এ কি রে ভাই, এরম করে কেউ গাছে তুলে মই কেড়ে নেয়? শুক্কুরবার রাত্তির থেকে টানা সোমবার অব্দি ছুটি, ফ্রিজ ভর্তি করে রেখেছি মটন আর চিংড়ি দিয়ে, অফিস থেকে ফেরার সময় লাইন দিয়ে চারটে বোতল তুলে রেখেছি, আর এই গাম্বাটগুলো এখন বলছে যুদ্ধ খতম? আরে আমার লং উইকেন্ড বলে কি তোরাও যুদ্ধ করবি না? যুদ্ধ, আইপিএল, ফুটবল ফাইনাল এসব তো রোববার মস্তি করে দেখার জিনিস। আরে তোরা কি সেই স্লোগানটাও শুনিসনি 'আমার ছুটি তোমার নয়' ! বাপিদা আমায় বলল, আসলে এদের অনেকদিন অভ্যেস নেই তাই হঠাৎ যুদ্ধ করে হাঁপিয়ে গেচে। তাই এখন স্ট্র্যাটেজিক টাইম আউট। তা তোরা হাঁপিয়ে গেচিস অগ্নিবীরের টেম্পরারি ছোকরাগুলোকে পাঠা, ওদের চাকরি কনফার্ম হয়নি, লাপিয়ে ঝাঁপিয়ে মারকাট করে আসত নয়। তারপর কান্নাকাটি করলে হপ্তার মাঝখানে দুদিন ব্রেক দেওয়া হত।
সবচে বড়ো কথা, এইরম হাফ কাজ কেউ করে আসে? অন্নব বলল ইসলামাবাদ দখল হয়ে গেছে, ময়ূক বলল করাচি ধুলিস্মাৎ, সুমোন বলল পক করে নাকি Pok টাও আমাদের হবো হবো করছে, ফেসবুকে এইসব মেচ্ছ প্রদেশগুলো দখল করার পর কি নাম দেওয়া হবে তাও ঠিক হয়ে গেল, মায় করাচি বেকারিতেও তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেখানে এরকম ফচকেমি? এটা মানা যায়? সারা বছর শুনি সিনচ্যানে নাকি সেনা দাঁড়িয়ে আছে, তাই পেট্রোলের দাম বেড়ে গেলেও মেনে নিতে হবে। তা সেই সিনচ্যানের সেনাগুলোকে এবার ঝিনচ্যাক ডিজেল ট্রাকে করে নিয়ে আয়, সেই বুদ্ধি নেই। হঠাৎ যুদ্ধ লেগে যে ফুরফুরে মৌতাত মতো চড়েছিল, নিজেকে বেশ র্যাম্বো আর ভীম পালোয়ানের কম্বো মনে হচ্ছিল সেই গাবদা বেলুনখানায় এরা দুম করে আলপিন করে দিল! এবার ফেসবুক খুলে কি দেখব হ্যাঁ? সেই ঝরে ঝরে পড়ছে পাঁঠার চর্বি, মামনিদের নাচের রিল আর দুনিয়ার লোকের প্রি ওয়েডিং ফটোশুট। জীবনটা সেই আবার বাসের মধ্যে চিংড়ি থ্যাঁতা ভিড়ের গোঁতা, নাকের ডগায় চিল্লানোসরাস বসের ছিটকে আসা থুতু, বাড়ি ফিরে পানসে অড়হর ডাল আর ঢেঁড়সের ঘ্যাঁটের মধ্যে আটকে গেল। এরকম করে পাতে বেড়েও সেজুয়ান চাটনি কেড়ে নেওয়াটা কি ঠিক? চাদ্দিন মোল্লাগুলোকে তেড়ে গাল দিয়ে একটু মনের সুখ করছিলাম, সেটুকু এদের ধম্মে সইল না? বাপিদা তো প্রায় কেঁদে ফেলেছে, ব্যাঙ্গালোর জিতবে বলে এত্ত বাজি কিনে রেখেছিল, সেগুলো পাকিস্তানকে হারানোর পর ছাদ থেকে ফাটানোর কথা ছিল, এখন কোথায় কি।আবার পরের ভারত পাকিস্তান ম্যাচ কি রামনবমী অব্দি হাপিত্যেস করে বসে থাকতে হবে।
আমাদের পোধানদাও তেমনি। কোনো জ্ঞানগম্যি নেই। পুতিন্দাকে দেখে তো শিখতে পারে এট্টু আধটু। বছরের পর বছর ইউক্রেন এর সাথে যুদ্দ চলছে তো চলছেই, কোনো থামাথামি নেই। সেনারা অব্দি বলছে ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি, তবু কোনো হেলদোল নেই। কথায় আছে না, দা শো মাস্ট গো অন। তেমনি মাস্ত যুদ্দ হচ্ছে ইজরায়েল প্যালেস্টাইন। বোম ফেলে ফেলে ধুলো করে দিয়েছে, তবু ছাড়বে না, এমন হাল করবে, ইস্কুলে ম্যাপ ঝোলালেও সেই ম্যাপে প্যালেস্টাইনের জায়গায় একটা গত্ত করা থাকবে। তো সেই রিয়েলিটি শো খানা ঘরের কাছে স্টারানন্দে দেখার এমনি সুযোগ ফসকে গেল, ভাবুন দিকি। তাও তো ওই চ্যানেলটা তেমন দেখি না এখন। মাঝে মাঝে উরি, বিহার চ্যাপ্টার, পরমাণু, পুস্পা এসব দেখে দেখে পচে গেলে ওই খবরের চ্যানেলটা চালাই যেটা মা দেখে, উফ চ্যানেল তো নয় যেন আগুনের গোলা! সারাক্ষণই কেউ না কেউ চ্যাঁচায়। কখনো ট্যাক্সির ওপর উঠে চেল্লাচ্ছে, কখনো গাছের ডালে চড়ে চেল্লাচ্ছে তো কখনো মহাকাশের দিকে তাক করে চেল্লাচ্ছে। শুনেই একটা জোশ এসে যায় বডিতে। হ্যাশ ট্যাগ মানডে মোটিভেশন। তো ওই চ্যানেলেই একটা দেড়েল মতো লোক মোক্ষম প্রশ্ন তুলেছে, হ্যাঁ রে ট্রাম্পের এখানে কিসের ধান্ধা? তুই ব্যাটা তোর দেশে কালো হাটা, মেক্সিকান কে কোট, বাংলাদেশিদের ধরে বাটনা বাট আমরা কি কিছু বলতে গেছি? তা আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে কি করব তোর এত চুলকানি কিসের! আজব মাইরি। আর আমাদের পোধানদাও সুড় সুড় করে সেই কথায় রাজি হয়ে গেল। সুদর্শন চক্র, লক্ষণের শক্তিশেল, রাবণের পুষ্পক রথ সব মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। ছি ছি।
আর সেকু মাকু গুলোও হয়েছে তেমনি তেএঁটে। তুবড়িতে আগুন দিয়েছে কি দেয়নি অমনি রে রে করে নেমে পড়েছে রাস্তায় যুদ্ধ নয় শান্তি চাই স্লোগান নিয়ে। আরে তোদের তো লেনিন বোঝানোর ফাঁকা ফ্ল্যাট আছে, তোরা তো দিব্যি সেক্স পেয়ে যাচ্ছিস, তা বলে অন্যদের ব্যাপারটা একটু দেখবি না! এই তোরা সাম্যবাদী? আমরা যারা সেক্স স্টার্ভড হিন্দু বীর তারা কি করবে? এই যুদ্ধ টুদ্ধ লাগলে, কি ভোটের আগে হেব্বি মারপিট হলে, বোমাবাজি হলে, দাঙ্গা হলে, পোধানদা চারটে গরগরে ঝাল বক্তিমে দিলে সেসব দেখে একটা বেশ গা-টা গরম মতো হয়ে ওঠে, শিরায় শিরায় অ্যাড্রিনালিন রাশ, উফ সে যেন স্বর্গসুখ। এই কটা দিনের সুখটুকুতেও এরা বাগড়া দিতে ব্যস্ত। সাধে কি আর দেশদ্রোহী বলে এই গাড়োলগুলোকে। এরা খালি কাঁদে যুদ্ধ হলে হ্যানোর হবে ত্যানোর হবে, ক্ষতি হবে, বাতি হবে, আরো কত রকম কাঁদুনি। আরে গাধা, যুদ্ধের সিনেমা কি আমরা দেখিনি নাকি কখনো? ঝাড়পিটের শেষে কিন্তু ভিলেনগুলোই হারে, তখন দেশের গায়ে কোনো টাচ হয় কেউ কোনোদিন দেখেছে? বলছে নাকি অর্থনীতি ধ্বংস হবে। আগে থেকেই কপিরাইট নেওয়া আছে, যুদ্ধ হলে সেই যুদ্ধের ওপর সিনেমা বানিয়ে এত পয়সা উশুল হবে, অর্থনীতি ডবল চাঙ্গা হয়ে যাবে। এইসব ব্যাপার স্যাপার এদের মাথায় ঢোকেনা তো আর কি হবে।
তাই গুরুদায়িত্ব এবার আমরাই কাঁধে তুলে নিয়েছি। আপনা হাত জগন্নাথ। যুদ্ধ হচ্ছেনা তো কি, আমরাই যুদ্ধ শুরু করে দেব। কী বলছেন? কার্গিলে কবে যাচ্ছি? আরে ক্ষেপেছেন নাকি। এ যুদ্ধ কি সেই যুদ্ধ, এ হলো ইনফরমেশন ওয়ার। কিবোর্ডে কিবোর্ডে লড়তে হয়। বাপিদা বলেছে ফেক নিউজ বলে কিস্যু হয়না, পারসেপশনটাই আসল। যা যা ফরোয়ার্ড করবে সেগুলো তিরিশ জনকে পাঠাতে হবে, প্রত্যেক লাইকে দশটা করে স্যালুট। তেড়ে এমন এমন খবর ছড়াতে হবে যেন ভারতের লোকের বুক ফুলে ছিয়াত্তর ইঞ্চি হয়ে যায় আর পাকিগুলোর মুখ চুপসে চুয়ান্ন। আপাতত আর ডিস্টার্ব করবেন না মোটে, এখন আমি বীর সেনানি বলে কথা, যেদিন মেজর কি কর্নেল হয়ে যাব আপনাদের আর্সালানে ডেকে পার্টি দেব। আপাতত একটা পিটিশন পাঠিয়েছে বাপিদা, পদ্মাপাড়ে মিসাইল ফেলার জন্য, সেটাতেই সই করার লোক জড়ো করছি। পরে ফাঁকা হলে নয় আপনাদের সাথে আবার চাড্ডি কথা বলা যাবে খন। জ্যায় বাজ্রাংবোলি!