এই কথাবার্তার শেষে আমরা মদ খেতে বসি। কুমু খাবারদাবার আগেই অর্ডার দিয়ে আমাদের ঘরের সেন্টার টেবিলটায় গেলাস সাজিয়ে রাখিয়েছিল। চারজন টেবিলটার পাশে গোল হয়ে বসলাম। আমি বললাম, ''বারান্দায় বসলে হতো না। ''কুমু বলল,'' বারণ করেছে। ''আমি জিজ্ঞেস করলাম,'' কে ?" কুমু কোন উত্তর দিল না। মদের ব্যাপারে নানা বিধিনিষেধ নিয়ে চলতে হয় তবে কেন হয় বলতে পারব না। এরকম আরো নানা বিধিনিষেধ নিয়ে ভাবা যেতে পারে। আমি ভাবছিলামও, কিন্তু এক মিনিটের মধ্যে আমার সঙ্গে আমার ভাবনাও এই রকম ক্রমশ বাড়তেই থাকা বিধিনিষেধের মধ্যেই অন্যদের সঙ্গে মদ খেতে শুরু করে দিল। এরকম আজকাল প্রায়ই হয়, ভাবনাও থাকে কাজও চলতে থাকে, ভাবনা থাকলেও বুঝতেই পারিনা সে আছে। একজন মাঝ বয়সী লোক খুবই কেত মেনে, প্রতিবার ঢোকার সময় দরজায় টোকা দিয়ে ঢুকে প্লেটে করে খাবার দিয়ে যাচ্ছিল। কুমু বলল, ''ওর নাম জুলফিকার। ''লোকটা খুবই বিনয়ের সঙ্গে বলে, ''জি , মেরা নং রাখ দিজিয়ে।'' আমরা জুলফিকারের নম্বরটা তুলে নিলাম ফোনে। দারুণ দারুণ কাবাব বানাচ্ছিল। প্রথম চোটে সবার পেটই খালি তার ওপর মদ পড়ে জিভকে খাবারের জন্য প্রলুব্ধ করে। জিভ লকলকিয়ে ওঠে। দেখতে দেখতে খাবার উড়ে যায়। আমরা পাঁচজনই খাবার চাইতে থাকি। তারপর ফোনে ফোনে কথা হয়। অর্ডার নিতে জুলফিকার আসতে থাকে। তাকে আমরা আঁকড়ে ধরি তাতে অবশ্য জুলফিকারের কিছু এসে যায় না সে ঠাণ্ডা মাথায় কথা বলে চলে : — জুলফিকার। সাম্মি কাবাব মিলেগা।
— হাঁ সাব।
— জুলফিকার। রেশমি কাবাব মিলেগা?
— হাঁ সাব।
— টিক্কা কাবাব?
— জি মিলেগা।
— মটন ইয়া চিকেন।
— দোনো হি মিলেঙ্গে ম্যাডাম।
— এক করকে লাও।
— জি ম্যাডাম।
— ম্যাডাম না সাব বোলো।
— জি সাব।
— জুলফিকার থোড়া স্যালাড সাথমে দেনা
— হাঁ সাব।
— জ্যাদা করকে পেঁয়াজ।
— জি সাব।
কথায় কথায় বাইরের কথা আসে। আজ বিকেলের পাওয়া গন্ধ নিয়ে রাজু কথা বাড়াচ্ছে না। এইসব গন্ধ ও একটু বেশি পায় আর পেলে গুটিয়ে যেতে থাকে। এটা কখনো কখনো ওকে ভয়ঙ্কর চুপ করে তোলে। তখন বাইরের সব অন্ধকার ওর মধ্যে প্রবেশ করতে থাকে। একজনের এরকম ডিপ্রেসড অবস্থা থাকলে অন্যরাও প্রভাবিত হয়। আজও রাজু কি সেরকমই আছে? আসলে অনেকটা পথযাত্রার ক্লান্তি আমাদের ধীরে ধীরে ঘিরে ফেলছিল। বিকেলের কথা , আদমখোরের কথা, রাজুর পাওয়া গন্ধের কথা কোন কথাটা যে কেন্দ্রে থাকবে তা ঠিক করতে পারছিলাম না কেউ। তার মধ্যেও কে বেশি মদ খাচ্ছিল তার কোন ঠিক ছিল না তবে জুলফিকার ঘরের আর বাইরের জানলা হয়ে ঘরে ঢোকে আর বেরতে থাকে সঙ্গে নানা খাবার নিয়ে আসে। কিছুক্ষণ এরকম চলার পর আর কথার ও দৃষ্টির আগল থাকে না। কোথায় তাকাচ্ছি কার দিকে তাকাচ্ছি বুঝতে পারছিলাম না। সবাই এলিয়ে ও অসংলগ্ন হয়ে পড়ে। ঘরের ভেতর থেকে বাথরুম যাওয়া যায়। বাথরুম থেকে আবার ঘরে আসা-যাওয়া চলতে থাকে, চলতেই থাকে। কুমুকে দেখলাম খুঁজে খুঁজে চটি জোড়া পায়ে গলানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমি বললাম , '' কী করছিস। হেঁচড়পেঁচড় করিস না।'' কুমু বলল , ''হেঁচড়পেঁচড় করব কেন চটিটা খাটের তলায় ঢুকে গেছে দেখছ না. বাইরে যাব। বারান্দায় যাব সিগারেট খেতে। '' বলে ও চটিটা বার করে বাইরে যেতে শুরু করে এই সময় আবার জুলফিকার দরজায় টোকা দেয়। কুমু কিছুক্ষণের জন্য দাঁড়িয়ে গেল তারপর ওকে জিজ্ঞেস করতে থাকে, আমিও:
—জুলফিকার ক্যা ইয়ে বাত সচ হ্যায় এক বাচ্চেকো আদমখোর লে গয়া?
— জি লে গেয়া তো জরুর লেকিন বান্দা জওয়ান থা।
— আদমি ইয়া আওরাত?
— জি আদমি।
— শের কো আওরাত পসন্দ আতা ক্যা এ বাত সহি হায়?
— জি মালুম নেহি।
— ক্যা নাম থা বান্দে কা।
— আশরাফুল সাব। রামনগর আ রহে থে বাইক লেকে দোস্তকে সাথ । সাম মে। মোহন ফরেস্ট চৌকিকে পাস আদমখোর নে……
বাঘা খুব বেশি খায় না কোন দিন। সে বলল, ''ওকে চাটছিস কেন বাবা। যা লাগে আনতে বলে দে। এই পার্থ কিছু বলবি?'' পার্থ বলল, ''বল।''
— তন্দুরি চিকেন মিলেগা।
—হাঁ সাব।
— এক প্লেট।
কিন্তু কুমু কিছুতেই ছাড়ল না জুলফিকারকে। সে জিজ্ঞেস করেই চলে, ''জুলফিকার আদমখোরকে তোমরা আটকাতে পার না?'’
— জি।
— কী জি জি করতা হায়।
— জি মালুম নেহি।
— কিঁউ মালুক নেহি?
বাঘা বলল, '' আরে বিকেলেই তো দেখে এলাম, মোহন চৌকির আগে রাস্তায় নাকাবন্দী করছে। ''
— রাস্তায় নাকাবন্দী করে আদমখোর আটকানো যায়?
— জি মালুম নেহি।
— কুছ তো বোলো। দো বটল পানি লে আও।
— আউর তন্দুরি?
— লে আও জুলফিকার কুছ তো করো।
— জি ম্যাডাম অভি।
আমি কুমুকে বললাম, '' অনেক হয়েছে আর রাতে খাবার দরকার নেই তুই শুয়ে পড়গে যা। '' কুমু বলল, ''যাচ্ছি, একটা সিগারেট দাও।'' কুমু চলে গেল। আমার চোখ একটু লেগে গিয়েছিল। কতক্ষণ জানিনা, চটকা ভেঙে গেল রাজুর কথায়। যথারীতি সবার থেকে বেশি নিয়েছে আর আটভাট বকেই চলেছে। একনাগাড়ে বলে যাচ্ছে, 'আমার চার্জারটা কোথায় গেল? আমার চার্জারটা কোথায় গেল?''
—এই তো।
—আমাকে কী তোরা চার্জ করতে দিবি না।
—চার্জ হচ্ছে তো।
—ব্যাটারিতে চার্জ দিতে না পারলে কাল ছবি তুলব কী করে?
—বড্ড ঝামেলা করছে তো।
—খেয়ে ফেলেছে বেশি।
—জুলফিকার আউর এক প্লেট লে আও।
— কোথায় জুলফিকার! এতো রাতে!
— আনবে না?
— কী?
— আর তাতাস না।
— আমি আর তোদের সঙ্গে আসবই না। আসবই না।
— ঠিক আছে।
— কখনই আসব না।
— আচ্ছা।
— জেনে রাখিস।
— এই আলোটা নিভিয়ে দে তো।
আলো নেভানোর পর সবাই শুয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ পর নাক ডাকতে লাগল। পার্থ আর কুমু ছাড়া আমাদের সবার বয়সই ষাট ছুঁইছুঁই। কুমু আর পার্থও পঞ্চাশের ওপারে অপেক্ষা করছে। মধ্যবয়সীদের একটা গ্রূপ বলা যেতে পারে। বাঘা ছাড়া সবাই একই সরকারি অফিসে ইঞ্জিনিয়ার। বাঘার ব্যবসা আছে ,বেশ বড়সড় ব্যবসা। বাঘার সঙ্গে অন্যদের যোগাযোগ আমার মাধ্যমেই। আমার ছোটবেলার বন্ধু বাঘা, একমাত্র এই দুজনেই টিঁকে আছি। কী ভাবে যেন। কেমন ভাবে এটা নিয়ে আসলে বিশেষ কিছু ভাবি না দুজনের কেউই - এমনি এমনিই বন্ধুত্ব টিঁকে গেছে যেমন হয় আরকি। ঘুমের চটকা ভেঙে ওঠার পর কিছুতেই ঘুম আসছিল না। আস্তে আস্তে কোন শব্দ না করে বেরিয়ে এলাম ঘরের দরজা খুলে। বেরনোর সময় ঘুমন্ত কারুর চোখের দিকেও তাকাই না যদি হঠাৎ চোখ খুলে ফেলে আমাকে দেখতে পায় এই ভয়ের শিরশিরানি ঘরের মধ্যেকার অন্ধকারে আমাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল। বারান্দায় বসতে যাই। তারপর মনে হল রিসর্টের লোকেরা যদি সিগারেটের আগুন দেখতে পায়? যদি মানা করতে আসে? খোলা চত্বরে রটওয়েলার দুটো মাঝে মধ্যে ডাকে। ওদের কি ছেড়ে রেখেছে? আমার সমবয়সী বক্সার -জার্মান শেফার্ড বাচ্চুর কথা মনে পড়ল। আমাদের দুজনের বারো বছরে ও চলে গেছে বৃদ্ধ হয়ে আর আমাকে সভ্যতা এখনো যুবক মনে করার সব ওষুধ যুগিয়ে যাচ্ছে। ওর কাছে এই প্রজাতিটার অনেক কিছু পাঠ করেছিলাম। তার মধ্যে এই অন্ধকারে চোখের কথা মনে পড়ে গেল। রটওয়েলারের চোখগুলো অন্ধকারে জ্বলতে দেখা যায়। ঘরের জানলা দিয়ে সে চোখে আমাদের লক্ষ্য করে নিশ্চয়ই , আরো অনেক কিছু লক্ষ্য করে। তার কাজ লক্ষ্য করা। কুকুরের চোখেদের আরো কী কী কাজ আছে ভাবতে ভাবতে আরো বেশি বেশি রাতের দিকে এগিয়ে গেলাম। অজানা আদমখোরের জন্য এখন আমরা ঘরের মধ্যে বন্দী। যা যা খাবার চাই সব মিলেছে। যা যা খাবার দরকার আরো মিলবে। জুলফিকার এসে পৌঁছে দিয়ে যাবে। ফোন করলেই সে চলে আসে। আমি কাউকে না জানিয়ে ঘরের দরজা খুলি। সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। রাজু, বাঘা, পার্থ আর অন্য ঘরে কুমু - সবাই অকাতরে ঘুমোচ্ছে। কাল আমরা চলে যাব রিসর্ট থেকে জঙ্গলের ভেতরের এফ আর এইচে। ওখানে তিনদিন বুকিং আছে। তিন দিন জঙ্গলে থেকে, কয়েকটা জঙ্গল সাফারি সেরে আবার এই রিসর্টে ফিরব। একদিন বিশ্রাম নিয়ে ফিরে যাব বাড়িতে। কাল সকালেই আক্রমভাই আসবে আমাদের জঙ্গলে নিয়ে যেতে। দরজা খুলে অন্ধকার দেখি। বুঝলাম একটা অনাবশ্যক ভয় ঘরের অতি নিরাপত্তার মধ্যে আমাকে গ্রাস করছিল তা কেটে গিয়ে কোথা থেকে একটা আলো আসছে। সেটা কি অন্ধকারের আলো? তার মধ্যে দিয়ে অন্ধকারে ভালো করে দেখার চেষ্টা করি। অনেকটা যেন দেখতেও পাচ্ছি। পা টিপে টিপে হাঁটা শুরু করতেই বুঝতে পারি কেউ অনুসরণ করছে। পেছনে তাকিয়ে আর চমকাই না—জুলফিকার।
—জুলফিকার।
—হাঁ সাব। মৎ বাহার আইয়ে সার।
— ছোডো ভাই।
— জি।
— আচ্ছা, থোড়া গেটকে পাস লে চলো।
— জি প্রাবন্ধি হ্যায়।
— ছোডো ইয়ার।
— জি।
— বহুত ডর কা মাহোল ক্যা?
—ঠিক হ্যায়, চলিয়ে।
জুলফিকার অন্ধকার রিসর্টের পথে আমায় বাইরে যাবার গেটের দিকে নিয়ে চলেছে। পথে কত কী অজানা দেখছি, জানছি, শুনছি, গন্ধ পাচ্ছি। জঙ্গলকে দূরে পাঠাতে গিয়ে রিসর্ট রাতে জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে পড়ে আবার সকাল হলে মানুষের জায়গায় চলে যাবে তখনও এতো জঙ্গলের ছাপ রেখে চলবে যা অতি গভীর জঙ্গলের শরীর আঁতিপাঁতি করে খুঁজলেও পাওয়া যায় না। জঙ্গল বেরিয়ে এসেছে এটা বেশ বুঝতে বুঝতে জুলফিকারকে অনুসরণ করছি। বেরিয়ে আসা জঙ্গল অনবরত শরীরের মধ্যে ঢোকে। বুঝি অনুসরণের কী মানে আর রটওয়েলার কুকুর দুটোর কাছে চলে যাচ্ছি । ওদের গা ঘেঁষে ঘেঁষে বসে থাকি। দুপাশে দুটো কুকুর তারা নিঃশব্দে আমার দিকে ঘাড় ফেরাল। বাচ্চুর শেখানো পন্থায় তাদের চোখে চোখে কথা বলি। তারপর অন্ধকার কখন নিজেই কথা বলতে থাকে, এক আদমখোরের কাহানি শোনায়। জুলফিকার অবাক হয়ে আমার দিকে চেয়ে দেখে আর বলে ' আপ কুত্তা সে ডরতা নেহি সার?'
—না।
— কিঁউ?
— কারণ কুকুরেরা আমায় চেনে। আমি ছোটবেলা থেকে বড় হয়েছি বাচ্চুর সঙ্গে। এক সঙ্গে বড় হয়েছি আমরা। আমার গায়ে তাই ওদের একজনের গন্ধ জুলফিকার।
— জি ক্যায়সে?
— এয়সেহি। গায়ের গন্ধের সঙ্গে গায়ের গন্ধ মেশা স্বাভাবিক।
—ক্যায়সে সার?
—কুকুরদের কাছে চলে যাবে তুমি। হাতের গন্ধ শোঁকাবে। গায়ের গন্ধ।
— ফির?
—কুকুর কিছু বলবে কি?
— জি মালুম নেহি।
— জারা সোচো।
— জি কুছ সমজ নেহি আতা।
—কুকুর কিছু বলতেও পারে, নাও বলতে পারে। সে তোমায় বুঝবে। তোমার গায়ে কুকুরের গন্ধ আছে কিনা বুঝতে থাকবে। যদি বোঝে তোমার গায়ে অনেক পুরোনো কুকুরের গন্ধ লেগে আছে তখন কিছু বলবে না।
—আজিব।
---- হ্যাঁ। আর সেই গন্ধ খুঁজতে খুঁজতে কুকুর তোমার সঙ্গ নেবে। নিয়ে চলতেই থাকবে, চলতেই থাকবে আর তুমি তাদের অনুসরণ করবে।
----আজিব।
----যেমন আমি তোমায় অনুসরণ করছি জুলফিকার। করছি তো করছিই।
আমরা আবার হাঁটতে থাকি। রিসর্টের খানা পাকানোর জায়গার পাশ দিয়ে যেতে যেতে সব খাবার দাবারের কাবাবের স্মৃতি আমাকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে। সেই অন্নের অতীত সঙ্গে করে, অন্নচিন্তা করতে করতে আমি শব্দের জগতে চললাম। রিসর্টের গেটের কাছে পৌঁছে অন্ধকার নালার দিকে চোখ রেখেছি। সেখানে কী কী দেখলাম সেসব খালি বিস্মরণ হয়েই চলে। বইতে থাকা জলের মতোই দেখার সবকিছু অনবরত বদলে বদলে যায়। কিন্তু এত আওয়াজ যে পাহাড়ি নালার, সেখানে শব্দ কই? জল বয়ে চলেছে অথচ কোন শব্দ করছে না। বুঝলাম চোখ অন্ধকারের গভীরে পৌছেও কিছু দেখতে পায়নি। কোন জলকে দেখা যাচ্ছে না। সেই জল বাধা পাচ্ছে কিনা তাও দৃষ্টির অগোচরে । রাতে কি জল বাধাপ্রাপ্ত হবে না? সে কি নিঃশব্দে বয়েই যাবে? এমন কোন নিশ্চিত কথার কথা ভাবতে থাকি কিন্তু ভেবে পাই না।এই আশ্চর্য অনিশ্চেয়তার মাঝে হঠাৎ মনে পড়ে নালার পাশে কি আদমখোর বসে আছে? তার দৃষ্টিও কি অন্ধকার নালার দিকে? আশ মিটিয়ে জল খেয়ে সে কার জন্য অপেক্ষা করে? সে কি সব দেখছে? আমাদেরও? কুকুর দুটো হঠাৎ অজানা আওয়াজ করতে শুরু করে। বার বার আমার দিকে তাকায় আর ল্যাজ নেড়ে নেড়ে তাদের উৎকণ্ঠা বোঝায়। জুলফিকার ছটফট করতে থাকে বলে, 'ছোড়িয়ে সাব। অন্দর যাইয়ে। ঘরকে অন্দর।'
— কেন?
— আজিব সা লাগতা হ্যায়।
— কেন?
— মালুম নেহি।
— আদমখোর?
— বহুত হো গিয়া। আপ যাইয়ে সাব।
খানিকটা দূর থেকে বারান্দায় সিগারেটের আলো জ্বলতে দেখলাম । কাছে গিয়ে দেখি কুমু বসে আছে। আমাকে দেখে বলল, ''একা কোথায় গিয়েছিলে?''
— একা নয়।
— তবে?
— জুলফিকারও ছিল।
— ছিল?
— আর কুকুররাও। রটওয়েলার।
— কটা?
— দুটো।
— চলে এলে?
— আদমখোর।
— কোথায়?
— হয়তো। বাইরে বসিস না।
কুমুর ঘরের দরজা বন্ধ হওয়া অবধি অপেক্ষা করলাম। বন্ধ হওয়ার আওয়াজ হল ধপ করে, আমিও ঘরের মধ্যেই যাই, বাইরের রিসর্টের মধ্যে ঢুকে পড়া জঙ্গলকে উপেক্ষা করে।