রোমে প্লেগ। ক্যানভাসে তৈলচিত্র। শিল্পি জুল্স-এলি দ্যলোনে (১৮৬৯) সৌজন্য: মিনিয়াপলিস ইনস্টিটিউট অফ আর্ট
—William H Mcneill (Plagues and Peoples)
ওপরের কথাগুলো যে বই থেকে নেওয়া—Plagues and Peoples—তা প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৭৬ সালে। লেখক, উইলিয়াম হার্ডি ম্যাকনিল (১৯১৭–২০১৬)। মার্কিন ইতিহাসকার ম্যাকনিল কুড়িটিরও বেশি বইয়ের রচয়িতা এবং ছিলেন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রোফেসর ইমেরিটাস।
অসুখবিসুখ কেমন করে আমাদের মানবসভ্যতার ইতিহাসের গতিপথ নির্ধারণ করেছে, ইতিহাসের আলোচনায় সেদিকটি অনেকখানিই অনালোচিত। সমাজের মধ্যে রয়ে যাওয়া রোগব্যাধি ও তার বাড়াবাড়ি আর বাইরে থেকে আচমকা এসে আক্রমণ করে ফেলা নতুন অসুখ—দুইয়ের অভিঘাত ভিন্ন গোত্রের। এই বইটিতে ম্যাকনিল সেই গুরুত্বপূর্ণ দিকটিতে আলো ফেলেছেন। বিশ্বব্যাপী অতিমারির মধ্যে বসে এই বই পড়া এক শিহরণ জাগানো অভিজ্ঞতা।
পরিচিত অসুখ ভয়ংকর হলেও চেনা শত্রু, কিন্তু অপরিচিত নতুন অসুখের আতঙ্ক অন্য মাত্রার। আমাদের দেশে টিবি-র বাড়বাড়ন্ত সত্ত্বেও, এমনকি প্রতিবছর সেই রোগে কয়েক লক্ষ মানুষের মৃত্যু সত্ত্বেও, করোনা কেন এত সন্ত্রস্ত করে রেখেছে, এই বই পড়তে পড়তে সে প্রশ্নটা মাথায় নতুন করে ঘুরপাক খেতে থাকে—কিছুটা উত্তরও পাওয়া যায়।
কিন্তু, কিছু প্রশ্নের উত্তর মেলে না। ঠিক কেন অপেক্ষাকৃত উন্নত দেশে করোনায় মৃত্যু এত বেশি এবং তুলনায় অনুন্নত দেশে মৃত্যুর সংখ্যা কম? না, শুধুই তথ্যবিকৃতির যুক্তি দিয়ে হিসেব মেলে না। ঠিক কেন ধারাভি বস্তি সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এনে ফেলতে পারল, কিন্তু অমিতাভ বচ্চনের শ্রেণিভুক্ত মানুষেরা আক্রান্ত হতে থাকছেন?
১৪৯২ সালে ক্রিস্টোফার কলাম্বাসের তৈরি সামুদ্রিক জলপথের মানচিত্র ধরে হাতে গোনা কয়েকজন সশস্ত্র মানুষ ইউরোপ থেকে আমেরিকা হাজির হয়ে একখানা আস্ত মহাদেশ দখল করে ফেলল—হাজার বছরের প্রাচীন সভ্যতার জনজাতিকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলতে পারল—ইউরোপের সেই আমেরিকা-বিজয়ে সংক্রামক ব্যাধির গুরুত্ব বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। হাম। গুটিবসন্ত। অপরিচিত সংক্রমণের মহামারি ছড়িয়ে পড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল একের পর এক জনপদ—কাজ সহজ হয়ে গিয়েছিল বহিরাগতদের পক্ষে। এটুকু জানা। কিন্তু, আচমকা অপরিচিত একটি মারণরোগের মহামারি এসে পড়ার যে মানসিক অভিঘাত? সামগ্রিক ভাবেই, পুরো সমাজের ক্ষেত্রে?
অন্তত একটি বিশেষ ক্ষেত্রে ইউরোপ থেকে আসা সেনাদল যখন কোণঠাসা অবস্থায়, হঠাৎই স্থানীয়দের সেনাশিবিরে হানা দেয় গুটিবসন্তের মড়ক। ক-জন মারা গিয়েছিলেন সেই মড়কে, তার চাইতেও ঢের বেশি গুরুত্বপূর্ণ বাকি জীবিতদের মানসিক অবস্থা। যেখানে স্পষ্টতই তাঁরা দেখতে পান, যেন বা ঈশ্বরনির্দিষ্ট বিচারে আক্রান্ত হলেন না ইউরোপের সাদা মানুষগুলো—অন্যদিকে তাঁদের নিজেদের হাজার বছরের প্রাচীন আচার-ধর্মাভ্যাস কিছুই কাজে এল না।
কিন্তু, যে প্রশ্নের উত্তর মেলে না, সেটা এই, জনজাতিরা ইউরোপের শ্বেতাঙ্গদের অসুখে আক্রান্ত হয়ে নিশ্চিহ্ন হওয়ার দিকে এগিয়ে গেলেন—কিন্তু, ঠিক কেন স্থানীয় কোনো সংক্রামক অসুখই তেমন করে হানা দিল না পশ্চিম-শিবিরে? কেন এই বৈষম্য?১
শুরুতেই বলা হয়েছে, সংক্রামক ব্যাধি ও তজ্জনিত মহামারি কেমন করে মানবজাতির ইতিহাসকে নিয়ন্ত্রণ করেছে, সে নিয়েই এই বই। ম্যাকনিলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপপাদ্য—পরনির্ভরশীলতা অর্থাৎ প্যারাসাইটিজমের প্রকারভেদ। ম্যাক্রো-প্যারাসাইটিজম, অর্থাৎ মানুষের নিজেদের মধ্যেই প্রতিযোগিতা ও নির্ভরশীলতা—যেমন মানবসমাজের বিভিন্ন মানুষের মধ্যে সম্পর্ক, সাধারণ মানুষ ও ধর্মগুরু বা মালিক বা শাসকের সম্পর্ক—সেই সম্পর্ক কেমন করে আমাদের বর্তমান সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামোগুলোকে নির্মাণ এবং নিয়ন্ত্রণ করেছে, সে নিয়ে ইতিহাসবিদেরা বিস্তর ভেবেছেন। কিন্তু, এই ম্যাক্রোর অন্তরালে চলতে থাকে যে মাইক্রো-প্যারাসাইটিজিম, অর্থাৎ মানুষের শরীরে বাসা বেঁধে থাকা অজস্র ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়া, যে ভারসাম্যের সামান্য অদলবদলে ঘটে যায় বিপর্যয়—মহামারি—সেই নির্ভরশীলতার গুরুত্বের বিষয়ে ঐতিহাসিকেরা ভেবেছেন কতটুকু?
অঞ্চলভেদে এই নির্ভরশীলতারও প্রকারভেদ ঘটে। একটি অঞ্চল থেকে মানুষ যখন পাড়ি দিয়েছে নতুন জায়গায়, সেই নতুন জায়গার পুরোনো অধিবাসীদের শরীরে এই পরনির্ভরশীলতার ধরন ছিল অপরিচিত—আবার সেই অধিবাসীদের পরিচিত মাইক্রো-প্যারাসাইটিজম বহিরাগতদের কাছে নতুন ঠেকেছে—অপরিচিত অসুখের অভিঘাত অনেকক্ষেত্রেই জয়পরাজয়ের ক্ষেত্রে নির্ধারক ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই পথেই তৈরি হয়েছে নিত্যনতুন আচার, সংস্কার—যেগুলো প্রবাহিত হয়ে এসেছে এমনকি এই বর্তমানেও। এবং ইতিহাসের সেই প্রেক্ষিত হারিয়ে সে সংস্কার আজ ভারী অবান্তর ও হাস্যকর বলে বোধহয়।
শহর ও গ্রামের জনসংখ্যার বিন্যাস, জনসংখ্যার বাড়া-কমা—সবক্ষেত্রেই সংক্রামক ব্যাধির ভূমিকা ছিল প্রশ্নাতীত। গ্রামের খোলামেলা পরিবেশে মহামারি ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা শহরের তুলনায় কম। শহরে জন্মহারের তুলনায় মৃত্যুহার ছিল বেশি। শহরের জনসংখ্যা সমমানে ধরে রাখার ক্ষেত্রে গ্রাম থেকে শহরে আসা পরিযায়ী মানুষের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। সংক্রামক ব্যাধির টিকা আবিষ্কৃত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনতে পারার আগে, অর্থাৎ বিংশ শতকের শুরুর আগে পর্যন্তও, লন্ডন শহরে জনসংখ্যা একই পর্যায়ে ধরে রাখতে হলে গ্রাম থেকে মানুষ না এলে চলত না। বছরে অন্তত লাখ ছয়েক মানুষকে নতুন করে শহরবাসী হতে হত—কেননা, লন্ডনে জন্মাতেন যত জন, মারা যেতেন তার থেকে অনেক বেশি। কিন্তু, শহরে যখন মৃত্যুহার কমিয়ে আনা গেল, তখন গ্রাম থেকে আগত জনসংখ্যা বাড়তি সংখ্যায় পরিণত হল। বাড়তি জনসংখ্যা শহরগুলোকে ঘিঞ্জি করে ফেলল। কয়েক প্রজন্ম শহরে থাকা মানুষের সঙ্গে গ্রাম থেকে সদ্য আগত মানুষের সাংস্কৃতিক ব্যবধান তৈরি হতে শুরু করল। শিল্পোন্নত দেশে, কলকারখানায় কাজের সুযোগ যেখানে মিলল, সেখানে এই বাড়তি জনসংখ্যার চাপ যেভাবে সামলানো গেল, কলকারখানাহীন শহরে ব্যাপারটা একইরকম থাকল না। উন্নত ও অনুন্নত দেশের আর্থসামাজিক বা সাংস্কৃতিক দূরত্বের নির্মাণ ম্যাকনিল অনেকখানিই দেখতে চেয়েছেন রোগ-টিকা-চিকিৎসার আলোয়।
উঠে এসেছে মহামারি বা অতিমারির আশঙ্কা কীভাবে ভারতীয় সত্যতার একেবারে প্রাচীন যুগে— আর্য ভাষাভাষী মানুষের দলে দলে এ দেশে আসার পরবর্তী সময়কালে অস্পৃশ্যতা—জাতপাতের ভেদাভেদের প্রশ্নও। ম্যাকনিল মনে করেছেন স্থানীয় অধিবাসীদের অসুখ যাতে নিজেদের শরীরে পৌঁছে মহামারি না তৈরি করতে পারে, সে বিষয়ে সাবধান হওয়ার তাগিদ এই জাতপাত-অস্পৃশ্যতা সৃষ্টির অন্যতম কারণ। এই উপপাদ্য কি কিঞ্চিৎ আরোপিত নয়? বোধহয় এই বিশেষ দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি নিয়ে বিশদে গবেষণার অবকাশ আছে।
এমনই কিছু প্রশ্ন উঠতে পারে ম্যাকনিলের আরও কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েও। আসলে, সামান্য সাড়ে তিনশো পাতার মধ্যে মানবসভ্যতার সমগ্র ইতিহাসটিকে ফিরে দেখতে চাইলে, সেই ইতিহাসের গতিপথকে এক নতুন দৃষ্টিতে দেখতে ও দেখাতে চাইলে কিছু অতিসরলীকরণ এবং কিছু sweeping conclusions, হয়তো, অনিবার্য। চিকিৎসাবিজ্ঞানের তথ্য নিয়েও খুচরো কিছু ভুল রয়েছে এদিক-ওদিক—কিন্তু, সেগুলো বইয়ের মুখ্য উপপাদ্যের ক্ষেত্রে কোনোই সমস্যা সৃষ্টি করেনি। বইখানা সুখপাঠ্য এবং প্রকাশের পঞ্চাশ বছরের কাছাকাছি এসেও নতুন।
ইতিহাসের বহু কাহিনিই পুরোনো হয় না—মুখগুলোই বদলাতে থাকে শুধু। দুশো বছর আগে ভূমধ্যসাগরীয় বন্দর অঞ্চলে পীতজ্বর ঠেকানোর নিয়মকানুনহেতু বাণিজ্যিক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা নিয়ে এ বইয়ে যে কথাটুকু রয়েছে, তেমন যুক্তি আজও চালু। ‘‘British liberals, in particular, saw quarantine regulations as an irrational infringement of the principle of free trade, and bent every effort toward the eradication of such traces of tyranny and Roman Catholic folly.’’ ‘লিবারাল’ তকমাটা হয়তো দেওয়া যাবে না, কিন্তু ‘লকডাউন’ যে কত বড়ো মূর্খামো তা তো ‘লকডাউন-বিরোধী আন্দোলন’-কে পুরোমাত্রায় সমর্থন করে বুঝিয়ে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন যে লকডাউন পদক্ষেপ নিতে কতটা নিমরাজি ছিলেন তা আমরা সকলেই জানি, আর এই সেদিনই তিনি জানিয়ে দিয়েছেন সংক্রমণের দ্বিতীয় প্রকোপ দেখা দিলেও ‘জাতীয় লকডাউন’ ফের জারি করার কোনো প্রশ্নই নেই। ইতিহাস চাইলে ভুলে মেরে দেওয়া যায়, চাইলে মজার গল্প হিসেবে পড়ে ফেলা যায়—আবার সে থেকে শিখতে চাইলে শেখাও যায়।
আবার, “A world where sudden and unexpected death remains a real and dreaded possibility in everyone’s life experience makes the idea that the universe is a great machine whose motions are regular, understandable and even predictable, seem grossly inadequate to account for observed reality”, এ উচ্চারণে ইতিহাস ছাপিয়ে উঠে আসে একটা দার্শনিক খোঁজ। যে বিজ্ঞান বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে একটা প্রকাণ্ড কল হিসেবে ধরে নিয়ে তাকে তার নিত্যনৈমিত্তিক গতিপ্রকৃতি দিয়ে বুঝে ফেলা, এমনকি ভবিষ্যতে কী হতে পারে তা আগাম জানিয়ে দেওয়াও সম্ভব বলে মনে করে, এই কোভিডের ভীষণ অনিশ্চিত দিনকালে — যখন কে আক্রান্ত হবেন না, কে হবেন, কে হয়ে থাকবেন অ্যাসিম্পটোম্যাটিক (মানে বাইরে থেকে বোঝাই যাবে না যে তিনি আক্রান্ত), কে আক্রান্ত হয়েও বেঁচে যাবেন, কে-ই বা মারা যাবেন তা যখন সাধারণের চোখে এক রাশিয়ান রুলেটে পরিণত হয়েছে — সে বিজ্ঞানের অব্যর্থতা নিয়ে মানুষের মনে কি দারুণ শঙ্কা তৈরি হয়নি? এই শঙ্কার ফাঁক দিয়েই কি ঢুকে পড়ে না গো-মূত্রের ধারা, কিংবা, যেমনটা এই সেদিনই ফেসবুকে এক কোভিডে মরণাপণ্ন ভদ্রমহিলার অভিজ্ঞতার বর্ণনায় জানলাম, চিকিৎসকেরাও বলেন “দুর্গানাম জপ করুন!” ম্যাকনিলের তোলা এই গভীর প্রশ্ন এড়িয়ে গেলে কিন্তু গোমূত্র আর রোগের উপশমে দুর্গানামের প্রেসক্রিপশন থেকেই যাবে!
প্রসঙ্গান্তরে যাই, জেমস লিন্ড-এর নাম অনেকেই শুনেছেন, তিনি লেবুর রস খাইয়ে স্কার্ভি সারিয়ে ফেলার পথিকৃৎ। সেদিক থেকে দেখলে, বিশ্বের প্রথম ক্লিনিকাল ট্রায়াল করেছিলেন তিনিই। এবং সেই লেবুর রসের গুরুত্ব ছিল এমনই, যে, ব্রিটিশ নৌবাহিনীকে বাকি দুনিয়া লাইমি নামে ডাকত। কিন্তু, তাঁর আরও দুখানা ছোট্ট পদক্ষেপের কথা খুব বেশি লোকের জানা নেই।
এক, নৌবাহিনীর সেনাদের ম্যালেরিয়া-অধ্যুষিত অঞ্চলে সন্ধের পর জাহাজ থেকে নামা নিষেধ। ছোট্ট এই সিদ্ধান্তে নৌবাহিনীতে ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে যায়। হ্যাঁ, এই ঘটনা রোনাল্ড রসের ম্যালেরিয়া ও মশার সম্পর্ক বিষয়ক ঐতিহাসিক গবেষণার ঢের আগের ব্যাপার।
দুই, সেনারা যখন বাড়ি থেকে ফিরবেন, বা নতুন সেনা যখন বাহিনীতে যোগ দেবেন, তিনি প্রথমে বাকিদের থেকে আলাদা থেকে বাইরের পোশাক-আশাক সম্পূর্ণ বর্জন করে আপাদমস্তক ভালো করে কড়া সাবান দিয়ে স্নান করে নতুন পোশাক পরে তবেই বাহিনীর বাকিদের সঙ্গে মিশবেন। এইটুকু, হ্যাঁ, এইটুকুতেই নৌবাহিনীতে টাইফাসের প্রকোপ চমকপ্রদ ভাবে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়।
অতএব, মহামারি ঠেকানোর জন্য চাঞ্চল্যকর বৈজ্ঞানিক ভাবনা, টিকা বা প্রযুক্তিনির্ভর চিকিৎসা না হলেও চলে—খানিকটা সাধারণ বুদ্ধি, সাধারণ কিছু সাবধানতা, কিছু সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি, এ দিয়েও অনেকখানি এগোনো যায়।
আরও একটা ঘটনার কথা বলি। গত শতকের মাঝামাঝি ব্রিটিশ সেন্ট্রাল বোর্ড অফ হেলথ সিদ্ধান্ত নিলেন, স্যানিটারি সিস্টেম ঢেলে সাজাবেন। কিন্তু, কাজটা তো সহজ নয়। খরচ বিস্তর। তা ছাড়া পুরোনো পাইপলাইন গিয়েছে প্রচুর ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির নীচ দিয়ে—আপত্তি তাঁদের তরফেও। ধামা চাপা পড়ে যাচ্ছিল প্রস্তাব। এক এবং একমাত্র কলেরা মহামারির আতঙ্ক ম্যাজিকের মতো কাজ করল—সব বাধা অতিক্রম করে কাজটা সমাধা হতে পারল। শুধু লন্ডন নয়, পশ্চিমের বিভিন্ন শহরে খরচের তোয়াক্কা না করেই বসানো গেল নতুন বিজ্ঞানসম্মত স্যানিটারি সিস্টেম—মহামারি বড়ো বালাই।
পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল, এই কোভিড উনিশের ঝাঁকুনিতে দেশের নড়বড়ে স্বাস্থ্যব্যবস্থার যদি খোলনলচে বদলে ফেলা যায়… যদি বদলানোর কথা ভাবার কাজটা শুরু হয়… যদি সবাই মিলে জোর গলায় সরকারের কাছে স্বাস্থ্যখাতে ব্যয়বরাদ্দ বাড়ানোর কথা বলেন… যদি জনস্বাস্থ্যের দিকে আর-একটু নজর দেওয়ার কথা ভাবা হয়, স্বাস্থ্যব্যবস্থায় জনসাধারণের অংশগ্রহণের ব্যাপারটা আর-একটু বাড়ানো যায়… যদি… এই মহামারির মুহূর্তে… অতীতের ঘটনার অনুষঙ্গে, বইয়ের কথাতেই… ‘‘To do nothing was no longer sufficient; old debates and stubborn clashes had to be quickly resolved by public bodies acting literally under fear of death’’।