এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • উৎসবে ফিরুন

    PRABIRJIT SARKAR লেখকের গ্রাহক হোন
    ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২১০ বার পঠিত
  • ডাক্তার বিষাণ বসু লিখলেন:

    দেখুন, অনেক হয়েছে। অনেকদিন হয়েছে। এবারে আন্দোলনের ধ্যাষ্টামো ছেড়ে উৎসবে ফিরুন।

    রোজ রোজ মিছিল করলে - আন্দোলন করলে - মানুষের অসুবিধে হয়। এটুকুও বোঝেন না? হ্যাঁ, একসময় আমরা আন্দোলন করেছি - এক্সপ্রেসওয়ে আটকে রেখে, মানুষের এতটুকু অসুবিধে না করে, কীভাবে আন্দোলন করতে হয়, দেখিয়ে দিয়েছি। আপনাদের তো সেরকম ইয়ে নেই। আন্দোলন কীভাবে করতে হয়, বোঝেনই না।

    আর আপনাদের ইয়ে আমার জানা আছে। চাকরি না পেয়ে কয়েকটা ছেলেমেয়ে যে এতদিন ধর্ণা দিয়ে বসে রইল - পাত্তা দিয়েছি? মিডিয়াকেও টিপে দিয়েছিলাম - কেউ ওদের দেখাতোই না, কেউ ওদের দেখতেই পেত না। দুদিন পেরোতে না পেরোতেই সবাই কেমন ভুলে গেল, মনে আছে? আজ আপনাদের মিটিং-মিছিল টিভিতে দেখাচ্ছে, তার মানেই আপনারা বিরাট হনু হয়ে গেছেন, এতটা ভাববেন না। গতকাল দেখিয়েছে, আজ দেখাচ্ছে, হয়ত আগামীকালও দেখাবে - কিন্তু পরশু? হুঁ হুঁ, শুভশ্রী গানটা দু'লাইন গাও তো… ওই গানটা… যতই ঘুড়ি ওড়াও রাতে, লাটাই তো আমার হাতে…

    আরে ওই জায়গাটাও গেয়ে শোনাও… রাত পাহারা যতই থাকো/ বয়ে গেছে আমার তাতে/ সুযোগ বুঝে সিঁধ কেটে রোজ/ মাতবো রসের মৌতাতে/ যতই ঘুড়ি ওড়াও রাতে/ লাটাই তো…

    হ্যাঁ হ্যাঁ, লাটাই যে আমার হাতে থাকবে, থাকবেই, সন্দেহ আছে তাতে? উনি বলেছিলেন, যিনি রাম তিনিই কৃষ্ণ, এযুগে তিনিই… যাকগে, শুনে রাখুন, এইযুগে আমি বলছি, যিনি অতিবিপ্লবী, যিনি মস্তান-চিটিংবাজ, এযুগে সবাই তৃণমূল! সাধারণ মানুষের অসুবিধে, ফ্যাসিবাদের মাথাচাড়া দেওয়া, আন্দোলনে বিজেপি-বিজেপি গন্ধ - এসব লাইনে অলরেডি প্রথম দলকে খেলতে নামিয়ে দিয়েছি। তাই দেখে দ্বিতীয় দল অলরেডি ছটফট করছে - ওদের চেন খুলে দিলে পারবেন সামলাতে?

    বিচার? শুনুন ভাই, যা করি, বুক ফুলিয়ে বলি এবং করি। করে দেখাই। আমিই বলেছিলাম, পয়সা ঢাললেই আদালতে ইচ্ছেমতো রায় পাওয়া যায়। সেটা ঘুরপথ। কিন্তু পয়সা দিয়ে তিরিশটা বাঘা উকিল লাগালে যে সুবিধেমত রায় পাওয়া যায় - অন্তত তারিখের পর তারিখ পাওয়া যায় - সে নিয়ে সন্দেহ আছে? এই তো সরকারি কর্মচারীগুলো ডিএ-র জন্য ঘেউঘেউ করত - কোর্টকাছারি দৌড়াত - কী করতে পারল? তারিখ পে তারিখ-এর চক্কোরে এখন মিউমিউ করছে… তাহলে?

    তো শুনুন, বেশি ফড়ফড় করবেন না। ডাক্তারি পড়তে এসেছেন, পড়ার চাপ হাল্কা করে দিয়েছি, শান্তভাবে কোশ্চেন কিনুন ও পাস করুন। হ্যাঁ, কোশ্চেনের দাম যদি বেশি মনে হয়, তাহলে আসুন, নেগোশিয়েট করে দেব। আন্দোলনকারীদের প্রতি আমার সবসময়ই সহানুভূতি থাকে - নিডি পরিবারের জন্য আমার সবসময়ই স্পেশাল কনসিডারেশন থাকে - দামের জায়গায় কিছু ছাড়ের ব্যবস্থা করে দেব। প্রফেসরদের ট্রান্সফারের জন্য যে টাকাটা নেওয়া হয়, ওটা একটু বাড়িয়ে কোশ্চেনের দামে ভর্তুকি দিয়ে দেব, নইলে স্টুডেন্ট কার্ড বানিয়ে কোশ্চেন কেনার স্পেশাল প্যাকেজ করে দেব - কীভাবে করব, সেটা আমার ব্যাপার, কিন্তু আপনারা কাজ শুরু করুন, নেগোসিয়েশনে আসুন।

    কলেজে কলেজে থ্রেট কালচার নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে - কিন্তু কী আশ্চর্য, এ নিয়ে এত কথার কী আছে!! আপনারা ঠিক কী চান? বীর্যবান তাজা ছেলেমেয়েরা কি তবে হাতে গোলাপফুল নিয়ে সখি ভালোবাসা কারে কয় গাইতে গাইতে কলেজ প্রদক্ষিণ করবে? কলেজ লেভেলে ঠিকঠাক ট্রেনিং না হলে পরের ধাপে এরা বাকি কাজ সুষ্ঠুভাবে করবে কী করে? পার্টিটা কি ভারত সেবাশ্রম, নাকি রাবীন্দ্রিক নৃত্যকলা শিক্ষাকেন্দ্র? আমাদের গণতান্ত্রিক দল। সবার সমান সুযোগ এখানে। অনুব্রত থেকে অভীক, শেখ শাজাহান থেকে বিরূপাক্ষ বিশ্বাস, ববি থেকে সুশান্ত রায়, জুন মালিয়া থেকে সুহৃতা পাল, কুণাল ঘোষ থেকে কৌস্তভ নায়েক - সবার সমান সম্মান। বিভিন্ন ভূমিকায় থাকলেও সবার একই লক্ষ্য, একই উদ্দেশ্য - সবাই মা-মাটি-মানুষের জন্য লড়াইয়ের বিশ্বস্ত সৈনিক।

    তো দেখুন, অনেক ধৈর্য ধরেছি। এবারে বলছি - অনেক হয়েছে, আর না! সুড়সুড় করে কাজে ফিরুন। পুজো আসছে। পুজো নিয়ে কিন্তু নো কম্প্রোমাইজ। দু-চারটে পুজোয় অভয়া থিম বা তিলোত্তমার বিচার জাতীয় কিছু করুন - চন্দননগরের লাইটে খুন-ধর্ষণ রাখুন - কিছু মনে করব না। বিনীতকে বলেছি, ও পাস করিয়ে দেবে। কিন্তু পুজোয় ধূমধাম মাস্ট। আর সত্যি বলছি, একবার পুজোটা হয়ে যেতে দিন - দেখবেন, নিজেদেরই কতটা ভালো লাগছে, মনটা দেখবেন একেবারে ফুরফুরে হয়ে গেছে…

    ওই যে বললাম, লাটাই তো আমার হাতে…

    আর ওই মেয়েটার বাপ-মা? ধুর! ওটা আমার উপর ছেড়ে দিন। ও নিয়ে একদম ভাববেন না। সুদীপ্তকে মনে আছে? ছেলে মারা যাবার পর বাবাকে তিন-চারদিন টিভিতে খুব দেখাত। এখন মনে করতে পারেন? আর ওই ছেলেটা? আনিশ খান না কী যেন? ওর বাবার মুখ? পুজোটা হতে দিন - উৎসবের মাসটা যেতে দিন - তিলোত্তমার বাবা বা মায়ের মুখ ভুলতেও মাত্র দুটো সপ্তাহ লাগবে।

    গতকাল তো বলেই দিয়েছি, বাবা-মায়ের অভিযোগ ভুয়ো। সরাসরি না বললেও বুঝিয়েই দিয়েছি, ওঁরা মিথ্যেবাদী।

    দুর্গাপুজো শেষ হয়ে লক্ষ্মীপুজো পৌঁছাতে পৌঁছাতে, দেখবেন, বিশ্বাসই হবে না, যে, মেয়েটাকে সত্যিই ধর্ষণ করে খুন - বা খুন করে ধর্ষণ - করা হয়েছিল। কালীপুজো অব্দি পৌঁছে গেলে, দেখবেন, তিলোত্তমা বা অভয়া নামে কোনও মেয়েই ছিল না - মেয়েটির বাবা-মা বলে যাঁদের ভাবছেন, তাঁরা আদতে, আগাগোড়াই, ছিলেন নিঃসন্তান।

    তো, অনুরোধ করছি, এখনও অব্দি ভালোবেসেই বলছি - উৎসবে ফিরুন। এক মাস ধরে ধৈর্য ধরে আছি, অনুরোধ কিন্তু ইয়ে-তে বদলে যেতে সময় লাগবে না।

    মনে রাখবেন, ভালো মুখ করে বলা কথা না শুনলে আমি কিন্তু…

    শেষমেশ আবারও বলি, যতই ঘুড়ি ওড়াও রাতে, লাটাই তো আমার হাতে… লাটাই ধরে টানাটানি করতে এলে কিন্তু শুধু ফোঁস করা নয়, একেবারে ছোবল বসিয়ে দেব। কবি-সাহিত্যিক-শিল্পী-গাইয়ে-বাজিয়ে-অভিনেতা-নাট্যকার-পরিচালক-এনজিও-আমলা-অফিসার-পুলিশ-সিভিক-উপদেষ্টা-তোলাবাজ-গুণ্ডা-মস্তান-খুনী-চিটিংবাজ-ঘুষখোর - এবং আরও অনেক অনেএএক ইত্যাদি প্রভৃতি - এককথায় বিপুল বিশাল এই তৃণমূল পরিবার - স্রেফ সদিচ্ছে আর স্বপ্ন দিয়ে পারবেন আমাদের মোকাবিলা করতে?
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • PRABIRJIT SARKAR | ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:৪২537492
  • ডোনা গাঙ্গুলি বলছেন:রেপ টেপ হলে এই বাংলার মত ঝামেলা কোথাও হয় না।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে মতামত দিন