বছর দুয়েক আগে, যখন প্রথম মোকাম কলকাতায় থাকতে এসেছিলুম। একদিন সন্ধেবেলা রাসবিহারি থেকে সতীশ মুখার্জি রোড ধরে যাচ্ছিলুম কালীঘাট পার্ক। টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউটে। যেতে যেতে দেখলুম রাস্তার দুপাশে যতো লোকজন, সব আমার দেশোয়ালি ভাই। মিনিট পনেরো-কুড়ি হেঁটে যাওয়ার পথে শুদ্ধ হিন্দি-ভোজপুরি ছাড়া আর ভাষার বার্তালাপ কানে এলোনা। এই অঞ্চলটি এককালে ছিলো দক্ষিণ কলকাতার আগমার্কা বাঙালিদের কেল্লা।
বছর চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ পিছিয়ে একটা স্মৃতি আবার মনে পড়ে গেলো। কিশোরকালে কলকাতায় এলে বঙ্গবাসী বা হিন্দ টাইপ টকিজে একটাকা চারানার টিকিটে বচ্চনসাহেবের নতুন দাঁত কিড়িমিড়ি ফিলিম দেখতে যেতুম। ছবি চলাকালীন সঙ্গী স্থানীয় বন্ধুদের জন্য বাংলায় সলিম-জাভেদের সংলাপ অনুবাদ করার পুণ্যকর্ম এখনও স্মৃতিতে অমলিন। উর্দুবহুল, সিটি-উচ্ছল সেই সব সংলাপের প্রতি বাঙালি কিশোরদের আকুল আবেগ চোখে পড়ার মতো ব্যাপার ছিলো। তার সঙ্গে ছিলো তুমুল হিন্দি-উর্দু সন্নিবিষ্ট বোম্বাই গানার প্রতি আকর্ষণ। বহু বন্ধুদের দেখতুম নিহিত কাব্যটি একবর্ণ না বুঝেও গানগুলি গাইতে চেষ্টা করছে। একজন বুঝতে চেয়েছিলো 'সোখিয়োঁ মেঁ ঘোলা জায় ফুলোঁ কা শবাব / উসমেঁ ফির মিলায়ে জায়ে থোড়িসি শরাব/ হোগা উঁ জো নশা জো ত্যইয়ার/ উওহ প্যার হ্যাঁয়', পদার্থটি শেষ পর্যন্ত কী দাঁড়ায়? বন্ধুনী যদি শেষ পর্যন্ত মানে জিগ্যেস করে তবে একেবারে ব্ল্যাংক যাওয়া উচিত নয়।
ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী,"Hindi or English is used in official purposes such as parliamentary proceedings, judiciary, communications between the Central Government and a State Government." (Constitutional Provisions: Official Language Related Part-17 of The Constitution Of India". Department of Official Language, Government of India.)
এছাড়াও নানা সরকারি কাজকর্মে হিন্দি ভাষা ব্যবহার করা হয়। ভারতে মোট বাইশটি সরকারি ভাষা সংবিধানস্বীকৃত। কোনও 'রাষ্ট্রভাষা' নেই। হিন্দি পরিভাষা অনুযায়ী এই ভাষাটিকে 'রাজভাষা' বলা হয়। সংবিধানের ৩৪৩ তফসিলে 'রাষ্ট্রভাষা'র প্রস্তাবিত অংশটি 'রাজভাষা অধিনিয়ম-১৯৬৩' অনুযায়ী বাতিল করা হয়েছিলো।
প্রতিটি রাজ্য নিজস্ব নিয়ম অনুযায়ী ভাষা ব্যবহার করতে পারেন। যেকোনও এদেশীয় ভাষা নির্দিষ্ট সংখ্যক জনগোষ্ঠীর ভাষা হিসেবে জনগণনায় স্বীকৃতি পেলেই সরকারি ভাষার মর্যাদা পেতে পারে। 'হিন্দিভাষা' বিষয়ে এদেশের অহিন্দিভাষী জনতার কয়েকটি ধারণা রয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটিকে পূর্বাগ্রহ বলা যেতে পারে। হিন্দিভাষার প্রতি বৈরিতার প্রবণতাটি ভাষাগত আনুগত্য থেকে আসেনা। এটি একান্তভাবে রাজনীতিকেন্দ্রিক। বিভিন্ন রাজনৈতিক ক্ষমতার কেন্দ্র, ভাষা আনুগত্যের আবেগটি নিজস্ব হীন প্রয়োজনে ব্যবহার করে।
প্রথমত, 'হিন্দি' একটি ভাষাবিশেষ নয়। এটি একটি সংস্কৃতি। উত্তর ও মধ্যভারতের বিশাল এলাকা এই সংস্কৃতির অঙ্গ। পঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তরাখণ্ড, হিমাচল,জম্মু, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, গুজরাট, মহারাষ্ট্র এর অন্তর্ভুক্ত। এই সমস্ত প্রান্তেরই অসংখ্য নিজস্ব ভাষা রয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটি স্বীকৃত সরকারি ভাষা। কিন্তু যোগাযোগ রক্ষাকারী ভাষা হিসেবে এই সমস্ত জায়গায় হিন্দির কোনও বিকল্প নেই। হিন্দিবলয়ের কেন্দ্র হিসেবে যদি উত্তরপ্রদেশ ও বিহারকে নেওয়া যায় তবে দেখা যাবে এই দুটি রাজ্যেও বহু নিজস্ব ভাষা আছে। বিহারে ভোজপুরি (দুরকম, গঙ্গার উত্তর ও দক্ষিণে), মগহি, মৈথিলি, অঙ্গিকা প্রধান। উত্তরপ্রদেশে ভোজপুরি, অবধি,বুন্দেলখণ্ডি, পহাড়ি ইত্যাদি। একইভাবে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের হিন্দি, হরিয়ানভি, পূর্বি পঞ্জাবি (মনে রাখতে হবে পশ্চিম পঞ্জাব থেকে যাঁরা এসেছিলেন তাঁদের ভাষা আলাদা ছিলো)। কোনও হিন্দিভাষীই বাড়িতে খড়িবোলি বা সরকারি হিন্দিভাষায় কথা বলেননা। কিন্তু এঁরা সবাই প্রয়োজন অনুসারে হিন্দিভাষাকেই 'মাতৃভাষা' হিসেবে ঘোষণা করেন। এইজন্য সামগ্রিকভাবে প্রায় বিয়াল্লিশ শতাংশ ভারতীয় হিন্দিভাষী হিসেবে নথিভুক্ত হয়ে যান। এই বিপুল দেশেও সংখ্যাটিকে ব্রুট্যাল মেজরিটি বলা যেতে পারে।
চিনেও অবস্থাটি প্রায় একরকম। বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ভাষা হিসেবে মান্দারিন স্বীকৃতি পেলেও সমস্যাটি অতো সরল নয়। "... The varieties of Chinese are usually described by native speakers as dialects of a single Chinese language, but linguists note that they are as diverse as a language family. The internal diversity of Chinese has been likened to that of the Romance languages, but may be even more varied. There are between 7 and 13 main regional groups of Chinese (depending on classification scheme), of which the most spoken by far is Mandarin (about 960 million, e.g. Southwestern Mandarin), followed by Wu (80 million, e.g. Shanghainese), Min (70 million, e.g. Southern Min), Yue (60 million, e.g. Cantonese), etc. Most of these groups are mutually unintelligible, and even dialect groups within Min Chinese may not be mutually intelligible. Some, however, like Xiang and certain Southwest Mandarin dialects, may share common terms and a certain degree of intelligibility. All varieties of Chinese are tonal and analytic."
প্রশ্ন হচ্ছে, হিন্দিই কেন? তা কি নেহরু বা রাজেন্দ্রপ্রসাদের মাতৃভাষা ছিলো, তাই? না গান্ধিজি অহিন্দিভাষী হয়েও সারাজীবন হিন্দিতেই কথাবার্তা চালিয়ে গেলেন তার প্রভাব রয়ে গিয়েছিলো। প্রথম নেহরু মন্ত্রীসভায় মওলানা আজাদ বা রফি আহমদ কিদওয়াই উর্দুভাষী ছিলেন। অহিন্দিভাষী নেতাদের মধ্যে গুজরাতি ও মরাঠি নেতারা, যেমন সর্দার প্যাটেল, বাবাসাহেব আম্বেদকর, সি ডি দেশমুখ, এন ভি গ্যাডগিল, বি ভি কেসকর প্রমুখ অবশ্য হিন্দিকে মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে রাজাগোপালাচারি, রাধাকৃষ্ণন, গোপালস্বামী আয়েঙ্গার, কামরাজ, শ্যামাপ্রসাদ বা বিধানচন্দ্র কেউই হিন্দিভাষী ছিলেন না। তাঁদের সর্বভারতীয় ভাবমূর্তিও ছিলো। তাঁদের মধ্যে যেকোনও একজনই নেহরুকে চ্যালেঞ্জ জানানোর হিম্মত রাখতেন। তাঁরা কি হিন্দি রাজনীতির ভবিষ্যত আগ্রাসনের প্রতি সতর্ক ছিলেন না? না তাঁরা বুঝতে পেরেছিলেন লোকপ্রিয় ভাষামাধ্যম হিসেবে হিন্দিই আমাদের ভবিতব্য। যদিও নেহরু বেঁচে থাকতেই রাজভাষা অধিনিয়ম ১৯৬৩ গৃহীত হয়ে গিয়েছিলো।
তুর্কি বা ইংরেজ আমলে হিন্দিভাষার সরকারি প্রভাব ছিলোনা। তাই হিন্দি নিয়ে কংগ্রেসের কাছে কোনও লেগেসির চাপ ছিলো, তাও বলা যায়না। কিন্তু বৃহত্তর ভারতীয় ব্যবস্থায় হিন্দির জায়গাটা কেউই অস্বীকার করতে পারেননি। সুভাষচন্দ্র থেকে সুনীতিকুমার জনসংযোগের জন্য হিন্দির শরণাপন্ন হতে দ্বিধা করতেন না। সংসদ, সেনাবাহিনী থেকে ফিলমি দুনিয়া, সর্বত্র হিন্দিভাষার কার্যকারিতা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলেননি। হিন্দি সিনেমা, যা কলকাতায় শুরু হয়ে বম্বে পৌঁছেছিলো, যার কুশীলবদের মধ্যে বৃহৎ অংশ অহিন্দিভাষী, সেখানেও ভারতবর্ষ বলতে উত্তরাপথ, অর্থাৎ লাহোর থেকে বনারস পর্যন্ত যে ভূভাগ, তাকেই ভারতীয় জীবনের মূলস্রোত হিসেবে প্রচার করা হতো। 'বঙ্গালি' বা 'মদ্রাসি' সংস্কৃতির উপস্থিতি ছিলো কমিক রিলিফ হিসেবে। গোয়ার মাতাল বা মরাঠি পাণ্ডু হাওলদারের কপালেও একই গতি লেখা থাকতো। সারা ভারতের আপামর জনতা কিন্তু তার মধ্যে প্রশ্নহীন তৃপ্তির সন্ধানও খুঁজে পেয়েছে। ভারতীয় জনপ্রিয় সিনেমার বাজার তৈরি করতে নেহরু রাজ কাপুরের 'সোস্যালিজম' বা দেব আনন্দের ম্যাটিনি আইডল ভাবমূর্তিকে সোভিয়েত ব্লকের দেশে রফতানি করার প্রয়াস পেয়েছিলেন। বাণিজ্যিক সাফল্য এসেছিলো কিছু। তবে বিদেশী দুনিয়ায় 'হিন্দি'ই যে ভারতীয় ভাষাবিনিময়ের মূলস্রোত সে ধারণাটি সারা বিশ্বে দৃঢ়মূল হয়ে গিয়েছিলো। বম্বের ছবিশিল্প তো চিরকালই একান্তভাবেই মুনাফামুখী ব্যক্তিগত বাণিজ্য। সেখানে তো কোনও রাজনৈতিক চাপ ছিলোনা। কেন এই শিল্পে নিবেশকারীরা শুধু হিন্দি ছবিতেই টাকা ঢালতেন? প্রাথমিকভাবে পার্সিরা এই ব্যবসা করলেও পরবর্তীকালে কিছু বাঙালি ধনাঢ্য ব্যক্তিও তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন। শেষে তো পঞ্জাবি নিবেশকারীদেরই রমরমা। হিন্দিভাষী ছবির বাজারের সঙ্গে অন্য কোনও ভাষাই পাল্লা দিতে পারেনি। তামিল-তেলুগু ছবির নিজস্ব দর্শক ছিলো এবং এখনও আছে। কিন্তু তাঁরা নিজস্ব ভূগোল অতিক্রম করেননি। হিন্দি ছবির বিশ্বস্ত অনুগামী হয়েই থেকে গেছেন। হিন্দিভাষা নিজের গোলপোস্ট ক্রমশ বাড়িয়েই চলেছে। তাদের শক্তির উৎস কোথায় তা নিয়ে আমরা বিশেষ উৎসাহী ছিলুম না। এখনও নই। সামরিক বাহিনীতে আগে থেকেই হিন্দির গভীর প্রভাব ছিলো। ক্রমে তা অপ্রতিরোধ্য হয়ে যায়। হিন্দি হেজেমনি এদেশের জনজীবনে একদিনে বা গুটিকয় রাজনীতিকের ব্যক্তিগত উদ্যমে বেড়ে ওঠেনি। তার একটা সমাজতাত্ত্বিক প্রস্তুতি ছিলো।
স্বাধীনতার পর দক্ষিণভারতে, মূলত তামিলভাষী অঞ্চলে হিন্দি নিয়ে বাড়াবাড়ি করার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ হতে দেখা গিয়েছে। এই প্রতিরোধ সম্পূর্ণত ভাষাভিত্তিক আবেগ নয়। জাতিভিত্তিক রাজনৈতিক প্রতিবাদ। এই টানাপড়েনের বয়স দুহাজার বছরের বেশি। তামিলভাষার বয়স পুরাণযুগের সংস্কৃতের থেকেও অনেক পুরোনো। হিন্দি তো নেহাত অর্বাচীন ভাষা। মাঝেমাঝেই নানা স্তরের উসকানিতে ছোটোখাটো আগুন জ্বলে ওঠে। 'নিজভূমে' আধিপত্যের লড়াইতে আর্য ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরুদ্ধে একজোট হওয়ার তামিল তাগিদ। উগ্র তামিল জাতিবাদ, যেটা শ্রীলংকার তামিলদের মধ্যে দেখা যায়, তামিলনাড়ুর প্রান্তিক, কৌম জনতার মধ্যে তার প্রকোপ কম। তামিলনাড়ুর শহর অঞ্চলে অটোচালক বা ছোটো ব্যবসায়ী স্তরের সাধারণ মানুষের মধ্যে যে ধরনের হিন্দিবৈরিতা দেখা যায়, গ্রামাঞ্চলে সেটা তেমন প্রকট নয়। হিন্দি নিয়ে দক্ষিণের বাকি তিনটি রাজ্যের অবস্থান আপোসমূলক। না খোঁচালে ঝামেলা হয়না। বিশেষত অন্ধ্র, তেলেঙ্গানায় নিজামের রাজত্বের সূত্রে হিন্দির সঙ্গে একটা বোঝাপড়া বেশ প্রত্যক্ষ।
১৯২৫ সালের বিজয়াদশমীতে পাঁচজন মহারাষ্ট্রীয় ব্রাহ্মণ একটি সভা করেন। তাঁদের 'অনুপ্রেরণা' ছিলেন আরেক মহারাষ্ট্রীয় ব্রাহ্মণ বিনায়ক সাভারকর। সাভারকরের লেখা 'হিন্দুত্ব' রচনাটির আদর্শে একটি সমিতি গঠিত হয়। নাম রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ। পুলিশের খাতায় লেখা ছিলো এঁরা হিন্দু মহাসভার অ্যাকশন উইং। আর এস এসের চুরানব্বই বছরের ইতিহাসে সাতজন 'সরসঙ্ঘচালক' বা সুপ্রিমো এসেছেন। একমাত্র রাজেন্দ্র সিং ছাড়া বাকিরা সবাই ব্রাহ্মণ। তার মধ্যে কে এস সুদর্শন ব্যতিরেকে তালিকাটির পাঁচজনই মহারাষ্ট্রীয় চিৎপাবণ বা দেশস্থ ব্রাহ্মণ। ভাবধারার দিক দিয়ে অত্যন্ত গোঁড়া ও জঙ্গি মানসিকতার 'হিন্দু'। অবশ্য সুদর্শন জন্মগতভাবে কন্নডিগা সংকেতি ব্রাহ্মণ হলেও তিনি আজীবন রায়পুর-জবলপুরের লোক। অনেক ভাষা জানলেও হিন্দিতেই স্বচ্ছন্দ ছিলেন।
'ভারতবর্ষ' নামক বিশ্বের জটিলতম, বহুমাত্রিক, অতিবিস্তীর্ণ প্রপঞ্চটিকে অশিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষিত কর্মী ও প্রচারকদের কাছে সহজবোধ্য করে তোলার এলেম এইসব অন্ধ, একমাত্রিক 'তাত্ত্বিক'দের ছিলোনা। সাভারকরের বইয়ে ভারতবর্ষ, ভারতীয়তা, ধর্ম, সমাজতত্ত্ব ইত্যাদি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে 'হিন্দুত্ব' নামে একটি এক্স ফ্যাক্টরকে কল্পনা করা হয়েছিলো। এই 'এক্স'টি কোনও 'ধর্ম' নয়, নিছক সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতির উৎস 'বৈদিক' যুগ থেকে প্রচলিত ঋষিমুনিদের তপোধন্য পবিত্র চিন্তাধারা। যাকে আটশো বছরের তুর্কি অত্যাচার বিকৃত করেছে, কিন্তু বিনাশ করতে পারেনি। তাঁর কাছে ইংরেজরা ছিলো কাছের লোক। তিনি বিশ্বাস করতেন শুধুমাত্র ইংরেজরাই এদেশকে তুর্কিপ্রভাবমুক্ত করতে পারবে। তাই তাদের কাছে মুচলেকা দিয়ে তিনি ঘোষণা করেছিলেন তাঁর দুশমন মুসলমানেরা। ইংরেজরা যদি তাঁদের সামলে দেয় তবে তিনি এদেশে ইংরেজ বিতাড়নের আন্দোলনে যোগ দেবেন না।
'হিন্দুত্ব' নামক একটি বিমূর্ত, ভিত্তিহীন কল্পনাকে সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার মধ্যে নিয়ে আসতে তাঁর 'অনুপ্রেরণা’য় আর এস এস একটি মডেল অ্যাকশন প্ল্যান প্রবর্তন করে । যার তিনটি বিন্দু, হিন্দি, হিন্দু, হিন্দুস্তান। এই মহারাষ্ট্রীয় ব্রাহ্মণদের চিন্তাধারা আপাতভাবে লোকমান্য টিলকের অনুসারী হলেও মূল শিকড়টি ছিলো আরও কিছুদিন আগের ইতিহাসে। তাঁরা নিজেদের ভারতবর্ষের শেষ হিন্দু নৃপতি পেশোয়াদের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করতেন। বাকি বিষয়গুলি নিয়ে মতবৈচিত্র্য থাকলেও মুসলিমবিরোধিতার প্রশ্নে তাঁরা ছিলেন তুমুলমাত্রায় সংহত। সত্যিকথা বলতে আজকেও ঐ সংস্থাটির প্রকৃত ভিত্তি প্রশ্নহীন মুসলিমবিরোধিতার মাটিতে দৃঢ়প্রোথিত।
এঁদের কথিত 'হিন্দি', 'হিন্দু' ও 'হিন্দুস্তানে'র পরিভাষা এবং ব্যাখ্যা একান্তভাবে তাঁদের নিজস্ব। আমাদের আবহমানকালের সাংস্কৃতিক বা সারস্বত ঐতিহ্যে তাদের খুঁজে পাওয়া যাবেনা। এঁরা অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন সলাফি-ওয়াহাবি এবং য়ুরোপের বিভিন্ন ভূমিগত জাতিসত্ত্বাজাত আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি থেকে। অন্য দুটি বিন্দু নিয়ে এখানে আলোচনা করছি না। কিন্তু তাঁদের ধারণাজাত 'হিন্দি'ভাষা ছিলো উর্দুভাষার অপর মেরু। আর্য ব্রাহ্মণ্যবাদ ও হিন্দিভাষাকে সমার্থক করে তোলার প্রয়োগটি আর এস এসের একটি প্রধান সাফল্য ও দাঁড়াবার জায়গা। যদিও পঞ্জাব ও উত্তর-পশ্চিম ভারতে উর্দু অসংখ্য হিন্দুর মাতৃভাষা ছিলো, কিন্তু এঁদের বিচারে তা মুসলমানদের ভাষা। ঘটনা হলো বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম জনতার দেশে খুব কম সংখ্যক মুসলমানই উর্দুভাষা ঠিকঠাক জানেন। উর্দু পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হয়ে যেতে বিখ্যাত লেখক ইসমত চুঘতাই গভীর দুঃখে বলেছিলেন এই সিদ্ধান্ত উর্দুভাষার গৌরবের অবসান ঘটাবে। কারণ ভারতে আর কেউ উর্দু পড়বে-লিখবে না। আসলে ভারতবর্ষীয় সভ্যতার পরিভাষাকে অতি সরলীকৃত করতে গিয়ে এঁরা এযাবৎ প্রকৃত, স্বীকৃত ইতিহাসের চূড়ান্ত অপব্যাখ্যা করে এসেছেন। আমাদের জাতীয় জীবনে বলপ্রয়োগ করে 'হিন্দি' ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার প্রথাটি এঁদেরই মস্তিষ্কপ্রসূত। অন্য রাজনৈতিক দলগুলি, বিশেষত কংগ্রেস, এই ঘোলা জলেই মাছ ধরতে চেয়েছে এতোকাল ধরে। অথচ এটাও ঘটনা, নিজের শক্তিতেই হিন্দি এদেশে বিস্তীর্ণ ভূভাগের স্বীকৃত ভাষা। উপনিবেশ বিস্তার করার জন্য যে আত্মবিশ্বাস ও শক্তির প্রয়োজন হয়, এই মুহূর্তে হিন্দি ছাড়া আর কোনও ভারতীয় ভাষার নেই। কোনও রকম সরকারি সনদ ছাড়াই হিন্দিভাষা এদেশে সাম্রাজ্যবিস্তার করবে, এটা দেওয়ালের লিখন। তামিলনাড়ুর বুঁদির কেল্লা কতোদিন তাকে প্রতিহত করতে পারবে তা দৈবজ্ঞরাই বলতে পারেন।
দীর্ঘকাল ধরে দেখে আসছি 'হিন্দি চাপিয়ে' দেওয়া নিয়ে এদেশের কেন্দ্রীয় সরকার কুমিরডাঙ্গা খেলে আসছে। রাজনৈতিক দলমতনির্বিশেষে ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে মাঝেমধ্যেই এক একটা বিবৃতি আসে। এটা আসলে জল মাপার একটা খেলা। সরকারি নিহিত স্বার্থরা 'কুমির তোর জলে এসেছি' বলে কিছুক্ষণ লাফালাফি করেন। 'কুমির'টি জেগে উঠে নড়াচড়া করলেই আবার পুনর্মূষিকো ভব। নতুন শিক্ষামন্ত্রী, যিনি আবার শ্রীলংকার কোনও ইস্ট জর্জিয়া থেকে 'ডাকটর' হয়েছেন এবং সঙ্গে 'কবি', সেই খেলাটিই খেললেন এবং আবার ডাঙ্গায় ফিরে এলেন। বহুসংখ্যকের ক্ষমতার কাছে প্রশ্নহীন সমর্পণ বা বিবেক বন্ধক রেখে ভোটমেশিন ভেঙে ফেলে জিতে আসার প্রয়োজন এই মুহূর্তে হিন্দিভাষার নেই। ভাষা হিসেবে তার কোনও তাড়াও নেই। কিন্তু রাজনীতিকদের রয়েছে। এই সব অন্যায্য প্রস্তাব সে জন্যই মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। 'কুমির' হিসেবে তামিলদের ভূমিকা নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই। কারণ যেমন আগেই লিখেছি, তাঁরা দুহাজার বছর ধরে 'দাগানো' আর্যেতর। কিন্তু বঙ্গভাষীদের অবস্থানটি প্রকৃত অর্থে করুণ।
প্রতিবেশী বাংলাদেশে ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদের সূচনাকাল থেকে পশ্চিমবঙ্গে তার সঙ্গে তুলনায় যাবার একটি প্রবণতা বারবার দেখা যায়। পূর্ববাংলার উর্দু বনাম বাংলার লড়াইয়ের সঙ্গে এই বঙ্গের অবস্থাটি সমান্তরাল নয়। ওখানে লড়াইটি দ্বিমাত্রিক ছিলো, এখানে বহুমাত্রিক। যাঁরা সামগ্রিকভাবে অবস্থার সঙ্গে ওয়াকিফহাল, তাঁরা অবশ্যই এ জাতীয় মেঠো তক্কে যাননা। এদেশে মেরুকরণটি বাংলা বনাম উর্দু বা ইসলামাবাদ বনাম ঢাকা নয়। এ ধরনের সরলরৈখিক সমাধান এদেশের পরিস্থিতির সঙ্গে বেমানান। কোনও মাপদণ্ডেই বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের বস্তুস্থিতি মেলেনা।
এদেশীয় বাঙালিদের একটি প্রধান যুক্তি, হিন্দিভাষা বাংলার মতো 'উন্নত' নয়। দ্বিতীয়ত বাংলাসাহিত্য হিন্দিসাহিত্যের থেকে অনেক উন্নত। তৃতীয়ত বাংলাসংস্কৃতির উৎকর্ষের সঙ্গে গোবলয়ের হিন্দিসংস্কৃতির কোনও তুলনাই চলেনা। অতএব বঙ্গভূমিতে হিন্দি সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসন চলতে দেওয়া হবেনা। এ প্রসঙ্গে বলি, যাঁদের আধুনিক হিন্দিভাষায় এলেম আছে বা বিষয়টি ভালোভাবে জানেন তাঁরা হিন্দিভাষার ক্রমবিকাশ সম্বন্ধে সচেতন। ভাষার গুণমান বিচার করা একটি বিপুল সন্দর্ভ। বিশেষত বাংলা ও হিন্দির মতো দুটি উন্নত, পরিণত ভাষার মধ্যে যদি তুলনাটি এসে যায়। যাঁরা হিন্দিভাষায় স্বচ্ছন্দ ন'ন, তাঁদের কাছে 'পুলিশ কৈসে স্ত্রীলিঙ্গো হোতা হ্যায়' যুক্তিতে বাংলার স্টেটাস অনেক উন্নত বোধ হয়। উড়ে-মেড়ো-খোট্টার চিরন্তন ত্রিভুজের বাইরেও বাঙালির সহজাত 'ভাষাবৈরিতা' কিন্তু প্রচ্ছন্ন থাকেনা। সিংভূম, মানভূম, ধলভূম, মল্লভূম, বীরভূমের মানুষের কথিত বাংলার প্রতি নদে-শান্তিপুরী ভাষার ধ্বজাধারীরা বিশেষ প্রশ্রয়শীল নন। ত্রিপুরা ছাড়া একমাত্র ঝাড়খণ্ড রাজ্যেই প্রচুর বঙ্গভাষী আছেন। বাংলা সেখানে সরকারিভাবে স্বীকৃত এবং বহু মানুষের মাতৃভাষা। কিন্তু সেখানে ভূমিজাত মেধাবী বাঙালিদের মধ্যে কলকাতাকেন্দ্রিক বাংলা হেজেমনির প্রতি অভিযোগ আছে।
দ্বিতীয়ত, হিন্দি ও বাংলা সাহিত্যের মধ্যে তুলনার প্রসঙ্গ। নিজে দেখেছি, আমার আগের তো বটেই, এমন কি আমার প্রজন্মেরও বহু নিষ্ঠাবান ও সৃজনশীল হিন্দিভাষী পাঠকের বইয়ের আলমারিতে বাংলা বইয়ের উজ্জ্বল উপস্থিতি রয়েছে। বাংলাসাহিত্য প্রসঙ্গে তাঁরা শ্রদ্ধাবান। কিন্তু এখনও কোনও নিবেদিত বাঙালি পাঠকের আলমারিতে হিন্দি বই রয়েছে দেখিনি। বাঙালিদের মধ্যে যাঁরা বিশেষ সচেতন, তাঁদের মননেও মুনসি প্রেমচন্দের পর হিন্দি সাহিত্যে কী কী বিকাশ হয়েছে সে বিষয়ে ধারণা নেই। সাহিত্যকৃতির মান অনুযায়ী আধুনিক হিন্দিভাষার অবস্থান নিয়ে কোনও ধারণাই নেই বাঙালি পাঠকদের। সব থেকে মজার কথা, যাঁরা বাংলাসাহিত্যের 'গৌরব' নিয়ে অতি সরব তাঁরা বাংলাসাহিত্যের হালহকিকত কতোটুকু জানেন তা নিয়ে ঘোর সন্দেহ রয়েছে। কিছুদিন আগেই আমার এক স্নেহাস্পদ আইআইটির নবীন অধ্যাপক জানালেন তাঁদের কাফেতে দুই অধ্যাপকের মধ্যে বাংলা কবিতা নিয়ে 'গভীর' আলোচনা চলছিলো। তিনি পাশের টেবিলে নীরবে শুনছিলেন তাঁদের বার্তালাপ। কিঞ্চিৎ রোমাঞ্চিত বিস্ময়ে। আইআইটির গরিমাময় কারিগরিবিদ্যার অধ্যাপকরা তাহলে এখনও বাংলা কবিতায় রুচিশীল? এই না হলে বাঙালি? তবে রোমাঞ্চটি ছিলো ক্ষণস্থায়ী। হঠাৎ একজন বললেন 'আকাশের গায়ে নাকি টকটক গন্ধ' জাতীয় বৈপ্লবিক লাইন শুধু শক্তি চট্টোপাধ্যায়ই লিখতে পারেন। অন্যজনও সহমত হলেন তাঁর সঙ্গে।
সত্যিকথা বলতে কী, 'সাহিত্য', বাংলা বা হিন্দি নির্বিশেষে, কজন পড়ে? এদেশের জনসংখ্যার বিচারে যেকোনও ভাষাতেই 'সাহিত্যপড়ুয়া'র সংখ্যা কতো? এই পড়ুয়ার দল কি ভাষা হেজেমনির মতো একটা ব্যাপক রাজনৈতিক 'ষড়যন্ত্রে'র মোকাবিলা করতে পারেন? মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। এই মুহূর্তের 'বাংলা সংস্কৃতি'র উৎকর্ষ বিষয়েও উৎফুল্ল হবার কারণ এই অধম খুঁজে পায়না। নানাকারণে জনসংস্কৃতিতে নিম্নমেধার বোলবালা যে কী পর্যায়ে পৌঁছেছে সেটা নিয়ে আমার আলোচনা না করলেও চলে। হিন্দি ভাষা ও সংস্কৃতি বাংলার তুলনায় কতটা পিছিয়ে আছে সে বিষয়ে জঙ্গি, অস্মিতাবাদী বঙ্গভাষীরাই ভালো জানেন। তাঁদের ভালো হোক।
মোদ্দা কথা হচ্ছে, যেকোনও ভাষাই প্রাধান্য পায় তার ব্যবহারকারীদের সামাজিক, অর্থনৈতিক সম্মানের মাপে। যেসব ভাষার অনুগামীরা অর্থনৈতিকভাবে উজ্জ্বল, তাঁদের ব্যবহৃত ভাষাও সমানুপাতিক মর্যাদা পায়। বঙ্গভাষীরা যদি এদেশের বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করতেন, তবে বাংলাভাষাই এদেশের সরকারি ভাষা হতো। ইংরেজদের বাণিজ্যিক সাফল্যের সূত্রেই তাদের ভাষা পৃথিবীর প্রধান ভাষা হতে পেরেছিলো। ব্রিটেনের সূর্য অস্ত গেলে স্যামচাচা ইংরেজির ধামাটি ধরে ফেলে। ঐ ভাষার সারাদিনই সূর্যোদয়। গত চার-পাঁচ বছর ধরে যে আটদশজন গুজরাতপুত্র সর্বক্ষেত্রে ভারতবর্ষকে নিয়ন্ত্রণ করছেন তাঁরা হিন্দির পক্ষে নিজেদের তাসগুলি খেলে দিয়েছেন। কাজের কথার জন্য ইংরেজি তো আছেই। যেকোনও বুদ্ধিমান ব্যক্তিই ওটা শিখে নেবেন। বাকি দুটো একেবারেই অতিরিক্ত। তাদের ব্যবহার করা হবে ভোটভিত্তিক জুয়াখেলার আসরে। যখন যেটা চলবে, সেটাকে নিয়ে আসর গরম হবে। বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্র বা সুকান্ত ভোটযুদ্ধের বোড়ে। ভাষা বা সাহিত্যের সঙ্গে তাঁদের সংযোগ আজকের গণিতে গৌণ হয়ে গেছে।
যেসব বাঙালিরা হিন্দি আগ্রাসন নিয়ে উদ্বিগ্ন, প্রতিবাদমুখর, তাঁরা নিজেদের ঘরের দিকে বোধ হয় বিশেষ তাকিয়ে দেখেননা। রাজনৈতিক চাপ কিন্তু সাংস্কৃতিক বেনোজলের তুলনায় নিতান্ত তাৎপর্যহীন। আমরা প্রবাসী বাঙালি। মাত্র দু বছর হলো আমি পশ্চিমবঙ্গের মূল ভূখণ্ডে থাকতে এসেছি। পুরো জীবনটাই সারা দেশের নানাপ্রান্তে কাটিয়েছি। সরকারি কর্মচারী হবার সুবাদে সর্বত্র মাটির কাছাকাছি থেকে কাজ করার সুযোগ ছিলো। গত দুবছর ধরে দেখছি এই বঙ্গে হিন্দিভাষার প্রকোপ কীভাবে আমাদের জীবনযাত্রার প্রতিস্তরে ছড়িয়ে পড়েছে। আমাদের পারিবারিক বা সামাজিক উৎসব অনুষ্ঠানে যে শৈলীতে কথা হয় বা যে সব নাচাগানা, তার সঙ্গে গুড়গাঁওয়া বা পাটনার কোনও প্রভেদ নেই। পরবর্তী প্রজন্মের কথা তো ছেড়েই দিলুম, এমন কি আমাদের প্রজন্মেরও খুব কম কলকাতার বাঙালিকে গ্রহণযোগ্য বাংলায় কথা বলতে শুনি। 'সাহিত্যটাহিত্য' তো দূর রজনীর স্বপন।
আমরা বাইরে বিরাট বাঙালি। ভিতরে হিন্দিভাষা নীরবে সিঁধ কেটে চলেছে। নিজের জোরেই কাটছে। আমরা মেলা-খেলা-শনিপুজোয় মত্ত। আমাদের কোনও আয়না নেই। নেই পায়ের তলায় জমি। শুধু অক্ষমের নালিশ আছে । আর আছে হেরে যাওয়ার অজুহাত। বখতিয়ার খিলজি থেকে রবার্ট ক্লাইভ থেকে দিল্লি দরবার থেকে হিন্দিভাষা, সবাই আমাদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেছে। ষড়যন্ত্র করেছে। অসম্মান করেছে। এই সান্ত্বনাটিই আমাদের অন্তিম অর্জন। আমাদের শেষ ডুমুরপাতা।