এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ইস্পেশাল  উৎসব  শরৎ ২০২০

  • মা-র সাথে

    দীপেন ভট্টাচার্য
    ইস্পেশাল | উৎসব | ২৬ অক্টোবর ২০২০ | ৩২৯৫ বার পঠিত | রেটিং ৪.৮ (৫ জন)
  • মা-কে নিয়ে হাসপাতালে এসেছি। কোভিড টেস্ট করাতে। দুজনেরই।

    এই হাসপাতালটা শহরের যেদিকে সেদিকে আমার আসা হয় না। হাসপাতালের দালানটি আগে দেখিনি। সরু একটা বিল্ডিং, চারতলা উঁচু। প্রথম তলার একটি বড়ো ঘরে আমরা দুজন পাশাপাশি বসে আসে আছি। মা বলল, “কেন আমাকে নিয়ে এলি? এখানে না আসাই ভালো ছিল।”

    সকালে যখন এই বিল্ডিং-এ ঢুকেছিলাম তখন আকাশে সূর্য ঝলকাচ্ছিল। বাইরে প্রচুর হট্টগোল, গাড়ির হর্ন, মাইকের আওয়াজ। এখন দুপুর হয়ে আসছে, কিন্তু মনে হল সকালের আলোটা ম্রিয়মাণ হয়ে আসছে। সাথে শব্দগুলোও চাপা পড়ে যেতে থাকল। মেঘ, ভাবলাম আমি। মেঘ শব্দ শুষে নিচ্ছে।

    আমাদের দুজনের গলায় গত দু-দিন ধরে ব্যথা, শরীরের তাপমাত্রা অবশ্য তেমন না। মা-কে অনেক বলে রাজি করিয়েছিলাম টেস্টিংটা করাতে। এখন এই অপেক্ষার ঘরটাতে দু-ঘণ্টা বসে ভাবলাম কাজটা ঠিক হয়েছে কি না।সকাল দশটায় আসতে বলেছিল। এসেই এই ঘরের একদিকের দেয়ালে একটা ছোটো জানালায় নাম বলেছি, পেছনে একজন নারী-নার্স অপেক্ষা করতে বলল। এর মধ্যে দু-বার উঠে গিয়ে খোঁজ নিয়েছি। তার একই নির্বিকার উত্তর, “আপনার নাম তালিকায় আছে, অপেক্ষা করুন।”

    এমন নয় যে অনেক লোক সেখানে অপেক্ষা করছিল। আমরা দু-জন ছাড়া ছিল আরও চারজন। তাদের ডাক পড়ল এই দু-ঘণ্টায়, তারা চলে গেল। এরপরে শুধু একজন এসে যোগ দিল আমাদের সাথে। হাসপাতালকে এখন সবাই এড়িয়ে চলতে চায়।

    বাইরে আলোটা আরও কমে আসে। সকাল দশটায় যখন এসেছিলাম ঘরের দেয়ালটা গাঢ় সবুজ ছিল। এরকম রং কেউ দেয়? কিন্তু এতক্ষণ গাঢ় রংটা ফিকে হয়ে আসতে শুরু করল। রংটা এখন নীল না সবুজ বুঝতে পারছিলাম না।

    মা বলল, “চল, চলে যাই।” আমি বললাম, “এতক্ষণ বসে আছি। আর এখানে এসে আমরা তো ভাইরাসে এক্সপোজড হয়েছি।”

    “এক্সপোজড…,” কথাটা মা ধীরে উচ্চারণ করে এমন যেন এই প্রক্রিয়াটা এখনই ঘটছে, শত শত হাজার হাজার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ভাইরাস ঘরের বাতাসে ভাসছে, দুলছে, আমাদের মাস্ক পেরিয়ে ঢুকতে চাইছে নাকে আর মুখে। আমাদের দুজনের হাতে প্লাস্টিকের গ্লাভস।

    ঘরের বাইরের দিকে দরজাটা দিয়ে বিল্ডিং-এর ঢুকতেই যে বড়ো খোলা জায়গাটা আছে সেখানে যাওয়া যায়। একজন পুরুষ-নার্স সেখান দিয়ে ঢুকে ঘরে কতজন লোক আছে যেন গুণতে চাইল। এক, দুই, তিনজন। আমি তড়িৎ উঠে দাঁড়াই, ওর দিকে অগ্রসর হতে হতে বলি, “হ্যালো, আমাদের কি আরও দেরি হবে?”

    তরুণ মানুষটি হকচকিয়ে যায়। বলে, “আপনারা কি টেস্টের জন্য?” তার মুখ ও নাক লুকিয়ে থাকে একটা নীল সার্জিকাল মাস্কের পেছনে। নীল পাজামা, নীল ঢিলে জামা, মাথায় নীল ক্যাপ কালো চুল ঢেকে রেখেছে। কাল চোখের মণির ওপরে ঘন কালো ভ্রূ।

    আমি মাথা নাড়াই, হ্যাঁ। সে বলে, “আপনার মাস্কটাতো বেশ। ফ্যান্সি। আমার পছন্দ হয়েছে।”

    আমি অপ্রস্তুত হই। ফ্যান্সি মাস্ক আমি পরি না। আসলে ওর মতো নীল সার্জিকাল মাস্কই পরি। আজ কী মনে হল এই লাল রঙের মাস্কটা পরে এলাম। টেস্ট করব, বিশেষ দিন।

    “ধন্যবাদ,” আমি বলি, “কিন্তু আমরা বহুক্ষণ বসে আছি। আমাদের কি ওরা ভুলে গেছে?”

    “ও, আচ্ছা,” তরুণটি বলে, “এটা আসলে আমার ডিপার্টমেন্ট না, কিন্তু দেখছি ওরা কী বলে।”

    এই বলে তড়িঘড়ি বের হয়ে যায়।

    বাইরেটা আরও অন্ধকার হয়ে আসে। দুপুরের ভ্যাপসা গরমে বহুদূরের জলাশয়ের জল বাষ্প হয়ে আকাশে ওঠে। কালো মেঘ হয়ে যায়। তার চারপাশের বাতাস ঠান্ডা হয়, বাহিত হয় এই শহরের জনাকীর্ণ কোণে। মা আবার বলে, “চল, চলে যাই।”

    মা-র মাথায় এখনও কালো চুল কয়েকটা রয়েছে। সেদিকে তাকিয়ে ভাবি মা-কে আসলে এখানে নিয়ে আসাটা ঠিক হয়নি। এখানে না আনলে মা হয়তো টেলিভিশনে নাটক দেখত অথবা গল্পর বই পড়ত নইলে উপুড় হয়ে তাস খেলত—সলিটেয়ার। ওইটুকু সময়ও মূল্যবান। আর যদি কোভিড টেস্ট পজিটিভ হয় তখন আমি কী করব?

    তরুণ পুরুষ-নার্সটি দৌড়ে ঘরে ঢোকে। বলে, “আপনি আমাদের একটু সাহায্য করতে পারবেন?”

    আমি কিছু না ভেবেই দাঁড়াই, ওর দিকে অগ্রসর হই। মা আমার ডান হাত ধরে আমাকে থামাতে চায়। নার্সটি বলে, “আমাদের এক রুগীকে এখনই ওপরের তলায় নিতে হবে। সেখানে ভেন্টিলেটর। কিন্তু আমাদের কোনো স্ট্রেচার নেই।”

    আমি কিছু না বুঝেই, মা-র হাত ছাড়িয়ে, নার্সের সাথে ঘর থেকে বেরিয়ে যাই। পেছনে মা-র অস্ফুট কণ্ঠস্বর শুনি, “অমল, যাস না!”

    ঘর থেকে বের হলে বিল্ডিং-এর মূল ল্যান্ডিং। সেটা পার হয়ে একটা ছোটো ঘরে ঢুকি আমরা।

    একজন সত্তরোর্ধ্ব নারী বিছানায় শোয়া, সাদা শাড়ই, নীল পাড়, শরীরে যেন কোনো মাংস নেই। চোখ কোটরে বসে গেছে, তাতে মণি, কিন্তু অতীতের কোনো উজ্জ্বলতাই নেই। আমাকে দেখে মুখ খুললেন, কিন্তু কোনো শব্দ বের হল না। হাত তোলার চেষ্টা করলেন, হাড্ডিসার হাত, শুকিয়ে কাঠকয়লার মতো। আমাকে কি কিছু বলতে চাইছেন, ওনাকে কি আগে কোথাও দেখেছি? ঘরে আরও দুজন পুরুষ, তারা নার্স হতে পারে, হতে পারে আর্দালি, জমাদার, কিংবা রিসেপসনিস্ট। তরুণ নার্সটি আমাকে বলল, “আপনি চাদরের একটি কোনা ধরুন, আমরা অন্য কোনাগুলো ধরছি।”

    যন্ত্রচালিতর মতো একটি কোনা ধরলাম। সে বলল, “আমি বলব এক দুই তিন, তিন বললেই একসাথে তুলবেন।” তিন বলতেই আমরা সবাই চাদরসহ সেই বর্ষীয়ান কঙ্কালসার নারীকে তুললাম। তাকে নিয়ে দরজা দিয়ে বের হয়ে প্রথমে ল্যান্ডিং। ল্যান্ডিং-এর অন্যপাশের ঘরে মা-র থাকার কথা, কিন্তু ঘরটা পুরো দেখতে পেলাম না। নিজেকে প্রশ্ন করলাম আমি কেন এই কাজটা করছি, কিন্তু নিজেকে গুছিয়ে উত্তর দেবার আগেই অন্যদের সাথে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে থাকলাম।

    “লিফট নেই?” চিৎকার করি আমি। পরিচিত নার্স মাথা নাড়ায়, “লিফট খারাপ।”

    একতলা থেকে দোতলা, দোতলা থেকে তিনতলা। হাঁফাতে লাগলাম। অন্যদেরও মনে হয় একই অবস্থা। সৌভাগ্যই বলতে হবে তিনতলায় উঠে বাঁদিকে মোড় নিয়ে প্রথম ঘরটিতেই আমরা ঢুকলাম। বিছানায় চাদরসহ নারীটিকে নামিয়ে দিতে দিতে খেয়াল হল আমার মুখে মাস্ক নেই। মাস্কটি থুতনির নীচে বা গলায়ও নেই। কেমন করে সেটি খুলে পড়ে গেল জানি না। নার্স সবাইকে ধন্যবাদ দিচ্ছিল। অন্য দু-জন রোগীকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। এক্সপোজড শব্দটি মাথায় এল। এক্সপোজডই বটে, কিন্তু যে নার্সটি আমাকে ডেকেছিল সে আমার দিকে দৃষ্টি না দিয়ে দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। আর দুজন ব্যস্ত হয়ে পড়ল রোগীকে নিয়ে।

    ওই ঘর থেকে বেরিয়ে এসে সিঁড়ি ধরে নীচে নামলাম আমি। ল্যান্ডিং। মাস্কটিকে কোথাও দেখলাম না। ল্যান্ডিং-এর ডানদিকের ঘরে মা বসে আছে।

    কিন্তু সেই ঘরে ঢুকে দেখলাম মা নেই। মা কোথায় গেল? আমি যে সাংঘাতিক আতঙ্কিত হয়েছিলাম তা নয়, কারণ মা-র জন্য এই শহর খুব পরিচিত আর এইসব হাসপাতালে মা এর আগে নিজের ব্যবস্থা নিজেই করেছেন। কিন্তু আমাকে ফেলে মা কোথায় যাবেন? হাসপাতালের ভেতরে যাবার কোনো সুবিধে নেই, সেখানে একজন গার্ড বসা, তাহলে কি বাইরে গেছেন?

    বাইরে বের হয়ে দেখি জোর বাতাস বইছে। ঠান্ডা বাতাস, আকাশে কালো মেঘ জমেছে। গ্রীষ্মকালে মাঝে মধ্যে এরকম হয়। নিদাঘ সূর্য থেকে জলীয় বাষ্প, তা জমে কালো মেঘ। এরপরে দমকা হাওয়া, বৃষ্টি, সাথে বাজ। রাস্তায় সেরকম লোক বা গাড়ি নেই। মা-ও নেই। ঘুরে দাঁড়িয়ে হাসপাতালের বিল্ডিংটা দেখি। সরু চারতলা বাড়ি। আকাশে বিজলি চমকায়, কড়কড় করে বাজের শব্দটা ভেঙে ভেঙে এগোয়। হঠাৎ আমার একটা জিনিস মনে পড়ে। এতক্ষণ কেন মনে পড়েনি বুঝতে পারলাম না। আজই তো উল্কাপিণ্ডটাকে লেজার রশ্মি দিয়ে কিছু একটা করার কথা। গত কয়েক মাস ধরে জ্যোতির্বিদরা এটাকে পর্যবেক্ষণ করছিলেন। বেশ বড়ো, দশ কিলোমিটার আকারের। ধেয়ে আসছিল উল্কাপিণ্ড পৃথিবীর দিকে। নানান পরিকল্পনা হল, কিন্তু সবাই একমত হল না। এক এক দেশ এক একভাবে উল্কাটি ধ্বংস করার প্ল্যান নিল। আমি তখন ভেবেছিলাম, ভালোই তো—ক দেশ যদি ব্যর্থ হয়তো খ দেশ আমাদের বাঁচাবে। আজ খুব ভোরে ওইসব দেশের ওইসব প্ল্যান কার্যকরি করার কথা ছিল। আমি নিজেও জ্যোতির্বিদ, তবে ধূমকেতু, উল্কা এসবের না, তাই এই ধূমকেতু নিয়ে সেরকম মাথা ঘামাইনি। এর মধ্যে আবার কোভিড এল। গতকাল রাত থেকে মা ও আমার শরীরটা খারাপ হওয়াতে এই সংবাদটাকে অনুসরণ করতে পারিনি। পকেট থেকে মোবাইল বের করে খবরের অ্যাপটা খুলি। বড়ো করে লেখা “ব্যর্থ!”। কোনো কাজই হয়নি। উল্কাপিণ্ড ধেয়ে আসছে, স্থানীয় সময় দুপুর দুটোয় নাগাদ আঘাত করবে পৃথিবীকে।

    মোবাইলে দেখি দেড়টা বাজে। খুব যে আতঙ্কিত হয়েছিলাম এমন নয়। মৃত্যুকে আমি স্বপ্নহীন ঘুমের মতই ভাবি, অথবা সার্জারির আগে অ্যানাস্থেশিয়া দিলে যেমন সাময়িক মানসিক অসাড়তা যা কিনা সময়কে স্তব্ধ করে দেয়, তার সঙ্গে মৃত্যুর পার্থক্য নেই। প্রতিটি জীবনাবসান ব্যক্তিগত, সেই একান্ত নিজস্ব অভিজ্ঞতার অবসান কি মহাবিশ্বেরই অবসান নয়? সেই! মনে হল যাই হোক না কেন শেষ সময়টা মায়ের পাশেই থাকব। মৃত্যুচিন্তার ব্যাপারে আমার মা আমার থেকে অনেক এগিয়ে। এব্যাপারে তাঁর দৃষ্টি ও দর্শন আমার থেকে অনেক সুসংহত, অনেক গভীর। মা-কে নিয়ে একবার বিদেশ গিয়েছিলাম। সেখানে যে বাড়িতে থাকতাম তার পেছনে বন ছিল। সেই বনের ভেতর দিয়ে রাতে ট্রেন যেত। অদ্ভুত রহস্যময় ছিল সেই ট্রেনের আওয়াজ, মনে হত রাতের গভীর অন্ধকারে সারা পৃথিবীর মাল-মশলা, প্রাণ নিয়ে সে চলে যাচ্ছে নিরুদ্দিষ্ট গন্তব্যে। সেই ট্রেনের কথাটা মা পরে দেশে ফিরেও বলতেন। হয়তো রাতের নিশুত নিস্তব্ধতায় ট্রেনের শব্দে ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাবার মধ্যে মৃত্যুর ছায়া দেখতেন। অথবা স্মৃতির বিলোপ। স্মৃতি হারানোও কি মৃত্যুর সমকক্ষ না?

    মা-র ফোনে ফোন করলাম। একটি যন্ত্রচালিত স্বয়ংক্রিয় নারীকণ্ঠ বলল, “আপনার নম্বরটি সঠিক নয়। চেক করে আবার ফোন করুন।”

    সামনের রাস্তার যানবাহন কমে আসছিল। ঘুরে হাসপাতালের দিকে তাকালাম। এবার সব মনে পড়ল। এরকম একটি বাড়ির তেতলার একটি ঘরের বিছানায় শুয়ে দশ বছর আগে বনের ট্রেন ধরে মা চলে গিয়েছিলেন। দশ বছর আগে কোভিড বা ক্রমশ অগ্রসরমান উল্কাপিণ্ডের স্বপ্ন কি আমি দেখেছিলাম?

    আমি কিছু ভাবতে চাইলাম না, মনে হল জ্বরে গা-টা পুড়ে যাচ্ছে। বিড়বিড় করে বললাম, “এক্সপোজড হয়েছি।”

    মা-কে আর খুঁজতে হবে না ভেবে স্বস্তি এল মনে। আর এদিকে মাস্ক নিয়েও ভাবতে হবে না। কিছু দূরে একটা চায়ের স্টল। ওদিকে এগোলাম। কত মাস হল বাইরে কিছু খাই না। বিক্রেতাকে এক কাপ কফি দিতে বললাম। তাকে কফির পয়সাটা দিতে দিতে বললাম, “জানেন তো উল্কাপিণ্ডটা ধ্বংস করা যায়নি।” বিক্রেতা বলল, “এরা এসব কত কী বলে, সব কি বিশ্বাস করা যায়?” বিক্রেতার মাস্কটি থুতনির ওপর ঝুলে আছে।

    কাগজের কফির কাপটা নিয়ে ফুটপাথের ওপর বসি। আমার পা থাকে রাস্তার ওপর। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে। কফিটা খারাপ বানায়নি। মানুষ আমার পেছন দিয়ে হাঁটে, নানান কথাবার্তা কানে আসে, কিছু কোভিড সংক্রান্ত, কিছু স্টক মার্কেট, অল্প কিছু রাজনীতি। কিন্তু উল্কার কথা শুনি না। তাহলে কি আমি ভুল দেখেছি? না, মোবাইলে সংবাদ-অ্যাপ বলছে বেলা দুটোয় আঘাত হানবে উল্কা। এখন পৌনে দুটো।

    হঠাৎ দেখি সেই তরুণ নার্সটি। মুখে মাস্ক নেই, তার মুখমণ্ডল স্পষ্ট, চোখের মণিদুটি উজ্জ্বল। দশ বছর আগে আমি কীরকম দেখতে ছিলাম? নার্সটি একটা কফি নিয়ে এসে আমার পাশে বসে। একটা সিগারেটও ধরায়। আমি বলি, “উল্কাটা আসছে।” সে বলল, “হুম।” বললাম, “বনের মধ্যে ট্রেনটির কথা মনে পড়ছে।” এবার সে কোনো উত্তর দেয় না, মাথা নিচু করে রাস্তার অ্যাসফাল্ট দেখে।

    দুটো বাজার পাঁচ মিনিট আগে রাস্তা ফাঁকা হয়ে যায়। আর দুটো বাজার দশ সেকেন্ড পরে আকাশের কোনো এক কোনা থেকে একটা শব্দ শোনা যায়। সেই শব্দে কান ব্যথা করে। কালো মেঘের ফাঁক দিয়ে একটা উজ্জ্বল আলোর রেখা চলে যায়। তারপর আবার আর একটি জোর শব্দ, তারপর আরো একটি। এর পরের শব্দগুলো ভেঙে ভেঙে আসে, সেই বজ্রপাতের মত। আমি বলি, “এরপরে একটা বড় শক ওয়েভ আসবে। হাসপাতালের বিল্ডিং সেটা সহ্য করতে পারবে না।” সে আর একবার “হুম” বলে সিগারেটের শেষটুকু ছুঁড়ে ফেলে দেয়, বলে, “এবার হাতের গ্লাভসটা খুলে ফেলতে পার। আগুনের হল্কায় প্লাস্টিক গলে যাবে। হাতের ত্বককে শক ওয়েভ, আগুন সবকিছুকে স্পর্শ করতে দাও।”


    ছবিঃ লেখক পড়তে থাকুন, শারদ গুরুচণ্ডা৯ র অন্য লেখাগুলি >>
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ইস্পেশাল | ২৬ অক্টোবর ২০২০ | ৩২৯৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • প্রতিভা সরকার | 182.66.***.*** | ২৬ অক্টোবর ২০২০ ১৫:১৩99085
  • ভাল লাগলো বিস্মরণের এই গল্প! 

  • Kajari Roychowdhury | ২৬ অক্টোবর ২০২০ ১৫:৪৩99090
  • বেশ ভালো লাগলো। 

  • Natasha Hossain | ২৭ অক্টোবর ২০২০ ০১:৪২99123
  • ভাল লাগলো গল্পটি।

  • afroza Alam | 103.107.***.*** | ২৭ অক্টোবর ২০২০ ১০:২৮99136
  • আমার কাছে সত্যি গা ছম ছমে লাগল | এই গল্পটা গল্প নয় , যেন অন্য কিছু | দীপেন দার গল্প যত পড়ি তত ই সাইন্স নিয়ে ফিকশন নিয়ে আগ্রহ জন্মায়|   এতো ভালো লাগলো  যা লিখতে পারলাম না |

  • একলহমা | ২৭ অক্টোবর ২০২০ ১০:৪১99138
  • হ্যাঁ, এইরকম-ই হওয়ার কথা বতে। উল্কাপাতে না হলেও আরো কোন না কোন ঢেউ এই কোভিডকেও ছাপিয়ে যাবে। এবং আমরা সবসময়-ই অতীত ভুলে গিয়ে নূতন বিপদের ঢেউয়ে ভেসে যাব। দীপেনদা ভাল দেখিয়েছেন আমাদের আচরণ। 

  • ঝর্না বিশ্বাস | ২৭ অক্টোবর ২০২০ ১৩:০৬99163
  • একদম অন্যরকম। খুব ভালো লাগলো পড়ে। 

  • Rukhsana Kajol | ২৭ অক্টোবর ২০২০ ১৩:১৮99164
  • উল্কা ঢেউ বা বহ্নি হাওয়া যা হয় আসুক।  পৃথিবী পুড়ে ধুয়ে যাক--- 

  • চিরশ্রী দেবনাউ | 117.204.***.*** | ২৭ অক্টোবর ২০২০ ১৬:২৯99179
  • দুর্দান্ত একটি গল্প

  • অনিন্দিতাগোস্বামী | 223.19.***.*** | ২৯ অক্টোবর ২০২০ ১৭:৪৯99334
  • খুব ভালো লাগলো  ।সময় নিয়ে অদ্ভূত খেলা।বিজ্ঞানের সংগে মিলে যায় জাদুবস্তবতা। অনেক শুভেচ্ছা লেখক কে।     

  • নয়ন বসু | 223.223.***.*** | ০৭ মে ২০২১ ১৮:৫৪105666
  • দিন আস্তে আস্তে কেমন ধূসর হয়ে আসে! খুব ধূসর লাগলো। ভালো থাকবেন। 

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন