এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  গপ্পো

  • ১৬ ডিসেম্বর ২০১২

    যশোধরা রায়চৌধুরী লেখকের গ্রাহক হোন
    গপ্পো | ১৪ অক্টোবর ২০১৬ | ১০৯৮ বার পঠিত
  • রুমেলার গল্প

    রুমেলা গোয়া গেছে আকাশ আর নিরুকে নিয়ে।

    আকাশ হল বিহারি বর, রুমেলা বাঙালি। দুজনেই আইটির। আই টির মধ্যে আকাশ হল একেবারে বিশাল ব্যাপার। এত ট্যালেন্টেড মানুশ রুমেলা কম দেখেছে। প্রচন্ড রকমের বুদ্ধিমান ও। মেধায় চূড়ান্ত। 

    রুমেলার আকাশকে নিয়ে সমস্যা নেই। সমস্যা আকাশের বন্ধুর ফ্যামিলিকে নিয়ে।  ঐ মেয়েটা  একমাত্র চাকুরে নয়, ও গৃহবধূ। বাকি সবাই বিশাল বিশাল আই টি ক্যাট। কিন্তু সবচেয়ে জিতে গেছে যেন আকাশ আর নিশান্তের চোখে  সুন্দরী ওই মেয়েটাই, এত ভাল সাজতে জানে। কী প্রপার ও। কী সুন্দর ওর পা, হাত। গাল, নাক। তা ছাড়া ও ভীষণ গোছানো। 

    আকাশের বন্ধু নিশান্ত ওর বউকে নিয়ে পাগল। প্রশংসা শুরু করলে থামতে পারেনা। 

    রুমেলার নিজেকে ইন্যাডিকুয়েট লাগে এতে। যাহোক। লাগুক। এসেছে তো দু চার দিনের জন্য বেড়াতে। 

    আকাশ রুমেলারা যেখানে এসে আছে সেটা গলার সোনার ঘন্টির মতন। এ হল সারা বছর টাকা দিয়ে ঘর পোষা। কর্পোরেট মেম্বারশিপ নাম। একটা বড় নামী কোম্পানি বড় হোটেলের হল ঘরে বসিয়ে জকিয়ে পয়সা নিয়েছে, সারাবছর সারাভারতের যে কোন জায়গায় সে কোম্পানির নানান সব উদ্ভট কটেজে থাকা যাবে। কখনো মালদিভ ত কখনো চেন্নাই ত কখনো গোয়া। 

    নিয়ম করে বছরে দুবার বেরোয় ওরা। সবটাই ঠিক ওদের জীবনের মত। মানে মাপে কাটা, এসি করা, ঠান্ডা, নির্ঝঞ্ঝাট এবং প্রচন্ড নিয়মমাফিক। 

    এবারও গোয়া এসে সেরকম  থাকা।   প্লেনের উড়াল নির্ঝঞ্ঝাট, গাড়ির ভাড়া নির্ঝঞ্ঝাট। মদ্যপান, নরম তুলোর  মত বিছানা, বাথরুমে সাবানের জায়গায় সাবান,  তোয়ালের জায়গায় তোয়ালে। নিপুণ হোটেল। মানে হোটেল না। আলাদা আলাদা কটেজ। নিচু নিচু।  সুন্দর আর মখমল সাজানো। 

    সে কটেজে  কিন্তু রান্নার লোক নেই। কিচেনেট আছে। নিপুণ মাইক্রোওয়েভ, ইনডাকশন, দুটো ওয়াইন গ্লাস, দু সেট থালাবাসন ক্রকারি কাটলারি। বড় বোল। 

    এটা হোটেল না, কটেজ। 

    তাই বউ পরোটা বানায়। কিনে কিনে হাবিজাবি খাবার খেতে নেই এখানে। নিপুণ ঘরের খাবার প্রাপ্য।  

    ছোট ফ্রিজ আছে। ফ্রিজে ভরে রেখেছে বিয়ারের ক্যান কোল্ড ড্রিঙ্ক চকোলেট, কুকি, ফল। ল্যাভিশ। কিন্তু বউ পরোটা বানায়। 

    রুমেলা বেড়াতে গিয়ে পরোটা বানাতে লাগল। বর ঘুমোতে লাগল। 

    বাইরে বেরোবার কথায় সবার আপত্তি। কী হবে সমুদ্রে গিয়ে। গায়ে বালি লেগে যাবে যে। 

    ওদের আবার কাপড়চোপড় কাচা হয় ফেব্রিক সফটনার দিয়ে। এতটাই আতুপুতু। 

    বাচ্চার গায়ে বালি লেগে যাচ্ছে। অসুবিধে হচ্ছে। অন্য ফ্যামিলিটার। যারা ওদের বন্ধু। 

    এমতাবস্থায় সমুদ্রে গিয়ে রুমেলা বেগানা হয়ে গেল। আনন্দে আত্মহারা। সালোয়ার কামিজ পরেই জলে নেমে গেল একেবারে। কোমর অব্দি ভিজে লাট। 

    ফিরে এসে, ছেলেকে ডেকে নিয়ে, জুতো মোজা ছাড়িয়ে,  সমুদ্রের ভেতরদিকে চলে যাচ্ছে। আকাশ বকছে। ক্যা কর রহী হো! মত যাও। 

    ইয়ে মত করো, উও মত করো – সারাক্ষণ!

    ঘরে গিয়ে এসি তে রিল্যাক্স কর।

    আর পরোটা বানাও।

    তারপর একদিন ভোর বেলা রুমেলা গেল মাংস কিনতে। মাংস কিনতে গিয়ে দেখে মাংসের দোকানের পেছনেই একটা মিস্ট। কুয়াশাবৃত জায়গা। সেই কুয়াশার পেছন থেকে গম গম করে আসছে সমুদ্রের শব্দ।

    ওখানে কী আছে?

    ওদিকে কী আছে। 

    রুমেলা জিগ্যেস করে জানতে পারে, ওই কুয়াশার আড়ালেই বিচ। 

    ওদিকেই সমুদ্র। ওদিকেই! 

    চিকেন কিনে ফিরে আসে। চিকেন ধুয়ে মুছে মশলা করে চাপিয়ে দেয়  রান্না। গাদা গাদা পরোটা বানিয়ে ফেলে। চিকেন পরোটা বানাতে বানাতে বেলা হয়। 

    মাথার মধ্যে কুয়াশা। আর গম গম শব্দ। 

    ওরা খায়। খেয়ে বর ঘুমিয়ে পড়ে, বাচ্চাও ঘুমিয়ে পড়ে।

    রুমেলার মাথার মধ্যে গম গম শব্দ। সমুদ্রের। 

    চারটের সময় রুমেলা চুপি চুপি পা টিপে টিপে বেরিয়ে যায়। 

    ভুলে যায়, ফ্রয়েডিয়ান স্লিপ, চশমা নিতে, মোবাইল নিতে।

    চারটেতে হাঁটতে হাঁটতে কুয়াশার মধ্য দিয়ে ও জঙ্গলে ঢোকে। দেখে ঘন জঙ্গল। কোথাও কেউ নেই। সুঁড়ি পথ আছে শুধু। 

    সেই সুঁড়ি পথ অনন্ত কাল ধরে চলে। শুধু দূরে সমুদ্রের গর্জন শুনে শুনে যাওয়া। সমুদ্রের গর্জন শুনে শুনে পথ চিনে নেওয়া। শব্দভেদী বাণের মত এক টানে জঙ্গল ভেদ করে চলতে থাকে রুমেলা। 

    যেতে যেতে যেতে সূর্য অস্তাচলে নামতে থাকে। রুমেলা টের পায় ভুল হয়ে গেছে খুব। চশমা আনা হয়নি মোবাইল আনা হয়নি। রুমেলার টেনশন বাড়ে। বাড়িতে ওরা চিন্তা করবে, ফিরে গেলে আকাশ বকবে খুব।

    তারো আগে, সমুদ্রটায় পৌঁছনো দরকার। 

    হঠাৎ সমুদ্রটা সামনে খুলে যায়। সামনে দেখতে পায় তরঙ্গ হিল্লোল। সূর্যাস্ত দৃশ্য, আরব সাগরের জলে লাল টুকটুকে গল্প-গল্প সূর্য পাটে বসছেন। 

    সে পাথরের ওপর বসে,  দেখে। ইতস্তত ছড়ানো পাথর। 

    ইতস্তত বালি। অনেক ঝিনুক। 

    ছেলের জন্য ঝিনুক কুড়িয়ে চুন্নিতে বেঁধে নেয় রুমেলা। 

    তারপর ভাবে অন্ধকার হয়ে এল, এখন তো জঙ্গল দিয়ে ফেরা যাবে না। মানুষজনও চোখে পড়ে না। মানুষ কোথায়?

    ওই দূরে মানুষ দেখা যায়। 

    ও এগিয়ে যায়। 

    ও হরি, এটা একটা সায়েবদের রিসর্টের প্রাইভেট বিচ। তাই এত ফাঁকা, সায়েবরা উঠে গেছে হয়ত একটু আগেই। এখন দেখে ছাতার তলায় বসে তারা খানা পিনা করছে। 

    সে অস্বস্তিতে পড়ে, এগিয়ে যায়, কারুর দিকে তাকায় না। একটি মেয়ে তাকে দেখে। বিদেশিনী। শর্টস আর ঝলঝলে গেঞ্জি গায়ে। পোড়া বাদামি হয়ে যাওয়া শ্বেত চামড়া। 

    মেয়েটি ওকে হাত নেড়ে হাই বলে। রুমেলাকে দেখে বুঝতে পারে ও একা, বেমানান এইখানে। কোনভাবে এসে পড়েছে। 

    রুমেলা ওকে জিগ্যেস করে, শহর, মূল ভূমি কোনদিকে। মেয়েটি ওকে দেখিয়ে দেয় হাত বাড়িয়ে। রেসর্ট থেকে বেরোলেই পাবে।

    রেসর্ট থেকে বেরিয়ে পাকা রাস্তা পায়। এবার এই পাকা রাস্তা ধরে ধরে তার নিজের রেসর্টে ফিরে যেতে হবে। 

    সে হাঁটতে শুরু করে। অন্ধকার এখন গাঢ়তর। হঠাত নিজেকে খুব একা লাগে। নিজেকে খুব মেয়ে মেয়ে লাগে। এখানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকে সে। হঠাৎ খুব খুব গা ছম ছম করতে থাকে।

    পাশ দিয়ে সোঁ সোঁ করে করে বন্ধ গাড়ি চলে যাচ্ছে। কেউ থামছে না, আবার থামলে তো আরো বিপদ। 

    বাইকে লোক যাচ্ছে। সোঁ ঘড় ঘড় ঘড়াৎ, পিছলে অন্ধকার কেটে কেটে  হেডলাইটস আসছে আর যাচ্ছে। চার চাকার ডবল রক্ত চক্ষু। আর দু চাকার একচক্ষু। 

    সবটা সুররিয়ালিস্টিক, অদ্ভুত, অজানা। নাঃ ঠিক হয়নি এভাবে আসা। 

     

    অসম্ভব দ্রুত হেঁটে ও একটা চলমান গ্রুপকে ধরে। ট্যুরিস্ট, সাদা চামড়া। এক দল, হেঁটে হেঁটে ও রাস্তায় যাচ্ছে। 

    ও বলে এক্সকিউজ মি। 

    তাদের মধ্যে সবচেয়ে পেছনে যে ছিল, সেই পুরুষটা, ওর দিকে আড়চোখে দেখেই, হাতটা বিশ্রিভাবে নেড়ে হন হন করে হাঁটে। ওর বডি ল্যাংগুয়েজ বলে দেয়, আমাদের পিছু ছাড়। এখানে কিচ্ছু হবে টবে না। 

    যেন ভিখিরি ও। অথবা ওকে কি ওরা বেশ্যা ভাবল? ধান্ধায় বেরোন মেয়ে? সায়েবরাও ভাবে এমন?

    অপমানে কান ঝাঁ ঝাঁ করে ওর। 

    ও আবার স্লো হয়ে আসে। রাগে গা জ্বলে। তোমরা এসেছ আমার দেশে মজা করতে। ফুর্তি করতে। 

    ইউ লাভ মাই কান্ট্রি বাট নট মাই পিপল।

    এমন সময়ে পেছন থেকে একটা বাইকের হর্ন শোনা যায়। রুমেলা চমকে ওঠে। প্রায় আঁতকেই ওঠে। 

    ও পেছনে তাকায়। বাইকটা এসে ওর পাশেই থামে। 

    সেই মেয়েটি। যে রেসর্টে ওকে পথ বাতলেছিল।

    মেয়েটি ওকে দেখে হাসে। বলে, আই থট ইউ আর লস্ট। আমার নাম আলেকজান্দ্রিয়া। আমি সার্বিয়ান। চলো তোমাকে তোমার হোটেলে ছেড়ে দিচ্ছি। 

    বুক ফাঁকা হয়ে যায়। কান্না আসে। গার্ডিয়ান এঞ্জেল ওকে নিয়ে চলে।

    ======================================================

    নিরাপদে ফিরে আসার পর আলেকজান্দ্রিয়ার সঙ্গে হাত মেলায় রুমেলা। 

    মাথায় রুমাল বাঁধা মেয়ে আবার বাইক হাঁকিয়ে চলে যায়। 

    দুরু দুরু বুকে রুমেলা ঘরে ঢোকে।  ঢুকে দেখে সার দিয়ে বসে আছে ওর বর আকাশ, বাচ্চা, নিশান্ত, নিশান্তের বউ,  বাচ্চা। 

    সকলেই চুপ। থমথমে মুখ।

    কিন্তু কেউ ওকে বকে না। 

    ওরা তাজ্জব। হতবাক।

    ওদের কোন প্রশ্নও নেই। 

    এ কেমন মেয়ে যে সকাল সকাল চিকেন কিনে রেঁধে, ৩০ টা পরোটা বানিয়ে সবাইকে খাইয়ে তারপর হাওয়া হয়ে যায় এভাবে?

    ======================================================

    রাতে শুয়ে বরকে ও বলে ওর এক্সকার্শনের গল্প।

    বর বলে, তুমকো কুছ হো জাতা তো হাম ক্যা করতে? অ্যায়সে মত যাও। 

    ও শুয়ে শুয়ে ভাবে কালও যাব। একা। অন্য কোন দিকে। দিনে দিনে যাব। দিনে দিনে ফিরব।  ফোন নিয়ে যাব। কিচ্ছু হবে না। 

    পরদিন সকালে টিভি জুড়ে একটাই খবর দেখে ওরা। দিল্লির রাস্তায় রাত নটার সময়ে একটা মেয়ে আর তার বয়ফ্রেন্ড লাইফ অফ পাই সিনেমাটা দেখে ফেরার সময়ে একটা ফাঁকা চার্টার্ড বাসে লিফট নিয়েছিল। সে বাসের ড্রাইভার ও খালাশি সহ ছজন, যার মধ্যে একটি ছেলের বয়স ১৪...মেয়েটিকে শুধু ধর্ষণই করেনি, অমানুষিক অত্যাচার করেছে। লোহার শিক যোনিতে ঢুকিয়ে দিয়ে খুঁচিয়ে বের করে দিয়েছে তার অন্ত্র... ছেলেটিকে মেরে পাটপাট করেছে।  তারপর নগ্ন মেয়েটিকে, এবং ছেলেটিকে, ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে গেছে পথে। দিল্লির রাস্তায় জানুয়ারি মাসের অপার্থিব ঠান্ডায় নগ্ন রক্তাক্ত মেয়েটি পড়ে থাকার দৃশ্যটা ভেবে শিউরে ওঠে ওরা।  

    পর পর কয়েকটা দিন শুধু ওই খবর। 

    রুমেলার আর একলা বেরোন হয়না। 

    বন্ধুরা চলে যায় আগে, ফিরে, ব্যাঙ্গালোরে। বাচ্চার র‍্যাশ হচ্ছে। বোধ হয় বালি থেকে। 

    গোয়ার সমুদ্র পড়ে থাকে, তার গর্জন ও ঢেউ সমেত। 

    কদিন বাদে তো ওরাও ফিরে গেছে। ওদের দামি মেম্বারশিপটা ছাড়িয়ে দিয়েছে রুমেলা। বলেছে আকাশকে,  তুমি ইউটিলাইজ কর না তো রাখো কেন। বাধ্যতামূলকভাবে প্রতি বছর একটা না একটা ট্যুরিস্ট স্পটে যাওয়া। আর কটেজে থেকে, নিজেরা রেঁধে, কিছুটা ঘুরে কিছুটা ঘুমিয়ে ফিরে আসা। ধুস। 

    ২ 

     মানসের কথা

    মেয়ে বড় হয়ে গেলে যৌবনের সব পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে হয়। 

    মানস বলল। মনে মনে। 

    যৌবনের পাপ। কৈশোরের পাপ। শৈশবের পাপ।

    সেই যে বাবার আলমারির একেবারে তলার তাকে পুরনো গল্পের বই ঘাঁটতে ঘাঁটতে প্লাস্টিক মোড়া এক গোছা বই পেয়েছিল, পাতলা হলুদ মলাট, জ্যালজেলে পাতা... ছেঁড়া প্রায়। 

    অক্ষরগুলো প্রায় ওর চোখের উপর ঠিকরে পড়েছিল কিন্তু সেই পুরনো বইয়ের। বৌদি দিদিমা, মা, ভাইয়ের বউ, বেশ্যা সব এক হয়ে গেছিল সে বইয়ের পাতায় পাতায়। সব মেয়ে এক একটা যৌনপুতুল ... আর তীব্র নিম্ফোম্যানিয়াক। 

    তারপর কত ব্লু ফিল্ম। পেরেক হাতুড়ির দৃঢ় ও সজোর ঠোকাঠুকির মত অনেক ঠোকাঠুকির দৃশ্য। কত না ভিডিও ছবি, ভিসি আরে। সে যৌবন এখন প্রতিশোধ নেয়। 

    নব্বই দশকের মাঝ রাত্তিরের তেয়াত্তরটা টিভি চ্যানেল থেকে বেরিয়ে আসা, ঠিকরে চোখে এসে লাগা বে ওয়াচ... সেই সব দীর্ঘাঙ্গী চপলচরণা চকিত প্রেক্ষণা, শরীরে গোল্ডেন গোল্ডেন বালির গুঁড়ো লাগানো সব বিকিনি ক্ল্যাডদের সারি। প্রতিশোধ নেয়। 

    ট্রেনে সেবার জিন্স পরা মালবীকে বলেছিল, এটা ট্রেনের জন্য ঠিক পোশাক না। সেটা ছিল হাওড়া হাতিয়া। রাঁচি যাচ্ছিল। ক্লাস টুয়েল্ভের মালবীকে ডেকে চাপা গলায় বলল, শোন এ পোশাক প্লেনে আগের বারের ছুটিতে মুম্বই থেকে আসার সময় ঠিক ছিল। এখানে ঠিক নয়। 

    কেন ঠিক নয়?

    কেননা এটা ট্রেন। প্লেন না। এখানে জনগণ আছে। এখানে লোকগুলোকে দেখ। দে আর নট প্রিপেয়ারড। নট রেডি। আর তুইও খুব রোগা পাতলা না। বেশ ডেভেলাপড বডি। 

    খুব খারাপ পেল মালবী। ওর ওপর রেগে গেল। বাপি কী সব ডার্টি কথা বলছে, মা দেখ। মাথা ঝাঁকাল।শুধু মালবী না, মানসের বউ মাধবীও বেজায় খেপে লাল।

    তুমি এরকম একটা নোংরা কথা বললে? নিজের মেয়েকে? ছিঃ। 

    মানস কাঁচুমাচু হয়ে মাধবীকে বলল, একটা জিনিশ বোঝ।  সবকিছু সব জায়গায় পরা যায়না। 

    মাধবী গুম হয়ে গেল। তারপর কেটে কেটে বলল, এক কালে খুব মেয়েদের ঝাড়ি মেরেছিলে, না? এই ট্রেনশুদ্ধু পুরুষ আসলে তোমারই মত, তাই তুমি ওদের মন বুঝতে পারছ। আমি দেখছি ত, সবকটা চোখ ওর পা দুটোকে চেটে খাচ্ছে। হুঁ:, নিজের জীবনে যে যে পাপ করেছ, এখন বুঝতে পারছ তো সব কেমন ফেরত আসে?

    সেবার চুপ থাকল মানস। তখন মালবী টুয়েল্ভে পড়ে। তবে দীর্ঘাঙ্গী। খুব তাগড়া মেয়ে। পড়াশুনোতেও ভাল। তেমনি ঝটাঝট মু ফট কথা। স্মার্ট। 

    মানস মেয়ে বড় হয়ে গেছে ভেবে বেশি কিছু বলত না মেয়েকে। কলেজে পড়ছে। নিজেকে ম্যানেজ করতে নিশ্চয় পারে।  তা ছাড়া একসঙ্গে বেরোয়ই বা কবার। বেরোনর সময়ে বেশি মুখ খুলতে গেলেই মাধবীর হুংকার। বিশ্রি একটা ফিলিং। সব রাস্তার লোক, পোটেনশিয়াল রেপিস্ট, পোটেনশিয়াল মলেস্টার, তাদের সঙ্গে নিজেকে এক সারিতে বসতে দেখতে হবে। বউ তাকে বসাবে। 

    একটা ব্রিলিয়ান্ট স্কলার সে। কত প্রাপ্তি জীবনে। সম্মানিত অধ্যাপক। বেসু –তে পড়ায় এখন। প্রায়ই যায় মুম্বই আই আই টি, রাঁচির বি আই টি মেসরায় ক্লাস নিতে। ঘোরেও ওরা বেশ। মাধবী তো সংগ ধরবেই প্রতিবার। ওর কাজ হয়, কিঞ্চিৎ প্রতিপত্তি, অর্থপ্রাপ্তিও। আর মাধবীর হয়ে যায় বেড়ানো। আজকাল মালবী অবশ্য অতটা যেতে চায়না। নিজের মত থাকে। 

    একটা সময়, ২০১২র শেষাশেষি। বেশ ভাল হালকা ফুলকা ওয়েদার।  শীত পড়েইনি।  ১৪ ডিসেম্বর। খড়্গপুর আই আই টি তে ওর ক্লাস নেওয়া ছিল। সপরিবারে গেল সেবার। একটা পিকনিক গোছেরই হয়ে যাবে। ছুটিছাটা চলছে। মেয়ের কলেজ বন্ধ। 

    খুব মজা হল। বেশ ঘুরল কাছাকাছি সব, আই আই টিতে প্রচুর সমাদর। গেস্ট হাউজে খাওয়া দাওয়া। সব। ফেরার দিন দুপুরে বেরোন হল। 

    মেয়ে নিশ্চিন্তে জামাকাপড় বাছল।  হাইওয়েতে বন্ধ বোলেরোতে করে ট্র্যাভেল ত। চিন্তা নেই। প্রাইভেসি। লাইক হোম।  

    মালবী হটপ্যান্টস পরল। মানস ওকে বলে শর্টস।  বাড়ি থেকে বেরিয়েই মানসের মন বলছিল সব ঠিক হচ্ছে না। কেন শর্টস পরল মেয়েটা। 

    কোলাঘাট গিয়ে ধাবায় চা আর স্ন্যাক্স খাওয়া হবে ঠিক হল। হঠাৎ ঘটর পটর শব্দ। গাড়ি খারাপ হয়ে গেল। 

    দিনেদ্দিন কলকাতা পৌছনোর কথা ছিল। গাড়ি দাঁড়াল হাইওয়ের পাশে। সূর্য অস্ত যায়। ক্রমশ সাদা হয়ে আসে পাশের মাঠ ঘাট। কুয়াশার একটা পাতলা লেপকম্বল যেন, গুঁড়ি মেরে মাঠের ওপর নামছে, মুড়ে ফেলছে। 

    আকাশের রং ব্লু ব্ল্যাক কালির মত, মলিন এবং খুব খারাপ ধরণের মেজাজ খিঁচড়ে দেওয়া। 

    ক্যাবলা ড্রাইভারটি কিছু বুঝতে পারছে না কী করবে। মোটামুটি বক্তব্যহীন। নেমে খুটুর খুটুর করছে। মোবাইল ফোন নিয়ে একের পর এক ফোন করে যাচ্ছে মানস। ফ্র্যান্টিকালি।

    কালেভদ্রে একটা দুটো গাড়ি পাস করছে। কাছেপিঠের কোন গ্রামট্রাম থেকে একটাও লোক ছিটকে আসতে পারে তো সাইকেলে চেপে। একটু সাহায্য নেওয়া যায় তো তাহলে। খবর পাঠানো যায় কাছাকাছি কোন মেকানিকের দোকানে।

    খড়্গপুর থেকে এতটাই এগিয়ে আসা হয়েছে যে ওদিকে আর তেমন সুবিধে হবে না। ফোন করছে বটে। 

    হঠাৎ দরজা খুলে বেরিয়ে আসে রাস্তায় ছোট প্যান্ট পরা মালবী। 

    ঈশ্বরের দয়ায় গায়ের রং ফর্সা। বেশ ফর্সা। 

    ওই আধো ছায়া অন্ধকারে দেখা যায়, কদলীকান্ডের মত দুই ঝকঝকে উরু তার। মালবী লম্বায় বেশ ভাল হাইটের মেয়ে। মানস দেখে হুবহু এক মদের কোম্পানির মডেলের মত সাবলীল অনায়াস ঢিলেঢালা ভাবে বেরিয়ে হাইওয়ের নয়ানজুলির দিকে নেমে যাচ্ছে মালবী। হাত পা স্ট্রেচ করে করে নিজের এতক্ষণের বসে থাকার জড়তা ছাড়িয়ে নিচ্ছে।

    পেছনে প্রায়ান্ধকার একটা পোঁটলার মত নেমেছে মাধবীও। কিন্তু তাকে প্রায় দেখাই যাচ্ছে না ডার্ক রঙের শাড়ি পরে থাকার জন্য। 

    চীৎকার করে ওঠে মানস, টিংকু! টিংকু! এক্ষুণি গাড়িতে ওঠো। এক্ষুণি। একদম বাইরে থাকবে না। 

    মেয়ে অবাক হয়ে হাত ছড়িয়ে তাকায়? ওয়াট দ্য? বাপি তুমি এভাবে রিঅ্যাক্ট করছ কেন?

    আর ঠিক এই সময়েই খড়্গপুরের দিক থেকেই আসা একটা এস ইউ ভি এসে ঘ্যাঁশ করে দাঁড়ায় ওদের গাড়ির খুব কাছে। মালবীর হাতখানেকের মধ্যে। মানস তখনও মালবীদের থেকে বেশ কয়েক গজ দূরে।

    সারা আকাশ তার মাথার ওপর ভেঙে পড়ে।  মানস দ্রুত ছুটে আসতে থাকে মেয়ের দিকে। 

    এই অন্ধকার হাইওয়েতে সে এক অসহায় বাপ। মেয়েটাকে তুলে নিয়ে গেলেও কিসসু করতে পারবে না ও। 

    বাবা হওয়া খুব কঠিন। বুকের ভেতরটা ধক ধক করে ওঠে নিরাপত্তাহীনতায়। 

    আর সারা জীবনের সব অসভ্য কথালেখা বাথরুমের দেওয়াল ফিরে আসছে ওর কাছে।  ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময়ের সেই সব চুটকি, চটুল  গল্প, গানের প্যারডি... রবি ঠাকুরের। সুন্দর বটে তব অঙ্গদুখানি...

    কাল অব্দি ওয়াটস্যাপে পাঠানো ইতিউতি জোকস। 

    তীরের মত, চোখা, ফিরে আসছে...মানস কী করে বাঁচাবে। বাঁচবে...নিজের মেয়েকে?


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • গপ্পো | ১৪ অক্টোবর ২০১৬ | ১০৯৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • avi | ***:*** | ১৪ অক্টোবর ২০১৬ ০৪:১০81890
  • অসম্ভব ঋজু। স্তব্ধ হয়ে গেলাম।
  • Nina | ***:*** | ১৪ অক্টোবর ২০১৬ ০৯:২০81891
  • বড় ভাল লেখা!
  • কৌশিক দত্ত | ***:*** | ১৪ অক্টোবর ২০১৬ ১১:২৫81889
  • একজন কবি যে গদ্যের ভাষা এতটা নির্মেদ রাখতে পারেন, বিশ্বাস করা কঠিন। অনেকদিন ধরে লেখিকা তাঁর গল্পগুলোর মধ্যে মেয়েদের কথা সাবলীল এবং আপাত সাধারণ ভাবে বলে যাচ্ছেন, যা খুব জরুরি কাজ।
  • d | ***:*** | ১৭ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৫৮81892
  • প্রথমটা প্রচুর আশা জাগিয়ে এগোলেও শেষদিকে কেমন ধেবড়ে গেল।

    দ্বিতীয়টা খুব ভাল। খুবই ভাল।
  • :) | ***:*** | ১৭ অক্টোবর ২০১৬ ০৫:৩৮81893
  • খড়গপুরে ডিসেম্বেরের মাঝামাঝি ঠান্ডা পরে না?

    হয়ত হটপ্যান্টের সাথে লেদার বুটস আর জ্যাকেট পরা হয়েছিল, লেখিকা সেটা জানাতে ভুলে গেছেন ঃ)

    "মালবী লম্বায় বেশ ভাল হাইটের মেয়ে।" ভালো গদ্য ঃ)
  • ভবভূতি ভট্টাচার্য | ***:*** | ১৯ অক্টোবর ২০১৬ ০৬:২৪81894
  • যশোধরা আসলে বড় কবি না গল্পকার এ দ্বিধায় পড়ে যাই মাঝে মাঝে। যেমন, এ গল্প খানি পড়ে। বড় পরিপক্ক কলম। ভালো লাগলো পড়ে, এটা জানাই।
  • Deepro Roy | ***:*** | ২৬ অক্টোবর ২০১৬ ০২:১৭81895
  • প্রথমটি খুউব ভাল লাগল। দ্বিতীয়খানির শেষ ধাক্কা দেয় ভাবনাচিন্তাকে।
  • somen basu | ***:*** | ২৬ অক্টোবর ২০১৬ ০৮:৩৮81896
  • দুটো গল্পই বেশ ভালো। কিন্তু যেন মিলমিশ হল না। :-(
  • de | ***:*** | ২৭ অক্টোবর ২০১৬ ০৬:২৫81897
  • প্রথমটা যেন শেষ হয়নি -

    শেষেরটি খুবই ভালো -
  • Abhishikta | ***:*** | ০৪ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:০২81898
  • সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এত পরোটা বানায় কেন? বিহারী বর বলে? গল্পের মাঝখানে বেশ আশা জাগিয়ে কোথায় যেন হারিয়ে গেল। দ্বিতীয় গল্প টি মস্তিষ্কে অনুরণন জাগায়
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে মতামত দিন