নন্দীগ্রামের কেমিকাল হাবের জন্য জমি অধিগ্রহণ হবার কথা ছিল। সময়টা ২০০৭ সাল, সেই সময়ের রাজনৈতিক পরিবেশ খানিকটা ঝালিয়ে নেওয়া দরকার, তাহলে নন্দীগ্রামের জমি অধিগ্রহণ বিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপট বুঝতে হয়ত খানিক সুবিধা হবে। আজকের দিনে, ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাকি শুভেন্দু অধিকারীর নন্দীগ্রাম - এই আখ্যানের বাইরে যে তুমুল লড়াইয়ের নন্দীগ্রাম, সেজ বিরোধী, বিশ্বায়ন বিরোধী, কর্পোরেট জমি হাঙরদের প্রতিরোধী নন্দীগ্রামকে।
২০০৬-এর বিধানসভা নির্বাচন ২৩০ আসন নিয়ে বিপুল ভাবে ক্ষমতায় আসে বামফ্রন্ট, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে। বুদ্ধবাবু তখন কর্পোরেটদের নয়নের মণি, কমিউনিস্ট মুখ্যমন্ত্রী বিশ্বের লগ্নিপুঁজির প্রশংসায় পঞ্চমুখ। সপ্তম বামফ্রন্ট ক্ষমতায় আসার কিছুদিনের মধ্যেই সিঙ্গুরে টাটার ন্যানো গাড়ি কারখানার জন্য জমি অধিগ্রহণ ঘোষণা হল। এর আগে দুই জায়গায় কৃষি জমির সফল অধিগ্রহণ করতে পেরেছে বামফ্রন্ট সরকার, রাজারহাটে ও শিলিগুড়ির চাঁদমনি চা বাগানে। চাঁদমনিতে জমি অধিগ্রহণের সময়ে চা বাগানের দুজন বিক্ষোভকারী শ্রমিক মারা যান পুলিশের গুলিতে। কিন্তু দুজায়গাতেই প্রায় মাখনে ছুরি চালিয়ে অধিগ্রহণ হয়, বিরোধিতা করেছিল কিছু নকশালপন্থী আর অধিকার রক্ষা সমিতি ধরনের সংগঠন, নিও-লিবারাল উন্নয়নের মডেলের সমালোচনা করে।
সিঙ্গুরেও যতদূর মনে পড়ছে টাটার জমি অধিগ্রহণের বিরোধিতা শুরু করেছিলেন কিছু নকশালপন্থী (পল্টু সেন গ্রুপ) ও অন্যান্যরা। ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে সেই সময় সরকার কর্তৃক বলপূর্বক জমি অধিগ্রহণ করে কর্পোরেটদের হাতে তুলে দেওয়া, SEZ এর দোহাই দিয়ে পরিকাঠামো গড়ে দেওয়া ও কর ছাড়, SEZ-এ সমস্ত শ্রম আইন বাতিলের রাষ্ট্রীয় নীতির বিরুদ্ধে জবরদস্ত লড়াই শুরু হয়েছিল। কাশীপুর, কলিঙ্গনগর, জগতসিংপুর, রায়গাড়, দাদরী বিভিন্ন জায়গায় বিশ্বায়নী শিল্পায়নের মডেলের বিরুদ্ধে রক্তাক্ষয়ী লড়াই চলেছিল, ওড়িশার কলিঙ্গনগরে টাটার স্টিলের কারখানা জন্য জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আদিবাসীরা আন্দোলনে গেলে সরকার টাটার হয়ে গুলি চালিয়ে দেয়, আঠারো জন আদিবাসী মারা যান, ২০০৬ এর জানুয়ারি মাসের ঘটনা। সিপিএমও বিভিন্ন রাজ্যে উচ্ছেদ ও উন্নয়নের তত্ত্বের বিরোধিতা করতো। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ঘোষণা করলেন ‘টাটার কেশাগ্র স্পর্শ করতে দেব না’, সিপিএমের মিছিলে স্লোগান উঠত ‘কমরেড রতন টাটা লাল সেলাম’।
আগের ভোটে হেরে ভূত হওয়া তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিঙ্গুরের সুযোগ হাতছাড়া করেননি অবশ্য। কংগ্রসি সেন্ট্রিস্ট ঘরানার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দর্শনের সাথে নিও-লিবারালিজিমের কোনো বিরোধ থাকার কথা নয়, কিন্তু ভোটের বালাই বড় বালাই, গণ আন্দোলনের ফল ভোটে ট্রান্সফার করে শাসক হবার সুযোগ হাতছাড়া করেন নি। এবং তা তিনি করছেন অত্যন্ত চতুর ভাবেই। সিঙ্গুরে যেদিন জমি অধিগ্রহণের জন্য ব্যাপক লাঠি চার্জ হয়, অর্থাৎ ২০০৬-এর ২ ডিসেম্বর, সেদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতায় বসে প্রেস কনফারেন্স করছেন। সিঙ্গুরের জমিতে তখন মার খাচ্ছেন কৃষকরা, নকশালপন্থী কিছু প্রতিবাদী, এপিডিআর, এম কে পির সদস্যরা, প্রতিরোধ করছেন চাষির ঘরের মহিলারা – তৃণমূলের নেতৃত্ব ধারে কাছে নেই। কলকাতা ধর্মতলায় অনশন মঞ্চ তৈরি করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সমস্ত আন্দোলন কলকাতায় এনে ফেললেন, সিঙ্গুরে কারখানার প্রাচীর উঠতে লাগলো।
সেই সময় আমি কলকাতার একটি কলেজে পড়ি, নির্দিষ্ট একটি বিপ্লবী ছাত্র ছাত্রীদের সংগঠনের সাথে কাজ করি, মাওবাদীদের সংগঠন। সিঙ্গুর আন্দোলন ছিল প্রতিবাদের স্তরের আন্দোলন, নানা কারণে প্রতিরোধের স্তরে পৌঁছানো যায় নি। সিঙ্গুরের আন্দোলনের কিছুদিনের মধ্যেই নন্দীগ্রামে কেমিকাল হাবের জন্য জমি অধিগ্রহণের খবর আসে, সেখানকার মানুষ জমি দেবেন না সেই কথাও শোনা যায়। পিসিসি সিপিআই -এমএলের রাজ্য কমিটির সদস্য সুমিত সিনহা লিখেছিলেন, ২০০৬-এর নভেম্বর মাস থেকেই জমি অধিগ্রহণের প্রচার শুরু করে সিপিএম নেতারা। মানুষের ক্ষোভ বাড়ছিল এই নিয়ে। ২৯ ডিসেম্বর, সিপিএমের সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠ নন্দীগ্রামে একটি সভা করেন ও নন্দীগ্রামের ১ নং অঞ্চলের জমি নেবার কথা ঘোষণা করেন। সেই সভাতেই গন্ডগোল বেঁধে যায় ও উত্তেজিত জনতা নেতৃত্বকে প্রশ্ন করা শুরু করেন। পরদিন থেকে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে জনগণ নিজেরাই প্রচার শুরু করেন। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের ভ্যান জনসভায় এসে সভা বন্ধের হুমকি দেয়, লাঠি চার্জ করে ও গুলি চালায়। জাহাঙ্গির, সাত্তার, গুরুপদ বারিক গুলিবিদ্ধ হন। মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে, পুলিশের ভ্যান আক্রমণ করে পুড়িয়ে দেওয়া হয় এবং সোনাচূড়া থেকে হাজরাকাটা পর্যন্ত সমস্ত গ্রামগুলির রাস্তা কাটা হয় – পুলিশ যাতে না আসতে পারে। নন্দীগ্রামের আন্দোলনের ঐতিহাসিক মুহূর্তের জন্ম এখান থেকেই – জনগণ পুলিশ আসার রাস্তা বন্ধ করে দিলেন, যে পুলিশ ‘কমিউনিস্ট’ পার্টির নির্দেশে কর্পোরেটদের তাঁবেদারি করতে টহল দেয়, সেই পুলিশ বয়কট করেন। সিঙ্গুরের মত শুধু প্রতিবাদ ও মার খাওয়ার আন্দোলন ছিল না নন্দীগ্রাম। ৬ জানুয়ারি তৈরি হয় ‘ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি’, যে নাম নিয়ে সুনীল গাঙ্গুলি কটাক্ষ করে আনন্দবাজারে উত্তর-সম্পাদকীয় লেখেন, ভুল বাংলায় লেখা বলে।
নন্দীগ্রামের আন্দোলনকারীরা ছিলেন বামফ্রন্টের ভোটার। আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্র সোনাচূড়ার পঞ্চায়েত ছিল সিপিএমের। সেই দলীয় ভোটারদের বিদ্রোহ পুলিশ দিয়ে সামলাতে না পেরে সিপিএম নেতৃত্ব সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী দিয়ে অঞ্চল পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা শুরু করে, তালপাটি খাল পেরিয়ে খেজুরির দিক থেকে। ৬ জানুয়ারি রাত থেকে সোনাচূড়া গ্রামে প্রবল বোমাগুলি চালায় সিপিএম বাহিনী, সেদিন প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুলতে গিয়ে শেখ সেলিম, ভরত মণ্ডল, বিশ্বজিৎ শহিদ হন। এরই মধ্যে বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা আন্দোলনকারী জনতা তালপাটি খাল পেরিয়ে সিপিএমের ক্যাম্প ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেন, সিপিএমের বদ নেতা ও আক্রমণকারীদের পালের গোদা শঙ্কর সামন্তকে খুন করা হয়। সিপিএমকেও এলাকাছাড়া করে আন্দোলনকারীরা।
এখানে ভাবতে পারেন প্রতিরোধের কথা বলতে কী রকম প্রতিরোধ বলা হচ্ছে? হাতে হাতে ব্যারিকেড নয় নিশ্চয়। বাংলার গ্রামে গ্রামে মাস্কেট, ওয়ানশটার, রিভলভারের ছড়াছড়ি, বাংলার গ্রাম মানে ছায়াসুনিবিড় শান্তির নীড় নয়, প্রতিটি রাজনৈতিক দল আপাদমস্তক সশস্ত্র। সোনাচূড়া চক্রবেড়িয়ার মানুষ এইসব সাবেকি অস্ত্র দিয়েই সিপিএমের উন্নত ও সাপ্লাই লাইন যুক্ত বাহিনীকে প্রতিরোধ করেন। ৭ জানুয়ারির পর সিপিএম সাময়িক ভাবে পিছু হঠে। পরবর্তী আক্রমণের জন্য খানিক সময় নেয়। তবে নিয়মিত তালপাটি খাল ঘিরে গোলাগুলি চলত।
নন্দীগ্রাম আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে জমি অধিগ্রহণ বিরোধী বামপন্থী নকশালপন্থী সংগঠনগুলি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন – তবে লেগে পড়ে ছিলেন মাওবাদীরা। ২ জানুয়ারি পুলিশের সাথে সংঘর্ষের আগে থেকেই মাওবাদী সংগঠক নারান সোনাচূড়াতে যাতায়াত করতেন। পরবর্তীতে তিনি সেখানে সর্বক্ষণের কর্মী হিসাবে থেকে যান। তাঁর বাঁধা গান ‘চোখের জলকে করো কেরোসিন, ভরত হত্যার বদলা নিন’ বেশ জনপ্রিয় ছিল।
কমরেড নারানের নন্দীগ্রাম যাওয়াটা ছিল গণআন্দোলনের পাশে থাকার তাগিদে – আবার লড়াকু জনগনের প্রয়োজন ছিল রণাঙ্গনে পটু যোদ্ধার। মাওবাদীরা ভাল যুদ্ধ জানে এই মর্মে তাঁদের প্রাথমিক ভাবে গ্রহণ করেছিলেন সেখানকার নেতৃত্ব। পরবর্তী কালে এই নেতৃত্বের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের রীতিমত লড়াই শুরু হয়, সে প্রসঙ্গে পরে আসছি।
ছোটখাটো হামলা দীর্ঘদিন চালানোর পরেও নন্দীগ্রামের আন্দোলনকারীদের টাইট দিতে না পেরে সরকার ফের নন্দীগ্রামে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করে। ১২ মার্চ সংবাদপত্রে সেই খবর প্রকাশিত হয়। নন্দীগ্রামে একটি সর্বদলীয় বৈঠক হয় যেখানে স্থির হয় নন্দীগ্রামে পুলিশ ঢুকবে। ‘ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি’ ওই সভা বয়কট করে। কুঞ্জপুরে সিপিআই-এম পার্টি অফিস ও পুলিশের উচ্চ কর্তাদের মিটিং হয়। এর পরেই আসে সেই দুঃস্বপ্নের ১৪ মার্চ, গণহত্যার দিন, দুর্ভাগ্যক্রমে কার্ল মার্ক্সের মৃত্যুদিনও বটে।
নন্দীগ্রামের মানুষ আন্দাজ করেছিলেন যে তাঁদের জমি অধিগ্রহণের প্রথম ধাপ হিসাবে ঐ দিন পুলিশ ও পার্টির সশস্ত্র গুণ্ডা বাহিনী এলাকায় ঢোকার চেষ্টা করবে। ঠিক হয় মানুষ গৌরাঙ্গ পূজার মাধ্যমে সমাবেশিত হবেন, সঙ্গে হবে কোরাণ পাঠও। ভাঙাবেড়ায় কাটা রাস্তার পাশে পাঁচ ছয় হাজার মানুষ জমা হন।
ঐ দিন সকালে তালপাটি খালের খেজুরির দিক থেকে ভাঙাবেড়া ব্রিজের কাছে পুলিশ মোতায়েন হয়, সাথে সিপিএম বাহিনী। সিপিএম নেতা অনুপ মণ্ডল একটা হাতে মাইক নিয়ে কিছু বলছিলেন, যার কিছুই শোনা যায়নি। পুলিশ কোনো আগাম সতর্কীকরণ ছাড়াই বোমা ও টিয়ার গ্যাস ছোড়ে। সংবাদ মাধ্যমের ভিডিও-তে চটি পরা পুলিশ দেখা যায়, মুখে গামছা জড়ানো বন্দুকবাজও লক্ষ্য করা গিয়েছিল (সেই সময়কার সিপিএমের ডকুমেন্টারি মেকার অনিন্দিতা সর্বাধিকারী একটি পালটা ছবি বানান, যেখানে এই বন্দুকবাজদেরই আন্দোলনকারী হিসাবে দেখানো হয়েছিল)। বহু মানুষ গুলিবিদ্ধ হন, আহতদের সরাতে গিয়ে পুলিশের লাঠিচার্জে টিয়ার গ্যাসে আহত হন। ১৪ জন শহিদ হন। সন্ধ্যাবেলা বুদ্ধবাবু স্মার্টলি বললেন ‘দে হ্যাভ বিন পেইড বাই দেয়ার ওন কয়েন’। ‘খুনি বুদ্ধ’ স্লোগানটি সেই সময়ে জনপ্রিয় হয়েছিল।
১৪ মার্চের পরের দুই দিন সোনাচূড়া দখল করেছিল সিপিএম বাহিনী, অশোক গুড়িয়ার নেতৃত্বে। ১৬ তারিখ দশ হাজার মানুষের এক মিছিল নিয়ে এসে সোনাচূড়া উদ্ধার করে ‘ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি’। এই ঘটনার পরবর্তী আট মাস সিপিএম আর পুলিশবাহিনী নন্দীগ্রামে পা ফেলতে পারেনি।
কমরেড নারানের তৎপরতায় নন্দীগ্রামে মাওবাদীদের সাংগঠনিক কাজকর্ম বিস্তার লাভ করে। লড়াইয়ের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় ও সাংগঠনিক প্রয়োজনীয়তায় তৎকালীন সিপিআই-মাওবাদী রাজ্য কমিটির সদস্য সুদীপ চোংদার ও দীপক নন্দীগ্রাম আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। কমরেড সুদীপের নাম ছিল ‘বাতাস’ ও দীপকের নাম ছিল ‘গৌরাঙ্গ’। তাঁদের নন্দীগ্রাম আন্দোলনে অংশগ্রহণ ১৪ মার্চের গণহত্যার পরে।
এপ্রিল মাসে আমি নন্দীগ্রামে যুক্ত হই, মূলত মেয়েদের সংগঠিত করার কাজে। ১৪ জানুয়ারি ১৪ জনের মৃত্যুর পাশাপাশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল, রাধারানী আড়ি, লক্ষ্মী দাস, রাধিকা দাস-এর অভিজ্ঞতা ছিল ভয়াবহ, মোট ১৭ জনের ধর্ষণের বিবৃতি পাওয়া গিয়েছিল। গণ আন্দোলন দমনে পুলিশি অত্যাচারের পাশাপাশি ধর্ষণ একটি রাষ্ট্রীয় হাতিয়ার থেকেছে সবসময়, নন্দীগ্রামও ব্যতিক্রম নয়। সেই সময়ে রাজ্য মহিলা কমিশন, যার মাথা ছিলেন সিপিএমের নেত্রী মালিনী ভট্টাচার্য, তাদের ভূমিকা ছিল ভয়াবহ। সম্পূর্ণ অর্ণব গোস্বামী স্টাইলে রাষ্ট্রের দানবীয় অত্যাচারকে অস্বীকার করা হয়, এবং তিনি মন্তব্য করেছিলেন, মিছিলে মহিলা-শিশুদের এগিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই হত্যা অত্যাচারের বিভীষিকা জনমানসে বীভৎস ট্রমা ও আতঙ্ক তৈরি করেছিল। মৃত্যুর সংখ্যা ও ভয়াবহতা বর্ণনায় অনেক ক্ষেত্রেই গল্পকথা তৈরি হয়, কৃষক আন্দোলনগুলিতে এই রকম আখ্যান তৈরি হয়েই থাকে সামন্ততান্ত্রিক পরিবেশে, সাঁওতাল বিদ্রোহে হয়েছে, তেভাগা, তেলেঙ্গানা নকশালবাড়িতে হয়েছে। বুদ্ধবাবুর বন্ধু সুনীল গাঙ্গুলি সেই গল্পগুলিকে তুলে ধরে আন্দোলনের রাষ্ট্রীয় নিপীড়নকে কমিয়ে আন্দোলনকে ডেলিজিটিমাইস করতে আনন্দবাজারে লিখেছিলেন! নন্দীগ্রামে পুলিশ-সিপিএমের আক্রমণের ভয়াবহতা কোনোদিনই ইতিহাস থেকে মোছা সম্ভব না।
আমরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে মাতঙ্গিনীর আন্দোলনের কথা, তেভাগার মেয়েদের কথা বলতাম। কাজল, ঝুমা, রাধীদের কাছেই শুনতে পাই সিপিএমের ক্যাডাররা ১৪ থেকে ১৬ই মার্চ ঘরে ঘরে শাসাতো -‘খুব মাতঙ্গিনী হয়েছিস’। নন্দীগ্রামের আন্দোলনে মেয়েদের উপস্থিতি সমীহ করার মত ছিল। কেন ছিল সেটা উপলব্ধি করি নন্দীগ্রামে থাকার সময়। সমস্ত কিশোরীরা স্কুলে যাওয়ার সাথে ধান রুইতে যায় - ধান তোলা, ফসল তোলার কাজ মেয়েরা করেন, বোধহয় কৃষির সিংহভাগ কাজটা করেন মহিলারাই। জমি চলে যাওয়াটা পুরুষ কৃষকের শুধু সমস্যা নয়, মহিলাদের সমান সমস্যা। কাজলের সাথে ধান রোয়া শিখলাম, আর বুঝলাম মহিলাদের সঙ্গে সরাসরি কৃষিবিপ্লবের কথাই বলা যায়।
সোনাচূড়া ছিল লড়াইয়ের কেন্দ্রবিন্দু, ওখানকার মেয়েগুলি ছিল আগুনের শিখা। ওদের সাথে অন্যান্য গ্রামগুলিতে (কেন্দামারি, গোকুলনগর, গড়চক্রবেরিয়া, কালীচরণপুর ও অন্যান্য) যাতায়াত শুরু করি - মাওবাদী পরিচয়ে নয়, গণ আন্দোলন কর্মী পরিচয়ে। উদ্দেশ্য ছিল সাংগঠনিক যোগাযোগ তৈরি করা, এলাকা সম্প্রসারণের জমি প্রস্তুত করা ও ভবিষ্যতে আক্রমণ এলে রিট্রিট জোন তৈরি করা। এই গ্রামগুলিতে আন্দোলনের সমর্থন ছিল, কিন্তু দ্বিধাগ্রস্ত, তালপাটি খাল থেকে দূরে বলে সরাসরি লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা নেই। প্রশ্ন শুনতে হয়েছে ‘আপনি বাঙালি না মাওবাদী’! এক জায়গায় শুনলাম ‘মাওবাদীরা খুব ভাল ফাইট দিচ্ছে, ওদের বড় বড় নখ আর চুল, আবু তাহের ওদের নিয়ে এসেছে জঙ্গল থেকে’। তৃণমূলের ভাবনা ও প্রচার ছিল এইরকমই, যে মাওবাদীদের লড়াই ব্যবহার করে তারা ফায়দা লুটবে। ১৯৯৮ সালে সিপিএম-ও এরকমই ভেবেছিল গড়বেতায়, তৃণমূল-বিজেপির বাহিনীকে আটকাতে তৎকালীন জনযুদ্ধ পার্টির সাথে লড়াই করে সিপিএম, মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষ বিবৃতি দেন ‘জনযুদ্ধ লাল পতাকার মান রেখেছে’। গড়বেতা পুনর্দখল করে সিপিএম। তারপর তারা জনযুদ্ধ পার্টিকেও এলাকা ছাড়া করেছিল। সুদীপ চোঙদার ও দীপক দুজনেই গড়বেতায় সংগঠন করেছিলেন, সংসদীয় পার্টি, বিশেষ করে তৃণমুলের মত একনায়কপন্থী দক্ষিণপন্থী সুবিধাবাদ সম্বন্ধে যথেষ্ট অবগত ছিলেন। প্রথম থেকেই নন্দীগ্রামে যাতে দীর্ঘস্থায়ী গোপন পার্টি সংগঠন গড়ে ওঠে সেই চেষ্টা চালিয়ে গেছেন, যুদ্ধের পাশাপাশি।
যুদ্ধের ক্ষেত্রে মাওবাদীদের অভিজ্ঞতা, সংযম ও পারদর্শিতা অন্যান্যদের চেয়ে স্বাভাবিক ভাবেই বেশি ছিল। ২০০৭ সালে নন্দীগ্রামে লড়াইয়ের কারণে থ্রি নট থ্রি বুলেটের দাম ১২০ থেকে ১৮০ হয়ে গিয়েছিল, চাহিদা বাড়ার কারণে। তালপাটি খালের ওপার থেকে একবার বন্দুক ফুটলে আন্দোলনের স্থানীয় যোদ্ধারা দশ রাউন্ড ফায়ার করে দিচ্ছে উদ্দেশ্যহীন ভাবে, এই ছিল পরিস্থিতি। এই নৈরাজ্যবাদী অপচয় আটকাতে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে বুলেটের রাজনৈতিক মাহাত্ম্য ও খরচ বোঝাতে হয়েছিল কমরেড বাতাস আর গৌরাঙ্গকে। বন্দুক হাতে রাত পাহারা ছিল প্রবল হিরোইজমের বিষয়, যাঁরা রাত পাহারা দিতে যেতেন চাঁদের গ্রামের লোক চর্ব্য চোষ্য খাওয়াতেন। কমরেড নারান একটি কম খরচের একটি উপায় বার করেন, চকলেট বোম গর্ত বা হাঁড়ির তলায় ফাটিয়ে বন্দুকের মত আওয়াজ বার করার। সেই সময়ে ‘ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি’র সঙ্গে আলোচনায় ঠিক হয়েছিল যেরকমই যুদ্ধ হোক, মাইন ব্যবহার করা যাবে না।
রাজনৈতিক ভাবে সহমতের জায়গা তৈরি হলে মাওবাদী পার্টির অ্যাকটিভিস্ট গ্রুপ লেভেলের সদস্যপদ দেওয়া হত। এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে অনেকেই পার্টির পলিটিকাল ট্রেনিং ক্লাসে অংশগ্রহণ করেন, নন্দীগ্রামে ও ঝাড়খণ্ডে। আন্দোলনকারী স্থানীয় মানুষদের মধ্যে মাওবাদী সংগঠনের কর্মী সমর্থক ও ‘ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি’র তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থকদের মধ্যে ফারাক করা যেত সহজেই, মাওবাদী সমর্থকদের হাত তুলে ঘন ঘন লাল সেলাম করার অভ্যাস থেকে।
প্রাথমিক পর্যায়ে তৃণমূলের নেতারা যুদ্ধের প্রয়োজনে মাওবাদীদের অংশগ্রহণে বিশেষ উচ্চবাচ্য করেননি – পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে মে-জুন মাস নাগাদ থেকে, যখন মাওবাদীরা স্থানীয় রাজনীতি বিষয়ে হস্তক্ষেপ শুরু করে ও সংগঠন বাড়াতে শুরু করে - অঞ্চলে ছোট কৃষক ভূমিহীন কৃষকের সমস্যা ও জমি দখলের ইস্যুগুলি সামনে আনে। নন্দীগ্রামের আন্দোলনকারীদের বড় অংশ আগে ছিলেন সিপিএমের সমর্থক-কর্মী-নেতৃত্ব। নেতৃত্ব দল বদল করলেও বড় কৃষকের শ্রেণি অবস্থান বদলায় নি। তৃণমূলের নেতৃত্বের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার ছিল, নিশিকান্ত মণ্ডল শেখ সুফিয়ান, আবু তাহেরদের জমিজিরেতের অভাব ছিল না। শ্রেণি স্বার্থের জায়গা থেকে মাওবাদী পার্টির অ্যাজেন্ডার সঙ্গে এই নেতৃত্বের সংঘাত অবশ্যম্ভাবী ছিল।
এরই মধ্যে আমরা বিভিন্ন মহিলাদের সঙ্গে আলোচনা করে মদের ভাঁটি ভাঙার কর্মসূচি নিয়েছিলাম। প্রথম যার ভাঁটি ভাঙা হয় তাকে মহিলারাই চাঁদা তুলে সোনাচূড়া বাজারে সবজির দোকান খুলে দেন। এই ঘটনায় এলাকায় সাড়া পড়ে যায়।
মাওবাদীদের বাড়বাড়ন্তে অতিষ্ঠ তৃণমূল নেতারা জুন মাস থেকে বলতে শুরু করে মাওবাদীদের আর থাকা দরকার নেই, বুদ্ধবাবু বলে দিয়েছেন জমি নেওয়া হবে না, অতএব এবার ওরা চলে যাক। ১৫ অগাস্ট সোনাচূড়া বাজারে কমরেড নারানের নেতৃত্বে সভা করে জনগণ কালো পতাকা উত্তোলন করে। এই ঘটনা তৃণমূলের নেতৃত্বের জন্য রাজনৈতিক ভাবে যথেষ্ট পীড়াদায়ক হয়েছিল। খেজুরির দিক থেকে আক্রমণ তখন তীব্র হচ্ছে, আবার মাওবাদীদের তৃণমূল না পারছে গিলতে না পারছে ওগরাতে।
সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ ‘ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি’র এক সমর্থক সিপিএমের গুলিতে মারা যান। তাঁর মৃতদেহ নিয়ে একটা মিছিল হবার কথা ছিল, তৃণমূলের নেতারা সেই মিছিলে বাধা দেয়, কমরেড নারান তাদের সাথে উত্তপ্ত বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন, ও এক তৃণমূল নেতাকে জনগণের সামনে চড় মারেন। এই ঘটনা তৃণমূল নেতৃত্বের সর্বোচ্চ স্তর অবধি আলোচিত হয়েছিল সেই সময়ে।
অক্টোবরের শেষ পর্যায়ে রাজ্য সরকার বোঝে সিপিএম ক্যাডারবাহিনী ও পুলিশ দিয়েও নন্দীগ্রাম দখল সম্ভব নয় ওই গণপ্রতিরোধের সামনে – বীরপুঙ্গবরা সিআরপিএফ লেলিয়ে দেবার আয়োজন শুরু করে। পরবর্তী নভেম্বরের ঘটনা মোটামুটি সংবাদ মাধ্যমে লিখিত। ১০ নভেম্বর সিআরপিএফকে শিখণ্ডি রেখে নন্দীগ্রাম পুনর্দখল হয়, আরেক প্রস্থ ভয়াবহ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস নেমে আসে, বিমান বসু বলেন সূর্যোদয় হয়েছে। নিও-লিবারাল পুঁজির সেবাদাস হতে গিয়ে সেই যে ডুবেছিলেন বিমান বসুরা, আজও ভেসে উঠতে পারেননি। জনগণ ভোলেনি, ইতিহাসও ভোলেনি সিপিএমের ন্যক্কারজনক ভূমিকা।
মাওবাদী নেতৃত্ব খুব ভালো করেই জানত রাষ্ট্র এই ‘মুক্ত’ নন্দীগ্রাম খুব বেশিদিন অ্যালাও করবে না – চরম আঘাত নামিয়ে আনবে, বিশেষত যখন মাওবাদীরা এখানে রয়েছে। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে যখন সিপিএমের আক্রমণ আছড়ে পড়ছে ভাঙাবেড়ার দিকে, তৃণমূল নেতারা “মাইন লাগান মাইন লাগান” বলে ছুটে বেড়াচ্ছিলেন। যদিও সেসব কিছু হয়নি, সেই ভাবে রোখাও যায় না। ১০ নভেম্বরের পর মাওবাদী সংগঠনের কিছু কর্মী গ্রামেই চরম গোপনীয়তার সঙ্গে কাজ করতে থাকেন। চিহ্নিত হয়ে যাওয়া কয়েকজন সর্বক্ষণের কর্মী হিসাবে অন্য জায়গায় চলে যান। এক সতের বছরের কিশোরী, যে পরবর্তীতে স্কোয়াড জীবন বেছে নিয়েছিল, সে আমায় বলেছিল – ‘বুদ্ধবাবু আমাদের বাঁচিয়ে দিয়েছে জানো, নইলে আঠারো বছরে বিয়ে করে জীবন নষ্ট করতে হত’। রাজনৈতিক নারীমুক্তি ও স্বাধীনতা চেখে নেওয়ার জীবন্ত উদাহরণ এই মেয়েটি, অন্তত আমার কাছে।
নন্দীগ্রাম আন্দোলন পরবর্তীতে তৃণমূলের ক্ষমতা দখলের পুঁজি হয়, কিন্তু তৃণমূল তো শাসক শ্রেণির অংশ ছাড়া কিছু নয়, ক্ষমতায় আসার আগেই আন্দোলনের মেরুদণ্ড ছিলেন যাঁরা, তাঁদের অবলীলায় বিস্মৃতির দিকে ঠেলার চেষ্টা করে। রাধেশ্যাম গিরি, গৌরহরি মণ্ডল ২০০৭-এর ১০ নভেম্বরের পরে গ্রেফতার হয়েছিলেন, ২০০৯ সালে ‘ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি’ যখন তাঁদের মুক্তির দাবিতে সোনাচূড়া বাজারে অবস্থানে বসেছে, তৃণমূলের লোকজন তাতে হামলা চালায়, পুলিশ ডেকে আনে। তৃণমূলের তখন ‘ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি’র প্রয়োজন ফুরিয়েছে, হলদিয়া লোকসভায় তৃণমূল প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী জিতেছে। ২০১২ সালে অনেক আইনি লড়াইয়ের পর রাধেশ্যাম গিরি, গৌরহরি মণ্ডলরা মুক্তি পান। রাজনৈতিক বন্দি মুক্তি নয়, আইনি লড়াইয়ে মুক্তি।
২০১৬ সালে উওমেন এগেনস্ট সেক্সুয়াল ভায়োলেন্স অ্যান্ড স্টেট রিপ্রেশন নন্দীগ্রামের ধর্ষিতাদের তৎকালীন অবস্থা নিয়ে একটি রিপোর্ট পেশ করেছিল। পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান রাজ্য সরকার তাদের কীভাবে হেনস্থা করে যাচ্ছে তার বর্ণনা ওই রিপোর্টে রয়েছে।
নন্দীগ্রাম আন্দোলন জয়লাভ করেছিল, সেখানে বিশ্বায়নী পুঁজিবাদী মডেলে জমি অধিগ্রহণ করতে পারেনি রাষ্ট্র। এই মডেল তখন ভারতবর্ষ জুড়ে চ্যালেঞ্জড হয়, এবং লক্ষ্য করে দেখবেন ভারত রাষ্ট্র পরবর্তী দশকে জোর করে কৃষি জমি কেড়ে নেওয়ার উদ্যোগ বন্ধ করে। অন্য পন্থা অবলম্বন করেছে তারা, সেটা এখানকার আলোচ্য বিষয় নয়। সাম্রাজ্যবাদী পুঁজির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে উত্তাল জনগণের আন্দোলনে অংশগ্রহণ যে কোন কমিউনিস্ট পার্টির আশু কর্তব্য, সেই আন্দোলনে অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে শ্রেণি যুদ্ধেরই শিক্ষা লাভ হয়, নন্দীগ্রামে সেটাই হয়েছে আমাদের। ওই বিশ্বায়নী শিল্পায়নের মডেল, যাকে সেই সময়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুরা একযোগে জনগণের সামনে ‘কর্মসংস্থান’-এর ভাঁওতাবাজি দিয়ে বাস্তবায়িত করে পুঁজিবাদের প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠার প্রতিযোগিতা চালিয়েছিলেন - সেটা যে কতবড় ধাপ্পা ছিল, ভারতের অর্থনীতির গত এক দশকের চালচিত্র দেখলে বোঝা যায়। আবার ওই মডেল যে ব্যক্তিটি সবচেয়ে সফল ভাবে নামিয়েছিলেন সেই নরেন্দ্র মোদী আজ প্রধানমন্ত্রী। আজও সেই সংগ্রাম চলছে, গণ-বিস্ফোরণ ঘটা পর্যন্ত চলবে।
চাবুক লেখা, যেন রিপোর্টাজ!
এই লেখা একই সংগে আন্দোলনের ভেতর থেকে পরিস্থিতির বিবরণ, রাজনৈতিক বিশ্লেষণ, আগ্রাসী করপোরেট বাণিজ্যের বিপরীতে নিজস্ব অভিমতও; আর সবই করা হয়েছে বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে।
লাল সেলাম কমরেড! নন্দীগ্রামের স্ফুলিঙ্গ দিকে দিকে ছড়িয়ে যাক!
"তৃণমূল তো শাসক শ্রেণির অংশ ছাড়া কিছু নয়"
সেটা বুঝতে কত সময় লাগল? মাও নেতা তো এই দলের নেত্রীকেই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চেয়েছিল। কিন্তু সেসব অতিবদ অতিবামেরা এখন কোথায়? তাদের অনেকেই তো এই শাসক শ্রেণীর অংশ।
এই লেখাগুলো পড়লেই বোঝা যায় যে লেখকের সত্য কথা লেখার দায়, সাহস বা ইচ্ছা কোনটাই নেই। গুজব ও অসত্য জীইয়ে রাখাটাই লেখার প্রধান উদ্দেশ্য।
সত্য কেবল আমরা যা বলব, এ থেকে বেরিয়ে না পড়লে সমূহ বিপদ। বিজেপি বাঁচাবে না কিন্তু
কিসেনজীর কি রোল ছিল নন্দীগ্রামে?
বাহ্ রে আমার বড়ো বিপ্লবী..একগাদা গরীব CPI(M) কর্মী খুন করে ওনারা নাকি ভারত জুড়ে বিপ্লব এনেছিলেন..আগে সরকার উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিয়ে জমি নিতো, এদের দৌলতে দালাল নামিয়ে আরো কম খরচে জমি পাওয়া যায় এখন..
ভালো লাগলো লেখাটি! লাল সেলাম।
বিপ্লবের ১০ বছরের মধ্যে নন্দীগ্রাম বিজেপি নিতে বসেছে
ওদিকে পুরুলিয়ায় ৪০০ বাম কর্মী মেরেবিপ্লব আনার পরে ২০১৯ সালে ৫০% ভোট নিয়ে বিজেপি জয়ী
বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক :)
আরে cপিএম ভোট পার্সেন্টেজের হিসেব করছে নাকি!
খুবই সৎ লেখা। বেশ ভাল লাগল।
1. বিজেপিকে যারা আটকাতে পারতো তারা ' ডুবেছে '। তৃনমূল এর কোনো narrative নেই ফলে বিজেপির narrative কে আটকাতে পারবে না। তাই বিজেপি এরাজ্যে আসছেই ছলে বলে বা কৌশলে।
2. বিজেপি আসলে ফ্যাসিবাদী কায়দায় জমি দখল করবে। তখন বিপ্লবী বাম রা কি ভাবে কি করে দেখার অপেক্ষায় আছি।
3. Neo liberal capitalism এর পাল্টা narrative যদি থাকে সেটাই আপনারা বলুন। সারা পৃথিবী তো বিকল্প খুঁজছে রাস্তা কাটা ছেড়ে সেটা বলুন। আসলে ক্ষমতায় থাকলে আপনাদের ও experiment করে দেখতে হতো। যে চেষ্টা করে না তার ভুল ও হয় না।
4. শিল্প বিরোধী হলে college university গুলো তুলে দেওয়া উচিত কারণ সেখান থেকে পাস করার পর তো চাকরি নেই। মোবাইল টা না use করাই ভালো। অসুস্থ হলে treatment করা যাবে না কারণ শিল্প থেকেই ওষুধ তৈরি হয়, মেডিক্যাল equipment তৈরি হয়। বাড়ি রং করা যাবে না কারণ সেটাও শিল্প। শিল্প ছাড়া কি আপনাদের রাইফেল তৈরি হতো? ট্রাক্টর ফার্টিলাইজার কাস্তে টাও তো শিল্প থেকে তৈরি হয়! Hypocracy has no limits.
1. বিজেপিকে যারা আটকাতে পারতো তারা ' ডুবেছে '। তৃনমূল এর কোনো narrative নেই ফলে বিজেপির narrative কে আটকাতে পারবে না। তাই বিজেপি এরাজ্যে আসছেই ছলে বলে বা কৌশলে।
2. বিজেপি আসলে ফ্যাসিবাদী কায়দায় জমি দখল করবে। তখন বিপ্লবী বাম রা কি ভাবে কি করে দেখার অপেক্ষায় আছি।
3. Neo liberal capitalism এর পাল্টা narrative যদি থাকে সেটাই আপনারা বলুন। সারা পৃথিবী তো বিকল্প খুঁজছে রাস্তা কাটা ছেড়ে সেটা বলুন। আসলে ক্ষমতায় থাকলে আপনাদের ও experiment করে দেখতে হতো। যে চেষ্টা করে না তার ভুল ও হয় না।
4. শিল্প বিরোধী হলে college university গুলো তুলে দেওয়া উচিত কারণ সেখান থেকে পাস করার পর তো চাকরি নেই। মোবাইল টা না use করাই ভালো। অসুস্থ হলে treatment করা যাবে না কারণ শিল্প থেকেই ওষুধ তৈরি হয়, মেডিক্যাল equipment তৈরি হয়। বাড়ি রং করা যাবে না কারণ সেটাও শিল্প। শিল্প ছাড়া কি আপনাদের রাইফেল তৈরি হতো? ট্রাক্টর ফার্টিলাইজার কাস্তে টাও তো শিল্প থেকে তৈরি হয়! Hypocracy has no limits.
শালা! মাসের পর মাস স্ট্রাইক করে, গেটে তালা ঝুলিয়ে যারা কোম্পানি লাটে তুলেছে, বিপ্লবের গপ্পো মাড়িয়ে লাখ লাখ শ্রমিকের ভাত মেরেছে, তারা আবার চাকরির কথা বলতে এসেছে। হিপোক্রিট কি আর গাছে ফলে।
@ অভাগা আগে ভদ্র ভাষায় কথা বলতে হবে, তারপর অন্যের ডায়ালগ তাকেই বলা বন্ধ করতে হবে, তারপর কথা হবে।
"There is an influential popular narrative around the question of lack of industry in West Bengal. It goes something like this — militant trade unionism of the Left parties ruined West Bengal’s industries although West Bengal was an industrial power house during the Congress regime."
বাকিটা পড়ে নিন।
https://www.downtoearth.org.in/blog/economy/why-the-lack-of-industry-in-west-bengal--64679
অসভ্যতা ইগনোর করুন। যুক্তি যখন থাকে না তখন অসভ্যতাই সম্বল।
সুলেখা
নিজেদের কথিত কৃতিত্বের কথা বলার পাশাপাশি জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস ঘটনায় অতগুলো নিরীহ মানুষের মৃত্যুর দায়? একটু মাথা নোয়ানো?
এগুলো কি প্রত্যাশিত নয়?
আর আপনাদের পলিট ব্যুরোর নেতা নারায়ণ সান্যালের মৃত্যুর কয়েক মাস আগে স্টুডেন্ট হলে এক শোকসভায় ঘোষণার--হিংসার পথ ভুল, গণ আন্দোলনের পথ ঠিক-- নিয়ে দু'পয়সা?