এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  উপন্যাস  শনিবারবেলা

  • সীমানা - ৩৭

    শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
    ধারাবাহিক | উপন্যাস | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১২৭১ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • ছবি: সুনন্দ পাত্র


    ৩৭

    শান্তি সড়ক?



    তাহলে দেখুন, আমি আমার কথা রাখলুম না, আপনারও অনেক লোকসান হয়ে গেল।

    ফেরবার টয়-ট্রেন দার্জিলিং থেকে ছেড়েছে সকালে। সেই গাড়ি ছাড়বার কিছুক্ষণ পরেই কাজি এই কথা বলে মনোরঞ্জনকে।

    মনোরঞ্জন বলে, আপনি কথা রাখলেন না এ-কথা ঠিকই, তবে একেবারে ঠিক করে বলতে গেলে বলতে হয় রাখলেন না নয়, রাখতে পারলেন না। তারপর আবার বলে, আমার কিন্তু মনে হয় না তাতে আমার কোন লোকসান হয়েছে। হজরত মোহম্মদের জীবনীকাব্য আপনি ঠিকই লিখে ফেলবেন। শুরু যখন হয়েছে শেষও হবে। বরঞ্চ, সত্যি কথা বলতে, আখেরে আমার লাভই হল। এক মাস আপনার মতো মানুষের সঙ্গে পাশাপাশি শয্যায় নিদ্রাযাপন, তিরিশটা দিনের প্রায় – প্রায়-ই বলছি – প্রতিদিনই চব্বিশ ঘন্টা দিবানিশি আপনারই সঙ্গে। কত গভীর ভাবে চিনলাম আপনাকে! ফলত, আমার তো একটা ভালো ক্যাপিটাল তৈরি হয়ে গেল।

    ক্যাপিটাল? মানে? – বিস্মিত কাজি জিজ্ঞেস করে।

    ক্যাপিটাল মানে মূলধন, যেটার ওপর ভিত্তি করে একটা নতুন উদ্যোগ, ধরুন ব্যবসা-ই, গড়ে ওঠে। ভাবছি ফিরে গিয়ে একটা বই লিখব: কাজি নজরুলের সঙ্গে এক মাস। যা বিক্কিরি হবে, লোকসানের প্রশ্নই নেই, বড়লোক হয়ে যাব আমি। কলকাতার হার্টথ্রব কাজিদা এক্সপোজ্‌ড্‌!

    কলকাতার হার্টথ্রব? – কাজি বিস্ময় প্রকাশ করে আর একবার, এটা তো নতুন খবর। আমি তো জানতুম কলকাতায় আমি শত্রুপরিবৃত, একদিকে শনিবারের চিঠি-প্রবাসী অর্থাৎ সজনীকান্ত-মোহিতলাল-অশোক আর অন্যদিকে মউ-লোভী মৌলবীদের সঙ্গে আবার মোহাম্মদীর ইন্টেলেকচুয়ালরা – আর আপনি বলছেন কলকাতার হার্টথ্রব কাজি!

    আরে, গোলাপের সঙ্গে দুয়েকটা কাঁটা থাকবে না? জেনে রাখবেন, এমনকি রবীন্দ্রনাথও সম্পূর্ণ কন্টকমুক্ত ন'ন। সে ছাড়ুন, বলতে থাকে মনোরঞ্জন, আমি দেখলাম কলকাতায় শুধু নয়, নজরুল ইসলাম যেখানে যায় সেখানেই বহু হৃদয়ে কাঁপন লাগিয়ে আসে। এমনকি দার্জিলিঙেও।

    হৃদয়ের কাঁপন? আমি তো বুঝলুম না। শুধু গান-বাজনা হৈ-হুল্লোড় করেই তো দিন কেটে গেল।

    জাহানারা মেমসাহেব যেদিন আপনারই অনুরোধে বাকি দু' বাড়ির সবাইকেও – মানে আপনার যত বন্ধুবান্ধব-পরিচিত এখন দার্জিলিঙে তাদের সব্বাইকে – নেমন্তন্ন করলেন, মন্মথবাবু থেকে শুরু করে নীহারবালা আর নাটকের দলের ছেলেদেরও, সেদিন তো শেষ অবধি যাননি আপনি নিজেই, আমি একাই তো গেলাম; আপনি বললেন আপনার নাকি গা ম্যাজম্যাজ করছে, সেদিন কী হয়েছে আপনি শুনেছেন নাকি? মেমসাহেব যেমন আপনার সামনেই আমাকে চমকিয়ে দিয়েছিলেন ওঁর অটোগ্রাফ খাতায় আমাকে সই করতে বলে, ঠিক ওই ভাবেই ওদেরও চমকিয়ে দিলেন অটোগ্রাফ খাতাখানা বাড়িয়ে দিয়ে। এমনকি সদ্য হাফপ্যান্ট-ছাড়া বাচ্চা ছেলেটাকেও ছাড়লেন না; বললেন, পরে যখন তোমার খুব নামডাক হবে, আমি তখন গর্বের সঙ্গে আমার অটোগ্রাফ-খাতাখানা খুলে সবাইকে বলতে পারব, এই প্রতিভাকে আমি যে অনেক আগেই শনাক্ত করেছিলাম, এই খাতাখানাই তার প্রমাণ!

    তা সে-কথা যাক, বলতে থাকে মনোরঞ্জন, যে-কথা আমি বলতে শুরু করেছিলাম সেটাই বলি। আপনার সব বন্ধুরা আমাকে সেদিন আলাদা আলাদা করে জিজ্ঞেস করছিল, কাজিসাহেব কি ওই জাহানারা মেমসাহেবের কাছে রোজই আসেন?

    হঠাৎ এমন কথা জিজ্ঞেস করল? কেন? – শুধোয় কাজি।

    আরে, কী বলব বলুন। লোকের অহেতুক কৌতূহল। ওরা ওই অটোগ্রাফ খাতার ন'-দশখানা পাতা জুড়ে প্রতিটি পাতায় আপনার এক-একটা করে গান আর কবিতা আপনার নিজের হাতের লেখায় দেখতে পেয়েছে। একজন তো প্রথম গানটা – যেটা আপনি প্রথম দিন আমার সামনেই লিখে দিয়েছিলেন – সেটা দুবার পড়ল! একটা লাইন ছিল না, এলে কি বর্ষারানী নিরশ্রু মোর নয়ন-লোকে? ওটাকে দ্বিতীয়বার সে পড়ল, এলে কি বর্ষবাণী নিরশ্রু মোর নয়ন-লোকে! ভাবুন! আবারও রিপিট করল বর্ষবাণী, তারপর আবার বর্ষবাণী বেশ জোর দিয়ে, তারপর সমবেত মন্তব্য, হুঁ, প্রত্যেকটারই নীচে তারিখসহ একেবারে কাজির সই। এবার কী বলবেন? নজরুল সাহেব কার হার্টথ্রব আর কেই-বা নজরুল সাহেবের, তাই নিয়ে এখন গভীর গবেষণা!

    আচ্ছা, নজরুল বলে, এরা সবাই অন্যের ব্যাপারে এত উৎসাহী কেন বলতে পারেন? কে কোথায় ক'বার যায় তার এত খোঁজ কেন?

    এ তো একেবারেই মনুষ্যচরিত্র কাজিসাহেব। এই-যে আপনারা গল্প-উপন্যাস লেখেন, মানুষ এত উৎসাহ নিয়ে কেন এ সব পড়ে বলতে পারেন? কৌতূহল। চিনিনা জানিনা একটা কল্পিত মানুষের নানা চলন বলন, ওঠা-পড়া, সুখ-দুঃখ আমাদের এত নাড়া দেয় কেন? ব্যাপারটা আসলে ওই কৌতূহল, দেখি তো লেখক কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন মানুষটাকে। আর কল্পিত মানুষকে নিয়েই যদি এত কৌতূহল তৈরি হয়, তাহলে ভাবুন তো চেনা-পরিচিত মানুষকে নিয়ে কতটা হতে পারে। আর, তার ওপর সেই মানুষটা যদি কাজি নজরুল ইসলামের মতো বিখ্যাত কবি হয়? গাইয়ে এবং সঙ্গীতস্রষ্টা হয়? এবং শুধু তা-ই তো নয়, লোকটা তো দশটা-পাঁচটার বাঙালি নয়, রীতিমতো বিতর্কিত চরিত্র – রবীন্দ্রনাথের মতো বিশ্ববিশ্রুত মানুষও যার সঙ্গে কথা বলতে উৎসাহী, যার গান শুনতে ভালোবাসেন, তার ব্যাপারে সাধারণ লোকের কৌতূহল থাকবে না?

    হুঁ, কাজি বলে, বুঝতে পারছি। আর সেই জন্যেই আমি গুরুদেব রবীন্দ্রনাথের সমকক্ষ তো নয়ই, এমনকি কাছাকাছি স্তরের মানুষও কোনদিন হতে পারব না। এই ঘটনাটাই দেখুন না। আমার কী প্রয়োজন ছিল সবাইকে নেমন্তন্ন করবার জন্যে জাহানারাকে অনুরোধ করার? আর, করলামই যদি, তাহলে নিজে সেদিন অনুপস্থিত থাকলাম কেন? আমি উপস্থিত থাকলে, যে-সব কৌতূহলের কথা আপনি বললেন, সেগুলো মনে মনে যদি কারো থাকতোও, প্রকাশ্যে
    এ-নিয়ে আলোচনা তো হতে পারত না।

    মনোরঞ্জন এবার একটু অস্বস্তিতে পড়ে। সে বোঝে, এই প্রসঙ্গ থেকে সরে আসাই এখন বুদ্ধিমানের কাজ হবে। কাজি আসলে একজন ছটফটে চরিত্রের মানুষ। তার ক্রিয়াকর্ম সাধারণত তাৎক্ষণিক চিন্তাপ্রণোদিত। সব সময় ভাবনা-চিন্তা করে কাজ করার লোকই সে নয়, আর যেটুকু ভাবনা-চিন্তা সে করে তার ফল যে সব সময় তার নিজেরই পক্ষে অনুকূল হয় এমনটাও নয়। দার্জিলিঙে এসে অবধি সে প্রায় প্রতিটি সকালে একা-একা হাঁটতে বেরিয়েছে। একেবারে প্রথম দিন বেরোবার আগে মনোরঞ্জনকে সে সঙ্গে নিতে চেয়েছিল, কিন্তু মনোরঞ্জন তখনও ছিল ঘুমের আমেজে, সে যেতে চায়নি। তারপর থেকে আর মনোরঞ্জনকে ডাকেইনি সে; একাই বেরিয়ে যেত, দু-তিন ঘন্টা পর ফিরে এসে জলখাবার খেত। ইদানিং সে দু-তিন ঘন্টায় ফিরছিল না মাঝে মাঝেই, সকালবেলা ছ'টায় বেরোলে ফিরতে ফিরতে দুপুরের খাওয়ার সময়ও হয়ে যেত অনেকদিন। কোথায় গিয়েছিল কেন এত দেরি – এসব প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যেত। এখন মনোরঞ্জন বুঝতে পারে সেই দিনগুলোয় ও যেত জাহানারার বাড়ি, তা না হলে ওই অটোগ্রাফ খাতার পাতায় পাতায় অতগুলো গান আর কবিতা এল কোথা থেকে?

    কিন্তু আশ্চর্য ঘটনা ঘটল গতকাল। কাজি যথারীতি সকাল ছ'টা-সাড়ে ছ'টায় বেরিয়ে গেছে। সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ অভিজাত চেহারার এক প্রৌঢ় ভদ্রলোক, সঙ্গে মেমসাহেবি পোশাকে উনিশ-কুড়ি বছরের সুশ্রী একটি মেয়ে, কাজির খোঁজ করতে এলেন। কাজি নেই শুনে অবাক হলেন ওঁরা। ভদ্রলোক বললেন, গত পরশু দিনও, যে বাংলোতে ওঁরা আছেন, সকালে সে সেখানে গেছে। মেয়েটির সঙ্গে পিয়ানো বাজিয়েছে। ভদ্রলোকের সঙ্গে দাবাও খেলেছে এক হাত। বলে এসেছে, এবারের মতো এই শেষ দেখা। পরের দিন, মানে কলকাতায় ফেরার আগের দিন, তার অনেক বাঁধাছাদার কাজ থাকবে, তাই সে আর আসতে পারবে না। ভদ্রলোক আর তাঁর মেয়ে – নাম বললেন নোটন – তাই নিজেরাই এলেন তাকে বিদায় দিতে। ভদ্রলোক সঙ্গে এনেছেন এক বাক্স দাবার ঘুঁটি, নজরুলের জন্যে ছোট্ট একটা উপহার হিসেবে। ওঁরা অপেক্ষাও করলেন কিছুক্ষণ, চা-ও খেলেন; যদি নজরুল এসে পড়ে এই আশায়। জানা গেল, নজরুলের সঙ্গে ওঁদের বছর তিনেকের আলাপ, ঢাকায় থাকেন ওঁরা। ভদ্রলোক, সুরেন্দ্রনাথ মৈত্র নাম, ওখানকার একটা কলেজের নাকি প্রিন্সিপাল। নোটন ঢাকা য়্যুনিভার্সিটির ছাত্রী। সাধারণত সে সেতার বাজায়; দার্জিলিঙে পিয়ানো অভ্যেস করছিল, কাজিসাহেবও যোগ দিয়েছিলেন ওর সঙ্গে। বাবার সঙ্গেও দাবা খেলতেন মাঝে-মাঝেই।

    নেহাতই কৌতূহলে মনোরঞ্জন জিজ্ঞেস করল, আমাদের এই বাংলো আপনারা চিনলেন কীভাবে?

    কাছেই থাকি তো আমরা, ও ঠিক চিনে নিয়েছি।

    এই রহস্যটার সমাধান খুঁজে পায় না মনোরঞ্জন। রবীন্দ্রনাথ দার্জিলিঙে এসেছেন, কোথায় উঠেছেন সে খবর ঠিক পেয়ে যায় জাহানারা। এমনকি কাজি নজরুল কোথায় উঠেছে সে খবরও জাহানারা পেয়েই যায়, পেয়েই ভাইকে পাঠিয়ে দেয় তাকে ধরে নিয়ে যাবার জন্যে। সুরেন্দ্রনাথ-নোটনও ঠিকই চিনে নিতে পারে নজরুলের দার্জিলিঙের বাসস্থান! অথচ একসঙ্গে একই ঘরে কাজির সঙ্গে থেকেও মনোরঞ্জন বুঝতে পারে না কবে কখন কাজি জাহানারার সঙ্গে কাটিয়ে আসে, কখনই বা নোটনের সঙ্গে পিয়ানো অভ্যেস করে!

    এই কথাটাই একদিন বলছিলেন নলিনীদা, নলিনীকান্ত সরকার। বলছিলেন কাজির সামনেই। কাজি এমন একজন মানুষ যে প্রতিটি মুহূর্তের জন্যে বাঁচে। ওই মুহূর্তের ঠিক পরেই কী হবে সে বিষয়ে কোন চিন্তাই নেই তার। যেমন ধরুন ওর প্রথম বইয়ের কপিরাইট বিক্রির ঘটনা। ঠিক সেই সময়টায় মুজফ্‌ফর আহ্‌মদ ওর ফ্রেণ্ড-ফিলজফার-গাইড। মুজফ্‌ফরের সম্বন্ধে ও লোকের কাছে বলতো, ঠিক যেন বড়দা। তাকেও, সেই মুজফ্‌ফরকেও, কাজি জানায়নি; মাত্র একশো টাকায় বেচে দিল নিজের প্রথম বই ব্যথার দান। জানতে পেরে স্বতঃপ্রবৃত্ত মুজফ্‌ফর ধমকেওছিল ওকে। তবুও, ঠিক সেই সময়টাতেই, আরও কয়েকখানা বইয়েরও কপিরাইট বেচল সে জলের দামে! আর, এই অভ্যেসের থেকে এখনো মুক্তি পায়নি কাজি। টাকাপয়সার আশু প্রয়োজনে কাজি নজরুলের আজও সবচেয়ে প্রিয় সমাধান কপিরাইট। বেচে দাও বইয়ের কপিরাইট যে দাম পাচ্ছ তাতেই! এবং, এটা করবার আগে কখনও কোন বন্ধুর সঙ্গে সে আলোচনাও করবে না। সবটাই হবে ক্রেতা এবং বিক্রেতা, এই দুজনের মধ্যে। আর কেউ জানবেও না। বন্ধুদের মধ্যে কাজি এমন মানুষ যে সবায়েরই প্রিয়। অথচ এমন একজনও নেই ওর বন্ধুদের মধ্যে যাকে ও ওর জীবনের সব কথা বলেছে। সবায়ের কাছেই গোপন করে গেছে কিছু-না-কিছু কথা! নলিনীদার ভাষায়, কোন-না-কোন অপকম্মের কাহিনী!

    নোটন-সুরেন্দ্রনাথের সেদিন ওদের বাংলোয় আসার কথাটা ও কাজির কাছে চেপেই যাবে, ঠিক করল মনোরঞ্জন। দাবার ঘুঁটিগুলোও সে নিজের স্যুটকেসেই গুছিয়ে রাখল নিজের জিনিসপত্রের সঙ্গে, সময় এবং অবস্থা বুঝে পরে একদিন কাজিকে দিয়ে দেওয়া যাবে বাক্সটা।

    শেয়ালদায় নেমে যে ট্যাক্সিটা নেওয়া হল সেটা প্রথমে গেল কাজির বাড়ি, সেখানে কাজিকে নামিয়ে নিজের বাড়িতে চলে গেল মনোরঞ্জন; দুলিকে বলে গেল, আজ যাচ্ছি বৌদি, কাল বিকেলে এসে চা খেয়ে যাব। কাজি বলল, ঠিক বিকেলেই আসবেন কাল মনোরঞ্জনদা, আমি আজ গ্রামোফোনে গিয়ে জমে-থাকা কাজকর্মগুলো সারবো, কাল কিন্তু ফিরে আসব তাড়াতাড়ি।

    একেবারে সাহেবি কায়দায় ট্রেতে টি-পট, টি-কোজি দিয়ে ঢাকা দেওয়া। মানানসই কাপে পরের দিন বিকেলে
    প্রায়-সোনালী দার্জিলিং চা ঢেলে দেয় দুলি। মনোরঞ্জন বলে, আমিও তো কাজিসাহেবের সঙ্গে একই দোকান থেকে একই চা, এমনকি কাজিসাহেবের কথায় ওইরকম টি-পটের একটা ঢাকাও কিনে এনেছি। আমার বাড়িতে এ-ভাবে চা তৈরি করতে জানেই না কেউ। সেই সাবেকি পন্থায় চা দুধ জল চিনি সব এক সঙ্গে ঢেলে ফুটিয়ে যে চা তৈরি হল আমার বাড়িতে, আমি তো তাতে রোজ যে চা খাই তার সঙ্গে কোন তফাৎই বুঝতে পারলাম না। আপনাদের কুমিল্লার বাড়িতে এই ভাবে চা তৈরি হত নাকি বৌদি?

    কোথা থেকে হবে, বলে দুলি, টি-কোজি – এই নামই তো প্রথম শুনলাম কাল। শুধু কালই তিনবার চা করিয়েছে আমাকে দিয়ে, নিজের হাতে শেখাল। মা তো দেখেশুনে পাশের ঘরে গিয়ে হাসিতে লুটোপুটি একেবারে, চা খাওয়ারও এত কায়দা-কানুন!

    হুঁ হুঁ বাবা, সাহেবদের তৈরি পল্টনের কোয়ার্টার-মাস্টার হাবিলদার!– বলে মনোরঞ্জন, হলই বা সে পল্টন বাঙালি-পল্টন! তাহলে শুনুন বৌদি, আমি একদিন গ্রামোফোনে নলিনীদার সঙ্গে গিয়েছিলাম, ওই একদিনই গিয়েছি, ভয়ে পালিয়ে এসেছি, আর যাব না কোনদিন!

    কেন, আপনাকে দিয়ে জোর করে গান গাওয়াল বুঝি?

    আরে, সেটা হলেও তো মেনে নেওয়া যায়। গানের জায়গায় গেলেই গান গাইতে হবে, তার একটা যুক্তি আছে। ভালো গাইতে পারলাম না, রিজেক্ট করে দিল, বুঝতে পারি সেটাও। কিন্তু যা আমি দেখলাম আপনি ভাবতেও পারবেন না। আচ্ছা বলুন তো, ওই গ্রামোফোনের অফিসে, মানে ওদের ওই রিহার্স্যাল রূমে, কাজিসাহেবকে সবাই ডাকে কী নামে?

    কী নামে ডাকবে আবার? – বলে দুলি – কেউ কাজি বলবে অথবা কেউ নজরুল। কেউ হয়তো বলবে কাজিসাহেব বা নজরুলসাহেব বা কাজিদা। এরকমই কিছু একটা হবে।

    পারলেন না তো, বলে মনোরঞ্জন। ওখানে, ওই অফিসের মধ্যে, সবাই কাজিসাহেবকে ডাকে চীফ বলে, চীফ! যে হয়তো বাইরে বেরিয়ে এসেই কাজিদা বলে ডেকে দুটো ইয়ার্কিও মারবে, ওই গ্রামোফোনের অফিসে তার কাছেও কিন্তু কাজি নজরুল ইসলাম অন্য কিছু নয়; চীফ, শুধুই চীফ! অফিস মানে সব কিছু অফিশিয়াল। তাতে একটা লাভ হয় কিন্তু। এই আমাদের মতো ফালতু লোকরা অফিসটাকে একটা আড্ডাখানা বানিয়ে নেবে তা চলবে না। কাজের জায়গায় শুধুই কাজ! সেখানে শুধুই চীফ-সাবর্ডিনেটের সম্পর্ক! এমনি-এমনি কি আর কাজি নজরুলকে শিবরাম ডাকে Kazi Knows rule – বহরমপুরের জেলে ও কাজিদার সঙ্গে একসঙ্গেই ছিল কিনা!

    এই সব নানারকমের গল্পের পর দুলি জিজ্ঞেস করে, আপনার কাজটা হল? হল কবিতা লেখা?

    একটু অস্বস্তিতে পড়ে মনোরঞ্জন। বলল, শেষ অবধি হল না, যদিও কাজিসাহেব চেষ্টা করেছিলেন। এক দিন তো সকাল থেকেই খাতা-কাগজ নিয়ে বসলেন। চা-জলখাবার খেতেও উঠলেন না, সবই ওই একই জায়গায় বসে। দুপুরের খাবার খেতে বসলেন ঠিকই, কিন্তু একটাও কথা নয়। চুপচাপ তাড়াতাড়ি খেয়ে নিয়ে আবার লেখার টেবিলে। বিকেলের চায়ের সময় খাতাটা দেখলাম আমি। সকাল থেকে কাজ করছেন, ভাবলাম নিশ্চয়ই লিখেছেন অনেকটা। ও হরি, খাতায় দেখি কয়েকটা লাইন লিখেছেন, কেটে দিয়েছেন তার পর। পাতার মার্জিনে নানা কাটাকুটির চিহ্ন, ছোট ছোট নানারকমের ছবি এঁকেছেন, সই মক্‌শ করেছেন অনেক রকমের, বোঝাই যাচ্ছে নিজের চিন্তাভাবনাকে বাগে আনতে পারছেন না। আমাকে কথা দিয়েছিলেন দার্জিলিঙে লেখাটা শেষ করবেন, আমি বুঝতে পারলাম কথা রাখতে পারছেন না বলে নিজের কাছে নিজেই ছোট হয়ে যাচ্ছেন। আমিই বললাম, ছেড়ে দিন। জোর করে কবিতা লেখা যায় না। যেদিন নিজে থেকেই হবে সেদিনই হবে। এ নিয়ে অনর্থক চিন্তা করবেন না আপনি, আমারই খারাপ লাগছে আপনাকে চাপ দিচ্ছি বলে।

    মনোরঞ্জন লক্ষ্য করেছে, সেই যে চা নিয়ে বসেছে ওরা, নজরুলও আছে সেখানে, প্রথম থেকেই বসে আছে, কিন্তু একটা কথাও তখন অবধি বলেনি সে। এতক্ষণ বেশ হাসিখুশি দেখতে লাগছিল দুলিকে, কিন্তু কবিতা লেখার ব্যাপারটা নিয়ে কথা চলতে চলতেই দুলির মুখে স্পষ্টতই বিষাদের ছায়া।

    দুলি বলল, দার্জিলিং যাবার আগে, মনে আছে আপনার, আপনি আমাদের সকলকে বলেছিলেন একসঙ্গে যেতে? বেশ কিছুদিন হল, প্রায় বছর দুয়েক হবে, আপনাদের কাজিসাহেব কবিতা লিখতে পারছেন না। অনেক চেষ্টা করে কয়েকটা লাইন লিখে ফেললেও, নিজেরই পছন্দ হয় না, কুটি কুটি করে ছিঁড়ে ফেলেন কাগজখানা। অথচ গান লিখে ফেলেন চটপট, আমার সামনেই তিন-চারখানা গান পরপর লিখতে দেখেছি। আমি ভাবলাম, আমাদের থেকে একটু দূরে কোন ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সঙ্গে কয়েকদিন কাটালে লিখতে পারবেন হয়তো, তাই দার্জিলিঙে নিজেরা গেলাম না, কিন্তু দেখা গেল তাতেও কোন লাভ হয়নি।

    কোন কথা বলেনি নজরুল অনেকক্ষণ, এবার হঠাৎ বলল, আরেকবার চা খাবেন মনোরঞ্জনদা? বলে, কোন উত্তরের অপেক্ষা না-করেই টি-পট কাপ-ডিশ সব ট্রেতে সাজিয়ে-গুছিয়ে নিয়ে চলে গেল বাড়ির ভেতরে। নিজেকে নিয়ে
    এই-ধরনের আলোচনায় ও যে স্বস্তিবোধ করছে না স্পষ্টতই তার ইঙ্গিত।

    দুলি বলে, বুলবুলের যেদিন গুটি-বসন্ত ধরা পড়ে, সেদিন সন্ধ্যেবেলা গ্রামোফোনের থেকে ফিরেই একখানা নতুন খাতা আর হাফিজের একটা বই ছিল সেখানা নিয়ে বুলবুলের শিয়রের পাশে বসল ও। বলল, অনেকদিন কবিতা লিখিনি। আজ থেকে হাফিজের রুবাইয়াৎ বাংলায় লিখব। কে জানে হয়তো এ ভাবেই কবিতা লেখাটা ফিরে আসবে হাতে। সারা রাত ধরে ওই বুলবুলের শিয়রে বসে-বসেই কাজ করল। আপনি জানেন কিনা জানিনা, তার আগে পর্যন্ত প্রতি রাতে, অনেক রাত পর্যন্ত আমরা জেগে থেকে তাস খেলতাম, ও আমি মা আর শান্তি। শান্তি মানে আমাদের খুকু। সেইদিন সন্ধ্যে থেকেই কিন্তু তাস খেলা বন্ধ। রাতে যতক্ষণ জেগে থাকে, বুলবুলের শিয়রে বসে হাফিজ লেখা চলে। ওর একটা অদ্ভুত বিশ্বাস হয়েছিল – জানেন মনোরঞ্জনদা? – বলেছিল আমাকে। বলেছিল, একটু-একটু করে কবিতা বোধ হয় ফিরে আসছে। যেদিন আমার এই অসুখটা সারবে – কবিতা না-লিখতে পারার অসুখ – দেখো, সেদিনই বুলবুল সেরে উঠবে। আমার অসুখটা সারাবার জন্যেই এই অসুখটা নিল ও! বেচারা কী কষ্টটাই না পাচ্ছে!

    এদিকে বুলবুলের অবস্থা কিন্তু রোজই খারাপ হচ্ছে। ডাক্তারবাবু তো একরকমের জবাবই দিয়েছেন। অন্য ওষুধপত্র, কবরেজি-হেকিমি, মন্ত্র-পড়া জল, সবই চলছে। তারই মধ্যে ও ওর বিশ্বাসে অটল। রোজ সন্ধ্যেবেলা বলে, এত কষ্ট পাচ্ছে বেচারা, চোখে দেখা যায় না। আমাকে চালিয়ে যেতেই হবে, যেদিন ঠিকঠাক একটা অরিজিনাল লাইন লিখতে পারব সেদিনই সেরে উঠবে ও।

    শেষের দিকে চোখের মধ্যেও গুটি বেরিয়েছিল বুলবুলের, বলতে থাকে দুলি। কাঁদতো, আর বলতো, বাবা তুমি কোথায়? আমি তোমাকে দেখতে পাচ্ছিনা কেন?

    বাবা হাত ধরতো ছেলের, বলতো এই তো বুলবুল, আমার সোনা বুলবুল, আমার সাহসী সোনা আমার বীর সোনা – সোনা বুলবুল, তোমার জন্যে কবিতা লিখছি, যেই লেখা শেষ হবে তক্ষুনি তুমি ভালো হয়ে যাবে। তারপর আমরা সবাই মিলে গাড়ি চড়ে বেড়াতে যাব। ছেলে বলতো, না, শুধু তুমি আর আমি আর পিংলা কাকু আর জেঠামশাই।

    মনোরঞ্জন জিজ্ঞেস করে, জেঠামশাই কে?

    জানেন না আপনি? – বলে দুলি,– মুজফ্‌ফর আহ্‌মদ, ভারী ভালোবাসতেন ওকে। জেল থেকেও খোঁজ-খবর নিতেন, হালীমদা বলেছেন আমাকে। ও-ও ভালোবাসতো খুব। যখন আসতেন আমাদের বাড়ি, যাবার সময় দরজা পর্যন্ত যেত বুলবুল, বলতো, জেঠামশাই, আবার এসো। উনিও কোলে তুলে নিয়ে বলতেন, আসবই তো, আসতে তো হবেই।

    তার পরেই ঝরঝর করে কেঁদে ফেলে দুলি, বলে, কবিতাটা আর লেখা আর হল না। হাফিজ-অনুবাদ শেষ হল যেদিন সেদিনই চলে গেল বুলবুল!

    নলিনীদাই একদিন কথাটা পাড়লেন কাজির কাছে। শুনলুম, হজরত মোহম্মদের জীবন নিয়ে যে কবিতাগুলো লিখবি ভেবে দার্জিলিং অবধি গেলি, তার একটাও নাকি লেখা হয়নি।

    তোকে কে বলল নলিনীদা? মনোরঞ্জন?

    মনোরঞ্জনই বলেছে, নলিনীদা বলে, তবে নালিশ করে নয়। ওর বাবার সূত্রে ও তোদের – মুজফ্‌ফর আর তোর – এত ঘনিষ্ঠ বন্ধু, তোকে নিয়ে ওর দুশ্চিন্তার কারণ আছে। প্রমীলা নাকি ওকে বলেছে বুলবুলের শোকেই তোর কবিতা লেখা আসছে না। ঠিক হোক ভুল হোক, এটার একটা সুরাহা হওয়া দরকার।

    কী সুরাহা তুই করতে পারিস নলিনীদা?

    কী সুরাহা আমি করতে পারি তা কি ছাই আমিই জানি, বলে নলিনী, তবে এটা বুঝি যে কবিতা লিখতে না-পারলে তোর বেঁচে থাকবার ফিফ্‌টি পার সেন্ট রসদই থাকল না। দেখ, বাইরে থেকে দেখলে যে-কেউ বলবে তুই এখন ভালোই আছিস, গ্রামোফোন কম্পানীর মাইনে আর কপিরাইট একটা স্টেডি ইনকাম দিচ্ছে তোকে। অন্যান্য লেখা থেকেও অর্থাগম মন্দ হচ্ছে না। গাড়ি কিনেছিস, নানা দিক থেকে খবর পাই ওই ছোট গাড়িটার বদলে একটা বড় গাড়ি নাকি কিনবি এবার। সভা-সমিতিতে লোকে ডাকছে, এই বাংলার প্রতিটি কোনার মানুষ তোকে সম্বর্ধনা দিতে পারলে নিজেরাই ধন্য। অথচ ভেবে দেখ, এত-যে মান-সম্মান তোর, সেটার আসল কারণ কী? তুই একজন কবি। বাংলার বিদ্রোহী কবি। যা-ই করিস না কেন, কবিতা না-লিখলে তুই কিন্তু কিছুই না। সেই কবিতা তুই চেষ্টা করেও লিখতে পারছিস না এ কি ভাবা যায়?

    সত্যিই ভাবা যায় না, তার সঙ্গে আবার অন্য অস্বস্তিও। অনেক টাকাপয়সা খরচ করল মনোরঞ্জন এই দার্জিলিঙে এক মাস কাটাতে গিয়ে। অথচ হজরতজীবনী নিয়ে কোন কাব্যই লিখতে পারল না ও। মনোরঞ্জন খুবই ভালোবাসে কাজিকে, হয়তো কিছু বলবেও না। কিন্তু কাজির একটা অস্বস্তি আছে। শেষকালে অনেক ভেবে তিরিশ খানা গানের স্বরলিপি ওর গীতশিল্পী বন্ধু উমাপদ ভট্টাচার্যকে দিয়ে লিখিয়ে নজরুল-স্বরলিপি নামে মনোরঞ্জনের প্রকাশনা থেকে ছাপার ব্যবস্থা হল। নিজের নাম স্বরলিপির লেখক হিসেবে ছাপানোয় উমাপদর আপত্তি, স্বরলিপিগুলো শুধু লিখেইছে ও, কিন্তু সুর তো নজরুলেরই করা, কেমন করে ওর নামে ছাপা হতে পারে বইটা? শেষে রফা হল বইটা উৎসর্গ করা হবে উমাপদকে।

    কয়েকদিন পর আবার এল নলিনী, লালগোলা যাবি?

    লালগোলা? কেন?

    কেন কী রে? ডাক পড়েছে তো তোর।

    ডাক পড়েছে? কোথা থেকে? কী যে বলছিস নলিনীদা, বুঝছি না কিছুই – প্রায় হতবাক কাজি।

    তোর বোধ তৈরি হয়নি, হয়নি আমারও, তাই তুই বুঝিসনি, আমিও বুঝতে পারিনি, নলিনী বলে। নিমতিতায় আলাপ হয়েছিল যোগীশ্রেষ্ঠ বরদাচরণ মজুমদারের সঙ্গে, তোর মনে আছে?

    মনে আছে? – কাজি বলে, ও মানুষকে কি ভোলা যায়? প্রথম যখন দেখেছি, তখনই মনে হয়েছে উনি আমার কতদিনের চেনা; কখনও দেখিনি ওঁকে আগে, তবুও প্রথম দর্শনেই মনে হল এতদিন যতটা পথ হেঁটেছি তা ওঁর হাত ধরেই। বলতে পারিনি কারোকে, পাছে লোকে পাগল-টাগল মনে করে।

    তবে শোন, উনিও মনে রেখেছেন তোকে। তোকে ডেকেছেন, শুধু বলেছেন আমি যেন সঙ্গে না যাই। আর শুধু আমি নই, একটু-আধটু যোগাভ্যাস আমাদের মধ্যে যারা করে তাদের সবায়েরই যাওয়া বারণ।

    ততদিনে ছোট পীজো গাড়িটার জায়গায় কাজির বড় ক্রাইসলার এসে গেছে। সেই ক্রাইসলারে – নিমতিতা নয় – লালগোলা চললো কাজি, সঙ্গে ডি-এম লাইব্রেরির গোপালদাস আর তার বন্ধু পূর্ণিয়ার ডাক্তার অমরেন্দ্র।

    সব ধর্মেরই ধর্মীয় গোঁড়ামি কাজির অপছন্দ, সমাজের নানা রকমের মনুষ্যকৃত ভেদাভেদের সে বিরোধী, সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে অক্ষম বা দুর্বলের উপর দমননীতির বিবর্তিত কায়দা-কানুনগুলো ধ্বংসের জন্যে লড়াই করতে সে সদাপ্রস্তুত; মানুষের প্রতি ভালোবাসা তার সীমাহীন, এবং তাই সে স্বাধীনতার লড়াইয়ে সৈনিক হয়েছে, অথচ নির্দিষ্ট কোন আদর্শের পথে অবিচলিত পথিক কোনদিনই হতে পারেনি। গান্ধীর মতাদর্শ অনুসরণ করে সে লড়াই করেছে যেমন, বাঘা যতীনের পথ বা বলশেভিকদের পথও তাকে অনুপ্রাণিত করেছে। সাম্যের গান গাইতে গাইতে যখন সে শ্রমিক-কৃষকের লড়াইয়ে অংশ নিচ্ছে, শ্রমিক-শ্রেণীর আন্তর্জাতিক সঙ্গীতের বাংলা-অনুবাদ করছে, ঠিক তখনই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভায় মুসলমানদের জন্যে সংরক্ষিত আসনে কংগ্রেস-প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেও তার অসুবিধে হয়নি। সাম্যবাদীর যে-নজরুল লিখেছে


            তব মসজিদ-মন্দিরে প্রভু নাই মানুষের দাবি,
    মোল্লা-পুরুত লাগায়েছে তার সকল দুয়ারে চাবি!
    কোথা চেঙ্গিস, গজনি-মামুদ, কোথায় কালাপাহাড়?
    ভেঙে ফেলো ঐ ভজনালয়ের যত তালা-দেওয়া-দ্বার!
    খোদার ঘরে কে কপাট লাগায়, কে দেয় সেখানে তালা?
    সব দ্বার এর খোলা রবে, চালা হাতুড়ি-শাবল চালা!
    হায় রে ভজনালয়,
    তোমার মিনারে চড়িয়া ভণ্ড গাহে স্বার্থের জয়!
    মানুষেরে ঘৃণা করি
    ও কারা কোরান, বেদ, বাইবেল চুম্বিছে মরি মরি
    ও মুখ হইতে কেতাব-গ্রন্থ নাও জোর করে কেড়ে
    যাহারা আনিল গ্রন্থ-কেতাব সেই মানুষেরে মেরে
    পূজিছে গ্রন্থ ভণ্ডের দল! – মূর্খরা সব শোনো,
    মানুষ এনেছে গ্রন্থ; – গ্রন্থ আনেনি মানুষ কোনো! –


    সেই নজরুলই এত কিছু সত্বেও যোগী-ত্যাগী-সাধু-সন্নেসী-ফকির-পীরদের বরাবরই ভক্ত। তার প্রথম প্রকাশিত কবিতাই তো একজন হাত-বাঁধা ফকিরের কেরামতির ছন্দোবদ্ধ গপ্পো! অতএব দ্রবণীয়কে দ্রব করতে বেশি শক্তিক্ষয় করতে হল না যোগীশ্রেষ্ঠর। একের জায়গায় তিনজন একেবারে মুখিয়ে-থাকা অ্যাপ্রেন্টিস যোগী ওই এক দিনেই, একই সঙ্গে, যোগীরাজ বরদাচরণের কাছে নাড়া বাঁধল।

    গুরু বরদাচরণ বললেন, শান্তি নেই মনে, কবিতা লিখবে কীভাবে?

    দাদা, গান তো লিখছি।

    লিখছ তুমি ভাবছ, কিন্তু লিখছই কি সত্যি? গান তো গাইছ।

    তাই হল, মানলুম সে কথা, তবু দাদা, গাইবার আগে কি ভাবতে হয় না?

    নিশ্চয়ই ভাবতে হয়। কিন্তু কবিতার ক্ষেত্রে ছন্দান্ত্যমিলপ্রযুক্ত শব্দগুচ্ছ যেমন নটরাজের নৃত্যের মতো উদ্দামতা থেকে ধীরে ধীরে একটা নির্দিষ্ট শৃঙ্খলাবদ্ধ পঙ্‌ক্তিতে পর্যবসিত হয় – যার পেছনে শুধু আবেগ নয়, চিন্তাও থাকে – সঙ্গীত তো ঠিক সেরকম নয়। সে গীত যাঁতে সমর্পিত তিনিই তাকে ঠেলে বের করে দেন সঙ্গীতকারের মুখ অথবা অঙ্গুলিধৃত লেখনী থেকে: তখনই লেখা বা গাওয়া হয় একটা গান।

    একটু একটু বুঝতে পারছি বোধ হয় দাদা এখন, বলে কাজি, অনেক দিন আগে খুব জ্বরের মধ্যে একটা গান লিখেছিলুম – লিখেছিলুম না বলে বোধ হয় গেয়েছিলুম বলাই ভালো – প্রথম শুনেছিলেন আপনার বৌমা, অনেক জ্বরের মধ্যে তিনি আমার মাথা ঠাণ্ডা জলে ধুইয়ে দিচ্ছিলেন তখন; ওই মাথা ধোয়াতে ধোয়াতেই তিনি আমার কণ্ঠে একটা সুর শোনেন, পরের দিন সেই সুরে যেন আপনা-আপনিই ভাষা এল। শুনে আপনার বৌমা উত্তেজিত; এই গান, এই গানটাই তুমি গাইছিলে কাল রাতে!

    গানটার কলিগুলো তোমার মনে আছে, কাজিভায়া? – জিজ্ঞেস করেন বরদাচরণ।

    আছে দাদা, আছে। উত্তেজিত কাজি সেই মুহূর্তেই গেয়ে ওঠে, আসে বসন্ত ফুলবনে সাজে বনভূমি সুন্দরী।

    সম্পূর্ণ গানটা স্মিতমুখে শোনেন বরদাচরণ, তারপর বলেন, দেখলে তো, তোমার কোন প্রয়াসই লাগল না, প্রকৃতিদেবী নিজেই সম্পূর্ণ সঙ্গীতটা তোমাকে দিয়ে গাইয়ে নিলেন। তুমি তো আশীর্বাদধন্য, তোমার আবার অশান্তি?

    আশীর্বাদধন্য তো নিশ্চয়ই দাদা, না হলে, আপনি নিজেই কি ডেকে পাঠাতেন?

    তাহলে? তিনজনই শোন তোমরা, ঠিক যে ভাবে দেখিয়ে দিলাম সেই ভাবে ধ্যান করবে। কোন নির্দিষ্ট সময় নেই, যখন অন্তর থেকে আকুতি তৈরি হবে, ধ্যানের সময় তখনই। তোমরা তো জান, আমি নিজে গৃহত্যাগী যোগী নই, গৃহত্যাগী হবার কোন কারণও দেখি না। সংসারধর্ম প্রতিপালন করবে, যা যা কর্তব্য সবই করবে, চাকরি ব্যবসা কোন কিছুই সাধনপথের অন্তরায় নয়, সৎ ভাবে করণীয় যা সবই করতে হবে। এইটুকুই মনে রেখো, এইটুকুই পালন কোরো, দেখবে নিজের মনই নানা অনুজ্ঞার সাহায্যে তোমাকে নির্দেশ দিচ্ছে। সে নির্দেশ পালন যদি করতে পার, করবে। না পার যদি, যদি কোন অসুবিধে হয়, তখন আমার সঙ্গে যোগাযোগ কোরো। তবে জেনে রেখ, আমি সব সময়েই তোমাদের প্রত্যেকের সঙ্গে আছি, হয়তো আমাকে প্রয়োজনই হবে না। কিন্তু তবুও, যখনই আমার কাছে আসতে ইচ্ছে হবে, কোন সঙ্কোচ কোরো না। আমি সব সময়েই উপলব্ধ।

    এতক্ষণ অমরেন্দ্র ডাক্তার বা গোপালদাস, কেউই কোন কথা বলেনি। এখন অমরেন্দ্র বলে, একটা কথা জিজ্ঞেস করব দাদা? যদি অধিকারবহির্ভুত কোন প্রশ্ন করে ফেলি, ক্ষমা করবেন। শুনেছি দাদা, আপনি নিজে শ্মশানে গিয়েও সাধনা করেন; কিন্তু আবার বলছেন, চাকরি বা ব্যবসা সাধনপথের অন্তরায় নয়, সংসারধর্ম প্রতিপালন করেই উদ্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছনো যায়।

    বরদাচরণ হাসেন, বলেন, কিন্তু আমি কি গৃহত্যাগ করেছি? আমার বৃত্তি শিক্ষকতা, সেই কাজ মনোযোগের সঙ্গেই করেছি। আমার ছাত্ররা অনেকেই এখনো যোগাযোগ রাখে আমার সঙ্গে। আমি তোমাদের বলেছি অন্তরের আকুতির পূরণ করবে, শ্মশানের ডাক যদি পাও নিজের অন্তরে, তখন শ্মশানও তোমার সংসার হতে পারে। আমি মাঝে মাঝে শ্মশানে যাই এ-কথা ঠিক, কিন্তু আজও শ্মশান আমার সংসার হয়ে উঠতে পারেনি। এখনো আমি গৃহী। নিজের অভিজ্ঞতার থেকে একজনের কথা তোমাদের বলি। একেবারেই নিজের অভিজ্ঞতা, যার কথা বলব সে আমার নিজের মাসতুতো ভাই, হরেন তার নাম। হরেন সান্যাল। এক অমাবস্যার রাতে গোপনে সে আমার পিছু নিয়ে শ্মশানে গিয়েছিল। তার কী অভিজ্ঞতা হয়েছিল আমি জানি না। তবে সে চোখ ঢেকে রক্ত রক্ত চিৎকার করতে করতে বাড়ি ফিরেছিল, এবং উন্মাদ হয়ে গিয়েছিল। বেচারা ডাক পাবার আগেই গিয়েছিল। ডাক পেয়ে গেলে কি কেউ উন্মাদ হয়?

    তাই তোমাদের সাবধান করে দিচ্ছি ভায়া। যখন ডাক পাবে, যেখানে যাবার ডাক পাবে, যাবে। যদি ডাক না-ও পাও, জেনে রেখ সংসারই তোমার জায়গা। তাতে কোন ক্ষতি নেই কিন্তু। যার কাজ যেখানে, তার কাজ সেখানেই।

    দুপুরে খাওয়া-দাওয়া হল। গাড়িতে অনেকটা আসতে হবে। কাজিকে বরদা জিজ্ঞেস করেন, কষ্ট একটু কমেছে কাজিভায়া? অশান্তি কি আগেরই মতো?

    কাজি বলে, একটা অবান্তর প্রশ্ন করব দাদা?

    কোন প্রশ্নই অবান্তর নয়, প্রশ্ন মাত্রই প্রাসঙ্গিক, যে প্রশ্ন মনে এসেছে, বল।

    বিগত আত্মা, যে দেহ সে ত্যাগ করেছে, সেই একই স্থূল দেহে সে কি আর ফিরে আসতে পারে?

    স্মিত হাসিটি বরদাচরণের মুখ থেকে বিদায় নেয় না কখনো; বললেন, পুত্রটিকে আর একবার দেখতে চাও?

    কাজি কথা বলে না, তার চোখ থেকে অবিরল ধারা নামতে থাকে।

    দেখা তুমি পাবে কাজিভায়া, আমি ব্যবস্থা করব, বলেন বরদা, তবে একটা শর্তে। তুমি তার সঙ্গে কথা বলবার বা তাকে স্পর্শ করবার চেষ্টা করবে না।

    আর একটা কথা, বলেন বরদা। তুমি মায়ের আশীর্বাদধন্য, এ কথা কি তুমি বুঝতে পার কাজিভায়া?

    আমি বুঝিনি, কখনোই বুঝিনি, তবে আপনি জিজ্ঞেস করলেন বলে একটা কথা মনে পড়ল। আমার মা আমাকে তারাখ্যাপা নামে ডাকতেন। শুনেছি তারা মায়ের কৃপায় মা আমাকে পেয়েছিলেন।

    কোথাও একটা যোগাযোগ ঠিক থাকে রে বাবা, ঠিক থাকে, এ আমি সারা জীবন ধরে দেখেছি।

    ফিরে আসার আগে একটা কাগজ চেয়ে কাজি লিখল কিছু, তারপর সেই লেখাটা দেখে গাইল সে:


           শ্মশানে জাগিছে শ্যামা
    অন্তিমে সন্তানে নিতে কোলে।
    জননী শান্তিময়ী বসিয়া আছে ঐ
    চিতার আগুন ঢেকে স্নেহ আঁচলে।।
    সন্তানে দিতে কোল ছাড়ি সুখ-কৈলাস
    বরাভয়-রূপে মা শ্মশানে করেন বাস;
    কি ভয় শ্মশানে শান্তিতে যেখানে
    ঘুমাবি জননীর চরণ-তলে।।
    জ্বলিয়া মরিলি কে সংসার জ্বালায়–
    তাহারে ডাকিছে মা, 'কোলে আয় কোলে আয়!'
    জীবনে শান্ত ওরে
    ঘুম পাড়াইতে তোরে
    কোলে তুলে নেয় মা মরণেরি ছলে।।


    আহা আহা, আরেকবার গাও কাজিভায়া, বলে কাগজখানা হাতে তুলে নেন বরদাচরণ। কাজির ঠিক পাশটিতে এসে বসেন তিনি যাতে প্রয়োজন হলে কাজিও দেখতে পায় গাইতে গাইতে। গাওয়া শেষ হলে বরদা বলেন, আর একখানা বাঁধ ভেঙে গেল কাজি, কতো গভীর কথা যে কী সহজে তুমি বললে! এবার যত পার লিখে যাও গেয়ে যাও।

    ওরা যখন গাড়িতে উঠতে যাবে বরদা কাজির পিঠে হাত রেখে বলেন, শান্তি পেয়েছ কাজিভায়া? কাজি কোন কথা না বলে পায়ে মাথা রাখে বরদাচরণের।

    ওরা যে সেদিনই ফিরবে তা জানত নলিনী, বাড়ি ফেরার সময় কাজি লক্ষ্য করে, বাড়ির সামনের রাস্তায় উদ্বেগে পায়চারি করছে নলিনী। গোপালদাস আর অমরেন্দ্রকে তাদের বাড়িতে পৌঁছিয়ে দেবার কথা ড্রাইভারকে বলে গাড়ি থেকে নামে কাজি।

    ফিরলি? – বড় উদ্বেগে ছিলাম, বলে নলিনী।

    উদ্বেগ কিসের নলিনীদা? – কাজি বলে, দাদার সঙ্গে প্রায় সারাটা দিন কাটালুম, এখন তো শুধুই শান্তি।

    আজকাল কাজির বাড়ির বাইরের দরজার সামনে দারোয়ান থাকে একজন, শশব্যস্ত সে দরজাটা খুলে দেয়। নলিনী বলে, অনেক রাত হল; যা বিশ্রাম নে, আমিও যাই।

    মাসখানেক পর সন্ধ্যের মুখে কাজি আসে নলিনীর বাড়ি। উত্তেজনায় হাঁপাচ্ছে, মেঝেতেই বসে পড়ে সে। বলে, ধ্যান করছিলুম, হঠাৎ কেমন একটা শব্দে দরজার দিকে ফিরে তাকালুম। দেখি, বুলবুল। আস্তে আস্তে সে ভেতরে ঢুকে তার নিজের ছোট্ট আলমারিটা খুললো। ভেতরে তার জামাকাপড়, পাখির ছবিওয়ালা বইটা, প্রথম ভাগ, আদর্শ লিপি আর খেলনাগুলো ছিল। একটা একটা করে বের করল সেগুলো তারপর আবার একটা একটা করে ঠিক ঠিক জায়গায় তুলে রাখল সে। আলমারির দরজাটা বন্ধ করল তারপর – এইকথা বলতে বলতে জোরে জোরে হাঁপায় কাজি। হাঁপাতে হাঁপাতেই বলতে থাকে সে, তারপর আমার দিকে তাকাল বুলবুল। ঠিক আগের মতো হাসল একবার। তারপর আর দেখতে পেলুম না।

    হাউ হাউ করে কাঁদতে থাকে কাজি।

    একটু অপেক্ষা করে নলিনী, বলে, তুই তো তাকে দেখতেই চেয়েছিলি একবার, বলেছিলি শান্তি পাবি। এখন কাঁদছিস কেন?



    ক্রমশ...

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১২৭১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন