ছেষট্টি পাতার ঠাসবুনোট নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে আলোচনা করতে বসলে অন্ধের হস্তিদর্শনের সমস্যা হওয়া অবধারিত। হচ্ছেও। কেউ শিক্ষানীতির অতি-কেন্দ্রীয়করণের প্রবণতা নিয়ে বলছেন, কেউ এর সাম্প্রদায়িক চরিত্র নিয়ে, কেউ বা এই মর্মে সংশয় প্রকাশ করছেন যে, এত সব ভাল ভাল প্রস্তাব রূপায়ণ করার জন্য যে বিপুল অঙ্কের টাকা প্রয়োজন সে ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকার সময়মত হাত উপুড় করবে তো? অনেকে আবার যে পদ্ধতিতে রাজ্যগুলির সঙ্গে যথাযথ আলোচনা না করে এবং সংসদীয় বিতর্ককে এড়িয়ে নীতিটিকে পেশ করা হল, তার যাথার্থ নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন। ঘটনাচক্রে এই সমস্ত অভিযোগই বা সংশয়ই যথার্থ। অন্য পরে কা কথা, শিক্ষা এবং শিক্ষা-সম্পর্কিত আনুষাঙ্গিক ব্যায়-বরাদ্দ নিয়ে বিগত দশ বছরে এই সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে আমরা সম্যক পরিচিত। উচ্চ-শিক্ষা এবং গবেষণাখাতে লজ্জাজনক রকম ব্যয়-সংকোচনের নিদর্শন রেখেছে যে সরকার, মিড ডে মিলের মাথাপিছু বরাদ্দটিকে একটু সম্মানজনক একটা অঙ্কে নিয়ে যাবার জন্য অমর্ত্য সেন বা জঁ দ্রেজের মত অর্থনীতিবিদেরা পার্লামেন্টের দেওয়ালে মাথা ঠুকতে বাকি রেখেছেন, তাঁরা কর্ণপাত করেননি। সেই সরকারের শিক্ষানীতিতে যখন ঘোষণা করা হয়, ছাত্রছাত্রীদের মিড ডে পাশাপাশি সকালবেলা পুষ্টিকর জলখাবারও দেওয়া হবে -- তখন তা ‘ভূতের মুখে রামনামের’ মতই শোনায় বৈকি! “research shows that the morning hours after a nutritious breakfast can be particularly productive for the study of cognitively more demanding subjects and hence these hours may be leveraged by providing a simple but energizing breakfast in addition to midday meals. In locations where hot meals are not possible, a simple but nutritious meal, e.g., groundnuts/chana mixed with jaggery and/or local fruits may be provided.” (পৃষ্ঠা সংখ্যা ৯, পয়েন্ট ২.৯)
যাক সে কথা, বরং এই নতুন শিক্ষানীতির এমন একটা দিক নিয়ে আলোচনা করা যাক, যা ফলপ্রসু হলে সত্যিই এদেশের শিক্ষার সার্বিক চিত্রটা এক্কেবারে বদলে যেতে পারে। তবে তারও আগে, একটা সংখ্যাতাত্ত্বিক বিভ্রান্তির দিকে একটু আলোকপাত করা যাক। মাত্র কিছুদিন হল এ রাজ্যে মাধ্যমিক এবং উচ্চ-মাধ্যমিকের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। কোভিড সংক্রমণ এবং লকডাউনের কারণে উচ্চ-মাধ্যমিকে এ বছর অনেকগুলি বিষয়ে পরীক্ষা হয়নি এবং সেই বিষয়গুলোর যে পদ্ধতিতে নম্বর ‘বসিয়ে দেওয়া’ হয়েছে, তা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। তাই উচ্চ-মাধ্যমিককে এড়িয়ে শুধু মাধ্যমিকের ফলাফল নিয়েই আপাতত আলোচনা করা যাক। প্রতি বছরই মাধ্যমিকের পাশের হারের নিত্য-নতুন রেকর্ড হয়, এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এবছর পাশের হার ৮৬.৩৪ শতাংশ। ‘সংখ্যা’-টা উৎফুল্ল হবার মতই বটে। তার মানে মাধ্যমিক উর্ত্তীর্ণ হতে পারেনি ‘মাত্র’ ১৪.৬৬ শতাংশ। কিন্তু এখন যদি এই ‘শতাংশ হিসেব-এর এই মারম্যাচ ছেড়ে সোজাসুজি বলি যে, এ বছর মাধ্যমিকে ‘ফেল করেছে’ এক লক্ষ উনষাট হাজার সাতশো একষট্টি জন, এককথায় দেড় লক্ষেরও বেশি ছেলেমেয়ে, তখন বুকের মধ্যে হালকা ধাক্কা লাগে, তাই না? উচ্চ-মাধ্যমিকেও গল্পটা খুব একটা অন্যরকম কিছু নয়। বিগত কয়েকবছরের পাশ ফেলের শতাংশের হার এবং প্রকৃত সংখ্যাগুলো মিলিয়ে দেখলেই তা দিব্য বোঝা যাবে। তথ্যগুলো আন্তর্জালে সুলভ, আগ্রহী পাঠক দেখে নিতে পারেন।
অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বর্তমানে মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিকের পরীক্ষা এবং মূল্যায়ণ ব্যবস্থা দুটোই রীতিমত শিক্ষার্থী-সহায়ক। প্রতিটা বিষয়েই মাল্টিপল চয়েজ এবং অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন মিলিয়ে প্রায় চল্লিশ নম্বরের প্রশ্ন থাকে। তার ওপর প্রোজেক্ট বাবদ বরাদ্দ মাধ্যমিকে দশ আর উচ্চ-মাধ্যমিকে কুড়ি নম্বরের সচরাচর পুরোটাই স্কুলগুলো থেকে দিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়াও আছে খাতার দেখার সময় নম্বরে ‘ভর্তুকি’ প্রদানের অলিখিত ব্যবস্থা, যা এখন রীতিমত ‘ওপেন সিক্রেট’, সবাই জানে। এতদসত্ত্বেও প্রচুর ছেলেমেয়ে ‘ফেল করে’। তাদের এই ব্যর্থতার পিছনে একাধিক সামাজিক অর্থনৈতিক কারণ রয়েছে, জানি, কিন্তু এটাও তো অস্বীকার করার উপায় নেই যে, তারা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থারই শরণে ছিল। কাজেই আজ তাদের এক অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দেওয়ার দায় আমরাও এড়াতে পারি না। আমাদের এও অজানা নয় যে, এদের একটা বিরাট অংশ আগামী বছর আর পরীক্ষায় বসবে না। মেয়েদের মধ্যে অনেকেরই বিয়ে দিয়ে দেওয়া হবে। আর ছেলেরা লেগে যাবে কোনো শ্রম-নির্ভর কাজকর্মে। অনেকেই নাম লেখাবে পরিযায়ী শ্রমিকের দলে। আর এর পরও যারা লেগে থেকে পরের বছর মাধ্যমিক-বৈতরণী পার হবে, তাদেরই বা ভবিষ্যত কী? প্রতিবছর এত বিপুল সংখ্যক ‘সফল পরিক্ষার্থী’ আর চতুর্দিকে এত এত নম্বরের ভিড়ে কোথায় ঠাঁই হবে এই ‘এক বছর পিছিয়ে পড়াদের’?
অথচ ছাত্রছাত্রীদের এই তুলনামূলক দুর্বল অংশের জন্য কোনও বিকল্প ব্যবস্থা যে নেই, তা কিন্তু নয়। কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারণে ‘ভকেশনাল এডুকেশন’ বা ‘বৃত্তিমূলক শিক্ষা’ নামের সেই শিক্ষা-ব্যবস্থাটিকে এ-রাজ্যে একেবারেই নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছে। মজার ব্যাপার হল, প্রতিটা স্কুলেই কিন্তু মাস্টারমশাই-দিদিমণিরা মোটামুটি ক্লাস সেভেন-এইট থেকেই এই জাতীয় পিছিয়ে পড়া ছেলেমেয়েদের চিহ্নিত করে ফেলেন। কিন্তু প্রথাগত পড়াশুনার বাইরে অন্য কোনো বিষয়ে তাদের আগ্রহ রয়েছে কিনা তা অনুসন্ধান করে দেখার বদলে এই জাতীয় ছেলেমেয়েদের একেবারেই ‘খরচের খাতায়’ ফেলে দেওয়া হয়। অথচ মোটামুটি ক্লাস এইটের পর থেকেই যদি মূলস্রোতের পড়াশুনার চাপ থেকে মুক্তি দিয়ে তাদের নিজস্ব পছন্দ অনুযায়ী কোনো বিষয়ে কারিগরী শিক্ষার দিকে চালিত করে দেওয়া যেত, তাহলে হয়তো তাদের ভবিষ্যতকে অনেকটাই সুরক্ষিত রাখা সম্ভব হত।
শুধু কি তাই, দীর্ঘদিনের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতায় দেখেছি, প্রথাগত পড়াশুনায় রীতিমত ভাল ফল করা ছাত্রছাত্রীদেরও পড়াশুনার বাইরে এমন অনেক বিষয়ে বিশেষ আগ্রহ থাকে। থাকে দক্ষতাও। ডাক্তার আর ইঞ্জিনিয়ার (নিদেন সরকারী চাকুরে) বানানোর চক্করে তাদের সেই আগ্রহগুলো চাপা পড়ে যায়। কেউ হয়তো খুব ভাল নাচে, কেউ ফটো তোলে, কেউ বাগান করে, কারোর আগ্রহ মডেলিং-এ, কেউ বা যন্ত্রপাতি নিয়ে খুটখাট করতে ভালবাসে। এদেরও যদি সঠিক সময়ে এই সমস্ত পছন্দের বিষয়গুলোকে সঠিক সময় চিহ্নিত করে সেই বিষয়-নির্ভর শিক্ষার দিকে চালিত করে দেওয়া যায়, মানব সম্পদের যথাযথ বিকাশ তবেই সম্ভব।
মুশকিল হল, এই কারিগরী বা বৃত্তিমূলক শিক্ষাটিকে আমরা বরাবরই একটু নীচু নজরে দেখে থাকি। এটাকে একটা ‘বিকল্প’ ব্যবস্থা হিসেবে গণ্য করি, মনে করি, এই ব্যবস্থা শুধুমাত্র পিছিয়ে পড়া ছেলেমেয়েদের জন্যই। ফলে আমাদের, শিক্ষিত-মধ্যবিত্ত সমাজে (যাদের অনেকেই আবার শিক্ষাক্ষেত্রে নীতি-নির্ধারকও বটেন) এই ব্যবস্থাটার প্রতি একটা উদাসীনতা, একটা অবহেলা দেখতে পাওয়া যায়। আমাদের রাজ্যের ‘ভকেশনাল এডুকেশনের’-এর সাম্প্রতিক চিত্রটা তুলে ধরলে সেই অবহেলার হাতে-গরম প্রমাণ পেয়ে যাবেন।
পশ্চিমবঙ্গে বৃত্তিমূলক শিক্ষা-ব্যবস্থা পরিচালনা করে জনশিক্ষা ও কারিগরী দপ্তর। এই দপ্তরের অধীনে বিভিন্ন স্কুলে ‘ভকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার’ চালানো হয়। এই কেন্দ্রগুলিতে অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিভিন্ন বিষয়ে ছ’মাসের ডিপ্লোমা কোর্স করানো হয়। তাতে মোটরগাড়ি সারাই, ইলেকট্রিকাল ওয়্যারিং, পোলট্রি ফার্মিং, প্লাম্বিং, দরজির কাজ, বুটিক এবং ডায়াগোনস্টিনিক সেন্টারগুলিতে সহায়কের কাজের মত মোট বিয়াল্লিশটা বিষয়ে কোর্স রয়েছে। আবার মাধ্যমিক পাশ করার পর কোনো ছাত্র বা ছাত্রী বিজ্ঞান, কলা বা বাণিজ্য বিভাগে পড়তে না চাইলে বৃত্তিমূলক বিভাগ থেকেই পড়াশুনা করে উচ্চ-শিক্ষার দিকে এগিয়ে যেতে পারে। এই উদ্দেশ্যে ওই একই দপ্তর থেকে কারিগরী শিক্ষা নিয়ে উচ্চ-মাধ্যমিক দেবারও ব্যবস্থা রয়েছে। মূলস্রোতের উচ্চ-মাধ্যমিকের মত এই বৃত্তিমূলক স্তরেও রয়েছে চারটি বিভাগ – এগ্রিকালচার, হোম সায়েন্স, বিজনেস অ্যান্ড কমার্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি। প্রত্যেকটি বিভাগে রয়েছে পাঁচ বা ছটা করে বিষয় বা ‘পেপার’। এছাড়া আবশ্যিক বিষয় হিসেবে বাংলা আর ইংরেজিও পড়তে হয়। কাজেই বোঝাই যাচ্ছে, পরীক্ষাটি উচ্চ-মাধ্যমিকেরই সমতুল্য। পরীক্ষান্তে পাওয়া সার্টিফিকেট-টিও।
কিন্তু এ সবই গালভরা তথ্য, ঐ 'নতুন কেন্দ্রীয় শিক্ষানীতি'র মতই। প্রকৃত সত্যটা হল, এ রাজ্যের প্রায় সাড়ে ছ’হাজার উচ্চ-মাধ্যমিক অনুমোদনপ্রাপ্ত স্কুলের মধ্যে বৃত্তিমূলক ও কারিগরি বিভাগে পড়ার ব্যবস্থা রয়েছে মাত্র তেরশো স্কুলে। অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণদের জন্য ‘ভকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার’ তৈরি হয়েছিল যে সব স্কুলে, পর্যাপ্ত পরিকাঠামো এবং প্রশিক্ষকের অভাবে সেগুলোর অধিকাংশই আজ ধুঁকছে। অনেকগুলো ইতিমধ্যে বন্ধও হয়ে গেছে। এবং এই প্রসঙ্গে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর তথ্যটি হল, এ রাজ্যের কোনও স্কুলের ভকেশনাল ট্রেনিং সেন্টারেই কোনও স্থায়ী শিক্ষকপদ নেই। পুরো ব্যবস্থাটাই চলছে চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দিয়ে। এই একটা তথ্যই বোধহয় এই বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রতি সরকারের চরম উদাসীনতার বা বিমাতৃসুলভ মনোভাবের যথেষ্ট প্রমাণ হিসেবে গণ্য হতে পারে।
ভালো লাগল দেখে যে, নতুন শিক্ষানীতিতে এই বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যাপারটাকে খুব গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এতাকে একটা 'বিকল্প' শিক্ষাব্যবস্থা হিসেবে নয়, মূলধারার 'সমান্তরাল' একটি ব্যবস্থা হিসেবে গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। আমাদের বর্তমান শিক্ষা-ব্যবস্থার একটা গুরুতর ভ্রান্তির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলা হয়েছে যে, 'Vocational education is perceived to be inferior to mainstream education and meant largely for students who are unable to cope with the latter.' এবং এই ভ্রান্তি নিরসনে ঘোষণা করা হয়েছে যে, '২০২৫ সালের মধ্যে বিদ্যালয় স্তর এবং উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে মিলিয়ে মোট শিক্ষার্থীর পঞ্চাশ শতাংশকে বৃত্তিমূলক শিক্ষার সুযোগ করে দেওয়া হবে এবং তার জন্য নির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা এবং সময়সীমা ধার্য করা হবে।'
পাশাপাশি, ক্লাস সিক্স থেকে এইটের ছাত্রছাত্রীদের প্রত্যেককে ইলেকট্রিকাল ওয়ার্ক, বাগান করা, মাটির জিনিস তৈরি করা, কাঠের কাজ ইত্যাদির মধ্যে যে কোনো একটা বিষয়ে একটা 'ফান কোর্স' করানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে, যাতে করে বৃত্তিমূলক শিক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের নিজস্ব আগ্রহের ক্ষেত্রগুলোকে আগাম চিহ্নিত করা যায়। আবার একইভাবে মোটামুটি অষ্টম শ্রেণি থেকে বৃত্তিমূলক শিক্ষার দিকে চলে যাওয়া শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষার সুযোগটি এবং শিক্ষান্তে জীবিকার বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে। সেই কারণে বিদ্যালয় স্তরের বৃত্তিমূলক শিক্ষা কেন্দ্রগুলির সঙ্গে স্থানীয় আই আই টি, পলিটেকনিক কলেজ, এমনকী স্থানীয় ছোট-বড় শিল্প-কারখানাগুলোর সঙ্গেও সংযুক্তিকরণ জরুরি। শিক্ষানীতিতে এই ব্যাপারে 'হাব অ্যান্ড স্পোক' নীতি ব্যবহার করে একাধিক স্কুলের জন্য একটি করে স্কিলড ল্যাব তৈরি করারও প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
মুশকিল হল, শিক্ষা যে একটি যুগ্মতালিকাভূক্ত বিষয়, সেটা এই নতুন শিক্ষানীতি-প্রণেতারা যতটা সম্ভব ভুলেই বসে আছেন। বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যাপারেও তেমনটা হলে কিন্তু ভারি মুশকিল। ভকেশনাল এডুকেশন নিয়ে এই যাবতীয় পরিকল্পনা রূপায়ণের সর্বময় কর্তৃত্ব কিন্তু রাজ্য সরকারগুলোর হাতে দিতেই হবে। কারণ অঞ্চলভিত্তিক 'ডিমান্ড এবং সাপ্লাই'-এর ওপর ভিত্তি করেই বৃত্তিমূলক শিক্ষার যাবতীয় প্রকল্প এবং কার্যবিধি তৈরি হওয়া উচিত। যেমন গ্রামাঞ্চলের ছাত্রছাত্রীদের জন্য কৃষিবিদ্যা আর শহরাঞ্চলের জন্য মোটরগাড়ি সারাইয়ের মত কারিগরী বিদ্যার ওপর জোর দেওয়া দরকার। আবার কোথাও ছোটখাটো শিল্প-তালুক থাকলে সেখানকার কর্মীদের কী রকম কারিগরী দক্ষতা প্রয়োজন, তা বুঝে নিয়ে সেই অনুযায়ী স্থানীয় স্কুলগুলোতে প্রশিক্ষণের বিষয় নির্বাচন করতে হবে।
এমনিতেই প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি রক্ষার ব্যাপারে এই সরকারের 'ট্র্যাক রেকর্ড' ভয়ঙ্কর রকম খারাপ। তার ওপর বিষয়টা শিক্ষা-সংক্রান্ত। এ তো আর রামমন্দির তৈরি করা নয়। ঘরপোড়া গরু আমরা, ইদানীং তাই একটা প্রবাদেই আস্থা রাখি -- 'না আঁচালে বিশ্বাস নেই'।
লেখা টি বর্তমানে অত্যন্ত বাস্তব সম্মত। তারিফ যোগ্য। তবে যে কুম্ভকর্ণ রা জেগে ঘুমায় তাদের চিরকাল ই এই সমস্ত কথা সুরসুরি দেওয়ার ই সমার্থক।তবে সুরসুরি র পালক টি তেনাদের নাসিকা গহ্বরে ঢুকিয়ে একবার দেখা যেতেই পারে । সোজা কথা ৮ম শ্রেণীর থেকেই ঐ বিভাজন উচ্চমাধ্যমিক এর সমতুল হতে হবে এবং ডিগ্রী কোর্স করে এর বি টেক থেকে এম টেক এর সমান মর্যাদা দিয়ে কাউন্সসিলিং, চাকুরি ইত্যাদির রাস্তা টিও খোলা রাখতে হবে। মূূল কথা টি বোধ হয় সেটি। লেখা টি উপযুুক্ত।
গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা। ষষ্ঠ শ্রেণীর থেকে বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রস্তাবে অনেকে আরেকটি বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। ১১-১২ বছর বয়সী ছাত্রেরা কি এর সুবাদে কোন সংস্হার সাথেও কাজ করবে? সেক্ষেত্রে শ্রম আইনের কী ভূমিকা থাকবে? আগের নিয়মে তো অষ্টম শ্রেণী হলে তারা ১৪ বছরের হয়ে যেত।