এই যে ব্যক্তিমানুষটির যাপন বা আদর্শকে এড়িয়ে গিয়ে তাঁর লার্জার-দ্যান-লাইফ ইমেজটির অনুষঙ্গ ব্যবহার করে কিঞ্চিৎ গৌরব অর্জন, ব্যাপারটা শুধু নির্দোষ ব্যক্তিগত সংগ্রহের আত্মপ্রসাদ লাভে সীমাবদ্ধ থাকলে অতোখানি সমস্যা হত না। কিন্তু, ইদানীং ইমেজের সদব্যবহার বা অপব্যবহার করে নিজেদের অ্যাজেন্ডা গুছিয়ে নেওয়ার ধারাটি পুরোদমে চালু হয়ে গিয়েছে - আর পুরো পরিস্থিতির পাঠটাই খুব সহজেই কেমন গুলিয়ে দেওয়া যাচ্ছে। যেমন দেখুন... একদিকে গান্ধীজির হত্যাকারীর নামে মন্দির তৈরী হচ্ছে এবং আরেকদিকে গান্ধীহত্যার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত সংগঠনের সক্রিয় সদস্য হিসেবে গৌরবান্বিত প্রধানমন্ত্রী গান্ধীজির স্মৃতিসৌধে মালা দিয়ে থাকেন। গান্ধীজির প্রতিস্পর্ধী হিসেবে সর্দার প্যাটেলকে খাড়া করে ফুটেজ খাওয়ার ব্যবস্থা হয় এবং মোদি-শাহ জুটিকে প্রায় বল্লভভাই প্যাটেলের উত্তরসূরী হিসেবে প্রোজেক্ট করা হয়, যদিও প্যাটেল স্বয়ং আরএসএস-কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন এবং সাভারকারকে জেলে ঢোকানোর ব্যাপারে বদ্ধপরিকর ছিলেন, যা থেকে তাঁকে নিরস্ত করতে বিস্তর চিঠিচাপাটি লেখেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। ... ...
আরেকবার, মনে করিয়ে দেওয়া যাক, সরকারি ব্যবস্থার পাশাপাশি চলে আসা ছোট চেম্বার বা ডাক্তারবাবুর নিজস্ব নিয়ন্ত্রণাধীন নার্সিংহোম, তার চাইতে কর্পোরেট হাসপাতাল চরিত্রগতভাবেই ভিন্ন গোত্রের। এবং, সমকালীন সমাজের রীতিনীতি বা মূল্যবোধের সাথে তাল মিলিয়ে ব্যক্তিচিকিৎসকের ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা বা সততার পরিবর্তনের প্রশ্নের চাইতে ঢের বেশী গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসাভাবনার এই ধারাবদল। একে যদি উন্নতি ও প্রগতি বলে বিশ্বাস করেন, তাহলে প্রত্যাশা বদলে ফেলুন। আর পুরোনো বিশ্বাসের সম্পর্কে যদি আস্থাশীল হতে চান, তাহলে এই নতুন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কথা বলুন। দুটো একইসাথে চলে না। চলতে পারে না। দুই নৌকায় পা রেখে ঠিকঠাক দাঁড়িয়ে থাকাই মুশকিল - এগোতে পারার সম্ভাবনা তো দূরের কথা। ... ...
সৎ দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে আমাদের গুরুদায়িত্ব সরকারেরব কথাকে বেদবাক্য বলে মেনে নেওয়া। এই পরিস্থিতিতে, নিজের স্বাস্থ্য নিজের সুরক্ষার দায় এক এবং একমাত্র নিজের, এমত সরকারি ঘোষণায় উদবুদ্ধ হয়ে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের একটি বড় অংশ যদি বাড়িতে বসে থাকতে চান, তাহলে নিশ্চয়ই তাঁদের দোষ দেওয়া যায় না। তাই না?? তাহলে কী করবেন? কী আবার!!! আপনি হাত ধুচ্ছেন তো? আপনার সরকারও হাত ধুয়ে নিলেন। অতএব, আপনারা থালা বাজান। বাতি জ্বালুন। কোনো এক শুভদিনে সন্ধ্যা আট ঘটিকায় পরবর্তী ঘোষণার অপেক্ষায় থাকুন। ... ...
আমাদের ইতিহাস পাঠ অনেকাংশেই ক্ষমতার ইতিহাস - এবং ক্ষমতাবানের ইতিহাস। ক্ষমতাহীন যে সংখ্যাগরিষ্ঠ, তাঁদের নিয়ে চর্চার অভ্যেস, ইতিহাসবিদদের মধ্যেও, তেমন পুরোনো নয় - জনপ্রিয় ইতিহাসের ডিসকোর্সে সে বয়ান ঢুকতে বহু দেরী। ক্ষমতাবানের শাসনের চিহ্ন হিসেবে - যুগে যুগে শাসকের ক্ষমতার স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে - রয়ে গিয়েছে অজস্র স্থাপত্য। এবং আমাদের ইতিহাস লিখনপ্রক্রিয়ায় সে স্থাপত্যের গুরুত্ব অনিবার্য। তারই সাথে সাথে নব্য শাসক পুরাতনের ক্ষমতার চিহ্ন মুছে ফেলতে গিয়ে ধ্বংস করেছেন পুরাতন স্থাপত্য - পুরাতনকে গড়েপিটে করে নিয়েছেন নতুন - এবং সেই নব্যরীতি নতুন ক্ষমতার প্রতি মানুষের সম্ভ্রম নতুন করে আকর্ষণ করেছে - এ নজির প্রত্যেক দেশে প্রতি যুগেই অঢেল। ... ...
আর, দিল্লীর বাসস্ট্যান্ডে জড়ো হওয়া শুকনো মুখ, বান্দ্রা রেলস্টেশনে পুলিশের তাড়া খেয়ে পালিয়ে যাওয়া মানুষের চটির স্তূপ, মাঠ-ঘাট পেরিয়ে কাঁধে শিশু নিয়ে হেঁটে চলা মানুষের সারি, গ্রামে ফিরেছেন এই অপরাধে সারি দিয়ে বসে যাঁদের গায়ে ছিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে ডিসইনফেক্ট্যান্ট…. কোল্যাটারাল ড্যামেজ… আজ না হোক কাল, করোনার বিরুদ্ধে লড়াইটায় আমরা জিতব নিশ্চিত - কিন্তু, এঁরা?? ... ...
অথচ, প্রশ্ন ছিল অনেক। প্রশ্নগুলো যেভাবে এবং যতোখানি জোরের সাথে উঠে আসার কথা ছিল, সবই পটকার আওয়াজে ধামাচাপা পড়ে গিয়েছে। যেমন, দেশে প্রথম করোনা রোগীর খোঁজ পাওয়ার পরেও সরকার হাত গুটিয়ে বসেছিলেন কেন? যেমন, প্রথমদিকের সব আক্রান্তই বিলেতফেরত জেনেও, আন্তর্জাতিক উড়ান বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি কেন? যেমন, খবর পাওয়ার পরেও আন্তর্জাতিক উড়ান থেকে যাঁরা নামলেন, তাঁদের নজরে রাখা এবং পরীক্ষার বন্দোবস্ত হল না কেন? যেমন, সারা বিশ্ব যখন করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আতঙ্কিত, তখনও স্বাস্থ্যদপ্তর কোন আক্কেলে জানালেন, যে, করোনা কোনো এমার্জেন্সি পরিস্থিতি নয়? কিন্তু, সেসব এখন অতীত। যা ঘটে গিয়েছে, সে নিয়ে দোষারোপ করে গায়ের ঝাল মেটানো যেতে পারে - পরিস্থিতির মোকাবিলায় এগোনো যাবেনা তেমন। অতএব, মোমবাতি জ্বালানোর যুক্তি ছিল কি ছিল না, অত্যুৎসাহীর দল পটকা ফাটিয়ে বিপর্যয়ের মুখে অশ্লীল আমোদ প্রকাশ করেছে কি করেনি - এসব প্রশ্ন ছেড়ে আসল প্রশ্নগুলোর কথা বলা যাক। ... ...
"যে দেশে এক্কেবারে চলতি ভাষাতেই টুরিস্টকে বলা হয় ‘মুসাফির’ তার রোদ্দুর তো আলাদা হবেই।" - আর যে বইয়ের শুরু এমন আশ্চর্য বাক্য দিয়ে, তার কাছে পাঠকের প্রত্যাশা ভিন্ন হতে বাধ্য। এই বাক্য অতিক্রম করে, ফয়েজ-এর অসামান্য কটি পংক্তি পার হয়ে আমরা পৌঁছোই এক তরুণী কবির মৃত্যুতে - দুর্ঘটনায় মৃত্যু - যে কবির কবিতা লেখক আবিষ্কার করেন খাস ওয়াশিংটন ডিসি-তে বসে - মার্কিন দেশ ও ইরান!!! ... ...
আমার যে ঠাকুর-দেবতায় খুব একটা বিশ্বাস আছে, এমন নয়। শাশ্বত অবিনশ্বর আত্মাতেও নয়। এদিকে, আমার এই জীবন, এই বেঁচে থাকা, সবকিছু নিছকই জৈবরাসায়নিক ক্রিয়া, এমনটা সবসময় বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে না - জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য-পরিণতি সব নিয়েই বেশ ঘেঁটে থাকি। সেদিক থেকে বরং তথাগত বুদ্ধের অনাত্মার ধারণা কিছুটা গ্রহণযোগ্য মনে হয়। কিন্তু, এলোমেলো সেসব ভাবনার দিকগুলো নিজের মনেই গুছিয়ে উঠতে পারিনি, কাজেই সাজিয়েগুজিয়ে বলে ওঠা মুশকিল।
বরং বলতে পারি, এই দশমীর দুপুরে ঘরের ... ... ...
ভারত আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র - মিল কতটুকু?
একটি দেশ যদি বিশ্বের সবচাইতে শক্তিশালী অর্থনীতি হয়, আরেকটির হাল বেশ নড়বড়ে - মানুষের হাতে কাজ নেই, আদ্ধেক মানুষের পেটে খাবার নেই, মাথার ওপরে ছাদ নেই, অসুস্থ হলে চিকিৎসার বন্দোবস্ত নেই। অবশ্য দুর্জনেরা বলেন, প্রথম দেশটিরও হাল সুবিধের নয় - গরীব-বড়লোকের মধ্যে বিভাজন বাড়ছে সেদেশেও, কাজ হারাচ্ছেন সেদেশেও হাজারে হাজারে মানুষ, চিকিৎসা করাতে না পেরে অসুস্থতা-হতাশায় ভুগছেন বিশ্বের সবচাইতে শক্তিশালী অর্থনীতির অজস্র নাগরিক।
কিন্তু, সে তো গেল আজকের ... ...
ছবি দেখা - আর্শিল গোর্কির জীবন ও ছবি
বিষাণ বসু
ছবি নিয়ে, মেনেই নেওয়া যাক, আমাদের আগ্রহ তেমন একটা নেই। স্বভাবতই,ছবি-আঁকিয়েদের জীবন নিয়েও তেমন আগ্রহ থাকবে না - প্রত্যাশিত। তবু, ভ্যান গগ নিয়ে অনেকেই অল্পবিস্তর জানি। সিনেমা গল্প উপন্যাস মিলে, সেই জীবন ঘিরে তৈরী হয়েছে মিথ - সেই সুবাদেই দেখে নিয়েছি তাঁর আঁকা সূর্যমুখী, অন্ততপক্ষে - আর জিনিয়াসকে সমকাল তেমন করে চিনতে পারে না, তার উদাহরণ দিতে হলে বারবার উঠে এসেছে তাঁর নাম। আমজনতার কাছে ভ্যান গগের পরিচিতি হয়ত এটুকুই - কিন্তু, চিত্র ... ...