কোভিড অতিমারী এদেশে আক্রান্ত ও মৃত, দুই হিসেবেই বাড়ছে। লেখচিত্রে স্থিতাবস্থার ইঙ্গিত বা আভাস বলে যেটুকু আশা করা যাচ্ছিল, সে প্রায় মরীচিকা-সম বলে ইতিমধ্যে প্রমাণিত। দিনে নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় লাখের কাছাকাছি - মৃতের সংখ্যা প্রায় হাজার। সঠিক সংখ্যায় পরীক্ষানিরীক্ষা হতে পারলে আসল সংখ্যাটা তার চাইতে যে বেশ কিছুটা বেশী হবে, সে নিয়ে সংশয় নেই - বিতর্ক হতে পারে, সঠিক সংখ্যাটা ঠিক কতগুণ বেশী, সে নিয়েই।
এমতাবস্থায়, বিশেষত দেশের আর্থিক হালের পরিস্থিতি মাথায় রেখে, ঠিক কী কী করা যেতে পারে, বলা মুশকিল। ভ্যাক্সিন নিয়ে আলোচনা করা যেতেই পারে - কিন্তু, সেই পথে এখুনি সমাধান আসার সম্ভাবনা কম। গণপরিবহন চালু হলে আক্রান্ত ও মৃত, উভয় সংখ্যাই বাড়বে - এ নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। ইশকুল-কলেজ খুললেও তা-ই। আবার আরেকদিকে,
যাঁদের নিজের পয়সায় নিজের উদ্যোগে কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার ক্ষমতা আছে, বা যাঁদের কর্মস্থানটি সুবিধেমত বাড়িতে সরিয়ে আনা যায়, অথবা যাঁদের কর্মস্থল কর্মীদের আলাদা করে পরিবহনের বন্দোবস্ত করছে - তাঁরা সকলেই কাজকর্ম করছেন। এবং, তাঁদের অধিকাংশই সচরাচর মধ্যবিত্ত বা উচ্চ-মধ্যবিত্ত।
ওদিকে, বিশেষত ট্রেন বন্ধ থাকায় যাঁরা বিপদে পড়েছেন, তাঁদের অধিকাংশই আর্থিক মানদণ্ডে প্রথমোক্তদের তুলনায় পিছিয়ে। অতএব, গণপরিবহন বন্ধ রেখে অতিমারী মোকাবিলায় বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তাঁরা, যাঁদের আর্থিকভাবে ক্ষতি সহ্য করার ক্ষমতা কম। লেখাপড়ার ক্ষেত্রেও তা-ই।
ইশকুল-কলেজ বন্ধ থাকার কারণে যে পড়াশোনার ক্ষতি (অন্যান্য ক্ষতির কথা বলছি না, যেমন সহপাঠীদের সাথে খেলা বা হুল্লোড় বা দুষ্টুমি করার সুযোগ না পেয়ে একাকিত্ব-বোধ ইত্যাদি), সেও স্বচ্ছল পরিবার অনলাইন ক্লাস করে খানিকটা সামলে নিতে পারে - সঙ্গতিহীন পরিবারের সন্তানের পক্ষে যেটা সম্ভব নয়।
এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে সমাধান ঠিক কী, বা এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার পথ কী, এক কথায় বলা মুশকিল। পরিস্থিতি প্রায় শাঁখের করাতের পর্যায়ে।
কিন্তু, আজ এসব নিয়ে বলতে বসিনি। আজ অতিমারীর শিকার নিয়ে কথা বলব। না, কোভিডে যাঁরা আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন, তাঁদের কথা নয় - কিম্বা, কোভিড নিয়ন্ত্রণের বিবিধ পরিকল্পনা-হীন বা উটকো অবিবেচনা-প্রসূত সিদ্ধান্তে যাঁরা মারা গেলেন, তাঁদের কথাও নয় - সেসব নিয়ে আগে অনেক বলেছি। আজ বলব, আরেক পর্যায়ের শিকারদের কথা। সেইসব
শিকারদের কথা, যাঁদের অনেকেই শিকারী ভেবেছেন।
হ্যাঁ, চিকিৎসকদের কথা বলছি।
চিকিৎসক বা চিকিৎসক বাদে বাকি স্বাস্থ্যকর্মীদেরও যে কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশী, সে নিয়ে আলাদা করে বলার কিছু নেই। আক্রান্ত হলে তাঁদের, বিশেষ করে চিকিৎসকদের, মারা যাওয়ার সম্ভাবনা যে বাকিদের তুলনায় বেশ কিছুটা বেশী - সে বিষয়েও তথ্য কিছু কম নেই। কিন্তু, কথাটা সে দিক থেকে বলছি না।
কোভিড খুব ভয়ানক মারণ রোগ, এমন তো নয়।
আক্রান্ত-পিছু মৃতের হার হিসেব করলে আরো অনেক অনেক সংক্রামক ব্যাধিই কোভিডের চাইতে বিপজ্জনক। কোভিডের বিপদ তার সংক্রমণ-ক্ষমতা - এবং দ্রুত আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি, অতএব মৃত্যুর হার যেমনই হোক, মৃতের সংখ্যাবৃদ্ধিও অনিবার্য। এর সঙ্গে যোগ করা দরকার আমাদের নড়বড়ে স্বাস্থ্যব্যবস্থার বিষয়টিকে - যেটি সাধারণ অবস্থাতেই ধুঁকে ধুঁকে চলে - তার ক্ষমতাই নেই আচমকা এসে পড়া এই বাড়তি সংখ্যার রোগীকে সামলানোর।
অতিমারীর ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের আতঙ্কের কারণ কিন্তু এটাই। চিকিৎসা না পাওয়া। অসুস্থ হলে ঠিক কেমন চিকিৎসা চলছে, পরিজনের পক্ষে সেটুকু খবর সবক্ষেত্রে যথাযথ না পাওয়া। এবং, যে রোগের নাকি নির্দিষ্ট কিছু চিকিৎসাই নেই, এমনকি তার চিকিৎসাতেও সর্বস্বান্ত হওয়া। প্রথম ও তৃতীয় আশঙ্কাটি পরস্পর সম্পৃক্ত।
কোভিড অতিমারীতে আয় কমেছে প্রায় সকলেরই।
কিন্তু, কোভিড থেকে বাঁচার জন্যে সুরক্ষাসামগ্রীর দাম বেড়েছে বহুগুণ। N95 মাস্কের দাম কোভিড পরিস্থিতির আগে যা ছিল, কিছু ক্ষেত্রে দাম বেড়েছে তার দশগুণ - পরবর্তীতে দামে কিছুটা লাগাম টানা গেলেও, কোভিড-পূর্ব দামে পৌঁছানো যায় নি। পিপিই কিট বা হেড শিল্ড সবকিছুর ক্ষেত্রেই তা-ই। এর সাথে বাড়তি বিপদ, নিম্নমানের সামগ্রীকেও চড়াদামে বেচে দেওয়া। সরকারি কমিটি, যাদের দায়িত্ব গুণমান যাচাই করা, তাঁরা প্রবল উদ্যোগে এবিষয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন - এমন অপবাদ কেউই দিতে পারবে না। যাঁরা এইধরণের সুরক্ষাসামগ্রী তৈরী করেন, যাঁদের এবিষয়ে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা রয়েছে - বিশ্বজুড়ে কোভিড মাথাচাড়া দেওয়ার সময়েই তাঁরা সরকারের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, ঠিক কী পরিমাণ বাড়তি সামগ্রী প্রস্তুত করে রাখা প্রয়োজন - অভিযোগ, সরকার তাঁদের একাধিক চিঠির উত্তরটুকুও দেননি। এই ঘটনা জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের। অতএব, এই মুহূর্তে বাজারে যে বিপুল পরিমাণ মাস্ক ঘুরে বেড়াচ্ছে, সেগুলো যাঁদের তৈরী, সেইসব কোম্পানি এই কোভিডকালের পূর্বে কখনোই মাস্ক তৈরী করেনি - এই তথ্যের তাৎপর্য নিয়ে আর কথা না বাড়ানোই ভালো।
দ্বিতীয়ত, এদেশের চিকিৎসাব্যবস্থাটিকেও বীমাভিত্তিক করে ফেলার আয়োজন অনেকদূর এগিয়ে গিয়েছে। কর্পোরেট হাসপাতালের গেট ঠেলে ঢুকলে আপনার অসুবিধে কী জানতে চাওয়ার আগেই কর্তৃপক্ষ জানতে চান আপনার চিকিৎসাবীমা রয়েছে কিনা। সরকারও, রাজ্য ও কেন্দ্র উভয়ই, ক্রমশ বীমানির্ভর ভবিষ্যতের দিকে এগোচ্ছেন।
এই পরিস্থিতিতে বহু মানুষ, বছর বছর মোটা টাকা চিকিৎসা-বীমার প্রিমিয়ম ভরা সত্ত্বেও কোভিড আক্রান্ত হলে বীমার টাকা পাননি। বলা হয়েছে, এই অসুখ বীমাদ্বারা সুরক্ষিত নয়। অর্থাৎ, বীমার সাথে যে লম্বা ফর্দ দেওয়া থাকে, তার শর্তের মধ্যে কোভিড পড়ে না। সে ফর্দ কেউই পড়ে না অবশ্য - কিন্তু, এক্ষেত্রে সে প্রশ্ন অবান্তর - যে অসুখ বাজারে এসেছে এই ক'মাস হল, সেই অসুখের নামসহ বীমা করার মতো ভবিষ্যৎদ্রষ্টা হওয়া একেবারেই অসম্ভব।
মাথায় রাখা যাক, এই কোভিড-পরিস্থিতিতে বাকি অসুখবিসুখের চিকিৎসা হয়েছে নামমাত্র। আবার দেখা যাচ্ছে, কোভিডের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও বীমা-কোম্পানি টাকা দিতে চাননি। অতএব, বীমাকোম্পানির লাভের অঙ্কটি সহজেই অনুমেয়।
সাধারণ মানুষ বীমার টাকা যথাসময়ে জমা দিয়ে য়েছেন। না দিলে পলিসি ডিসকন্টিনিউড। এই বছর বাদ রেখে পরের বছর করতে গেলে নতুন পলিসি হিসেবে দেখা হবে - এবং অনেক সুবিধেই পাওয়া যাবে না। তাহলে? মানুষ কি ঠকলেন না??
সাধারণভাবে বীমার উদ্দেশ্য, অসময়ের সুরক্ষাকবচ।
অসুবিধেহীন সময়ে টাকা দিতে হয়, যাতে অসুবিধের দিনগুলোতে আর্থিক দুশ্চিন্তায় না পড়তে হয়। চিকিৎসাবীমার ক্ষেত্রে কোভিডের মুহূর্তে সেই নিরাপত্তা পাওয়া গেল কি!!
যে সমস্ত বিরল সৌভাগ্যবান মানুষ কোভিড-চিকিৎসার ক্ষেত্রেও বীমাকোম্পানি থেকে টাকা পেয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও সুরক্ষাসামগ্রীর খরচ দেওয়া হয়নি, কেননা কনজিউমেবলস বীমার আওতার বাইরে। বেসরকারি হাসপাতালের প্রায় সর্বত্রই এই সুরক্ষাসামগ্রীর খাতে (মাস্ক-পিপিই ইত্যাদি) বিপুল অঙ্কের বিল করা হয়েছে - অনেকসময়ই পিপিই-র দাম হিসেবে বাজারদরের চেয়ে বেশী টাকা হিসেব করা হয়েছে - এবং সেই টাকা রোগী-পরিজন পকেট থেকে দিতে বাধ্য হয়েছেন। মনে করিয়ে দিই, কোভিড চিকিৎসার যে মূল বিল বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পরিজনের হাতে ধরাচ্ছেন, তার মধ্যে বেশ অনেকটাই এই সুরক্ষাসামগ্রীর বিল - বীমার ভাষায়, কনজিউমেবলস- এবং হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ এই বাবদে মোটা অঙ্কের ফায়দা করেছেন।
বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড চিকিৎসার খরচ প্রায় আকাশছোঁয়া। যাঁরা ভর্তি না হয়ে বাড়িতে সাবধানে থাকলেই সুস্থ হতে পারতেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও বিল দাঁড়াচ্ছে হপ্তা দেড়-দুয়েকে আট-দশ লক্ষ। না, তাঁদেরকে হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ জোরাজুরি করে বা বিভ্রান্ত করে ভর্তি করছেন, এমন নয় - অনেকসময়ই প্যানিকগ্রস্ত পরিজনই উল্টে জোরাজুরি করে ভর্তি করছেন। কিন্তু, হাসপাতাল-বাসের শেষে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার সময়ে পরিজনের চোখ কপালে উঠছে। আর, যাঁরা সত্যিই গুরুতর অসুস্থ হচ্ছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে হাসপাতালের বিল নিয়ে কথা না বাড়ানোই ভালো - বিশ-পঁচিশ লাখ তো বটেই, অনেকক্ষেত্রে তার চাইতেও অনেকখানি বেশী। এই রাজ্যে কর্পোরেট হাসপাতাল এখনও সেই উচ্চতায় পৌঁছায়নি, কিন্তু খবর পেলাম, ব্যাঙ্গালোরের একটি বেসরকারি হাসপাতাল দিনদশেকের চিকিৎসার শেষে পরিজনের হাতে বিল ধরিয়েছেন তিরানব্বই লক্ষের (স্বীকার করে নেওয়া যাক, বিল যাচাই করে দেখিনি)।
আরেকদিকে, গত প্রায় মাসছয়েক চিকিৎসা বন্ধ রেখে ক্রনিক অসুখের রোগীদের পরিস্থিতি জটিলতর হয়েছে - এবং বেশ কিছু ক্ষেত্রে আশু চিকিৎসা জরুরী। সেক্ষেত্রেও চিকিৎসার ব্যয় কোভিড-পূর্ব খরচের তুলনায় বেশ কিছুটা বেড়েছে - অনেকক্ষেত্রে অজুহাত সেই সুরক্ষাসামগ্রী, অর্থাৎ কনজিউমেবলস। অতএব, বাড়তি খরচের অনেকটাই, বীমা থাকলেও, পরিজনকে পকেট থেকে খরচা করতে হচ্ছে। আর যাঁদের বীমা নেই, তাঁদের দুরবস্থার কথা না বলা-ই ভালো।
অতএব, এই ঘোলাজলে সুরক্ষাসামগ্রী প্রস্তুতকারকদের লাভ বেড়েছে। বেসরকারি হাসপাতালের লাভ মোটের উপর বেড়েছে কিনা বলা মুশকিল হলেও, রোগী-পিছু উপার্জন যে বেড়েছে, সে নিয়ে সন্দেহ না রাখা-ই ভালো।
এর মধ্যে যাঁর আয় কমেছে, তিনি চিকিৎসক।
হ্যাঁ, বিশ্বাস করুন, কথাটা নির্ভেজাল সত্যি।
শল্য-চিকিৎসার ক্ষেত্র বাদ দিলে, বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার যে বিল, তার খুব বেশী হলে সাত-আট শতাংশ চিকিৎসকের ফীজ। এই কোভিড-পরিস্থিতিতে সেটি এসে দাঁড়িয়েছে পাঁচ শতাংশের আশেপাশে। না, মনগড়া কথা বলছি না। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়ানো একটি কর্পোরেট হাসপাতালের দেওয়া চিকিৎসাব্যয়ের আনুমানিক পূর্বাভাসে চিকিৎসকের
কারণে খরচ সাড়ে চার শতাংশ - মাথায় রাখা যাক, পরিস্থিতি-অনুসারে খরচ অনুমান ছাপিয়ে গেলেও চিকিৎসক-খাতে ব্যয়টি অপরিবর্তিতই থাকে, অর্থাৎ মোট ব্যয়ের শতাংশ হিসেবে দেখলে চিকিৎসকের ফীজ নেমে আসে দুই-তিন শতাংশে। এটিও মনগড়া তথ্য নয়। কেননা, সোশ্যাল মিডিয়াতেই একটি কর্পোরেট হাসপাতালে দুদিনে দুই লক্ষ টাকা (ভেন্টিলেটর ইত্যাদির প্রয়োজন ছাড়াই) বিল দাঁড়ানোয় বিস্তর হইচইয়ের পর বিলটি খতিয়ে দেখতে গিয়ে চোখে পড়ল, দুই লক্ষের মধ্যে চিকিৎসকের ফীজ মাত্র আটাশশো টাকা। এর সাথে মনে করিয়ে দেওয়া যাক, অতিমারীর শুরুর দিকেই কর্পোরেট হাসপাতালে সব শ্রেণীর কর্মীদেরই মাইনে কমানো হয়েছিল - এবং চিকিৎসকদের মাইনে কমেছিল সবচেয়ে বেশী। অতিমারীর শুরুর দিকে হাসপাতালের আয় যেভাবে কমে এসেছিল (আয় যখন ফুলেফেঁপে ওঠে, তখন কর্মীরা সেই বাড়তি আয়ের ভাগ পান, এমন কিন্তু নয়), এখন আর সেই অবস্থা নেই - কিন্তু, কর্মীদের মাইনে এখনও আগের জায়গায় পৌঁছোয়নি।
এমনিতে এ নিয়ে বিশেষ কিছুই বলার থাকত না।
কর্মস্থলে কর্মী কেমন মাইনে পাবেন, সেটি শ্রম-আন্দোলনের ভাবনাচিন্তার বিষয় হতে পারে, কিন্তু বৃহত্তর সমাজ সাধারণত সেসব নিয়ে বিচলিত হয় না। আর, ডাক্তারবাবুদের নিজেকে শোষিত শ্রমিক ভাবতেও ভারি লজ্জাবোধ হয়। কাজেই, তাঁদের পাঁঠা তাঁরা কীভাবে কাটবেন, সে কর্তৃপক্ষের দায় এবং প্রথমে ন্যাজ নাকি মুড়ো কী বাড়িয়ে দেবেন, সে নিয়ে, বোধকরি পাঁঠাদের আলাদা করে কথা বলার জায়গা নেই।
তবু, কথা বলা জরুরী।
কেননা, এই যে বিপুল মুনাফার কারবার চলছে, তার পুরোটাই চালানো যাচ্ছে ডাক্তারবাবুকে সামনে রেখে। চিকিৎসকের মানবিক মুখটি সামনে সাজানো না থাকলে এই কারবার একটি দিনও চলতে পারত না।
এই মুখটি সামনে সাজিয়ে রেখে একদিকে যেমন ফুলেফেঁপে উঠছে কারবারির ব্যাঙ্ক ব্যালান্স, আরেকদিকে সেই মুখে ভুলে ঘটিবাটি বেচার পরিস্থিতিতে পড়ছেন আমজনতা - এবং সেই বিপদের জন্যে সাধারণ মানুষ দায়ী করছেন চিকিৎসককে। আশেপাশে কান পাতলেই শুনতে পাবেন, এই অসম্ভব অমানবিক বিল-এর কারণ হিসেবে অধিকাংশ মানুষ একবাক্যে দায়ী
করছেন চিকিৎসককেই।
কর্পোরেট হাসপাতালের মালিককে চোখে দেখা তো দূর, তাঁর নামটুকুও জানেন না অধিকাংশ রোগী-পরিজন। এই যে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন এতজন চিকিৎসক - বেশ কয়েকজনের বয়স তো বেশ কম - বলুন তো, কর্পোরেট হাসপাতালের একজন মালিকও গুরুতর অসুস্থ অব্দি হয়েছেন?
ঝুঁকি চিকিৎসকের। বিপদ চিকিৎসকের। এবং খুব যুক্তিযুক্ত কারণে অন্যায়ভাবে ঘৃণার শিকারও সেই চিকিৎসকই!!
আর নিরাপদ দূরত্বে বসে লাভের কড়ি গুণে নিচ্ছেন যিনি, তিনি রয়ে যাবেন অন্তরালেই?
তাহলে?
ডাক্তারবাবুরা একটু ভেবে দেখবেন?
না, কর্পোরেট হাসপাতালের ঝাঁচকচকে পরিকাঠামো ছেড়ে চলে আসতে বলছি না। কিন্তু, আপনি আর এই কর্পোরেট স্বাস্থ্যব্যবস্থা যে এক নয়, আপনি যে এই বৃহৎ সিস্টেমের একজন বেতনভুক নিরুপায় কর্মচারী মাত্র, সেই কথাটুকু বলতে শুরু করুন - বলতে শুরু করুন আপনার সামনে বসে থাকা রোগীকে, পরিজনকে। এতে আপনার মহিমা-গরিমা আপাতদৃষ্টিতে
কিছু কমতে পারে - কিন্তু, ব্যবস্থাটায় বদল আনার এ একেবারে প্রাথমিক ধাপ।
নাকি, চিকিৎসার মুখ হিসেবে সামনে থাকতে থাকতে শুধুই মুনাফার উদ্দেশে নির্মিত একটি অমানবিক ব্যবস্থার মুখ হিসেবে নিজেকে ব্যবহৃত দেবেন? এখনও? এর পরেও?
এত সত্যকথন যে লোকজনের হজম হবেনা ! ক্রুর বাস্তব।
মাস্কের দাম তো এই প্যান্ডেমিকের বাজারে প্রচুর বেড়েছে। আশি থেকে একশ দশ টাকার মাস্ক মাঝে বাজারে ছশো-সাতশো হয়েছিল - এখন আড়াইশোর আশেপাশে। প্যান্ডেমিকের আগে কমদানে যে মাস্ক পাওয়া যেত, আর এখন বেশীদামে যেগুলো পাওয়া যাচ্ছে, কোয়ালিটির ফারাক অনেক (মানে, খারাপ)।
মাঝে তো সার্জিকাল মাস্কও চল্লিশ-পঞ্চাশ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সেও আবার সিঙ্গল লেয়ার।
যা তা অবস্থা হয়েছিল। এখন একটু বেটার।
এগুলো বাজারের কথা। সরকারি সাপ্লাইয়ের দরদাম জানি না - সেটা তুমি বলতে পারবে। একদম শুরুর দিনগুলো বাদ দিয়ে মোটামুটি নিয়মিত সাপ্লাই পেয়েছি। মাঝখানে কোয়ালিটি খারাপ ছিল - এখন বেশ ভালো কোয়ালিটির মাস্ক সরকার দিচ্ছে।
খুব গুরুত্বপূর্ণ লেখা