-- “সুরাপান করি নে আমি, সুধা খাই জয় কালী বলে"!
--বাজে বোকো না তো, মাল খাচ্ছ খাও, খেয়ে লিভারে ফুটো কর। তারপর বউয়ের শাঁখা-সিঁদুর কেড়ে নিয়ে হবিষ্যি ধরানোর ব্যবস্থা কর। খালিপিলি দেবদেবীদের নিয়ে টানাটানি করছ কেন বলদিকি?
-- কী যে বল! কালিকাপুরাণ পড়েছ? মহানির্বাণতন্ত্র?
-- দুটো পুরাণ পড়া আছে; খট্টাঙ্গপুরাণ ও পাদুকাপুরাণ। বেশি মাতলামি করলে খড়মপেটা করে সিধে করার ডাকিনীবিদ্যে জানি।
-- অশিক্ষিত মহিলাদের মত কথা বলছ কেন? তুমি না ইউনিভার্সিটিতে পড়েছ?
-- তো? আমাদের ইউনিভার্সিটিতে কেমিস্ট্রি পড়ায়, মাল খাওয়া শেখায় না।
-- তোমাদের ইউনিতে কেউ মাল খেত না, গাঁজা খেত না, একটু আধটু চরসের সন্ধান জানত না--এসব বিশ্বাস করতে বল?
-- কেউ কেউ কেন খাবে না! কিন্তু এটা দস্তুর ছিল না। যারা খেত প্রকাশ্যে নয়, হোস্টেলে বা লুকিয়ে চুরিয়ে।
-- তাহলে প্রেমও করত লুকিয়ে চুরিয়ে, সিগ্রেট খেত লুকিয়ে চুরিয়ে! এটা আবার কোন ইউনি হল? এ তো শালা মেয়েদের ডায়োসেশন, লোরেটো গোছের ব্যাপার, যৌবনে-যোগিনী বানানোর কারখানা। আচ্ছা, তোমরা ইউনিতে কখনো চুমু-টুমু খেতে না? ইন্টু-মিন্টু করতে না? বুঝেছি তোমরা শিব্রাম চক্কোত্তির আদর্শ আচরণ বিধি মেনে চলতে।
--সেটা কী?
-- বোন রিনি জিগ্যেস করেছিল, শুনেছি বালিগঞ্জের মেয়েরা নাকি খুব এ' করে? শিব্রাম বল্লেন-- না, তারা ভাল মেয়ে। তাই আগে বে' করে, তারপর এ' করে।
-- ফের বাজে কথা! কলেজে-ইউনিতে যাও কী জন্যে? পড়াশোনা করতে , না প্রেম করতে?
-- দুটোই।
-- দুটো একসঙ্গে হতে পারে? তেলে-জলে মিশ খায় কখনো?
--কেন? যে রাঁধে সে কি চুল বাঁধে না? যে হাত সার্জারি ক্লাসে স্কালপেল ধরে চর্বির পরত জ্যামিতিক রেখায় কাটে সেই হাতই নিঝুম সন্ধ্যায় বুঝিবা পথ ভুলে অজানা দেশে পৌঁছে যায়। তারপর মানে না মানা হয়ে ওঠে।
--আমি যেটা বলতে চাইছি --।
-- কী বলতে চাইছ?
-- বলছি সবকিছুরই একটা সময় আছে, বয়েস আছে। তা না হলে জীবনে অনেক ক্ষতি হয়।
-- সেই সময়টা ঠিক করে কে? পদিপিসী না ক্ষান্তবুড়ির দিদিশাশুড়ি?
-- তুমি কী বলতে চাও? সামাজিক ভাবে স্বীকৃত কোন আচরণবিধি নেই? যে যখন যা চায় তাই করতে পারে ?
-- না। আমি চাইলেও তোমার গলা কাটতে পারি না।
--- আমি কম বয়সে পড়াশোনা ছেড়ে প্রেম করা এইসব নিয়ে বলতে চাইছি । এ নিয়ে কি কোন গড়পড়তা নিয়ম নেই?
-- কেন থাকবে না? সময় বদলায়। ষাটসত্তরের দশকে বার এ কোন মেয়ে ঢুকত না। হ্যাঁ, শহর কোলকাতার কথাই বলছি। গড়পড়তা মেয়েরা সন্ধের আগে ঘরে ঢুকে যেত। যারা ঢুকত না তাদের কপালে জুটত ঘরে-বাইরে মুখনাড়া আর পাড়ায় বদনাম। তখন কফিহাউসে ছেলেদের সঙ্গে আড্ডা মারাই অনেক বড় বিপ্লব। আর এখন? সন্ধ্যেয় অলিপাবে গিয়ে উঁকি মেরে দেখ? এ নিয়ে ঘরেবাইরে পাড়ায় কোন কথা হবে না। হলে মেয়েটি মুখের ওপর বলে দেবে- বেশ করেছি।
আমার ভোটার কার্ড আছে।
-- তাতে কী হয়?
-- আচ্ছা আতাক্যালানে তো! যে মেয়েটা কারা দেশ চালাবে সেটা ঠিক করতে পারে সে নিজে আদৌ মদ বা গাঁজা খাবে কি না, খেলে কোনটা খাবে, কতটা খাবে, কোথায় বসে খাবে, কার সঙ্গে খাবে সেটা ঠিক করতে পারে না? এরকম হিপোক্রেসির কোন মানে আছে?
--- তবু বলব, ভালোমন্দ বোঝার নিজের জীবন নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করার একটা বয়েস থাকা উচিত।
-- হ্যাঁ, ঠিকই বলেছ।
-- আরে, তুমি মানছ।
--- মানব না কেন? কিন্তু সেই সীমারেখা কে ঠিক করবে?
--- তুমিই বল।
--- আমি কী বলব? বহু আগে মহাভারতে বকরূপী ধর্মের প্রশ্নের উত্তরে জ্যেষ্ঠ পাণ্ডব বলে গেছেন-- যেখানে নানামুনির নানা মত, সেখানে মহাজনোযেন গতঃ স পন্থাঃ। মহাজনের দেখানো পথে চলাটাই সেফ।
-- তা তোমার পথ দেখিয়েছিলেন যে মহাজন, তিনি কিনি?
-- কিসের পথ?
-- কিসের আবার! চলার পথ।
-- কোন পথে চলা? পথ যে অনেক।
-- যাচ্চলে! তুমি কি আমার সঙ্গে সেই
" কী ব্যাঙ? কোলা ব্যাঙ।
কী কোলা? বৈদ্যকোলা।
কী বৈদ্য? রাধাবৈদ্য
কী রাধা? কেষ্টরাধা”।
---এইসব কথার খেলা শুরু করেছ? চোখের দিকে তাকিয়ে সোজা কথার সোজা উত্তর দাও। কে সেই মহাজন?
---- ভুল বুঝেছ।
--- কোন নতুন কথা নয়। তোমাকে সবাই ভুল বোঝে। শুধু আমি নয়, গোটা দুনিয়াটা।
-- আরে আমি সোজা কথা সোজা করেই বলছি। পথ অনেক। আলাদা মঞ্জিলের জন্যে আলাদা রাহ্। পথ বুঝে মহাজন ধরতে হয়। তুমি কোন পথে যেতে চাও পথিক?
-- কায়দা করে গোলপোস্ট সরিও না। কথা হচ্ছিল কোন বয়সে প্রেম, চুমুখাওয়া এগুলো মান্য? তুমি বললে মহাজন যেমন আচরণ করেছেন। তা এই পথের মহাজনটি কে?
-- রবি ঠাকুর, আবার কে!
--- উঃ, সেই সব ঠোঙা হয়ে যাওয়া দেওর-বৌদির ছ্যাবলা গল্প শোনাবে?
--- আরেন্না! শোন। রবীন্দ্ররচনাবলী খোল। দেখবে দুটো বেণী ঝোলানো স্কার্ট-টিউনিক পরা কেডস পায়ে এক কিশোরী। নীচে নোটঃ আন্না তড়খড়ে। এই কিশোরী কবির প্রথম যৌবনের প্রেরণা। কবি ইহার নাম দিয়াছিলেন নলিনী। "মায়ার খেলা" অপেরার নলিনী ক্যারেকটারটি মনে পড়ে?
--- ওসব কৈশোরের পবিত্র প্রেম। তার সঙ্গে তোমাদের চুমুখাওয়া দেহগন্ধী প্রেমের তুলনা! যেন ফুল নিয়ে মাছের বাজারে ঢোকা। তারপর আবার রবীন্দ্রনাথ! তোমার মুখে কি কিছুই আটকায় না?
-- ধেৎ। ভাল করে পড়া কর। রবীন্দ্রনাথের "প্রথম চুম্বন" কবিতাটি পড়। দেখবে কবি নিঘ্ঘাৎ সিঁড়ির বাঁকে দাঁড়িয়ে চুমু খেয়েছিলেন।
-- ওক্কে! কিন্তু এতে করে বয়সের সীমারেখা কি করে টানা যায়?
-- কবি কিছুই বাকি রেখে যান নি। তিনি জানতেন --শতবর্ষ পরেও অনেক নির্বোধ ছাত্রছাত্রীদের কমবয়সে প্রেম করা চুমু খাওয়া এসব নিয়ে ফালতু বাওয়াল করবে। তাই স্পষ্ট করে লিখে গেছেন-- " ওই দেহখানি বুকে তুলে নেব বালা,
পঞ্চদশ বসন্তের একগাছি মালা।"
দেখতেই পাচ্ছ , গুরুদেব চুমুখাওয়া ও হাগ্ করার বা জাদুই-ঝাপ্পি দেওয়ার লক্ষ্মণরেখা ১৫ বছরে টেনে দিয়েছিলেন।
-- বলতে কী চাও?
--বলার কী আছে? দাড়িদাদুর সময়ে ছিল দশ ক্লাস। এখন বারো ক্লাশ পেরিয়ে তবে ছাত্রছাত্রীরা কলেজে পড়তে আসে। সে যদুপুরেই হোক, কি দিকশূন্যপুরেই হোক। ১৮ বছরের কমে কেউ ইউনিতে পড়ে? ওদের আছে ভোট দেওয়ার অধিকার। কিন্তু মন দেওয়ার অধিকার নেই?
-- বুঝতে পেরেছি। থাকবে না কেন? থাকবে। আগে মন দেওয়ার অধিকার। তারপরে হাফসোল খেয়ে মদ খেয়ে কাঁদার অধিকার। তারপর মন যাকগে চুলোয়, শুধু শরীরের দেওয়া-নেওয়ার অধিকার।
-- শোলে ফিল্মে বচ্চনবাবুর ডায়লগ বলছ নাকি? সেই যে জুয়ো থেকে মদ, তারপর গানাওয়ালির ঘর যাওয়ার লোকাস?
--- তোমাদের খালি ছ্যাঁচরামি। খালি কাদা ঘাঁটা। কেন? শরীরকে বাদ দিয়ে প্রেম হয় না বুঝি?। তোমরা পবিত্র প্লেটোনিক প্রেমে বিশ্বাস কর না।
-- দেখ, প্রেমের পদ্ম শরীরের পাঁকেই ভাল করে ফোটে। দেহাতীত প্রেম হল সোনার পাথরবাটি। মান্না দে'র কাকার কীর্তন শোন নি?
"সে যে আমারই হৃদয়রাজা,
আমি দেহের দেউলে আরতি করিয়া
করিব তাহারই পূজা।"
কই, মনের মন্দিরে পূজো করার কথা তো বললেন না? কাজেই মানুষ থাকলে প্রেম থাকবে, মন থাকলে দেহ থাকবে। এতে পদিপসীগিরি করার কিছু নেই।
-- আচ্ছা, মহাজনদের ফ্লার্ট করা নিয়ে কোন বক্তব্য আছে?
-- ফ্লার্ট বোলে তো?
-- এই আজ এর সঙ্গে, কাল তার সঙ্গে। এই সব টুং-টাং, ফুং-ফাং?
-- কে কার সঙ্গে কতটুকু কমপ্যাটিয়েবল এত সহজে বোঝা যায়? আর যদি কোন কারণে ভাললাগাটা মরে যায়, তবু জোর করে ভান করে যেতে হবে?
-- এত হালকা কেন তোমরা? শুধু "হোয়াম ব্যাম্, থ্যাংকিউ ম্যাম্!"
-- তুমিই একটা মানবিক সম্পর্কের স্বাভাবিক সমস্যাকে গাটারের জোকস্ করে তুলছ? এত রাগ কিসের? আচ্ছা, তুমি তো ফিজিক্স নিয়ে ভালভাবে গ্র্যাজুয়েট হয়েছিলে। কিন্তু মাস্টার্স করতে লিটারেচারে কেন গেলে?
-- আসলে কী জান? ফিজিক্সে বিএসসি করার পর আমার মনটা কিরকম ঘেঁটে গেল। ঠিক স্যাটিসফ্যাকশন পাচ্ছিলাম না। মনে হল লিটারেচারই আমার সাবজেক্ট। তাই বদলে নিলাম।
--এখন কেমন লাগছে? হ্যাপি?
-- অফকোর্স। খুব ভাল লাগছে।আনন্দে আছি।
-- দ্যাটস্ ইট। আনন্দে থাকা। আচ্ছা, তোমার বাবা ফিজিক্স ছেড়ে দেওয়ায় রাগ করেন নি?
-- করে নি আবার! বাপি সাতদিন আমার সঙ্গে কথা বলেনি। বলত বাংলায় এম এ? কোন ভবিষ্যত নেই। ফিজিক্সের মত সাবজেক্ট ছেড়ে কেউ বাংলা পড়ে? মাথাটা গেছে।
-- তা তুমি কী করলে?
--- বাপিকে বোঝালাম যে ইয়ে মেরি লাইফ হ্যায়। এর ভালমন্দ আমার, আর কারো নয়।আমি চোখ বুঁজে নয়, চোখ খুলে ফিজিক্সের পাড়া ছেড়ে সাহিত্যের পাড়ায় পা রেখেছি। এই ডিসিশন একান্ত ভাবে আমার। আমি ছাড়া আর কারো অধিকার নেই এ নিয়ে কথা বলার। আমি তো কারো ক্ষতি করছি না। করলে শুধু নিজের,ব্যস্। আমাকে আমার মত থাকতে দাও। স্পেস দাও। এটাই ডেমোক্র্যাসি।
-- আমার মনে হয় তোমার উত্তর তুমি পেয়ে গেছ।
-- কী রকম? কী রকম?
-- তুমি ফিজিক্স ছেড়ে বাংলা সাহিত্য নেওয়ায় ফিজিক্স ফালতু বিষয় হয়ে যায় নি । আর তুমিও ফালতু ছাত্রী হয়ে যাও নি।
-- সে তো বটেই।
-- তেমনি তুমি যদি কাল কোন কারণে আমাকে ছেড়ে যাও--।
-- কেন? হঠাৎ ছেড়ে যাওয়ার কথা উঠছে কেন?
-- আবার সেই! আরে এখানে আমি হলাম প্লেস-হোল্ডার। ধর, কোন কারণে তোমার মনে হল তুমি আমি ঠিক কমপ্যাটিয়েবল নই, আর তুমি জীবনসঙ্গী বদলে নিলে, তার মানে আদৌ এ নয় যে আমি অপদার্থ, অথবা তুমি খারাপ মেয়ে। কী চুপ মেরে গেলে যে!
-- ভাবছি, এই পথে তোমার মহাজন কে?
-- সেই রবি ঠাকুর; একমেবাদ্বিতীয়ম্।
-- কী যে বল! রবি ঠাকুর ফ্লার্ট করতেন? সঙ্গী বদলে নিতেন?
-- তোমাদের না টিভি দেখে দেখে মাথাটা একেবারে গেছে। আরে কোন পার্টনার সোয়াপিং এর কথা বলছি না। শুধু এই কয়টি পংক্তি দেখঃ
" মন দেওয়া নেওয়া অনেক করেছি, মরেছি হাজার মরণে,
নূপুরের মত বেজেছি চরণে চরণে"।
আবার এই লাইনটা খেয়াল কর-- "সাধিয়া মরেছি তাহারে, ইহারে, উহারে।"
--- কিন্তু এর মধ্যে আগের নির্বাচন ভুল বুঝে ফের বদলানোর গল্প কোথায়?
-- একই কবিতার শেষ লাইনঃ "যাহা চাই তাহা ভুল করে চাই,
যাহা পাই তাহা চাই না।"
এর পরেও কিছু বলার আছে কী?
-- কিন্তু আমি তোমাকে বা তুমি আমাকে ছেড়ে যাবেই বা কেন? ঝগড়া-ঝাঁটি হলে একটু মানিয়ে নিতে পারবে না? ওইসব সাহেবদের থেকে ধার করা ফালতু টার্ম কম্প্যাটিবিলিটি বাজে যুক্তি। কিরকম যেন অসুইব্য মত। অন্য যুক্তি দাও।
-- ধর আমাদের ভালবাসা মরে গেল, তখন?
-- তখন কী?
-- তখন কী করা উচিত আত্তি নামের মেয়েটা বলে দিয়েছে।
-- আত্তি আবার কে?
-- এ পথে আমার মহাজন, মানিক বন্দ্যোর "হরফ" উপন্যাসের। ও উপন্যাসের নায়ক মানবকে বলে -- কখনও যদি আমাকে তোমার আর ভাল না লাগে তবে ছেড়ে দিও বাবু। জোর করে ধরে রেখে সম্পক্কোটা তিতো করে দিও না।"
-- মহাজনবাক্য মানতে পারলাম না। ভালবাসার শুকনো ডালে ও গোড়ায় নিয়মিত জল দিলে কি কচি পাতা গজিয়ে উঠবে না? সে যাকগে, সব কথাই যখন হল তখন মদ-গাঁজাই বা বাদ যাবে কেন?
-- আগে বল মদ খাওয়া নিয়ে তোমার এত আপত্তি কেন?
-- শরীরের ক্ষতি করে।
-- চা-সিগ্রেট?
-- কম করে, বাড়াবাড়ি করলে অবশ্যই করে।
-- চা-সিগ্রেটে আপত্তি নেই। শুধু মদে আপত্তি?
-- অনেক পয়সা লাগে।
-- পয়সা না থাকলে খাবে না, কম পয়সায় কম খাবে।
--- মাতলামি করলে পরিবেশ নষ্ট হয়। চা-সিগ্রেট খেয়ে কেউ মাতলামি করে না।
-- মাতলামি করে বাওয়াল করলে তার জন্যে শাস্তি আছে। কলেজ থেকে বের করে দেওয়া যায়। অফিসে মদ খায় না? পার্টিতে? কিন্তু কাজের সময় সবাই কাজ করে, মাতলামি করে না। তেমনি বিশ-বাইশ বছর বয়সের ছাত্রাছাত্রীদের একটু সম্মান দাও। ন্যালা-ক্যাবলা অসহায় অপোগন্ড ভেব না। ওদের একটু সম্মান দাও, দেখবে এসব কোন সমস্যাই নয়।
-- তাহলে যাদবপুরের ছাত্রছাত্রীদের অনশন বা অবস্থান- ধর্মঘটের সময়ে মদ খাওয়া একজন আর একজনের কোলে মাথা রেখে শোয়া নিয়ে অভিযোগ উঠছে কেন?
-- যদি ধরেই নিই যে সব অভিযোগ সত্যি, তবুও বলব যে এগুলো কোন শিক্ষাক্ষেত্রে অপরাধ নয়। কেউ মাতলামি করেছে? ভিসির সঙ্গে ব্যবহারের সময় কেউ টল্লি ছিল এমন তো অভিবাবুও বলেন নি।
-- আর একজন আরেকজনের কোলে মাথা রেখে শোয়া?
-- আমি কি কখনো তোমার কোলে মাথা রেখে শুয়েছি?
-- না না; এসব আমার একদম পছন্দ না।
-- দ্যাটস্ ইট! তোমার পছন্দ নয় তাই। এখন কেউ যদি কারও কোলে মাথা রেখে শুয়েছে তো সে অ্যালাউ করেছে বলেই তো শুয়েছে। এতে কার কী বলার আছে? খামোকা শ্রীরাম সেনাগিরি কেন?
-- তাহলে এসব কথা উঠছে কেন? শিক্ষামন্ত্রীও ছাত্রদের ফালতু বাওয়াল ছেড়ে পড়ায় মন দিতে বলেছেন।
-- ঠিকই বলেছেন। আসলে মাননীয় রাষ্ট্র ও সমাজের কর্ণধাররা যখন ছাত্রনেতা ছিলেন তখন কখনো মদ খাননি, কলেজে কাউকে চুমু খেতে বা প্রেম করতে দেন নি। শুধু পড়াশুনো করে গেছেন। তাই ওদের খারাপ লাগছে।
-- কিন্তু এই মদ খাওয়া শরীর নিয়ে বাড়াবাড়ি করা এগুলো আমাদের সংস্কৃতি- বিরোধী ও পাশ্চাত্ত্য থেকে ধার করা সেটা তো মানবে?
- কী যে বল! বঙ্গদেশ হল তন্ত্রের দেশ। পঞ্চমকার ছাড়া আমাদের সাধনা হয় না।আমরা তাই বামাচারী। তাই এখানে ৩৪ বছর ধরে বামসরকার টিঁকে থেকেছে। আমাদের দূর্গাপূজোয় নগরবধূদের দোরের মাটি লাগে। কালীপূজোয় কারণবারি পান করা হয়। বৈদিক দেবতারা সোমরস পান করতেন। অষ্টশতী চণ্ডী বা মহালয়ায় বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মুখে শোন -- গর্জ গর্জ ক্ষণং মূঢ়ঃ মধুযাবৎ পিবামহম্!
দূর্গা নিজে মহিষাসুরকে ধমক দিয়ে বলছেন - যতক্ষণ আমি মধুপান করছি ততক্ষণ নাপানাপি কর গে যা! তারপর ব্যাটা তোকে দেখাচ্ছি। তারপর মধুপানে ক্রমশঃ দেবীর চোখ ও মুখমন্ডল অরুণবর্ণ ধারণ করল। দেবী যুদ্ধে নেমে অসুরের যা-তা করলেন।
--তোমার মোদ্দা কথাটা কী?
-- কথা হল ভিসি নাহয় দুর্গাপুরে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়তে গিয়ে কখনো মদ খাননি, বাওয়াল করেন নি, চুমুটুমু খান নি। তাবলে আজকের ছেলেমেয়েরা খাবে না নাকি? আরে বড় দিল আর উদার আচরণ করুন। খামোকা বালবিধবা পিসির মত ব্যাভার কেন?
-- একটা কথাও মানছি না! যত্তসব।
-- তাহলে আমার সঙ্গে সম্পর্ক শেষ?
-- তা কেন? আমি তো অভিমন্যু নই।
-- হ্যাঁ, হ্যাঁ। "অভির এখনো হয় নি জিৎ,
যতই খেলুক চু-কিৎ-কিৎ!"
-- সেই বাঙালের গোঁ! বরং আমার কথা শোনঃ
আমরা দুজনা দুইটি ডালের পাখি,
একটি রজনী, একটি শাখার শাখী।
তোমাতে আমাতে মিল নাই, মিল নাই,
-- তাই বাঁধিলাম রাখী।
অলংকরণঃ সুমেরু মুখোপাধ্যায়