ছোটবেলায় একটা প্রবাদ শিখেছিলাম, নেভার বাইট মোর দেন ইউ ক্যান চিউ। বিজেপির এখন সেই অবস্থা।যতটা গিলতে পারে তার থেকে বেশি মুখে ঢুকিয়ে ফেলেছে। এখন না পারছে গিলতে, না পারছে ওগড়াতে। এনআরসি চূড়ান্ত তালিকা বেরোনোর পর দেখা গেল ১৯ লক্ষ লোক তালিকাচ্যুত হয়েছে। সমস্যা এটা নয়। সমস্যা হলো (বিজেপির হিসেব অনুযায়ী ১৯ লক্ষের মধ্যে ১২ লক্ষ হিন্দু বাঙালি) ১৯ লক্ষ লোককে নিয়ে এখন কি করা হবে, তাই নিয়ে। আপাতত তাদের গন্তব্য ফরেনার্স ট্রাইবুনাল। সেখানে আবার একদফা বিচারের নামে, নাগরিকত্বের নামে, নথির নামে, প্রহসন চলবে। সবকিছুর শেষে ১৫ লক্ষ লোকও যদি বিদেশি হিসেবে বা অনাগরিক হিসেবে চিহ্নিত হন, তখন তাদের নিয়ে সরকার কি করবে, বিজেপি কি করবে, সারা ভারতবর্ষের মানুষ কি করবে, কেউ জানে না। গোয়ালপাড়া জেলার মাটিয়ায় বৃহত্তম ডিটেনশন সেন্টার তৈরি হতে চলেছে তাই নিয়ে মানুষের উৎকণ্ঠা এবং উদ্বেগের শেষ নেই। এই ডিটেনশন ক্যাম্পগুলি হিটলারের কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের সঙ্গে কতটা তুলনীয় তাই নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। কিন্তু কেউ এটা নিয়ে কোন কথা বলছেন না যে এই ডিটেনশন সেন্টার এ মাত্র ৩০০০ বিদেশীকে রাখা সম্ভব। এরকম নাকি আরও দশটি ডিটেনশন সেন্টার তৈরি হবে সারা আসাম জুড়ে। প্রশ্ন হচ্ছে যে ১১ টি ডিটেনশন সেন্টারে তাহলে মাত্র ৩৩ হাজার চিহ্নিত বিদেশিকে রাখা যাবে। কিন্তু খাতায়-কলমে বিদেশীর সংখ্যা (ট্রাইবুনাল থেকে যদি চার লক্ষ ও ছাড়ান পায়) তাহলে কমপক্ষে ১৫ লক্ষ লোক মানুষ। এদের কোথায় রাখা হবে? এরা বিজেপির গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই এমন কোন পদ্ধতি দরকার যাতে দুদিক থেকেই ফায়দা তোলা যায়। এক, ঘাড় থেকে ১৯ লক্ষের দায়িত্ব নামিয়ে দেওয়া। দুই, যেনতেন প্রকারেণ নিজেদের এজেন্ডায় নিষ্ঠ এবং অবিচল থাকা। কিন্তু কোনো জাদুমন্ত্রে সেটা সম্ভব?
আসামে এনআরসি প্রক্রিয়া যখন গতি প্রাপ্ত হচ্ছে, ধুরন্ধর বিজেপি ঠিক তখনই এই বিপদের আগাম অনুমান করেছিল যে, এই প্রক্রিয়ায় শেষ পর্যন্ত চিহ্নিত এবং শিকড় উৎপাটিত মানুষের দায়িত্ব এসে পড়বে দল এবং সরকারের ঘাড়ে। যে মুসলিম বিদ্বেষে সংঘ পরিবার এতোকাল নিজেদের প্রস্তুত করেছে, ফসল কাটার মুখে তা নিয়ে লেজেগোবরে হওয়া কখনোই সংঘ পরিবারের কাম্য ছিলনা। তারা তখন থেকেই বুঝতে পারে যে প্রথমত এই বিপুল সংখ্যক চিহ্নিত বিদেশীদের পুশব্যাক করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব নয়। উপরন্তু দেশের ধর্মবিদ্বেষী আবহাওয়ায় এটা খুবই সম্ভব, যে অঞ্চলে যে ধর্মের বা গোষ্ঠীর প্রাধান্য বেশি তারা বিপরীত ধর্মের মানুষদের তালিকাচ্যূত করার প্রয়াস চালাবে। ফলে নিয়ন্ত্রণহীন এক প্রক্রিয়ায়, মূল এজেন্ডা অর্থাৎ শুধুমাত্র মুসলিম বিতাড়ণ করা সম্ভব নয়। প্রচুর পরিমাণ হিন্দুর নাম এর মধ্যে ঢুকে যেতে পারে, যার দায়িত্ব শেষ পর্যন্ত দলের উপরই বর্তাবে। এ ছাড়াও একটি বিশাল চিহ্নিত বিদেশি জনগোষ্ঠীকে দেশের মধ্যে রেখে দেওয়ার বিপদ সম্পর্কে সাধারণ মানুষ ওয়াকিবহাল না হলেও, বিজেপি এই ব্যাপারে সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত ছিল। উপরন্তু, দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত মানুষদের উৎপাদন প্রক্রিয়ার বাইরে রেখে দেওয়ার যে কুফল, অর্থাৎ এই কর্মহীন জীবন যাপনে বাধ্য করা মানুষগুলির ভরণ-পোষণের দায়িত্ব সরকারকে বাধ্য হয়ে নিতে হবে, কারণ এখন আন্তর্জাতিক মহলের পূর্ণ দৃষ্টি আসাম এবং ভারতবর্ষের উপর নিবদ্ধ। যেখানে প্রত্যেকে ভিজিলান্ট দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে পাহারা দিচ্ছে যে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর উপর অত্যাচার নেমে আসে কিনা। আরএসএসের দীর্ঘকালীন কর্মনীতি, শরণার্থী এবং অনুপ্রবেশকারীর মধ্যে সংঘাত বজায় রাখা এক্ষেত্রে সম্ভব হবে না। সবচেয়ে সমস্যার যেটা, তা হলো স্থানীয় অধিবাসী এবং চিহ্নিত বিদেশিদের মধ্যে লাগাতার দ্বন্দ্বের সম্ভাবনার জীবনযাপন করতে হবে মানুষকে, যার দায়িত্ব কোনো না কোনো সময়ে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারকেই নিতে হবে। এতগুলি কারণে বিজেপি ২০১৫ সালে ঠিক করে যে এনআরসির পাল্টা একটি আইন প্রণয়ন প্রয়োজন, যা এই বিপুল পরিমাণ জনগোষ্ঠীর দায়িত্ব ঘাড় থেকে নামিয়ে দিতে সাহায্য করবে, পাশাপাশি সংঘ পরিবারের দীর্ঘদিনের হিন্দুত্ব অ্যাজেণ্ডাও কার্যকরী করা যাবে। নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের প্রক্রিয়া বারবার ভারতবর্ষে প্রয়াগ করা হয়েছে। যেখানে কুৎসিৎতম সংশোধনীটি এসেছিল বাজপেয়ীর আমলে, যেখানে সাবেক জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বিধি পরিবর্তন করে রক্তসম্পর্কে নাগরিকত্বের বিধি প্রচলন করা হয়। যার দীর্ঘমেয়াদী কুফল এতদিন পরে ভারতবাসী হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন।
কিন্তু যে বিষয়টি এর মধ্যে বিজেপি হিসেব করে উঠতে পারেনি, বহুভাষিক আসামে সেই ভাষিক গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব এবং তজ্জনিত কারণে গোটা প্রক্রিয়ার উপর তার প্রভাব। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার দ্বন্দ্বে সম্পৃক্ত বিজেপির কাছে ভাষা সাম্প্রদায়িকতার বিষয়টি বোধগম্যতার বাইরে থেকে গেছে। ফলে সেই সময় বহু চিন্তা ভাবনা এবং পরিকল্পনা করে বিজেপি প্রথমে গেজেট নোটিফিকেশন এবং পরবর্তীকালে সংশোধনী বিলের মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দিতে চেষ্টা করে। তার লিগ্যাল এবং অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ রূপ হচ্ছে সিএবি অর্থাৎ সিটিজেনশিপ আমেন্ডমেন্ট বিল ২০১৬। একটি জয়েন্ট পার্লামেন্টারি কমিটি নিযুক্ত হয়, যারা বহুসংখ্যক সংগঠনের সঙ্গে কথা বলে এই বিল সম্পর্কে তাদের নিজস্ব ধারণা লিপিবদ্ধ করে, সরকারকে জমা দেয় এবং বিলটি ২০১৯ সালে হইহই করে লোকসভায় পাস হয়ে যায়। কিন্তু ততদিনে দুটি ঘটনা ঘটতে আরম্ভ করেছে। এক, আসাম জুড়ে এনআরসি প্রক্রিয়া ততদিনে তীব্র গতি প্রাপ্ত হয়েছে, পুরোদমে চলছে নাগরিক এবং ও নাগরিক বাছাইয়ের প্রক্রিয়া। দুই, প্রায় সমগ্র উত্তর-পূর্বাঞ্চল সিএবি-র বিরুদ্ধে প্রতিবাদে এবং প্রতিরোধে রাস্তায় নেমে এসেছে। তাদের দাবি এই বিল পাস করানো চলবে না। এই বিল এনআরসি প্রক্রিয়াকেই অর্থহীনতায় পর্যবসিত করবে। কারণ একাত্তর সালের ২৫শে মার্চ কে ভিত্তিবর্ষ ধরে যাদের বিদেশি হিসেবে চিহ্নিত করা হবে, ২০১৪ সালের ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত ভিত্তিবর্ষ ধরে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল, তাদের পুনরায় নাগরিকত্বের তালিকায় ঢুকিয়ে দেবে। মাত্র এক দেড় লক্ষ মুসলিম অভিবাসীকে চিহ্নিতকরণের জন্য এই দেড় সহস্রাধিক কোটি টাকার অপব্যয়, সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি হয়রানি, এবং এতকালের আসাম চুক্তি এর ফলে মূল্যহীন হয়ে পড়বে। সেই প্রতিবাদে এবং প্রতিরোধে বিজেপি বাধ্য হয় রাজ্যসভায় বিলটি পেশ না করেই উইথড্র করে নিতে।
আজ এনআরসি প্রক্রিয়া প্রায় সম্পন্ন হয়ে গেছে আসামে। এখন সারা ভারতবর্ষে এনআরসি চালু করার কথা হচ্ছে। পাশাপাশি লোকসভার নিকটতম অধিবেশনে নাগরিকত্ব আইন সংশোধনী বিল পাস হয়ে যাবে এমত আশঙ্কা করছেন হিন্দু আধিপত্যবাদ বিরোধি মহলগুলি। সাম্প্রতিক সময়ে সংঘ পরিবারের বিভিন্ন শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্বের বক্তব্যের নির্গলিতার্থ সযত্নে অনুধাবন করে দেখা যায় এরা বারবার একটা কথা বলে আসছেন, আসামে যা হয়েছে, সারা ভারতবর্ষে সেই অভিজ্ঞতার অ্যাকশান রিপ্লে হবে না। বারবার বলছেন ক্রোনোলজি পাল্টে ফেলতে হবে। অর্থাৎ রাখঢাক না করেই তাঁরা বলে দিচ্ছেন যে এনআরসি, তারপর সিএবি এরকম এখন আর হবে না। আগে সিএবি আসবে, তারপর এনআরসি। এর ফলে এটাই হবে যে সারা ভারতবর্ষে বিদেশী হিসেবে প্রায় দুই কোটি মানুষের চিহ্নিত হবার সম্ভাবনা এবং তাদের দায়-দায়িত্ব ঘাড়ে নেওয়ার হাত থেকে বিজেপি সরকার অব্যাহতি পাবে। সিএবি আগে করতে হবে কারণ সিটিজেনশিপ আমেন্ডমেন্ট বিলে মুসলিম বাদ দিয়ে অন্যান্য প্রায় সকল ধর্মের মানুষকে ভারতবর্ষে আশ্রয় দেওয়া হবে এটি ঘোষণা করা হচ্ছে। বাকি পড়ে থাকছে কেবলমাত্র মুসলিমরা, যারা ভারতবর্ষের শেষ জনগণনার হিসেব অনুযায়ী জনসংখ্যার মাত্র ১৪ পার্সেন্ট। এই ১৪ পার্সেন্ট মুসলিমের, অধিকাংশই আবার প্রথমাবধি ভারতবর্ষের বাসিন্দা। সুতরাং চিহ্নিত বিদেশীর সংখ্যা এনআরসি চালু করার পর খুব সীমিত সংখ্যক হবে। সরকারের দায় কমবে, এবং এই স্বল্পসংখ্যক বিদেশিদের বিভিন্ন উপায়ে ব্যবহার করার কাজগুলো সম্পন্ন করা সুবিধাজনক হবে বিজেপি সরকার এর পক্ষে। সরকার জানে যে একটি মানুষকে অবৈধ অভিবাসী বলে দেওয়া যত সহজ, তাদের চিহ্নিতকরণ ততটাই কঠিন। এবং চিহ্নিত করার পর তাদের দায়িত্ব নেওয়া আরো অনেকগুণ বেশি কঠিন। বিজেপি জানে কোটি কোটি মুসলিম অনুপ্রবেশকারীর গল্প ছড়ানো যত সহজ, তাদের চূড়ান্তভাবে চিহ্নিত করতে প্রজন্ম লেগে যাবে। সংখ্যাটা যত কম হবে, বিরোধি শক্তির উৎসাহ তত কমবে। তখন তাদেরকে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা, লেবার-ফোর্স হিসেবে এক্সপোর্ট করা, তাদের বিনিময়ে রাজস্ব আমদানি বাড়ানো যাবে। যেহেতু তারা অনাগরিক, ফলে আইনের কোনো সুযোগ-সুবিধা তাদের প্রাপ্য নয়, এই অজুহাতে তাদেরকে যথেচ্ছ ব্যবহারে কোন ত্রুটি রাখবে না সরকার। এভাবেই সিএবি এবং এনআরসি ভারতবর্ষে হিন্দুত্ববাদীদের জন্য নতুন পথ খুলে দিচ্ছে। বারবার করে বলা হচ্ছে যে আসামের এনআরসির তালিকা ভুলে ভরা। তালিকার অধিকাংশ হিন্দু (এবং সেটাই হওয়া স্বাভাবিক কারণ দেশভাগের সময় থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত যারাই বাংলাদেশ থেকে যেকোনো কারণেই ভারতবর্ষে প্রবেশ করুক না কেন তাদের ১২ আনা অংশই হিন্দু)। ভারতবর্ষকে বলা হচ্ছে হিন্দুদের ন্যাচারাল কান্ট্রি। যদিও ভারতবর্ষ কীভাবে খ্রিস্টানদেরও ন্যাচারাল কান্ট্রি হয়ে উঠলো সে আরেক রহস্যময় গোপনীয়তা। কিন্তু আপাতত তালিকাচ্যূতের মধ্যে মূল অংশটি হিন্দু, এই ধুয়ো তুলে বিজেপি আসামের এনআরসি প্রক্রিয়াকে অবৈধ ঘোষণা করতে চাইছে। যাতে সিএবি শান্তিপূর্ণভাবে, কোন রকমের প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধ ছাড়াই, সংসদের উভয় কক্ষে পাশ হয়ে, আইন হিসেবে পরিগণিত হতে পারে। তারপর সেই সিএবি দিয়ে এই সকল ধর্মের অভিবাসীদের ঠাঁই দেওয়া হবে এদেশে। নাগরিকত্ব দেওয়া হবে কিনা কেউ জানেনা। এবং সবশেষে এনআরসি প্রক্রিয়া চালু করা হবে যাতে শুধুমাত্র মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে থেকেই অবৈধ অভিবাসী বাছাই সম্পন্ন হতে পারে। আবারো বলছি এনআরসি এবং সিএবি পরস্পরের পরিপূরক। সিএবি মুসলিম বাদে অন্য সব ধর্মের মানুষকে ভারতবর্ষে আশ্রয় দেবে। এনআরসি শুধুমাত্র মুসলিমদের মধ্যে নাগরিকত্বের প্রক্রিয়া চালু করে শুধু মাত্র কয়েক লক্ষ মুসলমান জনগণকে চিহ্নিত করে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে।
ঘটনা হলো আমরা এক পা এগোলে হিন্দুত্ববাদীরা পাঁচ পা এগিয়ে যায়। ফলে আমরা যারা এতদিন সিএবি এর পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা করে তার বিরোধিতা করেছি, শীতকালীন অধিবেশনে যে ভার্সনটি বিজেপির নিয়ে আসবার কথা তাতে সেই বিরোধিতার প্রসঙ্গগুলি হিসেব করেই আনা হবে বলে আমার ধারণা। ২০১৬ সালের বিলটি অবিকৃতভাবে আবারও রাজ্যসভায় এবং লোকসভায় পেশ করা হবে, এই অনুমান ভুল প্রমাণিত হতেই পারে। গতবারের বিলটিতে লেখা ছিল যে ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত এবং পাকিস্তান বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান এর নাগরিক মানুষদের এদেশ থেকে পাসপোর্ট আইন অনুযায়ী বহিষ্কার করা হবে না এটুকু মাত্র। এই বিলে খুব সম্ভাবনা যে কোনও ভাবে নাগরিকত্ব প্রদানের সম্ভাবনার বিষয়টি যুক্ত করা হবে, আইনের ফাঁকফোঁকর রেখে। তাহলে বিরোধীদের মুখ অনেকটা বন্ধ করে দেওয়া যাবে। আমরা প্রথম থেকে প্রশ্ন তুলে আসছি যে ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত হয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসার সময় একজন মানুষ এবং তার পরিবার কি প্রমানপত্র সঙ্গে নিয়ে আসতে পারে যাতে সে প্রমাণ করতে পারে যে তারা এই তিনটি দেশের নাগরিক ছিলেন, ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত হয়েছিলেন এবং তারা এই অমুসলিম? হতেই পারে যে এতদিন যা গ্রাহ্য করা হয়নি সেই সেল্ফ ডিক্লারেশন বা এফিডেভিট কে গ্রাহ্য নথি হিসেবে মেনে নিয়ে এদেরকে আপাততঃ এ দেশে থাকার অনুমতি দেওয়া হলো। তাহলেই তো অনেকগুলি বিরোধিতার জায়গা দূর হয়ে যাবে। এটাও হতে পারে যে কোন কোন রাজ্যে সিএবি প্রয়োগ করা হবে তা কেন্দ্রীয় সরকারের ইচ্ছাধীন থাকবে। সেক্ষেত্রে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে সরকার জানাতে পারবে যে এই রাজ্যগুলিতে আপাতত সিএবি প্রয়োগ হবে না। ফলে আন্দোলন স্তিমিত হয়ে আসবে। এইভাবে দীর্ঘদিন ধরে আমাদের বিরোধিতার যুক্তিগুলির কাটান-যুক্তি ভেবে ভেবে সংঘপরিবারের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংগোপন থিংকট্যাংক নিজেদের স্ট্র্যাটেজি ঠিক করেছে, সেগুলি সবই অন্তর্ভুক্ত হবে, যার আগাম কোনো ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু সিএবির মাধ্যমে একমাত্র মুসলিম জনগণকে বিদেশী হিসেবে চিহ্নিতকরণের কার্যসূচি এবারেও থাকার সম্ভাবনা প্রবল। যেহেতু আমাদের এই বিষয়ে কোনো আগাম ধারণা নেই, এমনকি বিজেপির আইটি সেল এর মত কোন প্রচারক বাহিনী নেই, যারা গোয়েবলসীয় মিথ্যায় অশিক্ষিত-অজ্ঞ- নিষ্ক্রিয় এবং বশ্য মানুষগুলিকে যা খুশি বুঝিয়ে দিতে সক্ষম, ফলে সংসদে পাস হওয়া বিলের সব সংশোধন হাতে পেয়ে নতুন করে বিরোধিতার যুক্তি সাজাতে গয়ংগচ্ছ মনোভাবের বিরোধি রাজনৈতিক দল ও নেতৃবৃন্দের কাগুজে বিবৃতি শেষ করে লড়াই এর ময়দানে নামার আগেই সমস্ত প্রতিক্রিয়ায় জল ঢেলে দেওয়া যাবে। যেভাবে ৩৭০, যেভাবে রাম মন্দির রায়, বিরোধিতা ছাড়াই গ্রাহ্য হয়ে গেছে, সেইভাবে সিএবি ও একটা সময় সয়ে যাবে। প্রায় ৮০ শতাংশ হিন্দুর দেশে, হিন্দুরা যদি একবার নিশ্চিন্ত হয়ে যায় নিজের নাগরিকত্ব এবং নিরাপত্তা বিষয়ে, তবে তাদের সহনাগরিক যারা বিদেশি হিসেবে চিহ্নিত হতে যাচ্ছে শুধুমাত্র নথিপত্রের অভাবে, তাদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে সংগ্রাম করার তাগিদটাও কমে আসবে। আমার পূর্বানুমানের সব কটি শর্ত ভুল প্রমাণিত হোক চাইছি, কিন্তু তার সম্ভাবনা কম। কেননা বিজেপি আপাতত এটুকুই চাইছে।