১.
বায়ুরোধী কাঁচের নলে, লঘু চাপের নিয়ন গ্যাসে, উচ্চ বিভবের তড়িৎ সৃষ্টি করে লাল আলো। আর্গন গ্যাস তৈরি করে নীল আলো, সেই নীল আলো আরো উজ্জ্বল হয়ে ওঠে যদি তার মধ্যে যদি একটু পারদের বাষ্প ঢেলে দেয়া যায়।
গাড়ির পেছনের সিট থেকে মজিবুল হক লাক্স সাবানের জ্বলজ্বলে লাল নিয়ন বিজ্ঞাপনের দিকে তাকিয়ে থাকেন। এই শহরে কখন ঠিক আঁধার হয়ে আসে বোঝা যায় না, সূর্য ডোবা আর নিয়ন বাতিদের জ্বলে ওঠার মধ্যে কোন কোয়ান্টাম ঝাঁপ নেই, সন্ধ্যার আলো-আঁধারী মিশে যায় আভিজন গ্যাস ভর্তি কাঁচের নলগুলির মাঝে কম্পিত দৃশ্যমান বিদ্যুৎ প্রবাহের সাথে। সোনারগাঁও হোটেলের সামনে সন্ধ্যার এই সময় সারাদিনের মন্দীভূত ট্র্যাফিক প্রবাহ শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহ ঘোষণা করে পুরোপুরি থেমে যায়। থামুক, ভাবেন মজিবুল হক, কারণ তিনি এই নিশ্চলতাকে কাজে লাগিয়ে আকাশের দ্রুত অপসৃয়মান নীলের নিচে আভিজাতিক গ্যাসদের খেলা দেখতে চান, নিয়ন তৈরি করে লাল, আর্গন নীল।
লাক্সের নিয়ন বিজ্ঞাপনের পরই একটা বিশাল বোর্ড জুড়ে একটি হাস্যোজ্জ্বল তরুণী লাইফবয় সাবানের বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। তার হাসি ও তারুণ্য মজিবুল হকের চোখকে ধরে রাখে। মজিবুল হকের ডান পাশে তার স্ত্রী, রেজওয়ানা চৌধুরী। রেজওয়ানা অনেকক্ষণ ধরে মজিবুলকে দেখে, গত এক বছর হল তার স্বামী এই রকম, কিছুটা আনমনা, ব্যবসার কাজে মন নেই। পঞ্চাশ পার হয়ে গেছে, মধ্যবয়সের সঙ্কট। লাইফবয় মেয়েটির দিক থেকে মজিবুল চোখ ফেরাতে পারছে না, রেজওয়ানা খুব অস্বস্তিতে পরে। মেয়েটিকে যত খুশী দেখুক না মজিবুল, রেজওয়ানার সমস্যা হল তাদের গাড়ির ড্রাইভারকে নিয়ে। ড্রাইভার সেলিম আয়নায় আড়-চোখে তার মালিকের দিকে তাকায়, রেজওয়ানা সেলিমের মুখ দেখতে পায় না, কিন্তু তার মনে হয় সেলিম এই পরিস্থিতিকে খুব উপভোগ করছে। রেজওয়ানা ভাবে মজিবুলকে খুব দ্রুত একটা কিছু বলতে হবে। সে বলে, “এরকম ভাবে সপ্তাহের মধ্যে এত দূরে রাত করে যাওয়া একদম ভাল লাগে না। অসহ্য, অসহ্য এই ট্রাফিক।”
মজিবুল উত্তর দেয় না। সে ভাবে, “বিজ্ঞাপনের এই মেয়েটির হাসির উচ্ছলতার মধ্যে যে নির্দোষ আনন্দ আছে সারা দেশটা যদি সেইরকম আনন্দ করতে পারত।” মজিবুলের উত্তর না পেয়ে রেজওয়ানা চুপ করে যায়। ড্রাইভারের সামনে বেশী কথা ভাল নয়। যে দেশে যে নিয়ম। কোথা থেকে গান ভেসে আসে-
আমি ডানদিকে রই না
আমি বামদিকে রই না
আমি দুই দিকেতেই রই
পরান জলাঞ্জলি দিয়া রে।
আমি বড় রাস্তায় দাঁড়ায়ে
কবিতা করি আঁকিবুকি করি
কবিতা করি।।
এমন নয় যে সে কিছু নিয়ম বদলাতে চায় নি।
যখন তারা বিয়ে করেছিল রেজওয়ানা ভেবেছিল তাদের দুজনের সংসারে কাজের লোক রাখবে না, মজিবুল বাজার করবে, সে রান্না করবে। বাইরে কাজ করলেও এমন ভাবে সংসার সাজাবে যেন খুব অল্প পরিশ্রমে বাড়ি পরিষ্কার রাখা যায়, কাপড় কাচা যায়। কিন্তু এই শহরে যা হয়, রেজওয়ানা খুব অল্প দিনই তার কথা রাখতে পেরেছিল। গুলশানের ফ্ল্যাটে নিচে আবর্জনা নিয়ে যেতে হত, কাজের লোক এই কাজটা সাধারণত করে। রেজওয়ানা প্রথম প্রথম নিজেই নিয়ে যেত, কিন্তু তারপর দেখল দারওয়ানরা তাকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করে। যে দেশে যে নিয়ম, ভাবে রেজওয়ানা, নিজের হাতে বড়লোকের কিছু করা নিষেধ। হাত ময়লা করলে দারওয়ানরা পাত্তা দেয় না।
আপাততঃ তাদের চারজনের সংসার, তারা দুজন, ছেলে কবির বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করছে আর রাঁধুনী হাস্না। রেজওয়ানার একটাই দাবি, কাজ থেকে ফিরে যেন রান্না না করতে হয়।
অনেকেই রেজওয়ানাকে শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলে। রেজওয়ানার মুখটা অনেকটা বন্যার মতই আর ছোটবেলায় সেও রবীন্দ্র সঙ্গীত চর্চা করত। কেমন কাকতালীয় ব্যাপার, ভেবেছে সে। গুলশানের একটি কুটির শিল্পের দোকানে খবরদারির কাজ করে সে। একটি গাড়ি, মজিবুল সেটা নিয়ে মতিঝিল যেত, আর সে রিক্সা করে কাজে যাতায়াত করে।
ট্র্যাফিক খুব আস্তে আবার চলা শুরু করল। শত গাড়ির হর্নের অসহ্য শব্দসমুদ্রে ‘ভূমি’র গানটাও হারিয়ে যায় –
আমি উপর দিকে যাই না আমি নিচের দিকে রই না,
আমি মাঝপথে ঘুরি কিছু দিয়া কিছু নিয়া রে।
মহাচিন্তায় আছি বন্ধু রে,
আমি চলে গেলে কি পড়ে রবে,
বন্ধু রে।।
বিজ্ঞাপন পার হয়ে তেজগাঁর রাস্তাটায় গাড়ি পড়লে সব কিছু যেমন অন্ধকার হয়ে গেল। মজিবুল হক যেন অন্য জগতে ছিল, অন্ধকারে সম্বিত ফিরে পেল। “লক্ষ্মীবাজারের বাড়িটার জন্য এক ভাড়াটে এসেছিল আজ,” সে বলে।
“তোমার কাছে কেন? ম্যানেজার সাহেব কি শহরে নেই?”
“না, ছেলেটি ম্যানেজারের কাছে গিয়েছিল। ম্যানেজার তাকে না করায় আমার কাছে এসেছিল।”
“ছেলে?” আশ্চর্য হয় রেজওয়ানা।
“ছেলে বলছি, আসলে কমলের বয়স বছর চল্লিশ হবে।”
“কি নাম বললে? কমল?”
“হ্যাঁ, কমল রায় চৌধুরী।”
“ওঃ।”
সেলিমের সামনে কথা বাড়াতে চায় না রেজওয়ানা। শুধু জিজ্ঞেস করে, “তুমি কমলকে কি বললে?”
“আমি বললাম আমার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানাব। ওর মোবাইল নম্বর দিয়ে গেছে।”
বাকি পথ স্বামী-স্ত্রী কথা বলে না। ঘরে ঢুকেই রেজওয়ানা প্রশ্ন করে, “হিন্দু বলে কি ম্যানেজার না করেছিল?”
“না, না, কি বলছ। হিন্দু-মুসলমান বলে কোন ব্যাপার না। আসলে কমল অবিবাহিত, একা থাকতে চায়।”
“তুমি কি বললে?”
“ছেলেটা বুঝলে, মনে হল তো ভালই। কিন্তু আমরা তো এখন পর্যন্ত কোন ব্যাচেলারকে বাড়ি ভাড়া দিই নি, কি করবে কিচ্ছু বলা যায় না।”
রেজওয়ানার কমলের ব্যাপারে কৌতূহল হল। “কি করে?”
“ইন্টারেস্টিং, বলল, একটা নিটিং ফ্যাক্টরি দেবে, ব্যাংক থেকে টাকা না নিয়েই। কাঁচপুর এলাকায়। বলল, আশুলিয়ায় খুব ঝামেলা হচ্ছে, তাই দক্ষিণে থাকাই ভাল, এছাড়া চট্টগ্রামের রাস্তাও কাছে।”
“তাহলে তো দায়িত্বশীলই মনে হয়।”
“আমারও তাই মনে হয়েছিল। তারপর বলল, তার একটা কুকুর আছে, কুকুরটা সাথে থাকে।”
“না, না, কুকুর নিয়ে ঐ বাড়িতে থাকা যাবে না।”
“আমি জানতাম তুমি তাই বলবে।”
হৃষিকেশ দাস রোড। বাড়িটা ভেঙ্গে যাচ্ছিল। সময়ের ঘর্ষণে, ওপরে পলেস্তরা খসে, করোটির মলিন দাঁতের মত ক্ষয়ে যাওয়া শত বছরের পুরোন বাদামী ইঁট, আর ঘুণে-ধরা কাঠ বেরিয়েছিল পাঁজরের হাড়ের মত। সমস্ত মাংস ঝরে কঙ্কালটাই শুধু থাকবে। আর একটা ভূমিকম্প আসলে তো কথাই নেই। মজিবুল হকের মা মারা যাবার পর পিতা মনিরুল হক দুই ছেলে আর এক মেয়ের মধ্যে আদি বাড়ি ভাগ করে দিয়েছিলেন, বড় ভাই ও ছোট বোন অনেক আগেই তাদের অংশ বিক্রী করে নতুন ঢাকায় চলে গিয়েছিল। মজিবুল রেজওয়ানাকে বিয়ে করে তার ভগ্নাংশে নিয়ে এসেছিল। তাদের দুজনেরই ইচ্ছে ছিল পুরোনো ঢাকায় থেকে যাবার, কিন্তু বাড়ির অন্য অংশের নতুন মালিকদের উৎপাতে একেবারে সেই উত্তরে গুলশান চলে গেল। কিন্তু মজিবুল তার অংশ বিক্রী করল না, ভাড়া দিতে থাকল।
পরদিন সকালে মজিবুল কমলের ফোন পেল। রেজওয়ানাকে এসে বলল, “কমল বলছে তার কুকুরকে রাজশাহীতে রেখে আসবে ছোট বোনের বাসায়।”
মজিবুল হক কমল রায় চৌধুরীকে বাড়ি ভাড়া দিয়ে দিল।
২.
মাস খানেক কেটে গেল। হঠাৎ করেই মজিবুল বাড়িতে বেশ রাত করে আসতে আরম্ভ করল। এরকম কখনও হয় না। রেজওয়ানা সব সময়ই জানে মজিবুল কোথায় যায়, কোথায় যায় না। এখন জিজ্ঞেস করলে বলে, অফিসেই থাকে, একটা বইএর ওপর কাজ করছে, কম্পিউটারে নাকি বইটা লিখছে। ফটো তোলার খুব শখ মজিবুলের, পাখি আর ফুল নিয়ে নাকি সে একটা বই বার করবে। আমাদের নতুন নওয়াজীশ আলি খান, ভাবে রেজওয়ানা। বেশ কিছু দিন কেটে গেল, মজিবুল তার বইয়ের কোন অংশই বাড়িতে আনল না। রেজওয়ানার মনে পড়ল সেই লাইফবয় মেয়েটির কথা। মধ্যবয়সের সঙ্কট, পুরুষ মানুষ সবই করতে পারে। সেলিম ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করতে পারে না, হাজার হলেও স্বামী-স্ত্রীর যৌথ ফ্রন্ট বাইরের লোকের কাছে মজবুত রাখা চাই, বিশেষতঃ ড্রাইভারের সামনে। কাউকে কিছু বলতে পারে না, অবশেষে বান্ধবী লিপাকে ধরল, লিপা নিজে গাড়ি চালায়। লিপা তার একান্তই বন্ধু, মজিবুলের সঙ্গে কোন সম্পর্ক নেই।
লিপার এই ব্যাপারে দারুণ উৎসাহ। এই শহরে এইরকম এডভেঞ্চার ক’জনের ভাগ্যে জোটে। গাড়ি নিয়ে এক বৃহস্পতি অপরাহ্নে তারা মজিবুলের মতিঝিলের অফিসের সামনে অপেক্ষা করে। আলো থাকতে থাকতেই মজিবুল বের হয়, কিন্তু গাড়ি নেয় না। একটা রিক্সা ডেকে চড়ে বসে। গাড়ি নিয়ে একটা রিক্সাকে অনুসরণ করা মুশকিল। লিপা বলল, “কোন ব্যাপারই নয়।” কিন্তু মজিবুলের রিক্সা হাটখোলা হয়ে নারিন্দায় ঢোকে, নারিন্দায় রাস্তায় রিক্সার জ্যাম। লিপার গাড়ি আর যেতে পারে না। রেজওয়ানা লিপাকে বলল, “তুমি চলে যাও, আমি জানি মজিবুল কোথায় যাচ্ছে। ওখানে গাড়ি নিয়ে যাওয়া খুব ঝামেলার।”
মজিবুলের কয়েকটা রিক্সার পরেই আর একটা রিক্সাতে রেজওয়ানা চড়ে বসে। মজিবুল কি তাদের পুরোনো বাসায় যাচ্ছে? ঠিকই, মজিবুলের রিক্সা থামে হৃষিকেশ দাস রোডের বাড়ির সামনে। মজিবুল ভিতরে ঢুকে যায়। রেজওয়ানা বুঝে পায় না কি করবে।
ব্যাচেলরকে কি সাধে কেউ বাড়ি ভাড়া দেয়? কে আছে এই বাসায়? অসম্ভব সব চিন্তায় রেজওয়ানা অস্থির হয়ে পড়ে। কিন্তু ঐ বাড়ির সামনে সে বেশীক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না, কিছু দূরের পানের দোকানের সব খরিদ্দারই ঘুরে দাঁড়িয়ে তাকে দেখছে। রাস্তায় একটু বের হবার উপায় নেই। মাথা নিচু করে হাঁটতে শুরু করে রেজওয়ানা। হাঁটারও সেরকম উপায় নেই, গায়ের ওপর হুড়মুড় করে রিক্সা এসে পড়ে। শীতের দিন, কিছুক্ষণ পরেই রাত হয়ে যাবে। ক্রোধে, হতাশায় চোখ থেকে জল ঝরে। অবশেষে সিদ্ধান্ত নেয় পুরোনো বাড়িতে ঢোকার। যা হবার হোক, এর একটা বোঝাপড়া করতেই হবে।
বাড়িটা তিন ভাগে ভাগ হলেও মজিবুলদের অংশে ঢোকা খুব সহজ, পাশ দিয়ে একটা গলি, আর সেই গলি থেকেই ওপরে উঠে গিয়েছে একটা সিঁড়ি, মাথা নিচু করে উঠতে হয়, সিঁড়ির মাথায় দরজা। জোরে কড়া নাড়ে রেজওয়ানা। যে মানুষটি দরজা খুলে দেয় তাকে দেখেও দেখে না, এখন লৌকিকতার কোন সময় নেই।
“কোথায় আছে সে?” প্রায় চিৎকার করে রেজওয়ানা।
“কার কথা বলছেন?” লোকটির কথা পরিষ্কার, কোন টান নেই।
“আহ, বোঝেন না যেন, মজিবুল কোথায়?”
“আপনি কে?” খুবই শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করে লোকটি।
“আমি কে?” লোকটির প্রশান্ত মুখ রেজওয়ানাকে অপ্রস্তুত করে দেয়, “আমি মিসেস মজিবুল।”
লোকটির মুখ হাসিতে ভরে যায়, “ওঃ ভাবী আপনি, আসুন ভেতরে আসুন।”
“আর ভাবী ভাবী করতে হবে না, তুমি... আপনি বেশ্যার দালাল।”
লোকটির হাসি মুখ বিস্ময়ে তার আকার হারিয়ে একটা কিম্ভূত রূপ ধারণ করে। রেজওয়ানাও তার কথার রূঢ়তায় নিজেই হকচকিয়ে যায়। সে এরকম ভাষা কখনই ব্যবহার করে নি। কিন্তু এখন দেরি হয়ে গেছে, সে যে জন্য এসেছে তার একটা হেস্তনেস্ত না করে যাবে না। লোকটা তার সম্বিত ফিরে পেয়ে পেছনের শোবার ঘরের দরজাটার দিকে তাকায়, দরজাটা বন্ধ বা ভেজানো। রেজওয়ানার মনে হয় এখনি মাথা ঘুরে পড়ে যাবে। এই বাড়ির প্রতিটি কোণা তার পরিচিত। সে লোকটিকে প্রায় ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে সেই দরজার কাছে যায়। এক মুহূর্ত ইতস্তত করে, ভেতর থেকে মনে হয় কোন বাজনার টুং টাং শব্দ আসে, কোন নারীর মৃদু হাসি? আর ভাবতে পারে না রেজওয়ানা, দরজায় ধাক্কা দেয়।
দরজাটা বন্ধ ছিল না, ধাক্কায় সশব্দে খুলে যায়। শোবার ঘরে কেউ নেই। শোবার ঘরের পরে একটা বারান্দা, ঠিক বারান্দা বলা যাবে না, আসলে একটা খোলা ছাদ। সেখানে মজিবুল একটা চেয়ারের ওপর বসে আছে, আকাশের দিকে তাকিয়ে। ছাদের মেঝেতে তার ক্যামেরা। ঘরে একটা গানের যন্ত্র, তাতে জ্যাজ বা ঐ জাতীয় কোন বাজনা বাজছে। দরজা খোলার শব্দে পিছনে ফিরে তাকায় মজিবুল। মুহূর্তের জন্য, হতে পারে তা সেকেণ্ডের ভগ্নাংশ, রেজওয়ানার মনে হল বাইশ বছর পার হয়ে যায় নি, তরুণ মজিবুলের দীপ্ত মুখ উজ্জ্বল হয়ে থাকে। মুহূর্তের জন্য রেজওয়ানার মনে হয় চেয়ারে বসে আছে সেই মজিবুল যাকে সে ভালবেসেছিল বাইশ বছর আগে।
মজিবুল দাঁড়ায়, রেজওয়ানাকে সে এখানে আশা করে নি। “তুমি এখানে?” প্রশ্ন করে সে।
“আমি এখানে, তুমি বরং বল কি করছ এখানে?” পালটা প্রশ্ন করে রেজওয়ানা। উত্তেজনায় তখনও তার বুক ধক ধক করছে। সে বুঝতে পারে বাড়ির লোকটি তার পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে।
“ভাবী, আমি জানি আপনি কেন এসেছেন। আপনি এখানে বসুন, আমি পানি এনে দিচ্ছি, একটু সুস্থির হয়ে নিন।” এই প্রথম বার তার কথা রেজওয়ানার কানে ঢুকল, এই তাহলে কমল। রেজওয়ানা কমলের দেওয়া চেয়ারে বসে মজিবুলের চেয়ারের পাশেই। কমল জল নিয়ে আসে। রেজওয়ানার হাতে গ্লাসটা দিয়ে ছাদের ওপরেই একটা উঁচু জায়গায় বসে। কমল বলে, “ভাবী, আমি যখন বাড়িটা ভাড়া নিতে যাই তখন ওনাকে বলি সূর্য ডোবার সময় বিদ্যুতের তারে নানাবিধ পাখি এসে বসে। পেছনে লাল সূর্য আর সামনে কালো তার, তারের ওপর পাখি, বেশিরভাগ সময়ই কাক, কিন্তু অনেক সময়ই এক ঝাঁক রঙ্গীন পাখি আসে, আমি তাদের নাম জানি না। পরদিনই ভাই এখানে তাদের ছবি তুলতে আসেন।”
রেজওয়ানা খালি বলতে পারে, “আমি ক্ষমাপ্রার্থী।”
মজিবুল এতক্ষণে যেন সম্বিত ফিরে পায়, “তুমি কি আমাকে অনুসরণ করছিলে?” রেজওয়ানা এই আলোচনায় এখন আর যেতে চাইছিল না, বিশেষতঃ কমলের সামনে। কিন্তু মজিবুল রেজওয়ানার উত্তরের অপেক্ষা করে না। সূর্য খুব দ্রুত ডুবে যাচ্ছে। আজ স্টেডিয়ামে খেলা আছে, ফ্লাডলাইটের আর শেষ সূর্যের আলো নিয়ে একটা নিচু সিঁদূর মেঘ ভেসে থাকে উত্তরের আকাশে। সেই মেঘের দিকে তাকিয়ে মজিবুল বলে, “তুমি একটু সুস্থির হও রেজওয়ানা। আমি সবই বলতাম, কিন্তু একটা অদ্ভুত অভিজ্ঞতাকে ঠিক মত না বুঝে ওঠা পর্যন্ত তোমাকে কিছু বলতে চাইছিলাম না।”
মজিবুল বলতে থাকে, “এ কথা সত্যি যে আমি পাখির ছবি তোলার জন্য প্রথমে এখানে আসি, কিন্ত সেই প্রথম দিনই আমি আমার ছোটবেলাকে আবার যেন খুঁজে পাই। গত এক সপ্তাহ ধরে আমি এখানে আসছি আমার ছোটবেলাকে ফিরে পেতে। আমি যখন এই ছাদে এসে বসি আমার শৈশবের প্রতিটি মুহূর্ত যেন মূর্ত হয়ে ওঠে, মনে হয় এই ছাদের পাঁচিলে, শ্যাওলা ধরা দেয়ালে সব কিছু রেকর্ড করা আছে।” রেজওয়ানা বোঝে না মজিবুল কি বলতে চাইছে ।
মজিবুল বলতে থাকে, “আমার ছোটবেলায় এই শহরে নিয়নের বিজ্ঞাপন প্রথম আসল। এই ছাদ থেকে আমি ভিক্টোরিয়া পার্কের সাথে লাগান বিজ্ঞাপনগুলো খুব সহজেই দেখতে পেতাম। আজ অবশ্য তার কোন উপায় নেই, কিন্তু ছোটবেলার সেই সব সন্ধ্যার কথা মনে পড়লে শিহরন জাগে। আমি জানতাম না শহরটা কত বড়, মনে হত দূরে পশ্চিমে কি যেন রহস্য সব লুকিয়ে আছে আবছা বাড়ির ছাদগুলোয়, রথখোলার পানির ট্যাঙ্কে। মনে হত সন্ধ্যার আকাশ রহস্যময়। মনে হত প্রাগৈতিহাসিক শকুন-মানুষ এক ধরনের শঙ্কর ভৌতিক প্রাণী রাত হলেই আকাশে উড়ত। সন্ধ্যার আধো-অন্ধকারে আমি যেন দিগন্তের ধারে অনেক দূরের বাড়ির ছাদ্গুলো থেকে তাদের উড়তে দেখতাম। ভয়ে আমি ছাদ থেকে পালিয়ে যেতাম। এই ক’দিন আমি যেন সেই শিহরন আবার ফিরিয়ে আনতে চাইছি। কিন্তু আমরা সবাই বড় হয়ে গেছি। এখন শুধু দেখি শীতের পাখিরা ঝাঁক বেঁধে সূর্যের প্রেক্ষাপটে দক্ষিণে উড়ে যাচ্ছে।”
রেজওয়ানার মনে হয়,
নিঝুম সন্ধ্যায় পান্থ পাখীরা বুঝি বা পথ ভুলে যায়,
কুলায় যেতে যেতে কি যেন কাকলী আমাকে দিয়ে যেতে চায়।
মনটা এক উদাস না-বোঝা নস্টালজিয়ায় হারিয়ে যায়।
দূরে আজানের ধ্বনি শোনা যায়, সন্ধ্যার আলো-আঁধারীতে তা রহস্যময় মনে হয়। পর মুহূর্তেই স্থানীয় একটি মাইক থেকে আজান শুরু হয়। দুটি শব্দ ধ্বনি পরস্পরের বিরুদ্ধে বিপরীত চরিত্রে কাজ করে।
হঠাৎ সব আলো নিভে যায়, লোড-শেডিং। কাছের আজান ধ্বনিটিও বন্ধ হয়ে যায়। প্রথমে সব কিছু অন্ধকার মনে হলেও, ধীরে ধীরে রেজওয়ানার চোখে ছাদের সবকিছু পরিষ্কার হয়ে ওঠে। কমল উঠে যেয়ে ভিতরের ঘরে একটা মোমবাতি জ্বালায়। তার কম্পমান শিখা ছাদে এসে পড়ে।
সবাই কিছুক্ষণ নিরব থাকে। তারপর কমল বলে, “আপনারা কি ওয়াইন খান?” রেজওয়ানার একটু সময় লাগল প্রশ্নটা বুঝতে। তার সমাজে হুইস্কি খুব চলে। কিন্তু এই সন্ধ্যায় লক্ষ্মীবাজারে তাকে কেউ ওয়াইন সাধবে সেটা সে কখনও ভাবে নি। কমল বলে, “দেখুন আমি একটু দ্বিধা করেই এই অনুরোধটা করছি। আপনারা দুজনেই এখানে এসেছেন। আপনাদের পুরোন বাড়িতে। এই মুহূর্তটিকে ধরে রাখার জন্য ওয়াইন উত্তম।”
কমল ওয়াইন নিয়ে আসে, বলে অস্ট্রালিয়ার ওয়াইন, নাম শিরাজ। তারপর বলে, “আমি খুব মধ্যবিত্ত ঘরে মানুষ, তারপর আবার মফস্বলে বড় হয়েছি। ঢাকায় আসার আগে কোন এলকাহলের বোতল দেখি নি। এখন যন্ত্রপাতি কেনার সুবাদে বিদেশী লোকজন এই সব উপহার দেয়, কিন্তু কাউকে নিয়ে যে বসব সেরকম লোক খুঁজে পাই না।” কমল তিনটি গ্লাসে লাল শিরাজ ঢালে। রেজওয়ানা তার গ্লাসের মসৃণ লাল তলে দূরের মোমের আলোর প্রতিবিম্ব দেখে। শিরাজের স্বাদ নিয়ে আসে দূর দক্ষিণ গোলার্ধের সাগরপারের কোন অজানা সবুজ বাতাসে আন্দোলিত আঙ্গুর ক্ষেত্রের ছবি। ঢাকার পশ্চিম আকাশে সন্ধ্যাতারা জ্বলে।
কমল পশ্চিম আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে, “আমার দাদুর, অর্থাৎ মা’র বাবার নাম ছিল শশাঙ্ক চক্রবর্তী। ১৯৪৭এর দেশ ভাগের পর ঢাকাতেই ছিলেন। কিন্তু ৫২ সালে একটা বড় দাঙ্গা হয়, সেই সময় সবাইকে নিয়ে ভারত চলে যান, শুধুমাত্র তাঁর ছোট মেয়ে থেকে যায়। ছোট মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছিল, তাঁর নাম ছিল নিবেদিতা, আমার মা। আমার বাবার নাম ছিল নির্মল রায় চৌধুরী। নিবেদিতা আর নির্মল ঢাকায় দাদুর বাড়িতে থেকে যান। ১৯৬৪ সাল অবধি। ৬৪ সালে আর একটা দাঙ্গা হয়, বাবা ও মা ঢাকা ছেড়ে পালান। কিন্তু তারা ভারতে যান না, আমাদের আদি বাড়ি রাজশাহীতে ফিরে যান। তারা আর ঢাকায় ফিরে আসেন নি। আমার জন্ম হয় স্বাধীনতা যুদ্ধের ঠিক আগে।
“৬৪ সালে বাবা মা দাদুর বাড়ি ছেড়ে পালালে, স্থানীয় এক লোক তাদের বাড়ি দখল করে। বাবা পরে ফিরে সেই বাড়ি ফেরৎ পাবার চেষ্টা করেন, কিন্তু বেদখল বাড়ি শত্রু-সম্পত্তি ইত্যাদির ফাঁপরে পড়ে হাতছাড়া হয়ে যায়। ৭২ সালে স্বাধীনতার পরে সেই লোক, যে বাড়ি দখল করেছিল, সে ভাবে বাবা আবার ফিরে আসবে। তাই দ্রুত দাদুর বাড়ি আর একজনকে বিক্রী করে দেয়।”
তারপর কমল অনেক ক্ষণ চুপ করে থাকে। নিচের রাস্তা থেকে রিক্সাওয়ালাদের চিৎকার শোনা যায়। রেজওয়ানা বা মজিবুল এতক্ষণ খেয়াল করে নি, কমলের পায়ের নিচে একটা বাঁধানো ফটো ছিল, সাদা-কালো, যেটা কমল দু-হাতে তুলে ধরে তাদের দিকে বাড়িয়ে দেয়। আলো-আঁধারীতে দুজনে দেখে এক হাস্যোজ্জ্বল শাড়ি-পরা তরুণী, ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। রেজওয়ানা এক মুহূর্তে চিনে নিল সেই ছাদ।
“এটা আমার মায়ের ছবি। মা’র বয়েস তখন বাইশ-তেইশ হবে, তখনও বিয়ে হয় নি। এই ছাদটা আপনারা চিনতে পারছেন, আমরা এখানেই বসে আছি। আপনাদের এই বাড়িটাই হচ্ছে দাদুর বাড়ি,” কমল বলে।
মজিবুল যেন শুনেও শোনে না। তার কাছে মনে হয় তারা ভিন্ন এক শহরে বাস করছে। এমন সব জায়গা যেখানে সে কখনও যায় নি। বাগদাদ, দামাস্কাস, কায়রো। তার মনে হয় এই ভাঙ্গা বাড়ির নিচে যেন ইস্তাম্বুলের বড় বাজার। মজিবুল ভাবে, কি উপায়ে মানুষের মুক্তি হতে পারে। মজিবুলের কাছে মানুষের মুক্তি মানে সময় ও মহাকর্ষের হাত থেকে মুক্তি। সে স্বপ্ন দেখে দক্ষিণ আমেরিকার, প্যাটাগনিয়া, তিয়েরা দেল ফুয়েগো, মাচু পিচু, আমাজন। মজিবুল স্বপ্ন দেখে শৈশবের। অনেক দূর থেকে যেন কমলের কথা ভেসে আসে।
“মজিবুল ভাই, এই বাড়ি আপনার বাবা সেই দখলদারের কাছ থেকে কিনে নেন। যদিও সেই দখলদারের দলিল ছিল জাল। আপনি এই বাড়িতে বড় হয়েছেন। এই বাড়ি আপনারই। আপনার ভাই ও বোন অন্য অংশগুলো বিক্রী করে দিয়েছেন। এই অংশটা আপনারাও এক সময়ে বিক্রী করে দেবেন। আপনাদের কাছে আমার একটাই অনুরোধ যখন বিক্রী করার সময় আসবে, আমাকে মনে রাখবেন, আমি ন্যায্য দামের কম দেব না।”
রেজওয়ানা বুঝে পায় না এখন তার কি ভাবার কথা। মাতামহের বাড়িতে ফিরে এসেছে নাতি, তার মা যেখানে বড় হয়েছে, তার হৃত উত্তরাধিকার সে ফিরিয়ে নিতে এসেছে।
কমল বলে, “এই বাড়ি আপনাদের কাছ থেকে আমি কিনে নেব। দেখবেন আমি কেমন যত্ন করে রাখব। নতুন বাঁধন দেব, ভাঙ্গা ইঁট বদলাব, চুনকাম করব।”
মজিবুল মাথা নেড়ে হাসে, বলে, “এমনই হবার কথা ছিল, কমলবাবু।”
রেজওয়ানা বোঝে না মজিবুল কি বলতে চায়। তারপর কমল বলে, “কাল শুক্রবার। ছুটির দিন। আমার একটা অনুরোধ রাখুন আপনারা। আজ রাতে আপনারা এখানে থেকে যান। রাতের খাবার তৈরি। মনে করুন আপনারা আজ স্বাধীন, বেড়াতে এসেছেন আপনাদের শহরেরই আর এক প্রান্তে এক হোটেলে।” রেজওয়ানা কমলের দিকে তাকায়, একটা সন্ধ্যায় কমলের মুখটা মনে হয় বয়সে ভারাক্রান্ত হয়ে গেছে।
এমন ভাবে জীবনকে দেখা যেতে পারে, ভাবে রেজওয়ানা, এভাবেও বেঁচে থাকা যায়। দুজনে যে কখন কমলের নিমন্ত্রণ গ্রহণ করল তারা নিজেরাই জানল না। সন্ধ্যাতারা কখন ডুবে গেছে। রেজওয়ানা কবির আর ড্রাইভার সেলিমকে ফোন করে খবরটা জানিয়ে দিল।
৩.
সেই রাতে মজিবুল ও রেজওয়ানা তাদের পুরোনো শোবার ঘরে থাকল। পরদিন সকালে রেজওয়ানার ঘুম ভাঙ্গল বাইরের ঘরে কাপ-প্লেট রাখার শব্দে। কমল উঠে গেছে, কিন্তু তার বিছানা ছেড়ে উঠতে ইচ্ছা করল না। মুক্তির স্বাদ কত ধরণের হতে পারে, আকাশে সবে আলো আসছে, একটু আলসেমী করে নিই, ভাবে রেজওয়ানা। একটা দিন মানুষের জীবনকে অনেক বদলাতে পারে। কম্বলটাকে একটু ভাল করে গুঁজে নিতে গিয়ে চোখ পড়ল মজিবুলের মুখের ওপর। কিছু একটা পরিবর্তন হয়েছে তার। মজিবুলের বয়স যেন বছর কুড়ি কমে গেছে। রেজওয়ানার মনে পড়ল গতকাল বিকেলে এটা তার মুহূর্তের জন্য হলেও মনে হয়েছিল।
ঘন্টাখানেক বাদে শোবার ঘরের বাইরে আসে রেজওয়ানা। কমলকে দেখে না। টেবিলের ওপর একটা চিরকুট।
“ভাবী/ভাই, ফ্যাক্টরির কাজে আমাকে বেরিয়ে যেতে হল। আপনারা যাবার সময় দরজা টেনে দিলে তালা বন্ধ হয়ে যাবে। ভাল থাকবেন। আমার কথাটা মনে রাখবেন। কমল।”
রেজওয়ানা খেয়াল করে দেয়ালে একটি মাঝ-বয়সী দম্পতির ছবি, সাদা-কালো। কমলের বাবা-মা, ভাবে রেজওয়ানা। অন্য পাশে একজন বর্ষীয়ানের ছবি। কমলের মাতামহ, জ্ঞানী ও বিজ্ঞ একটি মুখ। তারপর টেবিলে কমলের একটা পাসপোর্ট ছবি দেখে রেজওয়ানা, রঙ্গীন ছবি। ছবিটা তুলে চোখের কাছে নিয়ে আসে সে। সেই নিকটে ধীরে ধীরে রেজওয়ানার মনে হয় কমল বদলে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে চল্লিশ বছরের কমলের মুখ তার সত্তর বছরের মাতামহের মতই বর্ষীয়ান ও বিজ্ঞ ভাব ধারণ করে। শশাঙ্ক চক্রবর্তী। কাল রাতেই তার মনে হয়েছিল কমল বৃদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাই বোধ হয় হওয়ার কথা, রেজওয়ানা ভাবে। উত্তরাধিকার অর্জনের পথে – দায়িত্বের বোঝা বয়ে -তরুণ হয়েছে বর্ষীয়ান। আর সে? সে কি হয়েছে? কোন এক মুক্তির স্বাদে বর্ষীয়সী কি হবে তরুণী? দেয়ালের বড় আয়নাটায় নিজেকে দেখে সে। আয়নায় ভেসে ওঠে বাইশ বছর পূর্বের রেজওয়ানার প্রতিবিম্ব। কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে সে, তারপর খিল খিল করে হেসে ওঠে রেজওয়ানা তার তরুণী গলায়। নিজের হাসিতে বিমোহিত হয়ে যায় মুক্ত রেজওয়ানা। চঞ্চল পায়ে ছুটে যায় শোবার ঘরে, তরুণ মজিবুলকে নাড়া দিয়ে বলে, “দেখ, কি আশ্চর্য কাণ্ড! এমনই কি হবার কথা ছিল?”