এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ইস্পেশাল  পুজো ২০১০

  • ফেরোমন

    অভ্র পাল
    ইস্পেশাল | পুজো ২০১০ | ০১ অক্টোবর ২০১০ | ৪৫৬ বার পঠিত


  • প্রজাপতি
    প্রজাপতি
    প্রজাপতি...সাদা কাগজের উপর পরপর তিনবার শব্দগুলো লিখল অয়ন। এমনভাবে, যেন আরেকবার লিখলেই সেও ডানা মেলে উড়ে চলে যাবে। কোথায় উড়ে যাবে? শুধু উড়েই যদি যেতে হয় তাহলে প্রজাপতি কেন? অন্য যে কোন পাখি হলেই তো আরো অনেক অনেক বেশী দূরে পাড়ি দেওয়া যেত। কিন্তু না। এই মুহুর্তে প্রজাপতিই হতে ইচ্ছে করছে। তার ঘরের জানালায় একটি স্বচ্ছ কাঁচ। সেই কাঁচের ওপর ভেতরের দিকে বসে আছে প্রজাপতিটা। উড়ে যাচ্ছে না। ডানা মেলে দিয়েছে। ডানার রঙ কালো, সেই কালোর ওপর লাল আর সাদা। অন্য কিছু লেখার কথা ছিল অয়নের। হচ্ছে না। শুধু একটাই শব্দ বারবার লেখা হয়ে যাচ্ছে। কেন কে জানে। আর ও উড়েও যাচ্ছে না, অদ্ভূত। ও বসে আছে চুপটি করে, যেন চারপাশে কিছু নেই।
    অয়ন মনে মনে বলল, যাহ, উড়ে যা।
    সে উড়ল না। বসে রইল একভাবে।


    অয়ন আবার বলল, তোর এখন উড়তে ইচ্ছে করছে না? তুই তো এখন স্বাধীন। তোর আর কিসে ভয়? এত সুন্দর ডানা গজিয়েছে তোর, ফুলেরা তোর জন্য অপেক্ষা করছে, আর তুই কিনা এখানে বসে আছিস? বলেই সে একটু চমকাল, কোথায় ফুল, কোথায় বাগান? ঐ জানালার বাইরে তো সবটুকুই কেবল ইট, কাঠ, পাথর। ও তো প্রাসাদ নগরী। উড়ে যদি যেতেই হয়, তবে কোথায়ই বা উড়ে যাবে ও? টবের ফুলগাছে?



    অয়ন আরেকবার এলার ডানার দিকে তাকালো। এলা নামটা সেই দিয়েছে। নামটা ঠিক হয়েছে না ভুল, তা অবশ্য এখনো বোঝা যাচ্ছে না। এলা যদি পুরুষ হয়? হতেও তো পারে। আসলে অয়ন বরাবরই রোমান্টিক। তার কাছে পৃথিবীর সবকিছু সুন্দর নারীকেন্দ্রিক। ওর ডানায় এত সুন্দর রঙ দেখে মনে হয়েছিল মেয়েই হবে – এটুকু কল্পনা করে নিতে আর বাধা কোথায়? এলা নামটা কিন্তু খুব পুরনো নয়, আজ সকালেই দেওয়া। এর আগে ওকে একটা নাম দেওয়ার কথা মাথাতেই আসেনি।
    আর আসবেই বা কি করে? একদিন আগেও তো এলা ছিল একটা গুটিপোকা। সবুজ রঙের খোলের মধ্যে গুটিসুটি অপেক্ষা করছিল সে। সেই গুটি কেটে বেরিয়ে এসে সে যে এত সুন্দর হয়ে উঠবে তা তো কল্পনারও বাইরে। দু সপ্তাহ আগে জানালার কোনে একটা শুঁয়াপোকা দেখে চমকে উঠেছিল অয়ন। ছোটবেলায় একবার হাতে শুঁয়াপোকার রোঁয়া লেগে গিয়ে কি কষ্টটাই না হয়েছিল। তারপর থেকে শুঁয়াপোকা দেখলেই ভয় করতো। অনেকদিন আগের কথা। তবু ভয়, বিশেষ করে ছোটবেলার কিছু ভয়, বড় হলেও একই রকম থেকে যায়। অয়নেরও একই রকম হয়েছিল। শুঁয়াপোকাটাকে নিয়ে একটুকরো কাগজে করে ডাস্টবিনে ফেলে দিতে যাচ্ছিল সে।




    হঠাৎ মনে হল, কতদিন শুঁয়াপোকা তো আর দেখাই যায় না। ফেলে দিয়েই বা কি হবে? তার চেয়ে বরং ওকে রেখেই দেওয়া যাক। একটা কাচের বোয়ামের মধ্যে কাগজটাকে রেখে দিয়েছিল সে। বোয়ামের ঢাকনাতে ফুটূ করা ছিল। সেই সঙ্গে ভেতরে রেখে দিয়েছিল কিছু পাতা, একটা শুকনো ডাল। সেই ডালেই গুটি বেঁধেছিল এলা। তারপরে আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে তো সে অবাক। কোথায় গুটি, দিব্যি ফুটফুট করছে একটা প্রজাপতি। এমন সুন্দর একজনের একটা নাম তো থাকতেই হয়।
    বোয়ামের মধ্যে আরো কিছুক্ষন এলাকে আটকে রেখেছিল অয়ন। তারপর হঠাৎই মনে পড়ে গেল অখিলজেঠুর প্রজাপতি সংগ্রহের কথা। উনি কোলিয়ারিতে চাকরি করতেন। শখ বলতে ছিল প্রজাপতি জমানো। বাবার সাথে অনেকবার অখিলজেঠুর কোয়ার্টার্সে গিয়েছিল অয়ন। বড় বড় এলবামে কালো বাঁশ কাগজের ওপর পিন করে রাখা থাকতো প্রজাপতিগুলো। জেঠু খুব ফলাও করে বলতেন সেই সংগ্রহের কথা। ঐ এলবামে অনেক প্রজাপতিই ছিল একরকম, তবু। খুব ইচ্ছে করত জিজ্ঞেস করে, ওদের কি মারতে হবেই? করা হয়ে উঠতো না। জেঠু ছুটির দিনেই নেট কাঁধে করে বেরিয়ে পড়তেন। আর সেই গল্প শোনাতেন, কি করে প্রজাপতি জমাতে হয়। পরবর্তীকালে রিসার্চের সময় সে অনেকবার শুনেছে, আধুনিক জীবনবিজ্ঞানের অনেক তথ্যই এসেছে ব্রিটিশ আমলের এইরকম ব্যক্তিগত সংগ্রহশালা থেকে। তবে মানুষ বদলেছে। এখন নেটের বদলে কাঁধে ক্যামেরা, গলায় বাইনোকুলার।



    আজকে প্রথমে একবার মনে হয়েছিল – এলাকে ঐ কাঁচের বোয়ামেই রেখে দিলে কেমন হয়? তবে ঐ একবারই। তারপর সে বোয়ামের ঢাকনা খুলে দিয়েছে।
    এলা উড়ে গিয়ে বসেছে কাচের জানলায়। বসেছে তো বসেই আছে, নড়াচড়া নেই। অয়নের ধারনা ও একটা বিরল প্রজাতির ইন্ডিয়ান রেড এডমিরাল – ভ্যানেসা আটালান্টা, থুড়ি ইন্ডিকা। আটলান্টা হচ্ছে ওর ইউরোপীয় সহোদর।
    অয়নের এবার মনে হল এলা নিশ্চিত মেয়ে। পুরুষ হলে সে নিশ্চিত ছুটে বেড়াত। ফুলের সন্ধানে, মকরন্দের সন্ধানে, সঙ্গিনীর সন্ধানে। ও কি জন্য বসে রয়েছে? ও কি সূর্যের আলো থেকে একটু একটু করে উত্তাপ শুষে নিচ্ছে? আরেকটু হলেই উড়ে যাবে? নাকি অপেক্ষা করবে পুরুষ সঙ্গীর জন্য – যে উড়তে উড়তে হঠাৎ এসে বসবে তার পাশে, পাখার এন্ড্রোকোনিয়া গ্রন্থী থেকে ছড়াতে থাকবে সুগন্ধী ফেরোমন। এলা কি করবে? প্রবোসিস দিয়ে প্রেম অঙ্গীকার করবে? তারপর - তারপর কি ওরা মিলিত হবে? কি রকম হবে ওদের মিলন? তাৎক্ষনিক না দীর্ঘায়ত? অনেকদিন ধরে পতঙ্গের প্রনয়রীতি নিয়ে পড়াশুনো করছে অয়ন। মানুষ কতকিছু জেনে ফেলেছে। তবু অনেক অনেক কিছু জানা বাকী বলে মনে হয়। এলা কি তিরতির করে কাঁপছে? কাগজ কলম ছেড়ে একদৃষ্টে চেয়ে রইল অয়ন।

    ছবি- লেখক
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ইস্পেশাল | ০১ অক্টোবর ২০১০ | ৪৫৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন