা ভালো, তা বৃহত্তর সমাজের জন্য ভালো নাও হতে পারে।
তাই, এই আন্দোলনকে আমরা সামাজিক আন্দোলন হয়ে উঠতে দেখি, যেখানে পাঞ্জাবের ১০০০০ গ্রাম থেকে অন্তত একজন করে দিল্লি অবরোধ করতে আসেন। অর্থাৎ, দল বা জাতি পরিচয়ের বাইরে কৃষিসমাজ একত্রে এই প্রতিরোধটা দিচ্ছে। হরিয়ানার খাপ পঞ্চায়েতগুলি, যা অনেকসময়ই বিজেপি-র অনুকূলে থাকে, তারাও সামাজিক প্রতিনিধিত্ব করছে এই আন্দোলনে। এইখানেই সামনে চলে আসছে সামাজিক স্বার্থ। বড় চাষি, ছোট চাষির স্বার্থ এক হয়ে যায়। সার্বিকভাবে সমাজ যদি আক্রান্ত হয়, তার দুর্বলতম অংশে আঘাতটা বেশি পড়ে।
এই দেশের পরাধীনতার ইতিহাস কর্পোরেটাইজেশনের ইতিহাস। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং তার বেরাদররা যখন দেশ দখল করল, কৃষি ও কারিগরসমাজ আক্রান্ত হল, তখনও সবচেয়ে বেশি আক্রমণ নেমেছিল দলিত, নারী ও দরিদ্রের উপর। তাই কর্পোরেটের আক্রমণ, চুক্তিচাষের বিপদ একভাবে গণস্মৃতিতে আছে। পাঞ্জাব হরিয়ানার অনেক চাষি সচ্ছল উচ্চ শিক্ষিত, তাঁরা বিশ্ব পরিস্থিতিতে ইউরোপ, দক্ষিণ আমেরিকা বা আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে চুক্তিচাষ ও কর্পোরেটের আগ্রাসনে কী কী হয়েছে দেখেছেন, কিন্তু ছোট চাষি দেখেন তাঁর জমিতে জন খাটতে আসছেন বিহারের কৃষি শ্রমিক। সেই শ্রমিক দেড় দশক আগে জমির মালিক ছিলেন এবং অনুরূপ কৃষি আইন বিহারে লাগু হওয়ার পর (২০০৬) তিনি জমি বিক্রি করে কীভাবে পাঞ্জাবের কৃষিশ্রমিক হয়েছে জানতে পারেন। ফলে, কর্পোরেট বনাম পুরোনো সামাজিক ব্যবস্থার দ্বন্দ্বে বড় চাষি ছোট চাষির অবস্থান এইক্ষেত্রে হয়ত একদিকে এসে যায়। অতীতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও ব্রিটিশরাজের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে বহুবার এইরকম হয়েছে। সুপ্রকাশ রায়ের ভারতে কৃষক-বিদ্রোহ ও গণতান্ত্রিক সংগ্রাম বইটিতে আমরা এরকম বহু উদাহরণ দেখি যেখানে বড় কৃষক, জমিদার এবং প্রান্তিক কৃষক, কারিগর ও ভাগচাষিদের অবস্থান এক হয়ে গেছে। দেবী চৌধুরাণীর প্রসঙ্গে তিনি লিখছেন- “লেঃ ব্রেনানও জমিদারের সহিত বিদ্রোহী কৃষকদের যোগাযোগ দেখিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করিয়াছেন।” এরপরই তিনি ব্যাখ্যা করেন যখন সমাজের উপর রাষ্ট্র শোষণমূলক অর্থনৈতিক নিয়ম চাপিয়ে দেয়, তখন কীভাবে এই সহাবস্থান গড়ে ওঠে। শ্রেণিদ্বন্দ্বের বদলে বাইরে থেকে আসা ব্যবসার সঙ্গেই সংঘাত বাধে।
হয়ত সেই আঙ্গিকেই আমরা বড়কৃষক, ছোটকৃষক, ফড়ে মিলিয়ে একটা যৌথ সামাজিক সত্তাকে দেখতে পাব, যা এই আন্দোলনে সক্রিয়। আমাদের ধারণা, এ লড়াই ছোটচাষির দাবি আদায়ের লড়াই নয়। তার নিজের অবস্থান যাতে আরও নড়বড়ে না হয় এ লড়াই তার। এবং একটু বৃহত্তর প্রেক্ষিত থেকে দেখলে, কর্মী সংকোচনের প্রযুক্তি ও অর্থনীতি যাতে দেশের নিম্নতম স্তরটিকে বিপর্যস্ত না করে ফেলতে পারে, এ লড়াই তারও।
এই ছবিটা হচ্ছে প্রস্তাবিত কৃষি বিলের চিত্র:
এপিএমসি মার্কেটের ডায়নামিক্স বুঝতে ফড়ের বদলে 'আড়তিয়া' শব্দটি ব্যবহার করা যাক । মন্ডীতে রেজিস্টার্ড খরিদ্দাররা বেচতে আসা চাষিদের ফসলের জন্যে একটা বেঞ্চমার্ক প্রাইস ঠিক করে কততে কিনবেন সেটা কোট করেন। ওঁদের থেকে মন্ডী ট্যাক্স পায় ,সেটার কিছুটা মন্ডীর ইনফ্রাস্ট্রাকচারে বিনিয়োগ হওয়ার কথা। বাকিটা রাজ্য সরকারের তিজোরিতে।
আর 'আড়তিয়া'রা হল পুরীর মন্দিরের পান্ডার মতন। বিশাল মন্ডীতে একগাদা রেজিস্টার্ড ক্রেতা। দোকান সাজিয়ে বসে আছে। এরা সম্পন্ন ধনী। এদের থেকে কর্পোরেট হাউস ও হোলসেলাররা কেনে।
গাঁ থেকে আসা চাষিরা হকচকিয়ে যায় । ওর যে বিশেষ ধান তা কিনবে? কতটা এবং কি দামে? আড়তিয়া সব খবর রাখে। ও চাষির প্রয়োজন বুঝে ঠিক জায়গায় হাত ধরে নিয়ে যায় , মন্দিরের পান্ডার মত। ওই ভাবেই চাষির দরকারমত সাহায্যও করে। ওরা খুব একটা ধনী নয়। চাষীদের পরিচিত এবং ওদের ইকোসিস্টেমের অঙ্গ।
নরেন্দ্র মোদী ১৪ এপ্রিল, ২০১৬ সালে ই-মন্ডি ডিজিটালি যুক্ত করার প্রোগ্রামে ভাষণ দিতে গিয়ে আড়তিয়াদের ভূমিকার বিশেষ প্রশংসা করেছিলেন।
অরুণ জেটলি গত ৬ই ডিসেম্বর, ২০১২তে রাজ্যসভায় মন্ডী খতম করার কংগ্রেসি প্রস্তাবকে ধুয়ে দিইয়ে বলেছিলেন-- বেসিক যুক্তিটাই ভুল। আপনারা ক্যাপিটালিস্ট মার্কেটের কিস্যু বোঝেন্নি। এখন ছোট ফড়ে, এদের সরালে কর্পোরেটের বিশাল বড় বড় ফড়ে আসবে। তখন চাষিরা কোথায় যাবে?
( দুটো বক্তৃতাই ইউটিউবে দেখাযাচ্ছে।)
কৃষক,ফড়ে ও দালাল মিলে মোট পূঁজির হিসাব কষেন। এই আন্দোলনকে বিদেশী(খাজারিয়ান) পূঁজির সাথে ভারতীয় যৌথ পূঁজির দ্বন্দ ভাবলে মন্দ হয় না ! আপনাদের হিন্দুস্তানে পূঁজির অভাব নাই। অভাব কেবলই নেটিভ চিন্তার বদলে হিন্দুস্তানী দৃষ্টিতে নিজেদের জগতটাকে দেখা। প্রাকৃতিক দর্শণের সুতিকাগার হলো হিন্দুস্তান। তাঁর বস্তু জগত সম্পর্কে এত সংশয় কেন ?