তিনটের মধ্যে আমরা ধিকালা এফ আর এইচ চত্বরে পৌঁছেছি। তাড়াহুড়ো করে বেড়ানোর হুজুগ তুললে যা হয় আরকি। মূল বাংলোটার কোন ঘর খালি ছিল না। আক্রাম ভাই বলল অনেকে না আসায় কিছু ঘর স্পটে দিয়ে দেয়। সেই আশাতেই –‘জয় মা’ বলে চলে এসেছি। যা থাকে কপালে। ওখানে ডর্মিটরিতে আমাদের থাকার জায়গা হয়েছে। কয়েকটা খাট পাতা আছে লোহার। তার দুটো তলা। নিচের তলায় শোয়া যায় গদীতে, ওপর তলাতেও গদী পাতা। বাথরুম বাইরে, খানিকটা দূরে। ডর্মিটরির ভেতরে একটা হাত ধোওয়ার বেসিন আছে কোন বাথরুম নেই। মালপত্র রেখে আমরা চললাম বাথরুমের দিকে। এটা আসলে পাবলিক ল্যাট্রিন, সকলের ব্যবহারের জন্য, সেটাই ডর্মিটরির বাথরুম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। দেখেই বুঝলাম কেন ডর্মিটরি বুকিং খালি থাকে। পাশেই বিদ্যুতের তার লাগানো বাংলোর সীমানা। ওই তারের বেড়ার ভরসায়, এই বাঘের জঙ্গলে অন্ধকার হয়ে এলে কে বাথরুম যাবে ! আমরা বাথরুমের দিকে এগোতে গিয়ে দেখলাম বিরাট একপাল বাঁদর পাশের বিশাল মহুয়া গাছ জুড়ে ছেয়ে আছে। তারপর থেকেই ঘন ঝোপঝাড় শুরু , বাঘ বসে আছে কিনা কে জানে ! কয়েকটা বাঁদর বাথরুমের দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে আছে আর মাঝেমধ্যে বেরচ্ছে। পুরো ল্যাট্রিনটা অপরিচ্ছন্ন আর বাঁদরের আড্ডা। বাথরুমের এককোণে পড়ে থাকা ফ্লোর ওয়াইপারটা লাঠি হিসেবে ব্যবহার করে, দাঁত খিঁচিয়ে তেড়ে আসা বাঁদরদের কোনমতে তাড়িয়ে, আমরা নমনম করে বাথরুম সারি। তারপর ডর্মিটরি ছেড়ে ধিকালার এফ আর এইচয়ের মূল কমপ্লেক্সে ঘর ম্যানেজ করতে যাই। দুটো ঘরও পেয়ে গেলাম ওখানে, কেউ বুকিং করেও আসেনি।মালপত্র টেনে এনে বাংলোর ঘর দুটোয় তুলে শান্তি। টুকিটাকি কিছু খেয়ে চলে গেলাম বিখ্যাত ডিকালার ডেকের ওপর । নিচেই কিছুটা দূরে রামগঙ্গা নদী , এটাসেটা ঝামেলায় কখন যে সূর্য পড়ে এসেছিল বুঝতেই পারিনি। তার আলো দেখা যাচ্ছিল লাল লাল, সেটা নদীর ওপর পড়ে রয়েছে অলসভাবে । একপাল হাতিকে দেখলাম জল খেতে এসেছে নদীর পাড়ে। তাদেরও কোন তাড়া আছে বলে তো মনে হয় না। তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলাম সূর্যের অস্ত যাওয়া জলে অঙ্গাঙ্গীভাবে মিশে রয়েছে হাতিদের ছায়া । সূর্যের রঙ আর হাতিদের রঙ শেষ বিকেলে মিশে যাওয়ায়, মনের ভেতর একটা বাঘ আস্তে আস্তে হাঁটা আরম্ভ করে দেয়। সেটা কি আদমখোর? বাঘাকে জিজ্ঞেস করায় ও বলল, 'তার কোন মানে নেই।'
---- কেন?
---- করবেটে, ধিকালায় অনেক বাঘ আছে। ববিচাঁদকে জিপসি বাঁচানোর পর বাঘটা কিন্তু সর্ফদুলির দিকে রওয়ানা দিয়েছিল।
---- সে তো বেশ কমাস আগে, জুলাই না আগস্টে।
---- সে এখনও ধিকালা পৌঁছয়নি এ হয় নাকি?
পার্থ বলল, “ওই বাঘটা নয় তো?’’ রাজু বলল, “কোনটা?”
---- যেটা আজ আমরা রাস্তার ওপরে দেখলাম।
---- না, না, ওটা তো একটা সাব অ্যাডাল্ট। ওজন এমন কিছু বেশি নয়।
---- ওজন ?
------ ববিচাঁদকে যে বাঘটা ধরে তার ওজন কত ছিল ?
------ সে কী করে বুঝবে ?
------ওকে ধরেছিল, চেপে বসেছিল বলে ও বুঝতে পারে।
------বাঘের ওজন ? বোঝা যায়?
------ কেন যাবে না।
------তাই কী ?
------অন্যভাবেও বলা যেতে পারে ।
-------কী রকম?
------ মূল প্রশ্ন একটা থেকেই গেল।
------ কী ?
------ আদমখোর বাঘটার ওজন কত ?
এই বলে আমরা আলোচনার মধ্যিখানে খানিকটা জঙ্গল আসতে দিয়েছি। জঙ্গল এলে গাছ আসে। তার নানান ইকো সিস্টেম নিয়ে বিছিয়ে থাকা করবেট ন্যাশানাল পার্কের প্রাণ ধিকালা রেঞ্জের বিখ্যাত ডেকের ওপর আমরা দাঁড়িয়েছিলাম। আর রামগঙ্গা নদীর ওপর, অনেক ওপর থেকে আমাদের ছায়া পড়ার কোনো সম্ভাবনাও তৈরি হয়নি। সামনের গ্রাস ল্যান্ডের ওপর দিয়ে নদী ,মানে জলের প্রবাহ ছিল। এক সময় ওই নদীও ঘন জঙ্গল থাকা এক ইকো সিস্টেমের অংশ ছিল । তারপর গ্রাম বসে বসে জঙ্গল কেটে কেটে ওই গ্রাসল্যান্ড তৈরি হয়েছে। কে বসিয়েছিল ছিল সেই গ্রাম ? নাকি লোকসংখ্যা বাড়ায় জলের মতোই গড়িয়ে উপচে পড়া মানুষের দল জঙ্গল কেটে গ্রাম বসায়। তারও অনেক পর আবার সব গ্রাম সরিয়ে আবার জঙ্গল ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে গ্রাসল্যান্ড রয়েই যায় রামগঙ্গা নদীর পাড় ধরে ধরে। সেই বিস্তীর্ণ জমিতে আর গাছের জঙ্গল ফেরে না, তৈরি হয়েছে গ্রাসল্যান্ডের ইকো সিস্টেম। সেই প্রান্তরের ওপর এক খাড়াইয়ে ধিকালার ডেকে আমরা দাঁড়িয়ে আছি। এই গ্রাম বসানোয় আর জঙ্গল ফেরানোয় করবেট সাহেবের কী ভূমিকা থাকতে পারে? শুধুই কী তিনি দেওয়ালের ওপর জঙ্গলের ছবির অত্যন্ত ভেতর থেকে যাচ্ছেন আর তাকিয়ে থাকছেন ?
মোহন ফরেস্ট চেক পোস্টে যখন আসে সে ঠকঠক করে কাঁপতে থাকে। তার জিনসের প্যান্ট ফেঁড়ে গিয়ে পায়ে অল্প অল্প রক্ত বেরোয়। নাম জিজ্ঞেস করলে সে বলল তার নাম আনিস। তার কথাবার্তা ঠিক ছিল না। ঠকঠক করে কাঁপতে কাঁপতে কেইবা ঠিকঠাক কথাবার্তা বলতে পারে। অনেকটা ঘোরের মধ্যে সে বার বার তার মোটর বাইকের দিকে দেখাচ্ছিল। আর বলছিল একমাত্র প্ল্যাটিনা নামের বাইকে চড়েছিল বলে সে পালাতে পেরেছে। ব্যাপারটা কী , কার হাত থেকে সে পালাতে পেরেছিল, এসব না বলে খালি বাইকের কথা বলায় অভিজ্ঞ ফরেস্ট গার্ডরা সব বুঝতে পারে আর এক গ্লাস গরম দুধের ব্যবস্থা করে। সেই দুধ খেয়ে ধাতস্থ হয়েও আনিস খানিকক্ষণ চুপ মেরে বসেছিল তারপর ধরা গলায় আদমখোরের কাহিনী শুরু করল।প্রথমেই সে বলল ,''আসরাফফুল ভাই কো লে গেয়া।'' ফরেস্ট গার্ডরা বোঝে কেউ একজনকে নিশ্চয়ই বাঘে নিয়েছে। তারপর তারা জিজ্ঞেস করে জানতে পারছে আনিস আর আসরাফুল বাইকে চড়ে রামনগর যাচ্ছিল। আনিস চালাচ্ছিল , আসরাফুল ছিল পেছনে। রাস্তাটা জাতীয় সড়ক তিনশো নয়।বাইকের গতি ছিল চল্লিশ পঞ্চাশ। বাঁকের মুখে বাঘ এসে তার পায়ে থাবা মারতে গেলে সে দ্রুত বাইক ঘোরায় উল্টো দিকে , জিনসের প্যান্টের ওপর হালকা লাগে। দুচাকা হঠাৎ ঘোরাতে গিয়ে পাল্টি খায়। আনিস আর আসরাফুল দুজনে দু দিকে দৌড়োয়। আনিস মোহনের চৌকির দিকে ছোটে আর আসরাফুল রামনগরের দিকে। ছুটতে আরম্ভ করেই আনিস বন্ধুর চিৎকার শোনে , দেখে বাঘ তাকে মুখে করে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। বাঘের মুখে আসরাফুলের গলাটা থাকায় সে আর চিৎকারও করতে পারছিল না। ঘাড়টা ভাঙার সময় যে আর্তনাদটা শেষ বারের জন্য বেরিয়েছিল তারপর আর কোন শব্দও সে করেনি। বাঘ জঙ্গলে মিলিয়ে গেল যেদিকে সেখানে কোশি নদী যাতে বর্ষা কালে বিশাল জলের প্রবাহ, তার পাশে ঘন জঙ্গলের মধ্যে কোথাও বাঘটা চলে যায়। আনিস তার মোটর বাইকটা সোজা করে দেখে সেটা স্টার্টও নিচ্ছে ,তাতে চড়েই ও মোহনের চৌকিতে এসেছিল। তখন মোটর বাইকেটাই তার সব মনে হওয়ায় অনবরত প্ল্যাটিনা প্ল্যাটিনা করছিল। ফরেস্ট গার্ডরা আর বিট অফিসার সবাই মিলে খুবই তৎপরতা দেখায় , অন্য বিটের লোকেরাও এসে পড়ায় একটা বড় সার্চ পার্টি আসরাফুলকে খুঁজতে বেরিয়েছিল কিন্তু কোশি নদী আর আশপাশের ঘন জঙ্গলের আড়াল থাকায় সবাই সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে থাকে। সকাল হলে ওরা আবার বেরোবে।
রাজু বলল, " প্ল্যাটিনা একটা মোটর বাইক।'' কুমু বলে , '' কে না জানে। অতবড় একটা ট্রমা হলে ভুলভাল বকবে না ? ''
------ কিন্তু ওটা কী বিশেষ ধরণের মোটর বাইক ?
------ তাই ?
------ আমার মনে হয় বিশেষ ধরণের মোটর বাইক।
------ মনে তো হয় না।
------ আমার তো মনে হয় এর জন্য বিশেষ ধরণের মোটর বাইকের দরকার আছে।
------ আমার তো মনে হয় আমাদের মধ্যে বেশ কিছু সাইকো আছে।
------ সাইকো ?
------ আলবাত সাইকো।
------ কে কে ?
------ পুরো গন -মানে মাথা টাথা গেছে।
রাজু ওসবে পাত্তা দেওয়ার লোকই নয় সে বলে চলে , " অবশ্য প্ল্যাটিনা ছাড়া অন্য কিছু চালালেও ধরত।'
------ কে?
------ বাঘ- আদমখোর।
------ আদমখোর?
------ হ্যাঁ।
------ তুই মোহনের চেকপোস্টের দিকে যাবার রাস্তায় গন্ধ পেয়েছিলি?
------ পেয়েছিলাম। সেটা বাজার অবধি ছিল। মোহনের বাজারে যে দোকানটা থেকে আমরা কিনলাম সে অবধি ছিল।
------ ওটা আদমখোরের?
------ কোনটা?
------ গন্ধটা?
------ হ্যাঁ, হতে পারে।
------ সেটা বাজার অবধি আমাদের অনুসরণ করেছিল। তারপর আমাদের দোকানে অনেকক্ষণ থাকতে দেখে দাঁড়ায়নি। চলে গেল।
------ হতে পারে।
বাঘা বলল, “তবে মদের দোকানে আমি অনেকক্ষণ ছিলাম। সেখানে কোনো গন্ধ পাইনি।‘’ কুমু বলল,“তুমিও কি আজকাল জঙ্গলের নানা আজগুবি গন্ধ টন্ধ পাচ্ছ বাঘাদা ?''
বাঘা কিছু বলল না। আনিস আর আসরাফুলের কাহিনী আমাদের ঘিরে ঘিরে ধরে। তারপর সরাসরি ববিচাঁদের কাছে চলে যাই অনেকটা বাঁচার জন্যই , ববিচাঁদই ভরসা। সে বেঁচে আছে শুধু তাই নয় আবার ডিউটিতে জয়েনও করেছে।
ববিচাঁদকে যখন ধরল তখন ও বুঝতে পারল যে বাঘ তাকে ধরেছে তার ওজন দু কুইন্টাল মতো। ওটা বাঘেরই হতে পারে, বাঘিনীর নয়। বড্ড জোর ওয়ান পয়েন্ট এইট কুইন্টাল হয় বাঘিনীরা। শুনে আমি বলি, “পাগ মার্ক দেখেই তো বুঝতে পারত বাঘ না বাঘিনী।‘’
----- তাই?
----- হ্যাঁ।
----- কী রকম করে তফাৎ করবে?
রাজু বলল, 'গন্ধ শুঁকে তফাৎ করা যায়, কিনা বলতে পারব না। আমি বললাম, “গন্ধের কথা বলছি না।‘’
----- তবে?
----- পাগ মার্কের কথা বলছি, থাবার ছাপ যা বাঘ রেখে যাবে।
কুমু বলে উঠেছে ,'' যাবেই ?''
----- হ্যাঁ।
----- যদি বৃষ্টি হয় , যদি হড়কা বান আসে কারণ সময়টা বর্ষাকাল কিংবা তার ওপর দিয়ে গাড়ি চললেও?
----- তা নয় তবে পাগ মার্ক ছেলে বাঘ আর মেয়ে বাঘের আলাদা আলাদা হয়।
----- কী রকম?
----- ছেলেদের গুলো গোল গোল আর মেয়েদের লম্বা লম্বা হয় নখগুলো। থাবার ছাপের তফাৎ হয়ে যাচ্ছে সে জন্য।
----- আমরা যে বাঘটা রাস্তার ওপর দেখলাম ওটা কী ছিল?
----- ছেলে বাঘ, বড় হয়নি সাব-এডাল্ট বলে।
----- কী করে বুঝলি?
----- চোখে দেখে।
----- চোখে ভালো করে না দেখলে ?
------ মানে ?
তবে ববিচাঁদকে যখন বাঘ ধরে তখন সে মোটর বাইক থেকে ছিটকে পড়ে। মোটর বাইকও ছিটকে যায়। তাতে প্রচণ্ড শব্দ হয়। সেই শব্দে বাঘের আক্রোশ কমে না। সে বিন্দুমাত্র চমকায়নি কিন্তু করবেটের নজরে পড়ে যায় তার ববিচাঁদকে মাটিতে ফেলে বুকে থাবা চালানোর ঘটনা। তিনি ধনগড়ি গেটের দেওয়ালের ছবি থেকে তীক্ষ্ণ নজর রাখছিলেন। যেহেতু তাকে পেড়ে ফেলার চেষ্টা করছিল বাঘ, তাই দু হাত দিয়ে ববিচাঁদ বাঘের থাবা ধরে ফেলে। এই সাহসটা সে পেয়েছিল ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের উর্দি পরা ছিল বলে। যা পরলেই অনেকটা সাহস আসার কথা। ওই উর্দি আছে বলে অনেক বড় বড় সাহেবরা বা সাহাবরা তাকে দিল্লীর অ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়ে যাবে, এটা ববিচাঁদ জানত। ওই উর্দি রক্তেও ভেসে গিয়েছিল আর ওটা ফেঁড়েই চামড়া , তার ভেতর মাংস পেশী আর তার তলায় হাড় ফাটিয়ে, তবেই না ফুসফুস চোট খেলো। তাই বাঘ ছেলে না মেয়ে এটা খেয়াল থাকার কথা নয় তার । গাড়ির করা আওয়াজ আর হর্নে বাঘ সাময়িক পালালে, সেও শুধু বাঁচার চেষ্টায় পালাতে থাকে ।উঠে পড়ে ছুট লাগায় সে, হঠাৎ এসে যাওয়া জিপসিতে উঠে পড়ে। বাঘের থাবা জিপসির পেছনের বনেটে একবার লাগবার পর মোহিত, মানে যে গাইড কাম ড্রাইভার ওটা চালাচ্ছিল, সে গাড়িটাকে টপ গিয়ারে তুলে দিল। তাতে বেশ আওয়াজ করে জিপসি এগোতে থাকে। তবু বাঘটা আরো দুবার ধরার চেষ্টা করলেও জিপসি চলতে থাকে আর বাঘের নাগাল ছাড়ায়। পড়ে থাকা মোটর বাইকটা নিয়ে ববিচাঁদ ভাবার সময় পায়নি। তার কথা সে বলছেও না যেমন আসরাফুল বলেছে প্ল্যাটিনার কথা। যেহেতু মেন গেটটার নাম ধনগড়ি আর সেখানে এক দেওয়ালে জঙ্গলের ছবির একেবারে ভেতর থেকে জিম করবেটকে তাকিয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে; বাঘটা আবার সর্ফদুলির দিকে রওনা দেয় । করবেট তখনও তাকিয়ে আছেন আর সবাই জানে যে তাঁর বোনের নাম ছিল ম্যাগি। এই ম্যাগি বিকেলে বেরানোর সময় একবার বাঘের মুখোমুখি পড়েছিলেন- এটাও সবার জানার কথা, মনে হয় আদমখোরও সে কথা বুঝতে পেরে আর দাঁড়ায়নি।আসলে করবেটের মুখোমুখি হওয়া তো চাড্ডিখানি ব্যাপার নয়। বিশেষ করে যখন মোহিত ভাইয়ের জিপসি ক্রমশ ধনগড়ি গেটের দিকেই এগিয়েছিল , করবেটের দিকে। জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে করবেট তাকিয়ে রয়েছেন এটা কোনো বাঘের পক্ষে অনেক নয় কি ? বিশেষ করে সে যদি হয়ে গিয়ে থাকে আদমখোর , মোহনের মানুষখেকো , আবার যে বেরিয়েছে। তাই বাঘ উল্টো দিকে ,সর্ফদুলির দিকে চলে যায়। বুকে একটা মাত্র ঘা মারা ছাড়া ববিচাঁদকেও বিশেষ কিছু করে উঠতে পারেনি বাঘ। বাকিটা করেছে দিল্লীর অ্যাপোলো হাসপাতাল। ববিচাঁদ সে সব জানে।