ভারতের বৃহত্তর রাজনৈতিক আন্দোলনের পটভূমিকায় আর একজনকেও নিঃস্ব করে দেবার এক প্রবল ষড়যন্ত্র চলছিল ঠিক সেই সময়টাতেই : সুভাষচন্দ্র।
উনিশশো তেত্রিশের তেরই ফেব্রুয়ারি থেকে উনিশশো সাঁইত্রিশের সতেরই মার্চ – চার বছরেরও বেশি এই সময়টাতে সুভাষকে নানা কায়দায় স্বাধীনতা আন্দোলনের থেকে দূরে রাখার ব্যবস্থা করে রেখেইছিল ব্রিটিশ সরকার। য়্যোরোপের নানা জায়গায়, ভিয়েনায় প্রধানত, নিজের খরচে চিকিৎসিত হবার অনুমতি দিয়ে সুভাষকে জেল থেকে বোম্বাই বন্দরে নিয়ে এসে শেষ পর্যন্ত জাহাজে ওঠবার পর সাময়িক ভাবে মুক্তি দেওয়া হয়। তিন বছর পেরোলে, ১৯৩৬-এর ৮-ই এপ্রিল, ফেরবার সময়, বোম্বাইয়ের বন্দরে অবতরণের সঙ্গে সঙ্গেই আবার গ্রেপ্তার করে পুনার যারবেদা জেল-এ ঢুকিয়ে দেওয়া হল তাঁকে। সম্পূর্ণ অনৈতিক এই বন্দীদশার বিরুদ্ধে সারা ভারতে নানা আন্দোলন গড়ে ওঠে। চাপের মুখে জেল থেকে সরিয়ে তাঁকে কার্শিয়াঙে শরৎ বসুর বাড়িতে অন্তরীণ করে রাখা হল। ঘোরতর অসুস্থ হয়ে পড়লেন সুভাষ, কার্শিয়াং থেকে তাঁকে পাঠিয়ে দেওয়া হল কলকাতার মেডিকাল কলেজে। সেখানে যা চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল, তার প্রবল প্রতিবাদ করলেন বসু পরিবারের ডাক্তার। একটু ঘাবড়িয়ে গিয়েই বোধ হয় ওই সাঁইত্রিশেরই সতেরই মার্চ সুভাষকে মুক্তি দিতে বাধ্য হল সরকার।
ভারত থেকে য়্যোরোপে যাবার সময়েই মনে মনে সুভাষ ভেবে রেখেছিলেন য়্যোরোপের নানা দেশে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের রাষ্ট্রীয় প্রতিবেদন এবং দৌত্য হবে এই সুযোগে তাঁর প্রধান কাজ। বোম্বাইয়ের বন্দরে জাহাজে বসেই সুভাষ ঠিক করেন, 'কথা-বলা' হবে য়্যোরোপের নানা দেশ ভ্রমণে তাঁর একটা প্রধান উদ্দেশ্য। যেখানেই তিনি যাবেন নানা সমাবেশে-আলোচনায় যোগ দেবেন। যোগ দেবার নিমন্ত্রণও আসছিল অনেক। এবং সে নিমন্ত্রণ গ্রহণ করে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই য়্যোরোপের ছোট-বড় নানা দেশে ভারত এবং ব্রিটেনের অবস্থান স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন সুভাষ। এর ফল ভারতে থেকেই নেহ্রু এবং অন্যান্যরা বুঝতেও পারছিলেন। বিদেশে নির্বাসিত অসুস্থ নেতার স্বাধীনতা আন্দোলনে এই অবদান প্রশংসা এবং উৎসাহের সঙ্গে লক্ষ্য করছিলেন আরও অনেকেই। উনিশশো সাঁইত্রিশে কংগ্রেস সভাপতি ছিলেন জওহরলাল নেহ্রু। দেশের বাইরে থেকেও সুভাষের এই অবদানে কংগ্রেস-সভাপতির পদে থাকার সময় কংগ্রেসের বিশেষ একটি আন্তর্জাতিক বিভাগ খোলবার সংকল্পে অনুপ্রাণিতও হয়েছিলেন নেহ্রু। সেই স্বার্থান্ধ লীগ অব নেশন্স্-এর যুগে, এই তিন বছরে, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনকে একটা ইন্টারন্যাশনাল ইস্যু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে ফিরলেন সুভাষ।
তখন, উনিশশো আটত্রিশে, বোধ হয় সুভাষকে কংগ্রেস সভাপতির পদের জন্যে মনোনীত না-করার কোন উপায় ছিল না মহাত্মা গান্ধীর। প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন সর্দার প্যাটেল এই মনোনয়নের বিরুদ্ধে, কিন্তু রাজি করাতে পারেননি মহাত্মাকে। যা বলে এসেছেন এতদিন, সভাপতি হয়েই সুভাষ তাকে বাস্তবায়িত করার চেষ্টা শুরু করলেন। কিন্তু প্রতি পদে পদে বাধা, বাধা কংগ্রেসের দক্ষিণপন্থী গোষ্ঠীর থেকে, তাঁরাই তখন কংগ্রেসের সবচেয়ে ক্ষমতাপন্ন গোষ্ঠী, এবং মহাত্মা গান্ধীর ঘনিষ্ঠতম। সুভাষের একটাই সুবিধে, হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সাধারণ মানুষের সমর্থন। কংগ্রেসের মধ্যেই যাঁরা সমাজতন্ত্রী বা বামপন্থী হিসেবে পরিচিত, তাঁদেরও টানটা সুভাষের দিকেই। সুভাষ স্পষ্টই বলেছেন, এই সমাজতন্ত্রী এবং বামপন্থীরা কংগ্রেসের মস্ত সম্পদ, কারণ এঁরাই কংগ্রেসের ভেতরে থেকেও বিরোধী ব্লক। উনিশশো সাঁইত্রিশে প্রথম যখন অনেকটাই-নিয়ন্ত্রিত রাজ্যভিত্তিক নির্বাচন এবং সেই নির্বাচনের ভিত্তিতে অংশত-ক্ষমতাপন্ন মন্ত্রীসভা চালু করল ব্রিটিশ সরকার, সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণে বামপন্থী ব্লক আর নিমরাজি নেহ্রুর প্রায়-অনিচ্ছা সত্ত্বেও সারা ভারতের নিরিখে খুবই ভালো ফল করে কংগ্রেস। যতই অল্প হোক, ক্ষমতা হাতে একবার এলে দুর্বার তার আকর্ষণ, মন্ত্রীর পদকে আঁকড়ে থাকতে চাইলেন অনেকেই।
সেই সময় অখণ্ড ভারতের কমবেশি তিরিশ ভাগ মানুষ ছোট ছোট দেশীয় রাজ্যের প্রজা (এ ব্যাপারটা হৃদয়ঙ্গম করতে বাঙালির সময় লেগেছে অনেকটাই, কারণ বাংলায় দেশীয় রাজ্য প্রায় নেই বললেই চলে! বাঙালির প্রাত্যহিক ভাষায় যাদের রাজা বলা হত, তারা আসলে কেউই রাজা নয়, সবাই নানা মাপের জমিদার। অবিভক্ত বাংলায় সব মিলিয়ে ছোট ছোট দেশীয় রাজ্য মাত্র দুটি – পুবে ত্রিপুরা আর তার পশ্চিমে আরও ছোট কোচবিহার)। সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ সরকারের মতলব, এই তিরিশ ভাগ দেশীয় রাজ্যের প্রতিনিধি ব্রিটিশ-বশংবদ রাজন্যবর্গকে কমপক্ষে তিরিশ ভাগ আসন দিয়ে, আর নানারঙের ব্রিটিশজাত অথবা ব্রিটিশদাস নাগরিককে সঙ্গে নিয়ে একটা নাম-কা ওয়াস্তে কেন্দ্রীয় আইন-সভা তৈরি করবে; ছেলে-ভোলানো একটা নামও দেওয়া হল তার, ফেডারেশন! বোকা-ভারতবাসীরা তো প্রায়-স্বাধীনতা পেয়েই যাবে তাতে, অথচ টান-দেবার দড়িটা থাকবে ভাইসরয় আর তাঁর সহকারী গভর্ণরদের হাতেই! প্রথম থেকেই নীতি হিসেবে ফেডারেশনের বিরোধী কংগ্রেস, কিন্তু একটুখানি মন্ত্রীত্বের স্বাদ-পাওয়া নানা রাজ্যের মন্ত্রীদের একটা বড় অংশ তলে-তলে ফেডারেশনেই রাজি।
একে তো সুভাষ স্পষ্ট করেই এঁদের সাবধান করে দিলেন, তার উপর বিশ্ব-জোড়া যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাধীনতা আর বেশি-দূরে-নয় – এই ভাবনায় ভবিষ্যৎ ভারতের নানা পরিকল্পনার কাজও শুরু করলেন। নানা শিল্পপতি ও কংগ্রেসের বরিষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে একটা সর্বভারতীয় আলোচনা ও পরামর্শ সভাও করলেন দিল্লীতে। জাতীয় পরিকল্পনা কমিশন গঠনের প্রস্তাব এল। নেহ্রু তখন বিদেশে, তাঁকে আহ্বান করলেন সুভাষ এই পরিকল্পনা কমিশনের দায়িত্ব নিতে। সুভাষের এই কাজের ধারা বোধ হয় খানিকটা দুশ্চিন্তিত করল বিড়লা প্রমুখ কংগ্রেস নেতাদের। যুদ্ধের সময় সহজেই-আয়ত্ত বড়-মাপের একটা বাজারের অপেক্ষায় থাকে বড় শিল্পপতিরা, সুভাষের পরিকল্পনামুখী এবং খানিকটা সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির চিন্তা বোধ হয় একটু ভাঁজই ফেলল এই শিল্পপতিদের কপালে।
কংগ্রেস সভাপতিদের সভাপতিত্বের মেয়াদ মাত্র এক বছরের। বর্তমান সভাপতির কাজ চলতে চলতেই পরের বছরের সভাপতির নাম ঘোষণা করে দেন মহাত্মা গান্ধী – যদিও এই সময় কংগ্রেসের চার-আনা সদস্যপদও ত্যাগ করেছেন মহাত্মা! সভাপতির পদে সুভাষেরও নির্বাচন হয়েছিল এই একই পদ্ধতিতে; সাঁইতিরিশের সভাপতি নেহ্রুর মেয়াদ চলতে চলতেই সুভাষের নাম প্রস্তাব করেন গান্ধী; যেমন রেওয়াজ, কেউ প্রকাশ্যে তাঁর বিরোধিতা করেননি বা প্রার্থী হবার ইচ্ছেও প্রকাশ করেননি আর কেউ, ফলত সেই নভেম্বরেই পরবর্তী সভাপতি হিসেবে সুভাষের নাম ঘোষিত হয়ে যায়।
সুভাষ এবং প্রধানত তাঁর বামপন্থী সমর্থকরা মনে করলেন, যে কাজ সুভাষ শুরু করেছেন তা যদি চালিয়ে যেতেই হয় তাহলে কোন দক্ষিণপন্থী কংগ্রেসীর হাতে সভাপতিত্বের দায়িত্ব পড়লে চলবে না, অঙ্কুরেই বিনষ্ট হবে এক বছরের যাবতীয় উদ্যমের ফল। ১৯৩৮-এর সভাপতিত্বের শুরুতে যে ওয়র্কিং কমিটি সুভাষকে দেওয়া হয়েছিল তা মোটামুটি ১৯৩৭-এর নেহ্রুর ওয়র্কিং কমিটির মতোই, বাদ পড়েছিলেন বামপন্থী হিসেবে পরিচিত আচার্য নরেন্দ্র দেব আর অচ্যুত পট্টবর্ধন। সুভাষ এবার নরেন্দ্র দেবকে অনুরোধ করলেন ১৯৩৯-এ সভাপতি-পদের প্রার্থী হতে। বোঝা গেল, মহাত্মা গান্ধীর অনুমোদন পাওয়া না-গেলে নির্বাচনে প্রার্থী হতে কেউই ইচ্ছুক হবেন না। ইতোমধ্যে হাওয়া বুঝতে মাওলানা আবুল কালাম আজাদ আর পট্টভি সীতারামাইয়ার নাম ঘোষণা করে দিয়েছেন কংগ্রেস ওয়র্কিং কমিটি, ওরফে মহাত্মা; এই দুজনের যে-কোন একজন – দেখা যাক, হাওয়া কার দিকে – হবেন রাষ্ট্রপতি-পদের উমেদার! এই অবস্থায় – সমস্ত দেশ জুড়ে মূলত বামপন্থীদের প্রকাশ্য সমর্থনের মুখে – অসমের গোপীনাথ বরদলৈ, ফকরুদ্দিন আলি, বিষ্ণু মেধী, সিদ্ধিনাথ শর্মা এবং বাংলার জে-সি-গুপ্তর নেতৃত্বে দশজন কংগ্রেস প্রতিনিধি সুভাষের নাম উপর্যুপরি দ্বিতীয়বার কংগ্রেস সভাপতির পদে প্রস্তাব করে দিলেন। এত জনের আপত্তি বুঝে সরে দাঁড়ালেন আজাদ। স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে গান্ধী নিজে, এবং তাঁর ইচ্ছাধীন ওয়র্কিং কমিটি (অবশ্যই ওয়র্কিং কমিটির তখনও-সদস্য শরৎচন্দ্র বসুর অজান্তেই) মনোনীত করলেন সীতারামাইয়াকেই।
নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত বিপুল ভোটে মহাত্মার ব্যক্তিগত প্রার্থী সীতারামাইয়া (ব্যক্তিগত প্রার্থী – এই শব্দযুগল গান্ধী নিজেই ব্যবহার করেছিলেন, এবং আরও বলেছিলেন, সীতারামাইয়ার পরাজয় তাঁর নিজেরই পরাজয়!) পরাজিত হন। ব্যাপারটা এখানেই মিটিয়ে দিয়ে সুভাষকে কংগ্রেসের ঐতিহ্য অনুযায়ী কাজ করতে দেওয়াই সভ্যজনোচিত ছিল। কিন্তু সুভাষের বিনষ্টির প্রয়াসে গান্ধী এমন সব মতলব তাঁর বশংবদ দক্ষিণপন্থী নেতাদের দিয়ে আঁটালেন যে, কোন অবস্থাতেই সুভাষ কোনরকমের ওয়র্কিং কমিটিই তৈরি করতে পারবেন না। অর্থাৎ, নবনির্বাচিত কংগ্রেস-সভাপতি সুভাষ যদি সভাপতির আসনে থাকতেই চান, তাহলে ঠুঁটো জগন্নাথ ছাড়া অন্য কোন ভূমিকা তাঁর থাকতেই পারবে না।
ত্রিপুরির যে সভায় – প্রবল অসুস্থতার কারণে যে সভায় সুভাষ নিজেই আসতে পারেননি – পন্থ্-প্যাটেল-বিড়লা-রাজেন্দ্রপ্রসাদ ঘেরিত মহাত্মা সদ্য-নির্বাচিত সুভাষকে ঘায়েল করবার এই মতলবটা প্রকাশ্যে ঘোষণা করে, ২১৮-১৩৫ ভোটে সেই প্রস্তাব যখন পাশ করিয়ে নিলেন, একই সঙ্গে তখন য়্যোরোপ থেকে ১৫-ই মার্চ নাৎসী বাহিনীর প্রাগ দখলের খবর আসে। কংগ্রেসে হিটলারের আগ্রাসনের কোন নিন্দা তো করা হলই না, অত্যুৎসাহীরা ভারতবর্ষে গান্ধীর একচ্ছত্র নেতৃত্বের প্রশংসা করতে গিয়ে তাঁকে হিটলার-মুসোলিনির সঙ্গে তুলনা করলেন! পঞ্জাবের প্রতিনিধিরা তো মহাত্মা গান্ধীকী জয়, হিন্দুস্থানকী হিটলারকী জয় শ্লোগান পর্যন্ত তোলেন!
খবর পেয়ে ক্ষুব্ধ রবীন্দ্রনাথ – যাঁকে মহাত্মা গান্ধী সম্বোধন করেন গুরুদেব নামে – মন্তব্য করলেন, “...দলে দলে পোলিটিকাল গুরুদের ধনুর্ধর চেলারা সম্পূর্ণ হতবুদ্ধির তপস্যায় আজ প্রবৃত্ত। সেই তপস্যার কৃচ্ছ সাধনের অন্ত নেই। তাতে মস্তিষ্ককে, হৃদয়কে আত্মসম্মানকে স্বকৃত ও পরকৃত পীড়নে দলে দলে করছে পক্ষাঘাতগ্রস্ত। অবশেষে আজ, এমন কি, কন্গ্রেসের মঞ্চ থেকেও হিটলারী নীতির নিঃসংকোচ জয়ঘোষণা শোনা গেল। ছোঁয়াচ লেগেছে। স্বাধীনতার মন্ত্র উচ্চারণ করবার জন্য যে বেদী উৎসৃষ্ট, সেই বেদিতেই আজ ফ্যাসিস্টের সাপ ফোঁস করে উঠেছে। মনে হচ্ছে আমি এক জায়গায় লিখেছিলুম – Proud power tries to keep safe in its own exclusive hand with a grip that kills it.
“ডান হাত দিয়ে নেশনের স্বাধীনতার টুঁটি চেপে ধরে বাঁ হাত দিয়ে তাকে স্বাধীনতার ঢোঁক গিলিয়ে দেবার আশ্বাস দেওয়া কেবল ব্যক্তিবিশেষেরই অধিকারায়ত্ব এই সর্বনেশে মত দেশকে খোকা করে রাখবার উপায়।......”
অসুস্থ সুভাষ তখন জামাডোবায়, তাঁর চিকিৎসক-বড়দার তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলছে তাঁর। সারা বাংলা যখন ক্ষোভে উত্তাল, বিশেষ একটি উচ্চকিত কবিকণ্ঠের কোন স্বর শোনা গেল না কিন্তু সেই মুহূর্তে। সে-কণ্ঠটি বেশ কিছুদিন ধরেই নীরব হয়ে আছে। শুধু রাজনীতিতেই যে সে নীরব তা-ই নয়, সবাই জানে কবিতা সে আর লেখেই না প্রায়, গ্রামোফোন কম্পানীর রিহার্স্যাল রূমের বাইরে যা বলে সে, তাতে ঘন ঘন আল্লাহ্ বা কোন ভগবানের নাম শোনা যায়, কোন পরম শক্তির অস্পষ্ট ইচ্ছার কথা সাধারণের বোধগম্যতার ঊর্ধ্বেও হয়তো শোনা যায় কখনও কখনও! তরুণ সুভাষ যে “জ্যান্ত মানুষের” নেতৃত্বে কংগ্রেস দলকে উজ্জীবিত করবার আশায় ভলান্টিয়ার বাহিনী গড়ে তোলবার প্রস্তাব দিয়েছিলেন এক সময়, সেই নজরুল – আজকের প্রায় নিঃস্ব নজরুল – কী করছিলেন তখন? শোনা যায়, অনেককেই তখন পণ্ডিচেরিতে স্থিত অরবিন্দর সঙ্গে তাঁর যোগ-শরীরে সাক্ষাতের কাহিনী কেমন-একটা ঘোরের মধ্যে শোনাতেন তিনি সেই-সব দিনে। অরবিন্দকে যোগ-শরীরে নিয়ে এসে তাঁর সঙ্গে নজরুল কি পরামর্শ করছিলেন কিছু? তাঁর যাবতীয় বঞ্চনার কাহিনী অন্তত মনে-মনেও নিবেদন করছিলেন যোগাভ্যাসের পায়ে?
এপ্রিলে কলকাতার কংগ্রেস অধিবেশনে শেষ পর্যন্ত সুভাষকে কোনমতেই তাঁর নিজের পছন্দের ওয়র্কিং কমিটি গড়তে দেওয়া হল না। সুভাষের জন্যে অপেক্ষা করে আছে দেশের আরও অনেক বড় কাজ, কংগ্রেসের সভাপতিত্বের চেয়ে সেই কাজেরই গুরুত্বই তাঁর কাছে বেশি। পদত্যাগ করলেন তিনি। ওয়েলিংটন স্কোয়ারের “ওপ্ন্ সেশন”-এর প্যাণ্ডেলের বাইরে ক্ষুব্ধ জনতার ভীড়ের মধ্যে দিয়ে প্রায় একাই ব্যূহ রচনা করে নির্বিঘ্নে সুভাষ জনরোষ উপেক্ষা করে নির্লজ্জ নেতাদের পৌঁছিয়ে দিলেন তাঁদের ফিরে যাবার জন্যে অপেক্ষমান গাড়িতে।
সারা বাংলা – বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটি, অর্থাৎ বিপিসিসি-সহ – সুভাষের সঙ্গে। সুভাষের কাজ এখন প্রধানত দুটো, তাঁর সমর্থক বাংলা এবং বহির্বাংলার তরুণ কংগ্রেসীদের সঙ্গে নিয়ে সত্যিকারের স্বাধীনতার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়া, আর মুসলিম ভারতবাসীর সঙ্গে হিন্দুদের সৌহার্দ স্থাপন। যত শীঘ্র সম্ভব। সেই সময়কার বিশ্বব্যাপী যুদ্ধের পরিস্থিতিতে সুভাষ মনে করেন স্বাধীনতা এখন দেশের প্রায় দুয়ারেই। বাংলায় মুসলিম লীগের কর্মীদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক এমনিতেই ভালো, তাঁরই সমর্থনে সিদ্দিকি সাহেব এখন কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র। উনিশশো আটতিরিশে, সুভাষ যখন কংগ্রেসের লোকপ্রিয় সভাপতি, সেই সময় থেকেই কলকাতার কলঙ্ক হলওয়েল মনুমেন্ট অপসারণের দাবিতে আন্দোলনে নামবার কথা চিন্তা করছিলেন তিনি। অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়র ১৮৯৮-এ প্রকাশিত সিরাজদ্দৌলা নামের গবেষণা-গ্রন্থ এবং ১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৪-এ মার্চ কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটিতে অলীক অন্ধকূপ হত্যা যে ইংরেজ শাসকগোষ্ঠীর সম্পূর্ণ অপপ্রচার, তার প্রমাণ দাখিল করার উল্লেখ করে জাতীয় সম্মানের স্বার্থে হলওয়েল মনুমেন্ট অপসারণের দাবির কথা সুভাষ নানা জায়গায় তখন থেকেই বলতে থাকেন। সেই সময়ের জনপ্রিয় নাট্যকার ও পরিচালক শচীন সেনগুপ্ত ততদিনে সিরাজদ্দৌলা নাটক মঞ্চস্থ করেছেন কলকাতার নাট্যনিকেতন মঞ্চে। এই নাটকের জন্যে একাধিক গান লিখে, তাতে সুর-যোজনা এবং সঙ্গীত নির্দেশনা করেছেন নজরুল। নাটকটি এত জনপ্রিয় হয়েছিল যে কিছুদিনের মধ্যেই গ্রামোফোন কম্পানী সম্পূর্ণ নাটকের রেকর্ড প্রকাশ করে।
এখন যখন চরকির মতো সারা ভারত ঘুরছেন সুভাষ, তিনি লক্ষ্য করেন, সভাপতি নির্বাচনের সময় তাঁকে সমর্থন জানিয়েছিলেন যাঁরা, তাঁদের বাইরেও অনেক কংগ্রেসকর্মী এখন নতুন উদ্যমে স্বাধীনতা আন্দোলনে সুভাষের সঙ্গে থাকবার জন্যে উন্মুখ। কংগ্রেস-কর্মী ও নেতাদের এইসব সভায় সুভাষ বিশেষত বাংলার শেষ নবাব সিরাজদ্দৌলার প্রসঙ্গ নিয়ে আসেন বারবার। এ-যাবৎ স্বাধীনতা আন্দোলনের কংগ্রেসী ন্যারেটিভে সিরাজদ্দৌলা প্রায় একেবারেই অনুপস্থিত ছিলেন। বিস্মিত সুভাষ লক্ষ্য করেন, এমনকি মুসলমানরাও সিরাজের খবর প্রায় রাখেনই না। তাঁরা যেন সিরাজের নামে চালানো
মিথ্যে-অপবাদের কল্পিত অপরাধে নিজেরাও অপরাধী! সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজের সিরাজ-সম্পর্কিত বিকৃত ইতিহাস প্রায় বিনা তর্কেই মেনে নিয়েছেন এমনকি মুসলমানরাও। সুভাষ নিশ্চিত, হিন্দু-মুসলমান মিলনের এবং তাঁর পরিকল্পিত সময়োচিত জঙ্গী-স্বাধীনতা-আন্দোলনে সিরাজের প্রসঙ্গ উত্থাপনের এখনই প্রকৃষ্ট সময়।
আঠাশ আর উনত্রিশে জুন কলকাতার প্রায় সব ইংরিজি-বাংলা সংবাদপত্রে সুভাষচন্দ্র বসু স্বাক্ষরনামা সহ সুভাষের এক আবেদন প্রকাশিত হল: “হলওয়েল মনুমেন্ট নিয়ে বঙ্গীয় প্রাদেশিক সম্মিলনের সিদ্ধান্ত এখনই কার্যকর করতে হবে। বাংলার শেষ স্বাধীন রাজার স্মৃতিতে ৩-রা জুলাইকে সিরাজদ্দৌলা দিবস হিসেবে পালন করা হবে। হলওয়েল মনুমেন্ট শুধু যে নবাবের স্মৃতিকে কলুষিত করছে, তা নয়। প্রায় দেড়শো বা তার বেশি কিছু বছর ধরে আমাদের দাসত্ব ও অপমানের চিহ্ন হয়ে শহরের মাঝখানে খাড়া আছে এই মনুমেন্ট। একে অপসারিত করতে হবে।... আগামী ৩-রা জুলাই এই অভিযান শুরু হবে। এই লেখক (নিম্নস্বাক্ষরকারী সুভাষচন্দ্র) স্বেচ্ছাসেবকদের প্রথম দলের নেতৃত্ব দেবেন।"
আল্লাহ্-অরবিন্দ-বরদাচরণ ঘেরিত, স্বাধীনতা আন্দোলন-রাজনীতি বিবর্জিত, নিজের তৈরি অতি ক্ষুদ্র যে জগতে নজরুল এতদিন স্বেচ্ছা-নির্বাসন বেছে নিয়েছিলেন সেখানে কি সুভাষের কণ্ঠস্বর পৌঁছল এতদিন পর? সুভাষের আবেদন প্রকাশিত হল যেদিন সেই একই দিনে মুসলিম লীগের পত্রিকা আজাদ-এ সিরাজদ্দৌলার স্মৃতিরক্ষার আন্দোলনে সকলকে যোগ দেবার আহ্বান জানিয়ে নজরুল ইসলামের একটি আবেদন প্রকাশিত হল। নজরুলের তখনকার প্রায় রাজনীতি-বিবর্জিত-জীবনে সেই সময়ের এই আবেদনটি উল্লেখযোগ্য। সুভাষ সম্ভবত নজরুলের আর্থিক-সাংসারিক-মানসিক অবস্থার কথা জানতেন, এবং সেই অবস্থায় এ-ধরনের রাজনৈতিক আন্দোলনে নজরুলকে সক্রিয়ভাবে জড়াতে হয়তো চাননি তিনি, কাজেই মোহাম্মদী পত্রিকার আকরম খাঁকে সিরাজদ্দৌলা স্মৃতিরক্ষা কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হয়। দশ বছর আগে যখন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র, সুভাষচন্দ্র বসু প্রমুখ দেশনেতাদের উদ্যোগে নজরুলকে জাতীয় কবির সম্বর্ধনা দেওয়া হয়, তখন 'কাফের' নজরুলের এই সম্বর্ধনার প্রবল বিরোধিতা করেন আকরম খাঁ। আজ যখন সবায়ের মিলিত উদ্যোগে এই আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, অতীতের বিবাদ ভুলে নজরুল তাঁর আবেদনে লিখলেন,
“আমি জানিতে পারিলাম যে, আগামী ৩-রা জুলাই সিরাজদ্দৌলা-দিবস পালনের আয়োজন চলিতেছে। এ কথা আজ সর্বজনসম্মত যে বাংলার শহীদ বীর ও শেষ স্বাধীন নৃপতি নওয়াব সিরাজদ্দৌলা রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব কোলাহলের ঊর্ধ্বে। হিন্দু মুসলমানদের প্রিয় মাতৃভূমির জন্য নওয়াব সিরাজদ্দৌলা সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। সর্বোপরি বাংলার মর্যাদাকে তিনি ঊর্ধ্বে তুলিয়া ধরিয়াছিলেন এবং বিদেশী শোষণের কবল হইতে দেশকে রক্ষা করিবার জন্য আপনার জীবন যৌবনকে কোরবানি করিয়া গিয়াছেন।
“মৌলানা আকরম খাঁর নেতৃত্বে কলিকাতার সিরাজদ্দৌলা স্মৃতি কমিটি উক্ত অনুষ্ঠানকে সাফল্যমণ্ডিত করিবার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করিতেছেন। কলিকাতা কমিটিকে সর্বপ্রকার সাহায্য প্রদান করিয়া আমাদের জাতীয় বীরের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করিবার জন্য আমি জাতি-ধর্মনির্বিশেষে সকলের নিকট আবেদন জানাইতেছি। বিদেশীর বন্ধনশৃঙ্খল হইতে মুক্তিলাভের জন্য আজ আমরা সংগ্রামরত। সিরাজদ্দৌলার জীবনস্মৃতি হইতে যেন আজ আমরা অনুপ্রাণিত হই – ইহাই আমার প্রার্থনা।”
হলওয়েল মনুমেন্টকে কেন্দ্র করে এই যে সুভাষের প্রস্তাব তা তাঁর অসাধারণ রাজনৈতিক দূরদর্শিতার উদাহরণ হয়ে রইল। এতদিনের হিন্দু-মুসলিম দ্বেষ যেন এক লহমায় উধাও। সুভাষ স্পষ্ট করেই ঘোষণা করেছিলেন প্রথম দিনের আন্দোলনে তিনি নিজে নেতৃত্ব দেবেন। অবশ্যই তিনি জানতেন, সে সুযোগ বৃটিশরাজ তাঁকে দেবে না, যদিও বাংলার লীগ-কৃষকপ্রজা মন্ত্রীসভার পক্ষে সুভাষকে তখন গ্রেপ্তার করাও কঠিন।
শেষ পর্যন্ত পয়লা জুলাইয়ের মধ্যরাত্রি অতিক্রান্ত হবার পর স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের পুলিশ ডিফেন্স অব ইণ্ডিয়া আইনে সুভাষকে প্রিএমটিভ (preemptive) গ্রেপ্তার করে প্রেসিডেন্সি জেল-এ নিয়ে গেল। ৩-রা জুলাই যথারীতি সিরাজের স্মৃতিতে তাঁর উদ্দেশে শ্রদ্ধা অর্পণ করা হল এবং বিদেশী ইতিহাসবিদ ও লেখকদের দুরভিসন্ধিজনিত সিরাজ-সম্পর্কিত মিথ্যা প্রচারের নিন্দা করা হল। দাবি করা হল পাঠ্যপুস্তক থেকে অনতিবিলম্বে সিরাজ-সম্পর্কিত এইসব রচনা প্রত্যাহার করতে হবে। হলওয়েল মনুমেন্ট অপসারণের জন্যে সরকারকে ১৫-ই জুলাই পর্যন্ত সময় দেওয়া হল, অন্যথায় ষোলই জুলাই থেকে লাগাতার সত্যাগ্রহ।
ঠিক যেন মাপে-মাপে সুভাষের ছক। হিন্দু-মুসলমানের যৌথ এমন আন্দোলন আগে কখনো দেখেনি কেউ। বিশেষত তরুণ প্রজন্ম। মুসলিম লীগের ছাত্র সংগঠনের সভ্যরা দলে দলে যোগ দিল। দলে দলে মুসলমান ছাত্রদের দল ফরওয়র্ড ব্লক অফিসে খোঁজ নিতে আসে আন্দোলনে কীভাবে অংশ নেওয়া যাবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লীগের নাজিমুদ্দিন আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন। অতি দ্রুত হলওয়েল মনুমেন্ট অপসারণের জন্যে মন্ত্রীসভাকে তিনি চাপ দিতে থাকেন। এবং সুভাষের মুক্তির জন্যেও। হতচকিত মন্ত্রীসভা কিঙ্কর্তব্যবিমূঢ়!
ডি-এ-ব্রাইডেন (D. A. Brayden) নামের গোয়েন্দা পুলিশের জনৈক অফিসার বলেন, সুভাষ বোসের ব্যাপারে রাজ্যের মন্ত্রীসভার কিছুই করবার নেই। এঁরা সব সর্বভারতীয় নেতা। সিদ্ধান্ত নিতে হলে এক কেন্দ্রীয় সরকারই নেবে।
আমিও তো কেন্দ্রীয় সরকারের কথাই বলছি, বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিজের দায় এড়াতে ব্যস্ত নাজিমুদ্দিন। কিছুদিন আগেই জওহরলাল নেহ্রুও ঠিক ওই এক কথাই তো বলল – হলওয়েল মনুমেন্ট সরাতে হবে – কই, কিছু করল না তো কেন্দ্রীয় সরকার! তাহলে সুভাষের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নেবে তারা?
ভাইসরয় লিনলিথগোকে চিঠি লেখেন গভর্ণর হার্বার্ট, সমস্ত গণ্ডগোলটা পাকিয়েছে বাংলায় ব্যবসা করে যে য়্যোরোপীয়নরা, কলকাতার কর্পোরেশনে তাদের মাথামোটাদের দল। তাদের নির্বুদ্ধিতার জন্যেই আজ কলকাতার মুসলিম লীগের তিন পাণ্ডা – ইস্পাহানী, সিদ্দিকি আর নূরউদ্দীনের এত ডোন্ট-কেয়ার ভাব, এত যুদ্ধবিরোধীতা, এত সুভাষের সঙ্গে মাখামাখি! এখন যে-করেই হোক, সুভাষের তৈরি করা এই 'মাথায়-তোল-সিরাজকে'- মার্কা আন্দোলনটাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বন্ধ করতে হবে। ভাইসরয় লেখেন, ব্রাইডেনও মনে করে, এখন মুক্তি পেলে সুভাষের রাজনৈতিক জনপ্রিয়তা বাড়বে। গোয়েন্দা বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনকিন্স্কে উদ্ধৃত করে ভাইসরয় বলেন, ব্রাইডেন ওঁকে বলেছে, প্রয়োজন হলে সুভাষকে ছাব্বিশের আই ধারায় বন্দী করা হোক।
বেতারে তখন নজরুল সক্রিয়। তাঁরই উদ্যোগে শচীন সেনগুপ্তর সিরাজদ্দৌলা নাটক বেতারেও প্রচারিত হল। সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে নজরুল বেতারের উপযোগী করে ঘষামাজা করে দিলেন নাটকটাকে।
শেষ পর্যন্ত হলওয়েল মনুমেন্ট অপসৃত হয়। অনশনের পর অনশন করে করে প্রায় অর্ধমৃত হবার পর ১৯৪০-এর ডিসেম্বরের গোড়ায় মৃত্যুর আশঙ্কায় – নিজের বাড়িতেই সুভাষের মৃত্যু হোক – এই চিন্তায় সরকার তাঁকে গৃহবন্দী হিসেবে মুক্তি দিল।
সুভাষকে গ্রেপ্তারের আগেই একটা অর্ডিন্যান্স করে হলওয়েল মনুমেন্ট ও সুভাষ সংক্রান্ত সব সংবাদই সরকার নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল। ফলত এই গ্রেপ্তারের এবং, এমনকি মুক্তির খবরও কোন কাগজেই বেরয়নি।
সম্ভবত পরের মাসে, উনিশশো একচল্লিশের ছাব্বিশে জানুয়ারির স্বাধীনতা দিবস সারা দেশ পালন করার পর, সাতাশ তারিখে গৃহবন্দী সুভাষের ঘরে ঢুকে পুলিশ আবিষ্কার করে, সুভাষ নেই। কিন্তু সে তো আর এক ইতিহাস।