এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • ছবি দেখা - আর্শিল গোর্কির জীবন ও ছবি

    Bishan Basu লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | ২৪৪১ বার পঠিত
  • ছবি নিয়ে, মেনেই নেওয়া যাক, আমাদের আগ্রহ তেমন একটা নেই। স্বভাবতই,ছবি-আঁকিয়েদের জীবন নিয়েও তেমন আগ্রহ থাকবে না - প্রত্যাশিত। তবু, ভ্যান গগ নিয়ে অনেকেই অল্পবিস্তর জানি। সিনেমা গল্প উপন্যাস মিলে, সেই জীবন ঘিরে তৈরী হয়েছে মিথ - সেই সুবাদেই দেখে নিয়েছি তাঁর আঁকা সূর্যমুখী, অন্ততপক্ষে - আর জিনিয়াসকে সমকাল তেমন করে চিনতে পারে না, তার উদাহরণ দিতে হলে বারবার উঠে এসেছে তাঁর নাম। আমজনতার কাছে ভ্যান গগের পরিচিতি হয়ত এটুকুই - কিন্তু, চিত্রকলা নিয়ে ঘোর অনাগ্রহের বাজারে, সেইটুকুও কম কিছু নয়।

    এদেশের শিল্পীদের সম্পর্কে জানাচেনা বলতে ওরকমই। মকবুল ফিদা হুসেনের মাধুরী-ঘনিষ্ঠতা বা তাঁকে ঘিরে রাজনৈতিক বিতর্ক না থাকলে তাঁর নাম জানত কজন? গাইতোন্ডে বা তায়েব মেহতা বা ফ্রান্সিস নিউটন সুজার মতো তাঁরও পরিচিতি, হয়ত, সীমাবদ্ধ রয়ে যেত ওই শিল্পপ্রেমিক-শিল্পরসিকদের গণ্ডীর মধ্যেই। কিন্তু, ভ্যান গগ নিয়ে গল্প-সিনেমার সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে তাঁর ছবি - কাজেই, গল্পের সাথে সাথে ছবি দেখা হয়েই যায় - অথচ, হুসেন সাহেবের ফটোগ্রাফ, তাঁর লম্বা দাড়ি বা খালি পাটুকুই আমাদের কাছে দৃশ্যমান - তাঁর যে আসল উৎকর্ষ, অর্থাৎ তাঁর অসামান্য ছবির জগত, আমাদের অগোচরেই রয়ে যায়।

    তবু, মহাজনেরা যতই পইপই করে কবিকে জীবনীর মধ্যে খুঁজতে মানা করুন না কেন, আমরা আটপৌরে পাব্লিক জীবন আর শিল্পকে মিলিয়েমিশিয়েই দেখি - চমকপ্রদ জীবন হলে একটা বাড়তি আগ্রহ থাকে - জীবনে উঁকিঝুঁকি দিতে দিতেই কাজের সাথে আলাপপরিচয় হয়ে যায়।

    কিন্তু, সিনেমার চাইতেও অবাক করা জীবন এবং শিল্পী হিসেবে অসাধারণ এবং শিল্পবাজারের কেন্দ্র, অর্থাৎ খাস আমেরিকার বাসিন্দা হয়েও এমন কিছু শিল্পী প্রচারের অন্তরালে রয়ে যান - প্রচার বলতে জনপ্রিয় মিডিয়া-সিনেমার প্রচারের কথা বলতে চাইছি, কেননা, শিল্পের ইতিহাসে তাঁরা স্বরাট - তাঁদের নাম বা গল্পটুকুও আমরা জানতে পারিনা, তাঁদের আঁকা ছবি দেখা তো অনেক দূরের কথা।


    আর্শিল গোর্কি। শিল্পরসিক বাদ দিয়ে কজন নামটা শুনেছেন? জিনিয়াস শব্দটা অতিব্যবহারে এমন একঘেয়ে গিয়েছে - অথচ, আর্শিল গোর্কিকে এককথায় বর্ণনা করতে চাইলে আর কোনো শব্দও নেই।

    চুয়াল্লিশ বছরের জীবন যেকোনো তৃতীয় শ্রেণীর বাণিজ্যিক চিত্রনাট্যকেও চমকে হার মানাতে পারে - গণহত্যা, এথনিক ক্লিনজিং, জেনোসাইড - কৈশোরে মায়ের তিলে তিলে মৃত্যু প্রত্যক্ষ করা - অচেনা দেশে সম্পূর্ণ নতুন এক আইডেন্টিটি তৈরী করে নতুন জীবন - দুর্ঘটনায় শয্যাশায়ী হয়ে পড়া - ক্যানসার - শেষমেশ দড়ির ফাঁসে নিজেকেই শেষ করে দেওয়া - চুয়াল্লিশ বছর বয়সের মধ্যেই - টলমলে পায়ে যাত্রা শুরু করা মার্কিন চিত্রশিল্পকে এক ঝটকায় আধুনিক করে দেওয়া - শুধু আধুনিকই নয়, একেবারে বিশ্বের চিত্রশিল্পের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলা - আস্ত একটা দেশের শিল্পধারাকে নিজের হাতে তৈরী করতে পারা - সেজানের ধারায় শুরু করে কিউবিজম ও সুররিয়ালিজম ধরে এগিয়ে অ্যাবস্ট্রাক্ট এক্সপ্রেসনিজম - বিশ্বাস করুন, মাত্র চুয়াল্লিশ বছর বেঁচেছিলেন তিনি।

    তাঁর নিজের কথায়, সৌভাগ্য নাকি দুর্ভাগ্য জানি না, আমার বন্ধুবান্ধব বা সমকালীন শিল্পীদের থেকে আমি দেখেছি অনেক বেশী - আমার অভিজ্ঞতার ঝুলি অনেক বড় - ছেলেবেলায় দেখেছি তুর্কদের হাতে আর্মেনীয়দের খুন হতে - তারপরে দেখেছি মায়ের মৃত্যু - স্রেফ না খেতে পেয়ে আমার কোলে মাথা রেখে মা-কে মারা যেতে দেখেছি - অপরিচিত এক দেশে প্রতিমুহূর্তে মানিয়ে নিতে নিতে বড় হয়েছি - ছবি তো সবকিছু মিলিয়েই।


    ওত্তোমান সাম্রাজ্যের খরগম গ্রামে জন্ম হয় ভস্তানিক আদোইয়ান-এর। সময়টা ১৯০৪ - একদুবছর আগেও হতে পারে - কেননা, নির্দিষ্ট করে বছরটা জানা যায় না আর। ছেলেটা বন্ধুদের সাথে মিশতে পারত না তেমন করে। একা একাই থাকত, আর ঘুরে বেড়াত। গ্রামের পাশেই লেক ভান - হ্রদের ধারে ভেজা মাটিতে কাঠি দিয়ে আঁকত ছবি - আর হ্রদের জল এসে ধুয়ে তৈরী করে দিত ফাঁকা স্লেট - নতুন ক্যানভাস - একাকী বালকের শিল্পচর্চা চলত এমনই নিভৃতে।

    বালকের একাকিত্ব কিছুটা অনিবার্যই ছিল হয়ত - ওত্তোমান সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার ফরমান এড়াতে বাবা পালিয়ে যান আমেরিকা - বালকের বয়স তখন মাত্র চার কি পাঁচ। তবু, হ্রদের ধারে নিঃসঙ্গ বন্ধুহীন বালকের নিভৃতি দীর্ঘস্থায়ী হয় না - ইতিহাস পথের মাঝে দেওয়াল হয়ে দাঁড়ায়।

    তুর্কদের হাতে নির্বিচার আর্মেনীয় হত্যা শুরু হয়। ১৯১৫ সালের এক রাতে গ্রামের প্রায় সব আর্মেনীয় খুন হয় তুর্ক সেনার হাতে - মায়ের হাত ধরে তিন সহোদরার সাথে ঘর ছাড়ে সেই বালক। পালাতে থাকে। পালিয়ে আসতে পারে কোনোক্রমে সংলগ্ন রাশিয়ায়। কিছুদিন বাদে সেদেশেও শুরু হবে রুশ বিপ্লব - সপরিবারে আবারও পালিয়ে যাওয়া - কোনো এক শান্তির আশ্রয়ের সন্ধানে।

    সেই আতঙ্কের রাত ছেড়ে পালিয়ে এসে প্রাণে বাঁচলেও, আতঙ্ক পিছু ছাড়ে না মায়ের। মানসিক আর শারীরিক অসুস্থতা মিলিয়েমিশিয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন তিনি। সাথে নাবালক চার সন্তান। নিদারুণ দারিদ্র‍্য। অসুস্থ মা স্রেফ না খেতে পেয়ে মারা যান - ছেলের কোলে মাথা রেখে - বালক ততদিনে কিশোর - ১৯১৯ সাল। এর একবছর বাদে কিশোর, এদেশ ওদেশ পার হয়ে, পৌঁছাতে পারবে আমেরিকায় - তারও কিছুদিন বাদে খুঁজে পাবে বাবাকে।

    কিন্তু, বাবার সাথে সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা ফিরবে না আর কখনোই।


    এখনকার আমেরিকা আর তখনকার আমেরিকায় ফারাক বিস্তর। অভিবাসীদের প্রতি সন্দেহমিশ্রিত বিদ্বেষের আগে সে ছিল এক সুযোগের দেশ - মিলে মিশে গিয়ে এক নতুন করে হয়ে ওঠার দেশ।

    পুরোনো স্মৃতি আর অতীতের দুঃস্বপ্ন ভুলতে, সেই কিশোর মুছে দিতে চায় তার আস্ত ইতিহাসখানিই। পরিচয় দেয়, জর্জিয়ার এক অভিজাত ভূস্বামী পরিবারের সন্তান হিসেবে - নাম নেয় আর্শিল গোর্কি। প্রখ্যাত লেখক ম্যাক্সিম গোর্কির দূরসম্পর্কের আত্মীয় সে - জানায় তেমন করেই।

    কিন্তু, লেক ভান যেমন আদরে ভেজা মাটির পরে বালকের কাঠির আঁচড় ধুয়ে সাফ করে রাখত, তেমন করে কি অতীতের স্লেট চাইলেই মুছে ফেলা যায়? যে দাগ ফেলে গিয়েছে লেক ভান নিজেই - কিম্বা সেই একাকিত্ব - সেই বিভীষিকার রাত - সেই পালিয়ে যাওয়া - তিলে তিলে মৃত্যু, মায়ের?

    ভস্তানিক আদোইয়ান থেকে নব্যমার্কিন আর্শিল গোর্কি - সেইখান থেকে বিশ্বখ্যাত শিল্পী আর্শিল গোর্কি - এই যাত্রাপথে, অতএব, মিশে আছে লেক ভান, সংলগ্ন উন্মুক্ত প্রকৃতি, প্রাচীন আর্মেনীয় ভাস্কর্য, হিংসা-খুনোখুনি, একাকিত্ব, অনিশ্চয়তা আর এক কিশোরের মা-কে খুঁজে যাওয়া।


    গোর্কি যখন নিউ ইয়র্কে বসে ছবি আঁকছিলেন, সেই দেশ-এর শিল্প-ইতিহাসের (শিল্প অর্থাৎ আর্ট) সে এক আশ্চর্য সময়। একটি দেশ বা জাতি (নেশন অর্থে) নিজের আইডেন্টিটি খুঁজে পাওয়ার, তথা তৈরী করার অন্যতম প্রধান উপাদান, অনস্বীকার্যভাবেই, শিল্পচর্চা। এদেশেও ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে গিয়ে জাতীয়তাবাদের উত্থানের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ছিল শিল্প - হ্যাভেলসাহেবের হাত ধরে শুরু করা অবনীন্দ্রনাথের বেঙ্গল স্কুলের সেই শিল্পের মধ্যে অতীতচারিতা ছিল অনিবার্য - সাথে সাথেই, পরাধীন দেশের শিল্পচর্চায় শাসক তথা পশ্চিমকে অগ্রাহ্য করার প্রবণতাও, সম্ভবত, ছিল অনিবার্য। স্বাধীনতার পরবর্তীকালে, বোম্বে প্রগ্রেসিভ গ্রুপের শিল্পীদের ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে ভারতীয় শিল্প আধুনিকতার শিখর স্পর্শ করে - এবং, সেইখানে পশ্চিমকে আত্মস্থ করার চেষ্টাও লক্ষ্যণীয়।

    অন্যদিকে, মার্কিন দেশে আদি ঐতিহ্য যেটুকু ছিল, তাকে ধ্বংস করেই একটি শ্বেতাঙ্গ সংস্কৃতি দানা বাঁধতে পেরেছিল। কিন্তু, বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অভিবাসীদের মিলন, তথাকথিত গ্র‍্যান্ড মেল্টিং পটের শিল্পচর্চার চেহারা কেমন দাঁড়াতে পারে? যেহেতু অভিবাসীরা মুখ্যত পশ্চিমী - সেই শিল্প, স্বভাবতই, পশ্চিমানুসারী।

    পশ্চিম বলতে, মূলত, প্যারিস। ইম্প্রেশনিস্টদের সময় থেকেই, বা তারও আগে, ইউরোপ তথা পশ্চিমের শিল্পচর্চার কেন্দ্রটি প্যারিসে। গত শতকের শুরু, বা ঠিক তার আগের ঊনিশ শতকের শেষ থেকেই, ইউরোপের চিত্রকলায় আধুনিকতার শুরু - সেজান-কেই পথিকৃৎ ভাবা যেতে পারে। পরবর্তীতে কান্দিনস্কি, পিকাসো, ব্রাক, মাতিস, পল ক্লী প্রমুখের হাত ধরে আধুনিকতার পরিণতিপ্রাপ্তি। বিমূর্ত শিল্প, সুররিয়ালিজম, কিউবিজম এবং আরো বিভিম্ন শিল্প-আন্দোলনকে এই পরিণতির পথে বিভিন্ন স্টেশন হিসেবেই দেখা উচিত।

    আর্শিল গোর্কি এই সন্ধিক্ষণের শিল্পী।

    গোর্কির ঘনিষ্ঠ শিল্প-সহচর উইলেম ডিকুনিং বলেছিলেন, গোর্কিই তাঁকে শিখিয়েছেন, অনুসরণ এমনকি অনুকরণ করার ব্যাপারেও কখনও সঙ্কুচিত বোধ না করতে।

    গোর্কি আজীবন বিভিন্ন শিল্পীর কাজের প্রভাবিত হয়েছেন - তাঁদের শিল্পধারাকে তিনি আত্মস্থ করেছেন - শেষমেশ সৃষ্টি করেছেন যে শিল্প, তা সংশয়াতীতভাবেই তাঁর একান্ত নিজস্ব। শিল্পজীবনের শুরুর প্রভাব সেজান। সেজান-অনুসারী প্যারিস স্কুল তাঁকে আচ্ছন্ন করে - একথা বলেছেন অনেকবার।।

    পরবর্তী সময়ে, জোন মিরো-র সুররিয়ালিস্ট ধারা তাঁকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। কিন্তু, সুররিয়ালিস্টদের অবচেতন অনুসারে ছবি আঁকার দর্শন তিনি পুরোপুরি মেনে নেন নি। গোর্কির কথায়,
    "The stuff of thought is the seed of the artist. Dreams form the bristles of the artist's brush. As the eye functions as the brain's sentry, I communicate my innermost perceptions through the art, my worldview." অর্থাৎ, তিনি শিরোধার্য করেছিলেন, নিজের ভাবনা, নিজের চোখে দৃশ্যমান যে জগত, সেই বিষয়ে একান্ত নিজস্ব গভীরতম অনুভূতিকে - তাঁর ছবি তো সেই নিয়েই।

    আর, প্রভাবের কথা বলতে হলে, পিকাসো তো ছিলেন অবধারিত। আর্শিল গোর্কি নিঃসঙ্কোচে বলেছিলেন,"If Picasso drips, I drip... For a long while I was with Cézanne, and now I am with Picasso." প্রভাবের কথা বলতে হলে, মূলত, সেজান আর পিকাসো।


    চল্লিশের দশক থেকেই আর্শিল গোর্কির ছবি সম্পূর্ণ এক ভিন্ন পথ ধরে এগোতে থাকে - এতদিন পর্যন্ত তিনি যা এঁকেছিলেন, সেগুলোই তাঁকে অমরত্ব দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট ছিল - কিন্তু, ১৯৪০ সালের পরে আঁকা ছবি সন্দেহাতীতভাবেই গত শতকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কুড়িজন শিল্পীর একজন হিসেবে স্বীকৃতি দেয় - এবং, যাঁর ক্ষেত্রে the single most important painter in the history of American art এই বিশেষণ একটুও অত্যুক্তি বলে মনে হয় না। মিউজিয়াম অফ মডার্ন আর্ট, সংক্ষেপে মোমা-র প্রতিষ্ঠাতা ডিরেক্টর যখন বলেন, "Gorky was a quite well known but rather derivative painter for 15 years before he found himself in about 1943," সেই কথার যাথার্থ্য, আংশিক হলেও, অনস্বীকার্য। নিঃসন্দেহে বিভিন্ন শিল্পীর কাজ থেকে অনুপ্রেরণা সংগ্রহ করেই এগোচ্ছিলেন তিনি - কিন্তু, তাঁর সেই প্রতিটি নিরীক্ষাকে মার্কিন চিত্রকলার ইতিহাসে মাইলফলক ধরা যেতে পারে - গোর্কির প্রাথমিক পর্যায়ের কাজকে নিছক ডেরিভেটিভ শিল্পচর্চা হিসেবে দাগিয়ে দেওয়া কতখানি যুক্তিযুক্ত?

    তবুও, যেকথা না বললেই নয়, এতদিন ধরে বিভিন্ন রাস্তায় চলে, বিভিন্ন শিল্প-অনুপ্রেরণায় নিজেকে সম্পৃক্ত করে শেষমেশ যেন ফাইনাল সিন্থেসিস-এর জায়গায় পৌঁছালেন তিনি - রেখা-রঙ-আঙ্গিক সবদিক থেকেই তাঁর ছবি হয়ে উঠল আশ্চর্য।

    আরেকদিকে, ১৯৪১ সালেই তিনি বিয়ে করেন অ্যাগনেস ম্যাগ্রুডার-কে। বয়সে তাঁর চাইতে প্রায় কুড়ি বছরের ছোট। সম্পন্ন পরিবারের অ্যাগনেসের বাংলোতে আর্শিল নিজের স্টুডিও স্থানান্তরিত করেন। প্রাথমিকভাবে, ঠিকঠাকই চলছিল সব। জন্ম হয় দুই কন্যাসন্তানের। কিন্তু, আর্শিল গোর্কির জীবন সহজপথে এগোয়নি কোনোদিন - এখনই বা ব্যতিক্রম হবে কেন!!

    ১৯৪৬ সালের জানুয়ারী মাস। শীতের এক রাত্তিরে আগুন ধরে ছাই হয়ে গেল সেই বাংলো। স্টুডিও-ও। খ্যাতি থাকলেও, জীবদ্দশায়, সেই অনুপাতে ছবির বিক্রি ছিল না আর্শিল গোর্কির। বাড়ি আর স্টুডিও মিলে অনেক ছবি তাঁর নিজের কাছেই ছিল - চল্লিশের দশকে তিনি খুঁজে নিয়েছিলেন এক আশ্চর্য পথ, যে পথে চলার অনেক নজিরই ছিল সেই স্টুডিওর দেওয়ালে, মেঝেতে - কাজেই, বলা যেতে পারে, সেই রাতে একইসাথে পুড়ে ছাই হয়ে গেল চিত্রকলার ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু ছবিও।

    এর মাসখানেক বাদেই, তাঁর ক্যানসার ধরা পড়ল। নিজের সৃষ্টি ছাই হয়ে যাওয়ার আঘাত থেকে উঠে দাঁড়ানোর আগেই এই দুঃসংবাদ নিতে পারলেন না আর্শিল - শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়লেন একেবারে। তার কিছুদিনের মধ্যেই জানতে পারলেন, অ্যাগনেস বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে আছেন, তাঁরই বন্ধু ও সহশিল্পী রবার্তো মাত্তা-র সাথে - সম্পর্ক অনেকদিনের, আর্শিল জানতে পারেন নি। উপর্যুপরি আঘাত সহ্য করার ক্ষমতা ছিল কি আর্শিল গোর্কির? তিনি অনেক কঠিন সময় দেখেছেন - দেখেছেন জাতিপরিচয়ের জন্যে নির্বিচারে খুন, দেখেছেন অনাহারে মায়ের মৃত্যু - আজীবন এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পালিয়েছেন - আশ্রয়ের সন্ধানে - ছবি আঁকার নিভৃতির খোঁজে। কিন্তু, এখন?

    দুই কন্যাকে নিয়ে বাড়ি ছাড়েন অ্যাগনেস। নিভৃতি যে কখন দুঃসহ নিঃসঙ্গতা হয়ে যায়, আর্শিল জানতেন কি? কিছুদিনের মধ্যেই বড়সড় গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়েন তিনি - আর্শিল গোর্কি আর কখনই ছবি আঁকার মতো সেরে উঠবেন কিনা, সংশয় জাগে তাই নিয়েই।

    আর পারছিলেন না তিনি। অনেক দেখেছেন। অনেক পালিয়েছেন। আশ্রয় পেয়েই পুড়ে যেতে দেখেছেন। আশ্রয়কে বিশ্বাস ভেঙে দিতে দেখেছেন। আর তো গড়ে নেওয়ার সুযোগটুকুও রইল না। তাহলে, কীসের আশায়, কোন প্রতীক্ষায় থেকে যাওয়া? দড়ির ফাঁসে নিজেকে যে ঝুলিয়ে দিলেন আর্শিল, তাকেও কি পালিয়ে যাওয়া বলব? তারিখটা একুশে জুলাই, ঊনিশশো আটচল্লিশ।


    আর্শিল গোর্কিকে অনেকে অ্যাবস্ট্রাক্ট এক্সপ্রেশনিস্টদের দলে ফেলেন। কিন্তু, সেইটা সম্পূর্ণ সঠিক বিচার নয়। এক্সপ্রেশনিজম আর কিউবিজমের রাস্তা ধরে অ্যাবস্ট্রাক্ট এক্সপ্রেশনিজমে পৌঁছানোর যে পথ - তিনি তার পথিকৃৎ। কিন্তু, তাঁকে শুধুই অ্যাবস্ট্রাক্ট এক্সপ্রেশনিজমে বাঁধা যায় না।

    একটি দেশের সেভাবে চিত্রকলার কোনো ঐতিহ্য ছিল না। শিল্পকলার প্রাণকেন্দ্র প্যারিস থেকে আধুনিকতম শিল্পভাবনাকে আত্মস্থ করে সেই ভাবনার অনুসরণে মহত্তম শিল্প সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি, তথাকথিত শিল্প-ঐতিহ্যের প্রত্যক্ষ সহায়তা ছাড়াই। শিল্প-সহচরদের সাথে মিলে জন্ম দিয়েছিলেন গুরুত্বপূর্ণ শিল্প-আন্দোলনের। তিনি শুরু করেছিলেন প্রায় শূন্য হাতে - থামলেন যখন, তখন বিশ্বের চিত্রশিল্পচর্চার কেন্দ্রটিকে তিনি এনে ফেলেছেন তাঁর নিজের উঠোনে - পরবর্তীতে, পৃথিবীর চিত্রভাবনা কোন পথে চলবে, তার পেছনে মার্কিন দেশের চিত্রশিল্পচর্চার প্রভাব রয়ে গেল নিশ্চিত - শিল্পী হিসেবে আর্শিল গোর্কি ঠিক এতখানিই গুরুত্বপূর্ণ।


    কৈশোরে মায়ের তিলে তিলে মৃত্যু, অনাহারে অসুস্থতায়, দেখেছিলেন তিনি। আজীবন মা-কে খুঁজে গিয়েছিলেন তিনি। পৌঁছোতে চেয়েছিলেন মায়ের কাছে। খুঁজে গিয়েছিলেন তাঁর সেই একাকিত্বের নিষ্পাপ শৈশব - লেক ভান - প্রিয় আর্মেনিয়া। বলেছিলেন, " My recollections of Armenia open new visions for me. My art is therefore a growth art where forms, pines, shapes, memories of Armenia germinate, breathe, expand and contract, multiply and thereby create new paths for exploration."

    ছবিতে একাধিকবার এসেছে মায়ের কথা। চলুন, দেখা যাক, তাঁর প্রথম পর্যায়ের ছবি, দ্য আর্টিস্ট অ্যান্ড হিজ মাদার।

    এ ছবি আঁকার আগে অনেকগুলো ড্রয়িং করেছিলেন আর্শিল। এমনকি, রঙ চাপানোয় হয় একাধিকক্ষেত্রে। মূলত একখানা ফটোগ্রাফ থেকে এই ছবি আঁকেন তিনি। কিন্তু, ছবি আর ফটোগ্রাফের মধ্যেকার ফারাক তো বিস্তর।

    সাধারণভাবেই, আধুনিক ছবি আর ফটোগ্রাফ-এর অমিল অবশ্যম্ভাবী - কেননা, যেদিন থেকে ক্যামেরা অনেক বেশী নিখুঁত করে অনেক বেশী দ্রুত বাস্তবের প্রতিচ্ছবি তুলে রাখতে শুরু করল, সেইদিন থেকেই চিত্রশিল্পের ভিন্ন পথে যাত্রা অবশ্যম্ভাবী ও অনিবার্য হয়ে উঠল। ল্যান্ডস্কেপকে অন্য চোখে দেখা, রোজকার পরিচিত দৃশ্যাবলীকেও অন্যভাবে উপস্থাপন করা - হয়ে উঠল অনিবার্য - কেননা, আমাদের চেনা দৃশ্যকে পেইন্টিং-এ দেখতে গিয়ে যদি আমাদের দর্শনের (দেখা অর্থে) পরিসরটি কিছুমাত্র বৃদ্ধিই না পায়, তাহলে পেইন্টিং দেখার মানে কী!! শিল্পী একটি দৃশ্য দেখছেন - বা একটি দৃশ্য তাঁর মনে জন্ম নিচ্ছে - সেই দৃশ্য নিজের উপলব্ধিতে জারিত করে তিনি আমাদের দেখাচ্ছেন - দুজন মানুষের মধ্যে এই সংলাপ, এইখানেই শিল্প, শিল্পরস। ফটোগ্রাফের ক্ষেত্রেও এই সংলাপ থাকে - কেননা, সেও নিশ্চিত শিল্পই - কিন্তু, যন্ত্রের মধ্যস্থতার দরুণ, চরিত্রগত ভিন্নতা অনিবার্য।

    ছবির প্রসঙ্গে ফিরি। ফটোগ্রাফটি ঠিক কোন সময়ের, বলা মুশকিল - আন্দাজ করা যায়, আর্শিলের বয়স তখন আট কি নয়। ফটোগ্রাফে আর্শিল গোর্কি, থুড়ি ভস্তানিক আদোইয়ান, দাঁড়িয়ে আছে মায়ের সাথে। ছবিতেও (পেইন্টিং অর্থে) তা-ই। কিন্তু, ছবির সাথে ফটোগ্রাফের ফারাকগুলো?

    সাদাকালো ফটোগ্রাফ থেকে রঙীন পেইন্টিং-এর পথে আর্শিল ব্যবহার করেছেন অদ্ভুত এক ফ্যাকাশে রঙ, যার পরতে পরতে মিশে রয়েছে বিষণ্ণতা। রঙের প্রয়োগ আপাত-উজ্জ্বলতাহীন, ফ্ল্যাট - কেননা, এ ছবি স্মৃতির - যে স্মৃতি অবিমিশ্র সুখের নয়।

    দুটি চরিত্রের কারোরই পোর্ট্রেট নিখুঁত ফিনিশ সহকারে আঁকা হয় নি - কেননা স্মৃতি কবেই বা নিখুঁত ডিটেইলিং ধরে রাখে।

    ফটোগ্রাফের মায়ের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটি ছবিতে দাঁড়িয়ে আছে একটু দূরে - কিশোর তো মা-কে হারিয়েছে, চাইলেই কি আর পারা যাবে মায়ের গা ঘেঁষে অমন করে দাঁড়াতে - মা এগিয়ে রয়েছেন যেন একটু - অসীমের পথে ছেলেকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যান নি কি মা?

    ফুলকাটা ডিজাইন ছেড়ে মায়ের পোশাককে মনোক্রোমে এনে গোর্কি মায়ের ছবিকে প্রায় মূর্তির অনুষঙ্গ দিতে সক্ষম হয়েছেন - অনেক অনেক বছর গড়িয়ে গেলে, স্মৃতির কিছু বিচ্ছিন্ন টুকরো জুড়ে যাঁকে আমরা পুনর্গঠনের প্রয়াস পাই, তিনি নি রক্তমাংসের কোনো মানুষ, নাকি আমাদেরই স্বপ্নের কোনো মূর্তি?

    ছবির অন্যতম ফোকাসের জায়গা - কিশোরের চোখ। সে চোখ সরাসরি তাকিয়ে নিয়ে দর্শকের দিকে - কিছুটা অন্যমনস্কই হয়ত - মিশে আছে বিষাদ আর অনিশ্চয়তা। ডান পায়ের অন্যদিকে ফিরিয়ে আছে - মায়ের থেকে ছেলের দূরে সরে যাওয়া নিয়ে সংশয়ের অবকাশ নেই আর, সেই সরে যাওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে - তবু পিছুটান, যেতে গিয়েও মায়ের দিকেই যেন ফিরে আসতে চাওয়া।


    এই লেখা দৈর্ঘ্যে আপাত বড় মনে হলেও, আর্শিল গোর্কির শিল্পকে ধরার পক্ষে নেহাতই অপরিসর। তেমন কোনো চেষ্টা বা অবান্তর উচ্চাশাও আমার নেই। তাঁর ছবি, তাঁর শিল্পভাবনার গভীরে যেতে চাইলে, এই লেখাখানা, বড়জোর, ভূমিকা হিসেবে কাজ করতে পারে।

    শেষ করার আগে তাঁর একদম শেষদিকের একখানা ছবি দেখা যাক। ছবির নাম, অ্যাগনি - ঊনিশশো সাতচল্লিশ সালে আঁকা।

    বিমূর্ত শিল্প নিয়ে আর্শিল গোর্কি বলেছিলেন, "Abstraction allows man to see with his mind what he cannot physically see with his eyes... Abstract art enables the artist to perceive beyond the tangible, to extract the infinite out of the finite. It is the emancipation of the mind. It is an explosion into unknown areas."

    সীমার মধ্যে থেকেই অসীমকে ছেনে বের করে আনতে হলে - স্পর্শের জগত থেকে অজানার অনুসন্ধান করতে চাইলে - মনকে পারিপার্শ্বিক থেকে একেবারে মুক্ত করতে চাইলে শিল্পীর বিমূর্ত না হয়ে উপায় নেই।

    ১৯৪৭ - অ্যাগনেসের সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েন চূড়ান্ত পর্যায়ে - ক্যানসার অপারেশনের পরে আর্শিলের স্বাস্থ্যও ভেঙে পড়েছে - কোলোস্টমি ব্যাগ নিয়ে রোজকার জীবন দুঃসহ - নিজের সবটুকু অনুভূতি ঢেলে এঁকেছিলেন যে ছবি, পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে তার একটা বড় অংশ। আর্শিল গোর্কির ব্যক্তিগত জীবন বিপর্যস্ত - সেই ভগ্নহৃদয়ে, পারিপার্শ্বিক থেকে মনের উড়ানের যাত্রাপথকে ক্যানভাসে ধরলেন তিনি - অ্যাগনি। তাঁর অভ্যস্ত প্যালেট থেকে সম্পূর্ণ দূরে সরে গিয়ে এক গনগনে আগুনে লাল রঙে ধরলেন নিজের না পাওয়া - নিজের গভীরের ব্যথা।

    এই কি তাঁর শেষ ছবি। জানি না। এই সাতচল্লিশ সালেই তিনি এঁকেছেন বেশ কয়েকখানা ছবি - যার মধ্যে বেশ কয়েকটিকে তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ কয়েকখানার মধ্যে ধরা যায়। কিন্তু, তাঁর সাম্প্রতিক অতীতের কাজের থেকে এতখানি বাঁকবদল আর কোনো কাজের মধ্যে চোখে পড়ে না। রঙের ব্যবহার, এমন জমাট কম্পোজিশন, স্পেসকে দুমড়ে চেপে দিয়ে একখানা দমবন্ধ করা যন্ত্রণার প্রকাশ - ধরে নিতে ইচ্ছে করে, মর্ত্যলোকের উদ্দেশে এক মাস্টার এক্সপ্রেশনিস্টের তরফে শেষ এক্সপ্রেশনের চিহ্ন হিসেবে রইল এইটাই - যে "অ্যাগনি" প্রতিটি বাস্তুচ্যুত, ইতিহাসচ্যুত, হিংসা-হানাহানির শিকার মানুষেরই - সব হারিয়ে পালিয়ে বেড়ানো মানুষগুলোর অভিব্যক্তিকে ভাষা দিতে পারলেন তিনি অবশেষে।

    এরপর, সম্ভবত, আর কিছু বলারও ছিল না তাঁর। মানে, ওইটুকু ছাড়া, যা লেখা ছিল তাঁর সুইসাইড নোটে, গুডবাই, অল মাই লাভড ওয়ানস।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | ২৪৪১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | ***:*** | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৭:০৬47641
  • এটা একটু তুলে রাখি।
  • শঙ্খ | ***:*** | ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১০:২৩47642
  • দারুণ লেখা! তারিফ!
  • | ***:*** | ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১১:৪৪47643
  • অপূর্ব লাগল। ছবি সম্পর্কে সম্পূর্ণ নিরক্ষর হওয়ায় আমি হয় গ্রীনিচ ভিলেজ নয় নিওয়ার্ক শহর সংক্রান্ত কোন সিটি ওয়াক গোছের বুকলেটে এঁর কথা পড়ি। অনেক আগে দেখা কিছু জ‍্যাকসন পোলক আর অন্য ভাবে হুয়ান মিরো র রেফারেন্স পেয়ে গদগদ হ ই। আগাপাশতলা এগোনো যায়নি। কিন্তু এই লেখা টায় একটা কম্প্রিহেনসিভ আগ্রহ জাগানো র প্রচেষ্টা টা খুব কাজে লাগল, বেশ একটা আ্যপ্রিসিয়েশন কোর্স করলাম মনে হচ্ছে, খুব ভালো লেগেছে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন