এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • আমার রবীন্দ্রনাথ: কিছু ব্যক্তিগত রোমন্থন 

    Abin Chakraborty লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৮ আগস্ট ২০২৫ | ৫৫ বার পঠিত
  • রবীন্দ্রনাথের সাথে ছোটবেলা থেকে সম্পর্ক টা কেমন গোলমেলে ছিল। কবিতা পড়েছি, মুখস্থ করেছি, গান শুনেছি, নাটক করেছি, খান কতক প্রবন্ধ পড়েছি, এমনকি হাতের লেখাও অভ্যাস করেছি ওনার স্মৃতিকথা লিখে। কিন্ত তারপরেও কেমন একটা দূরত্ব কাজ করত। মনে হত মানুষটা একটা অন্য জগতের, তাঁর ভাবনা চিন্তা গুলো কেমন যেন পুরনো দিনের, একটু বেশীই অতীন্দ্রিয়বাদী। বিশেষ করে ওই প্রেম ও পূজার সমাহারটা কিছুতেই হজম হতনা। ইংরেজি সাহিত্য পড়া আমার মননে বিষয়টা কেমন Elizabethan প্রাচীনতার ঘ্রাণ নিয়ে আসতো। রক্তকরবী পড়তে গিয়ে বারবার যেখানে ঠোকর খেতাম সেটা হল রাজা কে কেন শেষে নন্দিনীর সাথে নতুন যুগের মিছিলে সামিল হতে দেওয়া হবে? কেন সেই যক্ষ্মযন্ত্রণার কারিগরের শাস্তি হবেনা? সবথেকে বড় কথা হল পারিবারিক আবহে প্রতিটি বিষয়েই রাবীন্দ্রিক অনুষঙ্গ খুঁজে বেড়াবার প্রবণতা সেই সময়ের কিশোর মনের বিরুদ্ধতার স্বভাবকে বড্ড প্ররোচিত করেছিল। তাই রবীন্দ্রনাথের বিরোধিতার মধ্য দিয়েই নিজের সত্ত্বার স্বতন্ত্রতা প্রমাণ করার এক হাস্যকর প্রমাদ সব সময়ের সঙ্গী হয়ে উঠেছিল। অথচ কয়েক বছর পরেই স্নাতকোত্তরের পড়াশুনোর সময় থেকে সেসব ধারণা বদলাতে শুরু করল। আমার প্রথম নিজস্ব বিশ্লেষণী প্রবন্ধের বিষয়ও ছিল রবীন্দ্রনাথের জাতীয়তাবাদ সংক্রান্ত বক্তৃতামালা। গোরা পড়ার পর থেকে সেইসব অভিন্নতার বিন্দু গুলো আরো বেশী স্পষ্ট হতে শুরু করলো। নিজের আমির আবরণ কাটিয়ে কখন শঙ্খ ঘোষ কখনও সত্যজিৎ রায়ের সূত্রে বুঝতে থাকলাম এই মানুষটার অভাবনীয় প্রকাণ্ডতার কথা যা আমার মত অকিঞ্চিতকর ব্যক্তিবর্গের যাবতীয় তির্যক জিজ্ঞাসা কে ফুৎকারে নস্যাৎ করে দিতে পারে।

    অথচ এই প্রকাণ্ডতার পিছনে লুকিয়ে থেকেছে কতশত ছোটবড় শোক। বাবা মারা যাওয়ার পর বুঝেছিলাম সেই শোকের অভিঘাত। চোখের সামনে আস্তে আস্তে একটা বিরাট ব্যক্তিত্বের ক্রমিক সংকোচন মন কে ভেতর থেকে কি কি ভাবে ঝাঁঝরা করে দেয় তার খতিয়ান দেওয়া মুশকিল। অথচ রবিঠাকুর কত অল্প বয়স থেকে পরপর সামলেছেন কত শোকের আঘাত। পিতামাতা, সন্তান, স্ত্রী - একে একে চলে গেছেন কত আপনজন। তার পরেও সৃষ্টির উল্লাস, বিশ্বব্যাপী আনন্দের স্রোত এবং নিজের কর্মযজ্ঞের প্রতি থেকেছেন সতত নিষ্ঠাবান। আজীবন অবিচল থেকেছেন সসীম থেকে অসীমের প্রতি যাত্রায়। তাই মৃত্যুর এত বছর পরেও তাঁর লেখা, তাঁর গান, তাঁর জীবনবোধ আমাদের প্রতিদিন সমৃদ্ধ করে, সাহস যোগায়, সান্ত্বনা দেয় এবং অন্ধকার থেকে আলোর পথে উত্তরণের বাতি জ্বেলে যায়।

    ওনার আধ্যাত্মিকতা আজও আমার সাথে মেলেনা। মেলেনা আরও বেশ কিছু বিষয়। কিন্ত যে মানুষটা নিজের পুরো সময়কালকে নিজের সৃষ্টিজগতে সমন্বিত করেছেন তার সাথে কোন জায়গায় ভিন্নতা কাজ করছে তার থেকে অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ সেইসব অজস্র অভিন্নতার আশ্বাস যা এই বিক্ষত সময়ে সর্বদা আশ্রয় দান করে। আজকের এই পঙ্কিল বর্তমানে যখন বাংলার মানুষ, তার ভাষা, তার সংস্কৃতি, তার কৃষ্টি, তার চিরন্তন জীবনবোধ সবই ভেতরে ও বাইরে নানা আক্রমণে জর্জরিত তখন গুরুদেবের কাছে ফেরাটাই সবথেকে বড় স্বস্তি ও শক্তি। ওনার স্মরণে ও শরণেই আমাদের উত্তরণ।

    বি: দ্র: কৈশোরের অবিনের এই হাল দেখে গুরুদেব কোথাও নিশ্চয়ই ক্ষমাশীল চোখে অট্টহাস্যে মশগুল হয়ে আছেন।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন