নারী দিবসকে কেন্দ্র করে এই লেখা, এবারে এই দিনটি পার হয়ে গেছে 'কদিনমাত্র। অন্য দিনের সাথে তফাৎ কিছু নেই, শুধু বছরের এই তারিখটাকে নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে 'নারী'দের জন্য। অনেকে এইসব আদেখলাপনা পছন্দ করেন না, তাদের সব ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গী আছে এই নিয়ে।
মোট মানুষের মোটামুটি অর্ধাংশের জন্য কেন একটি বিশেষ আলাদা দিন?? ঐতিহাসিক ভাবে, শ্রমজীবী নারীদের নির্দিষ্ট সময় কাজ ও বর্ধিত মজুরীর দাবিতে ঐদিন একটি বড়োসড়ো আন্দোলন হয়েছিলো। আচ্ছা, এইখানে কোনো বৈষম্যের গন্ধ পাচ্ছেন? তা আছে বইকি!! পুরুষ শ্রমিকদের 'আটঘন্টা' কাজের দাবী স্বীকৃত হয়ে যাওয়ার পরেও নারীদের ক্ষেত্রে তা হয়নি, আবার মজুরীও অনেকটাই কম, ইচ্ছেমতো। আজও এই বৈষম্য কেটেছে সবজায়গায়, এমনটা জোর গলায় বলা যায় না।
তা, আমি কেনো 'নারী দিবস' নিয়ে এতসব বলছি?? আসলে আমার মা বছর দেড়েক আগে চলে গেছেন, বউ আছে, দিদি আছে। ছোট পারিবারিক বৃত্তের মধ্যে এরা আমাকে ঘিরে থাকা মানুষ এবং 'নারী'। এর বাইরেও বৃহত্তর পারিবারিক গন্ডীতে, বন্ধু বা চেনা-জানার মধ্যে আছেন আরো অনেক মানুষজন যারা আদতে 'নারী', এদেরকে অস্বীকার করে তো আমার জীবন হতে পারে না। এরা এবং সারা পৃথিবীজুড়ে আরো অন্য নারীরা প্রায় চিরকাল যে সামাজিক বৈষম্যের শিকার হয় প্রতিনিয়ত, যে শারীরিক বা মানসিক অত্যাচার বা পারিপার্শ্বিক অসহনশীলতার শিকার হয় প্রত্যহ, অহরহ, তাদের প্রতি দায়বদ্ধতা আমারও। তাকে স্বীকার না করলে আমি নিজেই একজন পিছিয়ে পড়া মানুষ!
আচ্ছা, এতক্ষণ অবধি যারা আমার এই 'ভ্যানভ্যান' পড়ছেন, তারা ভাবছেন, ইনি তো মনের কারবারী , তো এসবের মধ্যে আবার মন কই? মন আছে। আজ পৃথিবীতে যত মানুষ বেঁচে আছেন, চলে ফিরে বেড়াচ্ছেন, করে কমমে খাচ্ছেন, তাদের সকলেরই এই পৃথিবীতে আসা কোনো নারীর দশ মাসের গর্ভ ধারণের সূত্রে। পুরুষের কিন্তু এই ক্ষমতা নেই, কোনো যন্ত্রেরও নেই। এই অবস্থার, বা এর পূর্ব ও পরবর্তী অবস্থায় মেয়েদের মন , মনের উদ্বেগ ও যন্ত্রণা নিয়েই এই লেখা।
কথা না বাড়িয়ে প্রথম গল্পে আসি। একদিন চেম্বারে একজন ভদ্রমহিলা এলেন। একলাই। সাধারণতঃ আমি সঙ্গে কোন পরিবারের লোক, নিদেনপক্ষে অতিপরিচিত কেউ না থাকলে চিকিৎসা শুরু করিনা। কিন্তু এক্ষেত্রে করেছিলাম।
ইনি প্রবাসী। শিশু সন্তানকে নিয়ে শহরে নিজের বাড়িতে এসেছিলেন কয়েকমাসের জন্য। তখন গভীরতম বিষাদে আক্রান্ত ছিলেন। স্বামী সঙ্গে আসেননি, তিনি বহুজাতিক সংস্থায় কাজ করেন। ভদ্রমহিলার বাড়ীতে বাবা বৃদ্ধ, একা, মা মারা গেছেন আগেই। বাবাকে উনি এই বিষাদের খবর দিতে চান না, তবে দূর ভাষে স্বামীর সাথে কথা বলেই এসেছেন বলে জানালেন। নিজে একটি স্কুলে চাকরী করতেন, কিন্তু বছর আড়াই আগে গর্ভধারণের কিছুদিন পর চাকরী ছেড়ে দিতে হয়। বেসরকারী স্কুলে "child care leave" বা "maternal leave" এর অতো সুবিধা নেই। যাই হোক, এই কর্মহীন অবস্থাতেই ওনার বিষাদের সূত্রপাত। তারপরে বাচ্চা জন্মানোর পরে এই বোধ আরো বাড়তে থাকে। এরমধ্যে স্বামীর উপেক্ষা, সময় না দেওয়া, এইসব যন্ত্রণাকে আরো বাড়ায়। স্বামী কর্তব্য সব করলেও নিজের কাজ নিয়ে সারাদিন ব্যস্ত থাকতেন, কোম্পানীর প্রয়োজনে, এমনকী প্রেগন্যান্সির সময়েও বিদেশে অন্ততঃ দুবার বেশ কিছুদিনের লম্বা কাজে থেকেও এসেছিলেন। (গর্ভাবস্থার ইংরেজি প্রতিশব্দ প্রেগন্যান্সি, কিন্তু বাংলাতেও বহুল ব্যবহৃত। একঘেয়েমি কাটাতে দুটি শব্দই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যবহার করেছি।)
এই নি:সঙ্গতার সূত্র ধরেই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আলাপ হয় একজনের সাথে। অন্তরঙ্গতা বাড়ে। নির্ভরশীলতা বাড়ে। কিন্তু, কিছুদিন আগে, সেই 'অন্তরঙ্গ' বন্ধুর বিয়ে ঠিক হয়। বিয়েটা হওয়ার কথা, আবার ওনারই এক আত্মীয়ার সঙ্গে। এই খবরে, উনি একেবারেই ভেঙে পড়েন। এই অবস্থাতেই আমার কাছে আসেন।
প্ৰথম যে দুদিন আসলেন, চোখের জল বাঁধ উপচিয়ে পড়ছিলো। কথা বললাম, ওষুধ দিলাম। তৃতীয় বার থেকে দেখলাম অনেকটা সামলে নিয়েছেন। চতুর্থ বার দেখলাম, সবকিছু সামলে নিয়ে নতুন কাজকর্ম করার উৎসাহ তৈরী হয়েছে। এরইমধ্যে ফিরে যাওয়ার সময় এসে গেলো, ততদিনে স্বামীর প্রতি পুরোনো মমত্ববোধ ফিরে এসেছে।(ওদের বিয়ে ভালোবাসা করেই!)
প্রবাসে আমার counterpart কোনো চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগের নির্দেশ দিয়ে, আপাতত ওষুধ খেয়ে যেতে বলেই আমার কাজ ফুরিয়েছিলো। কিন্তু, আলোড়িত হয়েছিলাম, বর্তমান দ্রুত সময়ের, গর্ভাবস্থায় সুগভীর মানসিক চাপের হিসেব কষে।
এইখানে আরেকটু প্রাঞ্জল করে একটি বিষয় বলি। গর্ভ-পরবর্তী অবস্থায় এক ধরনের মন খারাপ, বিষাদ ভাব তৈরী হতে পারে, তা দীর্ঘস্থায়ী কম হয়! এর পোশাকী নাম 'পোস্ট-পারটাম ব্লু' [Post-partum Blue]. যদি বিষাদের পরিমাণ বেশী হয়, সমস্যা বেশীদিন ধরে থাকে, তাহলে সাধারণ মানসিক অবসাদগ্রস্থতার 'গর্ভ-পরবর্তী প্রকার' হিসেবে একে চিহ্নিত করা যেতে পারে। [Major Depressive Disorder (Post-partum Origin)]. আবার সরাসরি, Post-partum Depression-ও বলা হয়।
ওরে বাবা! অনেক টেকনিক্যাল কচকচি হয়ে গেলো। উপরের ঘটনায় বিষাদের উৎস কিন্তু সরাসরি গর্ভাবস্থা নয়। এক্ষেত্রে উত্তর-আধুনিক সময়কালে গড়ে ওঠা একধরনের নিরাপত্তা-হীনতা, নির্ভরতা ও আংশিক বিশ্বাস ভঙ্গ এরজন্য দায়ী, সঙ্গে প্রেগন্যান্সি একটি অন্যতম চাপের বিষয় হিসেবে এসেছিল।
আরেকটা ঘটনার কথা বলি। এক্ষেত্রে বউটিকে তার স্বামী ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনরাই নিয়ে এসেছিলো প্ৰথমে। রীতিমতো অসংলগ্ন আচরণ, প্রবল উত্তেজনা ছিলো তখন তার মধ্যে। যাই হোক, ওষুধ পত্র দিয়ে সেসব কমানো গেলো। একটু দেরীতেই দেরীতেই আসতো, তবে ওষুধটা খেতো ঠিকঠাক তখন।
হঠাৎ একদিন এসে জানালো, মাসিক তিন-চার মাস বন্ধ। আমরা যেসব ওষুধ ব্যবহার করি তাতে এরকম অনেক সময় হয়, তবু ওকে যে ওষুধ দিয়েছিলাম, তাতে এই সম্ভাবনা কম। রুটিন অনুযায়ী 'ইউরিন টেস্ট' করালাম, পজিটিভ এলো। বোঝালাম যে, ওর ওষুধ চলাকালীন বাচ্চা এসেছে, তাই গর্ভস্থ ভ্রূণ-এর উপর কিছু খারাপ প্রভাব পড়লেও পড়তে পারে। এই অবস্থায় যদি বাচ্চা না রাখতে চায়, তাহলে, আবার বাচ্চা রাখতে চাইলে, তাহলেও, যেন একবার কোনো স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ-এর সঙ্গে যেন কথা বলে। ওদের আগে একটি বাচ্চা ছিলো, তাই এইসব বললাম। নইলে প্রথম বাচ্চা হলে, কখনোই 'না রাখার' কথা বলতাম না। ওরা বাচ্চা রাখতে চাইলো, আমি ওষুধ কমিয়ে দিলাম। তাতে আবার মানসিক অসুবিধা বাড়ায়, আবার ডোজ বাড়াতে হয়েছিলো।
এইখানে একটা জরুরী 'ডাক্তারি' কথা বলে নিই। 'মাতৃত্ব' চলাকালীন যেসব ওষুধ ব্যবহার করা হয়, তাদের মূলতঃ চারটে ক্যাটেগরিতে ভাগ করা হয়। A, B, C, আর D। এরমধ্যে 'A' এর মধ্যে যেগুলো, সেগুলো প্রেগন্যান্সির সময় নিশ্চিন্তে ব্যবহার করা যায়, আর 'D' অংশের ওষুধগুলো কখনোই ব্যবহার করা যায়না। আর 'B' এর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা চলে প্রয়োজন হলে, বিপদের সম্ভাবনা কম। কিন্তু, 'C' হলে একমাত্র জরুরী ও বিশেষ প্রয়োজনেই ব্যবহার করা যেতে পারে, ভ্রূণের বিপদের সম্ভাব্যতা বেশী। আমাদের ব্যবহৃত মানে মনের অসুবিধায় যেসব ওষুধ ব্যবহার হয়, তারমধ্যে 'C' ক্যাটেগরি ভুক্ত ওষুধের সংখ্যা বেশি। 'B' আর 'D' এর সংখ্যা যৎসামান্য। আর কি কান্ড, 'A' তে একটিও নেই!
যাই হোক, দ্বিতীয় বাচ্চাটাও ভালোভাবেই হয়ে গেলো। কিন্তু আবারো মেয়ে। চিকিৎসা চলতে থাকলো। ওষুধ কমানো হলেও, বাচ্চাকে মাতৃ দুগধ না খাওয়ানোর পরামর্শই দিতে হয়েছিলো, নিয়মমাফিক। কারণ এই ধরনের বেশিরভাগ ওষুধই, দুধে নি:সৃত হয়ে থাকে। এইসময়ে 'লাইগেশন' অপারেশন করে নিতে বলেছিলাম। করেনি। ব্যাস, কিছুদিন বাদে আবার সেই পুরোনো সিকুয়েল... মাসিক বন্ধ... 'ইউরিন টেস্ট'... পজিটিভ... এবারেও বাচ্চা রাখার সিদ্ধান্ত... আমার সতর্ক বাণী... সব বিফলে গিয়ে আবারও কন্যা সন্তান!!!
আমি ভীষণ রেগে গিয়ে আর চিকিৎসা করতে চাইনি, কিন্তু ওরা এবারে চলে এলো হাসপাতালে। চিকিৎসা করতেই হবে। বাধ্যতামূলকভাবেই। না, ভবিতব্য বদলালো না। হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় পুনরায় মাতৃত্ব এবং পুত্র সন্তান পেয়ে বাবা-মা এর গদগদ অবস্থা।
এক্ষেত্রে কোনো শিশুরই কোনো জন্মগত ত্রুটি হয়নি, কিন্তু হতে পারতো। হয়তো ওষুধগুলো ততটা মারাত্মক নয়, যেহেতু যথেষ্ট পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়নি আজ অবধি, 'নিরাপদ' বলে দেওয়ার মত পরিসর তৈরী হয়নি। কিন্তু, এটাই আমাদের সমাজ, মানসিক অসুস্থতা স্বত্বেও, ওষুধ খেয়েও, পুত্র সন্তানের তাগিদে চার চারটি সন্তান উৎপাদন করতে হবে একজন নারীকে, এবং সে নিজেও এই চাপের বিরুদ্ধে কিছু বলবে না, বরং আনন্দের সাথে এই চাপ গ্রহণ করবে (আমি আলাদা করে মেয়েটির সাথে কথা বলেছিলাম, সন্তানধারনে ওর কোনো আপত্তি কোনো সময়েই ছিলো না!), সমাজের শিক্ষাটাও এমনি। অথচ এই প্রান্তিক পরিবারটির উপার্জন চারটি সন্তান প্রতিপালনের পক্ষে একেবারেই অনুকূল নয়। এবং এর মধ্যে, তিনটিই কন্যা সন্তান।
অনেকটা বড় হয়ে গেলেও শেষ যে মেয়েটির কথা লিখবো, সেই মিষ্টি মেয়েটির মানসিক অসুস্থতা ধরা পড়ে ১৩-১৪ বছর বয়সে। খুবই গরিব ঘরের মেয়ে, চিকিৎসায় সেরেও ওঠে বেশ তাড়াতাড়ি, ওষুধ কমাতে কমাতে একসময় খুব কম ডোজের ওষুধই চলছিল।
তারপর অনেকদিন খোঁজ নেই। হঠাৎ একদিন উদয়, এবারে 'কপাল ফাঁটা' অবস্থায়, মাত্র ১৬ বছর বয়সেই। আবার আগের সমস্যা শুরু হয়েছে। চিকিৎসা শুরু করলাম, সাড়াও দিতে থাকলো, কিন্তু আচমকা প্রেগন্যান্সি! প্রথম সন্তান, এতো কম বয়স, এবারের চিকিৎসায় একেবারে প্রাথমিক অবস্থা, না পারবো চট করে ওষুধ পত্তর কমাতে... প্রচন্ড রাগ প্রায় আক্রোশের আকারে ঝরে পড়লো, ওর স্বামীর ওপর। সে আবার একেবারেই বোকাসোকা ধরণের ছেলে। আমার রাগ দেখে গুটিয়ে গিয়ে আমতা আমতা করতে লাগলো। পাঠানো হল স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞর কাছে। চিকিৎসা চলল, কিন্তু সাত মাসে 'মিসক্যারেজ'। আবার, এই একটা ঝটকায় মানসিক সমস্যা সাময়িক ভাবে বাড়লো, তবে আস্তে আস্তে নিয়ন্ত্রণে আসলো।
মেয়েটি এখনো চিকিৎসা করায়, খুব অল্প ওষুধ খায়, এমনকি এলাকার বা গ্রামের কারো কোনো গন্ডগোল দেখলে হাসপাতালে আমার কাছে নিয়ে আসে। কিন্তু ওর আর কোনো সন্তান হয়নি এখনো!!
এইখানে, দেখা যাচ্ছে গর্ভ ধারণ বা না-ধারণ, দুটোই মেয়েদের মানসিক স্বাস্থ্যের পক্ষে গভীর চাপের একটি বিষয়।
এই লেখায় আপনাদের অনেক A B C D শেখালাম, ডাক্তারির সমস্যা নিয়ে বললাম বেশী, সাহিত্য উপাদান একেবারেই কম। আসলে, একটা বিশেষ দিনকে স্মরণ করে একটা বিশেষ ধরনের সমস্যার বিশেষ একটা দিক তুলে ধরার চেষ্টা!!
আসলে কিন্তু বোঝাতে চাইলাম, মন আর শরীরকে আলাদা করা, বড় সহজ নয়। তার চেষ্টা করারও কোনো দরকার নেই, 'শারীরিক' আর 'মানসিক' আসলে মিলেজুলে থাকা বিষয়, পরিবেশ ও সমাজের সঙ্গেও। জানি না কতটা বোঝাতে পারলাম!!
সবশেষে বলি, আমার আরেকজন রোগিনী আছে, এরও একটা মিসক্যারেজ... না তা ঠিক নয়!! জন্মানোর মাত্র কয়েকদিন বাদে বাচ্চাটা মারা যায়। এর সমস্যাটাও একটু জটিল। মুস্কিল হলো, 'D' ক্যাটেগরির একটি ওষুধে চমৎকার থাকে, কিন্তু তার থেকে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ ওষুধ-এ শিফট করার চেষ্টা করলেই বিগড়ে যায়। আবারো চেষ্টা করছি।
শেষটুকু লিখলাম, এটা বোঝাতে যে মানসিক সমস্যা নিয়ে আমাদের নিজেদেরও কত মানসিক সঙ্কটে থাকতে হয়!! একটু বুঝুন, আপনারা, আর হ্যাঁ, নারীদের বুঝুন, তাদের সমস্যাগুলো একটু আন্তরিকভাবে বুঝুন। পূর্ণ কর্মক্ষমতার সময়ে প্রতি মাসে পাঁচদিন কি যন্ত্রণা, কি অসহায় রক্তক্ষরণ নিয়ে বাঁচতে হয়, সেটা বুঝুন। এটুকু বোঝার জন্য 'নারীবাদী'দের মতো চিন্তা-ভাবনা করতে হবে না, শুধু পারস্পরিক সহানুভূতিশীল হলেই হবে।
অনেকগুলো বিষয় এই লেখায় জড়িয়ে দিতে চেষ্টা করলাম,
১)মানসিক অসুস্থতার 'কারণে' গর্ভ-ধারণের সমস্যা।
২)গর্ভ-পরবর্তী মানসিক অসুস্থতা। এর সবচেয়ে মারাত্মক প্রকারটির কোনো উদাহরণ দিই নি, অথচ লেবার ওয়ার্ড থেকে সবচেয়ে বেশী রেফার এই ধরনের অসুস্থতার জন্যই হয়। একে বলে পোস্ট-পারটাম সাইকোসিস [Post-partum Psychosis]. এই ধরনের অসুস্থতায় ঠিক গর্ভ-পরবর্তী অবস্থাতেই প্রচন্ড উত্তেজনা, অসংলগ্ন আচরণ, প্রচন্ড অস্থিরতা, এই ধরনের লক্ষণ দেখা যায়। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই খুব অল্পদিনের চিকিৎসাতেই রুগী সুস্থ হয়ে ওঠে, তবে কিছুক্ষেত্রে এটি দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার সূত্রপাতও হতে পারে।
৩)মানসিক অসুস্থতার 'মধ্যেও' গর্ভ-ধারণের সমস্যা।
৪)অন্য কোনো মানসিক অসুস্থতা, যাতে গর্ভাবস্থা একটি গুরুত্বপূর্ণ 'চাপের' বিষয় (stressor)।
নারীদের, বিশেষত কন্যাসন্তানদের নির্যাতনের এবং তৎপরবর্তী মানসিক সমস্যারও অনেক ইতিহাস আছে। অন্য কোনোদিন, অন্য কোনো লেখায় আসতে পারে সেই প্রসঙ্গ।