আমি বলতে পারব না কতটা মাংস পূর্ণবয়স্ক বাঘের দিনের খাবার , কিন্তু আপনি একটা ধারণা করতে পারেন যখন বলছি একটা সম্বরকে দুদিনে ,আর মোষকে তিন দিনে সাঁটিয়ে চতুর্থ দিনের জলখাবারের মতো কিছু রাখে ও।
আনিস ভাই কিন্তু তা মনে করেনি। ওর প্রশ্ন ছিল তাহলে ঘটনার পরের দিনই বিকেলের দিকে আসরাফুলের একটা হাতই খুঁজে পেল কী করে ? এর উত্তরটা দিচ্ছেন করবেট : ও যখন মোহন চেক পোস্টে পৌঁছয় আর আসরাফুলের কথা বলে তখনি করবেটকেও ডাকা হয়। এটা অবশ্য ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের সার্চ পার্টিরও কেউ জানতো না। পুরো ব্যাপারটা গোপনে রেখে একটা অপারেশন চালাচ্ছেন করবেট। বাস্তবে অবশ্য সবাই জেনেছিল এই মুহূর্তে ভারতের অন্যতম বড় শিকারী উত্তরাখণ্ডের ডাঃ লাখপত সিং রাওয়াত বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছেন মোহনের নতুন মানুষখেকোকে ধরতে। কিন্তু রাওয়াত তো বুড়বাক নন যে তিনি মোহনের মানুষখোরের ব্যাপারে করবেটকে ছাড়াই চলবেন, তিনিও করবেটের সঙ্গেই ভিড়ে যাচ্ছেন। তাই একই সঙ্গে দুটো অপারেশনই চলতে থাকে। দুপক্ষই আনিস ভাইয়ের সঙ্গে দুরকমভাবে কমিউনিকেট করছিল। দুটো অপারেশনেই কমন ফ্যাক্টর আনিস। এটা সে নিজেও জানতো কি ? আর বাঘ বা বাঘিনী যেই হোক, একা বা ছানা সুদ্দু , এতসব তার বা তাদেরও মাথায় ঢোকার কথা কি ?
যে মোষটা টোপ হিসেবে ব্যবহার করেছিলাম সেটা পূর্ণ বয়স্ক না হলেও একদম ছোটটাও নয় , বাঘ তার মোটামুটি অর্ধেক খেয়ে গেছে।বুঝলাম ওই পরিমান পেটে পুরে ও বেশি দূর যায়নি , আর মাটিও ভিজে রয়েছে , আরো ঘন্টা দুয়েক ভিজেই থাকবে ,আমি ঠিক করলাম কোন দিকে ও গেছে বার করতে হবে ,আর যদি পারি ওর পেছু নেব।
মড়ির কাছে পায়ের ছাপ খুঁজতে একটু গুলিয়ে যাচ্ছিল কিন্তু বড় করে চক্কর কাটতে কাটতে বাঘের চলে যাবার পায়ের ছাপ বের করে ফেললাম। নখ গুটিয়ে ফেলা জানোয়ারের পায়ের ছাপ খোঁজা খুরওলা জানোয়ারের থেকে একটু কঠিন ,যদিও অনেক বছরের ট্র্যাকিংয়ের অভিজ্ঞতা সেসব শিকারী কুকুরের গন্ধ শোখার মতোই সহজ করেছে।সেই চলে যাবার রাস্তা ধরে নিঃশব্দে ,ছায়ার মতো আস্তে আস্তে যাচ্ছিলাম , জানতাম বাঘ কাছেই আছে। একশো গজ গিয়ে একটা চ্যাটালো জমিতে পৌঁছলাম , সেটা কুড়ি বর্গ ফুট চওড়া ,নানা নরম ঘাসের কার্পেট বিছানো যাদের শেকড় দিয়ে গন্ধ বেরচ্ছে ; এই ঘাসের ওপরই বাঘ শুয়ে ছিল , তার গায়ের ছাপ জেগে রয়েছে। সেই ছাপ দেখে জানোয়ারটার আকার সম্বন্ধে আন্দাজ করার চেষ্টা করছিলাম ,দেখতে দেখতেই চেপে যাওয়া কয়েকটা ঘাস সড়াৎ করে খাড়া হয়ে ওঠে। এটা থেকে বোঝা যাচ্ছে মিনিট খানেক আগেই বাঘটা এখান থেকে উঠেছে।
পুরো জায়গাটার লে আউট সন্বন্ধে একটা ধারণা আপনার হবে যখন বলব বাঘ মড়ি নিয়ে উত্তর দিক থেকে নামল , আর ওটা রেখে পশ্চিমে গেল , আর যে পাথরতায় আমি বসি , মড়িটা ,আর আমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি , একটা গোটা ত্রিভুজের তিন শীর্ষ বিন্দু , একটা দিক চল্লিশ গজ , আর অন্য দু বাহু একশো গজ লম্বা।
ঘাসগুলোর হঠাৎ নড়াচড়ায় প্রথমে ভাবলাম বাঘ আমাকে দেখে উঠে গেছে , কিন্তু সেটা সম্ভব নয় ,কারণ ঘেসো জমিটা থেকে যে পাথরটায় বসেছিলাম সেটা আর মড়ি কোনোটাই দেখা যায় না , আর তাই ও আমায় দেখতে পায়নি আর নিশ্চয়ই আমি থাবার ছাপ ধরে এগোনোর পরই উঠে গেছে। ওই নরম বিছানা ছেড়ে ও উঠল কেন? ঘাড়ের ওপর পড়া সূর্যের চড়া রোদ এর উত্তর দিয়েছিল। এখন মে মাসের পচা গরমের সকল নটা , সূর্যের দিকে আর ওপরের গাছের মাথায় নজর করলে বোঝা যায় মিনিট দশেক হল রোদ পড়েছে ঘাসের ওপর। বাঘের খুব গরম লাগে , আর আমি আসার কয়েক মিনিট আগেই ছায়ার খোঁজে চলে গেছে।
আগেই আভাস দিয়েছি ঘেসো জমিটা কুড়ি বর্গ ফুটের এক বর্গক্ষেত্র। আমি যে দিকে এসেছি তার উল্টো দিকে উত্তর -দক্ষিণে একটা গাছ পড়ে। গাছটা চার ফুট ডায়ামিটারের, যে ঘেসো জমিটার মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে আছি , পড়ে আমার থেকে দশ ফুট দূরে । পড়ে যাওয়া গাছটার গোড়া পাহাড়ের দিকে ,সেটা খাড়া উঠেছে আর ঝোপে ঢাকা গাছের কাণ্ডের অংশটা, যেটা পড়ার সময় থেঁতলে গেছে ,পাহাড়ের ধার থেকে বেরিয়ে আছে। গাছটা ছাড়ালে পাহাড় সমকোণে উঠেছে আর তার গা বরাবর একটা পাথরের ধাপ তিরিশ গজ দূরের ঘন জঙ্গলে মিলিয়ে গেছে।
আমার আন্দাজ অনুযায়ী যদি রোদের তাপই বাঘের সরে যাওয়ার কারণ হয় , ওকে গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিতে হবে ,আর এ ব্যাপারে নিশ্চিত হব তখনই যখন গাছের কাছে গিয়ে দেখব ।
নরম ঘাসের ওপর প্রতিটা পদক্ষেপে এক ইঞ্চি করে এগিয়ে ,আমি গাছের কাছে পৌঁছতে শুরু করি , আর বাঘ আর আমার মধ্যে আধ রাস্তা যাবার পর যখন আমি পাথরের ধাপে ইঞ্চি তিনেক লম্বা একটা কালো - হলদে জিনিস দেখলাম ,দেখি ধাপটা একটা নিয়মিত ব্যবহৃত জানোয়ার চলার শুঁড়িপথও বটে। দীর্ঘ কয়েক মিনিট নিশ্চল জিনিসটার দিকে তাকিয়ে রয়েছি , যতক্ষণ না নিশ্চিত হয়েছিলাম ওটা বাঘের ল্যাজের ডগাই । ল্যাজটা যদি আমার থেকে দূরে থাকে, মাথাটা নিশ্চয়ই আমার দিকেই , ধাপিটা দু ফুটের মতো চওড়া, বাঘটা গুঁড়ি মেরে আসতে পারে আর অপেক্ষা করবে পড়ে থাকা গাছের কাণ্ডের ওপর থেকে আমার মাথা দেখামাত্র ঝাঁপ দেবার জন্য । ল্যাজের ডগাটা আমার থেকে কুড়ি ফুট দূরে, আট ফুট গুঁড়ি মারার জন্য ধরে ওর মাথাটা বারো ফুট আগে। কিন্তু আমাকে আরো এগোতেই হবে যতক্ষণ না শরীরটা পরিষ্কার দেখা যায় যা এক টিপে মেরে ফেলতে লাগে , আর এক টিপেই মারতে হবে বেঁচে দু পায়ে হেঁটে ফিরতে। তখনই , জীবনে এই প্রথমবার ,আমি সেফটি ক্যাচ না খুলে রাইফেল বওয়ার ঠেলা বুঝলাম। আমার ৪৫০/৪০০ রাইফেলের সেফটি ক্যাচ খোলার আওয়াজ বেশ জোর , আর এই সময় কোন আওয়াজ করার মানে হয় বাঘ আমাকে ধরে নেবে বা ওকে পাঠিয়ে দেবে খাড়া উৎরাই ধরে এমন জায়গায় যে গুলি আর মারা যাবে না।
আবার ইঞ্চি ইঞ্চি করে এগোতে শুরু করলাম ,যতক্ষণ না ল্যাজের পুরোটা, আর তারপর শরীরের পেছনের অংশটা, নজরে আসে। যখন পেছনের অংশটা দেখতে পেলাম ,মনে হচ্ছিল আনন্দে চেঁচিয়ে উঠি , না গুঁড়ি মেরে আসছে না ঝাঁপ দিচ্ছে বাঘটা , আরামে শুয়ে রয়েছে । যেহেতু দু ফুট ধাপিটায় তার শরীরে মাঝটাই ধরে ও পেছনের ঠ্যাং ছড়িয়ে রেখেছে পাহাড়ের ধারে সমকোণে গজানো ওক চারার ডালে। আরো এক ফুট এগোলাম আর ওর পেটটা চোখে পড়ল। আর যে স্বাভাবিক ছন্দে সেটা ওঠা নামা করছিল তাতে বুঝলাম ও ঘুমোচ্ছে। এখন আমি একটু তাড়াতাড়ি এগোলাম , যতক্ষণ না ওর কাঁধ , আর তারপর সারা শরীর , নজরে আসে। ঘেসো জমির ধারটায় মাথা রেখে ও শুয়ে , যা পড়ে যাওয়া গাছটা ছাড়িয়ে আরো তিন বা চার ফুট এগিয়েছে ; ওর চোখ দুটো পুরো বোজা ; আর উঁচু হয়ে নাকটা স্বর্গের পানে।
রাইফেলের মাছি ওর কপালে তাক করে ঘোড়ায় চাপ দিলাম আর , ঘোড়াটা টেপার সঙ্গে সঙ্গে সেফটি ক্যাচটাও খুলতে থাকি যাতে ওটা খোলা আর গুলির আওয়াজ এক সঙ্গে হয়। রাইফেল ছোড়ার এই উল্টোমুখি কায়দায় কী ভাবে কাজ হয় জানিনা , কিন্তু কাজ অবশ্যই হয়েছিল ; আর যখন কাছ থেকে ছোড়া শক্তিশালী রাইফেলের গুলি ওর কপাল ফুঁড়ে দিল শরীরটায় একটা ছোট কম্পন হয় ,ওর ল্যাজটা ছড়ানোই থাকে , পেছনের পাটা চারা গাছটার ওপরের ডালে যেমন ছিল রয়ে যায় ; উঁচু নাকটা এখনো স্বর্গের দিকে। ও যেমন ছিল ঠিক তেমনই রয়ে যায় যখন আমি প্রথমটার পরপরই সম্পূর্ণ অকারণেই , দ্বিতীয় একটা গুলি মারলাম। যে বদলটা চোখে পড়ে তা হল পেটের ওঠানামা বন্ধ হওয়া; আর কপালের দুটো আশ্চর্য রকমের কম ছোট ফুটো থেকে রক্ত চুইয়ে পড়তে থাকে।
যে কোন কাজ শেষ হলে আসে পরিতৃপ্তি , এইমাত্র যেটা করলাম সেটাও কোন ব্যতিক্রম নয়। আমার ওখানে যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল মানুষখেকোটাকে নিকেশ করা , দুঘন্টা আগে রাস্তা ছেড়ে যাওয়া থেকে সেফটি ক্যাচ তোলার মুহূর্ত পর্যন্ত - হনুমানের কলটা শোনা অবধি- কোন ভুলচুক ছাড়াই সব কিছু ঠিকঠাক ছিল।এতে একটা চরম পরিতৃপ্তি আছে, যেমন একজন লেখকের হয় প্লটটা শেষ করে ,ধাপে ধাপে , ইচ্ছে মতো মেলে ধরে। আমার ক্ষেত্রে , শেষটা একদমই মনোমতো নয় , কারণ পাঁচ ফুট দূরে শুয়ে থাকা প্রাণীটাকে মারতে হয় , ঘুমের মধ্যে।
আমি জানি অন্যের কাছে এ ব্যাপারে আমার ব্যক্তিগত অনুভূতির সামান্যই মূল্য আছে ,কিন্তু মনে হল আপনি ভাবতেও পারেন এটা ঠিক খেলোয়াড়সুলভ হল না সে ক্ষেত্রে যে যুক্তিতে নিজেকে প্রবোধ দিয়েছিলাম তা বলছি , যদি সেগুলো আমার থেকে আপনাকে বেশি সন্তুষ্ট করতে পারে এই আশায়। সে যুক্তিগুলো এরকম ( ক )বাঘটা ছিল মানুষখেকো তাই বাঁচার থেকে মরাই ভালো , (খ ) তাই জেগে না ঘুমের মধ্যে মারা হল তাতে কিছু এসে যায় না ,(গ ) যদি ঘুমের মধ্যে ওর পেট ওঠানামা করছে দেখেই চলে যেতাম তবে এর পর থেকে যতজন মানুষ ওর হাতে মারা পড়ত সবার মৃত্যুর নৈতিক দায়িত্ব নিতে হতো আমাকেই। আপনাকে মানতেই হবে,যুক্তিগুলো শুনতে ভালো আর অকাট্যও , আমার কাজের সাফাই ; কিন্তু খেদ রয়েই যাচ্ছে যে নিজেকে বাঁচানোর ভয়ে হোক , বা একমাত্র সুযোগ হাতছাড়া না করার জন্যেই হোক কিংবা সম্ভবত এ দুই মিলিয়েই হোক , আমি ঘুমন্ত প্রাণীকে জাগাইনি আর খেলতে পারার কোন সুযোগও দেইনি।
শুনে লাখপত সিং রাওয়াত বলেন ,'' তবে এবার আপনাকে আর কোন আফসোসের মধ্যে যেতে হচ্ছে না করবেট সাহাব। ''
------ বলছ।
------ হ্যাঁ সাহাব এখনকার স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর -এস ও পি আলাদা। ঘুমপাড়ানি ডার্ট এসে গেছে, সঙ্গে ভেট- পশু চিকিৎসক থাকছে ,নাইট ভিশন , জিপিএস , ওয়াকিটকি -দেখছেন না আমাদের টিমে।
------ কতখানি আলাদা ?
----- অনেকটা সাহাব।
----- তবে তোমার শিকারী হিসেবে এতো নাম হল কী করে ?
----- আদমখোর মেরে সাহাব।
----- তবে ?
----- সে ঠিকই বলেছেন আপনি। মারার আফসোস …..
----- রয়েই যাচ্ছে।
----- হ্যাঁ সাহাব।
ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের সার্চ পার্টি কিছুই খুঁজে পেল না। ঘন ঘন প্রচুর বৃষ্টিও পড়ছিল, তার ওপর কোশি নদীতে হড়কা বান , ফলে পাগমার্ক খুঁজে পাওয়াটাও কঠিন। তবে ববিচাঁদের ওপর আক্রমণ হওয়ায় সরকারি ভাবে ঘোষণা হল আদমখোর ছেলে বাঘ কারণ তার ওজন যা ববিচাঁদ আন্দাজ করে। মেয়ে বাঘ ওতো ওজনের হবেই না খুব বেশি হলে একশো আশি কিলো , দু কুইন্টাল অসম্ভব। আদমখোরের দু থাবা ধরে ফেলায় আর বেঁচে ফেরায় ববিচাঁদকে নিয়ে মিডিয়াও ব্যস্ত থাকে। আদমখোরের জন্যই তাকে ফরেস্ট সাহাবরা অ্যাপোলো হাসপাতলে নিয়ে গিয়েছিল কিনা কে জানে। ববিচাঁদ ভাবে ভাগ্গিস আদমখোরটা ছিল ! এর মধ্যে আসরাফুলের কথা কেইবা মনে রাখবে। আনিসকে জানানো হল বাঘটা ছিল ছেলে বাঘ। কিন্তু আনিস তা মানে না। আসরাফুলকে বাঘে ধরে নিয়ে যাবার সময়, তার শরীরের কোন অংশ ধরে টেনে নিয়ে যেতে পারে আদমখোর এটা করবেট অনেক আগে থেকেই আন্দাজ করে ফেললেন কারণ মোহনের আদমখোর বা মানুষখেকোকে মেরেছিলেন তিনিই। সেটা ডাঃ রাওয়াতকে বললেন, শুনে তো এখনকার শিকারী তাজ্জব !
----- এখনো সাহাব।
----- কী ?
----- ক্যায়সা আন্দাজ আপনার !
------ আমি জানতাম বাঘটার পাগ মার্ক কী।
------ কোন বাঘ সাহাব ?
------ মোহনের মানুষখেকো। সে মেয়ে বাঘ বা ছেলে সেটাও জানা ছিল।
মারার সময় কোন রাইফেল ব্যবহার করেন সেটা নিয়েও করবেটের কোন সংশয় ছিল না। এমন এক বন্দুকই তিনি ব্যবহার করেছিলেন যা অব্যর্থ মানে যা ব্যর্থ না হওয়ায় মোহনের মানুষখেকো মারাই পড়েছিল অন্য কিছু হয়নি। নিখুঁত বর্ণনা না দিলে বাঘ মারা পড়ে না, তাই বলা যেতেই পারে করবেট পয়েন্ট সাড়ে চারশো- চারশোর দোনলা রাইফেল ব্যবহার করেছিলেন। দু হাজার পনেরো সালের এক নিলামে রাইফেলটা বিক্রি হয়েছে দু লক্ষ চৌষট্টি হাজার ডলারে। আর পয়েন্ট দুশো পঁচাত্তর ক্যালিবারের একটা রাইফেল রিগবি কোম্পানী হেফাজত থেকে ভারতে এসেছে দু হাজার ষোল সালে। এই সব বন্দুকের বর্ণনা থেকেও বোঝা যাচ্ছে না কেন আবার মোহনের আর সারা কুমায়ুন গাড়োয়ালে এখন মাঝেমধ্যেই মানুষ মারতে বেরয় আদমখোররা আর নিজেরাও মারা পড়ে।
পাগমার্ক দেখে, থাবার ছাপ জরিপ করে করবেট ও রাওয়াতের টীম ধরতে পেরে যায় এটা একটা বাঘিনীই , যে কখনও পুরুষ সম্বরের সঙ্গে সুবিধে করতে পারে না। তার সঙ্গে দুটো সাব- অ্যাডাল্টও আছে। যাদের সে মা হয়েছিল। তারা সবাই মিলে আসরাফুলের এতোটাই খায় , যে করবেট আর রাওয়াত মিলে শুধুমাত্র একটা হাতই উদ্ধার করতে পারেন পরের দিনেই, বিকেলের দিকে । করবেট বলেন ,"এটা আসরাফুলের ডান হাত।"
------ ঠিক বলেছেন সাহাব।
------ তিনজনে না খেলে কিছুতেই একদিনে এতটা খেতে পারত কি ?
------ না সাহাব , কিছুতেই পারত না।
------ শুধু ডান হাত ফেরত পেতে কি?
----- না সাহাব ।
------ তবে।
------ ঠিক সাহাব। বড্ড জোর ত্রিশ কিলো খেতে পারে একা অথবা চল্লিশ কিলো।
------ তাও সে হজম করতে বাঘেদের এক হপ্তা লেগে যায়।
------ সাহাব , এভিডেন্স বেসড স্টাডি বলছে হাড়-টাড় সবশুদ্ধ হজম করতে দেওয়ার জন্য পেটকে এই সময়ই দিতে হবে।
------ তাই ?
------ হ্যাঁ সাহাব ।
------ গুড।
আনিসকে আসরাফুলের কাটা হাত দেখান হলে সে ভেঙে পড়ে। এটা যে তার বন্ধুরই হাত তাতে কোন সন্দেহ ছিল না কারণ একটা উল্কি, যা ডান হাতে আঁকিয়ে ছিল আসরাফুল আর আনিস সেটা জানতো, যেটা আসলে করবেট জাতীয় উদ্যানের লোগো। সেই লোগো দিয়েই করবেটের সব কিছু চিহ্নিত। তাই বুঝতে কোন অসুবিধে হয় না।