৫.
১৯১৮ সালের গ্রীষ্মকালে তাঁর বড়ো মেয়ে বেলা ছিলেন রোগশয্যায়। থাকতেন তাঁর স্বামীগৃহ জোড়া গির্জার কাছে শরৎচন্দ্র চক্রবর্তীর বাড়িতে। কবি তখন জোড়াসাঁকোয়। মেয়ে'কে দেখতে প্রতিদিন সকালে সেই বাড়ির দোতলায় যা'ন। একদিন বাড়িতে ঢুকেই বেরিয়ে এলেন। সহযাত্রী প্রশ্ন করলেন, কী হলো? তিনি বললেন, ''নাহ, আর দোতলায় উঠলাম না। সে আর নেই, আমি পৌঁছোবার আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে।''
জোড়াসাঁকোয় ফিরে কিছুক্ষণ তিনতলার ঘরে চুপ করে বসে রইলেন। তারপর বললেন, '' কিছুই তো করতে পারতুম না। অনেকদিন ধরেই জানি ও চলে যাবে। তবু রোজ সকালে গিয়ে ওর হাতখানি ধরে বসে থাকতুম। ছেলেবেলায় যেমন বলতো বাবা গল্প বলো, অসুখের সময়ও অনেক সময় তাই বলতো। যা মনে আসে কিছু বলে যেতুম। আজ তাও শেষ হয়ে গেলো।'' এতোটুকু বলেই আবার শান্ত সমাহিত হয়ে বসে রইলেন।
সেদিন বিকেলে তাঁর নানা সামাজিক কাজ ছিলো । ঘনিষ্ঠজনেরা চাইলেন সে সব থেকে তাঁকে অব্যাহতি দিতে। কিন্তু কবি নিষেধ করলেন। বললেন, এরকম তো আগেও হয়েছে। তাঁর মেজো মেয়ে রানি'র চলে যাওয়ার গল্পটা জানতো কেউ কেউ। সেই সময়টাতে স্বদেশী আন্দোলন চলছিলো পুরো দমে। রানি খুব অসুস্থ। আলমোড়া থেকে কবি তাঁকে নিয়ে ফিরে এসেছেন। নিজের হাতে অক্লান্ত শুশ্রূষা করতেন। পিতা নোহসি মন্ত্র শোনাতেন। রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী মশায় রোজ সন্ধেবেলা আসেন জাতীয় শিক্ষা পরিষদের ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করতে। যাবার সময় মেয়ের কুশলসংবাদ নিয়ে যান। সেদিনও যাবার সময় জানতে চাইলেন রানি কেমন আছেন? কবি শুধু বললেন, ''সে মারা গিয়েছে''। রামেন্দ্রসুন্দর কিছুক্ষণ কবির মুখের দিকে চেয়ে ধীরে সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেলেন।
কবি দুই কন্যাকেই হারিয়েছিলেন যক্ষ্মারোগে।
৬.
'' হে রুদ্র, তোমার দুঃখরূপ, তোমার মৃত্যুরূপ দেখিলে আমরা দুঃখ ও মৃত্যুর মোহ হইতে নিষ্কৃতি পাইয়া তোমাকেই লাভ করি। .... তোমার সেই ভীষণ আবির্ভাবের সম্মুখে দাঁড়াইয়া যেন বলিতে পারি , আবিরাবীর্ম এধি, রুদ্র বত্তে দক্ষিণং মুখং তেন মাং পাহি নিত্যম।''
(মাঘ উৎসবের ভাষণ থেকে, ১৩১৪ সাল)
কবির ছোটো ছেলে শমীন্দ্র বেড়াতে গিয়েছিলেন মুঙ্গেরে, কবির এক বন্ধুর বাড়িতে। এগারো বছরের বালক, লোকে বলতো কনিষ্ঠ সন্তানটি কবির প্রিয়তম আত্মজ, সেখানে কলেরায় আক্রান্ত হন। কবির কাছে খবর এলো শমীন্দ্র খুব অসুস্থ। তিনি পৌঁছে দেখলেন সে চলে গিয়েছে। তিনি তখন ব্যস্ত হয়ে পড়লেন গৃহকর্তা বন্ধুটির শোকসন্তাপ নিবারণ করতে। লোকে বুঝতেই পারলো না কার সন্তান গত হয়েছে। কবি ফিরে এলেন শান্তিনিকেতনে, একা। রেলস্টেশনে তাঁকে আনতে গিয়েছিলেন জগদানন্দ রায়। গোরুর গাড়ি করে তাঁরা ফেরার সময়ও জানতে পারেননি শমীন্দ্র কেন আসেননি। পরে জানতে পারলেন সে আর নেই। কবির বাহ্যিক ব্যবহারে কোনো বিচলন ছিলোনা। শান্তিনিকেতনে ফিরে কর্মব্যস্ততার মধ্যে তাঁর এক মূহুর্তও কোনও ছেদ পড়েনি।
শমী গত হবার পর তাঁকে কেউ কখনও প্রকাশ্যে শোক করতে দেখেননি। কিন্তু অনেক বছর পরেও শমীর প্রসঙ্গ উঠলে তাঁর চোখ অশ্রুসজল হয়ে উঠতো। তাঁর তখন ষাট বছর বয়স পেরিয়ে গিয়েছে। একদিন প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ জোড়াসাঁকো বাড়িতে গিয়ে শোনেন কবি রীতিমতো সরবে কবিতা আবৃত্তি করে চলেছেন। তিনি একটু অবাক হলেন তিনি। কবি'কে একথা জানাতে তিনি একটু অপ্রতিভ হলেন। তার পর বললেন, '' একটু জ্বর হয়েছে কিনা, তাই মাথাটা একটু উত্তেজিত হয়েছে। শমীরও এরকম হতো। ওর মা যখন মারা যায় তখন ও খুব ছোটো। তখন থেকে ওকে আমি নিজের হাতে মানুষ করেছিলেম। ওর স্বভাবও ছিলো ঠিক আমার মতো। আমার মতই গান করতে পারতো আর কবিতা ভালোবাসতো। এক এক সময় দেখতুম চঞ্চল হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে কিংবা চেঁচিয়ে কবিতা আবৃত্তি করছে। এই রকম দেখলেই বুঝতুম ওর জ্বর এসেছে। ....শমী বলতো বাবা গল্প বলো। আমি এক একটা কবিতা লিখতুম আর ও মুখস্থ করে ফেলতো। সমস্ত শরীর মাথা ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে আবৃত্তি করত। ঠিক আমার নিজের ছেলেবেলার মতো। ছাতের কোণে কোণে ঘুরে বেড়াত। নিজের মনে কত রকম ছিল ওর খেলা। দেখতেও ছিল ঠিক আমার মতো।''
প্রশান্তচন্দ্র লক্ষ্য করলেন শমীর কথা বলতে বলতে কবির চোখ জলে ভরে এসেছে। ঊদ্ধৃত মাঘ উৎসবের ভাষণটি শমীর মৃত্যুর ঠিক দু'মাস পরের লেখা।
৭.
'' .... ভোরবেলা উঠে এই জানালা দিয়ে তোমার গাছপালা বাগান দেখছি আর নিজেকে ওদের সঙ্গে মেলাবার চেষ্টা করছি। বর্ষায় ওদের চেহারা কেমন খুশি হয়ে উঠেছে। ওদের মনে কোথাও ভয় নেই। ওরা বেঁচে আছে এই ওদের আনন্দ। নিজেকে যখন বিশ্বপ্রকৃতির সঙ্গে মিলিয়ে দেখি তখন সে কী আরাম। আর কোনো ভয়ভাবনা মনকে পীড়া দেয়না। এই গাছপালার মতো-ই মন আনন্দে ভরে ওঠে,''
( রানী মহলানবীশ'কে কবিঃ ১৯৩২ সালের অগস্ট মাস)
কবির তিন মেয়ের মধ্যে কনিষ্ঠা মীরাদেবীই শেষ পর্যন্ত তাঁর কাছে থাকতেন। পাঁচ সন্তানের মধ্যে তাঁর জীবনকালে তিনজনের দেহাবসান হয়েছিলো। মীরাদেবীর দাম্পত্যজীবন পরিপূর্ণতা পায়নি। কবি তাঁর এই কন্যাটির দুঃখযন্ত্রনার একান্ত শরিক ছিলেন চিরকাল। মীরাদেবীর একমাত্র ছেলে নীতিন্দ্রনাথ বা নীতু। বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য গিয়েছিলেন। কবির পৌত্র বা দৌহিত্র বলতে তিনিই ছিলেন একমাত্র উত্তরপুরুষ । দুঃখী মা'য়ের সন্তান এবং কবির প্রাণপ্রিয় এই মেধাবী, সুদর্শন যুবকটি ছিলেন সবার কাছে প্রেয়, স্নেহিত একটি মানুষ। বিলেতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেন গুরুতরভাবে। এন্ড্রুজ সাহেবের সঙ্গে মীরাদেবী যাত্রা করলেন সেদেশ থেকে ছেলেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে। একদিন ভোরবেলা কবি রানী মহলানবিশকে বললেন, যদিও এন্ড্রুজ সাহেব লিখেছেন নীতু ভালো আছেন কিন্তু তবু মন ভারাক্রান্ত রয়েছে। তারপর অনেকক্ষণ ধরে রানীর সঙ্গে মৃত্যু প্রসঙ্গে তাঁর অনুভূতির কথা বর্ণনা করলেন।
এইদিন সকালের সংবাদপত্রেই রয়টারের খবর, নীতু মারা গিয়েছেন। কিছুক্ষণ পরে রথীন্দ্রনাথ এলেন বরানগরের বাড়িতে। কবির কাছে গিয়ে বললেন, ''নীতুর খবর এসেছে।'' কবি প্রথমে ঠিক বুঝতে পারেননি। প্রশ্ন করলেন, '' কী, একটু ভালো?'' রথীন্দ্রনাথ বললেন, না, ভালো নয়। রথীকে মৌন থাকতে দেখে কবি বুঝতে পারলেন। স্তব্ধ হয়ে বসে থাকলেন, চোখ থেকে কয়েকফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো। আর কিছু নয়।
তখন তিনি পুনশ্চের কবিতাগুলি লিখছিলেন। একটু পরে সম্বিত ফিরে পেলে 'পুকুরধারে' নামে কবিতাটি লেখা হলো। পরদিন শান্তিনিকেতন ফিরে গেলেন। তখন সেখানে বর্ষামঙ্গল উৎসবের আয়োজন চলেছে। কবির এই শোকসংবাদে বিচলিত আশ্রমিকেরা উৎসব বন্ধ রাখার প্রস্তাব করলেন। কিন্তু কবি রাজি হলেন না। নিজেও উৎসবে পূর্ণতঃ অংশগ্রহণ করলেন। মীরাদেবীকে লিখলেন, '' ... নীতুকে খুব ভালোবাসতুম, তাছাড়া তোর কথা ভেবে প্রকান্ড দুঃখ চেপে বসেছিলো বুকের মধ্যে। কিন্তু সর্বলোকের সামনে নিজের গভীরতম দুঃখকে ক্ষুদ্র করতে লজ্জা করে। ক্ষুদ্র হয় যখন সেই শোক, সহজ জীবনযাত্রাকে বিপর্যস্ত করে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ,.... অনেকে বললে এবারে বর্ষামঙ্গল বন্ধ থাক আমার শোকের খাতিরে। আমি বললুম সে হতেই পারেনা। আমার শোকের দায় আমিই নেবো। ... আমার সব কাজকর্মই আমি সহজভাবে করে গেছি। ...''
৮.
মীরাদেবীকে লেখা এই চিঠিতেই বাংলাভাষার অতিচর্চিত শ্রেষ্ঠ মৃত্যুসাহিত্যের স্তবকটি সংলগ্ন ছিলো।
''..... যেরাত্রে শমী গিয়েছিলো সেরাত্রে সমস্ত মন দিয়ে বলেছিলুম বিরাট বিশ্বসত্তার মধ্যে তার অবাধ গতি হোক, আমার শোক যেন তাকে একটুও পিছনে না টানে। তেমনি নীতুর চলে যাওয়ার কথা যখন শুনলুম তখন অনেকক্ষণ ধরে বারবার ক'রে বলেছি, আর তো আমার কোনো কর্তব্য নেই, কেবল কামনা করতে পারি এর পরে যে বিরাটের মধ্যে তার গতি সেখানে তার কল্যাণ হোক। .... শমী যেরাত্রে গেলো, তার পরের রাত্রে রেলে আসতে আসতে দেখলুম জ্যোৎস্নায় আকাশ ভেসে যাচ্ছে, কোথাও কিছু কম পড়ছে তার লক্ষণ নেই। মন বললে, কম পড়েনি- সমস্তর মধ্যে সবই রয়ে গেছে, আমিও তার মধ্যে। সমস্তের জন্যে আমার কাজও বাকি রইলো। যতদিন আছি সেই কাজের ধারা চলতে থাকবে। সাহস যেন থাকে, অবসাদ যেন না আসে, কোনোখানে কোনোসূত্র যেন ছিন্ন হয়ে না যায়। যা ঘটেছে, তা'কে যেন সহজে স্বীকার করি, যা কিছু রয়ে গেলো তাকেও যেন সম্পূর্ণ সহজ মনে স্বীকার করতে ত্রুটি না ঘটে। ( ২৮শে অগস্ট,১৯৩২)
৯.
''দুঃসহ দুঃখের দিনে
অক্ষত অপরাজিত আত্মারে নিয়েছি আমি চিনে
আসন্ন মৃত্যুর ছায়া যেদিন করেছি অনুভব
সেদিন ভয়ের হাতে হয়নি দুর্বল পরাভব।
.... আমি মৃত্যু চেয়ে বড়ো এই শেষ কথা বলে
যাবো আমি চলে।''
উনচল্লিশ সালের শেষ দিকে নাৎসি বাহিনী যখন নরওয়ে আক্রমণ করলো, কবি বললেন,'' অসুররা আবার নরওয়ের ঘাড়ে পড়লো। ওরা কাউকে বাদ দেবেনা। নরওয়ের লোকজনদের কথা মনে পড়ছে আর আমার অসহ্য লাগছে। তাঁদের যে কী হচ্ছে কে জানে।''
১৯৪০শের বর্ষার পর তিনি গিয়েছিলেন মংপু, মৈত্রেয়ী দেবীর কাছে। কিন্তু অত্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়ায় সেপ্টেম্বর মাসে তাঁকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় কালিম্পঙ থেকে কলকাতায় ফিরিয়ে আনা হয়। বেশ কিছুদিন চিকিৎসার পর একটু সামলে ওঠেন, কিন্তু অতীব দুর্বল হয়ে পড়েন। এ রকম একটা সময়ে প্রশান্তচন্দ্র খবর পেলেন কবি তাঁকে বারবার ডেকে পাঠিয়েছেন, জরুরি কথা আছে। নানা কাজে ব্যস্ত থাকায় প্রশান্তচন্দ্রের পৌঁছোতে একটু বিলম্ব হ'লো। তিনি কবির কাছে যাবার পর দেখলেন কবি বিশেষ উত্তেজিত এবং ঐরকম দুর্বল শরীর এতো উত্তেজনার ভার নিতে পারছে না। প্রশান্তচন্দ্রকে দেখেই কবি বললেন, '' অনেকক্ষণ ধরে তোমাকে ডাকছি, চীনদেশের লোকেরা যে যুদ্ধ করছে....'' বলতে বলতে কথা জড়িয়ে এলো। একটু থেমে সম্বিত ফিরে পেয়ে আবার বললেন, '' এতো দেরি করলে কেন? যা বলতে চাইছি বলতে পারছিনে। একটু আগে কথাটা স্পষ্ট ছিলো, এখন ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে...'' প্রশান্তচন্দ্র নীরবে অপেক্ষা করতে লাগলেন। খানিকটা পরে থেমে থেমে দম নিয়ে তিনি বলতে লাগলেন, ...'' চীনদেশের লোকেরা চিরকাল যুদ্ধ করাকে বর্বরতা মনে করেছে। কিন্তু আজ বাধ্য হয়েছে লড়াই করতে, দানবরা ওকে আক্রমণ করেছে বলে। এতেই ওদের গৌরব। ওরা যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়েছে এই হলো বড়ো কথা। ওরা যুদ্ধে হেরে গেলেও ওদের লজ্জা নেই। ওরা যে অত্যাচার সহ্য করেনি, তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে, এতেই ওরা অমর হয়ে থাকবে।'' আশি বছর বয়সে, বিছানায় উঠে বসার ক্ষমতা নেই, সেই অবস্থায় অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে তিনি আকুল হয়ে পড়েন।
রাশিয়া'কে নিয়ে তাঁর মনে ছিলো বিপুল আশ্বাস। তাঁদের দেশ ঘুরে এসে কবির মনে গভীর আস্থা জন্মেছিলো। জার্মানি যখন রাশিয়া আক্রমণ করলো তখন তিনি প্রায় শেষ শয্যায়। প্রতিদিন যুদ্ধের খবর নিতেন। বারবার বলতেন, এই যুদ্ধে যদি রাশিয়া জেতে, তবে তিনি খুব খুশি হবেন। সকালবেলা খবর কাগজ এলে সবার আগে দেখতেন ফ্রন্টের খবর কী। রাশিয়ার জন্য কোনও খারাপ খবর থাকলে বিষণ্ণ হয়ে যেতেন, কাগজ ছুঁড়ে ফেলে দিতেন।
যেদিন তাঁর অপারেশন হবে সেদিন সকালে বললেন, ''রাশিয়ার খবর বলো''। উত্তর এলো , '' একটু ভালো মনে হচ্ছে। হয়তো একটু ঠেকিয়েছে।'' কবির মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো, '' হবেনা? ওদেরই তো হবে। পারবে। ওরাই পারবে।'' রোগকষ্টের ব্যক্তিগত সংলাপের বাইরে সম্ভবত এই ছিলো তাঁর শেষ কথা।
এর তিন মাস আগেই তিনি লিখেছেন, '' ... আজ পারের দিকে যাত্রা করেছি--পিছনের ঘাটে কী দেখে এলুম, কী রেখে এলুম, ইতিহাসের কী অকিঞ্চিৎকর উচ্ছিষ্ট সভ্যতাভিমানের পরিকীর্ণ ভগ্নস্তূপ। কিন্তু মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ, সে বিশ্বাস শেষ পর্যন্ত রক্ষা করবো। আশা করবো মহাপ্রলয়ের পরে বৈরাগ্যের মেঘমুক্ত আকাশে ইতিহাসের একটি নির্মল আত্মপ্রকাশ হয়তো আরম্ভ হবে এই পূর্বাচলের সূর্যোদয়ের দিগন্ত থেকে। আর একদিন অপরাজিত মানুষ নিজের জয়যাত্রার অভিযানে সকল বাধা অতিক্রম করে অগ্রসর হবে তার মহৎ মর্যাদা ফিরে পাবার পথে।''
------------------------------------------------------------------
মৃত্যুরাখাল আবার ফিরে গেলো। সদানন্দের চ্যালেঞ্জ ছিলো সে মৃত্যু চেয়ে বড়ো। আনন্দসমুদ্র পেরিয়ে সদানন্দের মাটির রাজপ্রাসাদ।রাখালের পক্ষে সমুদ্র পেরোনো আর সম্ভব হলোনা। মাঝে মাঝে এই সব পরাভব তার ভালো-ই লাগে। তারও তো কখনও, কোনো দুর্লভ মুহূর্তে ভালোবাসতে ইচ্ছে করে।