এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ইস্পেশাল  পুজো ২০১০

  • একটি অতিবাস্তবিক গল্প

    মলয় রায়চৌধুরি
    ইস্পেশাল | পুজো ২০১০ | ০১ অক্টোবর ২০১০ | ৮৩০ বার পঠিত


  • বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার ও প্রখ্যাত সমকামী দেওতা খান্নার সেলাই করা উজ্জল লাল নিল সবুজ আর খয়েরি রঙের পোশাকে ওনাদের দেখে কে! পোশাকের ফেব্রিক ও নরম টেক্সচার পালক পালক| ঠোঁটে লাইক-মি লাল গোলাপী এমনকি কালচে লিপস্টিক, পোশাকের সঙ্গেই ম্যাচিং করা। দশ বারটি তরুণীর বকবকিয়ে দল যাকে বলে জেনারেশন এক্স, ডাবল এক্স, ট্রিপল এক্স, ওনাদের যিনি নেতৃস্থানীয়া, তাঁর নাম কমলেকামিনী দেবী। না, দেবী - দেবতা কাটেগরির দেবী নন ! হাজব্যান্ড মাত্রেই তো ড্যুড আর তাই হস্তান্তরযোগ্য বলে, উনি বরেদের পদবির মালিকানা সেই কবেই ত্যাগ করেছেন।

    পক্ষী বিশারদরা ওনাদের বলেন প্যারা শুখচা পাখি। আর পাখি শিকারীরা ওনাদের বলেন পেয়ারী শুখচি ; নানা রঙ্গে রঙিন বলে কেউ কেউ বলেন নওরঙ্গী। ওনারা নিজেরা অবশ্য ওসব মানেন না; জেনারেশন ট্রিপল এক্স বলে কথা| ওনারা নিজেদের বলেন প্রাণপাখি| স্তন্যপায়ী প্রাণীদের দেহ থেকে যখন প্রাণ বেরোয়, তখন সবের শরীরের উদ্বৃত্ত অংশ পাখি হয়ে উড়ে যায়। সরকারী সার্কুলারে বলা আছে।

    পুং দেহের ফালতু অংশ লিঙ্গ, যা প্রাণী মরার সঙ্গেসঙ্গে হাপিশ হযে পাখি-পুরুষ হয়ে যায়, যাকে ওনারা বলেন পুংশুখচা। তাই বলে প্রতিটি পুং দেহ থেকে পুংশুখ্‌চার আবির্ভাব হয় না। দেহের আদল - আদর - প্রজাতি অনুযায়ী কাক বক চিল কোকিল হাঁস মোরগ ক্যানারি তিতির চিতাল জলপিপি টিয়া চড়ুই বাবুই বদরী মুনিয়া হয়।

    অবশ্য এ নিয়েও প্রাণীজগতে, বিশেষ করে পাখিজগতে, বিতর্কের শেষ নেই। যাঁরা বিজ্ঞানে ডিলিট করেছেন বা সাহিত্যে এল এল বি করেছেন, তাঁরা মনে করেন, অনেকের প্রাণপাখি ওড়ে না; প্রাণবায়ু বেরোয় এবং তাঁর সঙ্গে উদ্বৃত্ত অংশের সম্পর্ক নেই।
    এই তো সেদিন স্বচক্ষে দেখেছেন ওনারা ঘটনাটা। ফলে ফুলে সাজানো ভাম রাজার ডেড বডি নিয়ে মানুষদের কি মহা শবযাত্রা। বুড়োবুড়িরাও কাঁদছিল বুক চাপড়ে। ডেড বডিটি অনেক বড় রাজা ছিলেন। পঁচিশ-তিরিশ বছর টানা কুর্সিনশিন ছিলেন অর্শসমেত। সেই এতবড় ভাম রাজার ধুতির ফাঁক থেকে একটা ছোট্ট টুনটুনি হাওয়া বেরিয়ে উড়ে গিয়েছিল ফুড়ফুড় ফুড়ফুড়িয়ে। ওনার শোকসন্তপ্ত স্যাঙ্গাতরা দাবি করছিল যে ওটা প্রাণপাখি; বিরোধী পক্ষের বুড়া দাবি করেছিল ওটা প্রাণবায়ু, কেন না হাওয়া ম-ম করছিল|

    স্তন্যপায়ী স্ত্রীদেহ থেকে কত পাখি বেরোবে তা প্রাণীর প্রজাতি বাতলে| মানুষী হলে তার বুক থেকে ফালতু দুটো অংশ পাখি হয়ে ওড়ে কুকুর শুয়োর গরু হলে দুইয়ের বেশি।
    যদি প্রাণবায়ু বেরোয়,তাহলে আগে থাকতে বলা যায় না, যে, তা ঝড় চক্রবাত নিম্নচাপ ব্লিজার্ড মৃদুমন্দ-বাতাস না কি এমনিই সাধারন টুসকি হাওয়া হয়ে আবির্ভূত হবে। ইউনিয়ন সদস্যরা এবিষয়ে একমত নন। বিশুদ্ধ কোষের স্তন্যপায়ীদের ইনফিডেলিস্ট পঞ্জিকামতে, বায়ু নির্গমনের নানা পথের সুযোগ স্তন্যপায়ীরা পায়, যেহেতু স্তন্যপায়ী দেহে একাধিক এক্সিট বা এϾট্র পয়েন্ট আছে। তীর্থক্ষেত্রে নিবাসী ঘ্যাম-ঘ্যাম প্যারা শুখ্‌চাদের কাছে মহান মহান প্রাণীদের দেহ থেকে বেরনো হাওয়ার নথি আছে। কোনোটা ডাবর হাওয়া, কোনোটা সুলেখা হাওয়া, কোনোটা বেঙ্গল ল্যাম্প হাওয়া, কোনোটা কৃষ্ণা গ্লাস হাওয়া, আবার কোনোটা ঊষা ইঞ্জিনিয়ারিং হাওয়া বা চটকলের চট্‌চটে হাওয়া।

    মানুষ ছাড়া বাদবাকি স্তন্যপায়ীদের ডেড দেহ থেকে এরকম হাওয়া না বেরোনোর কারণ হল, আর ঐ একটিই কারণ, এই যে মানুষরাই শুধু অমানুষ হয়, কেনো না পাখিরা যেমন রামধনুর রঙ পায় না। যেটুকু গোলাপি আভা পায়, তা মানুষ পায় তা মানুষ পায় না। যেটুকু গোলাপি আভা পায়, তা মানুষ পায় উদ্বৃত্ত অংশে।
    যে সব হাওয়ারা হাওয়া হয়ে কবেই ইন দেশে পালিয়েছে। একেবারে যেন হাউই।
    নিজের নীল সবুজ শাড়ির আঁচল সামলাতে সামলাতে কমলেকামিনীদেবী বললেন, স্তন্যপায়ী মাত্রেই যে শৈশবে মাইখাবার সুযোগ পেয়েছে, তা কিন্তু জোর দিয়ে বলা যায় না।

    একজন ছুঁড়ি পেয়ারি শুখচি বললে, ঞ্ছআজ্ঞে হ্যাঁ, পুরো মানবসমাজ বোতলপায়ী হয়ে গেছে। যদিও বোতলপায়ী না হলে ওনারা মানবতাবাদ আবিষ্কার করতে পারতেন না। বিপ্লব আবিষ্কার করতে পারতেন নাঞ্জ। মুখ ঝামটা দিয়ে উঠলেন কমলেকামিনিদেবী, ঞ্ছএতে মানুষের প্রসঙ্গ আসছে কোত্থেকে? আমি সেই তিমি মাছটার কথা বলছি, যে মকরসংক্রান্তির সকালে বাচ্চাগুলোকে ভাসিয়ে অক্ষরেখার শেষে আত্মহত্যা করেছিল।ঞ্জ
    এমনিতে কমলেকামিনিদেবীর চক্ষুস্বর ভাল উনি পাশ্চাত্য ধ্রুপদি গায়াকিতে ইমনকল্যাণ ধ্রুপদী গায়কিতে ইমনকল্যাণ পক্ষীসঙ্গীত গাইতে পারেন।
    ভারী ভরকম এক পেয়ারিশুখচি, যার গায়ে ফরাসি মখমলের লাল উড়না, নখে হলুদ মায়ান্মারি নেল পলিশ, বলল, "কি আশ্চার্য্য দেখুন, ঐ উদ্বৃত্ত অংশ গুলো যদি জীবিতাবস্থায় কেটে বাদ দিয়া হয় , তাহলেও স্তন্যপায়ী জীব দিব্বি বেঁচে থাকে| অথচ ওদের জৈব ক্রিয়ার যন্ত্র বাদ দিলে মরে যায়| "
    "কারেক্ট ", বললেন ক্ষমাসুন্দরী দেবী, "পোকারা কিন্তু মরে না; আমাদের ব্রেকফাস্ট লাঞ্চের জন্যে প্রকৃতির উপহার ।"
    ছুঁড়ি পেয়ারি শুখচি বলল, মানে প্রশ্নের ঢঙে বলল,
    "আমাদের পাখি সম্প্রদায়ের কেউ কেউ কিন্তু দল বেঁধে স্তন্যপায়ীদের পচা মাংস খায়?"
    "কাক চিল শকুন বাজ ত? ওরা জন্মায় রাজনৈতিক, চোরাকারবারি, ঘুষখোর আমলা মানুষদের উদ্বৃত্ত অংশ থেকে ।অপাকিস্তানের জাতীয় পাখি হল বাজ আর আমেরিকার ঈগল তো ঐ জন্যেই জাতীয় পাখি। অবশ্য সেসব উদ্বৃত্ত অংশে যদি গনেরিয়া বা সিফিলিস বা রাজনৈতিক এইডস এর আবাসন থাকে, তাহলে সেক্ষেত্রে স্তন্যপায়ী সব ব্যক্তির প্রাণপাখি বেরোয় না বেরোয় প্রাণবায়ু।ঞ্ছ বললেন একজন বৃদ্ধা পেয়ারি শুখচি।
    -আচ্ছা,আপনাদের এই বকবক কবে থামবে বলুন তো? আপনাদের পরিযায়ী সিজন কি শেষ হয় নি? এপার ওপার দুটো করেই তো পাসপোর্ট আপনাদের! বরষা এলো, আপনাদের কুকিত্তি হলো, ডিম পাড়াপাড়ি হলো এবার যান না, শুকনো মৌসম ত কবেই এসে গেছে। গায়ে কাঁটার পোশাক পরে থাকি নিরিবিলিতে থাকব বলে। কিন্তু আপনাদের জ্বালায় তা থাকার উপায় নেই। তার ওপর এক বেটি ক্যারেক্টারলেস বাঘিনী আমার পা আঁচড়ে রসাক্ত করে দিয়ে চলে গেছে;এরা সব নিজে থেকে আশ্লীল গরমিতে, আর ঝাল মেটাবে আমাদের ওপর।
    যে হেঁতাল গাছটার ছাদে কুটোকাঠির উইন্ডোয় বসে প্যারা শুখচারা দুপুরের দোক্তা- পোকা খেয়ে গ্যাঁজাচ্ছিল, সেই গাছটাই চিবিয়ে-চিবিয়ে কথাগুলো বললেন । এর আগেও কত বার শাখা ঝাঁকিয়ে ওদের ভাগাবার চেষ্টা করেছেন মিস্টার হেঁতাল, কিন্তু পাখিগুলো এমন আঁকড়ে ধরার এক্সপার্ট যে ওদের কিছুই হয় না।
    বর্ষায় রগড়ে রগড়ে চান করে বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়েছিলেন হেঁতাল মশায়, কিন্তু এই প্যারা শুখচচাগুলোর এক পোকান্নবর্তী পরিবার আর তাদের জ্ঞাতিগুষ্টিরা ওনার গায়ে মাথায় হেগে হেগে সইরকারি টয়লেটের মতন নোংরা করে দিয়েছে। অপেক্ষা করতে হবে একাধ খেপ বেমৌসমের ঝোড়ো বৃষ্টি-বাদলার জন্যে।
    কমলেকামিনী দেবী বললেন, ঞ্ছহ্যাঁ মিস্টার হেঁতাল, এবার আমরা বিদায় নেব। আপনার পোশাকের কাঁটার জন্যেই এখানে আমরা কলোনি গরেছিলুম; নয়ত সাপবাবু আর তাঁদের বেগমরা আমাদের ডিমের পোচ-অম্লেট আর ছানাদের তন্দুরি বানিয়ে খেতেন।ঞ্জ
    হেঁতালবাবু, গরানবাবু, হরিতকীবিবি, সুন্দরীবিবি, নারিচাবাবু, ধরমারাবাবু, গর্জনবাবু, গামারিবিবি সবাই জানেন যে তিন জাতের প্যারাশুখচা, বামুন- কায়েত-বদ্যি, ফিবছর বর্ষার ঠিক আগে সোঁদরবনে আসে, সংসার পাতে, আর মৌসাম শুকোতে থাকলে সংসার ভেঙে চুবড়ি-ফ্ল্যাট ছেড়ে উড়ে চলে যায়। যতদিন সংসার থাকে, নিয়মিত হাঁকডাক করে, টহল দিয়ে, বিচরণ-কলোনি দখলে রাখে। ওদের আবার এক কলোনির সঙ্গে আরেক কলোনির দখল টিকিয়ে রাখার লড়ালডি হয়; বোধহয় ইউরোপে শিখেছে, স্পেন পর্তুগাল ইংল্যান্ড ফ্রান্স নেদারল্যান্ডস থেকে। শুরু করেছিল কলোনি নাম দিয়ে, এখন করে তুলেছে স্যাংকচুয়ারি। পরের বছর এসে অন্য বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গেঁ লিভ টুগেদার করতে কাঠিকুটোর চুবড়িতে সংসার পাতে।
    যে প্যারা শুখচা বহেনজিরা বুড়োতে থাকে তারা টয়বয় প্রেমিক যোগাড় করে ফ্যালে। আর ফ্যশানবাজ বুড়োরা পালক ফাঁপিয়ে ডানা-ক্যান্ডি ফাঁসায়। আবশ্য মাঝে- সাঝে গার্লফ্রেন্ড স্বোয়াপিং যে হয় না তা নয়।
    হেঁতালবাবু শাখা ঝাঁকিয়ে বললেন , ঞ্ছপরের বছর থেকে আপনাদের পার্লামেন্টের জিরো আওয়ার অন্য কারোর মাথায় বসাবেন।ঞ্জ
    একজন গ্যাঁটকা প্যারা শুখচা, যার ভুঁড়ি মন্ত্রীদের মতন ফাঁপা, বলল, একটু মিটমাট করে নিন না বস।
    হেঁতালবাবুর পায়ের কাছে কয়েকজন জবরদখলবাদী আগাছা ছিলেন, বনেদি পরিবারের। এখন মস্তান। হেঁতালবাবুর শেকড়ের রকে বসে যাত্রা করেন।

    আগাছাকটা সূর্যশিশির পরিবারের সন্তান। আট সেন্টিমিটার লম্বা; পাতা ছোট-ছোট গোল-গাল। গরমকালে সাদা ফুল ফোটে। পাতায় শিশির পড়লেই গায়ের রঙ একেবারে কুল ড্যুড দুধে-আলতা, রঙিন চকরা-বকরা টি-শার্টে ঝলমলে। আর গায়ে ব্‌র্‌যাডগু পিট পারফিউম। নানা ভাষাভাষী মেয়ে পোকারা ঐ রগরগে টান এড়িয়ে নিজেদের ধরে রাখতে পারে না। সোজা গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে গোলগাল পাতাদের চুলদার বুকেম ডানার শাড়ি খুলতে খুলতে।
    একবার যদি কোনো মেয়ে পোকা আছড়ে পড়ল সূর্যশিশির ছোকরাদের অধররসটুকু নিজের স্ট্র দিয়ে খাবার জন্যে তো ব্যাস, তার দফারফা, একতা কাপুরের স্টোরি ডিপার্টমেন্টো তাকে বাঁচাতে পারবেনা। জঙ্গলদেশময় ওনাদের জবরদখল ক্লাবঘর ছড়ানো।

    সূর্যশিশির ছোকরাদের স্টকে এত প্রেমরস থাকে যে মেয়েগুলো নিজেদের ছাড়াতে পারে না। যত ছাড়াবার চেষ্টা করে তত সরসরিয়ে প্রেমরস বেরোয়। গোলগাল পাতা কুঁচকে পেয়ালার আদল নিয়ে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ধরে। আলিঙ্গনে মেয়ে পোকারা গলে জল, একেবারে এনজাইম।

    এদান্তি সূর্যশিশির ছোকরারা মেয়ে পোকা ধরবে কি, ইভটীজিং অব্দি করতে পারছে না। তার কারণ কাল বরখা পরা একটা ধনেশ পাখি, ফিবছর, জখনই প্যারা শুখচারা সংসার পাততে আসে ছেলেপুলেদের ভূমিষ্ঠ করার জন্যে, তখনই ফ্‌ৎওয়া ফ্‌ৎওয়া চেঁচাতে-চেঁচাতে ফ্‌ৎফতিয়ে হেঁতালবাবুদের ছাদের অপর দিয়ে উড়ে যায়। ধনেশ ম্যাডাম রাইনোপ্লাস্টি করিয়েছেন।
    ফ্‌ৎওয়াটা কি?
    ফ্‌ৎওয়া হল, ঞ্ছকেউ উড়তে উড়তে হাগতে পারবেন না।ঞ্জ
    ফলে শুধু প্যারা শুখচা নয়, সব পাখিই গাছের ছাদে কমোডে বসে হাগে, আর তা পড়বি তো পড় সূর্যশিশির ছোকরাদের গায়ে মাথায় সব্বো জায়গায়।অসকাল বিকেল অব্দি পুচ-পাচ-পিচ চলতেই থাকে। পোকানিরা কাছে আসবে কি, দূর থেকে নাকটিপে পালিয়ে যায়।

    ধনেশ পাখিটা ফ্‌ৎওয়া দিয়েছে বতে কিন্তু নিজে উড়তে-উড়তে হাগে আর হাগতে –হাগতে অড়ে। তার বৈজ্ঞানিক কারণ হল ধনেশরা হোলটাইমার হুকুম হোল্ডার, যাদের এই সোঁদরবনের কেউ নাকচ করতে পারে না, কেননা তারা পরিবর্তনের সঙ্গেঁ পরিবর্তিত হয়, লিন্ডা গুডম্যান ওনার ম্যানিফেস্টোয় বলেছেন।

    ফ্‌ৎওয়ায় সুর্যশিশির যুবাবৃন্দের নেকনজরে আঘাত লাগালেও, আলকুশি যুবকদের পরোয়া নেই; ওরা বুদ্ধিজীবী, লতিয়ে ওঠে, আর গাঁটে-গাঁটে লোমালা বজ্জাতির বরবটি গজায়। আশপাশ দিয়ে কোনো জীব গেলেই লোম উড়িয়ে তার গায়ে বিলায় খামচি চুলকানি দ্যায়। ওদের কেউ কেউ ছদ্মনামে ব্লগ লেখে। ছদ্মনামের আড়ালে থাকলে কেউ ত আর টের পাবে না যে কোন ব্যাটা আল্কুশি তক্কে তক্কে লুক্কে- লুক্কে বিলাই খামচি দিচ্ছে।

    ওদের একজন, আগে লোম ওড়াবার কারখানায় কাজ করেন, একখানা গান লিখেছিলেন; সিডিটার নাম ঞ্ছ যে পার্টি চাইছেন সে পার্টিই পাবেন। বাদুড়রা, যারা স্তন্যপায়ী পাখি, তারা ঝুলতে-ঝুলতে এই গান গায়:
    চিতান: বিশ্বাস এক দুর্ঘটনা
    বুকপকেটে শ্রেণী
    (দোহার: যে-পার্টি...)ঞ্জ
    পরচিতান: প্রতিরোধী থাকেন জেলে
    কাজুফলের ফেনি
    বরং ভালো
    ভুল-অঙ্কের ডানা
    (দোহার: যে পার্টি...)
    ফুকা: উড়বে হাগবে অ্যালজেব্রার
    বেঠিক উত্তরে
    অম্ল- পিত্ত- কফের চাকে
    বিশ্বাসী আস্তানা
    (দোহার: যে পার্টি...)
    মেলতা: মোড়ল দলের পাড়ার কেউ বা
    আওড়ায় বেঘোরে
    ছাদ ঢালায়ের সমর বাদ্য
    কর্তাবাবার জানা
    (দোহার: যে পার্টি...)
    মহড়া: মেলাবেন তিনি অন্তারীক্ষে
    মোক্ষ একখানা
    (দোহার: যে পার্টি...)
    বাদুড় গান শেষ হলে, কোটর- ফোকর থেকে বেরিয়ে স্তন্যপায়ী পাখিরা যখন মিছিল করে বেরিয়ে গেলেন, বিলাই-খামছি ঝোপের পাশে বনমরিচবাবুর কাঁধে-কোলে-মাথায়-ধুতির ফাঁকে মুখে শুঁড়ের আঁচল চাপা দিয়ে খুব একচোট হাসলেন অ্যানফিলিস পরিবারে বউ আর মেয়েরা। তারপর এইভাবে ওনাদের কথাবাত্রা চলল:
    বর বউ: ঞ্ছবুঝলি সতীন, এক ভাজ চুলকানি দিতে পেরে বিলাই-খামচি দের কি গোমরঞ্জ
    সতীন যার কাটগ্লাসে তৈরি প্লেট রক্ত-কোলায় টইটুম্বুর: ঞ্ছহ্যাঁ গা দিদি, খামচানির সঙ্গে যে দুচার মশক-পেগ মাল খাওয়া যায়, তার জন্যে ত ওদের টেকনোলজি নেই।ঞ্জ

    ছোট বউ, যে বড় বউয়ের শাশুড়ি আর যে কিনা নয় ঘন্টা নয় মিনিট পোয়াতি: জল স্থল অন্তরীক্ষে রাজত্ব করি আমরা, আর মেলাবার ধুয়ো তুলছেন ওনারা।
    বড় বউয়ের ছোট মেয়ে, যে সম্পর্কে তার নাতনি: ঞ্ছআমরা তো মাওবাদী, মেয়াঁওবাদী, কামতাবাদী সকলের সঙ্গে সমানভাবে ব্যবহার করি, তা সে আদিবাসী হোক, আদি নিবাসী হোক বা প্যারা শুখছাদের মতন উড়ে এসে জুড়ে বসা হোক, কোনো তফাত করি না।ঞ্জ ছোট মেয়ে উড়ালস্কুলে মাধ্যমিক পড়ছে বলে, আড়ালে-আবডালে ছেলেদের সঙ্গে টাচি-টাচি কিসি-কিসি খেলে।
    মেজ বউ: ঞ্ছঠিক বলিচিস। উদ্বৃত্ত অংশে যেমন হুলের আদর দিই, তেমনই যাদের উদ্বৃত্ত থাকে না তাদেরও দিই। কে না আমাদের জাতীয় সঙ্গীত শুনতে বাধ্য হয়েছে। পোঁদেও আদর করি, কাধেঁও আদর করি। আর কানে ত করিই। হিন্দু, মুসলমান খ্রিস্টান কাউকে রেয়াত করি না।ঞ্ছ

    বড় বউ: ঞ্ছতাছাড়া আমরা যে জ্বর দি থেকে ত এখনও পার পেলো না। বিলাই খামছি বুদ্ধিজীবী তো একবেলার অ্যালার্জি দিয়েই খালাসঞ্জ
    বনমরিচবাবু মাথা ঝাঁকিয়ে অ্যানোফিলিস গৃহবধুদের বললেন, ঞ্ছদিদিরা এবার যান, রোঁদে বেরোন, সোয়ামি পুতুলদের খোঁজে যান, দেখুন তো কোথায় ফলমুল খেয়ে সাঙ্কিÄক জীবন কাটাচ্ছেন।ঞ্জ
    ঞ্ছসাঙ্কিÄক না হাতি; দেখুনগে, নিজেদের পর্নোগ্রাফিক পেনিস নিয়ে উড়ন্ত সঙ্গমের ক্যারদানি দেখাচ্ছে।ঞ্জ বলল অ্যানোফিলিস বাড়ির পাঁকনন্দিনী যুবতী।
    অ্যানোফিলিস বউ-ঝিরা চলে গেলে, উনি, বনমরিচবাবু,পকেট থেকে ছোট-ছোট ফিকে সবুজ ফুলের তোড়া বের করলেন। মৌয়ালিদের বাড়ির এক কচি বউয়ের অকুস্থলে চর্মরোগ হয়েছে। ব্‌নমরিচবাবুর কাছ থেকে ফুল-পাতা নিয়ে পুড়িয়ে তার ছাই লাগাবে তুলতুলে অকুস্থলে।
    মৌয়ালি বউয়ের অপেক্ষায় বেলা গড়িয়ে-গড়িয়ে গড়িয়ে-গড়িয়ে যখন দ্রাঘিমা থেকে দ্রাঘিমায় পালিয়েছে, দেখা গেল ভনভনিয়ে পনপনিয়ে শনশনিয়ে মশাদের,মাছিদের, বোলতাদের, ভীমরুলদের, উঁইদের, পিঁপড়েদের, আর কাদের কাদের পরিবারের নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত, ভোটার-নাগরিক, বিপিয়েল – এপিয়েল, মরদ- মাগি,ছেলে-বুড়ো, বুড়ি-মেয়ে সবাই মুখে-অংক, ডানায় সন্ত্রস্ত, ঠ্যাঙে – ভীতি নিয়ে পালিয়ে আসছে এদিকপানে-সেদিকপানে।
    - কী ব্যাপার? কী ব্যাপার? উদ্বিগ্ন প্রশ্ন করলেন বনমরিচবাবু, ফুলের তোড়া পকেটে ঢোকাতে-ঢোকাতে।
    -কী হয়েছে? কোনো অঘটন? গায়ের কাঁটা কন্টকিত করতে-করতে জানতে চাইলেন হেঁতাল মশায়।
    -ভীষন ব্যাপার, বিরাট জোচ্চুরি। মুখ থেকে এক পিচ গুটকা-রক্ত ফেলে বললেন অ্যানোফিলিস বাড়ির বর বউ।
    আলকুশি আঁতেল: হয়েছেটা কী?
    সুর্যশিশির মস্তান: কোথায় পালাচ্ছেন দাদা দিদিরা?
    চৈত্র সেল? নাকি লুটের মাল?
    -আরে, টুনটুনি নয়। টুনটুনি ছিল না।
    -ভামরাজার উদ্বৃত্ত অঙ্গ হাপিশ হয়ে পাখি হয়নি। কী ঘেন্না। এ তো ভৌগোলিক ভুল।
    -স্যাঙ্গাতরা ফরম্যালিতে চুবিয়ে সে অঙ্গ সংরক্ষণ করেছে। গবেষণা হবে। চিরকুমার অমত্যের দাবি।
    -তাহলে তাতে ভয়ের কি? হোক গবেষণা।
    -হাওয়া বেরিয়েছে টুনটুনি নয়।
    -হ্যাঁ। টুস্কি নয় বেদম বাতাস।
    -না, না ,ঝড়, ঝড়।
    -নিম্নচাপকে ঘিরে ফেলেছে উচ্চচাপ।
    -ঝড়ের গর্তে ঘুর্ণি।
    -ঘুর্ণি ঘিরে ধুলোবালি আর বরফকুঁড়ো।
    -না , না, এল নিনিভ।
    -জলস্তম্ভ খাড়াখাড়ি নয়, আড়াআড়ি।
    -আসলে ভামরাজার উদ্বৃত্ত অংশ উনি বেঁচে থাকতেই পচে গিয়েছিল। টের পেয়েও চেপে রেখেছিলেন।
    -নয়তো ময়ুর কিংবা দোয়েল বেরোত।
    -পালাল, পালাল।
    ঝড় হাওয়া সত্যিই এসে পড়ল। দল বেঁধে ডানা মেলল প্যারা শুখছার দল। আনন্দে ডানা মেলল টিয়ে বাবুই খুন্তে বক মুনিয়া শালিখ পায়রা তিতির কোকিল কাঠঠোকরা ফিঙ্গে ক্যানারি।
    এতকালের বদ-অভ্যাসে হেঁতালবাবুর শেকড় অনেক দূর অব্দি গজিয়েছে। তবু পালাবার চেষ্টা করলেন। পারলেন না। পায়ে পা জড়িয়ে আছড়ে পড়লেন।
    সূর্যশিশির চ্যাংড়ারা আর আলকুশিরা নিজের নিজের শেকড়- বাকড় যতটা পারে নিয়ে পালাতে লাগল।

    ছবি- সায়ন কর ভৌমিক
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ইস্পেশাল | ০১ অক্টোবর ২০১০ | ৮৩০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল প্রতিক্রিয়া দিন