২০১৯ সাল। ভারতবর্ষ সফর শেষে আমেরিকায় বাড়ি ফিরছি। কলকাতা থেকে চড়ে বসলাম কাতার কোম্পানির বিমানে। যাত্রার প্রথম অংশ কলকাতা থেকে দোহা, তারপর প্রায় ১৩/১৪ ঘন্টার পথ। দীর্ঘ উড়ানে অনেক যাত্রীই নিদ্রাদেবীর আরাধনা করেন পরম আনন্দে। আমি সে সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত। তাই এই ধরণের লম্বা উড়ানে সচরাচর আমার সঙ্গী হয় বই। এ যাত্রাতেও তার ব্যতিক্রম হল না। বিমান রানওয়েতে গড়াতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গেই হাতে তুলে নিয়েছিলাম একটি বই। হাসান আজিজুল হকের ‘আগুনপাখি’।
‘আমার মায়ের য্যাকন মিত্যু হলো আমার বয়েস ত্যাকন আট-ল বছর হবে। ভাইটোর বয়েস দেড় দু বছর। এই দুই ভাই বুনকে অকূলে ভাসিয়ে মা আমার চোখ বুজল। ত্যাকোন্কার দিনে কে যি কিসে মরত ধরবার বাগ ছিল না।’
বিমান মাটি ছেড়ে আকাশে উড়ল একসময়। আমি কিন্তু টেরও পেলাম না। কারণ তখন আমি পুরোপুরি নেমে এসেছি মাটির পৃথিবীতে। আক্ষরিক অর্থেই। উপন্যাসের শুরুতেই বুঝলাম কথক একজন মাটির কাছাকাছি থাকা মানুষ। তার জবানিতে পরিশীলিত ভাষা ব্যবহার করেননি লেখক। আর এই কুশলী ভাষাপ্রয়োগের মাধ্যমে তিনি অনায়াসে তৈরী করে দিলেন আখ্যানের আবহ। কাহিনী এগোতে থাকল। কথক একটি গাঁয়ের মেয়ে। চোদ্দ-পনেরো বছর বয়সে বিয়ে হল তার। তারপর সুখ-দুঃখের নানা অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে তার জীবন বইতে থাকে। সংসারজীবনের ক্ষুদ্রতায় কষ্ট পায় সে। কিন্তু তা সত্ত্বেও পরম মমতায় গড়ে তোলে তাদের একান্নবর্তী পরিবারটি। তারা মুসলমান। নিজের বাপের বাড়ী আর শ্বশুরবাড়ীর বাইরে মেয়েটি চারপাশের কিছু মানুষজনকে জানে। তাদের মধ্যে বেশীরভাগই হিন্দু। কিন্তু হিন্দু বলে যে তারা আলাদা এমন কথা তার মাথাতেই আসেনি কখনও। সে বলে , ‘বিয়ের পরে কত্তামার কাছে গ্যালম। সি তো বড়লোক হিঁদুর বাড়ি। কত্তামা সারা গায়ে গয়না পরিয়ে দিলে। একবারও মনে হয় নাই হিঁদুতে গয়না পরিয়ে দিচে। মনে হয়েছিল ঠিক যেন আপন মেয়েবউকে জান ভরে মা গয়না পরাইচে।’
ক্রমশ তার নিজের সংসারের শ্ৰীবৃদ্ধি হয়। ধনে-জনে-মানে জমজমাট হয়ে ওঠে পরিবারটি। ইতিমধ্যে বেজে ওঠে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা। নিত্যকার সামগ্রী বাজারে দুর্লভ হয়ে পড়ে। এরই মধ্যে প্রাদুর্ভাব হয় কলেরা আর বসন্তের। একবার খরা, তো একবার অতিবৃষ্টি – এই দুইয়ের প্রকোপে দু’দু’বার ফসলের দারুণ ক্ষতি হয়। একান্নবর্তী পরিবারের পারিবারিক বাঁধন আলগা হয়ে পড়ে এইসব রাজনৈতিক ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে। অন্নের অভাবে স্বার্থের নগ্নরূপটি প্রকট হয়ে ওঠে। আকাল কাটতে না কাটতেই আর এক দুর্বিপাকের সম্মুখীন হয় গ্রামের মানুষগুলি। যুদ্ধ, আকাল, মহামারী পার হয়ে এবার শুরু হল দাঙ্গা। পারস্পরিক সম্প্রীতির ঐতিহ্যটি ভুলে হিন্দু ও মুসলমান অবতীর্ণ হয় প্রাণঘাতী দ্বন্দ্বে। গভীর বেদনায় কথক বলে চলে, “আর কিছু দেখাদেখি নাই, পাঁচজনা হিঁদু কলকেতার রাস্তায় একটো মোসলমানকে একা বাগে পেলে তো পিটিয়ে কিম্বা ছোরা ঢুকিয়ে মেরে ফেললে আবার পাঁচজনা মোসলমান একটো হিঁদু দেখতে পেলে কি চিনুক না চিনুক, কিছু করুক না করুক, তাকে তরোয়াল নাইলে টাঙ্গি, নাইলে যা দিয়েই হোক মেরে ফেললে।”
দু’টুকরো হয় ভারতবর্ষ।
‘আগুনপাখি’ দেশভাগের পটভূমিকায় রচিত অসাধারণ মর্মস্পর্শী এক কাহিনী। পশ্চিমবাংলার বর্ধমান জেলার প্রত্যন্ত গ্রামের এক মুসলিম পরিবারের দৈনন্দিন জীবনের অভিজ্ঞতার মধ্যে লেখক সুকৌশলে বুনে দিয়েছেন – সাতচল্লিশের আগের অখণ্ড ভারতের উত্থান-পতন, তদানীন্তন রাজনীতি, বিশ্বযুদ্ধের অস্থিরতা, দুর্ভিক্ষ, দাঙ্গা, দেশভাগ, দেশগঠন ও সামাজিক অবক্ষয়ের আখ্যান। এ কাহিনীর নায়ক সময়। সমাজ, ইতিহাস ও রাজনীতি মিলেমিশে গেছে এ উপন্যাসে। একটি পরিবারের নানা ওঠাপড়ার ছবি আঁকতে আঁকতে গোটা একটি সমাজের উত্থান-পতনের চিত্র এঁকে দিয়েছেন কাহিনীকার। বইটির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সুঠাম গদ্য পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করে। লেখক আগাগোড়া উপন্যাসটিতে রাঢ়বঙ্গের আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করেছেন। একটি গ্রাম্য পরিবারের বউ-ঝিদের জীবনের হাসি-কান্নার বর্ণনা দিতে তাদের মুখের ভাষার ব্যবহার – গল্পের চরিত্রদের সঙ্গে পাঠকদের এক নিবিড় যোগসূত্র রচনা করে। কাহিনীতে বর্ণিত মানুষগুলি বড় কাছের মানুষ হয়ে ওঠে। পড়তে ভুলে যাই, যে আমি উড়ছি আকাশপথে। চূড়ান্ত গন্তব্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো। মনে মনে আমি তখন উপস্থিত রাঢ়ের সেই গ্রামটিতে, যেখানে ‘বিষ্টি গেল, হাওয়া গেল, আসমান আবার নীলবন্ন হলো, সোনাবন্ন রোদ হলো - সব হলো!’ আর এমন বিশ্বাসযোগ্য আবহ রচনাতেই হাসান আজিজুল হকের এই সৃষ্টি অসামান্যতার দাবীদার। এ উপন্যাসের জন্য ২০০৮ সালে আনন্দ পুরস্কার পান লেখক। ভাবলে অবাক লাগে, যে অজস্র ছোটগল্পের রচয়িতা কথাসাহিত্যের এই নিপুণশিল্পীর এটিই প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস।
বইটির একেবারে শেষের দিকে কর্তা পরিবার নিয়ে পাড়ি দিতে যান পাকিস্তানে। কিন্তু সবাইকে অবাক করে বেঁকে বসে তার বৌ। সে থেকে যেতে চায় শ্বশুরবাড়ির ভিটেতেই। স্বামীর রক্তচক্ষু, পুত্র-কন্যার আবেগ-বিহ্বল অশ্রু – কিছুই নিরস্ত করতে পারে না তাকে। মেজখোকা তার মাকে প্রশ্ন করে, যে পরিবারের সকলে পাকিস্তানে যাওয়া স্থির করলে মা কি করে একা ফাঁকা বাড়িটিতে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। জবাবে মা বলে, ‘সত্যি বলছি বাবা, আমি ক্যানে তোমাদের সাথে দেশান্তরী হব, এই কথাটি কেউ আমাকে বুঝাইতে পারে নাই। পেথম কথা হচে, তোমাদের যি একটো আলেদা দ্যাশ হয়েছে তা আমি মানতে পারি না। একই দ্যাশ, একইরকম মানুষ, একইরকম কথা, শুদু ধম্মো আলেদা সেই লেগে একটি দ্যাশ একটানা যেতে যেতে একটো জায়গা থেকে আলেদা আর একটো দ্যাশ হয়ে গেল, ই কুনোদিন হয়? এক লাগোয়া মাটি, ইদিকে একটি আমগাছ একটি তালগাছ, উদিকেও একটি আমগাছ, একটি তালগাছ! তারা দুটো আলাদা দ্যাশের হয়ে গেল? কই ঐখানটোয় আসমান তো দুরকম লয়। শুদু ধম্মোর কথা বোলো না বাবা, তাইলে পিথিমির কুনো দ্যাশেই মানুষ বাস করতে পারবে না।’ মনে আছে এইটুকু পড়ে অনেকক্ষণ বসে ছিলাম বই মুড়ে। হৃদয়-নিঙড়ানো আবেগ-মাখা বড় সত্যি তার কথা। দেশ নিয়ে রাজনীতি নানাবিধ জটিলতা তৈরী করে মানুষের জীবনে। ধর্মের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা দ্বি-জাতিতত্ত্বের অবশ্যম্ভাবী ফলস্বরূপ ভারতভাগ হয়। ভারতের জাতীয় জীবনে এ ঘটনার প্রভাব স্থায়ী ও সুদূরপ্রসারী। দেশভাগ তাই বাংলাসাহিত্যে বহুচর্চিত একটি বিষয়। স্বাধীনতালাভের চুয়াত্তর বছর পরেও তা প্রাসঙ্গিক। বইটি পড়ার পরে মনে প্রশ্ন জাগে ‘দেশ’ বলতে আমরা কি বুঝি?
এই বছরের আগস্ট মাসের গোড়ার দিকের কথা। স্থানীয় এক মহিলার বাড়ি মধ্যাহ্নভোজের নিমন্ত্রণ। পুরুষমানুষ-বর্জিত মজলিশ। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, ঘটনাস্থল মার্কিনদেশের শিকাগো শহরের কাছাকাছি এক শহরতলী। জোরদার আলাপ চলছে নানা বিষয়ে। গৃহকর্ত্রী ও সমবেত অতিথিরা সকলেই বাঙালী। কথাবার্তার ডালপালা বেয়ে নেমে এল সন্তানদের বিবাহের বিষয়টি। একজন মন্তব্য করলেন, “এখন আর বাঙালী কি অবাঙালী তা ভাবি না। ছেলেমেয়ে ভারতীয় বিয়ে করছে শুনলেই আনন্দ হয়।” মন্তব্যকারী সাতের দশক থেকে ভারতের বাইরে। কাগজেকলমে আমেরিকার নাগরিক। তাঁর দুই সন্তান এদেশেই জন্মেছে ও বড় হয়েছে। একজোড়া মার্কিন নাগরিকের মা এবং চার দশকেরও বেশী সময় ধরে ভারতের বাইরে বসবাস করা এই মানুষটির এ-হেন মন্তব্য বেশ কিছুদিন ধরে ভাবাচ্ছে আমাকে। ভারতের ৭৫তম স্বাধীনতাদিবস আসন্ন। এই মুহূর্তে তাই প্রথম প্রজন্মের অভিবাসী ভারতীয়ের কাছে জাতীয়তাবাদের রূপটি কেমন, তা একটু গভীরে গিয়ে খোঁজ করার ইচ্ছে হল। ‘আগুনপাখি’ উপন্যাসে, একেবারে শেষে, কথকের মুখ দিয়ে তার আটপৌরে ভাষায় ‘দ্যাশ’ বলতে সে কি বোঝে – সে কথা লিখেছেন ঔপন্যাসিক। এই বোঝাটা কিন্তু খুব একরৈখিক নয়। সময় ও পরিস্থিতির সঙ্গে তা পরিবর্তিত হতে থাকে।
দেশ বলতে আমরা কি বুঝি, তা এক বিস্তারিত প্রসঙ্গ। তবে আমাদের অস্তিত্বের অনেকখানি জুড়ে যে তা থাকে – এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। দেখা হলে বন্ধু যখন প্রশ্ন করে, ‘দেশে কবে যাচ্ছো?’ – তখন সে দেশ কোন দেশ, তা বুঝে নিতে কোন অসুবিধে হয় না। আমি এবং আমার মতো আরও যাঁরা নিজেদের শিকড় থেকে যোজন মাইল দূরে শাখাপ্রশাখা বিস্তার করেছেন, তাঁদের চেতনায় দেশ একটা সদা জাগরূক সত্তা। নিজেদের অজান্তেই আমাদের কাজে ও চিন্তায় লক্ষ্য করা যায় তার প্রভাব। দৈনন্দিন জীবনচর্যায় তো বটেই। আমেরিকায় অনাবাসী ভারতীয়দের সংখ্যা এখন অনেক। তাই ভারতীয় মুদিখানার দোকান ও রেস্তোরাঁ খুঁজতে আজকাল কোনওরকম কষ্ট করতে হয় না। তবে এ চিত্র সাম্প্রতিক কালের। গল্প শুনেছি, যে ১৯৭০ সাল নাগাদ বা তার কিছু আগে-পরে যাঁরা এদেশে এসেছেন, তাঁদের জন্য ব্যাপারটি খুব সহজ ছিল না। কেউ কেউ দু’ঘন্টা (প্রায় ১০০ মাইল) গাড়ী চালিয়ে গিয়ে সংগ্রহ করেছেন হলুদগুঁড়ো বা জিরেগুঁড়োর প্যাকেট। ভেনিস বা পর্তুগাল বেড়াতে গিয়ে, “আরে, এ তো পুরো বেনারসের গলি” – এমনতর মন্তব্যে তাই আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। আর যেদিন দুপুরে আকাশের বুকে মেঘের পরে মেঘ জমে ওঠে, তারপর মুষলধারায় নেমে আসে উষ্ণ বৃষ্টি, হঠাৎ করে গা শিরশিরে হাওয়া বইতে থাকে, হাঁটতে বেরিয়ে চুপচুপে ভিজে বাড়ি ফিরি আমি আর আমার প্রতিবেশী। ফুটতে থাকে চায়ের জল। তেলেভাজার বেসম ফেটাতে ফেটাতে আমি গুনগুন করি ‘ঝরঝর বরিষে বারিধারা’। পড়শী বলে ওঠে, “আজ কিতনা সুন্দর মৌসম হ্যায়। মুঝে Bombay-কা বারিশ ইয়াদ আ রাহা হ্যায়।” দেশের মত বৃষ্টি বলে সে বাদলদিনটি বড় মধুর ঠেকে। ফ্লোরিডায় বা ক্যালিফোর্নিয়ায় একগাছ জবাফুল ফুটে থাকতে দেখে অকারণ পুলকে ভরে ওঠে মন। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ভারত ফাইনালে উঠলে নির্দিষ্ট দিনে সে খেলাটি দেখার জন্য অভিবাসী অনেক বাড়িতেই উৎসবের আবহ তৈরী হয়। একাধিক ভারতীয় পরিবার কোনও বাড়িতে জড়ো হয়ে চলে খাওয়া-দাওয়া, হাসি-তামাশা আর খেলা দেখা। জমজমাট ব্যাপার! আর ভারত যদি জিতে যায় সে ম্যাচে, তাহলে তো আর কথাই নেই! পরবর্তী বেশ কয়েকদিন অভিবাস জীবনে খুশীর জোয়ার।
জীবিকা বা ভাগ্যান্বেষণে দেশের মাটি ছেড়ে এলেও, সে মাটির টান অলক্ষ্যে বয়েই চলেছে শিরা-ধমনীতে। ঠিক যেমন চুক্তি অনুযায়ী কাগজেকলমে দ্বিখণ্ডিত করলেই, একটা ভূখণ্ডের মানুষদের দ্বিখণ্ডিত করা যায় না, তেমনভাবেই হয়তো দেশ ছেড়ে এলেও, দেশ থেকে যায় আত্মার অবচেতনে। কখনও কখনও এমনও মনে হয়, যে জন্মভূমির সঙ্গে এই যে নাড়ির টান – সেটা বিদেশে না এলে এমন করে অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করতে পারতাম কি? ভারতবর্ষ ছেড়ে মার্কিন মুলুকে পাড়ি না জমালে, নিজেদের যতটা না ভারতীয় ভাবতাম, তার থেকে ঢের বেশী হয়তো বাঙালী, পাঞ্জাবী, তামিল বা গুজরাটি ভাবতাম। এদেশে অন্য কোন দেশের মানুষের সঙ্গে পরিচয়ের শুরুতে যদি তাঁরা প্রশ্ন করেন, “Where are you from?”, উত্তরে বলি, “I am from India.” ভারতের কোন প্রদেশের মানুষ কে সেটা বিবেচ্য নয় তখন। প্রাদেশিকতার ঊর্ধ্বে উঠতে পেরে একরকমের মুক্তির আস্বাদ পাই যেন। একইসঙ্গে আরও একটা বিষয় আছে ভাবার। পোল্যান্ড বা ইরান থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসা মানুষের পাশাপাশি কাজ করতে করতে নিজেকে বৃহত্তর পৃথিবীর নাগরিক বলেও ভাবতে শুরু করি নিজেকে। দেশকে ভুলে গিয়ে নয় কিন্তু। নিজের নিজের ভাষা, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ সঙ্গে নিয়েই বিশ্বের অন্যান্য দেশের মানুষের পাশাপাশি পথচলা। নকশিকাঁথায় বহুবিচিত্র সুতোর আলপনা। তা সত্ত্বেও রসগ্রাহী দর্শকের চোখে পৃথকভাবে লাল বা বেগুনী সুতোর নকশার বাহার নয়, কাঁথাটির সামগ্রিক শিল্পসৌন্দর্যই ধরা দেয়। স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে স্বাধীনতা শব্দটি ঘুরেফিরেই আসে মনে। আসে দেশ ও তার স্বাধীনতা সম্পর্কিত নানাকথা। ব্যক্তিজীবনে জাতীয়তাবাদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। যে কোনও মানুষের ব্যক্তিসত্তার গঠনে তার মাতৃভূমির অবদান একটা বিরাট অংশ জুড়ে থাকে। তবে সেই জাতীয়তাবাদ যখন ভৌগোলিক বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে পড়ে, তখন তার পরিণতি যে কতদূর ভয়াবহ হতে পারে, একটু ইতিহাস ঘাঁটলেই তার অজস্র উদাহরণ পাওয়া যাবে। যত ভাবি ততই বুঝতে পারি সাম্প্রদায়িকতা, প্রাদেশিকতা ও জাতীয়তাবাদের সঙ্কীর্ণতা থেকে মনকে মুক্ত করা – স্বাধীন ও সাম্যময় পৃথিবী গঠনের পথে এক দৃঢ় পদক্ষেপ।
আবার একবার ফিরে যাই ‘আগুনপাখি’ উপন্যাসটির প্রসঙ্গে। দেশভাগের ভ্রান্ত রাজনীতির বিরুদ্ধে নিজের অজান্তেই প্রতিবাদী হয়ে ওঠে গল্পের ভাষ্যকার নারী চরিত্রটি। তার এই প্রতিবাদ নিজের অস্তিত্বকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য। পুরাণের ফিনিক্স বা আগুনপাখির মতই ধ্বংসের আগুনের চিতাভস্ম থেকে উঠে আসে তার বলিষ্ঠ স্বর, ‘সকাল হোক, আলো ফুটুক, তখন পুবদিকে মুখ করে বসব। সুরুজের আলোর দিকে চেয়ে আবার উঠে দাঁড়াব আমি।’ চারদিকের সাম্প্রদায়িক হানাহানি তাকে ব্যথিত করেছে বারবার। সংসারে শান্তি ও স্থিতিশীলতা চেয়েছে সে। নিজের দ্বিধার কথা রাতের অন্ধকারে নিভৃতে বলেছে তার স্বামীকে। গল্পের শেষে এই মানুষটিই নিজের বসতভিটা আগলে থেকে যায়। দেশত্যাগের চিন্তা অস্বীকার করে বিভেদের রাজনীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে সে। চরিত্র হিসেবে তার এই বিবর্তন যুগপৎ সম্ভ্রম ও বিস্ময় জাগায় পাঠকের মনে।
অভিবাসী হিসেবে দেশের প্রাত্যহিক জীবন থেকে দূরে থাকলেও, খবরের স্রোত এসে পৌঁছয় মহাসাগরের এ পারে। আর তখনই মনে হয়, ভারতবাসী হিসেবে এই উপন্যাসের ধারাবিবরণ-কারিণীর দৃষ্টান্তটি আরও একবার তলিয়ে দেখার সময় হয়েছে। সমাজ ও রাজনীতির জটিল প্রেক্ষাপটে রচিত হাসান আজিজুল হকের এ উপন্যাসের আবেদন দেশ ও কালের সীমানা পার হয়ে বাংলা ভাষাভাষী পাঠককে বারেবারেই ভাবাবে।
ভাল লাগল।
কাতার এয়ার এর কলকাতা থেকে দোহা মাত্তর চার ঘন্টার ডাইরেক্ট ফ্লাইট। ১৩-১৪ ঘন্টা হোল কোদ্দিয়ে ?
অমিত,
বোঝাই যাচ্ছে, সামান্য টাইপো আর একটি শব্দ বাদ পড়ে গেছে। 'তারপর' শব্দটি বাদ পড়ে গেছে সম্ভবত।
যাত্রার প্রথম অংশ কলকাতা থেকে দোহা, তারপর প্রায় ১৩/১৪ ঘন্টার পথ- এ'রকম হবে, মনে হয়।
সম্পাদকমন্ডলীকে অনুরোধ করব , ঠিক করে দিতে- যদি সম্ভব হয়।